#প্রাণস্পন্দন
#পর্বঃ৪
লেখনীতেঃতাজরিয়ান খান তানভি
উষ্ণ বাতাসের ছটা প্রকটভাবে অনভূত হতেই ঝট করে চোখ খুলে ফেলে আয়েন্দ্রি।চোখের সমুখে নিষ্প্রাণের মুখটা দেখেই হুট করেই উঠে বসে।এলোথেলো চুল আর
পাংশুটে মুখ।তড়িৎ বেগে উঠে পড়ায় গায়ের পাতলা চাদরটা সরে যেতেই তা টেনে নেয় আয়েন্দ্রি।নিজেকে আড়াল করার কিছু নেই এখন তার কাছে।আয়েন্দ্রির নিরাবরণ দেহের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে নিষ্প্রাণ।উষ্ণ কন্ঠেই প্রশ্ন করে আয়েন্দ্রি—
“কী করছিলি তুই?
অধর হালকা বিস্তৃত করে নিষ্প্রাণ।সরস গলায় বললো—
“তোকে দেখছি।তোকে দেখার স্বাধ আমার এই জীবনে মিটবে নারে।”
অস্বস্তিতে মুখ ঘুরায় আয়েন্দ্রি।তপ্ত গলায় বললো—
“সারক কোথায়?কী করেছিস তুই ওর সাথে?
ফোঁস করে শ্বাস ফেললো নিষ্প্রাণ।নির্বিঘ্নে একদম পাশ ঘেষে বসলো আয়েন্দ্রির।পেছন থেকে আয়েন্দ্রির অগোছালো চুল সরিয়ে কাঁধে চুমু খায়।আয়েন্দ্রির মনে হলো কেউ তার শরীরে সূঁচ বিঁধিয়ে দিচ্ছে।নিমীলিত চোখে হজম করে নিচ্ছে সেই স্পর্শ।নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির কানে অধর ছোঁয়ায়।বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে আয়েন্দ্রি।দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে আয়েন্দ্রি।আয়েন্দ্রির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো নিষ্প্রাণ–
“সারক ভালো আছে।শহরের সবচেয়ে বড় হসপিটালে চিকিৎসা হচ্ছে ওর।সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।চিন্তা করিস না তুই।”
আয়েন্দ্রির অনাবৃত পিঠের উপর নিজের নাক ঘঁষতে থাকে নিষ্প্রাণ।অতিষ্ঠ হয়ে বলে উঠে আয়েন্দ্রি—
“প্রাণ!কী করছিস তুই?
নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির চুলে নাক ডোবায়।লম্বা একটা শ্বাস টেনে বললো—
“তুই একদম বেলি ফুলের মতো।যেমন শুভ্র,তেমন তোর সৌরভ।পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।”
“তোর এই পাগলামি বন্ধ কর।”
তৃপ্তিকর হাসে নিষ্প্রাণ।দুই হাত মাথার নিচে দিয়ে বিছানায় আলগোছে শুয়ে পড়ে।আদেশের সুরে বললো—
“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।ব্রেকফাস্ট করবি।আমি নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি তোর জন্য।”
আয়েন্দ্রির চোখ জ্বলে যাচ্ছে।নিষ্প্রাণের লাগামহীন পাগলামোর শেষে নিজের চোখের জল ঝড়িয়েছে বাকি রাত।চাদরটা কোনোরকম শরীরের সাথে পেঁচিয়ে রাখে আয়েন্দ্রি।
ওয়াশরুমে ঢুকেই ঝর্ণা ছেড়ে বসে পড়ে তার নিচে আয়েন্দ্রি।হাত দিয়ে ট্যাপগুলো ছেড়ে গলা ফাটিয়ে বিলাপ করতে থাকে।সব শেষ তার।সব।
পাগলের মতো শরীর ঘঁসতে থাকে আয়েন্দ্রি।নিজের শরীর থেকে ওই বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষটির সকল স্পর্শ মুছে দিতে চায় সে।দুই হাতে উন্মাদের মতো গাল,ঠোঁট,গলায় ঘষা মারতে থাকে আয়েন্দ্রি।মাখনের মতো শরীরে ফুলে লাল হয়ে উঠে।বুক কাঁপিয়ে কাঁদতে থাকে সে।দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরে।স্বচ্ছ টাইলসের উপর প্রবাহিত পানির স্রোতে উন্মত্তের মতো হাত দিয়ে আঘাত করতে থাকে।সমস্ত ওয়াশরুমের কানায় কানায় যেনো গভীর আর্তনাদ বিচরণ করছে।
দেয়ালের সাথে হেলান দেয় আয়েন্দ্রি।শান্ত সে।চোখ দিয়ে স্মিত ধারার প্রস্রবণ মিলিয়ে যাচ্ছে ঝর্ণার জলে।প্রায় আধাঘন্টা পরও যখন আয়েন্দ্রি ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না উঠে বসে নিষ্প্রাণ।ক্ষীপ্ত চোখে তাকায় ওয়াশরুমের দরজার দিকে।অচঞ্চল পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে ওয়াশরুমের দিকে।ডান হাতের তর্জনী দিয়ে করাঘাত করে বললো—
“ধ্রুবতারা,কী করছিস তুই?বেরিয়ে আয়।বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে ঠান্ডা লাগবে তোর।”
ভেতর থেকে কোনো সাড়া এলো না।নিষ্প্রাণ গম্ভীর গলায় বললো—
“বেরিয়ে আয় ধ্রুবতারা।বেরিয়ে আয় বলছি।”
আয়েন্দ্রি দুম ধরে বসে রইলো ভেতরে।নিষ্প্রাণ ক্ষেপে যায়।গায়ের জোর দিয়ে এক লাথি মারে ওয়াশরুমের দরজায়।দাঁতখামটি মেরে বললো—
“বেরিয়ে আয় ধ্রুবতারা।আর এক মিনিট দেরি হলে আমি কিন্তু দরজা ভেঙে ফেলবো।”
রাগে বিহ্বল নিষ্প্রাণ যেইনা পা উঠিয়েছে তখনই ধীরগতিতে বেরিয়ে আসে আয়েন্দ্রি।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিষ্প্রাণ।গাঢ় চোখে তাকাতেই মেজাজ চটে যায় নিষ্প্রাণের।ক্রোধিত কন্ঠে বললো—
“এইটা কী পরেছিস?সালোয়ার -কামিজ কেন পরেছিস?বিয়ে হয়েছে তোর।শাড়ি পরবি এখন থেকে।”
আয়েন্দ্রি দুর্বল গলায় বললো—
“আমার কাছে শাড়ি নেই।
নিষ্প্রাণ নাক ফুলায়।কড়া গলায় বললো—
“আয় আমার সাথে।”
নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রিকে নিয়ে আলমিরার সামনে দাঁড় করায়।আলমিরা খুলতেই চক্ষু হতভম্ব আয়েন্দ্রির।অক্ষিপল্লব দৃঢ় করে চেয়ে আছে সে।নিষ্প্রাণ কোমর জড়িয়ে ধরে আয়েন্দ্রি।কানের লতিতে ছোট কামড় বসিয়ে বললো—
“এইটা তোর।চারশত প্লাস শাড়ি আছে এখানে।সব রঙের।তোর যেইটা ইচ্ছে পরে নে।পরে নে ধ্রুবতারা।”
আয়েন্দ্রির শীতল গালের সাথে নিজের তপ্ত গাল ছুঁইয়ে রাখে নিষ্প্রাণ।নিষ্প্রাণকে ছাড়িয়ে একটা লাইট ব্রাউন রঙের শাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতেই থমকে যায় আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ অদ্ভুত আবদার করে বসে।আঁখুটে গলায় বললো—
“এইখানেই চেঞ্জ কর।”
ক্ষুন্ন গলায় বলে উঠে আয়েন্দ্রি—
“না।”
আয়েন্দ্রি এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।নিষ্প্রাণ আয়েন্দ্রির হাত টেনে ধরে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে নেয়।আয়েন্দ্রির মুখে লেপ্টে থাকা তার ভেজা চুল সরিয়ে তার গালে হাত রাখে নিষ্প্রাণ।নিষ্প্রাণের বুকের সাথে মিশে আছে আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ শান্ত কিন্তু শক্ত গলায় বললো—
“এইখানেই চেঞ্জ কর ধ্রুবতারা।আমি তোকে দেখবো।আমার চোখ ভরে দেখবো।”
ছলছল করে উঠে আয়েন্দ্রির চোখ।জমাট গলায় বললো—
“ছাড় আমায় প্রাণ।এমন করিস না।”
আয়েন্দ্রির ভেজা,পাতলা ঠোঁটে আঙুল ছোঁয়ায় নিষ্প্রাণ।মোহবিষ্ট গলায় বললো—
“রাগাস না আমায়।এখানেই চেঞ্জ কর।”
আয়েন্দ্রিকে ছেড়ে বিছানায় বসে নিষ্প্রাণ।উপায়হীন আয়েন্দ্রি অশ্রু বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারলো না।আয়েন্দ্রির নিরাবরণ দেহের দিকে তাকালো না নিষ্প্রাণ।চোখ দুটো নিবদ্ধ করে রাখলো সামনে আয়েন্দ্রির ওয়াল পেইন্টিং এ।চোখে প্রশান্তি নেমে আসে নিষ্প্রাণের।এই মেয়েটাকে ছাড়া সে এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবে না।সে মরতে চায় না।হাজার বছর বাঁচতে চায় তার ধ্রুবতারার সাথে।
,
,
,
খাচ্ছে নিষ্প্রাণ।তার দিকেই গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়েন্দ্রি।নিষ্প্রাণ খাওয়ার ফাঁকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো—
“বসে আছিস কেন?খেয়ে নে।কাল থেকে তো কিছুই খাসনি।”
শক্ত গলায় বলে উঠে আয়েন্দ্রি—
“আমাকে বাসায় দিয়ে আয়।”
মুচকি হাসে নিষ্প্রাণ।নির্মল গলায় বললো—
“কালই তো এলি।এখনই চলে যেতে চাইছিস?ওকে নিয়ে যাবো।খেয়ে নে এখন।আর শোন,আমাদের রিসিপশনটা এখন হচ্ছে না।সারক সুস্থ হোক।আর আমাদের বাকি ফ্রেন্ডদেরও আসতে বলবো।ওরা আমাকে অপছন্দ করলেও তোকে পছন্দ করে।”
আয়েন্দ্রি গুমোট গলায় বললো—
“তোর দাদু কী করে?
“কিছু না।”
ভ্রু নাচিয়ে ফের প্রশ্ন করে আয়েন্দ্রি—-
“তুই তো কখনো বলিস নি তোর কেউ আছে?
“প্রয়োজনবোধ করিনি।এখন করছি।”
“এইসব হলো কী করে—
টেবিলে রাখা এপেল জুসটা শেষ করে নিষ্প্রাণ।চেয়ারটা ফাঁক করে আয়েন্দ্রির দিকে ফিরে তাকায়।চেয়ারসহ আয়েন্দ্রিকে টেনে নিজের কাছে আনে।তার হাতদুটো নিজের অঞ্জলিতে নিয়ে মোলায়েম গলায় বললো—
“এই বাড়িটা আমি তোর জন্য বানিয়েছি।তোর আগে এই বাড়িতে আমি কাউকে আসতে দেই নি।এখানে শুধু তুই আর আমি থাকবো।
দাদু আপাতত কিছু করে না।সব সামলায় তার বিশ্বস্ত কর্মচারি আই মিন ম্যানেজার।দাদুর বিশাল সম্পত্তির একমাত্র অধিকারী আমি।তার বংশ টিকিয়ে রাখতে আমাকেই প্রয়োজন তার।দাদু আমাকে একটা কোম্পানি কিনে দিয়েছে।নতুন নয়।একটা ফল কোম্পানিকে টেক ওভার করেছে।আমি তার এম ডি।কিন্তু আমি আগামী ছয় মাস তোর সাথে থাকবো।তোর ছায়া হয়ে থাকবো।তোর সাথে সময় কাটাবো।কোম্পানির সাথে সরাসরি যুক্ত হবো না।”
নিষ্প্রাণ নিচু হয়ে আয়েন্দ্রির বুকের উপরের কামড়ের দাগে গভীর চুমু খেলো।আয়েন্দ্রি কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।করতে ইচ্ছে হলো না তার।কারণ,এছাড়া আরও অসংখ্য দাগ আছে আয়েন্দ্রির শরীরে। নিষ্প্রাণ তার পৌরষসত্তার ছাপ ফেলেছে তার কোমল দেহে।আহ্লাদী গলায় বলে উঠে নিষ্প্রাণ—
“খেয়ে নে।নিয়ে যাবো তোকে।”
চলবে,,,