প্রতিশোধ পর্ব_২

প্রতিশোধ পর্ব_২
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

আয়ান টেলিফোনটা তুলে ফোন করে বলে-এই ঘরে ফাইলগুলো নিয়ে একটু আসবেন।আমি আয়ান বলছি।

আয়ান এই বলে ফোনটা কেটে দেয়।

কিছুক্ষণ পর

স্যার আসব?—-

হ্যাঁ,হ্যাঁ,আসুন।আপনার নামটা যেন কী?আরে দাঁড়িয়ে কেন,বসুন।-আয়ান

আমার নাম আয়ুসী।-এই বলে আয়ুসী একটা চেয়ার টেনে বসে।

আয়ুসী দেখে আয়ানকে।আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।লম্বা, ফর্সা,হাত ঘড়িটা পরে আয়ানের হাত নয় যেন ঘড়িটার সৌন্দর্য বেড়ে গেছে, চুলগুলো হালকা কপালে এসে পরেছে,আর হাত দুটোকে পকেটের ভিতর ঢুকিয়ে ঘরের এদিক থেকে ওদিক পাইচারি করছে।চলাফেরাতেও এক অদ্ভুতা যা অন্য কারোর মধ্যে খুব কম চোখে পরে।এককথায় সুদর্শন পুরুষ।আয়ুসী দেখতে থাকে তার নতুন বসকে।

আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-এনেছেন?

আয়ুসী-হ্যাঁ,স্যার এনেছি।

আয়ান এসে বসে।কিন্তু নিজের চেয়ারে না বসে আয়ুসীর ঠিক পাশের চেয়ারটা টেনে বসে।আয়ুসী একটু চমকে ওঠে।

আয়ান আয়ুসীকে দেখে বলে-ভয় পাবেন না।আমি ওইদিকে বসলে ফাইলগুলো ঠিকমতো আপনার কাছ থেকে বুঝে নিতে পারবো না।তাই—-।আচ্ছা,আপনার অসুবিধা থাকলে আমি ওই দিকে বসছি।

আয়ুসী-না,না।ঠিক আছে।আমার কোনো অসুবিধা নেই।আপনি বসুন।

তারপর আয়ুসী ফাইলগুলো দেখাতে থাকে।আয়ান দেখতে থাকে।কিন্তু দেখতে দেখতে আয়ানের আঙুল আয়ুসী আঙুলকে স্পর্শ করে।আয়ুসী কিছুটা কেঁপে ওঠে।হাতদুটোকে নামিয়ে কোলের উপর রাখে।একবারের জন্য আর হাতদুটো ওপরে তলে না।

আয়ান-এই ফাইলগুলো তো কমপ্লিট নেই।

আয়ুসী একটু চমকে উঠে বলে-হ্যাঁ,হ্যাঁ,স্যার।

আয়ান-কী হয়েছে?আপনি ঠিক আছেন।

আয়ুসী-না,না,আমার কিছু হয়নি।আপনি কী কিছু বলছিলেন?

আয়ান-হ্যাঁ,এইগুলো কালকের মধ্যে কমপ্লিট করে আমাকে দেখবেন।

আয়ুসী-ঠিক আছে।তাহলে আমি আসি স্যার।

আয়ান-হ্যাঁ,হ্যাঁ আসুন।

আয়ুসী চলে যায়।আর আয়ান ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

অফিসের সবাই চলে যায়।একমাত্র থেকে যায় আয়ান আর আয়ুসী।আয়ুসী চেয়েছিল সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে।তাই ও কাজগুলো করতে থাকে।এদিকে সন্ধ্যে নেমে আসে।কাজ শেষ করে অফিস থেকে বার হতে যাবে দেখে আয়ানও তার গাড়িতে করে বের হচ্ছে।

ওইদিকে আয়ান আয়ুসীকে দেখতে পেয়ে বলে-আপনি এখনও যাননি?

আয়ুসী আমতা আমতা করে বলে-আসলে মানে স্যার কাজগুলো সেরে—-

আয়ান-বুঝতে পেরেছি উঠে এসো।

আয়ুসী-না,মানে

আয়ান ধমকে বলে-উঠে এসো বলছি।

আয়ুসী উঠে আসে।

আয়ান-সিটবেল্টটা লাগিয়ে নাও।

আয়ুসী সিট বেল্ট লাগানোর চেষ্টা করে।কিন্তু পারে না।আয়ান অনেকক্ষন ধরে তা লক্ষ্য করে বলে-সরুন,আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।

আয়ান সিটবেল্টটা লাগাতে আয়ুসীর দিকে ঝোঁকে।আয়ুসী একটু নিজের সিটের পিছনের দিকে সরে যায়।কিন্তু সিট তো আর সরবে না।আয়ান বুঝতে পারে।কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে সিট বেল্টটা লাগায়।সিট বেল্টটা লাগিয়ে আয়ুসীর দিকে ফিরে দেখে আয়ুসী ওর দিকেই তাকিয়ে।আয়ান ওর দিকে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে ফেলে।

আয়ান নিজের সিটে বসে বলে-কোথায় বাড়ি?ঠিকানাটা বলুন।

আয়ুসী-আমাকে বাসস্ট্যান্ডের কাছে নামিয়ে দিলেই হবে।

আয়ান-আপনি বুঝি বাসস্ট্যান্ডে থাকেন?

আয়ুসী-না,কেন?

আয়ান-ঠিকানা বলুন।

আয়ুসী ঠিকানা বলে।আয়ান গাড়ি চালাতে থাকে।আর আড় চোখে মাঝে মাঝে আয়ুসীকে দেখে।আয়ুসীর চুল বাতাসে উড়ছে।আর সে জানলার বাইরে তাকিয়ে আছে।

আয়ান আয়ুসীর বাড়িতে সেখানে নামিয়ে দেয়।
আয়ান চলে গেলেও আয়ুসী সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর ঘরে চলে আসে।

অন্যদিকে আয়ান বাড়ি গিয়ে নিজের রুমে ব্যালকনিতে বসে গিটার বাজাতে থাকে।তার গিটারে বেজে ওঠে-

সেই তুমি আজ কেন অচেনা হলে
সে আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম
কেমন করে এমন অচেনা হলে তুমি
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি
ও বুকেরই সব কষ্ট দুহাতে সরিয়ে
চল বদলে যাই
তুমি কেন বোঝোনা
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়।

সুরটা সে অজান্তেই বাজাতে থাকে।আর তখনই ঘরে আসে ধ্রুব।

কী রে কী করছিস?প্রেমে পড়লি নাকি?-ধ্রুব

ধ্রুবর কথাতে আয়ান গিটার বাজানো থামিয়ে দেয়।
বলে-কী বলছিস?

ধ্রুব-যেটা শুনলি।

আয়ান-ভুল কথা বলিস না।

ধ্রুব-ভুল কোথায়।তোর গিটারের সুর আজ তা বলে দিচ্ছে।আমি দেখেছি মেয়েটিকে মেয়েটির মুখে যেন মায়া মেশানো।আর তুই কিনা—-

আয়ান-আমি যেটা করছি ঠিক করছি।

ধ্রুব-উনি তোকে চিনতে পারেননি?

আয়ান-চিনবে কী করে।আমার নিজের মনে নেই।কত বছর আগে দেখেছিলাম।তখন আমরা কত ছোটো।

ধ্রুব-তুই কী ঠিক করছিস?বাবার শাস্তি মেয়ে কেন?

আয়ান-তুই আবার এই নিয়ে পড়লি।আবার কিন্তু তোর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেব।

ধ্রুব-আচ্ছা,ঠিক আছে তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর।

আপনাদের আগেই বলেছি ধ্রুব আয়ানের কোম্পানিতে চাকরি করে।আয়ানের কাছের একজন।সে কী করে আয়ানের কাছের একজন হয়ে উঠল এখন সেটাই বলি।

আয়ান যখন অফিসে প্রথম আসে তখন তার ব্যবহার ধ্রুবর খুব ভালো লাগে।নামে স্যার,কিন্তু সবার সাথে এতো সুন্দর করে কথা বলে যে আয়ানকে তার মানুষ হিসাবে খুব ভালো মনে হয়।ধ্রুব লক্ষ্য করে প্রত্যেকদিন দুপুরে যখন সবাই খেতে গেছে তখন আয়ান নিজের রুমেই থাকে।এটা দেখে ধ্রুব একদিন আয়ানের কাছে যায় আর বলে-স্যার,আমার মা খুব সুন্দর রান্না করে।

আয়ান অবাক হয়ে গিয়েছিল।

আয়ান কিছু বলার আগেই ধ্রুব তার টিফিন থেকে একটু খাবার নিয়ে আয়ানের মুখে পুরে দেয়।

এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব শুরু।তারপর একদিন রাত্রে কতোগুলো গুণ্ডার হাত থেকে আয়ানকে বাঁচায়।সেখান থেকে আয়ান ওকে ভাই মনে করে।এরপর আয়ান অনেকবার ধ্রুবর বাড়িতে যায়।তার মায়ের হাতের খাবার খেতে।এভাবেই তারা ভীষণ ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে।

আয়ান ধ্রুব কথা বলছিল।সেইসময় একজন ঘরে আসে।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here