প্রিয় দিও বিরহ ” পর্ব-৫

0
1166

“প্রিয় দিও বিরহ ”

৫.

তৃষ্ণা মেটাবার আকুল প্রয়াস। চোখে চোখে নিবিড় আলাপ। স্বচ্ছ টলটলে নদীর রিনরিনে স্রোত যেনো আছড়ে পড়ে হৃদয়সংযোগে। বিপরীত বস্তুের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। কখনোবা ঝড়ের পূর্ব সংকেত। তা কীসের! জবাব শূন্য। দর্পণের তীক্ষ্ণ চোখদুটি থেকে নিজের দৃষ্টি সরায় মেহতিশা ৷ অস্বস্তিতে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। দর্পণ আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে আছে বিছানায়। মেহতিশার তুলতুলে দেহ আবদ্ধ সেই সুদীর্ঘ সুঠাম দেহে। মোহাচ্ছন্ন হয়ে মিনিট দুয়েক কাটালেও এখন বুকে ছলকে উঠছে ঘৃণ্যতা। সামনের মানুষটার চেহারাটাও দেখতে ইচ্ছে করছে না। হাহাকারে বিভীষিকাময় আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছে। মেহতিশা মনে মনে ভাবে, হয়তোবা এই চিৎকার গুলো শুধু তার কানেই বাজে! মাঝে মাঝে নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী মনে হয়। না লেগে উপায় কী! সেই হাজারো মানুষের আর্তনাদের মাঝে যে মেহতিশার এক আপনজনের চিৎকারও যে ভেসে আসে! পুড়িয়ে ছারখার করে ছাড়ে তাকে। মেহতিশা ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। দর্পণ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেনো এটা হবে সে পূর্বেই অবগত। মেহতিশা নিজের শাড়ির আঁচল টেনে পিঠ অব্দি আড়াল করে। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দিয়ে গমন করতে করতে বলে,

‘চরিত্রহীনতার একটা লিমিট আছে দর্পণ শেখ। যখন তখন ছুঁয়াছুঁয়ি, এগুলো খুব বাজে স্বভাব। ‘

গরমে ঘেমে যাওয়া শরীর ও গরম মস্তিষ্কে বাথরুমে ঢোকে মেহতিশা। উদ্দেশ্য গোসল করে মাথা ঠান্ডা করা। সেদিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে দর্পণ। কী কারণে যেনো হো হো করে হেঁসে ওঠে। পাশ বালিশটা বুকে জড়িয়ে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,

‘আমার চরিত্রহীন হতে বড্ড ইচ্ছে করছে বউজান। ‘

‘সংসার’ নামটা সরল সোজা ৷ পড়তে ও লিখতে বড়ই ছিমছাম। তবে গড়তে? এতোটাও সোজা নয়। দুইদিনেই টের পেয়েছে মেহতিশা। এসবে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। মনে মনে মেহতিশা নিজের ধৈর্যের প্রশংসা করে। নিজের বাবার বাড়ি থাকতে সামান্য কিছুতেও বাড়ি মাথায় তুলেছে সেই বদরাগী মেয়েটা এই দু’টো দিন কত কিছুই না সহ্য করলো! এই যে এখনও করছে। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করবার নেই। রাতের এই অবেলায় হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেনো দর্পণের তথাকথিত বান্ধবীর দেখা মিলেছে শেখ বাড়িতে। দেখতে যদিও সুন্দরী তবে মেহতিশাকে টপকাতে পারেনি৷ এই দিক থেকে গর্বিত বোধ করলেও দর্পণের উপর গায়ে লেগে হাস্যরসিক কথাবার্তা সহ্য হচ্ছে না মেহতিশার৷ গায়ে হাতা কাটা টপস আর লেগিংস। সাদা লেগিংস পড়ায় প্রথমে যে কারো ভুল হতে পারে এই ভেবে, মেয়েটা শুধু টপস পড়েছে। এমন উশৃংখল যে মেহতিশা নিজেও ছিলো না৷

কী রকম নোংরা মেয়ে-ছেলের সঙ্গে চলাচল করতো দর্পণ! ছিহ! এজন্যই বোধ করি সৃষ্টিকর্তা তার পায়ের শক্তি কেঁড়ে পুরোপুরি অচল বানিয়েছে। মনে মনে ধিক্কার দেয় দর্পণকে। তবে দর্পণের বোধ হয় এখন তেমন একটা সময় বা ইচ্ছে নেই মেহতিশার দিকে তাকানোর। সে গম্ভীরসূচক হাসি ফুটিয়ে কথা বলছে।
মেহতিশা প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে একটা সোফায় বসে আছে। দর্পণের বান্ধবী সিরিনা ছাড়াও এখানে সিরিনার বড় ভাই মৃন্ময় রয়েছে। সেও মাঝে মাঝে এটা ওটা বলছে। তবে মেহতিশার এই লোকটাকে খুব একটা সুবিধাজনক লাগছেনা। কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টি। মেহতিশা সজাগ থাকে। নিজের জামাকাপড় টেনে একেবারে আড়াল করার চেষ্টা করে। সিরিনা কথা বলতে বলতে মেহতিশার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘হেই, তোমার সঙ্গে তো কথাই বলা হলো না! এই দিপু শোন না! তোর বউয়ের সঙ্গে পরিচয় করা আমাকে! ‘

দর্পণ মেহতিশার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে। কিছুটা রহস্য মেশানো গলায় বলে,

‘তোর নতুন করে কিছু জানার বাকি আছে কী সিরিনা?’

‘হেয়ালি বন্ধ কর তো। ‘

‘হাহাহা, এই হচ্ছে আমার একমাত্র বউজান। মেহতিশা শেখ। ‘

হাসতে হাসতে পাশ থেকে মৃন্ময় বলে উঠলো,

‘সিরিনা যেমন ছবি দেখিয়েছিলি, দর্পণের বউ তার থেকেও বেশি সুন্দর। চোখ ফেরানো দায়। ‘

‘একেবারে ঠিক বলেছিস বড়দা! এই মেয়েকে আগে পেলে আমি আমার ভাইয়ের জন্যই ওকে নিতাম। হাহা।’

এমন নানা হাস্যকর কথায় সবাই তাল মিলিয়ে হেসে উঠলো৷ দর্পণও কথা বলতে বলতে, পাশে বসে থাকা মেহতিশার নরম হাতটা বুকে চেপে হেসে কথা বললো দর্পণ। প্রচুর শক্তি দিয়ে চেপে ধরায় মনে হলো মেহতিশার হাতের হাড় মর্মর করে উঠলো।

চোখে এক ছটাক উষ্ণ জলের কণা ভেসে এলো। দাঁত চেপে মুখটা স্বাভাবিক রাখলো মেহতিশা। তবে টের পেলো অবচেতনে, কিছু একটার ক্ষোভ প্রকাশের ধরণ ছিলো এটি৷ একদমই অপ্রকাশিত রেখে ক্ষোভ মেটাচ্ছে যেনো। দর্পণ অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বলল,

‘বউজান, আপনার ঘুম পাচ্ছে জানি। ঘরে যান। আমি আসছি। ‘

এই অতি ঠান্ডা নিশ্চল কন্ঠে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো মেহতিশার৷ কেনো যেনো মনে হলো, দর্পণ কিছু একটার জন্য প্রচুর রেগে গেছে। ধীর পায়ে হলরুম ত্যাগ করে ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো মেহতিশা। ভীরু মনে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়ে মেহতিশা। চোখ বন্ধ করে থাকে। রাত গভীর হতে থাকে। আধারের কালো রাক্ষস বেরিয়ে আসে জগতে।
শিয়ালের গগণ কাঁপানো ডাক ভেসে বেরায়। যখন নিদ্রায় ডুবে গিয়ে মিষ্টি কোনো স্বপ্নের অপেক্ষায় মেহতিশা। তখনই অনুভব করে, কেউ তার গলায় দড়ি বেঁধে হুড়হুড় করে খাট থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে কূলকিনারা খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয় মেহতিশা৷ চোখ উল্টে শূন্যে চেয়ে থাকে। চোখের তাকানোর পরিধি ক্রমশ বেড়ে চলে, যখন মেহতিশা বুঝতে পারে কারো উষ্ণ রক্ত তার উপর ঢেলে দেয়া হচ্ছে, সঙ্গে ..

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here