প্রতিশোধ পর্ব_২০

প্রতিশোধ পর্ব_২০
💘

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

ছেলেটি চলে যায়।আর লোকটি রাগে ফুঁসতে থাকে।হঠাৎ লোকটি একটি ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে-মেয়েটিকে চড় মেরেছে আয়ান কী—-

মানে,আপনিই তো বলেছিলেন ওনাকে কোম্পানিতে গন্ডগোল লেগেছে এই কথা বলতে তাই আমিও বলেছিলাম আর সব ঠিক মতই হয়েছিল উনি ওদেরকে একসাথে দেখেছিলেন।কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি চড় মেরে বসে—-

তারমানে আয়ান সব দেখছে!তোদের দিয়ে কিছু হবে না।-এই বলে লোকটি ছেলেটিকে খুব জোরে চড় মারে।

ছেলেটি মনে মনে বলে-যার পিটুন খাওয়ার কথা আর কে খাচ্ছে।কেন যে কুনালকে চলে যেতে বললাম।
এই বলে ছেলেটি গালে হাত বোলাতে থাকে।

লোকটি আবার বলে-মেয়েটির ভাইয়ের কী খবর?

অন্য একটি ছেলে বলে-স্যার আপনার কথা মত ওকে কোনো কোম্পানি কাজে নেয় নি।আপনি বলেছিলেন ছেলেটির স্বভাব খারাপ তাই—-

লোকটি-তোদের দিয়ে কিচ্ছু হয় না।যেটা আমি করি সেটা ছাড়া কী তোদের দিয়ে আর কোনো কাজ হয়।

সবাই চুপ করে যায়।

লোকটি বলতে থাকে-আর নয়।এবার যা করব নিজে করব।খুব শীঘ্রই শেষ করে দেব।

এই বলে লোকটি হাসতে থাকে।লোকটির হাসির শব্দে রাতের নিস্তব্ধতা যেন কেটে যায়।ঘুমন্ত প্রকৃতি যেন কোনো অচেনা ভয়ে ঘুমের দেশ থেকে ফিরে আসে।

পরদিন আয়ুসী অফিস থেকে আয়ানকে না জানিয়ে ধ্রুবর সাথে দেখা করতে যায়।একটা কফি শপে ধ্রুবকে আসতে বলে।ধ্রুব এসে আগেই অপেক্ষা করছিল।আয়ুসীকে দেখে বলে-কী রে কিছু প্রবলেম হয়েছে?

আয়ুসী চেয়ার টেনে বসে সামনে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে জল খেয়ে নেয়।সে তো ধ্রুবকে বলতে এসেছে।কিন্তু ভয় পাচ্ছে।যদি ধ্রুব ভুল বোঝে।আয়ুসী চুপ করে থাকে।

কী রে কিছু তো বল-ধ্রুব

আয়ুসী এক নিশ্বাসে বলে-তুমি জানো আমি কে?আমার আসল পরিচয় কী?আমি কার মেয়ে?

এই বলে আয়ুসী থামে।ধ্রুবর বুঝতে বাকি থাকে না।আয়ুসী কিসের ইঙ্গিত করছে।

আমি জানি।আয়ান সব বলেছে।-ধ্রুব

আয়ুসী একটু অবাক হয়।

ও,তুমি জানো।কিন্তু বিশ্বাস কর আমার বাবা খুন করেনি।-আয়ুসী

ধ্রুব আয়ুসীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কী সব বলছিস।আর এখন এসব কথা বলছিস কেন?তার মানে আয়ান কী তোকে—-ধ্রুব

আয়ুসী মাথা নীচু করে নেয়।

ধ্রুব টেবিলের উপর জোরে মেরে বলে-আমি যেটা সন্দেহ করছি তাহলে সেটাই ঠিক।

আয়ুসী আবার বলে-সত্যি আমার বাবা খুন করেনি।

আয়ুসীর বারবার এই কথাতে ধ্রুব একটু অবাক হয়ে বলে-তুই কী করে জানলি।তখন তো তুই ছোটো ছিলিস।

আমার বিশ্বাস ছিল আমার বাবা এরকম করতে পারে না।আর তা ঠিক।সেদিন বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে যা শুনেছি—-আয়ুসী

আয়ুসীর কথাকে মাঝপথে থামিয়ে ধ্রুব বলে-কী শুনেছিস?

আয়ুসী সব বলে।ধ্রুবর শুনে মাথা ঘুরতে থাকে।

আমি একটি লোককে দেখেছিলাম।আর কাউকেই দেখতে পায়নি।আচ্ছা বিপ্লব আঙ্কেলকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে হয় তো-আয়ুসী

ধ্রুব চীৎকার করে বলে-না

আয়ুসী ভয় পেয়ে যায়।

কেন ধ্রুবদা-আয়ুসী

বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে শুনে ধ্রুব কিছু ধারনা করতে পারে।যে লোক একটি ছোটো ছেলেকে ভুল বোঝাতে পারে।তার মনকে বিষিয়ে দিতে পারে।তার তো কোনো উদ্দেশ্য থাকবেই।আর ধ্রুব বিপ্লব আঙ্কেলকে একদম দেখতে পারে না।কিন্তু আয়ুসীকে কিছু বলে না।

ধ্রুব বলতে থাকে-তুই নিলয়কে কিছু বলেছিস?

না-আয়ুসী

কেন,ওকে এখনই ডাক।-ধ্রুব

কিন্তু-আয়ুসী

ডাক বলছি-ধ্রুব

আয়ুসী নিলয়কে ফোন করে।কিছুক্ষণের মধ্যে নিলয় চলে আসে।আয়ুসী বুঝতে পারে না ধ্রুব কী করতে চাইছে।

আমি জানি আয়ুসী তুই ভাবছিস এসবে নিলয়কে জড়িয়ে কী লাভ?কিন্তু আয়ুসী ও তোর ভাই।ওরও বিপদ কম নয়-ধ্রুব

আয়ুসী ভাবে সত্যি তো।এদিকে নিলয় বুঝতে পারে না কী হচ্ছে।

কী হয়েছে দিদি-নিলয়

আয়ুসী কিছু বলতে পারে না।ধ্রুবই সব বলে।আয়ানের পরিচয় থেকে বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা।নিলয় শুনে আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে বলে-তার মানে আয়ানদা তোকে—-

আয়ুসী মাথা নীচু করে নেয়।ভাইয়ের চোখের দিকে তাকাতে পারে না।

ধ্রুব বলতে থাকে-আমাদের প্রথম কাজ বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে নজর রাখা।

বিপ্লব আঙ্কেলের বাড়িতে কেন?-আয়ুসী

ধ্রুব যে বিপ্লব আঙ্কেললে সন্দেহ করছে ধ্রুব তা বলে না।বলে-তুই তো লোকগুলোকে ওদের বাড়িতে দেখেছিস তাই ওই বাড়িতে নজর রাখতে হবে।আর উনি কার সাথে কথা বলছেন।কোথায় যাচ্ছেন সব।

আয়ুসী মাথা নাড়ে।

ধ্রুব আবার বলা শুরু করে-তুই তো বললি ওই লোকটিকে কোনো বাসস্ট্যান্ডে দেখেছিলিস সেখানে লোকটির খোঁজ লাগাতে হবে।

হ্যাঁ,ধ্রুবদা তুমি ঠিক বলেছ।-নিলয়

এদিকে এরা কথা বলছে হঠাৎ পাশে থেকে-আয়ুসী বৌদি তোমরা এখানে!

সবাই দেখে শ্রেয়া দাঁড়িয়ে।সবাই ভয় পেয়ে যায় যে শ্রেয়া কিছু শুনে ফেলেনি তো।

আয়ুসী নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে-আরে শ্রেয়া তুমি এখানে।বস।

শ্রেয়া ধ্রুব আর আয়ুসীর মাঝখানের খালি চেয়ারে বসতে বসতে বলে এই বান্ধবীরা আসবে তাই—-।তোমরা।

আয়ুসী একটু ইতস্তত করে বলে-ওই ভাই আর আমি এসেছিলাম।আর ধ্রুবদার সাথে দেখা হয়ে গেল।

ওও।-এই বলে শ্রেয়া ধ্রুবর দিকে তাকায়।ধ্রুব চোখে চোখ পরে গেলে শ্রেয়া আবার আয়ুসীর দিকে ফিরে যায়।

এদিকে শ্রেয়া হঠাৎ নিজের ব্যাগে কী যেন খুঁজতে থাকে।

কী হয়েছে শ্রেয়া?-আয়ুসী

আমার ফোনটা পাচ্ছি না।-শ্রেয়া

কী,ভালো করে খুঁজে দেখ।-আয়ুসী

শ্রেয়া হঠাৎ করে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে-আমার ফোনে একটা কল করুন না।

শ্রেয়া ধ্রুবকে বলবে ধ্রুব তা ভাবতে পারেনি।তাই তার বুঝতে সময় লাগে।

এদিকে শ্রেয়া বলতে থাকে-করুন কল।আমার নম্বর হল———

ধ্রুব-আচ্ছা।দাঁড়ান একটু।হ্যাঁ বলুন।

ধ্রুব শ্রেয়ার ফোনে কল করে।ফোনটা বাজে শ্রেয়ার ব্যাগের ভিতরেই।

ও,ফোনটা তো ব্যগেই ছিল।আর আমি তখন থেকেই খুঁজে চলেছি।-শ্রেয়া একটু আশ্চর্য হয়ে বলে।

এদিকে শ্রেয়ার বান্ধবীরা এসে পরে।শ্রেয়াকে দেখতে পায়।ওরা ডাকলে শ্রেয়া চলে যায়।

এই দিদি,শ্রেয়া দিদি কিছু কী শুনেছে?-নিলয়

মনে তো হল না।-ধ্রুব

আমারও।মেয়েটা কিন্তু খুব ভালো।-আয়ুসী

এরপর তিনজনে উঠে পরে।তারপর তিনজনে সেই বাসস্ট্যান্ডের কাছে যায়।বিভিন্ন ওলি গলি ঘুরতে থাকে।কিন্তু লোকটির টিকি খুঁজে পায় না।ক্লান্ত হয়ে বাড়ির দিকে এগোতে থাকে।

ধ্রুব বলে-নিলয় মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে থাকবে।কারন ও আমাদের বাড়িতে থাকলে সন্দেহ করতে পারে।ওরা নিশ্চয় তোদের উপর নজর রেখেছে।

আয়ুসী ভয় পেয়ে যায়।ধ্রুব দেখতে পেয়ে বলে-ভয় পাস না।আমি তোর ভাইয়ের উপর নজর রাখব।

নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-নিলয় তুই সাবধানে থাকিস।

নিলয়-হুম,আর ধ্রুবদা আমার বন্ধুদের বলব ওই বাড়িতে নজর রাখতে।

কিন্তু-আয়ুসী

দিদি,চিন্তা করিস না।ওরা খুব ভালো।-নিলয়

সাবধানে।-ধ্রুব

হুম-এই বলে নিলয় চলে যায়।

ধ্রুব আয়ুসীকে বলে-আয়ানকে এখন কিছু বলিস না।

আয়ুসী-আমি বলিনি।

ধ্রুব মনে মনে বলে-তুই বললেও ও বিশ্বাস করবে না।কারন বিপ্লব আঙ্কেলের নামে ও—-।

এদিকে আয়ুসীর মনে হয় কুনালের কথা ধ্রুবকে বলে দেওয়া উচিত।তাই সে ধ্রুবকে সব বলে দেয়।ধ্রুব শুনে কিছুটা চমকে যায়।বুঝতে পারে তাই জন্য আয়ান এতো চুপ।

ধ্রুব বলে-আচ্ছা,তুই বাড়ি যা।আমি পরে যাব।

আয়ুসী চলে যায়।ধ্রুব বাড়ি চলে আসে।বাড়ি ফিরে চিন্তা করতে থাকে কী করবে।

এদিকে ধ্রুবর ফোন বেজে ওঠে।ফোনটা ধরে ওপার থেকে-আমি শ্রেয়া বলছি।

ধ্রুব আশ্চর্য হয়ে বলে-শ্রেয়া!

হুম,আপনার সাথে কথা ছিল-শ্রেয়া

হ্যাঁ,বলুন-ধ্রুব

শ্রেয়া বলতে থাকে-জানি এরকম ভাবে কল করা ঠিক হয়নি।আর আমি তখন আপনার নম্বরটা ইচ্ছা করে নিয়েছি মানে আমার ফোনটা তখন হারায়নি।আমি ইচ্ছা করে—-

ধ্রুব শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়।

ধ্রুব বলে-আপনি কেন ওরকম করলেন?আমার নম্বরের জন্য।

হুম-শ্রেয়া

কিন্তু কেন?-ধ্রুব

শ্রেয়া চুপ করে থাকে।

কী হল-ধ্রুব

আমি আপনাকে পছন্দ করি।জানিনা কী ভাবে।আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি-শ্রেয়া

ধ্রুব শুনে খাটের উপর বসে পরে।

এসব কী বলছেন!-ধ্রুব

যেটা বলছি সেটা সত্যি।আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে পারি না।হ্যাঁ,ফোন নম্বরটা হয়তো ছলনা করে নিয়েছি।কারন তখন আপনাকে দেখে আমার ওটাই মাথায় এসেছিল।তাই–শ্রেয়া

ধ্রুব চুপ করে শুনে যায়।তারপর বলতে থাকে-দেখুন আমার আর আপনাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য।আপনারা কোথায় আর আমরা।আপনাদের যা আছে—-

ধ্রুবর কথা শ্রেয়া শেষ করতে দেয় না।বলে-আমি ওসব মানি না।ওসব কথা বাদ দিয়ে অন্য কিছু থাকলে বলুন।আর হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি বলে আপনাকেও যে ভালোবাসতে হবে তার কোনো মানে নেই।আপনার আমার নাও পছন্দ হতে পারে।

ধ্রুব শুনে চুপ করে থাকে।সে বুঝতে পারে না কী বলবে।

শ্রেয়া বলে-আপনি ভেবে দেখুন।আমি রাখছি।

শ্রেয়া ফোন কেটে দেয়।কয়েকমিনিটের মধ্যে এতো কিছু হয়ে গেল ধ্রুব তা বিশ্বাস করতে পারে না।শ্রেয়া তাকে—-।

ধ্রুব ঘরের মধ্যে পাইচারি করতে থাকে।সারারাত ঘুমায় না।ভোরের দিকে চোখ লেগে যায়।ফোনের অ্যালার্মে ঘুম ভেঙ্গে যায়।তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে ফোন করে শ্রেয়াকে।কারন সে একটা কথা ভেবেছে।তাই শ্রেয়াকে ফোন করে বলে বিকালে দেখা করবে।

বিকালে একটা ফাঁকা জায়গায় ধ্রুব এসে দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে শ্রেয়া এসে পরে।শ্রেয়া আসতে ধ্রুব বলে-আমি কিন্তু আপনাকে হ্যাঁ বলার জন্য ডাকিনি।

আমি জানি-শ্রেয়া

শ্রেয়ার কথায় ধ্রুব অবাক হয়ে যায়।

জানেন!-ধ্রুব

শ্রেয়া একটু হেসে বলে-হুম,আমি আপনাকে ভালো করে জানি।আপনাকে আমি প্রথম আয়ানদার সাথে দেখেছিলাম।তারপরে যতবার দেখছি তাও আয়ানদার সাথে।অবশ্য মাঝে মধ্যে রাস্তাতেও দেখছি।

ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

শ্রেয়া কিছুটা থেমে বলে-আমি জানি আপনি হ্যাঁ বলার জন্য ডাকেন নি।তাই আমি এতোদিন আপনাকে বলিনি।জানি আপনার উত্তর নাই হবে।আপনি যে কোনো মেয়ের দিকে তাকান না।মেয়েদের একটু এড়িয়েই চলেন।কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।বলেই ফেললাম।

শ্রেয়া থেমে যায়।ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলে-কেন ডেকেছেন?

ধ্রুব অন্য দিকে তাকিয়ে বলে-আমি হ্যাঁ বলতে পারি।কিন্তু একটা শর্তে।জানি এটা ঠিক নয়।তবুও—-

শ্রেয়া বলে-কী শর্ত।

ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-মানে,তোমাকে তোমার বাড়ির লোকজনের উপর নজর রাখতে হবে।

শ্রেয়া-কী!আমার বাড়ির লোকের উপর!

আমি জানি আমি হয়তো ঠিক কথা বলছি না।-ধ্রুব

কেন নজর রাখতে হবে?-শ্রেয়া

ধ্রুব চুপ করে থাকে।কিছু বলে না।

আচ্ছা বলা যাবে না।ঠিক আছে।কাদের উপর নজর রাখতে হবে।বাড়িতে তো আমি বাবা আর মা থাকি।-শ্রেয়া

আপনার বাবা মানে তার সাথে কারা দেখা করতে আসছে।উনি কোথায় যাচ্ছেন।এইসব জেনে আমাকে খবর দেওয়া-ধ্রুব

আচ্ছা,ঠিক আছে।-শ্রেয়া

ধ্রুব অবাক হয়ে যায়।ভাবতে পারেনি এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে।এদিকে শ্রেয়ার রাজি হওয়ার কারন সে দেখছে তার বাবার সাথে অনেকেই দেখা করতে আসে।যাদের শ্রেয়ার পছন্দ নয়।আর সে ধ্রুবকে বিশ্বাস করে।কেন করে সে নিজেও জানে না।

আপনি রাজি!আপনার মনে কোনো প্রশ্ন নেই?-ধ্রুব

হ্যাঁ,রাজি।কোনো প্রশ্ন নেই।আপনার উপর বিশ্বাস আছে।-শ্রেয়া

ধ্রুব-বিশ্বাস!

হ্যাঁ,আপনাকে।জানি না কেন।কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করি।আচ্ছা আমি এটা করলে আপনি আমার কোথায় রাজি হয়ে যাবেন?-শ্রেয়া

শ্রেয়ার কথায় ধ্রুব অন্যদিকে ফিরে যায়।

শ্রেয়া হেসে বলে-চিন্তা নেই।আমি আপনাকে কিছু করতে বাধ্য করব না।আমি আপনাকে ভালোবেসেছি এটা ঠিক তাই বলে আপনিও আমাকে পছন্দ করবেন এ হবে তা আমি খুব একটা আশা রাখি না।আমি এটাও বলব না আপনাকে না পেলে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করব না।এসব বলব না।কারন আমি বিয়ে না করতে চাইলেও বাড়ি থেকে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে।আর আমি করেও নেব।হয়তো আপনাকে ভুলতে পারব না।কারন শুনেছি প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায় না।তাই বলে চেষ্টা করব ভোলার।আর নতুন জীবন শুরু করব।

শ্রেয়া কথায় ধ্রুব শ্রেয়ার দিকে তাকায়।শ্রেয়া একটা কুর্তি আর জিন্স পরে এসেছে।আধুনিক পোশাক পড়লেও মুখের লক্ষ্মীশ্রী ধ্রুবকে আকৃষ্ট করে।

ধ্রুব কিছু বলবে তখন শ্রেয়া বলে-চিন্তা নেই না হলেও আমি খুশিই থাকব।ভালোবেসে কাছে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।আর আমি তো এতদিন—-

শ্রেয়া আর কিছু বলতে পারে না থেমে যায়।শ্রেয়ার মুখের দিকে ধ্রুবর তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হয়।

শ্রেয়া হেসে বলে-তাহলে আমি আসি।

শ্রেয়া চলে যায়।শ্রেয়া স্কুটিতে এসেছিল।ধ্রুব দেখতে থাকে শ্রেয়া আস্তে আস্তে দূরে চলে যেতে থাকে।ধ্রুবর খুব কষ্ট হতে থাকে।ধ্রুব কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।ভাবতেই পারেনি শ্রেয়া এতো তাকে ভালোবাসে।আর কথা!এমন কথাও বলতে পারে!দেখে মনে হয় না।দেখলে মনে হয় এখনও অনেক ছোটো।

আজ ধ্রুব আয়ানের বাড়িতে যাবে ঠিক করে।তাই সেই জন্য বেড়িয়ে পরে।আয়ানের বাড়িতে এলে দেখে আয়ান চুপ করে মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে।আয়ুসী বাড়িতে ছিল না।

আয়ানের পাশে বসে।

কী রে এমন চুপ করে আছিস?-ধ্রুব

আয়ান ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে-কিছু নয় রে।

ওও,আয়ুসী কোথায়?-ধ্রুব

আয়ুসীর নাম আয়ান রেগে গিয়ে বলে-জানিনা।

জানিস না।না জানার ইচ্ছা আছে কিন্তু নিজেকে আটকে রেখেছিস।-ধ্রুব

কী সব বলছিস?-আয়ান

ঠিক বলছি।যাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এনেছিস তার কষ্টে তুই কষ্ট পাচ্ছিস।-ধ্রুব

আয়ান খাট থেকে উঠে পরে।

কী বলছিস এসব।-আয়ান

ঠিক বলছি।তুই আয়ুসীকে ভালোবাসিস না।কী রে বল।-ধ্রুব

আয়ান ধ্রুবর কথায় ধ্রুবর দিকে তাকায়।

কী রে বল ভালোবাসিস না?-ধ্রুব

এদিকে,আয়ান চীৎকার করে বলে-না,না,আমি ওকে ভালোবাসি না।

এদিকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল আয়ুসী।ওদের সব কথাই শুনেছে।আয়ানের কথাতে আয়ুসীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে।সে ভেবেছিল হয়তো আয়ান তাকে ভালোবাসে।কিন্তু আয়ানের মুখে এই কথা শুনে আয়ুসী আর দাঁড়ায় না।চোখের জলে বেড়িয়ে পরে।

এদিকে ধ্রুব-কী ভালোবাসিস না।ঠিক আছে আমার গায়ে হাত রেখে বল।

এই বলে আয়ানের হাত ধরে।আয়ান হাত সরিয়ে নেয়।

কী রে বল-ধ্রুব

আয়ান চুপ করে থাকে।

কত আর লুকাবি নিজেকে।কী রে।-এই বলে ধ্রুব আয়ানের একদম সামনে দাঁড়িয়ে আয়ানের চোখে চোখ রাখে।এদিকে আয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারে না।

হ্যাঁ,হ্যাঁ ভালোবাসি।ভীষণ ভালোবাসি।যেদিন ওকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই।কিন্তু যতবার ওর বাবার কথা মনে হয়েছে ততবার আমি প্রতিশোধের আগুন মনে জ্বালিয়েছি।বিপ্লব আঙ্কেলের কাছে যখন থেকে শুনেছি ওর বাবা এমন করেছে তত বার মনে হয়েছে ওকে কষ্ট দিতে হবে।কিন্তু বিশ্বাস কর ওকে কষ্ট দিতে গিয়ে আমি কষ্ট পেয়েছি।তুই ঠিক বলেছিস ওর বাবার শাস্তি ও কেন পাবে।আমি ওকে ভালোবাসি ধ্রুব,খুব ভালোবাসি।-এই বলে আয়ান কাঁদতে থাকে।

ধ্রুব আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে-আমি এখনই আয়ুসীকে বলছি।

না,না তুই বলবি না।আমি বলব।-আয়ান

আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু ও কোথায়?-ধ্রুব

হয়তো নিলয়ের কাছে গেছে।একটু পরেই ফিরে আসবে।-আয়ান

আয়ান আবার বলে-তুই কিচ্ছু বলবি না ওকে।

আচ্ছা।বলব না।আমি আসি।কাল তাহলে একটা ভালো খবর পাচ্ছি।-ধ্রুব

আয়ান হাসে।ধ্রুব চলে যায়।ধ্রুব একবার ভাবে আয়ানকে সবটা বলবে।কিন্তু আয়ান বিশ্বাস না করলে।তাই বলে না।চলে যায়।

আয়ান অপেক্ষা করতে থাকে আয়ুসীর জন্য।এদিকে ধ্রুব বাড়িতে ঢুকতে যাবে হঠাৎ নিলয়ের ফোন-ধ্রুবদা ওই লোকটা আর আরো কতগুলো লোক সিনু গ্যারেজে এসেছে।

ধ্রুব-সিনু গ্যারেজ!

নিলয় ঠিকানা বললে ধ্রুব বুঝতে পারে।সে বেড়িয়ে পরে।এদিকে আয়ুসীকেও নিলয় ফোন করেছিল।সিনু গ্যারেজের সামনে তিনজনেই এসে পরে।

গ্যারেজটা অন্ধকার।ধ্রুব বলে-এরকম ভাবে যাওয়া উচিত নয়।

কিন্তু আয়ুসী শোনে না।তিন জনেই ভিতরে ঢোকে।কিছুদূর যেতেই তারা যা দেখতে পায়।তা দেখে সবার গলার স্বর বন্ধ হয়ে যায়।

একজনের পেটে চাকু গাঁথা।পেট থেকে রক্ত বেড়িয়ে মেঝে ভেসে যাচ্ছে।কিন্তু লোকটি বেঁচে আছে।আয়ুসী কাছে যায়।লোকটি কিছু বলতে চেষ্টা করে।কিন্তু কথা আটকিয়ে যাচ্ছে।এদিকে বাইরে গাড়ির শব্দ শুনতে পায়।

ধ্রুব বলে-আয়ুসী চল।না হলে আমরা বিপদে পরব।

আয়ুসী যেতে চায় না।ধ্রুব জোর করে নিয়ে যায়।দেখে অন্য দিকে আর একটা গ্যারেজের মুখ।তিনজন ওই পথে পালায়।

গ্যারেজের সামনে যে গাড়িটা আসে তা হল আয়ানের।ধ্রুব বেড়িয়ে আসার পর একজন ফোন করে বলে-আমার হাতে বেশি সময় নেই।আপনি সিনু গ্যারেজে চলে আসুন।

ফোনটা করেছিল এই ব্যক্তি।আয়ানকে কিছু জানাবার জন্য।এদিকে আয়ান গ্যারেজে ঢুকে লোকটিকে দেখে এগিয়ে আসে।লোকটির কাতরানি দেখে আয়ান ভয় পেয়ে যায়।বলে-আপনি কী বলবে বলে ডেকেছিলেন।

লোকটি কিছু বলতে পারে না।এদিকে আয়ান লোকটির চাকুতে হাত দিয়ে ফেলে।আর দেখতে না দেখতেই গ্যারেজ পুলিশ ঘিরে ফেলে।আর আয়ানকে খুনের দায়ে গ্রেফতার করে।আয়ান বুঝতে পারে না।কোথা থেকে কী হয়ে গেল।

অন্যদিকে ওরা তিনজন ছুটতে ছুটতে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়ায়।আয়ুসীর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা যায়।ধ্রুব বলে-আমাদের এখানে থাকা ঠিক নয়।নিলয় সায় দেয়।তাই ঠিক করে বাড়ি ফিরে যাবে।আয়ুসী নিলয়ের কাছে যায় ধ্রুব তা জানে না।

ধ্রুব বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে।কল্যাণী দেবী ফোন করে।ধ্রুব ফোনটা ধরেছে।

ওপার থেকে কান্নার শব্দ।

এই টিভিতে কী দেখাচ্ছে!আয়ান—-কল্যাণী দেবী

কী হয়েছে আয়ানের?-ধ্রুব

আয়ানকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।পুলিশ অফিসারকে খুন করার অপরাধে।-কল্যাণী দেবী

ধ্রুবর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here