প্রেমমানিশা(১৭)

#প্রেমমানিশা(১৭)

প্রথমে রাতের বেলাই বাড়ি ফেরার প্ল্যান থাকলেও ফারহান পরমুহূর্তেই তার মত পাল্টে নিলো। এত রাতে সানাহ্কে নিয়ে জার্নি করা সেফ না। তার থেকে বরং কাল সকালে উঠে আস্তে ধীরে খাওয়া দাওয়া করে যাওয়া যাবে। এসব ভেবেই ফারহান বললো ‘ সানাহ্ আজ এত রাতে ফেরা ঠিক হবে না। তারচেয়ে আমাদের এখন আপনি যেই ফ্ল্যাটে উঠেছেন সেখানে ওঠা উচিত। তারপর কাল সকালে নাহয় আস্তে ধীরে খেয়ে দেয়ে যাওয়া যাবে। ‘

ফারহানের কথায় সানাহ্ নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিল কারণ ফারহান ভুল কিছু বলেনি। আজকাল কি হয় বলা যায় না। রাতের আঁধারে কতকিছুই না হয়। এই আঁধারই তো অপরাধীদের সবথেকে বড় অস্ত্র।

‘ তাহলে চলুন….যাওয়া যাক ‘ বলে ফারহান সানার হাত ধরে এগোতে লাগলো। সানাহ্ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহানের ধরা হাতের দিকে। তার কাছে সবকিছুই যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছে। কোনওদিন যে সেও ফারহানকে ছুঁতে পারবে তা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তবে আজ এই অবিশ্বাস্য স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আর সেই আনন্দে সানার মন কিছুক্ষণ পরপরই নেচে উঠছে। সানাহ্ কিছু না বলে খানিকটা এগিয়ে এসে ফারহানের হাতে মাথা রেখে ফারহানের হাত জড়িয়ে ধরলো নিজের দুই হাত দিয়ে। ফারহান সেটা দেখেও কিছু না বলে নিঃশব্দে হাসলো।

আবেগে ভেসে ফারহানকে একসঙ্গে থাকতে তো বলে দিলো কিন্তু দুজনে ঘুমাবে কোথায় ? এ তো টিভি সিরিয়াল না যে দুজনে এক বিছানায় ঘুমোবে তাও আবার ডিসটেন্স মেইনটেইন করে। তাহলে কি করা উচিত এখন ? ভেবেই সানার মাথা গরম হচ্ছে। ইদানিং খুব তাড়াতাড়ি মাথা গরম হয় সানার। অথচ আগে নিজেকে সে নিজের কন্ট্রোলে রাখতো। এর ফলে মেজাজ থাকতো সবসময় ফুরফুরে। তাহলে কি ফারহান তার অজান্তে সানার উপর নিজের সম্পদের ট্যাগ বসিয়ে দিয়েছে ?

সানাহ্ যখন কোথায় শুবে সেই চিন্তায় মগ্ন তখন ফারহান তার ভাবনার সমাধান করে দিয়ে বললো ‘ এক কাজ করুন। আপনি আমাকে চাদর আর বালিশ দিন। আমি নিচে শুয়ে পড়ছি। আপনি বিছানায় শোন। ‘

ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ চমকে উঠে বললো ‘ সেটা কি করে হয় ? আপনি আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন আর আমি আপনাকে নিচে শুতে বলবো ? ইমপসিবল, আপনি খাটে শোন। আমি নিচে শুচ্ছি, অদ্ভুত সব মানুষজনের পাল্লায় পড়ছি। তার ঠান্ডার ধাত আছে জেনেও নিচে শুতে চাচ্ছে। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে ক্লোজেট থেকে একটা চাদর আর বালিশ নামালো সানাহ্। জিনিসগুলো নামিয়ে সানাহ্ কাজে লেগে পড়লো। বিছানা ঠিক করে ঘর ছেড়ে বের হলো। ফারহানের জন্য চা আর নিজের জন্য কফি করে আনলো। রাতে খালি পেটে কিছু না খেয়ে থাকা যাবে না। চা এনে ফারহানের হাতে দিয়ে বললো ‘ সরি ফর দিস কাইন্ড অফ বিহেভিয়ার। আজকে দুপুরে বাড়িতে খাওয়ার পর বাজার শেষ হয়ে গেছিলো। সন্ধ্যে বেলা জয়িতা বৌদির সঙ্গে এক জায়গায় গিয়েছিলাম বলে সেখান থেকে খেয়ে আসায় রাতে আর খাওয়ার চিন্তা ছিলো না। সেই সুবাদে বাজার আর করা হয়নি। ঘরে খাওয়ার মত কিছু নেই শুধুমাত্র চা কফি ছাড়া। ‘

‘ আমার ঠান্ডার ধাত আছে কি করে জানলেন ? আর আমি যে চা খাই সেটাই বা কি করে জানলেন আপনি ? ‘ ফারহান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল।

‘ আশা আন্টি বলেছে। ছোটবেলায় আপনার কিছু হলেই ঠান্ডা লেগে যেত আর সেই ঠান্ডার থেকেই জ্বর। ‘ সানাহ্ বললো।

‘ এতকিছু জানেন অথচ আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়তাম তখন আমায় দেখতে যেতেন না কেন ? ‘ ফারহান ভ্রু কুচকে বললো।

সানাহ্ ফারহানের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না তাই নীরব রইলো। সানার নীরবতা ফারহানকে বুঝিয়ে দিল সানাহ্ তার প্রশ্নের উত্তর দিবে না। অগত্যা ফারহানও নীরবতা মেনে চুপ রইলো। কফি খেয়ে সানাহ্ ফারহানের কাছ থেকে চায়ের কাপ নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। থালাবাসন টুকটাক যা ছিল সেগুলো ধুয়ে ড্রয়িং রুমের লাইট নিভিয়ে ঘরে এলো। ঘরের জানালা খুলে দিয়ে ফারহানকে বললো ‘ আপনি এই কাপড়ে ঘুমোতে পারবেন ? ‘

‘ না পারলেও তো কিছু করার নেই। পরিস্থিতি যেমন সেভাবেই অ্যাডজাস্ট করতে হবে। ‘

‘ যদি না পারেন তাহলে বলুন আমি হরি দার পাঞ্জাবি ধুতি নিয়ে আসছি বৌদির কাছ থেকে। ‘ আমতা আমতা করে বলল সানাহ্।

‘ ইসস..… একদম না। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। এত রাতে কারোর ঘুম ভাঙ্গানোর কোনো মানে হয় না । তাছাড়া আমি যে এখানে আছি সেটা কোনো দাদা বৌদিকে বলতে হবে না। জানলে তারা খারাপ ভাববে। আমি এভাবেই অ্যাডজাস্ট করে নিবো। ‘

ফারহানের ফিসফিস করে বলা কথাগুলো সানার কাছে মাদকের নেশার মত লাগলো। মনে হলো সানার মাথা ঝিমঝিম ধরেছে। এখনই সে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। নাহ যে করেই হোক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে এই রাত পার করতে হবে। তাই সানাহ্ ফারহানকে বললো ‘ আপনি শুয়ে পড়ুন, আমিও শুচ্ছি ‘

‘ আপনার সাথে আমার কথা ছিল ‘

‘ যা কথা হওয়ার সেটা কাল সকালে হবে। এখন আপনি ঘুমান। আমার ভালো লাগছে না কিছু ‘ সানাহ্ বিরক্ত হয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো।

‘ ভয় পাচ্ছেন আপনি ? ‘ ফারহান সানাহ্কে এহেন তাড়াহুড়ো করতে দেখে বললো।
আচমকা ফারহানের কথা শুনে সানার ব্যস্ত হাত জোড়া থেমে গেলো। অপ্রস্তুত হয়ে বললো ‘ মানে ? ‘

‘ মানে এটাই যে আপনি এই অন্ধকার ঘরে নিজেকে ভয় পাচ্ছেন। আপনার মনে হচ্ছে এই পরিবেশে আপনি আত্ম নিয়ন্ত্রণ হারাবেন আর কোনো অঘটন ঘটবে। নিজের উপর কন্ট্রোল নেই আপনার ? ‘ ফারহান স্মিত হেসে বললো।

‘ মোটেই না…. আমি ভয় পাবো কেন ? আমার নিজের উপর অবশ্যই কন্ট্রোল আছে। বরং আমার মনে হয় আপনার নিজের কন্ট্রোল নেই তাই আপনি আপনার দোষ আমার উপর চাপাচ্ছেন। ‘ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো সানাহ্।

সানার কথা শুনে ফারহান নিঃশব্দে হাসলো। কিছুক্ষণ এভাবেই আপন মনে হেসে তারপর সানাহ্কে বললো ‘ আচ্ছা আমি বুঝেছি এটা আমার দোষ। আমার নিজের উপর কন্ট্রোল নেই। আমি যদি কন্ট্রোললেস হই তাহলে আপনি কি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা ? এত ঝগড়া করা কোথা থেকে শিখলেন ? আগে তো কোনওদিন দেখিনি ঝগড়া করতে। ‘

‘ জানিনা বলে ‘ সানাহ্ তার গায়ে চাদর টেনে ফারহানের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লো যাতে ফারহান তার চেহারা দেখতে না পারে। সানার কান্ড দেখে ফারহান অবাক না হয়ে পারল না। সানাহ্কে এতটা ডেসপারেট সে আগে দেখেনি। সানাহ্ বরাবরই শান্ত স্বভাবের মেয়ে । হ্যাঁ যদিও এটা ঠিক যে ফারহান সানাহ্কে কোনওদিন সামনে থেকে দেখেনি,সবসময় আড়ালে থেকেই দেখেছে। তবে একেবারেই দেখেনি কথাটা ভুল।

কিছু মুহূর্ত কেটেছে এভাবেই নীরবতায়। ফারহান মাথার নিচে হাত রেখে সোজা হয়ে সিলিংয়ের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর ফারহান বললো ‘ মিস সানাহ্, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? অনেস্ট উত্তর দিবেন…. ‘

সানাহ্ জেগেই ছিল। এতক্ষণে তার মাথা ঘোরা কমেছে আর পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে। পরিবেশ প্রতিকূল দেখে সানাহ্ বললো ‘ বলুন ‘

‘ ডু ইউ লাভ মি ? ‘

একটা সিঙ্গেল প্রশ্ন অথচ এর প্রভাব কতটা তাইনা ? উত্তর এফার্মেটিভ হলে জগৎ সংসার সুখী আর নেগেটিভ হলে চারদিকে শুধু বিরহ আর বিরহ। সানাহ্ তার কথা মত অনেস্ট উত্তরই দিল। এই উত্তর শোনার পর ফারহানের মনে হলো এই প্রশ্নটা না করলেই ভালো হতো। সানাহ্ ফারহানের প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বলেনি। বরং বলেছে ‘ আই হেট ইউ…. ‘

সানার কথা শুনে ফারহানের মনে হলো সানাহ্ কি মজা করছে নাকি ও সিরিয়াস ? মজা করার মেয়ে সানাহ্ নয় তাহলে সিরিয়াসলি কেন বললো ? সে যদি ফারহানকে ঘৃণাই করে থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করছে কোন দুঃখে ? আর ভাবতে পারল না ফারহান। তার আগেই ওর চোখ দুটো সারাদিনের ক্লান্তি আর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে বুজে এলো।

সানাহ্ ঘুম থেকে উঠেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিল। উদ্দেশ্য আজ বাইরে থেকে নাস্তা এনে খাবে কারণ এক বেলার জন্য বাজার করার কোনো মানেই হয়না। সেই ভেবে সানাহ্ দোকান থেকে পরোটা আর ভাজি নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলো।

সানাহ্ যখন কঠিন শিলাময় পথ পেরিয়ে বাসার দিকে যেতে ব্যস্ত তখন তার ফোনের রিংটোনে তার হাঁটার পথে ব্যাঘাত ঘটলো। সকাল সকাল ফোন কলের রিংটোন শোনা সানার কাছে বড়ই বিরক্তিকর তাই সে বিরক্তিতে ‘ চ ‘ শব্দ করে ট্রাউজার পকেটের হাত গলে ফোন বের করলো। ফোনের কলার আইডি না দেখেই পর্বত সমান বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো ‘ হুজ স্পিকিং ? ‘

‘ সানাহ্ আপু,আমি ফারাইরা। চিনতে পারছো ? ‘ ফোনের ওপার থেকে ফারাইরা বললো।

‘ এতবার দেখা হওয়ার পর যদি না চিনি তাহলে তো ব্যাপারটা অস্বাভাবিক । আমার কি ডাক্তার দেখানো দরকার ? ‘ সকাল সকাল হুট করে ফোন করায় সানাহ্ বেশ বিরক্ত। বরাবরই তার ফোনে কথা বলতে বিরক্ত লাগে সে যেই হোক না কেন।

‘ আপু তুমি কি রাগ করলে ? আমি কি তোমাকে বিরক্ত করছি ? ‘

মেয়েটার অসহায় কণ্ঠ শুনে সানার মায়া হলো। আহা মেয়েটা ওর এত সাহায্য করলো অথচ ও বিরক্ত হচ্ছে। সানাহ্ তার বিরক্তি দূরে ঠেলে দিয়ে কোমল গলায় হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ নাহ বিরক্তি হইনি। তুমি কি কিছু বলবে ? ‘

‘ হ্যাঁ আপু বলার জন্যই ফোন দিলাম। জাপান বললো আজ আমাকে নিয়ে আপনার ওখানে যাবে। আপনি আপনার সুবিধা মতো একটা সময় বলুন, কখন আপনি ফ্রী থাকবেন। আমরা তখন যাবো। ‘

‘ না না তোমাদের আসার দরকার নেই। জাপান ভাইকে বলে দাও তার আর কষ্ট করে এসে কাজ নেই। আমি ঢাকা ফিরে যাচ্ছি আমার পরিবারের কাছে। ‘ সানাহ্ বললো।

‘ হঠাৎ কি হলো আপু ? আপনার কি মন খারাপ ? গলা কেমন শুনাচ্ছে ? আপনাকে কি জোর করা হচ্ছে ঢাকায় ফেরার জন্য ? ‘ ফারাইরা উদ্বিগ্ন গলায় বললো।

‘ নাহ্ মন খারাপ কেন হবে ? আমার মন খারাপ না। সবারই নিজস্ব একটা জায়গা থাকে যেখানে তাকে দিনশেষে ফিরতে হয়। সেই জায়গার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে তাদের সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গেও সম্পর্ক শেষ করে দিতে হয়। কিন্তু আমি তো কারোর সঙ্গেই সম্পর্ক শেষ করিনি তাই সেই সম্পর্কের টানে আমি আবারও নিজের নীড়ে ফিরে যাচ্ছি। যেখানে আমার জায়গা সেখানেই যাচ্ছি। তুমি ভাইয়াকে বলে দিও আর আমার কথা চিন্তা করতে হবে না। ‘ সানাহ্ আলতো হেসে বললো।

‘ এভাবে বলছো কেন আপু ? আমরা তো তোমার আপনজনই। আমরা তোমার কথা চিন্তা করবো নাতো কে করবে ? আমরা তোমাকে ভালোবাসী বলেই তোমার জন্য চিন্তা করি। ‘ ফারাইরা মন খারাপ করে বললো।

‘ আমি তোমাদের ভালোবাসার তীব্রতা জানি তাই তার ক্লারিফিকেশন দিতে হবে না । এখন তুমি সুন্দর করে ভাইয়াকে আমার ফিরে যাওয়ার কথাটা জানাও। আমার হাতে সময় বেশি নেই। জিনিস গোছগাছ করতে হবে তাই ফোন দিয়ে বলা সম্ভব না। ‘ সানাহ্ বললো।

‘ আচ্ছা, ঠিকাছে আপু। আমি ওকে ফোন করে বলছি। তাহলে তুমি ভালো করে প্রিপারেশন নাও। পুরো সংসারই তো উঠিয়ে এনেছিলে তাই নিতে সময় লাগবে। আমি তাহলে রাখি। খোদা হাফেজ…. ‘ ফারাইরা বললো।

‘ আচ্ছা রাখো। খোদা হাফেজ ‘

ফোন রেখে সানাহ্ এবার বিল্ডিংয়ের কেচিগেট খুলে ভিতরে ঢুকলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে ফ্ল্যাটের লক খুলে ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকতেই দেখলো ফারহান উঠে গেছে। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। তারমানে বাথরুমে ঢুকেছে। সানাহ্ বাথরুমের দিকে এক পলক তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। রান্নাঘর থেকে প্লেট বাটি এনে মেঝেতে রাখলো। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে তার উপর প্লেট বাটি আর খাবারের প্যাকেট রাখলো। পলিথিন দাত দিয়ে ছিঁড়ে একটা মাঝারি সাইজের বাটিতে ডাল ভাজি মিক্স করে রাখলো। তারপর প্লেট দুটোতে দুটো করে চারটা পরোটা রেখে আরেকটা পরোটা অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে দুটো প্লেটেই রাখলো।

সানাহ্ খাবার সাজাতে সাজাতে ফারহান বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ লাগছে। গায়ে সেই কাল রাতের জামা কাপড়ই। সানাহ্কে খাবার সাজাতে দেখে এগিয়ে এসে পাটিতে বসলো। সানার কাজের ধরন দেখে মুচকি হেসে বলল ‘ আমার মনে হয় আমাদের বিয়ের পর বাড়ি কলেজ, বাড়ি কলেজ করতে আপনার সমস্যা হবে না। আপনি তো একাই দশভূজা। মা মনে হয় তার ছেলের বউয়ের কাজের দক্ষতা দেখে প্রেমেই পড়ে যাবে। ‘

‘ এক্সট্রা পাম কম মারুন। বাটারিং এ আমি গলি না। অন্য কোনো টেকনিক এপ্লাই করুন। ‘ সানাহ্ পলিথিনগুলো মুড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে ফেলে দিয়ে সিঙ্ক থেকে হাত ধুয়ে এলো। তারপর ফারহানের মুখোমুখী বসে বললো ‘ নিন খাওয়া শুরু করুন। তাড়াতাড়ি খান। আমাদের বের হতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। জয়িতা বৌদি আর হরি দাকেও বলে যেতে হবে। ‘

‘ আপনি যে এভাবে নিচে বসে খাচ্ছেন আপনার কষ্ট হচ্ছে না ? আপনার তো চেয়ার টেবিলে খেয়ে অভ্যাস। আপনি তো বিদেশি আদব কায়দায় বড় হয়েছেন আর বিদেশে তো মাটিতে বসে খায় না। ‘ সানাহ্কে মাটিতে বসে উশখুশ করে খেতে দেখে ফারহান বলল ।

‘ মানুষ অভ্যাসের দাস। আমি বিদেশী কায়দায় অভ্যস্ত হলেও কিছুদিন নিচে বসে খেলে আমার দেশী কায়দাও আয়ত্তে চলে আসতো। মেইন কথা হলো মানুষ যেই পরিবেশে থাকে তাকে সেই পরিবেশ অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হয়। ‘ সানাহ্ খেতে খেতেই বললো।

‘ বুঝাই যাচ্ছে আপনার আর আমার ম্যারিড লাইফ নিঃসন্দেহে নিরঝঞ্জাট পূর্ণ হবে। ‘ ফারহান বিড়বিড় করে বললো যাতে সানার কানে না যায়।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্…

ছবিয়াল: পিন্টারেস্ট

( কিছু সমস্যার কারণে এতদিন দিতে পারিনি। চেষ্টা করবো আজ থেকে রোজ দেওয়া। দয়া করে সবাই রেসপন্স করবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here