প্রেমনোঙর ফেলে পর্ব-৩

0
1007

#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে-মিথিলা মাশরেকা
#পর্ব-৩

জ্ঞান ফেরার পর প্রাপ্তর গানই আগে ইচ্ছের কানে ভেসে আসলো। চোখ মেলে অরিত্রা,রাকা,সাফোয়ান,মাহীনসহ কনসার্টের স্বেচ্ছাসেবী দলকে চোখে পরলো ওর। আস্তেধীরে উঠে বসলো। রাকা ওকে জুসের গ্লাস দিয়ে বললো,

-ইচ্ছে? এখন কেমন আছিস? এ্ এটা খা। বেটার ফিল করবি।

মুখের ভেতরের জ্বালাপোড়া আর গায়ে র’্যাশগুলো দেখে ইচ্ছের মনে পরলো কি ঘটেছিলো। মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে জুসটা কয়েকঢোকে শেষ করলো ও। ঝাল কমেছে কিছুটা। অরিত্রা বললো,

-ঝালে কেউ অজ্ঞান হয়,আজ প্রথমবার,চাক্ষুস দেখলাম। বাবা!

ইচ্ছে কিছুই বললো না। ও বোঝার চেষ্টা করছে,স্টেজে গান গাইছে কে। অরিত্রার কথা শুনে রাকা মনেমনে কয়েকটা গালি দিয়ে বলতে লাগলো,তুমিই খেয়ে দেখতে না হয় অরি! কেমন লাগে ওইটা খেতে। একনম্বরের শাঁকচুন্নি মেয়ে একটা! যেমন নাম,তেমন কাম! অরি! শত্রু! ওকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফোয়ান বললো,

-এক বোতলেই এই দশা? আরেক বোতলের কি হবে তাহলে? উমমম্… ওটা কে খাবে?

-কেনো? ইচ্ছে ম্যাডামের বান্ধবী আছে তো! রাকা ম্যাডাম!

মাহীনের কথা শুনে আতকে উঠলো রাকা। এবার মাহীনের দিকে তীক্ষ্মচোখে তাকালো ইচ্ছে। ওর চাওনি দেখে না চাইতেও খানিকটা ভয় পেয়ে গেছে মাহীন। এই মেয়ে প্রাপ্তর কলার ধরে ওকে চড় মেরেছে। ওর হকিস্টিকও ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। একটু থতমতো হয়ে বললো,

-ক্ কি ব্যাপার? আপনি আমার দিকে এভাবে তাকাতে পারেন না!

আধশোয়া থেকে ইচ্ছে উঠে দাড়ালো। জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে রাকাকে বললো,

-গিটার কোথায়?

-এখানে।

প্রাপ্ত গিটার হাতে দরজায় দাড়িয়ে। পাশে মিষ্টিও আছে। ওর হাতে গিটার দেখে জ্বলে উঠলো ইচ্ছের শরীর। হনহনিয়ে গিয়ে কেড়ে নিলো ও গিটারটা। চেচিয়ে বললো,

-তুমি আবারো কেনো আমার গিটার ধরেছো?

-প্রাপ্ত কারো অনুমতিও নেয়না,কারো কাছে জবাবদিহিও করে না।

-তা বলে কারো আবেগকে আঘাত করার কোনো অধিকারও তোমার নেই!

ইচ্ছের কথায় এবার একটু কপাল কুচকালো প্রাপ্ত। আবেগ বলতে কি গিটারকে বুঝালো ইচ্ছে? এই আবেগ শব্দটা শুনেই‌ মাথা ফাকা হয়ে গেছে ওর। কি হলো,সহসা ইচ্ছের দুহাতের কনুইয়ের উপরে চেপে ধরলো প্রাপ্ত। নিজেও চড়া গলায় বললো,

-আমাকে আঘাত করার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?

ইচ্ছে নিজের হাতের দিকে তাকালো। অনেকবেশি জোরে চেপে ধরেছে প্রাপ্ত ওর হাত। ঝারা মেরে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। দাতে দাত চেপে বললো,

-অন্যায়ের শাস্তি দিয়েছিলাম জাস্ট। কিন্তু পরেরবার আর শাস্তি নয়,প্রতিত্তর দেবো। তৈরী থেকো সাদমান ইনাব প্রাপ্ত। ইচ্ছে ওর প্রিয় জিনিস হারানো যন্ত্রনায় যেভাবে পুড়ছে,তার চেয়ে কয়েকহাজার গুন বেশি যন্ত্রনায় পোড়াবো তোমাকে। প্রিয় হারানোর যন্ত্রনা! বি রেডি!

একপলক সবার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো ইচ্ছে। হাত মুঠো করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলো প্রাপ্ত। প্রচন্ড রাগে কাপছে ও একপ্রকার। এই মেয়েটার সাহসে প্রতিবার অপমানিত হতে হয়েছে ওকে। শেষ কথাগুলোতে সতর্ক করে দিতে গিয়ে আরেকদফায় নিজেকে সাহসী প্রমান আর প্রাপ্তকে অপমান করে গেলো ও। মিষ্টি অবস্থা বুঝে উঠেও বরারের মতো নিজের করনীয়টাও বুঝলো না। প্রাপ্তকে নিয়ে সবসময়ই ভয়ে থাকে ও। কিন্তু এখন ইচ্ছে যা বলে গেলো,যেভাবে বলে গেলো,তাতে ওই বা কি করবে,সেটা ভেবেও ভালোরকমের চিন্তা হচ্ছে মিষ্টির।

‘ইনিশা! উই ইনিশিয়েট ইউর ড্রিম’
স্থাপত্য,নকশায় একধাপ এগিয়ে থাকা দেশের প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রগুলোর মাঝে,এক অন্যতম নাম। এ অফিসের প্রাত্যহিক কর্মদিবস,সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। রাত সর্বোচ্চ দশটাও হয় কোনোকোনো দিন,কারোকারো জন্য। তার উর্ধ্বে নয়। এখন রাত আড়াটা। অন্ধকারচ্ছন্ন বহুতল অফিস ভবনটির এগারো নম্বর ফ্লোরে এখনো আলো জ্বলছে। রুমের ঠিক মাঝখানে আগুনও জ্বলছে। লিখন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তার বসের সামনে। হাতদুটো মুষ্ঠিবদ্ধ করে সামলাচ্ছে নিজেকে। তার অক্লান্ত মেধা,শ্রমের ফল শেষ হয়ে যাচ্ছে ওরই চোখের সামনে। ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে লিখনের শরীর। ইচ্ছে করছে সামনে বসে মদ গিলতে থাকা শিক্ষিত জানোয়ারটিকে ওই আগুনেই জ্বালিয়ে দিতে। তবুও কিছু বলতে পারছে না,করতে পারছে না ও। শুধু দুহাত মুঠো করে দাড়িয়ে রইলো।

নেশায় বুদ হয়ে থাকা নিজাম টলোমলো চোখে লিখনের দিকে তাকালো। পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার কথা ওর লিখনের এতোদিনে করা এই সব প্রেজেন্টেশন পোড়াতে। তবে তা হচ্ছে না। লিখনের আফসোসের পরিবর্তে রাগী চেহারাটায় একদমই মজা পাচ্ছে না ও। লিখনকে নিজাম অফিসে ডেকে পাঠিয়েছিলো প্রমোশনের জন্য। রাতারাতি প্রমোশন দেবে বলে। তবে শর্ত ছিলো, এই পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য লিখনকে স্বস্ত্রীক আসতে হবে। সেদিনের ইভেন্টে এসেছিলো লিখনের বউ। হলুদ শাড়ীতে আসা মেয়েটির দু দন্ডের বেখেয়ালিপনায় জন্য তলপেট কিছুটা দৃশ্যমান হয়। আর তা চোখে পরার পর থেকেই তাকে রাত্রীযাপনে চাই বলে প্রতিজ্ঞা করে বসেছে নিজাম। কিন্তু আজ যখন দেখলো,লিখন একাকী অফিসে এসেছে,রাগে ওর সব প্রেজেন্টেশন আর নকশা নিজেহাতে জ্বালিয়ে দিয়েছে ও। তারপরও কোনো আফসোস নেই লিখনের। উল্টো রাগ ওর চেহারায়। নিজাম উঠে দাড়িয়ে বললো,

-এগুলো রশিদের প্রেজেন্টেশন ছিলো। চুরি করে এগুলো তুই নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছিলি। ইনিশা থেকে তোকে বরখাস্ত করা হলো!

লিখনের ভাবান্তর হলো না। যাতে আরো রাগ হলো নিজামের। ড্রয়ার থেকে চেইকবই টা নিয়ে কিছু একটা লিখে বললো,

-আমার কাছ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা নিয়েছিলি তা ফেরত দিসনি। সে দায়ে জেলে যেতে হবে তোকে!

লিখন তখনও চুপ। নিজাম একটু থেমে বাকা হেসে বললো,

-তুই‌ জেলে গেলে বাসায় রুবা একা। তাইনা রে লিখন?

এতোক্ষনে চোখ তুলে তাকালো লিখন। রাগে চোখ ভরে উঠেছে ওর। সামনে থাকা জঘন্য মানুষটাকে খুন করবার ইচ্ছা জাগছে ওর। হাতের মুঠো আরো শক্তিতে মুঠো করার আগেই কেউ ঘুষি লাগিয়েই দিলো নিজামকে। লোকটা এমনিতেও মাতাল ছিলো। আর সেই ঘুষিতে টেবিলে গিয়ে পরেছে একদম। লিখন বিস্ময়ে নিজামের থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকালো।
হালকা নীল রঙের শার্ট,কালো প্যান্ট,ইন করা,হাতে মোটা চেইনের ঘড়ি,একেবারে ফর্মাল লুকে দাড়ানো সুদর্শন এক যুবক। বয়স সাতাশ আটাশ হবে হয়তো। গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল। চোখে চশমা পরিহিত ছেলেটার চেহারায় যেনো নিস্পাপ শব্দটা স্বর্নাক্ষরে লেখা। অফিসের কেবিনের আলোর চেয়ে,ফ্লোরের কাগজের আগুনের অল্পবিস্তর আলোতে ছেলেটাকে বেশ লাগছে দেখতে। লিখনের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,

-এইধরনের পশুবেশী মানুষদের মারার জন্য এতো সময় নিতে নেই। নইলে তুমি মারার আগেই অন্যজন এই সওয়াবের কাজ করে দেবে। বুঝেছো?

লিখন নিরবে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। নিজাম টেবিল থেকে মুখ‌ তুলে ঠোটে আঙুল ছোয়ালো। কেটে রক্ত ঝরছে। ওকে কেউ ঘুষি ছুড়েছে ভেবে চরম রাগ হলো ওর। টেবিলে বারি মেরে ঘুরে উঠে বলতে যাচ্ছিলো,

-আজ তোকে…

লিখন খেয়াল করলো,ছেলেটাকে দেখেই নিজাম থেমে গেছে তৎক্ষনাৎ। যতোটা তেজ নিয়ে ও বলতে শুরু করেছিলো,ততোটাই‌ নুইয়ে বিস্মিত চেহারায় তাকিয়ে আছে ও ছেলেটার দিকে। যেনো এ কাকে দেখছে ও! ছেলেটা শান্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজামের দিকে। ডানহাতে বা হাতের হাতাটা ভাজ দিতে দিতে এগুলো সে। এগিয়ে একদম নিজামের সামনে দাড়িয়ে গিয়ে বললো,

-কিছু বলছিলি নিজাম?

-র্ রা রাকীন? ত্ তুই এখানে?

বিস্ফোরিত চোখে মানুষটাকে আরেকবার পরখ করে নিলো লিখন। এই তবে রাকীন শাফায়াত? ইনিশা’র ফাউন্ডার রাজীব মাহমুদের একমাত্র ছেলে রাকীন শাফায়াত? এই ছেলেই বাবার এতোবড় সাম্রাজ্যে এক সাধারন কর্মচারীর মতো কাজ করে চলেছে তবে? নিজামের কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটলো রাকীনের ঠোটে। টেবিলে রাখা গ্লাসের পানিটা একদম মুখে ছুড়ে মারলো ও নিজামের। চোখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে ভেজা চেহারায় হাত বুলালো নিজাম। মাথা ঝারা মারলো বারকয়েক। রাকীন বললো,

-নেশা কেটেছে?

-অফিসে রাত আড়াইটায় এসে তুই রাষলীলা বসাতে চাইবি,বাবার তিলতিল করে গড়া এই ইনিশায় অপবাদ লাগানোর ধান্দা খুজবি,আমি থাকতে তা কি করে হতে দেই বল? চলে এলাম তাই!

-দ্ দেখ ভাই…

-বড়কাকা,কাকী মারা যাওয়ার পর বাবা কোনোদিনও কোনোকিছুর কমতি দেয়নি তোকে নিজাম। ইনিশা’র এতোবড় একটা জায়গায় জায়গা করে নিয়েছিস নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতায়। আজ এতোনিচু চিন্তাটা মাথায় আনতেও লজ্জা করলো না তোর?

নিজাম মাথা নিচু করে চুপ রইলো। ইনিশা তে আজ অবদি রাকীনের অগোচরে হয়নি কিছুই। ছেলেটা এই নতুননতুন জয়েন করা লিখনকেও নখদর্পনে রাখবে,ভেবে দেখেনি ও সেটা। ঘুষিটা বেশ জোরেই দিয়েছে। রাকীন লিখনের দিকে এগিয়ে বললো,

-তুমি কি চাও? ওকে কি শাস্তি দেবো? পুলিশকে বলবো? নাকি রাজীব মাহমুদকে?

-রাজীব কাকাকে কিছু বলিস না রাকীন! আর হবে না কোনোদিন এমন! প্লিজ কিছু বলিস না রাজীব কাকাকে!

তৎক্ষনাৎ রাকীনের পায়ে পরে গিয়ে নিজাম আহাজারির মতো করে বললো। সবে জয়েন করলেও,লিখন জানে রাজীব মাহমুদের শাস্তির ধরন। পুলিশকে বললে যদি মানহানির মামলায় জেল হয়,রাজীব মাহমুদ জানলে ওর ফাসির ব্যবস্থা‌ করে‌ দেবে নির্ঘাত। কোনোকাজে কোনোরুপ অন্যায় সহ্য করতে পারেন না ভদ্রলোক। রাকীন বললো,

-লিখনের পা ধর নিজাম। ওকে বল ও কি চায়।

হুড়মুড়িয়ে লিখনের পা জড়িয়ে ধরলো নিজাম। বললো,

-আমাকে ক্ষমা করে দাও লিখন! মাফ করে দাও প্লিজ! দয়া করো! আর কোনোদিন হবে না এমন! কোনোদিনও না!

লিখন খানিকটা বিমুর্ত। রাকীন বললো,

-নির্ভয়ে বলো লিখন। তুমি কি চাও? আমি বলছি,সেটাই হবে। তোমাকে,তোমার স্ত্রীকে অপমানের জবাব তোমার মনমতোই হবে।

লিখন একটা ছোট শ্বাস ফেলে‌ বললো,

-পা ছাড়ুন স্যার।

-না! আগে বলো তুমি আমাকে…

-ক্ষমা করলাম। সরুন আপনি।

নিজাম সরে গেলো। রাকীন বললো,

-এতো সহজে ছাড় দেওয়াটা কি উচিত হলো তোমার লিখন?

লিখন মৃদ্যু হেসে বললো,

-জ্বী স্যার! কারন আমি চাইনা ওনার কৃতকাজের জন্য রাজীব স্যার এতোটুকো কষ্ট পান,বা অপমানিত হোন। আর বিনিময়ে শুধু আপনি আমাকে কথা দিন,ভবিষ্যতে ইনিশার কোনো সদস্যকে যেনো আমার মতো বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। আপনি কথা দিলেই এটা সম্ভব,জানি আমি। তাই এটাই চাইলাম। দ্যাটস্ ইট!

লিখনের জবাব শুনে তৃপ্তিতে মাথা উপর নিচ করলো রাকীন। কৃতজ্ঞতাস্বরুপ সুন্দরমতো একটা হাসি দিয়ে,আসছি স্যার বলে বেরিয়ে গেলো লিখন। তারপর নিজামের দিকে তাকালো রাকীন। বললো,

-কি কি ডকুমেন্টস্ পুড়িয়েছিস?

গরগর করে পুরোটা বলে দিলো নিজাম। সবটা শুনে রাকীন বললো,

-রাফের সফটকপি অবশ্যই তোর কাছে। দ্বিতীয়বার তৈরী করে যাতে লিখন না জমা দিতে পারে। এখানে রাখলে আমার চোখে পরবে। তাই ওগুলো বাসায়ই রেখেছিস। রাইট?

রাকীনের যুক্তি দেখে কিছু সময় থেমে রইলো নিজাম। রাকীন আবারো উত্তর চাইতেই মাথা উপরনিচ করলো ও। রাকীন বললো,

-এই মুহুর্তে বাসায় যাবি তুই। আর বাসায় গিয়ে পুরোটা সেন্ড করবি আমাকে। ওর প্রেজেন্টেশন আমি কভার করবো। আর এই ড্রাংক সিচুয়েশনে তোকে বাবা যেনো না দেখে। গট ইট?

মাথা আরো জোরে নাড়ালো নিজাম। ইশারায় ওকে বেরিয়ে যেতে বললো রাকীন। নিজাম চলে গেলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে থাইগ্লাসের জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো রাকীন। পকেটে দুহাত গুজে তাকিয়ে রইলো রাতের শহরের দিকে। ভাবতে লাগলো ওর অবদানটুকো নিয়ে। এভাবেই নিজের কাজ,অন্যের পরিবর্তে কাজ,অন্যের ভুল শুধরানো নিয়েই চলছে ওর ইনিশার ক্যারিয়ার। কিন্তু বিদেশের সনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্জিনিয়ারিং পাশ তো ও শুধু ইনিশার জন্য করে নি! পেশার মাঝে প্যাশনকে কবে খুজে পাবে,আদৌও পাবে কিনা,কে জানে? আলতো করে গ্লাস ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তাতে মাথা ঠেকালো রাকীন। শীতল হাওয়া চেহারায় লাগতেই চোখ বন্ধ করে নিলো ও। ম্যাসেজের শব্দ কানে আসলেও চোখ মেললো না। অনুভব করত লাগলো মাঝরাতের এই স্নিগ্ধ বাতাসকে। আচমকাই মনে হলো,তাতে যেনো কারো গাঢ় প্রশ্বাসসহিত সংবাদ পাঠানো,”অজানা কোনো প্রেমজোয়ারে গা ভাসিয়ে,তোমার প্রেমনোঙরের অপেক্ষায় আছি প্রিয়। বেশি অপেক্ষায় রেখো না! রেখো না খুব বেশি অপেক্ষায়…”

#চলবে…

[ আসসালামু আলাইকুম রিডার্স,
মুলত নোঙর শব্দটার মানে নৌকা বা কোনো জলযান আটকানোর জন্য ব্যবহৃত হওয়া লোহার শিকলবিশেষ (গুগলসার্চ করে ছবি দেখলে আরো ভালো বুঝবেন) আর গল্পের নামে প্রেমনোঙর বলতে ভালোবাসার বাধন বুঝানো হয়েছে। গল্পটার সবে তিন পর্ব। আর এই তিন পর্বে অনেকগুলো চরিত্রের সাথে পরিচয় হয়েছে আপনাদের। বলে রাখি,খইয়ের নাম আর ওর বলা আঞ্চলিক ভাষা,দুটোই এই গল্পের অলংকার। ভাদুলগাঁও এর বর্ননায় বেশ প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্যাখা দিয়েছি আমি। এবং দেবো। কোনোরুপ পরিবর্তন,পরিবর্ধনের উপায় নেই। আবার উক্তিগুলো একবার গ্রাম্য,একবার চলিত এভাবে অনুবাদ করে দু দুবার লেখা সম্ভব না। তাই ভাষা বুঝতে সমস্যা হলেও মানিয়ে নিতে হবে আপনাদের। এ তিনপর্বে আপনারা অবশ্যই এটাও বুঝে গেছেন, ইচ্ছে,খই,প্রাপ্ত,রাকীন এদের মাঝেই গল্পের মুল দুই জুটি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো,প্রাপ্তর শ্যামাকন্যা কে? উত্তর এটাই,এ শ্যামাকন্য আপাতত শুধুই ওর কল্পনায় কেউ। এবার কাহিনীবিস্তৃতিতে শুধু দেখার পালা,কে কার ভালোবাসায় প্রেমনোঙর ফেলে আটকে যায়! 😉 তো এবার বলুন আপনাদের হৃদয়ে গল্পটা প্রেমনোঙর ফেলতে পারছে কি? উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু!
হ্যাপি রিডিং! ❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here