প্রিয় দিও বিরহ ” পর্ব-৯

0
990

“প্রিয় দিও বিরহ ”

৯.

তন্দ্রায় বিভোর জগৎ। আলোআঁধারি খেলায় বড়ই অদ্ভুত দেখাচ্ছে পরিবেশকে। মৃদুমন্দ পবনে উড়ছে
ঘরের পর্দাগুলো। গভীর নিদ্রায় ডুবুডুবু মেহতিশা। ব্যাঘাত ঘটে কোমরের মাঝ বরাবর শুষ্ক পুরুষালি হাতের স্পর্শে। ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় সজাগ হয় মুহুর্তেই। শরীরতটে টের পায় অন্য কাউকে। মেহতিশা অস্থিরতায় চোখ খোলে। ডান পাশে কাউকে না দেখে বাম পাশ ফিরে। চমকে উঠে পলকেই। এই মানুষটা কোথায় থেকে এলো!

রাতে সাতটা বাজতেই ঘরে এসে ঢুকেছিলো। মনটা বিষন্নতায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলো। বাবার বাড়িতে আসার পর ছোট চাচী, মা বারবার জিজ্ঞেস করছিলো জামাই সাথে আসেনি কেনো? মেহতিশা মুখ ফুটে বলতে পারেনি কিচ্ছুটি ৷ অভিমানে বারকয়েক আনমনা হয়ে আউরেছে ‘মানুষটার কাছে আমি একদমই গুরুত্বহীন। ‘ বাবা আর ছোট চাচা বাদে কেউই ভেতরের এই অঘোষিত দ্বন্দ্বের ব্যাপারে জানেনা। মেহতিশার মা, চাচী সহ বাকি সবাই প্রথমে দর্পণকে মানতে চায়নি। তারপর অবশ্য দর্পণের আচার-আচরণে কিছুটা স্বস্তি পায়। তবে, বাড়ির বাকী সবারই বিরাট কৌতূহল আর দুশ্চিন্তা কেনো এরকম একজনের সাথে বিয়ে দেয়া হলো মেহতিশাকে।

বারবার এটা ওটা জিজ্ঞেস করায় মনমরা হয়ে ঘরে চলে এসেছিলো সে। মাথায় এক ঝুপড়ি প্রশ্ন হানা দিচ্ছিলো। যেমন, ঐ নিশিতা নামের মেয়েটা এমন কে যে দর্পণ তার জন্য সঙ্গে আসলো না! মেয়েটাকে কী তবে ভালোবাসে দর্পণ? এজন্যই তার এতো উদ্বিগ্নতা! তাহলে মেহতিশাকে কেনো রোজ রোজ মায়ায় বাঁধে! নাকি এখানেও দর্পণের কোনো চাল লুকিয়ে আছে?

এভাবেই একসময় ঘুমে ঢলে পড়ে। মধ্যরাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে অবাক না হয়ে পারে না মেহতিশা। অপলক তাকিয়ে দেখে, বালিশে হেলান দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে আছে দর্পণ। মুখে স্বাভাবিক হাসি। সেই হাসিটাই ভীষণ দৃষ্টিকটু হয়ে ধরা দিলো মেহতিশার কাছে। তীব্র অনীহা নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো সে৷ দর্পণের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আপনি এতোরাতে এখানে কী করছেন? ‘

‘যেখানে আমার থাকার কথা আমি সেখানেই আছি বউজান। ‘

‘আপনাকে পাশে শোয়ার পারমিশন কে দিয়েছে? ‘

‘নিজের বউয়ের পাশে শুতে পারমিশন লাগে বুঝি! জানতাম না তো! ‘

‘আগে জানতেন না এখন জেনেছেন৷ আর উঠে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ুন। ‘

‘আচ্ছা, কোলে তুলে সোফায় শুইয়ে দাও আমায়। ‘

মেহতিশা খিটমিট করে তাকায়। এহেন রসিকতায় বিরক্তিতে ছেয়ে যায় মুখশ্রী। রেগে গিয়ে বলে,

‘ফাজলামো হচ্ছে এখানে! ‘

‘আমি হাঁটতে অক্ষম বউজান। ‘

আরও কিছু বলতে গিয়ে থমকে যায় মেহতিশা। আর কথা বারায় না। যদিও মেহতিশার কাজই হচ্ছে দর্পণকে চরম অপদস্ত করা। তবুও মনের সারা না পেয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে মাঝে কোলবালিশ দিয়ে সীমারেখা তৈরী করে। দর্পণের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

‘চুপচাপ ঘুমান। আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। নাহলে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেবো। ‘

মেহতিশা পাশ ফিরে উল্টো হয়ে শোয়। ভেবে নেয় দর্পণ হয়তো আর সাহস পাবে না কিছু বলার। তিন মিনিটের মাথায় তাকে ভুল প্রমাণ করে জোড়ালো হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দর্পণ পেছনে থেকে। মেহতিশা আচমকা আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেললো।
হুঁশ ফিরতেই ধাক্কা দিতে থাকে। তবে শক্তির কাছে হার মানে। মেহতিশা মনে মনে ভাবে, পা প্যারালাইস হওয়া একজন লোক কীভাবে এতোটা শক্তি প্রয়োগ করে!

মনের মধ্যেই কথা রেখে চেঁচিয়ে বলে,

‘ধরেছেন কেনো! ছাড়ুন বলছি। ‘

‘আমি আপনাকে ইহজন্মে আর ছাড়তে পারবো না বউজান। ‘

‘তো মরে যান। ‘

‘সত্যি মরে যাবো তিশাপাখি। তুমি খুশি হবে? ‘

‘হবো খুব খুশি হবো৷ আপনি মরে গেলে শান্তি পাবো আমি ৷ এসব লুকোচুরি খেলা আর কতদিন? ‘

‘এতোটুকুতেই আপনি কত অধৈর্য হচ্ছেন! প্রিয় কাউকে হারিয়েছেন কখনো? ‘

মেহতিশা চমকে তাকায়। নাহ, নিজের খুব আপনজন কখনো হারায়নি সে। যাকে হারিয়েছে সে খুব একটা আপন ছিলো না। মেহতিশা আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘মানে? ‘

দর্পণ প্রশ্নটা শুনেও না শোনার মতো করে থাকলো। দুই হাতে মেহতিশার মুখমন্ডল তুলে দৃষ্টি বরাবর করে বলল,

‘আমাকে বানাবেন?’

‘কী?’

‘প্রিয়। আমি হারিয়ে যাওয়ার পর নিয়ম করে বিরহ পুষবেন। আমি আপনাকে একবিন্দু বিরহে জর্জরিত করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবো ৷ পারবেন তো? ‘

চলবে –
লেখিকা-নাঈমা হোসেন রোদসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here