প্রাপ্তির_হাসি পর্ব_০৯

0
3520

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০৯
DI YA

১ মাস পর,,

পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছি। আজকে সকালে বাবাই জরুরি কাজে বাসায় ডেকে এনেছে। তারপর বলে এসব কথা। বাবাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি রাজি হয়ে যাই। অন্য দিকে রিয়ানার জন্য প্রচুর মন খারাপ আর রিয়ান। না না সে আমার কেউ না। বার বার কেনো তার ভাবনা চলে আসছে। জানিনা আমি। এরপরে যে কি হতে চলেছে আমি বুঝতে পারছি না। সবকিছুই পরিস্থিতির উপর ছেড়ে দিয়েছি। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি বাস্তবতার সাথে লড়াই করতে করতে। পাত্রপক্ষ আমার আগের বিয়ে সম্পর্কে সবই জানে তবুও তারা রাজি এ বিয়েতে। সব কথা মোটামুটি ঠিক হওয়ার পরে আমাকে আর পাত্রকে পাঠানো হয় একা কথা বলতে। বাবাই আমাকে বলে তাকে নিয়ে নিজের রুমে যেতে। আমি তাই করি। রুমে এসে আমি চুপচাপ সোফায় বসে পরি। উনিও চুপচাপ সোফার অন্য কিনারে বসে পরে।

হ্যালো মিস প্রাপ্তি।আমি আদনান শেখ।- আদনান

হুম। – আমি

তো বিয়ের ব্যাপারে আপনার মতাতমত কি ? আপনি কি রাজি আমাকে বিয়ে করতে নাকি আপনার কোনো আপত্তি আছে ? – আদনান

আমি নিশ্চুপ

দেখুন আমি সোজাসুজি ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি।আমার বাবা যখন বিয়ের জন্য আপনার ছবি দেখায় তখনি আমার আপনাকে ভালো লেগে যায়।আপনার সব অতীতই আঙ্কেল আমাদের খুলে বলেছে।আপনার অতীত নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। এখন আপনার ইচ্ছে টা জানতে চাই – আদনান

আমি আবারো নিশ্চুপ।

নিরবতাকে কি তাহলে আমি সম্মতির লক্ষণ ধরে নিব – আদনান

আমার কিছুটা সময় চাই।আমি এত দ্রুত সবকিছুর জন্য প্রস্তুত নই।আশা করি আপনি আমার দিকটা ও বুঝবেন – আমি

জি অবশ্যই। আপনার যত সময় দরকার আপনি নেন।ভেবেচিন্তে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন।সিদ্ধান্ত টা কিন্তু আমি হ্যাবোধক আশা করছি – আদনান

আমি কিছু বললাম না।

তারপর আরো কিছু সময় কথা বলে উনি চলে গেলেন।তারপর উনারা সবাই ও বাবাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আননোন নম্বর থেকে একটা কল এসেছে । আমি প্রথম দিকে রিসিভ করিনি।দুই বার কল আসার পর জরুরি কল ভেবে রিসিভ করলাম,,

আসসালামু আলাইকুম মেম – আদনান

ওয়ালাইকুম আসসালাম । কে আপনি ? – আমি

এত জলদি ভুলে গেলেন । কিছুক্ষণ আগেই তো আপনার বাসা থেকে আসলাম – আদনান

ও আচ্ছা আদনান আপনি। জি বলেন কি বলবেন ? – আমি

তারপর আমরা কিছু সময় কথা বললাম।কলটা কেটে আমি লিমা আন্টিকে কল দিলাম।

কেমন আছো মা ? – লিমা আহমেদ

ভাল আন্টি। তুমি কেমন আছো? – আমি

ভাল – লিমা আহমেদ

রিয়ু পাখি কেমন আছে ? আর মিস্টার রিয়ানের অবস্থা কেমন ? – আমি

হুম রিয়ু তোমার সাথে বলবে মা – লিমা আহমেদ

দাও আন্টি – আমি

হ্যালো ভাল আন্টি কেমন আছো তুমি ? – রিয়ানা

ভাল মা তুমি কেমন আছো ? – আমি

আমিও ভাল। তুমি কখন আসবে? – রিয়ানা

আমি কালকে সকালে আসে তোমার সাথে দেখা করে যাব – আমি

আচ্ছা ঠিক আছে ভাল আন্টি – রিয়ানা

তোমার পাপা কেমন আছে? – আমি

পাপা ও ভাল আছে। সকালে পাপা ও তোমাকে খুঁজে ছিলো । পরে যখন আমি বলেছি তুমি চলে গেছো তখন আর কিছু বলেনি – রিয়ানা

আচ্ছা পাখি তাহলে কালকে দেখা হবে। টাটা – আমি

টাটা ভাল আন্টি – রিয়ানা

~~~~~~~

আপনার নাকি বিয়ে ঠিক মিস প্রাপ্তি – রিয়ান

কিভাবে জানলেন এই কথা? – আমি

একভাবে না একভাবে ঠিকই জেনেছি। তা আপনি রাজি নাকি বিয়েতে ? – রিয়ান

আমি কিছুই বললাম না।

আপনি কি কিছু বুঝেন না ? নাকি বুঝে ও না বোঝার ভান করে থাকেন ? – রিয়ান

কিছু কিছু বিষয় না বোঝাই ভাল – আমি

রিয়ান হঠাৎই আমার হাত চেপে ধরে বলতে লাগলো,

আমাকে এভাবে শেষ করে দিচ্ছো তুমি – রিয়ান

আমার কিছু করার নেই। – আমি

আচ্ছা ঠিক আছে – রিয়ান

এভাবে সময় চলতে লাগলো। আমি প্রতিদিনের ব্যস্ততায় জীবন পাড় করতে থাকলাম।কিন্তু রোজ একবার হলেও রিয়ানার সাথে দেখা করতে যেতাম।সময় হয়তো সত্যি অনেক দ্রুত চলে যায়।আদনানের সঙ্গে এর মধ্যে আমার পাঁচ থেকে ছয়বার কথা হয়েছিল। এরপরে আমি বাবাইকে জানিয়ে ছিলাম।আমার সময় লাগবে কিছুটা। এখনো এত কিছু মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।আমার অবস্থা টা বুঝে বাবাই ও আর আমাকে জোড় করেনি। আদনানকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর সে শুধু বলেছিল বন্ধু হয়ে যেমন চিরকাল পাশে রাখি। এতে আর আমি দ্বিমত করিনি।তার সাথে ও আমার ভাল একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে।

আজকে আমার জন্মদিন। সন্ধ্যায় বাবাই বিরাট এক পার্টির আয়োজন করেছে।আমি সেখানে রিয়ানাদের ও ইনভাইট করি। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাত ১০ টার ভিতরে বার্থডে পার্টি শেষ হয়ে যায়।এর মধ্যে অবশ্য আমি লক্ষ করেছিলাম বাবাই মিস্টার রিয়ানের সাথে অনেক ক্ষণ সময় নিয়ে আলোচনা করছে।এত মানুষের ভীড়ে আর তাদের কথা জানা হয়নি।আন্টিকে রিকোয়েস্ট করে রিয়ু পাখিকে আমার কাছে রেখে দেই। মেয়েটা ভারি মিষ্টি। আসলে সত্যি কেউ সন্তান পেয়ে ও মূল্য দেয়না।আর অন্য দিকে কত সম্পর্ক নষ্ট হয় একটা সন্তানের জন্য। ফ্রেশ হয়ে রিয়ুকে ও ফ্রেশ করিয়ে দেই।আমার বাসায় ওর জামাকাপড় তো ছিলনা। তাই বাসার একজন মেইডকে বাইরে পাঠিয়েছিলাম ওর জন্য কিছু ড্রেস নিয়ে আসতে। রিয়ানা বলতে শুরু করলো,

ভাল আন্টি ও ভাল আন্টি – রিয়ানা

হ্যা পাখি বলো – আমি

আমি আইসক্রিম খাবো – রিয়ানা

এত রাতে আইসক্রিম খেলে তো জ্বর হবে তোমার – আমি

কিছু হবেনা তুমি আমি আর নানাভাই গল্প করতে করতে অল্প একটু আইসক্রিম খাবে – রিয়ানা

আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তোমার নানাভাইকে ড্রইং রুমে ডেকে নিয়ে আসো।আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি – আমি

ওকে ভাল আন্টি – বলে রিয়ানা দৌড়ে বাবাইয়ের ঘরের দিকে চলে গেলো

ড্রইংরুমে বসে আমি বাবাই আর রিয়ানা কথা বলছিলাম।রিয়ানা তখন আমার বাবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

জানো নানাভাই একটা কথা – রিয়ানা

কি কথা গো নানাভাই – বাবাই

ভাল আন্টি এখন পচা হয়ে গেছে। কবে থেকে আমার সাথে থাকেনা।আমাকে খাইয়ে দেয়না।গল্প শোনায় না।ইয়াম্মি ইয়াম্মি রান্না করে দেয়না – মুখ ফুলিয়ে রাগী ভঙ্গিতে বললো রিয়ানা

এ তো দেখি ভারি অন্যায় করে ফেলেছে তোমার ভাল আন্টি।এখন বলো তো নানাভাই তোমার ভাল আন্টিকে কি শাস্তি দেওয়া যায় ? – বাবাই

কালকে সারাদিন ভাল আন্টি আমাকে টাইম দিবে। আমার সাথে ঘুরবে।আমাকে ইয়াম্মি রান্না করে নিজে খাইয়ে দিবে – রিয়ানা

আচ্ছা ঠিক আছে। এসবই করবে তোমার ভাল আন্টি।আর যদি না করে তাহলে আমাকে বলবে তুমি। আমি তোমার ভাল আন্টিকে খুব করে বকে দিব – বাবাই

না না ভাল আন্টিকে বকা দিলে তো ভাল আন্টির খারাপ লাগবে পরে আমারো কষ্ট হবে। ভাল আন্টি আমার সব কথা শুনে তাই এটা ও শুনবে তাই না ভাল আন্টি ? – রিয়ানা

হ্যা পাখি – আমি

তারপর আরো কিছু সময় হাসি মজার গল্প করে আমরা সবাই ঘুমাতে চলে গেলাম।

___

অন্য দিকে,

তুমি ভাইসাহেবের সাথে কথা বলেছো রিয়ান ? – লিমা আহমেদ

হ্যা আম্মু – রিয়ান

উনি কি বলেন এই বিষয়ে ? – লিমা আহমেদ

উনি বলেছেন উনার কোনো সমস্যা নেই। উনি রাজি। কিন্তু

চলবে🥰🥰,

(প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছি।কালকে এ জন্য গল্প দিতে পারি। রিচেক করা হয়নি। ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here