#প্রেমমানিশা(১১)
সানাহ্দের বাড়িতে কেমন যেন হইচই বেঁধে গেছে। প্রতিবেশীরা চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনেও এবার আর কৌতূহল মেটাতে বাড়ির সামনে এসে হাজির হননি কারণ এই ঘটনা এখন তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এরকম প্রায় কয়েক মাস পরপরই হয় তবে এবার প্রায় এক বছর পর হয়েছে।
মিসেস কায়নাত,অতসী আর মিস্টার কবির মিলে পুরো বাড়ি উল্টেপাল্টে একাকার করে ফেলেছেন তবুও কোথাও সানার খোঁজ নেই। একসময় খোঁজাখুঁজি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মিসেস কায়নাত বসার ঘরের সোফায় নিজের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেহ এলিয়ে দিলেন।
অতসীও পাশে বসে জিরোচ্ছে আর অদূরে মিস্টার কবির থানার এসআই এর সঙ্গে কথা বলছেন সানাহ্কে খোঁজার ব্যাপারে। খানিক জিরিয়ে নিয়ে হঠাৎ মিসেস কায়নাত কেঁদে উঠলেন। অতসী তার মাকে আচমকা কাদতে দেখে অবাক হয়ে গেলো, মিস্টার কবিরও এসআই এর সঙ্গে কথা বলা থামিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন স্ত্রীয়ের দিকে।
‘ এইসব আমার অবহেলার ফল, মেয়েটার দিকে যদি আরেকটু নজর দিতাম তাহলে মেয়েটা আমার এভাবে বাড়ি ছেড়ে রাতের বেলা একলা বেরিয়ে যেতে পারতো না। কবির..…ও কবির আমার মেয়েকে তুমি খুঁজে এনে দাও। ওকে বলো তুমি ফিরে আসতে……আমি আর ওর উপর রাগারাগি করবো না,ওকে কোনকিছুতে জোর করবো না। ‘ এক প্রকার বিলাপ করতে করতেই কথাগুলো বললেন মিসেস কায়নাত।
অতসী তার মাকে এভাবে কপাল চাপড়ে বিলাপ করতে দেখে হতবাক। মিস্টার কবির কি করবেন বুঝতে না পেরে ফোন কানে দিয়ে এস আইকে বললেন ‘ স্যার আই উইল টক উইথ ইউ আফটার ফিউ মিনিটস..…প্লিজ স্টার্ট লুকিং ফর মাই ডটার…… ‘ । এস আই কি বললেন শোনা গেলনা তবে মিস্টার কবির ফোন রেখে দিয়ে অতসীকে বললেন ‘ অতস তোর মাকে সামলা…… ওকে শান্ত কর ‘ । অতসী তার বাবার কথা শুনে মিসেস কায়নাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে শান্তনা দিতে দিতে মিস্টার কবিরকে বললো ‘ বাবা তুমি আশা আন্টিকে ফোন দাও……এখন আন্টি ছাড়া কেউ সামলাতে পড়বে না মাকে। তুমি আন্টিকে এখনই ফোন করো…… ‘
—-
‘ ফারহান তুই কি ঠিক করলি কোনদিন সানাহ্কে নিয়ে বিয়ের শপিংয়ের কাজগুলো সারবি ? ‘ ছেলের পাতে রুটি দিতে দিতে বললেন মিসেস আশা।
ফারহান সবে রেডি হয়ে নামছিল ব্যাংকের কিছু কাজ মিটিয়ে আসবে বলে। মিসেস আশার কথা শুনে জায়গা মতো বসতে বসতে বললো ‘ হুম দেখি কাল পরশুর মধ্যেই যাবো…… সানাহ্কে বলে সন্ধ্যার দিকে সময় বের করতে হবে…… ‘
‘ কাল পরশু তোদের বিয়ে হতে চলেছে আর তুই এখনও সানাহ্কে আপনি করে সম্বোধন করিস ? ‘
‘ তো তুমি কি চাও আমি উনাকে কি বলে সম্বোধন করি ? ‘
‘ অবশ্যই নাম ধরে আর তুমি বলে ডাকবি। দুদিন পর তোদের বিয়ে..…এখন তুই ওকে এভাবে আপনি আপনি করে ডাকলে লোকে কি বলবে ? ‘
‘ বিয়েটা আমার আর সানার,ভবিষ্যতের সংসারটাও নিশ্চই আমাদের। এখানে লোকে কি বলবে ভাবলে জীবন কি করে চলবে ? আমাদের সবে বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমরা এখনও একে অপরকে চিনি না, জানি না,বুঝি না। আগে সেগুলো হোক তারপর আস্তে আস্তে আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসবো…… ‘ ফারহান বললো।
‘ বুঝলাম……ছেলেটা আমার বড় হয়েছে, সে এখন আর বাচ্চা নেই। আমার বাচ্চা ছেলেটা এখন সম্পর্কের সমীকরণ, বোঝাপড়া সবই বুঝে। ‘ মিসেস আশা অশ্রুজল চোখে বললেন।
ফারহান তার মাকে কাদতে দেখে মৃদু হাসলো। মিসেস আশা যে তার ছেলের উন্নতিতে কাদছেন বুঝতে পেরেই এই হাসি। প্রশান্তির এক হাসি,মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে পারার হাসি।
ফারহান আর মিসেস আশা যখন খেতে ব্যস্ত তখনই বসার ঘরের টেলিফোন বেজে উঠলে। ফারহান উঠতে যাচ্ছিল ফোন ধরবে বলে কিন্তু মিসেস আশা ওকে আটকে দিয়ে বললেন ‘ তুই খা, আমি দেখছি ‘ । মিসেস আশা উঠে গিয়ে টেলিফোনটা রিসিভ করলেন। উনি ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিস্টার কবির বললেন ‘ আসসালামু আলাইকুম আশা……আমি সানার বাবা ‘ ।
মিস্টার কবিরের কথার উত্তরে মিসেস আশা বললেন ‘ হ্যাঁ ভাইজান আমি বুঝতে পেরেছি..…ভাইজান কিছু কি হয়েছে ? আপনার গলা কেমন শোনাচ্ছে..… ‘
‘ অনেক কিছু হয়ে গেছে আশা..…সানাহ্কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোধ করি কাল রাতেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে আর এইদিকে মেয়েকে না পেয়ে মেয়ের মায়ের বেহাল দশা। সানার মা সেই থেকে বিলাপ করছে আর কান্নাকাটি করছে, অতসীও ওকে সামলাতে পারছেনা। এই সময় সানার মায়ের তোমাকে খুব দরকার। তুমি একটু আসতে পারবে ? ‘
মিস্টার কবিরের কথা শুনে মিসেস আশার মাথায় যেন বাজ পড়লো। উনি হতভম্ব ভঙ্গিতে দ্রুত বললেন ‘ অবশ্যই ভাইজান..…আমি এখনই রওয়ানা দিচ্ছি। দশ মিনিটের মধ্যে আপনাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছি….. ‘।
‘ আচ্ছা ঠিকাছে তুমি তাহলো এসো..…আমি ফোন রাখছি, খোদা হাফেজ। ‘
‘ আল্লাহ হাফেজ ভাইজান ‘ বলেই মিসেস আশা ফোন রাখলেন। ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে খাবার ঘরের দিকে গেলেন। খাবার ঘরে ঢুকে ফারহানকে বললেন ‘ ফারহান তুই কি আমাকে একটু সানাহ্দের বাড়ি নামিয়ে দিতে পারবি ? ‘
ফারহান তার মায়ের এহেন অস্থিরতা দেখে বললো ‘ কি হয়েছে মা ? তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেন ? আর এমন অসময়ে তুমি ঐ বাড়ি যাচ্ছ যে ? তোমার না অফিসে যেতে হবে ? ‘
‘ অনেক বড় অঘটন ঘটে গেছে ফারহান। সানাহ্কে কাল রাত থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। এইদিকে কায়নাতের অবস্থা খারাপ, বেচারি মেয়ের চিন্তায় বিলাপ বকছে। ভাইজান টেনশনে টেনশনে অস্থির হয়ে আমায় ফোন দিয়ে বললেন আমি যেন ও বাড়ি যাই, এখন একমাত্র আমিই কায়নাতকে সামলাতে পারবো। তুই কি আমাকে একটু নামিয়ে দিতে পারবি বাবা ? ‘ মিসেস আশা চিন্তায় অস্থির হয়ে বললেন।
‘ শুধু নামিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন ? আমাদের উচিত সানাহ্কে খুঁজে বের করা। তুমি আসো,আমি গাড়ি বের করছি। ‘ ফারহান অস্থির হয়ে বললো।
‘ আচ্ছা তুই তাহলে গাড়ি বের কর..…আমি খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে আসছি। ‘
‘ আচ্ছা ‘
—-
‘ মা.. মা তুমি একটু নিজেকে সামলাও,তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে কি করে হবে ? তাহলে আপাইকে খুজে বের করবো কি করে ? নিজেকে সামলাও মা..… ‘ অতসী মিসেস আশার গাঁয়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
‘ খবরদার আমার গায়ে হাত দিবি না তুই..… তুই ইচ্ছে করে সানাহ্কে যেতে দিয়েছিস তাইনা ? তুই যদি তোর দায়িত্বে গাফিলতি না করতি তাহলে সানাহ্ এভাবে বেরিয়ে যেতে পারতো না। তুই কেন এরকম করলি অতসী ? এখন আমি আফজাল ভাই আর দিদিকে কি জবাব দিবো ? ওদের আমি কি বলবো যে তাদের মেয়েকে আমি আগলে রাখতে পারিনি ? সব আমার জন্য…… তোকে ওর কাছে থাকতে না দিয়ে আমারই থাকা উচিত ছিল..… ‘ অতসীকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে এক প্রকার বিলাপ করতে করতেই বললেন মিসেস কায়ানাত।
প্রিয়তমা স্ত্রীর এহেন ভঙ্গুর দশা দেখতে পারছেন না মিস্টার কবির। স্ত্রীকে যে শান্তনা দিবেন তারও অবকাশ নেই কারণ থানার এস আইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভদ্রলোক বললেন এখন জিডি করতে হলে উনাকে থানায় যেতে হবে আর বাড়ির যা অবস্থা তাতে আশা না আসা অব্দি বাড়ি ছেড়ে বের হওয়া যাবে না।
কিছুক্ষণ পরই মিসেস আশা আর ফারহান এসে সানাহ্দের বাড়ি পৌঁছলেন। মিসেস আশা বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে বান্ধবীর কাছে গেলেন তাকে সামলাতে আর ফারহান গেলো মিস্টার কবিরের কাছে ব্যাপারটা পুরো ডিটেইলস এ জানার জন্য।
‘ আঙ্কেল ঘটনাটা আসলে কি সেটা আমাকে পুরোপুরি ডিটেইলসে বলুন…… ‘
‘ তোমরা তো উনিশ তারিখ এসেছিলে তোমার আর সানার বিয়ের ডেট ফিক্স করতে। তার একদিন পরে মানে একুশ তারিখ সকাল বেলা আমরা বুঝতে পারি সানার অনেক জ্বর,মনে হয় আগের দিন রাতে হয়েছিল। সানার জ্বর সাধারণ জ্বর নয়। একবার হলে কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে যায়,মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় আর জ্বর যত বাড়ে ততই ওর চোখও লাল হতে শুরু করে। সেই অবস্থায় ১০২° জ্বর নিয়ে মেয়ে আমার সারারাত বারান্দায় বসেছিল। তোমার আন্টি যে কতকিছু করলো..…মাথায় ঠান্ডা পানি দেওয়া,ডাক্তার ডেকে আনা সব হলো।
ডক্টর ওকে দেখলেন,দেখে বললেন এটা তো ওর সেই পুরোনো রোগ..…আবার হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে। এরকম সানার প্রায়শই হয়। জ্বর হলে চোখ লাল হয়ে যায়,মাথা বিগড়ে যায়। ওর এই জ্বর যত বাড়ে পাগলামিও ততই বাড়ে আর এই সময় ওর পক্ষে হুট করে বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এসব ভেবেই তোমার আন্টি ওর ঘরে অতসীকে শুতে বলেছিলেন যাতে অতসী সানাহ্কে পাহারা দিতে পারে। কিন্তু যেই কি সেই..…আমরা কেউ ভাবতে পারেনি পালানোর পথ খুজে না পেয়ে সানাহ্ আমরিন ভা..…মানে কায়নাতের শাড়ি বারান্দায় টাঙিয়ে নেমে যাবে। সেই থেকে তোমার আন্টির এই অবস্থা ‘ এক প্রকার মেয়ের চিন্তায় কাদো কাদো গলায় বললেন মিস্টার কবির।
‘ সানার যে এত জ্বর এই কথা আপনারা আগে কেন জানাননি আমাদের ? ‘ অবাক হয়ে বললো ফারহান।
‘ এমন জ্বর সানার প্রায়ই হয় তাই ভেবেছিলাম এবারও হয়তো সেরে যাবে। কিন্তু কাল যখন ডক্টর সবেদার লাস্ট দেখলেন তখন বললেন কালকের রাতটা দেখতে। কাল যদি জ্বর না সাড়ে তাহলে আজ ঢাকা মেডিক্যালে নিতে হবে। কিন্তু আজ সকাল হওয়ার আগেই তো আমার মেয়েটা সব ছেড়ে হারিয়ে গেলো। ফারহান..…বাবা এখন ওকে আমরা কোথায় খুঁজব ? ‘ মিস্টার কবির কাতর কণ্ঠে বললেন।
‘ আঙ্কেল তাহলে সবার আগে আমাদের ওর সব বন্ধু বান্ধবদের বাসায় খোঁজ নেওয়া উচিত এমনকি অতসীর যে বন্ধু বান্ধব আছে তাদের বাসায়ও ‘ ফারহান বললো।
‘ কিন্তু সানার যে কোনোই বন্ধু বান্ধব নেই বাবা।মেয়ে আমার কারোর সঙ্গেই মিশতে পারে না আর কাউকে সহজে বিশ্বাসও করতে পারেনা। তাইতো ওর কোনো বন্ধু বান্ধব নেই। ‘
মিস্টার কবিরের কথায় অবাক হলো ফারহান। সে ভাবেনি একটা মেয়ে এতটা ইন্ট্রোভার্ট হতে পারে যে তার কোনো বন্ধু বান্ধবই থাকবে না।
হঠাৎ অজানা আশঙ্কায় ফারহানের বুক কেপে উঠল। মনে হলো সানার তো ও যেদিন বিয়ে করবে না বলেছিল তারপর থেকেই জ্বর আর কাল রাতেও ওর সঙ্গে সানার কথা হয়েছে। তাহলে কি মেয়েটা ওর জন্যই কষ্ট পেয়ে ঘর সংসার ছেড়েছে ? এমনটা যদি হয় তাহলে ফারহানের কি হবে ? সে কাকে তার প্রিয়তমা করবে ? তাহলে কি আবারও সেই বছর পুরনো অভিশাপ ফিরে এসে তার হতে যাওয়া প্রিয়তমা,তার জীবন সঙ্গীকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিবে ?
নাহ্ আবারও নিজের মন মত পালটাবার আগেই সানাহ্কে খুজে বের করতে হবে। ফারহান নিজেকেই নিজে খুব ভয় পায়। একবার ওর মত পাল্টে ফেললে এরপর ও হাজার চেষ্টা করেও সানাহ্কে ফিরে পাবে না। তাকে যে সানাহ্কে চাই ই চাই, যে কোনো মূল্যে চাই।
ফারহানের ভয় করলো কিন্তু সে ভেঙে পড়লো না। এখন ভেঙে পড়া মানেই সময় নষ্ট করা। এর থেকে এইটুকু সময় কাজে লাগিয়ে সানাহ্কে খোঁজা যেতে পারে। ফারহান খানিকটা ভেবে বললো ‘ তাহলে আমাদের আগে অতসীর বন্ধু বান্ধবদের আর আপনাদের আশেপাশে যেসব আত্মীয় আছে তাদের কাছে খোঁজ করতে হবে। প্রথমে কাছের মানুষদের কাছে তারপর দূরের আত্মীয় স্বজনের কাছে খোঁজ করতে হবে। আঙ্কেল এভাবে ভেঙে পড়বেন না..…আপনি এভাবে ভেঙে পড়লে আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হবে না ‘
ফারহানের কথা শুনে মিস্টার কবির নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন যে উনি আর ভেঙে পড়বেন না।
—-
‘ মিসেস অবনি আপনার বান্ধবী মিস অতসী কি আজও আসেননি ? ‘
হঠাৎ প্রণয়ের গলা শুনে চমকে উঠলো অবনি। এভাবে এত জনের ভিড় ঠেলে প্রণয়ের নজর ওর উপরই পড়বে সেটা ও ভাবেনি। অবনি ধীরে সুস্থে দাড়িয়ে বললো ‘ নো স্যার……অতসী আজও আসেনি ‘
‘ উনি কেন আসছেন না সেটা কি আপনাকে জানাননি ? বা আপনি জানার চেষ্টা করেননি ? ‘ প্রণয় ভ্রু কুচকে বললো।
‘ জি না স্যার, ও আমাকে জানায়নি। আর আমি ওকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ কাজেই ওকে ফোনে পায়নি। ‘ অবনি নত সুরে বলল।
‘ ঠিকাছে আপনি এবার বসতে পারেন। ‘
প্রণয়ের অনুমতি পেয়ে অবনি বসে পড়লো আর প্রনয় ব্যস্ত হয়ে পড়লো কথার মাঝে। স্টুডেন্টদের পড়ানোর ব্যস্ততায় তার আর অতসীর কথা মাথাতেই রইলো না।
সারাদিন ভার্সিটির কাজ শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো প্রণয়। আজ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে, গাড়িটা সকালে আসার সময় আনেনি বিশেষ এক কারণে। হেঁটে বাড়ির দিকে ফেরার সময়ই রাস্তায় থাকা বাচ্চাগুলো তার সামনে পরে বলে সে আর গাড়ি আনেনি। ভেবেছে ফিরতে সময় বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করবে।
ব্যাপারটি অদ্ভুত হলেও এটাই সত্যি যে এই দুদিন ধরে সেই সমাজ সেবিকা মেয়েটারও কোনো পাত্তা নেই,তার দেখাই পাওয়া যায় না। কে জানে মেয়েটার কি হলো ? আগে তো রোজই এসেছে আর প্রণয়ও রোজ একটা করে চিরকুট দিয়েছে। চিরকুটের কথা মনে পড়তেই প্রণয়ের মনে পড়লো কয়েকদিন আগে এক চিরকুটের কথা। সেই সেবিকা লিখেছিলো ‘ রোজ যে এভাবে একটা করে চিরকুট দিচ্ছেন কোনদিন যদি হুট করে আমার প্রেমে পিছলে পড়ে যান তখন নিজেকে বাঁচাবেন কি করে মিস্টার অপরিচিত ? প্রেমের জাল, বড় জাল……এই জাল থেকে নিজেকে বাঁচানো সহজ না বলেই লোকে বলে প্রেমে পড়া বারণ। তখন কিন্তু আমার দোষ দিলে হবেনা কারণ আমি কিন্তু আপনাকে আমার প্রেমে পড়তে বলিনি..…আমার কিন্তু একজন বিশেষ কেউ আছে। নাম বলবো ? নাহ্ থাক বলবো না..… ‘
হাঁটতে হাঁটতেই কখন যে বাচ্চাদের কাছে চলে এসেছে খেয়ালই ছিল না প্রণয়ের। ময়নার ভাইয়া ডাকে প্রণয়ের সম্বিত ফিরল। মুচকি হেসে বাচ্চাদের দিকে এগিয়ে ময়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল ‘ কেমন আছিস তোরা ? তোদের দিদিভাই আজ আসেনি ? ‘
‘ আমরা ভালো আছি ভাইয়া। নাহ্ অতসদি আজও আসেনি..… ‘ ময়না বললো।
‘ আচ্ছা তোদের দিদি আসছে না কেন বলতো ? তোদের কি কিছু জানা আছে ? ‘ প্রণয় চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল।
‘ নাহ্ তবে এরকম প্রায়ই হয়..…দিদি কোনোদিনই এরকম করে না তবে হুট করে একদিন না বলে না কয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। তিন চারদিন গেলে আবারও নিয়মিত আসে ‘ বিল্টু বললো।
‘ জিজ্ঞেস করিসনি হঠাৎ কেন আসেনা ? ‘ প্রনয় বললো।
‘ জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু দিদি কখনও বলেনি……শুধু বলেছে তার খুব কাছের কেউ অনেক অসুস্থ থাকে বলেই সে তাকে ছেড়ে আসতে পারেনা। ‘ বললো ময়না।
কথাটা শুনে প্রণয়ের খারাপ লাগলো। মেয়েটা নিশ্চই কোনো বড় ঝামেলায় আছে নাহলে এভাবে হুট করে কেউ ভোজবাজির মতো গায়েব হয়ে যায় না। প্রণয়ের বড়ই খারাপ লাগছে মেয়েটার জন্য, গড নোজ কোন ঝামেলায় ফেসেছে।
কাছের এক দোকান থেকে বাচ্চাদের খাওয়ার জন্য ভাত, তরকারি আর পানি কিনে দিয়ে বাচ্চাদের বিদায় জানিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো প্রনয়। মনে মনে ভাবলো দাদুকে বলে ওই বাচ্চাদের দাদুর এনজিওতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে। তাহলে অন্তত বাচ্চাদের থাকার জায়গাটা পার্মানেন্ট হবে। প্ল্যানিং প্লটিং শেষে প্রণয় আবার অতসী আর সেই সমাজ সেবিকাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিলো। কি অদ্ভুত তাইনা ? এক মন দিয়ে দুই নারীকে নিয়ে চিন্তা…
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্…