প্রাপ্তির হাসি পর্ব_১০

0
9469

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_১০
DI YA

তুমি ভাইসাহেবের সাথে কথা বলেছো রিয়ান ? – লিমা আহমেদ

হ্যা আম্মু – রিয়ান

উনি কি বলেন এই বিষয়ে ? – লিমা আহমেদ

উনি বলেছেন উনার কোনো সমস্যা নেই। উনি রাজি। কিন্তু – রিয়ান

কিন্তু কি রিয়ান ? – লিমা আহমেদ

কিন্তু এখনো প্রাপ্তির সিদ্ধান্তের উপর সবকিছু নির্ভর করে।ও রাজি না হলে আর কিছু করার নেই – রিয়ান

মেয়েটা কাউকে বিশ্বাস করতে ভয় পায় রিয়ান। একবার বিশ্বাস করে ঠকেছে।যার উপর এত বিশ্বাস ভরসা করেছিল সে ওর ভরসা বিশ্বাস সবকিছু ভেঙে দিয়েছে।বিশ্বাস জিনিসটা এখন ওর মন থেকে উঠে গিয়েছে – লিমা আহমেদ

আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে আম্মু – বিছানায় শুয়ে বললো রিয়ান

হুম।- রিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো লিমা আহমেদ

বলো তো আমার কি দোষ আম্মু। আমি ভালোবেসেছি এটাই কি আমার দোষ। ভালোবাসা তো অন্যায় না আম্মু। প্রথম দিন দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল ওকে।তাই ওর থেকে দূরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করতে থাকি।কিন্তু আমি পারিনি আম্মু নিজেকে সামলাতে।সারাক্ষণ আমার ভাবনা কল্পনায় এসে আমাকে জ্বালাতে শুরু করে ও। তাও আমি অনেক চেষ্টা করেছি আম্মু। বিশ্বাস কর আমাকে। কিন্তু ওর অতীত টা যখন জানলাম তখন মনে হয় ও আমার মনে আরো বেশি জায়গা দখল করে নিল।কত কষ্ট করেছে মেয়েটা জীবনে। সেদিন যখন শুনলাম ওর বিয়ের কথা বার্তা চলছে।তখন নিজেকে পুরো পাগল পাগল মনে হচ্ছিল। খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে ছিলাম।তারপর যখন ও বিয়েটা ভেঙে দিল তখন একটু আশার আলো পেয়েছিলাম মনে।কম তো চেষ্টা করছি না আম্মু।কিন্তু ও বুঝে ও অবুঝের মতো আচরণ করছে।বলো তো আম্মু কেনো ও আমার সাথে এমন করছে ? – রিয়ান

বললাম না বাবা বিশ্বাস জিনিসটা হচ্ছে কাঁচের মতো।একবার ভেঙে গেলে হয়তো জোড়া ঠিকই লাগানো যায়। কিন্তু দাগ কিন্তু মেটে না। সেই দাগটা থেকেই যায়।তোর এখন ওর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। তাহলে দেখবি তুই যতোটা ওকে ভালোবাসিস তার থেকে অনেকগুণ বেশি ভালোবাসা তুই ওর কাছে থেকে পাবি। বুঝলি – লিমা আহমেদ

কি করে আম্মু ? কি করে আমি কি করব এটাই বুঝছি না।চেষ্টা করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। তবুও তার মন গলছেনা। কি করবো আমি আম্মু বলো ? – রিয়ান

ওকে সময় দে। ওর পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জেনে নে।ওর মতো করে ওকে চিনতে চেষ্টা কর। নিজের সর্বোচ্চ ভালোবাসাটা ওকে দে৷ আমি জানি তুই সত্যি পারবি – লিমা আহমেদ

জানিনা আম্মু।কিছু জানিনা আমি।আদৌ ও কি আমি পারবো প্রাপ্তির মুখে #প্রাপ্তির_হাসি ফুটাতে ? – রিয়ান

পারবি বাবা। ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই তুই তাকে পাবি।আল্লাহর কাছে নিজের চাওয়াগুলো বল উনি কখনো ও নিজের বান্দাকে নিরাস করেনা – লিমা আহমেদ

তাই যেন হয় আম্মু – রিয়ান

এই রকম এক কথায় দুই কথায় রিয়ান ঘুমিয়ে যায়।রিয়ানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসে লিমা আহমেদের ভিতরে থেকে।ছেলেকে তো বললেন সে পারবে।সত্যিই কি পারবে রিয়ানন প্রাপ্তির মনে নিজের জন্য অনুভূতি জন্মাতে।নাকি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে তার ছেলেটার জীবনের কাহিনী।

উনি একা একাই বলতে লাগলেন,

আল্লাহ তুমি সবই জানো। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল এটা ও তুমি জানো। আমার ছেলেটা জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে। এভাবে ওর থেকে ওর ভালোবাসাকে তুমি আলাদা করে দিও না।- লিমা আহমেদ

~~~~~~~~~~

পরদিন সকালে,,

পাখি ও রিয়ু পাখি জলদি উঠো।১০ টা বাজতে চললো বেলা তুমি এখনো শুয়ে আছো। আজকে না তুমি এতকিছু করবে। তাহলে কখনই বা উঠবে ? আর কখনই বা এতসব কিছু করবে ? সে চিন্তা কি আছে।রাতে কতবার বলেছিলাম জলদি ঘুমাও জলদি ঘুমাও। সকালে উঠতে পারবেনা।না আমার কথা কে শুনবে? – আমি

ভাল আন্টি আর একটু প্লিজ।আর একটু শুয়ে নেই।তারপর সবকিছু করবো – ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো রিয়ানা

না আর একটু ও না।জলদি উঠো। তুমি জানো আমি তোমার জন্য পাস্তা রান্না করেছি।তুমি এখন উঠে পরো পাখি – আমি

আচ্ছা ঠিক আছে ভাল আন্টি – রিয়ানা

তারপর রিয়ানা ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পর আমি ওকে রেডি করিয়ে দিলাম।সুন্দর কিউট একটা পিংক কালারের মিনি ফ্রক পরিয়ে দিলাম।ওর সাথে মিলিয়ে আমি ও একটা পিংক কালারের লং ড্রেস পরে নিলাম।সাথে দুজনে চুলগুলো একই রকম ভাবে পোনিটেল করে নিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে আসলাম।আমাদের দেখেই বাবাই বলে উঠলো,

মাশাল্লাহ আমার মা আর নানুভাইকে তো অসাধারণ লাগছে।আজকে রাস্তায় যে তোমাদের দেখবে সেই জ্ঞান হারাবে – বাবাই

না না জ্ঞান হারালে আবার আমার আর ভাল আন্টির নামে লোকেরা পুলিশে কেস করবে। তখন পুলিশ আঙ্কেল এসে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে।না না আমি ওখানে যাবো না নানুভাই – দুই হাত নাড়িয়ে না করতে করতে বললো রিয়ানা।

ওর কথাগুলো সাথে কথা বলার ধরণ দেখে আমি আর বাবাই হাসতে শুরু করে দিলাম।পুরাই বুড়ি একটা বাচ্চা। এই মেয়েটা যেখানেই থাকবে সেখানেই কখনো আনন্দের কমতি হবেনা।

তারপর আমরা সবাই নাস্তা করে নিলাম।নাস্তা করার পর আমি আর রিয়ানা গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। গাড়িতে বসতে যাবো তখনই কোথাথেকে যেন রিয়ান এসে হাজির হলো। আর বলতে লাগলো,

হেই গার্লস তোমরা কি তোমাদের সাথে আমাকে ও নিয়ে যাবে ঘুরতে ? – রিয়ান

এই আপনি কোথা থেকে আসলেন ? আপনি কি ভাবে জানলেন আমরা ঘুরতে যাবো ? বলুন বলুন – আমি

আরে বাবা এতকিছু বলতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। পরে বলা যাবে সবকিছু। রিয়ু মাম্মা তুমি কি পিছনের সিটে গিয়ে বসবে তাহলে পাপা একটু সামনের সিটে বসতে পারতো – রিয়ান

ওকে পাপা – বলে রিয়ানা গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসলো।

সাথে সাথে রিয়ান এসে আমার পাশের সিটে বসে পরলো।আমি আর কিছু না বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলাম।প্রথমে আমরা গেলাম শিশুপার্কে।সেখানে গিয়ে রিয়ানা প্রচুর আনন্দ করে। আর মিস্টার রিয়ান তো সারাক্ষণ অসভ্যের মতো আমার পিছনে পরেছিল।একটা মানুষ এত বেহায়া হয় কিভাবে। কেন বুঝেন না উনি আমি আমার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে কারোর নাম জড়াতে চাইনা ?

তারপর শিশুপার্কে থেকে বেরিয়ে আমরা চলে গেলাম লান্স করতে। রেস্টুরেন্টে বসে আমরা লান্স করছিলাম তখনই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে যেন হঠাৎ করে মিস্টার রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,

হেই দোস্ত কি অবস্থা তোমার ? – মেয়েটি

আরে মিম কি খবর তোমার? আমি ভালোই আছি। তোমার খবর বলো? – রিয়ান

এভাবে অনেকক্ষণ তারা কথা বলে।এরমধ্যে রিয়ান অবশ্য আমার আর রিয়ুর সাথে এই মিমের বাচ্চা ডিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।কেন জানি সহ্য হচ্ছিলো না ওই ডিমের বাচ্চাকে আমার।ছেলেদের সাথে এত গায়ে পরে নেকামি করে কথা বলার কি আছে। ভাবখানা দেখলে মন চায় ডিমের বাচ্চাকে ভাজি করে আমি খেয়ে ফেলি।উনি ও বলিহারি আমার সাথে তো কখনো এত হেসে কথা বলেনি। তাহলে মিমের সাথে এত কিসের কথা।মন চাচ্ছিলো ডিমকে আমি পাথরের সাথে মেরে মেরে ভাঙি।

তারপর রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে আমরা একটা শপিংমলে চলে আসি।ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই আমার চোখ পরে একজনন মানুষের উপর।আরে ও এখানে কি করছে ? আর ওর সাথে কে এটা ?

চলবে🥰🥰,

সরি রিচেক করতে পারিনি।ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here