প্রতিশোধ অন্তিম_পর্ব

প্রতিশোধ অন্তিম_পর্ব
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

ধ্রুব শ্রেয়া কিছু বলার আগেই আয়ুসী ঘর থেকে বেড়িয়ে আয়ানকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথাও পায় না।হঠাৎ অন্য ঘরের সামনে এসে দেখে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ।সে দরজাতে আঘাত করতে থাকে।কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না।চোখ দিয়ে জল পড়তেই থাকে।অনেকবার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর দরজা খুলে যায়।

আয়ান আয়ুসীকে দেখে চোখ জলে ভরে আছে।কিছু যেন বলতে চাইছে।এদিকে আয়ুসী গলা থেকে স্বর বার হচ্ছে না।শুধু চোখের জল অঝোরে পড়ে যাচ্ছে।আয়ান কী হল বুঝতে পারছে না।হঠাৎ আয়ুসী ছুটে গিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে।

আ-আমি আ-র ক্ক-খনও আপনাকে ছেড়ে যা-ব না।-আয়ুসী কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বলে।

আয়ান অবাক হয়ে যায়।সে তো কিছু বুঝতে পারছে না।একটু আগে যে ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিল সে এখন তার বুকে।

এদিকে আয়ুসী বলেই চলেছে-আমি কখনও যাব না,কোথাও যাব না।

এদিকে ধ্রুব আর শ্রেয়া ঘরে এসে পড়েছে।ওদেরকে দেখে শ্রেয়া বলে-আমি কিছু দেখিনি।কিছু না।

শ্রেয়ার গলার আওয়াজে আয়ুসী আয়ানের থেকে সরে আসে।

আয়ান-আয়ুসী তুমি একটু আগে তো—-

ধ্রুব-হ্যাঁ,তোর আয়ুসী তোকে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল।

আয়ান-মানে

ধ্রুব সব বলে।এদিকে আয়ুসী মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।এখনও সে নীরবে কেঁদেই চলেছে।আয়ান সব শুনে আয়ুসীর দিকে তাকায়।এদিকে শ্রেয়া ইশারা করে ধ্রুবকে বলে ঘর থেকে চলে আসতে।দুজনে বেরিয়ে যায়।

আয়ান আয়ুসীর কাছে এগিয়ে যায়।আয়ুসী এখনও মাথা তোলেনি।

আয়ান-আয়ুসী

আয়ুসী জলভরা চোখে আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ান ইশারাতে আয়ুসীকে কাঁদতে না করে।আয়ুসীর তাও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে।আয়ান আয়ুসীর চোখের জল মুছিয়ে দেয়।তারপর মুখটা দুহাতের মধ্যে ধরে বলে-এইজন্য তুমি চলে গিয়েছিল।শেষ কথাটা না শুনে চলে গেলে।

আয়ুসী এবার বলে-ভুল করেছিলাম।আমি ভুল করেছিলাম।আর কখনও ছেড়ে যাব না।

আয়ান-সত্যি আর যাবে না তো তুমি এবার চলে গেলে আমি মরে যাব আয়ুসী।

আয়ানের কথাতে আয়ুসী আয়ানের ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে-একদম এসব বলবেন না।

আয়ান-আয়ুসী

এই বলে সে আয়ুসীকে জড়িয়ে ধরে আর বলে-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।কিন্তু বলতে পারিনি।সব আমার ভুল।আমি তোমাকে আর কষ্ট পেতে দেব না।

এই বলে আয়ান আয়ুসীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আর আয়ুসীও আয়ানকে শক্ত করে ধরে বলে-আমি ও যে আপনাকে খুব ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।

এদিকে ধ্রুব আর শ্রেয়া তো বাইরে চলে এসেছে।

শ্রেয়া লাভার সাথে খেলা করছে।ধ্রুব শ্রেয়াকে লাভার কাছ থেকে টেনে আনে।

আরে কী করছ?-শ্রেয়া

তোমার মাথায় এতো বুদ্ধি আসে কী করে?-ধ্রুব

বুদ্ধি!-শ্রেয়া

এই ওদেরকে একা রাখা,তারপর ওভাবে আমাকে ঘর থেকে বার করে আনা।-ধ্রুব

তা নয়তো কী।ওদেরকে একটু একা ছেড়ে দিতে হবে না।কতদিন পরে ওরা একসাথে।নিজেদের মধ্যে সব ঠিক হল।তাছাড়া বুদ্ধির কী দেখলেন আমার মাথায় আরো একটা বুদ্ধি এসেছে।-এই বলে শ্রেয়া একটু চুপ করে বলে-হুম,অনেকক্ষণ হয়ে গেছে,এবার যাওয়া যেতেই পারে।

এই বলে সে ঘরের দিকে এগোয়।

পিছন থেকে ধ্রুব-এই কোথায় যাচ্ছ?আর কী বুদ্ধি মাথায় আনলে?

শ্রেয়া ঘরে ঢুকে পরে।

বলছি,হল?-শ্রেয়া

শ্রেয়ার কথাতে আয়ান আয়ুসী শ্রেয়াকে দেখে দূরে দাঁড়িয়ে পরে।

শ্রেয়া আয়ুসীর হাত ধরে বলে-চল বৌদি

ধ্রুব আর আয়ান একসাথে-কোথায়?

আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।-শ্রেয়া

আবার কী বুদ্ধি!-ধ্রুব

এই যে আমাদের বিয়ে তার সাথে আয়ানদা আর আয়ুসী বৌদির আবার বিয়ে দেব।-শ্রেয়া

আয়ান আর আয়ুসী একসাথে-কী!

হুম,বুদ্ধিটা ভালো না?-শ্রেয়া

একদম নয়।-এই বলে আয়ান এগিয়ে আসে শ্রেয়ার দিকে।

কেন আয়ান,ও তো ঠিক বলেছে।?-ধ্রুব

না-এই বলে আয়ান শ্রেয়ার মাথায় হাত রেখে বলে-আমার একটা মাত্র ছোট্ট বোনের বিয়ে।তার বিয়ের কত কাজ বাকি।আমি চাই আমার বোনের বিয়ে খুব ধুমধাম করে হবে।সেখানে আমাদের বিয়ের কোনো দরকার নেই।তাছাড়া বিয়ের কাজ তো দাদাকেই করতে হবে।

শ্রেয়ার চোখ থেকে জল গড়িয়ে আসে।

আয়ুসীর শ্রেয়ার কাছে এসে বলে-এই পাগলী কাঁদছ কেন?

আয়ান-একদম কাঁদবি না।

শ্রেয়া চোখের জল মুছে নিয়ে বলে-হুম,ঠিক আমার বিয়ের কেনাকাটা ঠিকমত হয়নি।একবার মাত্র বিয়ে হবে।

শ্রেয়ার কথায় সবাই হেসে বলে।

শ্রেয়া বলে-চল আয়ুসী বৌদি

আয়ান-কোথায়?

শ্রেয়া-আয়ুসী বৌদি বিয়ের কয়েকদিন আমার কাছেই থাকবে।

সবাই চমকে যায়।বিশেষ করে আয়ান।

আয়ান আঁতকে ওঠে-কী!

হ্যাঁ,এখনও আমার বিয়ের শপিং করতে হবে।অনেক কাজ।তাই আয়ুসী বৌদি আমার বাড়িতে থাকবে।-শ্রেয়া

বিয়ের শপিং তো আমরা যাব।-আয়ান

শ্রেয়া হেসে বলে-তা যেতেই পারো।

আয়ান-তা আমিও তো তোদের বাড়িতেই থাকব।

আয়ানের কথায় ধ্রুব হেসে ফেলে।আর আয়ুসী লজ্জায় মাথা তুলতে পারে না।

শ্রেয়া হেসে বলে-হুম যেতে পারো মাঝে মাঝে।কিন্তু রাতে আয়ুসী বৌদি আমার কাছেই থাকবে।

আয়ান ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলে-কী বলছে ধ্রুব এসব।

ধ্রুব হেসে ফেলে।কিন্তু শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-কী হচ্ছে শ্রেয়া।

কী আবার কিছু নয়।-শ্রেয়া

এই বলে সে আয়ুসীর হাত ধরে বলে-আয়ুসী বৌদি চল।বিয়ের শপিং করতে হবে।

এদিকে ধ্রুব আয়ানের তাকিয়ে মনে মনে বলে-বেচারার কী দোষা করছে শ্রেয়া যে।

ধ্রুব শ্রেয়ার কাছে এসে বলে-তোমার সাথে একটু কথা আছে।

শ্রেয়া-কী কথা?

ধ্রুব-বাইরে চল।

শ্রেয়া-কিন্তু

ধ্রুব-প্লিজ চল

শ্রেয়া-আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে শ্রেয়া বলে-আয়ুসী বৌদি তুমি ব্যাগ গোছাও আমি আসছি।

শ্রেয়া আর ধ্রুব বাইরে বেড়িয়ে যায়।আয়ান আয়ুসীকে কাছে টেনে নিয়ে বলে-কী বলছে শ্রেয়া।আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়ব না।

আয়ুসী চুপ করে থাকে।

কী হল,চুপ করে আছ কেন?এতোদিন পর তোমাকে কাছে পেয়ে যে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।-আয়ান

আয়ুসী মাথা তুলে আয়ানের চোখে চোখ রেখে বলে-আমারও যে।কিন্তু শ্রেয়ার উপর দিয়ে অনেক ঝর বয়ে গেছে।তাই—-

আয়ান-ঠিক বলছ।কিন্তু আমি রাতে তোমার সাথে থাকব।

আয়ানের কথা শুনে আয়ুসী লজ্জায় আয়ানের বুকে মুখ লোকায়।আয়ান বুঝতে পেরে আয়ুসী শক্ত করে ধরে।

এদিকে শ্রেয়া বাইরে আসতেই ধ্রুব শ্রেয়াকে কাছে টেনে কোমরটা ধরে।শ্রেয়া অবাক হয়ে যায়।কারন ধ্রুব কোনোদিন এমন করে নি।শ্রেয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

কী হল কী দেখছ?-ধ্রুব

তোমাকে,আমাকে এই ভাবে ধরেছ কেন?-শ্রেয়া

কেন ধরতে পারি না।আর ওদেরকেও তুমি কেন আলাদা করতে চাইছ—-ধ্রুব

আলাদা কোথায়?কয়েকদিনের ব্যাপার তো।তাছাড়া দূরে থাকলে প্রেম বাড়ে।-শ্রেয়া

তাই-এই বলে ধ্রুব শ্রেয়াকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলে-আমি কিন্তু আর বিয়ে পিছিয়ে দেব না।আর তোমাকে দূরে রাখব না।

এই বলে ধ্রুব শ্রেয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।শ্রেয়া ধ্রুব প্রথম এতো কাছাকাছি।

শ্রেয়া ধ্রুবকে সরিয়ে চলে যেতে চাইলে ধ্রুব শ্রেয়াকে কাছে টেনে নিয়ে বলে-আবার যাচ্ছ।তোমার মধ্যে তো রোমান্টিকতা নেই তাই তুমি ওদেরকে—-ধ্রুব

ধ্রুবর কথা শেষ করতে দেয় না শ্রেয়া।

কী বললে,আমার মধ্যে কী নেই,আর তুমি বুঝি খুব রোমান্টিক।-শ্রেয়া রেগে কথাগুলো বলে।

হুম,রোমান্টিক তো।এখনই বুঝিয়ে দিতে পারি।বোঝাব।-ধ্রুব

শ্রেয়া ধ্রুব কথায় লজ্জা পেয়ে বলে-ছাড়ো

আমার বৌটা লজ্জা পেলে কিন্তু খুব সুন্দর লাগে।-ধ্রুব

শ্রেয়া অবাক হয়ে-বৌ!এখনও বিয়েই হল না।

চল আজই করে নি।ওদের দেখে আমার এখনই বিয়ে করার ইচ্ছা হচ্ছে।-ধ্রুব

কী!-শ্রেয়া

হুম,আজ বিয়ে,পরশু বৌভাত তারপর—- এই বলে সে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে তারপরের টা কী শ্রেয়া?

শ্রেয়া কখন ভাবতেই পারে নি ধ্রুব এরকম কথা বলতে পারে।সে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থাকে।

কী হল বল।-ধ্রুব

শ্রেয়া ধ্রুবর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে-জানি না।ছাড়ুন।আপনি খুব অসভ্য আছেন।

অসভ্যর কী দেখলে।এখনও যে বাকি আছে।-ধ্রুব

ধ্রুব কথাতে শ্রেয়া মাথা নীচু করে থাকে।ধ্রুব শ্রেয়ার হাত দুটো ধরে বলে-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি শ্রেয়া।

শ্রেয়া ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে-আমিও যে—-

ধ্রুব শ্রেয়াকে আর বলতে দেয় না।শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে-আমি জানি শ্রেয়া।

এদিকে আয়ান,আয়ুসী,ধ্রুব আর শ্রেয়া বিয়ের শপিং করতে যায়।নিলয়কে নিয়ে যেতে চাইলে সে যায় না।সে যখন শুনেছে সব ঠিক হয়ে গেছে।সে এবার সত্যি সত্যি তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যায়।

শপিং মলে গিয়ে আয়ান শ্রেয়ার জন্য কেনাকাটা করে দেয়।তারপর আয়ুসীর জন্য কিনতে থাকে।প্রত্যেকটা শাড়ি আয়ুসীর গায়ের উপর ফেলে আর বলে-না,দাদা এটা ভালো নয়।অন্য দেখান।

এই করে করে সে শাড়ির পাহাড় করে তোলে।শ্রেয়া আর ধ্রুব দেখে হেসে এলে।শ্রেয়া বলে-আয়ানদা তুমি আয়ুসী বৌদির জন্য নিজেই শাড়ি ডিজাইন কর।তাহলে ঠিক হবে।

আয়ান শ্রেয়ার কথাটার মানে ওতো বুঝতে পারে না।বলে-ঠিক বলেছিস।

আয়ানের কথাতে সবাই অবাক হয়ে যায়।

কী সত্যি তুমি আয়ুসী বৌদির জন্য শাড়ি ডিজাইন করবে?-শ্রেয়া

এবার আয়ান বুঝতে পারে।

না,মানে।-এই বলে আয়ান অন্য দিকে চলে যায়।

ধ্রুব,শ্রেয়া হাসতে থাকে।আর আয়ুসীও মিচকে মিচকে হাসতে থাকে।

শপিং হয়ে যায়।ক্যাশ কাউন্টারে এসে আয়ান আর আয়ুসী এসে দেখে ধ্রুব আর শ্রেয়া নেই।

ওরা কোথায় গেল?-আয়ান

আমাদের সাথেই তো আসছিল।-আয়ুসী

চল,দেখি-এই বলে আয়ান আর আয়ুসী ওদের দুজনকে খুঁজতে থাকে।

শেষে দেখতে পায়।দেখে তাদের আর কিছু বলার থাকে না।দুজনে ঝগড়া করছে।

না,তুমি ওটা নেবে না।-শ্রেয়া

কেন এটা তো দেখতে ভালো।-ধ্রুব

না,এটা দেখতে ভালো।আর তোমাকে এটাতেই ভালো মানাবে।-শ্রেয়া নিজের হাতে থাকা একটা শার্ট দেখিয়ে বলে।

না,আমার ওটা মানাবে না শ্রেয়া।এটা ভালো লাগবে।-ধ্রুব

তুমি এটা নেবে।আর একবার পরে দেখ না কেমন লাগে। -শ্রেয়া

না,নেব না।-ধ্রুব

আয়ান আর আয়ুসী কী বলবে বুঝতে পারে না।আয়ান ওদের মধ্যে এসে বলে-এই দুজন চুপ কর।লোকে দেখছে তো।

ধ্রুব-দেখ আয়ান—-

শ্রেয়া-না,আয়ানদা তুমি ওর কথা শুনবে না।

ধ্রুব-শ্রেয়া আমি ওরকম শার্ট পরি না।প্লিজ বোঝো।

শ্রেয়া চুপ করে যায়।কিন্তু অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে।

আয়ান ধ্রুবকে বলে-ওর পছন্দটাই নিয়ে নে।ও তোর জন্য বেছেছে।

কিন্তু—-ধ্রুব

জানি তুই পরিস না।তাও একবার ভেবে দেখ ওর কত ভালো লাগবে তুই পড়লে।-আয়ান

শ্রেয়া শার্টটা রেখে দিয়ে বলে-আমার পছন্দের কিছু ওকে কোনোদিন পরতে হবে না।এই বলে শ্রেয়া চলে যায়।ধ্রুব দেখে শ্রেয়ার চোখে জল।বুঝতে পারে সে একটু বেশিই বলে ফেলেছে।নিজেকে দোষারপ করতে থাকে।ভাবে কী হত ওর পছন্দের শার্ট পরলে।মেয়েটাকে আমি কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

আয়ান-শ্রেয়া তো চলে গেল।

ধ্রুব-তোরা আয়।আমি দেখছি।

এই বলে সে শ্রেয়ার রেখে দেওয়া শার্টটা নেয়।

ধ্রুব ছুটে গিয়েকে শ্রেয়ার হাত ধরে।শ্রেয়া ফিরে তাকিয়ে বলে-ছাড়,আমার ভালো লাগছে না।

ধ্রুব নিজের কান ধরে বলে-ভুল হয়ে গেছে শ্রেয়া আর হবে না।আমার তোমার উপর ওরকম ব্যবহার করা ঠিক হয়নি।

এদিকে শ্রেয়া ধ্রুবকে দেখে অবাক হয়ে যায়।সবাই তাদের দিকে দেখছে।

কী করছ,সবাই দেখছে।কানটা ছাড়।-শ্রেয়া

এদিকে কিছু ছেলেমেয়ে হাসতে হাসতে বলে-দিদি দাদাকে ক্ষমা করে দিন।না হলে কানটা ছিঁড়ে যাবে।

শ্রেয়াও ওদের কোথায় না হেসে পারে না।ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে-তোমাকে কখনও কষ্ট পেতে দেব না।তোমার এই হাসিমুখটা তোমার এই ছেলেমানুষিগুলো আমি হারিয়ে যেতে দেব না।

দূর থেকে আয়ান আয়ুসী সব দেখে।

আয়ুসী-ওদেরকে মানিয়েছে ভালো তাই না।আর শ্রেয়ার মত মেয়ে হয় না।

আয়ান-হুম,সত্যি শ্রেয়াকে বোন বলতে আমার একটুও বাঁধে না।হয়তো ওর বাবাকে আমরা কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারব না।কিন্তু ওকে কখনও একা ছাড়ব না।দাদার মত আগলে রাখব।

আয়ুসী-ঠিক বলছ।ওর মত বোন,মেয়ে স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।ধ্রুব খুব লাকি।

আয়ান-হুম ঠিক,কিন্তু ধ্রুব মতও ছেলে হয় না।এককথায় মেড ফর ইচ আদার।

আয়ুসী হেসে বলে-একদম ঠিক।

তারপর সবাই শপিং করে রেস্টুরেন্টে ঢোকে খাওয়ার জন্য।আয়ান আয়ুসী পাশাপাশি বসতে যায়।কিন্তু শ্রেয়া আয়ানকে সরিয়ে দিয়ে বলে-আমি আয়ুসী বৌদির পাশে বসব।

এই বলে সে বসে পরে।সবাই ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

শ্রেয়া দেখে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

কী হল বসবে না।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাবে?-শ্রেয়া

সবাই বসে পরে।খাবার অর্ডার দেয়।এদিকে আয়ান টেবিলের তলা পা দিয়ে আয়ুসীর পাকে স্পর্শ করতে যায়।একবার করেও।আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে।কারন আয়ান তার দিকে চেয়ে আছে আর হাসছে।আয়ুসী ইশারা করে না করতে বলে।কিন্তু আয়ান সেই আবার করতে যায়।এরকম করতে করতে আয়ানের পা ধ্রুবর পায়ে লাগে।আয়ান তা জানে না।ধ্রুব বুঝতে পারে।

শ্রেয়াকে ডেকে বলে-শ্রেয়া একটু আমার সাথে এসো।

শ্রেয়া-কেন?

ধ্রুব-দরকার আছে।

শ্রেয়া উঠে যায়।

শ্রেয়া ধ্রুবকে আড়ালে নিয়ে বলে-বলছি ওদেরকে একটু একলা থাকতে দি।

শ্রেয়া-কেন?

ধ্রুব শ্রেয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলে-আরে বুদ্ধু।তুমি কী কিছু বোঝা না।

শ্রেয়া কিন্তু সবই জানে আর সবই বোঝে।

না,আমি কিছু বুঝি না।-এই বলে সে চলে যেতে থাকে।

ধ্রুব শ্রেয়াকে কাছে টেনে বলে-কী বোঝ তুমি?ওদের এখন একসাথে থাকতে দেওয়া উচিত।

শ্রেয়া-হুম,থাকবে তো একসাথে।কিন্তু এখন নয়।ওদের জন্য বড় কিছু অপেক্ষা করছে।দুজন বিয়েতে তো রাজি হল না।কিন্তু—-

ধ্রুব-কিন্তু কী?

শ্রেয়া হেসে বলে-দেখতে থাক কী হয়।

এই বলে শ্রেয়া চলে যায়।

ধ্রুব মনে মনে বলে-কী জানি এর মাথায় এখন কী ঘুরছে।

রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে আয়ুসীকে শ্রেয়া নিয়ে চলে যায়।আয়ান যায় ধ্রুব বাড়ি।আয়ুসী ছাড়ার একদম ইচ্ছা নেই।কিন্তু কী করবে।শ্রেয়া তো আয়ুসীর হাত যে ধরেছে আর ছাড়ে নি।তাছাড়া আয়ান শ্রেয়ার বাড়িতে যাওয়াআসা করে।বিয়ের সব ভার তার উপর।কিন্তু আয়ুসীর সাথে তার কথা হয় না।শুধু দেখাই হয়।তাও নামমাত্র।শ্রেয়া আয়ুসীকে কাছ ছাড়া করে না।তাদের ফোনেই কথা হতে থাকে।আয়ুসী ফোনটা ফেলে এসেছিল।নিলয় সেটা এনে দিয়েছে।এইভাবেই বিয়ের দিন আসতে থাকে।

এদিকে সুষমা দেবী, শ্রেয়া আর ধ্রুব বিপ্লব বাবুর কাছে যায়।বিপ্লব বাবু শ্রেয়াকে দেখে খুশি হয়।আর যখন জানতে পারে শ্রেয়া আর ধ্রুব বিয়ে করছে তিনি শুনে অরো খুশি হন।কারন তিনি জানেন ধ্রুব খুব ভালো ছেলে।শ্রেয়া পুরোপুরি তার বাবাকে ক্ষমা করতে পারে নি।কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা করবে এই কথা সে দিয়েছে।এতেই বিপ্লব বাবু খুশি।তিনি ওদেরকে মন থেকে আশীর্বাদ করে।আর ফেরার সময় ওরা পুলিশের কাছ থেকে শোনে বিপ্লব বাবু এখন ভালো হয়ে গেছেন।তাঁর ব্যবহারে তা চোখে পরে।সবাইকে নানা ভাবে কাজে সাহায্য করেন।শ্রেয়া শুনে ভালো লাগে।

আর এদিকে বিয়ের আগের দিন রাতে আয়ান আয়ুসীকে না দেখে থাকতে পারেনি চলে আসে।এদিকে আয়ুসীকে খুঁজতে খুঁজতে সে শ্রেয়ার ঘরের কাছে এসে পরে।ঘরে ঢুকতে যাবে শ্রেয়া আয়ানকে দেখে দরজা আগলে দাঁড়ায়।ঘরে শ্রেয়া আর আয়ুসী দুজন ছিল।

কী হল আয়ানদা তুমি এখানে?-শ্রেয়া

এদিকে আয়ুসী দরজার পাশেই।

না,মানে।-আয়ান

এখন দেখা হবে না।রাত হয়ে গেছে।-শ্রেয়া

কিন্তু—-আয়ান আর কিছু বলতে পারে না।কারন সে আয়ুসীকে দেখে ফেলে।দরজার সামনেই আয়না আর আয়ুসীর প্রতিচ্ছবি আয়নাতে।আয়ুসীও আয়ানকে আয়নার ভিতর দিয়ে দেখতে পায়।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।এদিকে আয়ান চুপ করে গেলে শ্রেয়া আয়ানের দিকে তাকিয়ে সব ধরে ফেলে।

ও এই ব্যাপার।এ হবে না।যাও যাও এখন দেখা হবে না।-শ্রেয়া

আয়ান আর কী করবে চলে আসে।কিন্তু তারপরদিন ধ্রুবর বাড়ি থেকে গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে আয়ানও সাথে যায়।

শ্রেয়ার গায়ে হলুদ লাগে।আয়ুসী শ্রেয়াকে দেয় আর শ্রেয়াও আয়ুসীর দুইগালে মাখিয়ে দেয়।আয়ুসী মুখ ধুইতে ঘরের দিকে যায়।তখন আয়ান সামনে এসে দাঁড়ায়।কোনো কথা না বলে আয়ুসীর ঘরের ভিতর নিয়ে যায়।

কী করছ কী,সবাই দেখে ফেলবে।-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীকে দেওয়ালে ঠেকিয়ে বলে-দেখুক,আমি আমার বৌয়ের সাথে আছি।

তাই-এই বলে আয়ুসী নিজের গালের হলুদ নিয়ে আয়ানের গালে দেয়।

এবার ভালো লাগছে।-এই বলে আয়ুসী হেসে ফেলে।

আয়ান-তাই

আয়ুসী-হুম,খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।

আয়ান লক্ষ্য করে আয়ুসী ওকে তুমি করে বলছে।

তাই তো দেখছি।আমার বৌটা আমাকে তুমি করে বলছে।-আয়ান

আয়ুসী মুখ দিয়ে কখন তুমি বেড়িয়ে গেছে সে বুঝতে পারে নি।

না,মানে—-আয়ুসী

তোমার মুখে তুমিটা ভালো মানিয়েছে।শুনতে মিষ্টি লাগছে।-আয়ান

আয়ুসী মাথা নীচু করে নেয়।

আয়ান-আমার বৌতো আমাকে হলুদ দিল এবার তো আমার দেওয়ার পালা।

আয়ানের কথাতে আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ান আয়ুসীকে আরো কাছে টেনে নেয়।তারপর নিজের গালটা আয়ুসীর গালে ছোঁয়ায়।আয়ুসী চোখ বন্ধ করে নেয়।তারপর আয়ান মুখটা তুলে আয়ুসী দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ুসীর কপালের কাটা দাগ টা এখনও মেলায় নি।

আয়ান দেখে বলে-কেন সেদিন তুমি ওরকম ছুটতে গিয়েছিলে।তোমার কিছু হয়ে আমি কী করতাম বলত।

আয়ুসী-কিছু হত না তুমি ছিলে তো।

আয়ান-তুমি বড্ড খামখেয়ালি আয়ুসী।

আয়ুসী-কেন?

আয়ান-কেন আবার আমার কাছে থাকতে একবার তুমি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলে।তাতেও তোমার মাথা কেটে গিয়েছিল।

আয়ুসী-বাথরুমে কবে?

আয়ান-তুমিই ধ্রুবকে আর মামনিকে বলেছিলে।

আয়ুসীর মনে পরে যায়।সে যে মিথ্যা বলেছিল।কিন্তু হঠাৎ সেই কথা মনে পরে যাওয়ায় চোখ জল চলে আসে।

আয়ান দেখতে পেয়ে বলে-আয়ুসী তুমি কাঁদছ?

আয়ুসী লোকাবার চেষ্টা করে।

না,না,কিছু নয়।-এই বলে সে চলে যেতে থাকে।

আয়ান আয়ুসীকে ধরে বলে-কী হয়েছে আয়ুসী?হঠাৎ ওই কথায় তোমার চোখে জল।সত্যি বলবে আয়ুসী।

আয়ুসী-কিছু হয় নি।

আয়ান-আমার দিব্যি কী হয়েছে বল।

আয়ুসী বলতে চায় না।আয়ান জোর করে।তার সন্দেহ হয়।কিন্তু আয়ুসী যখন বলে তখন সে ভাবতেই পারে না তার জন্য আয়ুসী সেদিন ব্যথা পেয়েছিল।

আয়ান আয়ুসীকে জড়িয়ে ধরে।তারপর আয়ুসীকে জিজ্ঞাসা করে-কোনদিকে কেটে গিয়েছিল।

আয়ুসী হাত দিয়ে দেখায়।

আয়ান আয়ুসীর সেইখানে পাগলের মত কিস করতে থাকে।আর আয়ানের স্পর্শে আয়ুসী কেঁপে উঠতে থাকে।

তারপর আয়ুসীর চোখের দিকে তাকিয়ে আয়ান বলে-আমার ভুল হয়ে গেছে আয়ুসী।সেদিন আমি ইচ্ছা করে করি নি।আমি জানতাম না যে তোমার—-

আমি জানি তোমাকে কিছু বলতে হবে না-আয়ুসী

আয়ুসীর কথায় আয়ান আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে-আমি তোমাকে আর কিছুতেই কষ্ট পেতে দেব না।

এই বলে সে আয়ুসীর কপালে,তারপর দুচোখের পাতায় কিস করে যখন আয়ুসীর ঠোঁটে কিস করতে যাবে আয়ুসী আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।আয়ান হাসতে থাকে।

এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যায়।আয়ুসী আয়ানের পছন্দের শাড়ি পড়েছে।ধ্রুবও এসে যায়।বিয়ে শুরু হয়।কিন্তু আয়ান আয়ুসীর পিছন ছাড়ে না।

সাত পাকের পর শুভদৃষ্টি।তাতে শ্রেয়াকে দেখে ধ্রুবর চোখের পাতা পড়ে না।ধীরে ধীরে বিয়ে পর্ব মিটে যায়।আর বাসর রাত আয়ান আর আয়ুসীর গানেই কেটে যায়।তারপর দিন বিদায়ের পালা।শ্রেয়া ভীষণ কান্নাকাটি করতে থাকে।আয়ান ওকে সামলিয়ে গাড়িতে তুলে বলে-সাবধানে থাকবি আর আমি আর আয়ুসী পরে যাচ্ছি।

কারন আয়ান জানে আয়ুসীকে সে আজ বাড়ি নিয়ে যাবে।

আয়ুসী বৌদি কোথায় যাবে।বৌদি আমার সাথে যাবে।-শ্রেয়া

আয়ান অবাক হয়ে যায়।সাথে ধ্রুব আর আয়ুসীও।

ধ্রুব-কিন্তু শ্রেয়া—-

শ্রেয়া-আয়ুসী বৌদি আমার সাথেই যাবে।

কী আর করা যাবে।আয়ুসী শ্রেয়ার সাথে গেল।আর আয়ান দেখতে থাকল।শ্রেয়া ধ্রুবর বাড়িতে গেলে কল্যাণী দেবী শ্রেয়াকে বরণ করে ঘরে তোলে।তিনি শ্রেয়াকে ভীষণ ভালোবাসেন।এদিকে সন্ধ্যাতে আয়ান আসে।আয়ুসীকে সে দূর থেকেই দেখতে থাকে।

সেদিন কেটে যায়।তারপর দিন রিসেপশান।আয়ুসীর দিক থেকে আয়ান চোখ ফেরাতেই পারছে না।তার আজ ভীষণ আনন্দ।আয়ুসীকে তো আজ বাড়ি নিয়ে যাবে।এদিকে শ্রেয়া হঠাৎ ধ্রুবকে ডেকে বলে-আয়ানদা আর আয়ুসী বৌদি কোথায়?

কেন আজও আয়ুসী বৌদি তোমার কাছে থাকবে?-ধ্রুব

হ্যাঁ-শ্রেয়া

কী!তুমি কী বলছ-ধ্রুব

ওরা কোথায় ডাকই না।-শ্রেয়া

ধ্রুব ওদের ডেকে আনে।এদিকে শ্রেয়া একটা খাম এনে আয়ানকে দিয়ে বলে-যাও

আয়ান অবাক হয়ে-কোথায়?

ধ্রুব আয়ানের হাত থেকে খামটা নিয়ে খুলতে যাবে শ্রেয়া বলে-তোমার জন্য নয়।ওটা আয়ানদার জন্য।ওটা তুমি খুলছ কেন?

ধ্রুব-ধর।কী দিল দেখ।মনে হয় তোর কাশির টিকিট কেটে দিয়েছে।আয়ুসী তো এখন ওর কাছেই থাকবে।

শ্রেয়া রেগে ধ্রুবর দিকে তাকায়।এদিকে আয়ান খামটা খুলে অবাক হয়ে বলে-গ্যাংটক!

ধ্রুব-কী বলছিস?

ধ্রুব আয়ানের হাত থেকে নিয়ে দেখে।তার চোখ স্থির হয়ে গেছে।এদিকে আয়ুসী কিছুই বুঝতে পারছে না।

তোমাদের গ্যাংটকের টিকিট,রাত্রে ট্রেন।এখন তো ৮ত বাজে।তোমরা এখনই খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি গিয়ে প্যাকিং করে বেড়িয়ে যাও।-শ্রেয়া

কী-!আয়ুসী

কী সব বলছিস,আমাদের জন্য এসব কেন?তোদের আজ রিসেপশান আর আমরা চলে যাব-আয়ান

হ্যাঁ,যাবে-শ্রেয়া

না,না,এসবের দরকার নেই-আয়ান

হ্যাঁ,তুমি ঠিক বলছ।-আয়ুসী

তোমরা যাবে না।আমি কত কষ্ট করে টিকিট জোগার করলাম।-শ্রেয়া মুখ ছোটো করে বলে।

তুই তো এসব অন্য সময় করতে পারতিস।তোরাও আমাদের সাথে যেতে পারতিস।-আয়ান

ওসব পরে দেখা যাবে।তোমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।-শ্রেয়া

কিন্তু আমাদের প্যাকিং এসবে তো দেরি হবে।-আয়ান

ওও,এই ব্যাপার।চল আমি সাহায্য করছি।-এই বলে শ্রেয়া এগিয়ে আসে।

এদিকে শ্রেয়ার কথায় ধ্রুব ঢোক গেলে।মেয়ে কী বলে।একে এইসব করেছে কিছু বলে নি।আবার নিজের রিসেপশনের দিন—-ধ্রুব চুপ করে ভাবতে থাকে।

কী!তুই এখন আমাদের বাড়ি যাবি!-আয়ান

তাতে কী।-শ্রেয়া

আয়ান ধ্রুবকে বলে-ওকে বোঝা।

ধ্রুব-কী বলব।তাছাড়া সত্যি তোদের দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন বেড়িয়ে পড়।

আয়ুসী-কিন্তু—-

ধ্রুব-আর কোনো কিন্তু নয়।চল চল।

আয়ান আর আয়ুসী যে কোনো ভাবে খেয়ে বাড়ি আসে।তারপর প্যাকিং করে।অনেক জিনিস নিতে ভুলেও যায়।তারপর লাভাকে ধ্রুবর কাছে রেখে বেরিয়ে পড়ে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে।

এদিকে রিসেপশনের পার্টি শেষ হয়ে যায়।শ্রেয়াকে ধ্রুবর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।সে চুপ করে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে।এদিকে ধ্রুব এসেছে সে জানতেই পারে নি।ধ্রুব এসেই শ্রেয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

শ্রেয়া বুঝতে পেরে চুপ করে থাকে।

তুমি এতো কিছু করেছ আমাকে বলনি তো।তোমার মাথায় এই বুদ্ধি খেলছিল।-ধ্রুব

শ্রেয়া ঘুরে বলে-হ্যাঁ,আমি শুনেছিলাম ওদের গ্যাংটকে ঘোরা ঠিক করে হয়নি।তাই—-

ধ্রুব-তাহলে আমাদের টিকিট টাও কাটতে পারতে।আমরাও যেতাম।

শ্রেয়া-কী তুমি আজ যেতে?

ধ্রুব হেসে বলে-পাগল নাকি।এই রাত কী কেউ ট্রেনে কাটায়।

শ্রেয়া বুঝতে পারে ধ্রুব কী বলছে।সে লজ্জায় মাথা নীচু করে নেয়।

ধ্রুব-আমার বৌটার বুদ্ধি আছে।শুধু বুদ্ধি কত পাকা পাকা কথা বলে।তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না তুমি এমন কথাও বলতে পারো।

শ্রেয়া-কোন কথা?

ধ্রুব-ওই যেদিন আমি তোমার সাথে দেখা করতে বলেছিলাম।

শ্রেয়া মাথা নীচু করে চুপ করে থাকে।

ধ্রুব-সেদিনই কেন তোমাকে কাছে টেনে নিলাম না।

ধ্রুব কাছে থাকতে শ্রেয়ার কেমন যেন হতে থাকে।সে চলে যাচ্ছে।ধ্রুব শ্রেয়াকে থেকে কাছে টেনে নেয়।ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।শ্রেয়া লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়।ধ্রুব আস্তে আস্তে শ্রেয়ার কপালে কিস করে।শ্রেয়া লজ্জায় দূরে সরে যায়।ধ্রুব আবার পিছন থেকে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে।তারপর শ্রেয়ার ঘাড়ে মুখ রেখে দুহাত দিয়ে শ্রেয়াকে শক্ত করে ধরে।শ্রেয়ার ঘাড়ে ধ্রুব কিস করে।শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে নেয়।ধ্রুব শ্রেয়াকে নিজের দিকে ফেরায়।শ্রেয়া চোখ খোলে।

ধ্রুব-আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে শ্রেয়া।

শ্রেয়া চুপ করে মাথা নীচু করে।ধ্রুব শ্রেয়ার মুখটা তুলে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।শ্রেয়া ধ্রুবকে ঠেলে দূরে দাঁড়ায়।ধ্রুব আবার শ্রেয়ার কাছে আসতেই শ্রেয়া গিয়ে খাটের একধারে বসে।তার গা হাত পা কাঁপছে।এদিকে ধ্রুবও এসে খাটে বসে।খাটের উপর রাখা শ্রেয়ার হাতের উপর হাত রাখে।শ্রেয়া আর দূরে থাকতে পারে না।ধ্রুবর বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পরে।ধ্রুব শ্রেয়াকে শক্ত করে তার দুই বাহুর মধ্যে আগলে রাখে।

এদিকে আয়ান আয়ুসী রাতে ট্রেনে উঠে পরে।প্রথম তারা রাজি না হলেও এখন তাদের ভালো লাগছে।দুজনের সিট নীচে।কিন্তু রাতে আয়ান আয়ুসী এক সিটেই থাকে।

আয়ুসী তো প্রথম রাজি হয়নি।

কী সব বলছ!সবাই দেখে কী ভাববে।-আয়ুসী

কিছু না।আর তাছাড়া রাতের ট্রেন সব ঘুমাবে।-আয়ান

কিন্তু—-আয়ুসী

আয়ান কোনো কথা শোনে না।একটা চাদর এনে নিজে গায়ে দেয় আর আয়ুসীকেও গায়ে দিয়ে দেয় আর বলে-তোমার তো ট্রেনে ঘুম আসে না।তাই আমি আর তুমি একসাথে জাগব।

আয়ুসী-কী!

আয়ান-হ্যাঁ ম্যাডাম

আয়ুসী আর কিছু বলে না।জানে আয়ান শুনবে না।দুজন ট্রেনের বাইরে চোখ রাখে।আয়ান চাদরের ভিতর আয়ুসীর হাতটা শক্ত করে ধরে।

আয়ুসী-কী করছ।সবাই দেখতে পাবে।

আয়ান-কে দেখবে?কে জেগে আছে।

আয়ুসী দেখে সত্যি সবাই ঘুমিয়ে।

আয়ান-শ্রেয়া মাথাতে এই সব ছিল।তাই ও—-

আয়ুসী-হ্যাঁ,আমিও বুঝতে পারেনি।ওর কাছে ছিলাম কিছুই ধরতে পারিনি।

আয়ান-একদিকে ভালোই করেছে।

আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ান হাসতে থাকে।এই ভাবে কথা বলতে বলতে আয়ুসী আয়ানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।আয়ুসীর মাথায় আয়ান হাত বুলিয়ে দেয়।তারপর সেও ঘুমিয়ে পরে।

সকালে আয়ুসী জেগে গেলে সে আয়ানকে শুইয়ে নিজের সিটে চলে যায়।কারন অনেকেই উঠে গেছে।সে ফ্রেশ হয়ে আসে।এদিকে আয়ানের ঘুম ভাঙ্গলে সে বলে-তুমি ওই সিটে কেন?

আয়ুসী-এই তুমি চুপ করবে।

আয়ান-কেন?

আয়ুসী আয়ানের কাছে এগিয়ে এসে বলে-তুমি কী সবাই উঠে গেছে।

এই বলে সে চারিদিক দেখতে থাকে।আয়ুসীকে দেখে আয়ানের হাসি পায়।সে হাসতে হাসতে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে আয়ুসীকে জিজ্ঞাসা করে কিছু খেয়ে কিনা।আয়ুসী না বললে আয়ান রেগে যায়।সে ব্যাগ থেকে খাবার বার করে আয়ুসীকে খাইয়ে দেয়।আয়ানের এই ব্যবহারে আয়ুসী লজ্জায় যেন মাটির সাথে মিশে যায়।

এদিকে অন্য সিটে এক couple বসেছিল।মেয়েটা জিজ্ঞাসা করে-তোমাদের কী নতুন বিয়ে হয়েছে?

আয়ান উত্তরটা দেয়-হ্যাঁ,এই চারদিন আগে।

ওও—-

আয়ান হেসে বলে-হ্যাঁ,love marriage।তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি করেই ফেললাম।

ওরা হাসতে থাকে।আর আয়ুসীর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।আয়ুসীকে দেখে আয়ান আরো জোরে হাসতে থাকে।

সারাদিন ট্রেনে ভালোভাবে কাটিয়ে আয়ান আয়ুসী রাতে হোটেলে আসে।আয়ুসী আগে ফ্রেশ হয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকে।আয়ান ফ্রেশ হয়ে আসতেই বলে-চল না,আমরা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

আয়ান অবাক হয়ে বলে-এখন!

আয়ুসী-হ্যাঁ

আয়ান আয়ুসীর গলাটা দুহাতে জড়িয়ে বলে-না,সোনা এখন নয়।কাল নিয়ে যাব।

আয়ুসী-কিন্তু

আয়ান-তুমি শুধু আমার থেকে পালাই পালাই কর।এতো দিন দূরে ছিলে এখনও।

এই বলে আয়ান রাগ করে দূরে চলে যায়।আয়ুসী কাছে এসে বলে-এতো রাগ

আয়ান-হুম,তুমি একটুও আমার কাছে থাকো না।আমাকে ভালোবাস না।

আয়ুসী আয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ানও তাকিয়ে থাকে।আয়ুসী আয়ানের কপালে কিস করে।আয়ান ভাবতে পারেনি আয়ুসী এমন করবে।

আয়ান দুষ্টুমি করে নিজের গাল দেখায়।আয়ুসী হেসে আয়ানের গালে কিস করে।আয়ান অন্য গাল দেখায়।আয়ুসী অন্য গালে কিস করে।এবার আয়ান নিজের ঠোঁট দেখায়।

আয়ুসী-ইশ

এই বলে আয়ুসী পালাতে গেলে আয়ান ধরে ফেলে।আয়ুসীকে কোলে তুলে খাটে নিয়ে যায়।আয়ান আয়ুসীর কপালের চুল গুলোকে সরিয়ে কপালে কিস করে।আয়ুসী বিছানার চাদর শক্ত করে ধরে।আয়ান আয়ুসীর দুই গালে কিস করার পর যখন ঠোঁটে কিস করতে যাবে তখন আয়ুসী হাত নিজের ঠোঁটের উপর রাখে।আয়ান হেসে আয়ুসীর হাতের উপরে কিস করে হাতটা সরিয়ে দেয়।আয়ুসীর সারা শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে।আয়ান আস্তে আস্তে আয়ুসীর ঠোঁট নিজের দখলে করে নেয়।আয়ুসী আর বাঁধা দেয় না।এদিকে কিস করার পর আয়ান আয়ুসীর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়।আয়ুসী আয়ানের জামা শক্ত করে ধরে।

আজ দুটি হৃদয় এক হয়ে যায়।দুটি হৃদয় বাঁধা পরে।ভুল বোঝাবুঝিতে যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলেছিল আয়ুসীর ভালোবাসার কাছে তা হেরে যায়।প্রতিশোধের আগুন নিভে আয়ুসীর ভালোবাসার প্রজাপতি আজ সারা ঘরে উড়ে বেড়ায়।প্রজাপতির পাখায় আয়ুসী আর আয়ানের নাম লেখা।যে নাম এই জন্ম নয় সাত জন্ম ধরে লেখা থাকবে।আর বারে বারে ভালোবাসার জিত হবে।প্রত্যেকবার আয়ান আয়ুসীর ভালোবাসার কাছে নিজেকে ধরা দেবে।আর আয়ুসীও আয়ানের কাছে নিজেকে সঁপে দেবে।এই ভাবেই বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা।এই ভাবে তারা একসাথে সুখে থাকুক।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here