#প্রিয়ন্তির_গল্প
২.
#writer_Mousumi_Akter
‘মিস প্রিয়ন্তি ফাঁ*সি*র আর মাত্র দুই ঘন্টা বাকি আছে।আপনি চাইলে এখন ও আপনার জবানবন্দী পরিবর্তন করতে পারেন।আপনার একটা জবানবন্দিতে বদলে যাবে অনেক কিছু।’
নামকরা উকিল মহসিন এর দিকে কাঁন্নাভেজা চোখে তাকালো প্রিয়ন্তি।চোখ দুটো ভীষণ অসহায়।এক বাক্য উত্তর দিলো,
‘না আমি কোনো পরিবর্তন করতে চাইনা।আমার জবানবন্দী আগেও যা ছিলো এখন ও তাই বহাল থাকবে।’
মহসিন একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আবার ও অনুরোধ করলো,
‘মিস প্রিয়ন্তি প্লিজ আর একবার ভাবুন।আপনার একটা জবানবন্দী কিন্তু পারবে সব কিছু পরিবর্তন করতে।আমার রিকুয়েষ্ট আপনি আর একটিবার ভাবুন।আমি এই কেসে হেরে যাচ্ছি সব সত্য জানার পরেও।’
প্রিয়ন্তি চিৎকার দিয়ে বললো,
‘আর কতবার বলবো,আমি আগেও যা বলেছি এখন ও তাই বলছি।আমাকে দয়াকরে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না।আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে এক চুল ও সরবো না।’
‘ভালবাসা কত ভয়ংকর হতে পারে আপনাদের না দেখলে জানতেই পারতাম না।ভালবাসা যে এইভাবে সব ধ্বংস করতে পারে আবার হাসিমুখে ভালবাসার জন্য ই মৃ*ত্যু গ্রহন করতে পারে আপনাদের এই কেস টা হাতে না নিলে জানতে পারতাম না।সত্যিকারের ভালবাসা এমন ই হয়।আপনারা ভালবাসার জলন্ত নিদর্শণ।’
‘আশা করি আপনার আর কিছুই জানার নেই মহসিন বাবু।’
‘আয়মান কিন্তু সব সত্য জানিয়েছে মিস প্রিয়ন্তি।তবুও আপনি স্বীকার করলেন না কিছুই।’
মহসিন হতাস হয়ে ফিরে যাচ্ছিলো
প্রিয়ন্তি ডাকলো,দাঁড়ান মহসিন বাবু। মহসিন দাঁড়ালো মনে আশা নিয়ে।হয়তো প্রিয়ন্তি সত্য টা বলবে।কিন্তু মহসিনের সব আশা নিরাশায় পরিণত হলো।প্রিয়ন্তি বললো হাত টা বাড়ান প্লিজ।মহসিন হাত টা বাড়ালো।মহসিনের হাতে কিছু একটা গুজে দিলো প্রিয়ন্তি।মহসিন হাত খুলে দেখলো।সাথে সাথে মহসিনের চোখ অশ্রসিক্ত হয়ে গেলো।
ফাঁ*সি কি প্রিয়ন্তির ই হচ্ছিলো নাকি প্রিয়ন্তির জবানবন্দিতে অন্য কারো হচ্ছে।মহসিন কেনো জবানবন্দি পরিবর্তন করতে বলছে।
——————————————————
সকাল আট টা থেকে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়ন্তি রাস্তার পাশে।পরণে সাদা থ্রি পিছ, কোকড়ানো চুলে বেনি করে ছেড়ে দেওয়া,বেশ চওড়া বেনুনি হয় প্রিয়ন্তির চুলের।ফর্সা গালে বাদামি চুলে মুখ উজ্জ্বল দেখায় প্রিয়ন্তির।টানা টানা চোখে কাজল দেওয়াতে চোখ দুটো দেবির মতো দেখাচ্ছে।বাইকে একটা ছেলে আসছিলো।হঠাত প্রিয়ন্তিকে দেখে থমকে গেলো।দূর থেকেই ছেলেটা প্রিয়ন্তির কাজল কালো চোখে তাকিয়েই বোধ হয় মন হারিয়ে ফেললো।ছেলেটি বাইকের গতি কমিয়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়ন্তুির দিকে।কোনো ভ্যান রিক্সা কিছুই না পেয়ে অস্হিরতায় ভুগছে প্রিয়ন্তি।ভ্যাপ্সা গরমে নতুন জামায় আরো গরম লাগছে।বরাবর ই প্রিয়ন্তির নাকের ডগায় ঘাম জমে থাকে।আজ ও নাক ঘেমে লাল হয়ে গিয়েছে।প্রিয়ন্তির এই অস্হিরতা দেখে ছেলেটির মনের মাঝেও অস্হিরতা শুরু হলো।এ এক ভীষণ অস্হিরতা।দমকা হাওয়ার মতো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি ছেলেটির মনে প্রনয়ের দোলা দিলো।মনের সমস্ত বন্ধ দরজা খুলে গেলো।খোলা দরজা দিয়ে প্রিয়ন্তির সুন্দর মুখের অবয়ব মনের ভেতর প্রবেশ করে হৃদয় কে দখল করে নিলো।প্রিয়ন্তি এদিক ওদিক বারবার তাকাচ্ছে কিন্তু কোথাও কোনো গাড়ি নেই।কিভাবে যাবে সে। প্রিয়ন্তির আজ স্বপ্ন পূরণের দিন।পুলিশ লাইনে যাচ্ছে।আজ পুলিশের মাঠ।গতকাল সারারাত ঘুম হয়নি প্রিয়ন্তির।সে কি টিকতে পারবে নাকি পারবেনা।চাকরি টা হবে তো।চাকরিটা হলে সে সবার আগে গ্রামের এই নিরীহ মানুষদের খু*নী★দের খুজে বের করবে।এই একটা স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছে প্রিয়ন্তি।চাকরি হলে বোন রুপন্তি কে ডক্তারি পড়াবে।মা -বাবা কে আর মেম্বারের বাড়িতে কাজ করতে দিবেনা।প্রিয়ন্তির খুব খারাপ লাগে।তার মা বাবা মানুষের বাড়িতে কাজ করে।সকালে মা -বাবা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেছে আর বলেছে তুই পারবি মা।আজ মেম্বারের বাড়িতে অনুষ্টান প্রিয়ন্তির বাবা সেখানে সমস্ত কাজে সকাল থেকেই হেল্প করছে।প্রিয়ন্তির মা ও হাতে হাতে কাজে সাহায্য করছে।মেম্বারের বাড়িতে কাজ করেই দুই মেয়ের লেখাপড়া চালাচ্ছে প্রিয়ন্তির মা বাবা।বাবার ভীষণ আদরের প্রিয়ন্তি।আজ সকাল থেকেই মেম্বারের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের লোকজন যাতায়াত করছে।প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে থাকা ছেলেটি বাইক স্লো করে এগিয়ে এসে প্রিয়ন্তির কাছাকাছি এসে বাইকের হর্ণ বাজালো।প্রিয়ন্তি বাইকের হর্ণ শুনে ঘুরে তাকালো।মাথায় হেলমেট পরা,গায়ে আকাশি কালারের গেঞ্জি,পরনে জিন্স।প্রিয়ন্তির কোনো ভাবান্তর হলোনা দেখেও।সে আবার ও সামনে তাকালো।এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।যেনো একটা গাড়ি সে পেয়ে যায়।ছেলেটি গলা খ্যাক করে প্রিয়ন্তির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।শব্দ শুনে প্রিয়ন্তি তাকালো।ছেলেটি এবার মাথার হেলমেট খুললো।প্রিয়ন্তি তাকিয়ে দেখে ছেলেটি তার থেকেও ফর্সা সুন্দর।ছেলেটি দেখতে বেশ সুদর্শন।মাথার হেলমেট খুলে হাতে নিয়ে সুদর্শন ছেলেটি বললো,
‘হ্যালো!তুমি কি কোনো সমস্যায় পড়েছো?মনে হয় আমার থেকে ছোট হবে বয়সে তাই তুমি করেই ডাকলাম।’
ছেলেটির পোশাক আশাক দেখে মনে হচ্ছে বেশ বড় ঘরের ছেলে।নিশ্চয়ই কোনো নবাবের ঘরের ছেলে হবে।এই গ্রাম বা আশে পাশের কেউ বলে মনে হচ্ছেনা।এখানের কেউ এত দামি পোশাক আশাক পরেনা।এই ছেলেকে এই এলাকায় আগে দেখা ও যায় নি।অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ নেই প্রিয়ন্তির। ছেলেটির যেচে এসে কথা বলাতে প্রিয়ন্তির বেশ অস্বস্তি লাগছে।তাই ভদ্রতা রক্ষা করতে উত্তর দিলো।
‘না আসলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি।আমাকে পুলিশ লাইনে যেতে হবে।’
‘তুমি পুলিশের চাকরি করতে চাও।’
‘জ্বী।’
‘বাহ!খুব সাহসী মেয়ে তো তুমি।গ্রামের দিকে তো কোনো মেয়েকেই চাকরি করতে শোনা যায়না।তাও আবার পুলিশের চাকরি।’
প্রিয়ন্তি ছেলেটির কথার কোনো উত্তর দিলো না।বারবার ঘড়ি দেখছে।তার মন এখন পুলিশ লাইনে পড়ে আছে।
ছেলেটি বললো,
‘এখান থেকে পুলিশ লাইন অনেক দূরে।সময় মতো গাড়ি না পেলে পৌছাতে পারবেনা।আমি আয়মান নূর।এদিকে একটু কাজে এসছিলাম।যদি সমস্যা না থাকে আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি।’
প্রস্তাব টা প্রিয়ন্তির পছন্দ হলোনা।একটা অচেনা ছেলে এসেই তাকে বাইকে লিফট দেওয়ার প্রস্তাব দিবে।সে কি এতই সহজলভ্য হয়েছে।প্রিয়ন্তি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
‘দুঃখিত আমার লিফট লাগবে না।ধন্যবাদ।’
আয়মান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ন্তির দিকে।কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না।
প্রিয়ন্তি গ্রামের হলেও যেমন তেমন মেয়ে না সেটা আয়মান প্রিয়ন্তির একটা উত্তরেই বুঝে গিয়েছে।আয়মানের কাছে বেশ লজ্জা ও লাগলো বোধহয় একটু বেশী ছ্যাচড়ামি করে ফেলেছে।আর প্রিয়ন্তি তাকে ছ্যাচড়া টাইপ ছেলেই ভেবেছে।প্রিয়ন্তি আয়মানের দিকে তাকাচ্ছেই না।কিন্তু আয়মানের তো কথা বলতেই হবে।আয়মান মাথা নিচু দিকে রেখে আঙুল দিয়ে চুল আচড়ে নিয়ে বললো,
‘সরি!তোমাকে বিরক্ত করার জন্য।তুমি যা ভাবছো তা নয়।আমি তোমাকে সাহায্য করতেই চাইছিলাম।আমি আসলে এই গ্রামে কিছু ইনফরমেশনের জন্য এসছিলাম।আমাদের বাড়ি শহরে।আমি গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করি।এই এলাকায় নাকি অনেক খু**ন হচ্ছে।এই ব্যাপারেই ইনফরমেশন নেওয়ার ছিলো।’
প্রিয়ন্তির হৃদয় সাথে সাথেই প্রফুল্ল হয়ে উঠলো।যেনো নতুন ভোরের দেখা পেলো প্রিয়ন্তি।অন্ধকার জীবনে এক টুকরো আলোর মতো।প্রিয়ন্তি রোজ রাত জেগে জেগে ভাবে কেউ একজন আসবে আর এসে তাকে সাহায্য করে।প্রিয়ন্তির প্রার্থনায় রোজ এমন কেউ থাকে যে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড জান্নাত কে খুজতে সাহায্য করবে।আয়মানের দিকে তাকিয়ে প্রান্তি একটু স্বস্তি পেলো।বেশ স্বাভাবিক হয়েই বললো,
‘আপনি সত্যি এই গ্রামের খু**নের ইনভেজটিগেজেশ করতে এসছেন।’
‘হ্যাঁ অনেকদিন ধরেই আমি এ বিষয়ে খোজ নিচ্ছি কিন্তু কোনো কুল কিনারা পাচ্ছিনা।এই গ্রামের ই যদি কেউ হতো মানে আমাকে সাহায্য করতো বেশ ভালো হতো।’
‘আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড নিঁখোজ। সেও একই ভাবে হারিয়ে গিয়েছে।আমি যে কোনো ভাবে ওকে খুজে পেতে চাই।তার জন্য আপনার যা সাহায্য লাগে আমি করবো।’
‘আচ্ছা কুল।তুমি খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়েছো।নাম টা জানতে পারি তোমার।’
‘প্রিয়ন্তি।’
‘শুধু প্রিয়ন্তি।’
‘প্রিয়ন্তি রহমান।’
‘নাম টা অনেক সুন্দর। ‘
প্রিয়ন্তি ভদ্রতারক্ষার্থে স্বভাবসুলভ হাসলো।এরই মাঝে একটা পায়ে চালানো ভ্যান আসলো।প্রিয়ন্তি ভ্যান দেখেই ইশারা করলো।ভ্যানচালক ভ্যান থামালো।প্রিয়ন্তি ভ্যানে উঠতেই আয়মান বললো,
‘আমাদের সাক্ষাত হবে কিভাবে।?’
‘আমি এই গ্রামের ই মেয়ে।আপনি কাল আসুন।মেম্বার দের বাগান বাড়িতে।ওখানেই কথা হবে।’
‘কেউ দেখলে মাইন্ড করবেনা।’
‘করবে কিন্তু মাইন্ড করার থেকে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে খুজে বের করা বেশী জরুরী আমার কাছে।’
আয়মান একটা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে প্রিয়ন্তির হাতে দিলো।আর বললো,
‘একটা মিস কল দিলেই কল ব্যাক করবো।’
কিন্তু আমার কাছে ফোন নেই।আশে পাশে কোথাও নেই।শুধু মেম্বারের একটা ফোন আছে।’
‘আমি জানি তুমি পারবে যেকোনো জায়গা থেকে মিসকল দিতে।আর না পারলে আমি খুজে নিবো তোমায়।’
মাত্রই কিছুদিন হয়েছে দেশে মোবাইল ফোন চালু হয়েছে।এ সময়ে খুব একটা মোবাইল কারো কাছে দেখা যায় না।এলাকার সম্ভ্রান্ত মানুষ জন ছাড়া কারো কাছেই ফোন নেই।প্রিয়ন্তি ফোন নাম্বার টা নিয়ে ভ্যানে চড়ে চলে গেলো।
চলবে?.
(আসসালামু আলাইকুম পাঠকমহল।একটা বিষয় ক্লিয়ার করতে চাই।যেহেতু থ্রিলার তাই খু**ন আর রহস্য আর পাঁচটা থ্রিলারের মতো থাকবে।বাট তাই বলে অন্য গল্পের ন্যায় হচ্ছে, দুই এক পর্ব পড়েই ভাবা যাবে না।অন্তত ৫-৭ পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করূণ।নিজেই বুঝতে পারবেন এটা ব্যাতিক্রম। ভালবাসা সবাইকে।আর যাদের কাছে গল্পটা পৌছাবে রেসপন্স করবেন সবাই।)