#প্রিয়ংবদা🧡
#তৃতীয়_পর্ব
#লেখনীতেঃমৌশ্রী_রায়
পরেরদিন ভোরের কথা। প্রকৃতি যখন পাখির মিষ্টি কলতানে তৃপ্ত, শীতল হাওয়ার স্রোতে যখন জানালার রেশম সোনালী পর্দা গুলো আন্দোলিত হচ্ছে, তখন হৃদিতার ঘুমের রাজ্যে ঘুমপরীরা স্বপ্নের জাদুকাঠি ছোঁয়ালো।
স্বপ্নকাঠির স্পর্শে যখন হৃদিতার বদ্ধ নয়নের পাঁপড়িরাজি নড়েচড়ে উঠলো, তখনই এক নিদারুণ স্বপ্নের ঘোরে তলিয়ে গেল সে।
চোখের সামনে স্পষ্ট হলো স্বপ্নসুন্দর এক স্থান।
চারিপাশে রঙবেরঙের ফুলের ডালা সাজিয়ে সে স্থান যেন তাকেই আহ্বান করে গেল অনবরত।
হৃদিতা এগলো।এক পা দু পা করে অগ্রসর হবার পথেই চোখের সামনে পড়লো এক স্বচ্ছ হ্রদ।
হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলে ঢেউ তুলে রাজহংসের অবাধ বিচরণে তার মুগ্ধ আঁখিযুগলে আরো মুগ্ধতা ভর করলো।
হৃদিতা হ্রদের পাশে গিয়ে জলে হাত ডোবালো। ছলছল শব্দ তুলে হাতের কোমল স্পর্শে জল সিঞ্চন করে গেল হ্রদে বিচরণরত রাজহংস যুগলের গায়ে।
হঠাৎ হৃদিতা চোখ পড়লো হ্রদের বিপরীতে দাঁড়ানো এক পুরুষাবয়বের দিকে।
সেই পুরুষ মুর্তি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই হৃদিতার কানে ভেসে এলো,সেই অতি আকাঙ্খিত সম্বোধন,
“কৃষ্ণকায়া!”
হৃদিতা অবাক চোখে সামনে থেকে আসা অবয়বের দিকে তাকালো। কৌতুহলী হিয়া উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে গেল তার কাঙ্খিত সম্বোধনে সম্বোধিত করা ব্যক্তিটিকে দর্শন করার জন্য।
দুচোখের মণিজোড়া টালমাটাল হয়ে সময় গুনলো সেই স্বপ্নমানবের মুখদর্শনের।
কিন্তু হায়!স্বপ্ন সম্পূর্ণ হলো না। হঠাৎটি নিদারুণ বসন্তমন্ডিত সেই স্বপ্নভূমিতে শীতকন্যাদের অযাচিত আগমণ লক্ষ্য করা গেল।
আর তারপর!তারপর, সেই শীতরাণীদের নিষ্ঠুর তান্ডবে কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে গেল সেই কাঙ্ক্ষিত মুখশ্রী।
হৃদিতা চমকে গিয়ে চোখ মেলল।মুহুর্তেই উঠে বসে খামচে নিল বিছানার চাদর। সারারাত্রীর অত্যাচারে ভাজ পড়ে কুচকে যাওয়া চাদর আরো কুচকালো।
সেদিকে তাকালো না হৃদিতা। সে অন্বেষী চোখে অবাস্তব কিছু খোঁজার ব্যর্থ প্রয়াস চালালো। লাভ হলো না মোটেই।
হৃদিতার চোখে তখনো স্বপ্নের ঘোর,সেই প্রিয়,বহু কামনীয় মুখটি দর্শণের তীব্র ব্যকুলতা।
ততক্ষণে ভোরের কালচে আকাশের কোণায় কোণায় প্রথম প্রভাতের আলো ফুটতে শুরু করেছে।
সূর্যিমামা তার প্রভার ছটা গোটা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
পুবমুখী জানালার পর্দাগুলো বাতাসে নড়েচড়ে গিয়ে একটু আধটু দেখে নিতে দিচ্ছে সদ্য সকালের আকাশে ফুটে ওঠা লাল বৃত্তবৎ কুড়িটিকে।
হৃদিতা সেদিকে তাকালো।
এখন শ্রাবণ মাস চলে। ভরা বর্ষাতে বাসন্তী রুপে পরিবেশ কিকরে সাজবে, সেসব কথা মাথায় আসতেই সে বুঝে নিল, সেই স্বপ্নভুমি, স্বপ্নহ্রদে বিচরণরত রাজহংস, সেই স্বপ্নপুরুষ সবই নিছক স্বপ্ন বৈ কিছু নয়।
হৃদিতা নিজ মনে তাচ্ছিল্যের হাসলো। তাদের মতো কৃষ্ণরঙা কিশোরীর জীবনে এসব সত্যিই স্বপ্ন। তাছাড়া বাস্তবে এমন স্বপ্নের রাজ্য তাদের ভাগ্যে নেই।
ভাবনার রেশটুকু মস্তিষ্কের শিরা উপশিরাময় ঘুরে বেরাতে বেরাতেই হৃদিতা তপ্তশ্বাস ফেললো। বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে কুচকে থাকা চাদরের মাঝে হাত চালিয়ে তা সোজা করলো। বালিশ গুলো গুঁছিয়ে রেখে টানটান করে পেতে রাখা বিছানার চাদরটাতে আরেকবার হাত চালিয়ে নিয়ে ঢুকে গেল ওয়াসরুমে।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা।
হৃদিতা একেবারে কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে নিয়ে ড্রেসিংয়ের ওপর থেকে চিরুনি নিয়ে চুল গোঁছালো। রাতের শোবার বেকায়দায় এলোমেলো চুলগুলোকে সামলে নিয়ে শক্তপোক্ত একটা বিনুনি গেঁথে নিয়েই সে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।
পা চালিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিল। টাপুর দেবী উঠে পড়েছেন ইতোমধ্যে।
তিনি রান্নাঘরের লুচি বেলছেন।
হৃদিতা দাঁড়িয়ে থেকে বেশ কিছুক্ষণ মায়ের কাজ দেখলো।
মা একটা করে আটার লেচি নিচ্ছেন, তারপর সেটাকে তেলে ডুবিয়ে আবার চাকতির ওপরে রেখে বেলন দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বেলছেন। চারবারের মতো ঘোরাতেই একদম পূর্ণিমার চাঁদের মতো গোল গোল লুচি হয়ে যাচ্ছে সব।
হৃদিতার মনে হলো এই কাজটা ভীষণই সোজা।অথচ সে যতবারই মায়ের সাথে হাত লাগিয়ে লুচি বেলার চেষ্টা করে, ততবারই তা হয় আকারবিহীন হয়ে যায় নতুবা মাঝখান দিয়ে চিরেটিরে গিয়ে খুব শোচনীয় রুপ নেয়।
হৃদিতা নিজের ওপরে বিরক্ত হলো।
মায়ের লুচি বেলা দেখতে তার আর ভালো না লাগায় সে ফিরে দাঁড়ালো। গুটিগুটি পায়ে আবার স্টাডি টেবিলের দরজায় উঁকি দিতেই বাবাকে নজরে পড়লো। বাবা তখন নাকের ডগায় চশমা নামিয়ে কালকের অসমাপ্ত বইটায় চোখ বোলাতে ব্যাস্ত।
হৃদিতা আস্তে করে দরজাটা পুরো মেলে নিয়ে ভেতরে এলো। তারপর কিছু না বলেই বাবার কাছে গিয়ে ধুপ করে তার পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো।
ঋতমবাবু চোখ তুলে চাইলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হাসলেন। বইটা বন্ধ করে রেখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“কিরে মা। উঠে পড়লি?”
হৃদিতা মাথা নাড়লো।
ঋতম বাবু পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
“মন খারাপ?হৃদ?কি হয়েছে?”
হৃদিতা হালকা হেসে বললো,
“কি হবে বাবা?কিছু হয়নি। আমার মন একদম ভালো আছে। তুমি কি পড়ছিলে? কার বই এটা দেখি তো!”
হৃদিতা বাবার সামনে রাখা বইটাতে বড়বড় চোখে তাকিয়ে দেখলো,
“আনন্দ মঠ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ”
সে বাবাকে প্রশ্ন করলো,
“বঙ্কিমবাবুর লেখা তোমার ভালো লাগে খুব তাইনা বাবা?আমারো ভালো লাগে। তবে বিভূতিভূষণ বাবুর পথের পাঁচালি ইজ মাই ফেবরিট। আচ্ছা বাবা!দুর্গার মতো আমার কেন একটা অপু ভাই নেই বলতো!থাকলে কতাত মজা হতো বলো। আমরা খেলতাম, ঘুরতাম,আরো কত কি! তোমরা আরেকটা বাচ্চা নিতেই পারতে বাবা। কাজটা ঠিক করনি।আমাকে একদম একা করে দিয়েছো!”
ঋতম বাবু হেসে ফেললেন। তারপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোর খেলার সাথী লাগবে না মা। তোর জীবনে জীবনসাথী আসবে। তখন তার সাথেই সব ইচ্ছে গুলো প্রাণ খুলে পুরণ করিস নাহয়।”
হৃদিতা উদাসীন চোখে বাবার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
“আমি তো কালো বাবা। আমার জীবনের সাথী হতে কে আসবে?শুধুমাত্র কালো বলেই তো কেউ বন্ধু হতে চায়না। তাইতো একটা সাথী খুঁজি।একটা ভাই বা বোন থাকলে কিন্তু বেশ হতো বলো। কালো বলে তারা অন্তত দুরে সরাতো না। তাই না বাবা!”
ঋতমবাবুর বুকের ভেতরটা মেয়ের কথায় দুমরে মুচরে গেল। তবে মেয়ের সামনে কষ্টটাকে গোপণ করে তিনি পূর্ববৎ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“হৃদ!দেখ, তোমার গায়ের রঙের ওপরে নির্ভর করে যারা বন্ধত্বের বিচার করে তাদের সাথে তোমার বন্ধুত্ব না করাই শ্রেয় মা।
সমাজ এখন অনেক উন্নত। তবুও গায়ের রং নিয়ে প্রশ্ন তুলে যারা বর্ণবাদ করে তারা নামেমাত্র শিক্ষিত। বাস্তবে তারা প্রাচ্যযুগীয় বর্বর মানসিকতা লালন করে মা।
তাই ওদের জন্য মন খারাপ করোনা।
গোটা পৃথিবী যদি পাল্টে যায়, তবুও তোমার পাশে সবসময় তোমার বাবা-মা থাকবে।
আর কে বলে কালোমেয়েদের জীবনে সাথী হয়ে কেউ আসে না। যারা বলে, তারা গন্ড মূর্খ।
তুমি শরৎচন্দ্রের ” পরিণীতা পড়োনি মা!
ললিতা তো কালোই ছিল, তবুও শত দুর্যোগের ইতিতেও শেখর তাকে ভালোবেসেছিল, শেখরের পরিবার তাকে আপন করে নিয়েছিল।
”
হৃদিতা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি মেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,
“পরিণীতা! সে তো উপন্যাস বাবা।লেখকের কল্পনার ফল। বাস্তব জীবন কি উপন্যাসের মতো হয়?
জীবনটা তো কঠিন!উপন্যাসের পাতার মতো এত সহজ, সমাপ্তি কি তার হয়, এত কাঙ্খিত পরিণতি কি তা পায়?”
ঋতম বাবু উত্তর দিলেন,
“হৃদ!দেখ মা!আমাদের প্রত্যেকের জীবণ একটা উপন্যাস।
সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট এক নিঁখুত উপন্যাস।অতি নৈপুণ্যের সাথে আমাদের জীবনের প্রতিটা পাতায় আঁচর কেটেছেন উনি।
সৃষ্টিকর্তা এক জীবনে সবার উপন্যাসটাকেই পূর্ণতা দেয়। যাদেরটা পূর্ণতা পায়না বলে মনে হয়, তারটাও ওনার হিসেবে পূর্ণতা।
উপন্যাসে যেমন বিয়োগাত্মক ইতি হয়, সেটাও তেমনই।
তবে তোমার জীবনটা তো পরিপূর্ণ রুপেই পূর্ণতা পেতে পারে। তোমার উপন্যাসটা বিয়োগান্ত নাও হতে পারে।
তুমি পজিটিভ ভাবনাটাই গ্রহণ করো।
দেখবে জীবণটা খুব সুন্দর, একদম স্বপ্নের মতো!”
হৃদিতার মুখেও এতক্ষণে স্নিগ্ধ হাসির রেশ দেখা দিল। প্রশস্ত হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ধন্যবাদ বাবা। ইউ আর দা বেস্ট বাবা অফ মাই ওয়ার্ল্ড। ”
ঋতমবাবুও মেয়ের খুশিতে প্রফুল্ল বোধ করলেন। মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতেই শুনতে পেলেন, টাপুর দেবী খেতে ডাকছেন।
ওনার ভালো করেই জানা এখন যেতে দেরি হওয়া মানে স্ত্রীর হাতে তাদের কর্ণদ্বয়ের শ্রাদ্ধ। তাই মেয়েকে তাড়া দিয়ে তুলে নিয়ে গেলেন ডাইনিংয়ে।
টাপুর দেবী খাবার সাজিয়ে ফেলেছেন টেবিলে।
স্বামী -কন্যাকে আসতে দেখেই তাদের বসার জন্য ইশারা করে প্লেটে খাবার তুলে দিলেন।
সাধারণ মেনু, লুচি,আলুর দম, আর বেগুন ভাজা।
কিন্তু তা দেখেই হৃদিতার জিভে জল চলে এলো, সে চটপট বসে পড়ে লুচি ছিড়ে আলুর দমের বাটিতে ডুবিয়ে মুখে পুড়লো।
টাপুর দেবী প্রশ্ন ছুড়লেন,
“কিরে!কেমন হয়েছে?”
হৃদিতা মুখে থাকা খাবার চিবোতে চিবোতেই জবাব দিল,
“জাস্ট অসাধারণ মা।”
টাপুর দেবী খুশি হলেন। ঋতমবাবুও বসে পড়লেন খেতে।
খাবার দাবারের পাট মিটলে হৃদিতা কলেজ ব্যাগটা নিজের ঘর থেকে নিয়ে এসেই বাবা মার উদ্দেশ্যে বললো,
“টাটা দুজনকেই!আসছি!”
টাপুর দেবী পেছন থেকে চেঁচিয়ে বললেন,
“আজ যেন তাড়াতাড়ি ফেরা হয়, নইলে কান ছিঁড়ে দেব আজ।”
হৃদিতা যেতে যেতেই জবাব দিল,
“দিদার সাথে দেখা করেই ফিরবো মা। বিকেলের মাঝেই চলে আসবো।চিন্তা করোনা!”
টাপুর দেবী আর কিছু বললেন না। মেয়ের যাবার পানে তাকিয়ে দুহাত জোড় কে কপালে ঠেকিয়ে বলে উঠলেন,
“দুগ্গা দুগ্গা!”
.
বিকেলবেলা কলেজ থেকে ফেরার পথে বৃদ্ধাশ্রমের রাস্তাটায় মোড় নিতেই হৃদিতার চোখে পড়লো একটা রাধাচূড়ার গাছ। ছোট্ট গাছটাতে কেবল একটা ফুলের ছড়া।
হৃদিতা মনে করার চেষ্টা করলো,কাল কি সে গাছে ফুল দেখেছিল। মনে পড়লো কাল গাছে ফুল ছিলনা।তারমানে ফুলটা আজকের ফোটা।সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের ছড়াটাকে হৃদিতা খুব যত্নে গাছ থেকে তুলে নিল।
মনে মনে ঠিক করলো, দিদাকে গিয়ে ফুলের ছড়াটা দিয়ে চমকে দেবে।ফুলটা পেয়ে কি দিদা খুশি হবে না? নিশ্চই হবে।
ফুলটা হাতে পেয়ে কাদম্বিনী দেবী ঠিক কতটা খুশি হবেন তা ভেবে হাসিতে ভরে গেল হৃদিতার কপোলদ্বয়।
মিনিট দশেকের মাঝেই হৃদিতা পৌঁছে গেল বৃদ্ধাশ্রমে। কাদম্বিনী দেবী বৃদ্ধাশ্রমের পাশের খোলা উঠোনটাতেই একটা বেঞ্চে বসে ছিলেন।সবুজ ঘাসে ঘাসে ছেঁয়ে যাওয়া উঠোনটায় চোখ বুলিয়ে পায়ে থাকা জুতো জোড়া খুলে একপাশে রাখলো হৃদিতা।সবুজ ঘাসের মাঝে খালি পায়ে হেঁটে সে অনুভব করলো এক অভাবনীয় আনন্দ।
হৃদিতা সেই আনন্দের ছটাটুকু সারাগায়ে মেকে নিয়ে কাদম্বিনী দেবীর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তাকে ডেকে উঠলো,
“দিদা!”
কাদম্বিনী দেবী বেঞ্চের পেছনের কাঠে হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিলেন। হৃদিতার ডাকে চোখ মেলতেই তার সামনে দৃশ্যমান হলো একছড়া হলদে কমলা রাধাচূড়া।
হৃদিতা মুচকি হেসে বললো,
“তোমার জন্য! পছন্দ হয়নি!”
কাদম্বিনী দেবী মৃদু হেসে ফুলটা হাতে নিলেন। বাঁ হাত বেঞ্চের ওপর রেখে হৃদিতাকে বসার জন্য বললেন।
হৃদিতা দেরী করলো না। দিদার পাশে বসে পগলো। কাদম্বিনী দেবী তার মাথায় হাত রেখে বললেন,
“পছন্দ হবে না মানে? রাধাচূড়া ফুল আমার খুব প্রিয় দিদিভাই!আর যে দিল সেও খুব প্রিয়। প্রিয়দের থেকে প্রিয় কিছু পেলে তা শুধু পছন্দ হয়না। মারাত্ম ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সেই জিনিসটার ওপর।বুঝলে!”
হৃদিতা হাসলো। কাদম্বিনী দেবী নিজেই আবার বললরন,
“ওনার সাথে আমার যখন নতুন নতুন প্রেম শুরু হয়, তখন উনিও এমন করে রাধাচূড়ার ছড়া এনে দিত আমায়।
আমার শশুড়বাড়িতে এক মস্ত রাধাচূড়ার গাছ ছিল বুঝলে তো। ওনার বিদেশে থাকার ঐ চারটে বছর ঐ রাধাচূগার গাছের নিচে বসেই কত সময় পার করেছি। তোমার দাদুর সাথে আমার প্রেম শুরু হয় তো, আরো পরে। তখন আমাদের বিয়ের পার্চবছর পূর্ণ হবে।
আজও ভাবলে হাসি পায় জানো! বিয়ের এতবছর পরে এসে দুজন দুজনের প্রেমে পড়েছিলাম আমরা।
আর সেই পুরোনো বিয়ের নতুন প্রেমে পরেই উনি যত রাজ্যের পাগলামি করতেন।
জানো দিদিভাই, একদিন আমি রান্না করছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে এসে সামনে হাত বাড়য়ে দিলেন। আমার পিঠ ওনার বুকের সাথে ঠেকে যেতেই চাঁপা আর্তনাদ করে বললাম,
” আরে, কি করছেন। কেউ এসে দেখলে কি ভাববে, ছাড়ুন, বাবা বাড়িতে আছেন!”
উনি হেসে ফেলে বললেন,
“কেউ আসবেনা, বাবা ঘুমোচ্ছেন। তুমি এটা তেখ। কেমন লাগে বলতো। পছন্দ হয়।? ”
আমি ওনার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা রাধাচূড়ার ছগা। চোখ ছোট করে জিজ্ঞেস করলাম,
“এ ফুল কিকরে পাড়লেন?গাছে সব ফুল তো ঐ উঁচুতে। আমি কতদিন চেষ্টা করেছি পাড়তে, তবু পারিনি!”
উনি ফুলটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে মাথা চুলকে উত্তর দিলেন,
“তুমি পছন্দ করো, তাই গাছে চড়ে পেড়েছি!”
শুনে তো আমি পুরো বাকরুদ্ধ।
তুমি ভাবতে পারো দিদিভাই, আমি ফুল পছন্দ করি শুধু এ জন্য অত বড় মানুষ গাছে চড়ে গেল।
এমন কতশত পাগলামিতে মাতিয়ে রাখতো তখন আমাকে! ”
বলেই কাদম্বিনী দেবী নিজের মনে হাসলেন।
হৃদিতা জিজ্ঞেস করলো,
“আমাকে তোমাদের কাহিনীটা পুরো বলবে দিদা! আমি শুনতে চাই তোমাদের গল্পটা বলবে?”
কাদম্বিনী দেবী মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
হৃদিতা হাসিমুখে জানার তীব্র অপেক্ষা নিয়ে ওনার দিকে ফিরে বসতেই কাদম্বিনী দেবী বলতে লাগলেন,
“সেদিন ওনাকে ওভাবে সরিয়ে দেবার কারণ ছিল আমি ওনাকে ভালোবাসতাম না।বরং এত বছরের দুরত্ব, শাশুড়িমার মৃত্যু সবকিছু আমার মনে ওনার জন্য তীব্র রাগ জন্ম দিয়েছিল। চাপা অভিমান বলতে পারিস। কখনো ওনাকে কিছু বলিনি এ বিষয়ে আমি।
তবে সেদিন যখন উনি আচমকা কাছে চলে এলেন, তখন মনে হলো, এতগুলো বছর দুরে থাকার পরে ফিরে এসেই স্বামীত্ব ফলাবার চেষ্টা করলেন।
মাথার ভেতরে কেবল এই কথাটাই ঘুরছিল আমার। তাই সেদিন চেঁচিয়ে ওনার ওপরে জমে থাকা সব রাগ গুলো মিটিয়ে দিয়েছিলাম আমি।যা নয় তাই শুনিয়ে দিয়ে শান্ত হয়েছিলাম।
আর তারপর! তারপর আর কখনো আমাকে বিনা অনুমতিতে স্পর্শ করেন নি উনি।
ভালোবাসার দিনগুলোতেও না।
#চলবে
[শেষের অংশটুকু অগোছালো হয়েছে না। ওগুলো লিখতে ধরে একটা বিশাল সাপ চলে গেছে সামনে দিয়ে।
সে সাপ এখন আমাদের বাইরের বারান্দার এটা কোণে। বের টের হচ্ছে নজ।
প্রচুর ভয়ে আছি। বাড়ির চারদিকে উঁচু পাঁচিল তারপরও এটা কোথা থেকে এল বোঝা যাচ্ছে না।
আমি কাল গল্প দিতে পারবো কিনা নিশ্চিত না পাঠকমহল।
সাপটাপ ঘরে ঢুকে গেলে কি হবে সেটা ভেবেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে।
সবাই প্রার্থনা করুন, কারো যেন কিছু না হয়।
সকল হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জানাই শুভ জন্মাষ্টমী।
রিচেইক করা হয়নি
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।হ্যাপি রিডিং 💛]