‘তু’তুমি তুমি কেনো আমাকে মা*র*তে চাও’।
ভয়ানক এক আর্তনাদে ভূমিকম্পনের ন্যায় কেঁপে উঠলো “ওয়েল কাম টু দ্যা হ্যাভেন”।একটা আর্তনাদে চারতলা বিল্ডিং টা যেনো প্রলয়ের মতো কাঁপছে।বাঁচার জন্য কারো চেষ্টা, প্রাণ বাঁচাতে বুক ফাঁটা আর্তনাদ দিচ্ছে।যেনো এক্ষনি ধসে পড়বে বহুল আলোচিতো ‘ওয়েল কাম টু দ্যা হ্যাভেন’ আর্তনাদ টা এতোই ভয়ানক ছিলো।চারতলা থেকে একটা কাঁন্নামিশ্রিত চাপা আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়লো ‘ওয়েলকাম টু দ্যা হ্যাভেন ‘ভবনের প্রতিটা স্তরে স্তরে।
‘আমাকে মে*রে ফেলো কিন্তু আমার মেয়েদের কোনো ক্ষতি করোনা প্লিজ।’
মাধবী চরম ভয় আর চাপা আর্তনাদ নিয়ে কথা গুলো বলছে ।প্রিয়ন্তি বিল্ডিং এর তিনতলার দক্ষিণ পাশের রুমে ঘুমোচ্ছিলো।মধ্যরাতে মায়ের আর্তনাদে বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠলো। কেমন দুঃস্বপ্নের মতো মনে হলো প্রিয়ন্তির কাছে।বুক ধড়ফড় করছে আচমকা মায়ের চিৎকারে।দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে বারান্দায় আসলো।প্রিয়ন্তির রুমের ঠিক উপরের ঘরটায় তার মা আর বাবা থাকে।হঠাত করেই থেমে গেলো সব আর্তনাদ সব চিৎকার। ঠান্ডা আবহাওয়ার মতোই বদলে গেলো চারপাশের পরিবেশ।নিশ্চুপ হয়ে গেলো সবকিছু।বারান্দায় এসেই প্রিয়ন্তির চোখের সামনে ভয়ানক এক দৃশ্য স্পষ্ট হলো।প্রিয়ন্তির সামনে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় টুপ টুপ করে উপর থেকে র*ক্ত পড়ছে।র*ক্ত দেখলেই মাথায় চক্কর দেয় প্রিয়ন্তির। দুইকানে হাত চেপে ধরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো প্রিয়ন্তি।ভয়ে থরথর করে কাঁপছে সে।উপর থেকে বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় ফোঁপায় র*ক্ত পড়ছে।প্রিয়ন্তির সামনে এখন র*ক্তের ফোয়ারা।র*ক্তের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।নিমিষেই খানিক টা জায়গা জুড়ে র*ক্ত র*ক্ত হয়ে গেলো।প্রিয়ন্তি অনুভূতিহীন কোনো অনুভূতি যেনো আর কাজ করছে না।দুইকানে হাত চেপে ধরে তাকিয়ে আছে র★ক্তে★র দিকে।প্রিয়ন্তির সমস্ত শরীর কাঁপছে।র*ক্ত কোন জায়গা থেকে পড়ছে উপরে চোখ তুলে তাকাতেই বুকের মাঝে ছ্যাত করে উঠলো।অনুভূতি ফিরে এলো প্রিয়ন্তির।আবার ও ভূবন কাঁপানো চিৎকার দিলো কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে।জড়িয়ে গিয়েছে প্রিয়ন্তির কন্ঠস্বর।জড়ানো কন্ঠে শুধু মা মা করছে।হঠাত লোড শেডিং হলো,বাইরে ঝোড়ো হাওয়া হচ্ছে।আকাশে কাল বৈশাখের কালো মেঘ।বাইরে শুরু হলো ঝড় বৃষ্টি। নিকশ কালো অন্ধকারে চারতলার বারান্দার রেলিং এর সাথে ধবধবে সাদা থান পরা অবস্থায় ঝুলছে প্রিয়ন্তির মায়ের দেহ।এমন ভয়ংকর দৃশ্য মধ্যরাতে দেখলে যে কারোর ই হার্টফেইল হয়ে মৃ*ত্যু হয়ে যাবে।দৃশ্যটা বড়ই ভয়ংকর।কেউ গলায় দ*ড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে।হাত পায়ের শিরা কে*টে দেওয়া যার জন্য টুপ টাপ করে র**ক্ত পড়ছে।প্রিয়ন্তি এক চিৎকারে জ্ঞান হারালো।সাথে সাথে কোন পুরুষালী হাত ঢলে পড়া প্রিয়ন্তিকে আগলে ধরলো।রুপন্তি প্রিয়ন্তির চিৎকারে বাইরে বেরিয়ে এলো। বোন আর মায়ের এমন দৃশ্য দেখে সাথে সাথে রূপন্তি ও জ্ঞান হারালো।
মাধবীর মতো মানুষ কে মা*র★বে কে?যে মহিলার স্বপ্ন শুধু স্বামি আর দুই মেয়েকে নিয়ে।দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবে বলে জীবন যুদ্ধে নেমেছে মাধবী।তবে মাধবীর চিৎকারে এটুকু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে খুব কাছের কেউ মাধবী কে মে*রে*ছে।কেননা মাধবীর কন্ঠে স্পষ্ট ক্লিয়ার ছিলো খুব কাছের কারো কাছে কাকুতি মিনতি করছিলো। মাধবীর নিজস্ব কোনো শ*ত্রু নেই।এই খু*ন টা কিভাবে হলো সেটাই প্রশ্ন ছিলো।ওয়েলকাম টু দ্যা হ্যাভেন কি কোনো অভিশপ্ত বাড়ি ছিলো।বহু পুরণো প্রাচীন বিল্ডিং এই ওয়েলকাম টু দ্যা হ্যাভেন।চারতলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়ি।
———————————————————
প্রিয়ন্তিপুর গ্রামের মেম্বার এর বাড়িতে ভাড়া থাকে প্রিয়ন্তি,রূপন্তী,মাধবী,আর, ফারুক।গরিব সংসার কিন্তু সুখ শান্তিতে ভরপুর।সুখের একমাত্র কারণ প্রিয়ন্তি আর রুপন্তি।ফারুক মাঠে কাজ করে,মাধবী মেম্বার এর বাড়িতে কাজে হাতে হাতে সাহায্য করে। আর প্রিয়ন্তি এইস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র।প্রিয়ন্তির মাথায় কোকড়ানো চুল জন্ম থেকে একটু বাদামি টাইপের চুলের কালার।চুপ সম্পূর্ণ কালো নয় আবার সম্পূর্ণ বাদামি ও নয়।দুই এর মাঝামাঝি সুন্দর এক কালার।টানা চোখ, টানা ভ্রু ধবধবে সাদা, উচ্চতা ৫ ফুট ৫ “।অন্যদিকে রুপন্তী প্রিয়ন্তির বিপরিত বর্ণ।গায়ের রং সম্পূর্ণ কালো তবে অসম্ভব মায়াবতী দেখতে।এলাকার মাঝে সব থেকে সেরা স্টুডেন্ট। রুপন্তি সব সময় ক্লাসে প্রথম হয়।শুধু প্রথম হয় এটা নয় তার মেধা নিয়ে টিচার রা ভীষণ প্রশংসা করে।প্রিয়ন্তি দেখতে ওর মায়ের মতো হয়েছে রুপন্তির গায়ের রং বাবার মতো হয়েছে।
সন্ধ্যার সময় প্রিয়ন্তি আর রুপন্তি দুজনে পড়ার টেবিলে।প্রিয়ন্তি রুপন্তিকে বই পড়াচ্ছে।
রুপন্তি প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে বলছে,
‘আপা একটা কথা জিজ্ঞেস করি।’
প্রিয়ন্তি বই এর পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
‘হ্যাঁ কর তবে একটার বেশী প্রশ্ন করতে পারবিনা।’
‘আপা আম্মার মেয়েই তো আমি।’
প্রিয়ন্তি বইয়ের পাতা উল্টানো রেখে বোনের এমন প্রশ্নে সন্দেহভাজন হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘এটা কেমন প্রশ্ন রুপ।তুই মায়ের মেয়ে নাতো কার মেয়ে।’
প্রিয়ন্তি তার মা কে মা বলেই ডাকে আর রুপন্তি আম্মা বলে ডাকে।
রুপন্তি দুই গালে হাত দিয়ে বেশ মন খারাপ করে বললো,
‘আমি কিভাবে আম্মার মেয়ে হতে পারি বলো।আম্মার মেয়ে তো তুমি।তুমি আম্মার মতো ধবধবে সাদা আর আমি ধবধবে কালা।আচ্ছা আম্মা কি আমাকে অপমান করেই আমার নাম টা রুপন্তি রেখেছে আর রুপ বলে ডাকে।’
প্রিয়ন্তি ফিক করে হেসে দিলো ধবধবে কালা কথাটা শুনে।আর জোরে নিজের মা’কে ডাকলো।
‘মা শুনে যাও তোমার মেয়ে কি বলছে।’
‘আম্মাকে ডাকছো কেনো আপা।যা সত্যি তাই তো বলছি।আম্মা অপমান করেই আমার নাম টা রেখেছে।’
‘কেনো অপমান হবে কেনো?’
‘তাই ছাড়া কি আপা।যে মেয়ে অসম্ভব রুপবতী তার নাম দিয়েছে প্রিয়ন্তি।আর যে মেয়ে অসম্ভব কালাবতী তার নাম দিয়েছে রুপন্তি।এটা কি ঠিক বলোতো।এ নাম নিয়ে স্কুলের সবাই হাসাহাসি করে।এমন কি পাড়ার অনেকে আমাকে রুপবান বলেও ডাকে।এসব উপহাসে আমার খারাপ লাগে আপা।আচ্ছা তুমি একা এত সুন্দর না হয়ে ওখান থেকে আমাকে অল্প একটু সুন্দর দিলেও তো পারতে।আপা আমাদের উচিত নাম চেঞ্জ করে ফেলা।আসো তুমি রুপন্তি হয়ে যাও আর আমি প্রিয়ন্তি হয়ে যায়।’
‘মোটেও না।আমি মায়ের প্রথম সন্তান ভীষণ প্রিয় ছিলাম তাই এই প্রিয়ন্তিপুর গ্রামের নামের সাথে মিল রেখেছে প্রিয়ন্তি।এই প্রিয় নাম আমি কাউকে দিবোনা।’
‘আমি মনে হয় আসলেই আম্মার মেয়ে নারে আপা।কিছু একটা কাহিনী তো আছেই।না হলে দুই মেয়ের মাঝে এত চেঞ্জ কিভাবে হয় বলো।’
প্রিয়ন্তি মজা করেই বললো,
‘তুই তো আসলেই মায়ের মেয়ে না রুপ।তোকে নদীর পাড় থেকে কুড়িয়ে এনেছে মা।তুই যখন ছোট তোর মা বাবাকে যেনো কারা মে*রে নদীর পাড়ে ফেলে গেছিলো।তুই ঘ্যা ঘ্যা করে কাঁদছিলি তাই মা তোকে নিয়ে এসছিলো।দেখিস না গ্রামের নদী দিয়ে প্রায় লা* শ যায়।তোর মা বাবার লা* শ ও ওভাবে গেছিলো।’
রুপন্তি প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছে।বেশ মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে প্রিয়ন্তির দিকে।তার এই গায়ের রং নিয়ে ভারী আফসোস তার।তার আপা আর আম্মা কত সুন্দর দুধে আলতা গায়ের বরণ।সে কেনো অল্প একটু সাদা হলোনা।রোজা আপা আর আম্মার কাছে মন খারাপ করে।
মাধবী মেয়ের কথা শুনে ঘরে প্রবেশ করর।প্রিয়ন্তি আর মাধবী দুজনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।।মাধবী রুপন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ কালো জগতের আলো।মক্কা শরীফ কালো,আল কোরআন এর হরফ গুলো কালো সেসব কি কম মূল্যবান।আমার রূপন্তির যে মেধা একদিন আমার মেয়ে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে।আমার মেয়েকে আমি ডাক্তারি পড়াবো।নাম করা ডাক্তার হবে আমার মেয়ে।কে বলবে আমার মেয়ে কালো।’
‘আম্মা আমারে ডাক্তার আর আপারে পুলিশ বানাতে চাও কেনো?’
‘তোমার আপার নিজের ই ইচ্ছা সে পুলিশ হবে।পুলিশ হয়ে সে তার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবীকে খুজে বের করবে।এই যে গ্রামের এত মানুষ খু**ন হচ্ছে তা খুজে বের করবে।এই যে মেয়েরা হারিয়ে যায় তা খুজে বের করবে।’
‘আম্মা জান্নাত আপারেও কি কেউ খু*ন করেছে।’
‘জানিনা মা।আমার তো ভয় হয় আমার মেয়েদের সাথে না জানি কবে কি হয়ে যায়।’
‘আম্মা চাকরি হতে তো অনেক টাকা লাগে।এত টাকা কোথায় পাবো আমরা।’
‘তোর বাবা বলেছে সে এইবার তার বাপ দাদার সম্পত্তির ভাগ চাইতে যাবে।এতদিন যায় নাই।কিন্তু এইবার ঠিক ই যাবে।নিজের মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য হলেও যেতে হবে।তাই তো বললো তোর বাবা।’
‘বাবা এখানে পড়ে আছে কেনো আম্মা?আমরা দাদাবাড়ি থাকিনা কেনো?কোনো ভেজাল আছে নাকি।’
‘থাক সেসব কথা পরে শুনবি।দেখ তোর আপার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।’
প্রিয়ন্তির মুখ কালো হয়ে গেলো।মন খারাপের মেঘ ভর করেছে প্রিয়ন্তির মুখে।
সেদিন মুশল ধারে বৃষ্টি ছিলো।কলেজের ফাংশন শেষ করে প্রিয়ন্তি আর জান্নাত বাড়িতে ফিরছিলো।গ্রাম এর শেষে বিশাল বড় মাঠ পেরিয়ে নদী পার হয়েই কলেজ যেতে হয় গ্রামের ছেলে মেয়েদের।সেদিন নদীতে একটা লা*শ পাওয়া যায়।কার লা*শ কেউ জানেনা।প্রায় নদী দিয়ে মড়ির মতো ভেষে আসে মানুষের গলা পচা দেহ।প্রতিটা লা*শে*র শরিরে অত্যাচারের একই দৃশ্য দেখা যায়।হাত আর পায়ের আঙুল গুলো কে*টে ফেলা।নাকের মাথা কে*টে ফেলা।হাত পায়ের শিরা কে*টে দেওয়া।চোখ উ*প*ড়ে ফেলানো।কপাল থেকে পেট পর্যন্ত কে*টে পেটের ভেতরের সব বের করে আবার সেলাই করে দেওয়া।লা*শে*র পায়ের তালু কে*টে লিখে দেওয়া অপারেশন সাকসেস নেক্সট টার্গেট হয়তো আপনি।গ্রামের মানুষ এটাকে ভৌতিক কান্ড বলে মনে করে।কেননা প্রতিটা মানুষের মাঝেই আতঙ্ক।আশে পাশের কয়েক টা গ্রামের মানুষের মাঝেই এই আতঙ্ক ছড়ানো।কেউ বুঝতে পারেনা কে বা কারা এই কাজ করছে।তবে এই খু*ন গুলো যে করছে মানুষ টা একজন ই হবে।বাড়ি ফিরতে সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো।প্রিয়ন্তির চোখের সামনে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড জান্নাত এর মুখে বেঁধে তুলে নিয়ে যায়।প্রিয়ন্তিকে ও নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারেনি।প্রিয়ন্তি বালু ছুড়ে মেরে পালিয়েছিলো।সেদিন থেকে ঘুম হয়না প্রিয়ন্তির।জান্নাতের সাথে জড়িয়ে আছে তার জীবনের সব থেকে বেশী মিষ্টি মধুর সম্পর্ক।জান্নাত কে যে তুলে নিয়ে গেছিলো তার একটা নিশানা প্রিয়ন্তির কাছে থেকে গিয়েছে।এই চিহ্ন ধরেই প্রিয়ন্তি খুজে চলেছে সেই মানুষ কে।
চলবে..?
#প্রিয়ন্তির_গল্প
১.
#Writer_Mousumi_Akter
(আসসালামু আলাইকুম পাঠকমহল। প্রথম পর্বে উপন্যাসের যদিও তেমন কিছু বোঝা যায় না তবে ধৈর্য রাখুন আপনাদের ভালো লাগবে।ভালো না লাগলে আগাবো না।তবে আপনাদের রেসপন্স জরুরী।প্রথম পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন।রেসপন্স এর ভিত্তিতে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)