#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৩
DI YA
আমার মেয়ে কেমন আছে ডাক্তার? – রিয়ান
আসলে – ডাক্তার আকাশ
আসলে কি ডাক্তার আকাশ ? – আমি।
মনে মনে ভয়ের আবির্ভাব হতে শুরু করলো আমার। মাথায় আসতে শুরু করে দিল নানারকম দুশ্চিন্তা।
আসলে পেশেন্টের অবস্থা এখন ভাল নেই। ওর শরীর প্রচুর দূর্বল।আর আমি চেক করে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বুঝেছি ওর জন্ম নিদিষ্ট সময় আগে হয়েছে তাই ও একটু বেশিই দূর্বল।ওকে প্রচুর কেয়ার করতে হবে।ওর খাওয়াদাওয়া প্রতি ও প্রচুর যত্ন দিতে হবে।সাথে ওর বাবা মাকে ও ওকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।বুঝেনই তো বাচ্চা মানুষ। একাকিত্ব জিনিসটা ওদের সাথে মানায় না।ওকে বেশি বেশি টাইম দেন।আর ওর প্রতি একটু বেশিই যত্নবান হন।খাওয়া দাওয়া ও হয়তো ঠিক মত করে না ও- ডাক্তার আকাশ
জি ডাক্তার। আসলে ওর মা নেই।আমিও সারাদিনের বেশির ভাগ সময় অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। ওকে ঠিক মতো সময় দেওয়া হয়ে উঠেনা – রিয়ান
ওহ সরি। আচ্ছা আপনারা একজন আমার কেভিনে আসুন আমি প্রেসক্রিপশন টা লিখে দেই আর নিয়মগুলো ও তো বুঝিয়ে দিতে হবে।আপনারা আসুন আমি ওয়েট করছি – বলে ডাক্তার আকাশ নিজের কেভিনে চলে যায়
মিস্টার রিয়ান আমি কি আপনার সাথে একটু ডাক্তারের চেম্বারে আসতে পারি – আমি
ইয়াহ সিউর আসুন – রিয়ান
তারপর আমরা ডাক্তার আকাশের চেম্বারে গেলাম। আমাদের দেখেই ডাক্তার আকাশ বসতে ইশারা করে বলতে শুরু করলেন,
আরে ডাক্তার প্রাপ্তি তখন ও আপনাকে দেখলাম এখন ও আপনি এখানে।পেশেন্ট কি আপনার রিলেটিভ লাগে নাকি ? – ডাক্তার আকাশ
জি ডাক্তার মিস প্রাপ্তি আমার মেয়ের আন্টি লাগে – রিয়ান
ও আচ্ছা – ডাক্তার আকাশ
তারপর ডাক্তারের সাথে কিছু সময় কথা বলে আর কিছু সাজেশন নিয়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম।রিয়ান গেলে ফার্মেসিতে ঔষধ নিয়ে আসতে।আর আমি গেলাম রিয়ানার কেভিনের দিকে।ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম রিয়ানার জ্ঞান ফিরেছে। তাই আমি জলদি করে কেবিনের ভিতরে গেলাম।গিয়ে দেখি ওর দাদুমনি ওর পাশে একটা সিটে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে আমার ভিতরে থেকে দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসলো।মেয়েটার চেহারা কেমন নেতিয়ে পরেছে। শরীরটা ও কাহিল কাহিল লাগছে।কেন জানি রিয়ানার জন্যে আমার বুকের ভিতর কোনো এক জায়গায় খুব কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল ও আমার খুব আপন কেউ। আচ্ছা আজকে যদি আমার একটা বাবু থাকতো তাহলে হয়তো ওর সমানই হতো।আমাকে দেখতেই রিয়ানা বলে উঠলো,
ভাল আন্টি তুমি এসেছো ? – রিয়ানা
আমি ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে এক জায়গায় বসলাম তারপর বললাম,
হ্যা পাখি আমি এসেছি – আমি
কেমন আছো তুমি ভালো আন্টি।জানো আমি তোমাকে অনেক অনেক মিস করেছি। রোজ আল্লাহকে বলেছিলাম আমাকে যেন আবার আমার ভাল আন্টির সাথে দেখা করিয়ে দেয় – রিয়ানা
আমি তো ভাল আছি পাখি।কিন্তু আমি তোমার উপর প্রচুর রাগ করেছি – আমি
কেনো ? – কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো রিয়ানা
এই যে তুমি ঠিক মত খাওয়াদাওয়া কর না।নিজের যত্ন নাও না।তোমার দাদুমনির কথা শুনো না বলো এগুলো কি ঠিক – আমি
সরি। আর কখনো করব না – রিয়ানা
এই না হলে আমার গুড গার্ল – আমি
মামনি একটু উঠে বসো আমি তোমাকে এই স্যুপটা খাইয়ে দেই।কারণ একটু পর নার্স এসে তোমাকে স্যালাইন দিবে তখন ৩ ঘন্টা কিছু খেতে পারবেনা – লিমা আহমেদ
না দাদুমনি আমি খাবনা । আমার না একটু ও খেতে ইচ্ছে করছে না। – রিয়ানা
এমন বলে না পাখি।আমি খাইয়ে দিলে তো তুমি না করবে না তাই না ? – আমি
সত্যি ভাল আন্টি তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে – রিয়ানা
হুম পাখি – আমি
ঠিক আছে আমি খাব – রিয়ানা
আচ্ছা এখন আমার হাত ধরে একটু উঠে বসো পাখি। কারণ শুয়ে শুয়ে তো তুমি খেতে পারবেনা – আমি
তারপর রিয়ানা আমার হাত ধরে উঠে বসলো। আমি লিমা আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
দাও আন্টি আমার হাতে স্যুপের বাটিটা। আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি – আমি
নাও মা – লিমা আহৃেদ আমার হাতে বাটিটা দিয়ে বললেন।
তারপর আমি রিয়ানাকে নানা গল্প বলে বলে স্যুপ খাওয়াতে লাগলাম।এর মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় মিস্টার রিয়ান। রিয়ানাকে দেখে তিনি বললেন,
এখন কেমন আছো আম্মু।শরীর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে ? আমি কি ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসব ? – রায়ান
না পাপা আমি ঠিক আছি। জানো ভাল আন্টি আমাকে নিজে খাইয়ে দিচ্ছে – রিয়ানা
মিস্টার রিয়ানের দিকে না তাকিয়ে ও আমি বুঝতে পারছি উনি আমার দিকে একটু অন্য রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে না তাকিয়ে আবার রিয়ানাকে খাইয়ে দিতে মন দিলাম।খাওয়া শেষ হতেই আমি ঘড়িতে সময় লক্ষ করতে বুঝলাম আর কিছু সময় পর আমার একটা অপারেশন আছে।তাই রিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
পাখি আমি যাই।ডাক্তার এসে তোমাকে একটা স্যালাইন দিয়ে দিবে।সেটা শেষ হবার পর তোমাকে রিলিজ দিয়ে দিবে – আমি
তুমি এত জলদি চলে যাবা ভাল আন্টি – মন খারাপ করে বললো রিয়ানা
আমি কিছু বলবো তার আগেই সেখানে রূমা আপু চলে আসে।এসে বলে,
ম্যাম জলদি আসেন।একটা ইমারজেন্সি পেশেন্ট এসেছে।অবস্থা খুব বেশি ভাল না।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে চলছে। জলদি অপারেশন শুরু করতে হবে – রূমা আপু
পাখি আবার পরে দেখা হবে।আমি যাই। নিজের যত্ন নিও তুমি – বলে আমি কেভিনে থেকে চলে আসলাম
তারপর তৈরি হয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলাম। অনেক চেষ্টা করে ও বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি।মা এখন মোটামুটি ঠিক আছে । বাচ্চা টার জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে তার মা বাবার জন্য সন্তান পেয়ে ও হারিয়ে ফেললো উনারা।না পাওয়ার থেকে পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা হয়তো অনেকই বেশি।অপারেশন থিয়েটারে থেকে বেরিয়ে আসতেই পেশেন্টের পরিবারকে সব বললাম।পেশেন্টের হাসবেন্ড কান্না করে দিয়েছে। সত্যিই উনাদের কষ্টটা এখন মাত্রাতিরিক্ত। যা হয়তো আমরা ভাবতে ও পারবনা।এতকিছুর মাঝে রিয়ানার কথা ও আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। আমি নিচে এসে নিজের গাড়ি নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসলাম।কেন জানো আজকে আমার কোনো কিছুই ভাল লাগছেনা। তাই চটজলদি বাসায় চলে এলাম।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে বসে নিজের অতীতে ডুব দিলাম,
অতীত,,
১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল আমার।জন্মের সময়ই মা মারা যায়।তারপর আমার অযুহাত দিয়ে বাবা আমার জন্য নতুন মা আনে।বুদ্ধি হওয়ার পর আমি কখনোই দেখিনি বাবাকে আমার হয়ে কথা বলতে। আমাদের সংসার চলতো সৎ মায়ের কথা।সকাল থেকে রাত পযন্ত সেই সংসারে কাজ করে অনেক কষ্টে পড়াশোনা টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম।পড়াশোনায় আমি বরাবরই বেশ ভাল ছিলাম।সৎ মা বা আমার নিজের বাবা কখনো মনে হয় না আমার পড়াশোনার পিছনে কখনো কোনো টাকা খরচ করেছিলেন।বিয়েটা একপ্রকার জোর করেই করতে হয়েছিল আমাকে।তারপরের জীবনটা আমার কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। বিয়ের পর শশুড় শাশুড়ী, ননদের সাথে মিলে মিশে বেশ ভালোই ছিলাম।আর রিশাদ ও আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো।সবসময় আগলে রাখতো।রিশাদ পাশে থাকায়ই নিজের পড়াশোনা টা চালিয়ে যেতে পারছিলাম।কিন্তু হঠাৎই সবকিছু বদলে গেল।
বাসার কলিং বেল বেজে উঠান গিয়ে দরজা খুলতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম।আমার সামনে রিশাদ দাঁড়িয়ে আছে।আমি বুঝতে পারছি না তার এখানে আসার কারণ কি ?
চলবে🥰