প্রিয় দিও বিরহ ” পর্ব-১৭

0
989

”প্রিয় দিও বিরহ”

১৭.

রাত্রির মধ্যপ্রহর। উদরের কাছটায় কেমন অদ্ভুত স্পর্শ লাগছে মেহতিশার ৷ ঘুম হালকা হয়ে আসলো। চোখ মেলে উঠে বসলো। এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো দর্পণ ওর পেটের কাছটায় শুয়ে আছে। ওকে উঠতে দেখে মুচকি হাসলো। মেহতিশা মাথা ঝাকালো।
ঘড়িতে অনেক রাত হয়েছে। এতো রাত হলো কী করে!
সে তো দুপুরের খাবার রেডি করছিলো। বিছানায় আসলো কীভাবে! প্রশ্নবোধক চাহনিতে দর্পণের দিকে তাকালো। দর্পণ টেবিলসাইড থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে চামচ মুখের সামনে ধরে বললো,

‘সব পরে বলবো বউজান। আগে খাবারটা খেয়ে নিন৷ দুপুর থেকে না খাওয়া আপনি। ‘

মেহতিশা দ্বিরুক্তি করেনা। লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপটি করে খেয়ে নেয়। দর্পণ হাসে। পানি পান করিয়ে মুখটা মুছে দেয়। খাওয়া শেষ হওয়ার পর মেহতিশা দর্পণের হাত ঝাকায়। দর্পণ প্লেট রেখে মেহতিশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। মেহতিশার হাতটা নিজের মাথার উপর রেখে বললো,

‘হাত বুলিয়ে দাও৷ ‘

মেহতিশা হেলান দিয়ে শুয়ে দর্পণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে ৷ দর্পণ দুই হাতে মেহতিশার কোমড় জড়িয়ে রেখে উদরে মুখ গুঁজে রেখে বললো,

‘আমি কদিন ধরে আপনাকে ঘুম থেকে উঠে বলতাম,
একটা মায়াবী পুতুলের মতো বাচ্চা আমাকে রোজ বাবাই বলে ডাকে। মনে আছে বউজান?’

মেহতিশা বললো,

‘হ্যা, থাকবেনা কেনো! গতকালই তো বললেন।’

দর্পণ তাকালো। মেহতিশা তার চোখের দিকে তাকিয়ে
দেখে দর্পণের চোখ বেয়ে উষ্ণ জলের কণা গড়িয়ে টুপ টুপ করে পড়ছে। মেহতিশা ঘাবড়ে গেলো। দর্পণের গালে দুই হাত রেখে বললো,

‘হুশ! এভাবে বাচ্চাদের মতো কেউ কাঁদে দর্পণ! ‘

দর্পণ চোখ বুজলো। মেহতিশাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত করে বললো,

‘আমার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে বউজান। আই এম গোয়িং টু বি এ ফাদার। আই ওয়ান্ট টু বি এ বেস্ট ফাদার ইন দা ওয়ার্ল্ড। ‘

শীতের ভাপা পিঠার মনমাতানো সুঘ্রাণ ভেসে আসছে।
কুয়াশা ভেদ করে দূরের বিশাল রাক্ষসী বিল্ডিং গুলো দেখা মুশকিল হয়ে গেছে। তালগাছ গুলো সুবিশাল মাটি জুড়ে সারিতে দাঁড়িয়ে আছে। একটা বাবুই পাখির সুদর্শন বাসাটা অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। দুইটা বাবুই পাখি বসে মাথা ঘষাঘষি করছে।

পেটের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখেই মেহতিশা হাসলো। সবে মাত্র দুই মাস। এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। মেহতিশা আলতো পায়ে হেঁটে খাটে বসলো। রিং বাজছে মোবাইলে। এই নিয়ে দশম বার। কলটা রিসিভ করতে ইচ্ছে না করলেও কলটা উঠালো সে। প্রতি বারের চেয়েও উর্ধ্বে রাগত স্বর শোনা গেলো-

‘তোমার মাথা কী পুরোপুরি গেছে মেয়ে! আমি তোমাকে বারবার বলেছি তুমি ভুলেও এই ভুল করবে না। অথচ, তুমি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলে! কেনো করলে এমন! পেট বাঁধিয়ে বসে গেছো। কেনো! এতো ধৈর্যহীন কেনো! আমি তো বলেছিলামই। চারটে মাস শেষের পথে। আর মাত্র দুটো মাস ছিলো! ‘

মেহতিশার লজ্জায় অপমানে মাথা কাটা যায় যেনো। নিজের পিতার থেকে এমন শ্রীহীন বাক্য মোটেও কাম্য নয়। মেহতিশা ভেজা কন্ঠে বললো,

‘বাবা, এখন আমার কী করার আছে বলবে! ‘

‘কী করবে আর! কোনো মতে দুটো মাস থাকো। তারপর আমি তোমার এবর্শান করাবো। কাকপক্ষীও টের পাবে না। ‘

মেহতিশা রেগে গেলো। এতোদিন নির্বিকার থেকেছে শুধু এই ভেবে যে তিনি মেহতিশাকে বাঁচিয়েছিলেন।
বড় করেছেন আদর করে। তবে, এখন অনেক হয়েছে। আর একটুও সহ্য করবেনা সে। মেহতিশা চেঁচিয়ে বললো,

‘ব্যস,অনেক হয়েছে। এতোদিন সহ্য করেছি কারণ আমি কৃতজ্ঞ আপনার উপর৷ কিন্তু আজ আর না। আপনার কোনো কথাই আমি আর শুনবো না। দর্পণের উপর আমার বিশ্বাস আছে। সে কখনোই ভুল কিছু করবে না। আপনার সাহস কী করে হয়! আমার সন্তানকে নিয়ে বলার অধিকার নেই আপনার। আর কখনো কল করবেন না আমাকে। ‘

মেহতিশা কল কেটে দিলো। শামীউল্লাহ জামান তখন চিৎকার করে বলছেন,

‘খবরদার, এমন ভুল করোনা মেহু। তুমি পস্তাবে অনেক পস্তাবে! ‘

চলবে-
লেখনীতে-নাঈমা হোসেন রোদসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here