প্রতিশোধ পর্ব_২১

প্রতিশোধ পর্ব_২১
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

আয়ানকে পুলিশে নিয়ে গেছে।পুলিশ অফিসারকে খুন করার অপরাধে।-কল্যাণী দেবী

ধ্রুবর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়।হাত পা কাঁপতে থাকে।সে কী শুনল!আয়ানকে!

না,না,এরকম হতে পারে না।-ধ্রুব চীৎকার করে বলে।

তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ওঠায়।নীচে পড়ে ফোনের থেকে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।ধ্রুব খুঁজতে থাকে।কিন্তু সামনে যে সব অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে।দুচোখে জলে ভরে গেছে।হাতড়ে হাতড়ে সব খুঁজে ফোনটা ঠিক করে।চোখের জল জামার হাতাতে বারবার মুছতে থাকে।কিন্তু জল আটকায় না।ফোনটা ঠিক করেই আয়ুসীকে ফোন করে।কিন্তু ফোন বন্ধ।নিলয়কে ফোন করে।নিলয় ফোন ধরে।

হ্যালো,নিলয় তুই কোথায়?-ধ্রুব

কেন ধ্রুব দা?আমরা তো বাড়ি ফিরছি।-নিলয়

আমরা মানে আয়ুসীও তোর সাথে আছে?-ধ্রুব

হ্যাঁ,কেন ধ্রুবদা?-নিলয়

বলছি,তোরা এখনই থানাতে চলে আয়।-ধ্রুব

কেন?-নিলয়

আগে আয় তারপর বলছি।-ধ্রুব

এদিকে আয়ুসী কৌতূহলী হয়ে নিলয়ের দিকে চেয়ে থাকে।নিলয় ফোন রেখে বলে-ধ্রুবদা এখনই থানাতে যেতে বলল।

আয়ুসী অবাক হয়ে বলে-কেন?

নিলয়-জানিনা।তাড়াতাড়ি চল।

আয়ুসী আর নিলয় থানার দিকে এগিয়ে যায়।ওইদিকে ধ্রুবও আসে।ধ্রুব ফোনে ইচ্ছা করেই বলে নি।তার মনে হয়েছে তাতে ওরা ভয় পেয়ে যেত।আর আয়ুসী হয়তো নিজেকে সামলাতে পারত না।

আয়ুসী আর নিলয় আগে এসে থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।ধ্রুব আসে পরে।সে ছুটতে ছুটতে আসে।

ধ্রুবকে দেখে আয়ুসী বলে-কী হয়েছে?

ধ্রুব হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকে।আয়ুসী শুনে সেখানেই বসে পরে।আয়ুসী জোরে কাঁদতে থাকে।ধ্রুব আর নিলয় আয়ুসীকে সামলাতে পারে না।

প্লিজ আয়ুসী চুপ কর।আয়ানের কিছু হবে না।আমরা পুলিশের সাথে গিয়ে কথা বলব।-ধ্রুব

ধ্রুবর কথায় আয়ুসী চোখ মুছে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে-সত্যি?

হ্যাঁ,সত্যি।এবার ওঠ।-ধ্রুব

আয়ুসী উঠে পরে।তিনজনে থানাতে ঢুকতে যাবে।কিন্তু তাদেরকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

আমরা কেন ভিতরে যেতে পারব না?-ধ্রুব

একটি হাবিলদার আমতা আমতা করে বলে-এখন রাত হয়ে গেছে তাই যেতে পারবেন না।কাল আসুন দেখা যাবে।

ধ্রুব বুঝতে পারে না।কী করবে।আইন সম্পর্কে ধ্রুবর ধারনা কম।

আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-চল,আমরা কাল আসব।

কিন্তু—-এই বলে আয়ুসী কেঁদে ফেলে।

কী করব বলত ওরা তো যেতে দিচ্ছে না।-ধ্রুব

হ্যাঁ,দিদি চল।-নিলয়

আয়ুসী থানার ভিতর উঁকি মারতে থাকে।ধ্রুব হাত ধরে বলে-চল

ধ্রুব একপ্রকার আয়ুসীকে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে যায়।ধ্রুব আয়ুসী আর নিলয়কে ধ্রুবর বাড়িতে নিয়ে যায়।কল্যাণী দেবীকে জড়িয়ে আয়ুসী হাউহাউ করতে থাকে।নিলয়ও কেঁদে ফেলে।আর ধ্রুবর চোখে জল আসলে সে সেখান থেকে সরে পরে।সারারাত কেউ চোখের পাতা এক এক করতে পারে না।এদিকে শ্রেয়া আয়ুসীকে ফোন করলে পায় না।ধ্রুবকে ফোন করে।ধ্রুব বলে আয়ুসী তার কাছেই আছে।ধ্রুব বিভিন্ন উকিলের কাছে ফোন করতে থাকে।কেউ কেস লড়তে চায় না।

অন্যদিকে

আয়ানকে ধরে নিয়ে গেছে।—-

হ্যাঁ,স্যার।—-

উফ্ফ আবার চালে ভুল হয়ে গেল।আচ্ছা ঠিক আছে।এক কাজ কর আয়ানের সাথে কেউ যেন দেখা করতে না পারে।—-

আচ্ছা ঠিক আছে।—-

আর মেয়েটিকে লক্ষ্য রাখ।—-

আচ্ছা স্যার।—-

এই বলে লোকটি চলে যায়।

সকাল হলে তিনজনে আবার থানাতে যায়।কিন্তু সেই একি প্রবলেম।থানার ভিতর ঢুকলেও আয়ানের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয় না।থানার বাইরে বেড়িয়ে আসে।

ধ্রুব বলে-তোরা বাড়ি চলে যা।আমি দেখছি।

কিন্তু আয়ুসী হঠাৎ বলে-আমি বাড়ি যাব না।

ধ্রুব-তাহলে কোথায় যাবি?

জানি না।-এই বলে আয়ুসী চলে যেতে থাকে।

ধ্রুব আর নিলয় আয়ুসীকে ধরতে গেলে আয়ুসী বলে-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।

কিন্তু—-ধ্রুব

আমি ঠিক সময় বাড়ি ফিরে যাব।-আয়ুসী

ধ্রুব আর নিলয় কিছু বললেও আয়ুসী শোনে না।তাই আয়ুসীকে ছেড়ে দেয়।

এদিকে আয়ুসী সেই লোকটিকে খুঁজতে সেই জায়গায় যায়।তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কিছুই পায় না।ক্লান্ত হয়ে এক জায়গায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে।অনেকক্ষণ বসে থাকার পর সে উঠতে যাবে হঠাৎ দূরে একজনকে দেখতে পায়।চিনতে ভুল হয় না।এই সেই লোক।আয়ুসী দেখে লোকটি অন্য রাস্তা ধরেছে।আয়ুসী পিছু নেয়।

এদিকে ধ্রুবর ফোনে শ্রেয়া ফোন করে।

হ্যালো,আমি এখনই আসছি।আপনারা কোথায়?-শ্রেয়া

আসছেন মানে!-ধ্রুব

শ্রেয়া যা বলে তা হল-একটু আগে কিছুছেলে তার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিল।বাবা তাদেরকে একটা ঠিকানাতে যেতে বলে।সেখানে থাকা লোকটি যাতে বাইরে না বার হয় আর আমাদের বাড়িতে যেন না আসে লোকটিকে বলে আসতে বলে।

শ্রেয়া যে ঠিকানা বলে ধ্রুব শুনে অবাক হয়ে যায়।কারন ওই ঠিকানাতে তারা আগেও গিয়েছিল।শ্রেয়াকে ধ্রুব আসতে বলে।আর ধ্রুব আয়ুসীকে ফোন করে।

হ্যালো,তুই কোথায়?-আয়ুসী

আয়ুসী যে লোকটিকে দেখতে পেয়েছে আর তার পিছু নিয়েছে তা বলে।ধ্রুব শুনে বলে-তুই আর এগোবি না।ফিরে আয়।

কেন?-আয়ুসী

আমি যা বলছি শোন।-ধ্রুব

কিন্তু আমি তো লোকটির বাড়ির কাছেই এসে পড়েছি।মনে হল এটাই লোকটির বাড়ি।উনি এখনই ভিতরে গেলেন।-আয়ুসী

ধ্রুব শুনে আঁতকে ওঠে।

প্লিজ আয়ুসী,তুই কোথাও লুকিয়ে পর।-ধ্রুব

কিন্তু এতো কাছে এসে—-আয়ুসী

আমার দিব্যি তুই ওখান থেকে সরে যা।আমরা যাচ্ছি।-ধ্রুব

আয়ুসী চুপ থেকে বলে-ঠিক আছে।

এদিকে শ্রেয়া কিছুক্ষণের মধ্যে এসে যায়।শ্রেয়া নিজেই ড্রাইভ করে এসেছিল।শ্রেয়া আসলে ধ্রুব আর নিলয় উঠে পরে।অন্যদিকে আয়ুসীও লুকিয়ে পরে।আয়ুসী দেখতে থাকে কিছু ছেলে বাড়িতে ঢুকল।আবার কিছুক্ষণ বাদে বেড়িয়েও গেল।ধ্রুব কাছাকাছি এসে ফোন করে।আয়ুসী কোথায় আছে বলে।ধ্রুব,নিলয় আর শ্রেয়া চলে আসে।

কোন বাড়িটা?-ধ্রুব

আয়ুসী হাত দিয়ে দেখায়।

বাড়িটাতে এখন কেউ এসেছিল?-ধ্রুব

আয়ুসী যা দেখে সব বলে।তারা সবাই এগিয়ে যায়। বাড়িটার ভিতরে ঢোকে।ভিতরে গিয়ে দেখে একজন মধ্যেবয়স্ক লোক ঘরের ভিতরের দিকে আছে।তারা ধীরে এগিয়ে যায়।লোকটি পায়ের শব্দে ফিরে তাকায়।

কারা আপনারা?কাকে দরকার?-ধ্রুব

ধ্রুব ইশারা করে আয়ুসীকে জানতে চায় সেই লোকটি কিনা।আয়ুসী মাথা নাড়ে।

ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে বলে-আপনার সাথে কিছু কথা আছে।

লোকটি-কী কথা?

ধ্রুব আয়ুসীর দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে-ও অজয় বাবুর মেয়ে।

লোকটি আয়ুসীর দিকে তাকায়।ধ্রুব লক্ষ্য করে লোকটির মুখের ভাব পরিবর্তন হয়ে গেছে।

লোকটি কিছুটা ভয়ের সাথে বলে-কে অজয়,কে।আমি চিনি না।

ধ্রুব-আপনি চেনেন।তার প্রমান আছে।

লোকটি আরো ভয় পেয়ে বলে-কী প্রমান?

আপনি বিপ্লব নামে কাউকে চেনেন কী?-ধ্রুব

লোকটি দু পা পিছিয়ে যায়।

কে বিপ্লব,আমি কাউকে চিনি না।কাউকে না।-লোকটি

কেন মিথ্যা বলছেন?আমরা সব জানি।আচ্ছা আপনি অপূর্বকে চেনেন না।সে এখন জেলে।-ধ্রুব

লোকটি আঁতকে উঠে বলে-কী খোকাবাবু জেলে!

লোকটির মুখে খোকাবাবু শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়।

কে খোকাবাবু-ধ্রুব

আমি জানি না।-লোকটি

এদিকে আয়ুসী এগিয়ে এসে লোকটির হাত ধরে বলে-প্লিজ বলুন না।আমি আপনার মেয়ের মতো।প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন।

এই বলে আয়ুসী কেঁদে ফেলে।লোকটি আর মিথ্যা বলতে পারে না।

তুমি অজয় বাবুর মেয়ে?-লোকটি

হ্যাঁ,আমি অজয় বাবুর মেয়ে।আচ্ছা আপনি আমার বাবাকে চিনলেন কী করে-আয়ুসী

এদিকে লোকটি সংকোচ করতে থাকে।ধ্রুব লোকটির পাশে এসে বলে-আমরা আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেব না।

ক্ষতি!আমার আবার কী ক্ষতি হবে।নিজের ছেলেকে হারিয়েছি।সে আজ কোথায় কে জানে।জানি না আজ আমার কুনাল কত বড় হয়েছে।-লোকটি

লোকটির মুখে কুনালের নাম শুনে আয়ুসী বলে-কুনাল আপনার ছেলে।

লোকটির চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে-তুমি কুনালকে চেন।

চিনি,কিন্তু সেই কী তা তো জানি না।-আয়ুসী

কোথায় দেখছ?-লোকটি

আয়ুসী সংক্ষেপে বলে।বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়ি শুনে লোকটি বলে-ওই আমার ছেলে।

সবাই অবাক হয়ে যায়।

এদিকে ধ্রুব বলে-আপনি অপূর্বকে চিনলেন কী করে সেটা বললেন না।

লোকটি বলে-বলব বলব সব বলব।কিন্তু তোমরা কথা দাও কুনালকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে।ওকে আমার সাথে দেখা করাবে।

আয়ুসী মাথা নাড়ে।

এদিকে শ্রেয়ার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।কে অপূর্ব!সে নিলয়কে জিজ্ঞাসা করে।নিলয় আয়ানের নাম বলে।শ্রেয়া শুনে অবাক হয়ে যায়।

লোকটি বলতে শুরু করে-অপূর্বর বাবা অখিলেশ আর আয়ুসীর বাবা অজয় ভীষণ ভালো বন্ধু ছিলেন।

ধ্রুব-আপনি এতো সব জানলেন কী করে?

লোকটি-আমি অখিলেশ বাবুর বাড়ি কাজ করতাম।

আয়ুসী লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকে।লোকটি আয়ুসীকে বলে-তুমি তখন অনেক ছোটো।বাবার হাত ধরে আসতে।এক দুবার আমার সাথে তোমার দেখা হয়েছিল।

লোকটি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে-তাদের বন্ধুত্ব ছিল দেখার মত।অজয় বাবুকে অখিলেশ বাবু কখনও কর্মচারী ভাবতেন না।অখিলেশ বাবু তখনকার সবচেয়ে খ্যাতিবান ব্যক্তি।তাঁর সুনাম চারিদিকে।খুব তাড়াতাড়ি তিনি সফলতার সিঁড়িতে উঠে ছিলেন।টাকাপয়সাতে তখন খুব কমজনই তাঁর সমান ছিলেন।আর অজয় বাবু ছিলেন মাটির মানুষ।যখনই বাড়িতে আসতেন হাসিতে বাড়ি জমিয়ে দিতেন।তাছাড়া কারোর বিপদে তিনি পিছপা হতেন না।একবার আমার ছেলের শরীর খারাপ শুনে আমার হাতে টাকা গুঁজে দিয়েছিলেন।বলেছিলেন দরকার পড়লে আরো চাইতে।অখিলেশ বাবুও ভালো ছিলেন।দুইজনকে দেখলে সবাই ভাবত ভাই ভাই। এদিকে বিপ্লব বাবুও মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন অখিলেশ বাবুর সাথে।শুনেছিলাম উনিও একপ্রকার বন্ধু ছিলেন অখিলেশ বাবুর।তারপর সেই রাতে—-

এইটুকু বলে লোকটা থামে।লোকটির চোখে মুখে ভয় ফুটে ওঠে।

আয়ুসী-কোনদিন রাতে

লোকটি বলে-সেইদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছে তাই আমিও বাড়ি আসতে পারিনি।সন্ধ্যা হয়ে যায়।আমি কী করব বুঝতে না পেরে ওপরের ঘরের জিনিসপত্রগুলো ঝাড়তে থাকি।হঠাৎ নীচে চীৎকার শুনতে পাওয়া যায়।আমি ভাবি হয়তো কেউ এসেছে।কিন্তু চীৎকার আরো জোরে হয়।আমি তাড়াতাড়ি করে নীচে এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে।শেষ করে দিয়েছে।

ধ্রুব-কী শেষ হয়ে গেছে?

বিপ্লব বাবু খোকা বাবুর মা বাবাকে মেরে দিয়েছেন।পেট থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।আমাকে দেখে তিনি আমাকে আটকে রাখলেন।আর অন্যদিকে অজয় বাবুকে ফোন করে মিথ্যা বললেন যে এই বাড়িতে বিপদ হয়েছে।কিন্তু নিজের নাম প্রকাশ করেন নি।তারপর আমাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলেন।আর বাড়িটার উপর লক্ষ্য রাখলেন।কিছুক্ষণের মধ্যে অজয় বাবু এলেন।আর ওদেরকে এই অবস্থায় দেখে তিনি ছুটে গেলেন তাদের কাছে।তখনও অখিলেশ বাবু বেঁচে ছিলেন।তিনি কিছু হয়তো বলতে চাইছিলেন।আর তা শোনার জন্য অজয় বাবু বলেছিলেন-আপনার কিছু হবে না।এই বলে তিনি পেটের চাকুটাকে হাত দিয়ে বললেন-আপনার কষ্ট হচ্ছে।এই অবস্থা কে করল।এতেই সব ওলট পালট হয়ে গেল।কারন খোকার মাকে মারার পর অখিলশ বাবুকে সেই একই চাকু দিয়ে মেরেছিলেন।আর চাকুতে অজয় বাবু হাত দেওয়াতে তিনি ফেঁসে গিয়েছিলেন।বিপ্লব বাবু এটাই চেয়েছিলেন।

এই দিকে লোকটি কথা বলছেন।আর তখন নিলয়-শ্রেয়া দি,শ্রেয়া দি বলে চেঁচিয়ে উঠল।

ধ্রুব আর আয়ুসী চেয়ে দেখল শ্রেয়া পড়ে যাচ্ছে।ধ্রুবকে শ্রেয়াকে ধরে ফেলে।তাকে একজায়গায় বসায়।তারা এতোক্ষণ বুঝতে পারে নি শ্রেয়াও যে তাদের সঙ্গে।আর নিজের বাবার এই কাণ্ড জেনে সে কী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

শ্রেয়ার চোখে মুখে আয়ুসী জল দিতে থাকে।কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রেয়া চোখ খোলে।ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকায়।শ্রেয়াকে দেখে তার কষ্ট হয়।শ্রেয়াকে আয়ুসী ধরে ছিল।শ্রেয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে-আমি ঠিক আছি আয়ুসী বৌদি।

এরপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে-আপনি বলুন।

শ্রেয়াকে দেখে ধ্রুব,আয়ুসী আর নিলয় চমকে যায়।

কী হল বলুন।-শ্রেয়া

লোকটি বলে-তারপর সেখানে বিপ্লব বাবু পুলিশকে পাঠায়।আর আমাকে ভয় দেখায় মিথ্যা সাক্ষী দেবার জন্য।আমি না দিতে চাইলে কুনালকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।আর আমি মিথ্যা সাক্ষী দিই যে আমি সব নিজের চোখে দেখেছি।অজয় বাবুকে ফাঁসাতে বিপ্লব বাবুকে বেশি কষ্ট করতে হয় নি।কারন পুলিশ আর উকিল বাবুকেও তিনি একই ভয় দেখিয়েছিলেন।

ধ্রুব-পুলিশ আর উকিল!

হ্যাঁ,পুলিশ বাবু রজত আর উকিল রমেশ বাবু-লোকটি

কাল তো রজত বাবু খুন হয়েছেন।আর তার দোষে তো আয়ান মানে অপূর্ব জেলে।-ধ্রুব

তাহলে বিপ্লব বাবুই হয়তো তাকে—-লোকটি

আচ্ছা,সেই উকিলের বাড়িটা আপনি কী চেনেন?-শ্রেয়া

শ্রেয়ার কথাতে ওরা অবাক হয়ে যায়।এতো শক্ত ও কী করে আছে।

হ্যাঁ,জানি-লোকটি

তাহলে এখনই চলুন।-এই বলে শ্রেয়া উঠে দাঁড়ায়।

লোকটি-এখন!

হুম,আমার গাড়ি আছে।আপনার কিছু হবে না।-শ্রেয়া

সবাই গাড়িতে ওঠে।লোকটি ঠিকানা বলতে থাকে।কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌঁছে যায়।বাড়িটার ভিতরে যায়।

উকিল বাবু সবাইকে দেখে চমকে বলে-তোমরা!

শ্রেয়া উকিল বাবুকে দেখে চিনতে পারে।কারন মাঝে মাঝে তাকে তার বাবার সাথে দেখেছে।

শ্রেয়া-আপনি আমার বাবাকে চেনেন?

উকিল বাবু শ্রেয়াকে চিনতে পারে।

শ্রেয়া বলে-আপনারা এতো খারাপ।এতো বছর ধরে পাপ করে এলেন।

পাপ কিসের পাপ?-উকিল বাবু

একদম মিথ্যা বলবেন না।আমাদের কাছে প্রমান আছে।-এই বলে শ্রেয়া লোকটিকে দেখায়।

উকিল বাবু তো লোকটিকে চেনেন।তিনি কী বলবেন ভেবে পান না।

রজত বাবুকে কাল কে খুন করেছে?-ধ্রুব

আমি জানি না।-লোকটি ঘামতে থাকে।

আপনি জানেন।আপনিই খুন করেছেন।-ধ্রুব চেঁচিয়ে বলে।

উকিল বাবু ভয়ে বলে ফেলে-না,আমি কিছু করিনি।বিপ্লব বাবু,বিপ্লব বাবুই কাল রজত বাবুকে মেরে দিয়েছে।

কেন?-ধ্রুব

কাল আমাদের সাথে কথা বলতে বিপ্লব বাবু সিনু গ্যারেজে ডাকে।রজত বাবুকে বলে তিনি আয়ুসীকে খুন করার প্ল্যান করছেন।আর তার জন্য রজত বাবুর সাহায্য চাই।কিন্তু রজত বাবু রাজি হয় না।তিনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন।কিন্তু ভয়ে পরে খারাপ কাজ করতেন।তাই কাল কথাকাটা কাটিতে তাকে—-।

আমাকে মারতে কেন?-আয়ুসী

তোমাকে মেরে আয়ানের নামে দোষ দেবে।কারন তিনি আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।তিনি তো আয়ানের সম্পত্তি চান।কিন্তু আয়ানের সম্পত্তি আয়ানের একার নয়।আয়ানও জানে না।তোমাদের দুজনের নামে।কারণ এটা আয়ানের পরিবারের নিয়ম।আয়ানের পরিবারে কোনো একসময় বাড়ির বৌকে তাদের বাড়িরই এক ছেলে আর একটা বিয়ে করে বাড়ি থেকে বিনা দোষে তাড়িয়ে দেয়।আর বৌটি নিজেকে শেষ করে দেয়।সেখান থেকে ওই বাড়িতে ওই নিয়ম চলে আসছে।অবশ্য সেটা অনেক আগের ঘটনা।আর আমিই ওদের পারিবারিক উকিল ছিলাম।আর অখিলেশ বাবু কী বুঝে নিজের সম্পত্তি ছেলে আর ছেলের বৌয়ের নামে করে দেন।তাই বিপ্লব প্রথম ভেবেছিলেন আয়ানের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে তারপর সব নিজের মেয়ের নামে লিখিয়ে নিতে।তারপর তোমাকে মেরে আয়ানের উপর দোষ দেবে।কারণ তিনি এটা রটাতে চেয়েছিলেন আয়ান প্রতিশোধ নিয়েছে।কিন্তু আয়ান তোমাকে বিয়ে করলে ওনার প্ল্যান ভেস্তে যায়।

শ্রেয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না।বলে-সম্পত্তি!

হ্যাঁ,তোমার বাবার অখিলেশ বাবুর সম্পত্তির উপর খুব লোভ ছিল।তাই অজয় বাবুকে ফাঁসিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে তিনি বাধ্য করেছিলেন।-উকিল বাবু

আত্মহত্যা!-নিলয়

হ্যাঁ,তখন তো অপূর্ব মানে আয়ান এখানে ছিল না।অজয় বাবুকে ভয় দেখিয়েছিলেন অপূর্বর ক্ষতি করে দেবে।আর অজয় বাবু অপূর্বকে খুব ভালোবাসতেন।আর তাই জেলের মধ্যেই—-।এদিকে আয়ানের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে থাকে।আর তা কাজেও দেয়।তাই অপূর্ব এখানে আসার পর নিজের নাম পাল্টিয়ে দেয়।কিন্তু ইদানিং তিনি কী করবে ভেবে পাচ্ছিলেন না।তাই একটি ছেলেকে আয়ুসীর পিছনে লাগায়।যাতে আয়ান সন্দেহ করে।কিন্তু শুনেছি তাতেও তার কাজ হয় না।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওর কাজ না পাওয়াও বিপ্লব বাবুর চাল।আয়ান আয়ুসীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করা।-উকিল বাবু

আয়ুসী আর ধ্রুবর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ও কুনাল।

এবার কী করতে চান?-ধ্রুব

ঠিক জানি না।এটা জানি আয়ানকে আর জেল থেকে বার হতে দেবে না।-উকিল বাবু

তাহলে কী হবে?-আয়ুসী কেঁদে ফেলে।

শ্রেয়া বলে-আপনি আমাদেরকে সাহায্য করুন।আপনি আয়ানদার হয়ে লড়ুন।

আমি!আমার দিয়ে হবে না।হয়তো আমি নিজের হাতে কোনো খারাপ কাজ করিনি।কিন্তু অজয় বাবুকে তো আমিই জেলে পাঠিয়েছি।বিপ্লব বাবুর কথা মতো।তাই আমি অন্য উকিল ঠিক করে দেব।তোমাদের আমি সাহায্য করব।আর এই পাপ যে বইতে পারছি না।-উকিল বাবু

উকিল বাবু বলেন-তোমরা বাড়ি চলে যাও।এখানে তোমাদের দেখলে ওরা সন্দেহ করতে পারে।কারন আমার বাড়ির উপর নজর রাখা হয়।

কিন্তু—-ধ্রুব

চিন্তা কর না।আমি সব ঠিক করে রাখব।জানি সত্যি সামনে আসলে আমিও রেহাই পাব না।কিন্তু আমি এবার সত্যের হয়ে লড়ব।কাল আয়ানকে কোর্টে তুলবে।আমি ঠিক সময় উকিল নিয়ে চলে যাব -উকিল বাবু

সবাই বেরিয়ে যায়।শ্রেয়ার পা চলে না।আয়ুসী ধ্রুব যে কী বলবে ভেবে পায় না।ধ্রুব বাড়ির কাছে শ্রেয়া গাড়ি দাঁড় করায়।আর ওই লোকটি এখন ধ্রুবর বাড়িতে থাকবে।কিন্তু নিলয় আর আয়ুসী বাড়ি ফিরে গেছে।যাতে কারোর সন্দেহ না হয়।তাই ওরা আগেই নেমে গিয়েছে।

ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় কিছু বলতে যাবে,শ্রেয়া বলে-আমি ঠিক আছি।

এই বলে শ্রেয়া চুপ করে যায়।তারপর ওরা নেমে যায়। শ্রেয়া গাড়ি স্টার্ট দেয়।চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে থাকে।বাড়ি গিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে যাবে তখন পাশের ঘর থেকে শুনতে পায়-কী রে পাস নি আয়ুসীকে?বললাম ওকে খুঁজতে।আর তোরা তোদের দিয়ে কিছু হবে না।

শ্রেয়া দেখে তার বাবাকে।নিজের উপর ঘেন্না হতে থাকে।সে আর দাঁড়ায় না।বেড়িয়ে পরে।ধ্রুবর বাড়িতে গিয়ে সব বলে।কল্যাণী দেবী শুনে কেঁদে ফেলেন।

শ্রেয়া বলে-তোমরা সবাই আমার সাথে আমাদের বাগান বাড়িতে চল।তাহলে কেউ খুঁজে পাবে না।কারণ নিজের বাড়িতে তো কেউ খুঁজতে যাবে না।

ধ্রুব সায় দেয়।আর সবাই শ্রেয়ার বাগান বাড়িতে যায়।এদিকে শ্রেয়া আবার নিজের বাড়ি ফিরে আসে।মাকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসে।শ্রেয়ার মা সুষমা দেবী শুনে প্রথম শ্রেয়াকে চড় মারে।কিন্তু সেই লোকটির কাছ থেকে সব শুনে তিনি কাঁদতে থাকেন।

এদিকে নিলয় বলে-শ্রেয়া দি তুমি এখানে এসেছ কেউ সন্দেহ করবে না।

শ্রেয়া অনেক কষ্টে হেসে বলে-না রে,আমি আর মা মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকি।

ধ্রুবর শ্রেয়াকে দেখে খুব কষ্ট হতে থাকে।সুষমা দেবীর কাছে কল্যাণী দেবী,আয়ুসী আর নিলয় বসে থাকে।ধ্রুব শ্রেয়াকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে।খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়ে দেখে শ্রেয়া অন্ধকারে দাঁড়িয়ে।ধ্রুব শ্রেয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়।শ্রেয়া একবার ধ্রুবর দিকে চেয়ে নীচে চলে আসতে থাকে।

ধ্রুব পিছন থেকে ডাকে-শ্রেয়া

শ্রেয়া দাঁড়িয়ে পরে ফিরে তাকায়।কিন্তু ধ্রুব কিছু বলতে পারে না।

ধ্রুব বলে-না,কিছু নয়।

শ্রেয়া আবার চলে যেতে থাকে।ধ্রুব আবার ডাকে কিন্তু শ্রেয়া দাঁড়িয়ে পরলেও ফিরে তাকায় না।

ধ্রুব বলতে থাকে-শ্রেয়া,আমি জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে।আমি আপনাকে এইসবে জড়িয়ে—-।

ধ্রুব কথাকে শ্রেয়া শেষ করতে দেয় না।ছলছল চোখে ধ্রুবর দিকে ফিরে বলে-আমি খুনির মেয়ে।আমি—-

আর শ্রেয়া কিছু বলতে পারে না।কান্নায় ভেঙ্গে পরে।ধ্রুব এসে শ্রেয়াকে ধরে।

প্লিজ শান্ত হন।-ধ্রুব

আমি খুনির মেয়ে।আমি খুব খারাপ।-শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে।

কে বলেছে আপনি খারাপ।আপনি না থাকলে আমরা কী কিছু করতে পারতাম।-ধ্রুব

আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই।আমি মরে যেতে চাই।-শ্রেয়া

এসব কী বলছেন।এমন বলবেন না।আপনি ভেঙ্গে পড়লে আপনার মায়ের কী হবে।-ধ্রুব

ধ্রুবর কথায় শ্রেয়া ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে নেয়।তারপর বলে-হ্যাঁ,ঠিক বলেছেন।

এই বলে শ্রেয়া চলে যাচ্ছে।তখন ধ্রুব বলে-শ্রেয়া আজ আমি একটা কথা বলতে চাই।জানি এটা ঠিক সময় নয়।তাও বলছি।আমি আপনার কথাতে রাজি।

শ্রেয়া ফিরে তাকিয়ে বলে-কী কথা?

ধ্রুব একেবারে শ্রেয়ার সামনে এসে বলে-আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।সারাজীবনের জন্য তোমাকে কাছে পেতে চাই।

ধ্রুব শ্রেয়াকে তুমি করে বলে।শ্রেয়া শুনে বলে-আপনি বুঝি ভাবছেন আমি ভেঙ্গে পরব তাই আমার পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।

ধ্রুব-না শ্রেয়া।হয়তো সেদিনই আমি বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি।তোমার কথাতে হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজের কথা।যখন তুমি চলে গেলে তখন জানিনা কেমন যেন কষ্ট হতে থাকল।তোমার কষ্ট হলে আমি যে দেখতে পারি না।মনে হয় ছুটে গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরি।আর একেই যদি বলে ভালোবাসা তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসি শ্রেয়া।

শ্রেয়ার চোখ ভিজতে থাকে।শ্রেয়া বলে-কিন্তু আমি যে একজন—-

ধ্রুব শ্রেয়ার মুখে হাত দিয়ে বলে-একদম ওসব কথা না।কারোর দোষে কেউ দোষী হয় না।তোমার কিসের দোষ।

শ্রেয়া আর থাকতে পারে না ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বলে-কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না তো।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।

ধ্রুব শ্রেয়াকে শক্ত করে নিজের বাহুদোরে আবদ্ধ করে বলে-কখনও ছেড়ে যাব না।আমিও তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।

পরদিন আয়ানকে কোর্টে তোলা হয়।আর বিপ্লব বাবু পাগলের মত করতে থাকেন।কারন তিনি আয়ুসীকে খুঁজে পান নি।তিনি চেয়েছেন আয়ান যখন জেলে গিয়েছে আর যেন না বার হতে পারে।আর পরে জেল থেকে আয়ানের থেকে তার সম্পত্তি আগে আয়ুসীর নামে লিখিয়ে নেবে ঠিক করে।তারপর আয়ুসী কাছ থেকে পুরো সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেবে।আর আয়ুসীকে মেরে ফেলবে না।তাহলে সন্দেহ তো বেড়ে যাবে।আয়ুসীকে বাঁচিয়ে রাখবে।আয়ানের স্ত্রী হিসাবে।কিন্তু তা দুনিয়ার চোখে।

আয়ানকে গীতাতে হাত দিয়ে শপথ নিতে বলা হয়।আয়ান নেয়।কিন্তু তার চোখ তার নিজের লোকদের খুঁজতে থাকে।কিন্তু তখনও বিপ্লব আঙ্কেল ছাড়া কেউ আসে নি।আয়ানের পক্ষে উকিল ও নেই।এদিকে বিপ্লব আঙ্কেলকে আয়ানের সম্পর্কে বলতে বলা হয়।সামনের উইটনেস বক্সে দাঁড়িয়ে যা বলে আয়ান শুনে চমকে যায়।

হ্যাঁ,আয়ানই খুন করেছে।আমি তো ওকে চিনি কয়েকদিন ধরে ও বিভিন্ন বাজে কাজে লিপ্ত হয়েছে।-এই বলে বিপ্লব আঙ্কেলের ঠিক করা উকিলের দিকে চায়।

তিনি কিছু কাগজ জজ সাহেবের দিকে এগিয়ে দেয়।সেখানে দেখায় আয়ান নারী পাচার থেকে ড্রাগের কারবার সব করে।

বিপ্লব আঙ্কেল বলে-এই জন্যই সে রজত বাবুকে হাত করতে গিয়েছিল।আয়ান যে রজত বাবুর বাড়ি যেত তা বলে।

এসব বিপ্লব আঙ্কেলের প্ল্যান।তিনি আগে থেকেই রজত বাবুর বাড়ির লোককে ভয় দেখিয়ে দিয়েছেন।সব প্রমাণ যখন আয়ানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তখন রমেশ বাবুর ঠিক করা উকিল দীনেশ বাবু আসেন।অতি খ্যাতনামা উকিল।একটাও কেস হারেন নি।আর সত্যের হয়ে লড়েন।

সরি,আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমার আসতে দেরি হয়ে গেল-দীনেশ বাবু

তিনি এসে বলেন-আমি কী কিছু বলতে পারি।আমি আয়ানের পক্ষের উকিল।

অবশ্যই-জজ সাহেব

দীনেশ বাবু প্রথম ডাকেন রমেশ বাবুকে।যা দেখে বিপ্লব বাবু চমকে ওঠেন।রমেশ বাবু উইটনেস বক্সে আসেন।এসেই তিনি যা বলেন তা বিপ্লব বাবু আশা করে নি।

রমেশ বাবু বলেন-আমি স্বচক্ষে দেখছি রজত বাবুকে খুন করতে।আর শুধু রজত বাবুকে নয় উনি অখিলেশ বাবু আর ওনার স্ত্রীকে খুন করেছেন।আর অজয় বাবুকে আত্মহত্যার প্ররচনা দিয়েছেন।

এদিকে সবাই এসে পরে।

বিপ্লব বাবু চেঁচিয়ে বলে-কী সব বলছেন।কী প্রমাণ আছে।

দীনেশ বাবু তার দ্বিতীয় প্রমান সেই লোকটিকে আনে।যিনি আয়ানের বাড়িতে কাজ করত।

তিনি আসেন এবং সব সত্যি বলতে থাকেন।শ্রেয়াও নিজের বাবার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়।কারন সেও শুনেছিল তার বাবা আয়ুসীকে খুঁজছে।সমস্ত প্রমাণ হয়ে যায়।এদিকে আয়ানের রাগে ঘৃণায় সারা শরীর কাঁপতে থাকে।

বিপ্লব বাবু নিজের বিপদ বুঝে পালাতে যাবেন পুলিশ গিয়ে ধরে ফেলে।জজ সাহেব আয়ানকে ছেড়ে দেয়।আর বিপ্লব আঙ্কেলের দশ বছরের সাজা হয়।চারটে জীবনকে শেষ করার অপরাধে।আর রমেশ বাবুর কয়েক বছরের জেল হয়।এদিকে আয়ুসী কুনালকে দেখতে পেয়ে ওর কাছে যায়।কুনাল চলে যাচ্ছে।তখন আয়ুসী বলে-আপনি কার কোথায় এসব করেছিলেন।

কুনাল যা বলে তা হল-সে হস্টেলে বড় হয়েছে।কিন্তু কিছু বছর আগে এখানে ফেরে।আর জানতে পারে তার বাবা আছে।বিপ্লব আঙ্কেল তাকে বলেছিল তাকে সে গুড়িয়ে পেয়েছে।তাই বাবা আছে জানতে পেরে সে বাবার পরিচয় জানতে চাইলে তাকে বলে বলবে।তার আগে তার কাজ করতে হবে।তাই আমাকে দিয়েই আপনাকে—-

আয়ুসী বুঝতে পারে।আয়ুসী কুনালকে তার বাবার পরিচয় বলে।

এদিকে আয়ান ছাড়া পেয়ে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে।তারপর বলে-আয়ুসী কোথায়?

কিন্তু কেউ আয়ুসীকে দেখতে পায় না।এমনকি নিলয়কেও না।

চারিদিকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু আয়ুসীকে পায় না।আয়ানের বাড়ি,ধ্রুবর বাড়ি এমনকি নিলয়ের বাড়িতেও যাওয়ার কথা ভাবে।ভাবে সে হয়তো এর মধ্যে কোথাও গিয়ে থাকবে।কিন্তু তারা তো সবাই এখানে।তাহলে?কিন্তু কোথাও পায় না।

আয়ান ধ্রুবকে ধরে বলে-আয়ুসী কোথায় ধ্রুব? কোথায় আমার আয়ুসী?

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here