প্রিয়ন্তির_গল্প ৩.অন্তিম পর্ব

#প্রিয়ন্তির_গল্প
৩.অন্তিম পর্ব
#writer_Mousumi_Akter

আয়মন সন্ধ্যায় অপেক্ষা করছে প্রিয়ন্তির ফোন কলের জন্য।আজ সারাদিন সে ফোন চেক করেছে।হয়তো প্রিয়ন্তি তাকে সুযোগ পেলেই মিস কল দিবে।সন্ধ্যার খানিক টা পরেই মিস কল বেজে উঠলো।আয়মান সাথে সাথে ফোন ব্যাক করলো।

ফোন রিসিভ করেই বললো,প্রিয়ন্তি।

-প্রিয়ন্তি বেশ অবাক হয়ে বললো বুঝলেন কিভাবে।

-আয়মান হেসে বললো,কারণ আমিও তোমারি অপেক্ষা করছিলাম পুলিশ ম্যাডাম।

-চাকরি টা আমার হয়নি আয়মান সাহেব।

-কেনো হয়নি।

-জানিনা আমাকে লাস্টে বাদ দিয়ে দিয়েছে।আমার হয়তো আর পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবেনা।

-আগামি মাঠে তোমার চাকরি হবে।আই প্রমিজ।আমি ব্যবস্থা করবো।

-শুধু শুধু আমার জন্য এত কষ্ট করবেন কেনো?

-শুধু শুধু কে বললো।আমার তো মনে হচ্ছে আমি নিজের জন্যই করছি।

-নিজের জন্য কিভাবে?

–এখনি সেটা বুঝবে না।আচ্ছা ওই খু**নি**র ব্যাপারে কি কোনো ইনফরমেশন দিতে পারবে।

–উনাদের একটা মোবাইল এর সিম কার্ড আমার কাছে থেকে গেছে।জান্নাত কে নিয়ে যাবার সময় উনাদের পকেট থেকে পড়েছিলো।

–ওহ মাই গড সিম টা আছে তোমার কাছে।

-হ্যা আছে।

-ওটা আমাকে দিতে পারবে।

–পারবো

–আমি কি এক্ষুনি আসবো।

–না না এখন আমরা মামা বাড়িতে যাবো।এক সপ্তাহ বাদে ফিরবো।

–মামাবাড়ি কোথায়?

–ঢাকায়।

–ঢাকায় তো আমার ও বাড়ি।তোমার মামার বাড়ি কোথায়?

–মতিঝিল।

–আমার বাসা ও মতিঝিল,তাহলে ভালোই হবে। আমিও তাহলে আজ ঢাকা রওনা দেই।এক সাথে একই শহরে দুজনে যেতে পারবো।আচ্ছা সমস্যা না থাকলে তোমরা আমার সাথে যেতে পারো।

–আমরা তো মামার সাথে যাবো।আমার মামা এই দশ বছর পরে বিদেশ থেকে এসছে।গাড়ি আছে মামার।এই ফোনটাও মামা ই এনেছে।

–আচ্ছা আমাকে তোমাদের সাথে নিবে।

–মায়ের কাছে শুনে দেখতে হবে।

–আচ্ছা শুনে দেখে আমাকে জানাও।

–আমি আমার মাকে যা বুঝিয়ে বলবো মা শুনবে।আপনি আমাদের গ্রামের চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়াবেন প্লিজ।রাত দশটায় আমরা রওনা হবো।

–এত রাতে যাওয়া টা কি ঠিক হবে।

–মামা বললো যে।

–তোমার মামা আগে কখনো এসেছেন তোমাদের এখানে।

–না এই প্রথমবার ই আসলো।

–আচ্ছা, বুঝেছি।

রাত দশটায় প্রিয়ন্তি,রুপন্তি,প্রিয়ন্তির মা বাবা তার মামার সাথে রওনা হলো তার মামার বাড়িতে।প্রিয়ন্তি আর রুপন্তি ভীষণ খুশি।জন্মের পর আজ প্রথম তারা মামা বাড়িতে যাচ্ছে।মামাদের সাথে কিছু এক টা ঝামেলার জন্য তারা মামাবাড়িতে প্রবেশ করেনি কখনো।প্রিয়ন্তি তার মাকে আয়মানের কথা আগেই বলে রেখেছিলো।আয়মান ব্যাগ ঘাড়ে করে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।রাস্তা থেকে আয়মান ও গাড়িতে উঠলো।আয়মান ড্রাইভারের পাশে বসলো।গাড়ি গ্রাম পেরিয়ে শহরের রাস্তায় ঢুকেছে।নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।

–আয়মান বলছে এমন রাস্তা দিয়ে আসলেন কেনো ড্রাইভার ভাই।আপনি সোজা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে এমন জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে ঢুকলেন কেনো ব্যাক করুণ।এসব রাস্তায় ডাকাত প্রবেশ করে।

–প্রিয়ন্তির মামা সিদ্দিক গাজী বললো,এদিকে আমার একটা বাড়ি আছে।বাড়িটা বোন আর ভাগনিদের দেখাতে চাই।

–আয়মান বেশ অবাক হয়ে বললো,এমন অদ্ভুত জায়গা বাড়ি করেছেন।বাড়িটা ঠিক কোথায়?

–সুন্দর বনের পাশেই।

রাত দুইটায় গাড়ি এসে সুন্দরবনের পাশে থামলো।ভয়ানক এক জঙ্গলের সামনে গাড়ি থামলো।সবাই টর্চ লাইট হাতে জঙ্গলে প্রবেশ করছে।জঙ্গলে প্রবেশ করতেই রুপন্তি চিৎকার দিয়ে উঠলো।অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি পড়ে আছে।প্রিয়ন্তির কাছেও কেমন যেনো লাগছে।কিন্তু মামা যদি কিছু মনে করে তাই কিছুই বলছে না।

–মাধবী বলছে দাদা তুমি এমন অদ্ভুত জায়গা বাড়ি করেছো কেনো?আমার মেয়েরা ভয় পাচ্ছে।

–প্রিয়ন্তির মামা হেসে বললো,মামা তোমরা ভয় পেওণা।তোমাদের মামা থাকতে ভয় কিসের।

আয়মান ভালোভাবে সব পর্যবেক্ষণ করছে।
কিছুটা পথ যাবার পরে বিশাল বড় চারতলা এক টা বিল্ডিং দেখতে পেলো তারা সবাই।বিল্ডিং এর গায়ে লেখা আছে ওয়েলকাম টু দ্যা হ্যাভেন স্বর্ণক্ষরে।
রুপন্তি বলছে আম্মা এটার নাম হ্যাভেন না দিয়ে মামা হেল দিলে ভালো হতো।
মামা হেসে বললো,এই মেয়েটা আসলেই বুদ্ধিমতি।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সব লাইট অন করে দিতেই চকচক করে উঠলো বাড়িটা।
আয়মান এর চোখ একজায়গা স্হির নয়।চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে

প্রিয়ন্তি,রুপন্তি আর আয়মান কে খাবার খেতে দিলো প্রিয়ন্তির মামা।খাবার খেয়েই প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তাদের।তিনতলার একটা রুমে প্রিয়ন্তি আর রুপন্তিকে ঘুমোতে দিলো।আর আয়মানকে নিচ তলার একটা রুমে।

–চারতলায় প্রিয়ন্তির মা বাবা আর মামা।প্রিয়ন্তির মামা বলছে মাধবী তোর সাথে কিছু কথা আছে।

–মাধবী হাসি মুখে বললো, হুম বলো দাদা।

–মেয়েদের খুব ভাবাসিস তাইনা?

–হুম দাদা।

–মেয়েদের প্রাণ বাঁচাতে চাস না।

–মানে এসব কি বলছো তুমি?

—-মানে প্রিয়ন্তির কাছে আমার একটা সিম থেকে গিয়েছে।ওর ফ্রেন্ড জান্নাত কে তুলতে গিয়ে পড়ে গেছিলো।নিজের ভাগনি বলে প্রিয়ন্তিকে ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু প্রিয়ন্তি ভাবছে ও পালিয়ে এসেছে।প্রিয়ন্তি পুলিশের কাছে সিম দিয়ে দিলে সেভ করা নাম্বার সব পেয়ে যাবে।আমার জন্য উপরের বস রা ধরা খেয়ে গেলে ওরা আমাকে ছাড়বেনা
তাই প্রিয়ন্তিকে সিম টা দিতে দিতে বল।

–দাদা তুমি এসবে জড়িত।

–চাইলে তুই ও জড়াতে পারিস।
দেখ মাধবী বড়লোক হওয়া খুব ই সহজ আর সোজা।তুই আমার সাথে কাজ কর অনেক টাকা আসবে।জীবনে কোনো অভাব থাকবেনা।প্রিয়ন্তিপুর গ্রাম এর মানুষ খুব বোকা।তাই আমাদের টার্গেট ওই গ্রাম।
আমি তোকে ড্রাগ দিবো।আমার দেওয়া ড্রাগ রোজ একজন কে খাওয়াবি।প্রতিদিন একটা করে লা**শ চায় আমার।তোর আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হবেনা।অনেক টাকা লাভ দিবো।এই মানুষ মেরে তাদের পেটে ড্রাগ পাচার করি।কাজটা খুব সহজ।টাকা বেশী।পারবি?সবাই ভাবে লা**শ যাচ্ছে।আসলে লা**শের পেটে ড্রাগ যায় কেউ বোঝে না।ড্রাগ বের করে তাদের নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।আমি চাচ্ছি আমাদের দলে তোকে নিবো।তুই সাধারণ ভাবে মানুষের বাড়ি যাবি আর কৌশলে কাজ করবি।

–ছিঃদাদা।তুম তাহলে তুমি এর সাথে জড়িত।

–আমি একা নয়।আরো অনেকে আছে। এই হ্যাভেন বানিয়েছি মানুষ খু**ন করার জন্য।

–আমি পুলিশের কাছে সব বলে দিবো।তোমাদের আমি ছাড়বো না।

–বলে দিবি।বলার অবস্থায় থাকলে তো বলবি মাধবী।তোর মেয়েদের কি অবস্থা হয় দেখ শুধু।

প্রিয়ন্তির মামা কয়েকজন কে ডাক দিলো।সাথে সাথে ত্রিশ জন এসে প্রিয়ন্তির বাবাকে এট্যাক করলো।প্রিয়ন্তির বাবার হাত পায়ের আঙুল গুলো কুচি কুচি করে কে***টে গলা কেটে ফেললো।সাথে সাথে মা**রা গেলো প্রিয়ন্তির বাবা।এরপর ই মাধবীর গলা চেপে ধরলো।মাধবী চিৎকার দিয়ে উঠলো কেনো মারতে চাও আমাকে।মাধবীর চিৎকারে ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠলো প্রিয়ন্তি আর রুপন্তি।খাবারে কিছু একটা মেশানো ছিলো যার জন্য ওদের কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো।প্রিয়ন্তি ঘুম থেকে উঠে চারতলায় মায়ের লা*শ ঝুলতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।সাথে সাথে আয়মান প্রিয়ন্তিকে ধরে ফেলে।মা আর বোনের এমন অবস্থা দেখে রুপন্তি ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।আয়মান আগেই খোজ পেয়েছিলো যারা এইভাবে মানুষ খু**ন করে ড্রাগ পাচার করছে তারা প্রিয়ন্তিপুর গ্রামেই প্রবেশ করেছে।এই বাগান বাড়িতে ঢোকার আগেই আয়মান পুলিশ কে কনফর্ম করেছিলো।তবে পুলিশ সঠিক সময়ে আসতে পারে নি।কিছুক্ষণের মাঝেই রুপন্তির জ্ঞান ফিরে আসে।নাইনে পড়া রুপন্তি মায়ের এমম অবস্থা দেখে মামা সহ সকল কে খু*ন করে ফেলে।প্রিয়ন্তির মামা সহ বাকিরা খু**নের পরে নেশা করে।নেশায় মগ্ন মানুষ জন কত গুলো মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করছিলো।নেশা অবস্থায় নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারেনি।ভোর রাতের আগেই পুলিশ সেখানে পৌছে অনেক গুলো লা*শ উদ্ধার করে।প্রিয়ন্তি জ্ঞান ফিরে দেখে রুপন্তি সবাইকে খু**ন করে ফেলেছে।আয়মান ভাবতেই পারে রুপন্তি এমন কাজ করতে পারবে।আয়মান ভেবেছিলো পুলিশ আসলে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দিবে।কিন্তু পরিস্হিতি অন্য দিকে যাওয়াতে প্রিয়ন্তি নিজের বোনকে বাঁচাতে সকল দোষ নিজের ঘাড়ে তুলে নেয়।রুপন্তি অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।অন্যদিকে আয়মান বলছে খু**ন সে করেছে প্রিয়ন্তি বলছে খু**ন সে করেছে।আয়মান প্রিয়ন্তির হাত ধরে বললো,প্লিজ –প্রিয়ন্তি আমাকে এই খু**নের দায়ভার নিতে দাও।
–প্রিয়ন্তি হেসে বললো আজ ই দেখা হলো আমাদের।একদিনের দেখাতে আপনি এমন সিদ্ধান্ত কিভাবে নিচ্ছেন।
–এক পলকেই বুকের মাঝে সব চুরমার হয়ে গিয়েছে।তোমাকে ভালবাসতে চাই আমি।
–তা আর সম্ভব নয়।

একসাথে ত্রিশজনকে খু**নের অভিযোগে প্রিয়ন্তির ফাঁসির রায় হয়।আয়মান উকিল সাহেব কে সব সত্য কথা জানায় সেদিন কি কি ঘটেছিলো।উকিল মহসিন সব সত্য টা জেনেও প্রিয়ন্তির মুখ থেকে কিছুই বের করতে পারছিলো না।মহসিন উকিল তিনজনের ভালবাসা দেখে অবাক হয়েছিলো।একটা মানুষ একদিনের পরিচয়ে কাউকে ভালবাসে হাসতে হাসতে ফাঁ**সি**র দড়ি গলায় নিতে পারে।আরেকজন নিজের বোনের জন্য ফাঁ**সি**র দড়ি গলায় নিচ্ছে।আর বোন তার মা বাবার জন্য এতগুলো খু**ন করে ফেললো।কিন্তু ফাঁসির দুই ঘন্টা আগেই আয়মান বদলে দিলো সব।হাই কোর্টে আপিল করে সব সত্যর বর্ণনা করায় প্রিয়ন্তির জামিন হয়। রুপন্তির বিরুদ্ধে কেস চললেও সে মানসিক ভারসাম্যহীন একটা মেয়ে।যার জন্য এত এত মানুষের প্রাণ যাচ্ছিলো তাকে খু**ন করা মানে আরো অনেক গুলো মানুষের প্রাণ বাঁচানো।আইনের চোখে রুপন্তি খু**নি হলেও এমন মানুষ কে খু**ন করেছিলো যার জান্য হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যাচ্ছিলো।রুপন্তিকে ও জামিন দেওয়া হয়।

————————————–

সাত বছর পরে।প্রিয়ন্তি পুলিসের এস আই হয়েছে।আয়মানের সাহায্য প্রিয়ন্তি তার স্বপ্নের দুয়ারে পৌছাতে পেরেছে।কিন্তু প্রিয়ন্তিপুরের প্রিয়ন্তি ভালো নেই।মা বাবা বেষ্ট ফ্রেন্ড সবাইকে হারিয়ে ভীষণ একা প্রিয়ন্তি।রুপন্তির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলোনা।আজ রুপন্তি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে মানসিক ভারসাম্যহীন ভাবে।মেয়েটা আজ ডাক্তার ও হতে পারবো।

আয়মানের সাথে প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়েছে।তিনটা ফুটফুটে বাচ্চা আছে তাদের ঘরে।দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে।অতীতের কষ্ট নিয়েই দিন এগোচ্ছে প্রিয়ন্তি আর আয়মানের।

সমাপ্ত।

(এটা ছোট গল্প আকারে শেষ করে দিলাম।আসলে উপন্যাস আকারে শেষ করা সম্ভব ছিলো না।কারণ শুরুটা আমি ঠিকভাবে গুছিয়ে লিখতে পারিনি।যথেষ্ট খাপছাড়া ভাবে শেষ করায় পাঠক মহলের কাছে ভীষণ ভাবে সরি।যে গল্প লেখিকার ই মন মতো হচ্ছেনা পাঠক -পাঠিকার কিভাবে মন মতো হবে।আশা করি সবাই আমার এই সিদ্ধান্তে ভুল বুঝবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here