রহস্যের কুয়াশা☠️সূচনা পর্ব

সকালে ১১ দিন বয়সী মিলিকে সবাই বাশগাছের উপর আবিষ্কার করলো!!তাও আবার যে সে বাঁশ নয়,এলাকার সবচেয়ে ভয়ানক আর ভুতুড়ে বাঁশঝাড়ের সবচেয়ে উচু বাশটার সাথে বাচ্চাদের ছোট দুলনায় ঝুলন্ত অবস্থায়।সবাই খুব অবাক আর ভয় ও পেলো।কিন্তু কি আশ্চর্য এই টুকু মেয়ে যার বয়স কিনা সবে ১১ দিনে পা রাখলো সে এখানে উঠলো কিভাবে??আর ও তো নিজের মায়ের বুকে ঘুমাচ্ছিল, এমন দোলনাও নেই ওদের বাসায়,তাহলে এটাই বা এলো কোত্থেকে!!
এলাকার লোকজন অনেক কষ্ট বাঁশের উপর থেকে ওকে নামাতে সক্ষম হলো।কিন্তু মিলির চোখে কান্নার কোনো চিহ্নই নেই,যেনো খুব ভালোই ছিল এখানে!!এইটুকু বাচ্চা মেয়ে তো মাকে ছাড়া কেদে হিচকী উঠে যাওয়ার কথা কিন্তু এই বাচ্চা কিনা দিব্যি খেলছিল উপরে!
মিলির বাবা মা ওর জন্মের পর থেকেই ওকে নিয়ে শঙ্কায় আছে কারণটা হলো ওকে এমন হঠাৎ করেই পাওয়া যায় না।তারপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর এমন কোথাও পাওয়া যায় না কিন্তু শেষে আবার সেই ঘরেই পাওয়া যায় ওকে কিন্তু এবারের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ঘটলো বলে দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে সবার।
মিলি কাল রাত খুব কান্না করছিলো ওর মা ঘুমের মাঝেই শুনতে পাচ্ছিলো যে ও কাদছে কিন্তু উনার এত্তো বেশি ঘুম পাচ্ছিলো যে চোখের পাতা খুলতেই পারছিলেন না।হঠাৎ ২ মিনিটের মধ্যেই কান্না থেমে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো পরিবেশটা যেনো কোনো বাচ্চার অস্তিত্বই নেই।মিলির বাবা মা দুজনেরই ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু বিছানায় খুঁজে পায় না মিলিকে।সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও না পেয়ে শেষে এলাকার মানুষজন নিয়ে বাহিরেও খুজাখুজি করে।কিন্তু কোথাও পায় না মিলিকে।ওর জন্মের পর এমন হয়েই চলেছে।এই ১১ দিনের মধ্যেই ৩ বার নিখোঁজ হয় মিলি কিন্তু প্রতিবারই আবার ঘরেই খুঁজে পেয়েছে তাই এইবারও অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ঘরে পাওয়া যাবে।ওর মা তো কাদতে কাদতে শেষ। মিলিই উনার প্রথম সন্তান।রাতে ৩ টার দিকে কাদতে কখন যে চোখ লেগে এসেছিল উনার খেয়ালই ছিল না। স্বপ্নে তিনি দেখলেন মিলি একটা দোলনায় দোল খাচ্ছে আর ওর মাকে ডাকছে।তাকে অবাক করে দিয়ে কথা বলে উঠলো মিলি।বললো,
–মা তুমি একদম দুশ্চিন্তা করো না।আমায় সকালে এলাকার বড় বাশবাগানের সবচেয়ে উচু বাসটার উপর পাবে।আমি একদম খুশি আছি।আমি অনেক খেলেছি।
তারপর হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো মিলির মায়ের।উঠে দেখলেন ফজরের আজান হচ্ছে। স্বপ্নের কথা মনে আসতেই তিনি পাশে ঘুমিয়ে থাকা তার হাজবেন্ডকে ডেকে তুললেন বেস্তসমস্ত হয়ে।
উনার স্বামীকে জাগিয়ে তুলে সব খুলে বললেন স্বপ্নে দেখা কথাগুলো।তিনি প্রথমে নেহাত স্বপ্ন বলেই এড়িয়ে গেলেন কিন্তু স্ত্রীর পীড়াপিড়িতে একবার তার সন্দেহ দূর করার জন্যই এলাকার সবাইকে নিয়ে এখানে এসে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হোন।
আস্তে আস্তে যতই বড় হচ্ছে মিলির সমস্যাগুলো ততই বাড়তে থাকলো।সে একা একা খেলা করে উপরের দিকে তাকিয়ে যেনো কেউ ওকে খুব মজা দিচ্ছে।ওর মা রান্না করার সময় ও একাই থাকে কিন্তু কখনো ওর মা ওকে কাদতে দেখেনি,যদিওবা কেদেছে তবে সেটা ৩০ সেকেন্ডের বেশি বলে উনার মনে পড়ে না।উনি রান্নাঘর থেকে উঠে আসতে আসতেই কান্না হাওয়া,উনি এসে দেখতেন মিলি হাসছে আর খেলছে।আর রাতে মাঝে মাঝেই উধাও হয়ে যেতে থাকে ঘর থেকে।যখনই কান্না করতো তার পর আর ওকে পাওয়া যেতো না ঘরে বা ঘরের আনাচে কানাচে কোথাও।তারপর আবার আগের মতোই স্বপ্নে ওর মা দেখতে পেতো ওকে, স্বপ্নে মাকে বলে দিতো ও কোথায় আছে আর সকালে আশ্চর্যজনকভাবে সেখানেই পাওয়া যেত।ব্যাপারটা আস্তে আস্তে এলাকার সবাই জেনে যায় আর সবাই ওকে ভুতুড়ে মেয়ে বলতে থাকায় ওর বাবা নিজের চাকরির বদলি করিয়ে শহরে চলে আসে ৬ মাসের মিলি এর ওর মাকে নিয়ে।কিন্তু শহরে আসার পর ঘটতে থাকে আরেক ঝামেলার ঘটনা।মিলিকে এমন পাওয়া যেতো না তারপর ওর মা স্বপ্নে দেখতো ও কোনো একটা শিশু পার্কে আছে,খুব মজা করছে,খেলছে,দৌড়াদৌড়ি করছে অথচ মিলি কিন্তু ঠিকমতো বসতেও পারে না।
ওর বাবা মা অনেক কবিরাজও দেখিয়েছেন কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।কোনো তাবিজ মিলির হাতে কয়েক ঘণ্টার বেশি থাকতো না।তারপর সেই তাবিজ যে কোথায় হারাতো তা হদিস পাওয়া যেতো না।আর কবিরাজরাও বলেছেন এই কাজ তাদের দ্বারা সম্ভব না যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে মিলির বা উনাদের পরিবারের ক্ষতি হতে পারে।অনেক চেষ্টার পরও যখন এসব হয়েই চলছিল তখন উনারা ভাবলেন যেহেতু মিলির কোনো ক্ষতি হচ্ছে না তাই এসব নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করাই ভালো।
দিনদিন যেনো উৎপাত বেড়েই চলছে।মালিহা বেগম আর জারিফ খান উনাদের প্রথম সন্তানটা নিয়ে এতই চিন্তিত ছিলেন যে আর বাচ্চা নেবার কথা তারা ভাবেন নি।কিন্তু মেয়েকে কাছে পেতেন খুবই সামান্য।সারাদিন মেয়ে তাদের একা একাই খেলতো আর ঘরময় ঘুরে বেড়াতো আর বাহিরে ঘুরা তো আছেই ২/৩ দিন পর পর রাতে!১ বছরের বাচ্চাকে সাধারণত হাত ধরে হাঁটা শিখাতে হলো কিন্তু মিলির ব্যাপারে উনারা বাবা মা হিসেবে সেক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখার সুযোগ পান নি,কে যেনো মিলিকে হাত ধরে হাঁটতো তা উনারা স্পষ্ট টের পেতেন।কারণ মিলি পড়ে যাওয়া ধরেও আবার নিজে নিজেই কিভাবে যেনো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যেতো যেনো কেউ ওকে ধরে ফেললো মালিহা বেগম আর জারিফ খানের এসব চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না কারণ উনারা ধরলেই খুব কান্না জুড়ে দিতো মিলি,এমন সে কান্না যা থামানোই যেতো না।এমনি একদিন মিলি একা একা হাসছিল আর হাঁটছিলো আবার পড়ে যেতে নিয়েও উঠে দাড়াচ্চিল।মালিহা বেগমের খুবই কষ্ট লাগতো নিজের মেয়েকে আদর করতে না পারার কারণে তাই তিনি আজ ওকে কোলে তুলেই নিলেন কিন্তু প্রতিদিনের মতো মিলির কান্না সত্বেও ওকে ছাড়ছিলেন না।মিলির একসময় কাদতে কাদতে হীচকি উঠে গেলো।জারিফ খান এসে জোর করে উনার হাত থেকে মিলিকে ছাড়িয়ে আগের মতোই ছেড়ে দিলেন।আর সাথে সাথে মিলির কান্না হাওয়া।উনারা খুবই হতাশ হচ্ছিলেন এসব দেখে দেখে।সেদিন রাতে ঘুমের মাঝে মালিহা বেগম স্বপ্নে দেখলেন খুব ঘন কালো অন্ধকার একটা রুম থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসছে,কন্ঠটা কি বলছে তা কিছুই মালিহা বেগমের বোধগম্য হচ্ছে না তবে আরবীতে কথা বলছে তা তিনি স্পষ্টই টের পাচ্ছেন।তারপর হঠাৎ খাটি বাংলায় বলতে লাগলো,
–মিলিকে জোর করে ভালো করিস নি,আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।১ মাস আগে তোরা ওকে আর পাবি না।
আর ইবাদতে কখনো ফাঁকি দিস না।
কণ্ঠটায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে।হঠাৎ সেই আওয়াজটা বিলীন হয়ে গেলো আর সাথে সাথে ধরফড়িয়ে উঠলো মালিহা বেগম।কিন্তু পাশ ফিরে দেখলো মিলি নেই!!
সেই রাতে অনেক খুঁজলেন কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলো না মিলিকে।উনি বুঝে গেলেন যে সত্যিই ১ মাস আগে মিলিকে আর পাওয়া যাবে না।শোকে শোকে পাগল প্রায় হয়ে গেলেন তিনি।ওই রাত থেকে উনারা কখনো নামাজ রোজা বা কোনো ধরনের ইবাদতে অবহেলা করতেন না।
মিলির হারিয়ে যাওয়ার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।কবিরাজ,পুলিশ কোনো কিছুই বাদ রাখেন নি উনারা।শেষে আরেকটা বাচ্চা নেবার সিদ্ধান্ত নেন।ঠিক ৩০ দিনের দিন রাতেই আবার স্বপ্নে মিলিকে দেখতে পান মালিহা বেগম।
–”মা আমার বোনটা ভালো আছে তো??তুমি ওর খেয়াল রাখো তো?আমি কাল চলে আসছি আর তোমার কোনো টেনশন নেই বোনকে নিয়ে।
আমায় কাল সাফারি পার্ক থেকে এসে নিয়ে যাইও মা।”
স্বপ্ন দেখার পর প্রতিবারের মতো এইবারেও ঘুম ভেঙে যায় মালিহার।তিনি ঘুম থেকে উঠেই ক্যালেন্ডার দেখতে ছুটলেন।যদিও ৩০ দিন পার হবার অপেক্ষাতেই দিন গুনছিলেন তবুও ক্যালেন্ডার দেখে সিউর হতে চাইলেন। হ্যাঁ,একদম পাক্কা ৩০ দিন।মিলি হারিয়েছিল ২৫ আগস্ট আর আজ ২৫ সেপ্টেম্বর!!আর আরেকটা বিষয় খুবই অবাক হলেন সেটা হলো উনি যে প্রেগনেন্ট তা উনি নিজেই জানেন না অথচ স্বপ্নে মিলি বলে দিলো বোন কেমন আছে!!!
পরদিন উনারা সাফারি পার্কে গিয়ে ১৪ মাসের মিলিকে আবিষ্কার করে পার্কে একটা গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায়।উনাদের দেখেই বড়োদের মতো হেসে উঠলো মিলি।উনারা সিকিউরিটি গার্ডদের জিজ্ঞেস করেও এই বাচ্চাকে কে রেখে গেছে তার কোনো হদিস পেলো না।
মিলিকে বাসায় নিয়ে এলো জারিফ খান আর মালিহা বেগম।কিন্তু এইবার মিলির মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিলো আর সেটা হলো ও নিজের বাবা মায়ের সাথে খুব ভালো মিশতে থাকে,একটা স্বাভাবিক বাচ্চার চাইতেও বেশি বন্ধুত্বপূর্ন ভাবে।কিন্তু ১৪ মাস হয়ে যাওয়ার পরও ও এখনো বাবা,মা,নানা,দাদা বা অন্যান্য শব্দগুলো যেগুলো স্বাভাবিক বাচ্চারা উচ্চারণ করে সেগুলোর কিছুই বলে না।তবে একটা জিনিস বলে শুধু একটা নাম আর সেটা হলো “ইহান”।
কি আশ্চর্যের বিষয় একটা বাচ্চা নিজের বাবা মা নানা দাদা দাদু নানু এসব কিছুই না বলে বলে কিনা একটা ছেলের নাম! ইহান!!!
এর কিছুদিন বাদেই মালিহা বেগম আর জারিফ খান ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হন আর আশ্চর্যজনকভাবে আলট্রাসোগ্রাম করে জানা যায় মালিহা বেগম মা আর চলেছেন,২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা!!এখন শুধু আর কয়েকটা মাসের অপেক্ষা এটা দেখার জন্য যে তিনি সত্যিই কি কন্যাসন্তানের মা হতে যাচ্ছেন কি না!
মালিহা বেগম হঠাৎ তার কোলে থাকা মিলির দিকে তাকিয়ে লক্ষ করলেন মিলি উনার দিকে তাকিয়ে হাসছে,যেনো অভিনন্দন জানাচ্ছে!এই হাসি মোটেও কোনো ১৫ মাসের বাচ্চা মেয়ের হাসির মতো মনে হচ্ছে না,মনে হচ্ছে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে যেনো!
মিলি এখন বাসায় ওর মা বাবার সাথে খেলাধুলা করে কিন্তু যখনই একা থাকে তখন যেনো অন্য একজনের সাথে তার খুনসুটি, ঝগড়া,দুষ্টুমি,খেলা এসব চলতেই থাকে এটা স্পষ্ট খেয়াল করেন মালিহা বেগম।কিন্তু এখন আসা অব্দি আর হারিয়ে যায় নি ও।
চলবে কি?
#রহস্যের কুয়াশা☠️সূচনা পর্ব
#হাফসা ইরিন রাথি

(রহস্য গল্প লিখতে ইচ্ছে করছিল আবারো,তাই লিখেই ফেললাম।আশা করছি সবার সাপোর্ট পাবো।এই গল্পটা অনেক বড় করবো আপনাদের সাপোর্ট পেলে।
হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here