প্রেমমানিশা(২৭)

#প্রেমমানিশা(২৭)

রান্নাঘরের কাজ সেরে মিসেস কায়নাত বসার ঘরের সোফায় গিয়ে বসলেন। হাতটা বাড়িয়ে এসির রিমোটটা হাতে নিয়ে এসির টেম্পারেচার আরও কমিয়ে দিলেন। রান্নাঘরে কাজ করতে করতে তার মনে হয় এতক্ষণে এক কেজি ঘাম শরীর থেকে পড়েছে। আগত বসন্তের হালকা এই উত্তাপেই এই অবস্থা, যখন গ্রীষ্মকাল চলে আসবে তখন কি হবে আল্লাহ মালুম।

মিসেস কায়নাত যখন নিজের মতো নিজে জিরিয়ে নিতে ব্যস্ত তখনই বাড়ির সদর দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। মিসেস কায়নাত উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলেন। দরজা খুলে দেখলেন লয়ার মিস্টার বড়ুয়া এসেছেন। মিসেস কায়নাত আলতো হেসে মিস্টার বড়ুয়াকে সোফায় বসতে বললেন।মিস্টার বড়ুয়াকে বসিয়ে রেখে মিসেস কায়নাত কিছু নাস্তা পানি আনতে গেলেন।

‘ কেমন আছো মামণি ? ‘

সানাহ্ আপনমনে ব্রেড চিবচ্ছিল। লয়ার মিস্টার বড়ুয়া যে বাড়িতে এসেছেন সেটা ওর নজরেই পড়েনি তাই হঠাৎ মিস্টার বড়ুয়ার কথায় চমকে উঠলো। অবাক হয়ে মিস্টার বড়ুয়ার দিকে তাকালো। তারপর মানুষটা কে বুঝতে পেরে স্মিত হেসে বললো ‘ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো উকিল আঙ্কেল ? ‘

‘ আমিও ভালো আছি মা। শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ? আগে তো বিয়েই করতে চাইতে না আর এখন একেবারে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেললে। এই জন্যই তো ভাবী আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ‘ মিস্টার বড়ুয়া তার পান খাওয়া দাত দেখিয়ে মুচকি হেসে বললেন।

‘ হ্যাঁ সে বিয়ে.. ‘ সানাহ্ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ওদের কথার মাঝেই মিসেস কায়নাত স্নাকসের ট্রে এনে বসার ঘরের টি টেবিলের উপর রেখে বললেন ‘ এসব কথা নাহয় পড়ে হবে ভাই। আগে যেই কাজের জন্য আপনি এসেছেন সেটা মিটিয়েনী ? প্রপার্টির কাগজ এনেছেন আপনি ? ‘

‘ হ্যাঁ আপনি যেভাবে যেভাবে বলেছিলেন সেভাবেই এনেছি। আপনি বলেছিলেন আপনাদের বান্দরবনের গেস্ট হাউজ বাদে যেসব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি আছে সেসবের অর্ধেক সানাহ্ আর অর্ধেক অতসী পাবে। বাকি যে ফার্ম হাউজ ওটা একটা অনাথ আশ্রমকে দিয়ে দিবেন তাইতো ? আমি সেই মতোই কাগজ করে এনেছি। আপনি চাইলে দেখে নিতে পারেন ‘ বলে মিস্টার বড়ুয়া মিসেস কায়নাতের দিকে সম্পত্তির কাগজগুলো এগিয়ে দিলেন।

সানার কোনোকালেই এসব সম্পত্তির প্রতি আগ্রহী ছিল না তাই সে এসবে বোর হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যে পারলে সে এখনই এখান থেকে উঠে যায় কিন্তু খিদের বশে সে যে পাঁচ ছয়টা ব্রেড টোস্ট করেছে সেগুলো কে শেষ করবে ? আগে তো মনে হয়েছে খিদার জ্বালায় সে অনায়াসে আট দশটা খেয়ে ফেলতে পারবে কিন্তু ওর ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল সেটা ও এখন বুঝতে পারছে।

তবে যে করেই হোক সানাহ্ খাবারগুলো শেষ করবে কারণ খাবার নষ্ট করা তার পছন্দ নয়। এমন কত মানুষ আছে যারা খেতেই পায় না আর ও খেতে পেয়েও সেগুলো নষ্ট করবে ? এটা একেবারেই অসম্ভব।

সানাহ্ যখন শরীর হেলিয়ে দুলিয়ে কোনোমতে খাবার গিলছে তখনই ওর ট্রাউজারের পকেটে থাকা ফোন তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো। এই সাত সকালে কে ফোন করেছে দেখার জন্য ফোন বের করতেই সানার ঠোঁটের কোলে হাসি খেলে গেলো। ফোনের ডিসপ্লেতে গোটা গোটা অক্ষরে ‘ আশা আন্টি ‘ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। সানাহ্ বেশ খুশিই হলো যে এই বোরিং টাইমে কেউ অন্তত তাকে সময় দিতে ফোন করলো।
সানাহ্ ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে মিসেস আশা বললেন ‘ কেমন আছো সানাহ্ ? ‘

জবাবে সানাহ্ মিষ্টি হেসে বললো ‘ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো আন্টি ? কি করছো ? তোমাদের কি ব্রেকফাস্ট করা হয়ে গেছে ? ‘

‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি মা। হ্যাঁ আমাদের ব্রেকফাস্ট করা শেষ। এই যে এখন অফিসে যাবো। রোজই অফিসে যেতে হয়। ‘ মিসেস আশা ক্লান্তি মিশানো গলায় বললেন।

‘ এখন তো এগুলো ছেড়ে দিলেই পারো আন্টি। এই সময় আর কত স্ট্রেস নিবে তুমি ? এত আর্ন করে কি লাভ ? ফারহান তো আছেনই। এতদিন তুমি করলে। এখন থেকে নাহয় উনি করবেন। ‘ সানাহ্ চিন্তিত হয়ে বললো।

‘ এসব কি আর সাধে করি মা ? চাকরি করাটা একসময় আমার বাধ্য বাধকতা হলেও এটা এখন আমার প্যাশন। আসলে কর্মমুখী মানুষ জীবনের শেষ সময়েও কোনো কাজ না করে থাকতে পারে না। সব যদি ছেড়েই দিতে পারতাম তাহলে এতদিনে ব্যবসাকে এতটা দাড় করাতে পারতাম না। তবে সমস্যা নেই। রুদ্রটা পড়াশুনা শেষ করেই অফিস জয়েন করবে। তখন এমনিতেই আমার উপর আর প্রেসার থাকবে না। ‘ মিসেস আশা স্নিগ্ধ হেসে বললেন।

‘ হ্যাঁ তাতো ঠিক। তোমার মতো মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি আন্টি। এতটা ডেডিকেটেড আর এফিশিয়েন্ট নিজের কাজে যে আমার মনে হয় আমিও তোমার মতই হবো। এ ওয়ার্কাহলিক পারসন। ‘

সানার কথা শুনে তীব্র স্বরে হেসে উঠেন মিসেস আশা। সানার এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা উনাকে বড্ড হাসায়। আসলেই মেয়েটা এতটাই সরল যে সবকিছুকেই সোজা মনে করে। কিন্তু এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কোনোকিছুই সোজা নয়।। একবেলা পেটের খাবার জুটানোর জন্যও মানুষকে এখানে যুদ্ধ করতে হয়। তবে উনি এখনই স্বপ্নের দুনিয়ায় বাস করা সানার ভুল ভাঙাবেন না। মেয়েটা যতটা পারুক স্বপ্ন দেখুক। এরপর তো বাস্তবতার নিষ্ঠুর ধাক্কায় একসময় আপনিতেই সব বুঝে নিবে। তখন নাহয় আবার জীবনটাকে নতুন করে সাজাবে।

মিসেস কায়নাত সম্পত্তির কাগজপত্র দেখছেন। সবকিছু একবার ভালো করে পরখ করে নিয়ে মিস্টার বড়ুয়াকে বললেন ‘ ঠিকাছে তাহলে আমি এখানে কবির আর আমার সাইন নিয়ে নিলে আপনি এগুলো কাজ করতে দিয়ে দিবেন। আমি চাইছি আগামী দুই এক মাসের মধ্যেই প্রপার্টি সানাহ্ আর অতসীর নামে করে দিতে। ‘

‘ কিন্তু ভাবী একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন সমস্যাটা সলভ না হলে আমি কাজে এগোতে পারছি না। সমস্যাটা একটু অন্যরকম। ‘ মিস্টার বড়ুয়া আমতা আমতা করে বললেন।

‘ সমস্যা ? কি সমস্যা ? ‘ মিসেস কায়নাত ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে মিস্টার বড়ুয়ার দিকে দৃষ্টি দিলেন। মিস্টার বড়ুয়ার এহেন আমতা আমতা ভাব উনার পছন্দ হচ্ছে না। এই ধরনের মানুষদের উনার একেবারেই পছন্দ না যারা সিরিয়ালের মতো সিরিয়াস সিচুয়েশনে এমন তোতলাতে তোতলাতে কথা বলে।

‘ কোম্পানি থেকে বেশ কয়েকদিন আগে অনেক মোটা অঙ্কের টাকা উইথড্র করা হয়েছে কিন্তু কেন উইথড্র করা হয়েছে তার কোনো ক্ল্যারিফিকেশন পাওয়া যায়নি। এই কথাগুলো আমি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যখন কোম্পানির সব অ্যাকাউন্টস চেক করিয়েছিলাম আপনার কথায়। ‘

মিস্টার বড়ুয়ার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন মিসেস কায়নাত । উনি বুঝতে পারলেন না মোটা অঙ্কের টাকা কে উইথড্র করেছে ‘ Flora ‘ থেকে। ‘ Flora ‘ হলো বাংলাদেশের প্রথম সারিতে থাকা ফ্যাশন ডিজাইনিং হাউসের মধ্যে অন্যতম ফ্যাশন হাউজ। ‘ Flora ‘ তে বিভিন্ন ধরনের ক্লাসিক্যাল জুয়েলারি ডিজাইন করা থেকে শুরু করে নয়নাভিরাম সব আউটফিটও ডিজাইন করা হয়।।’ Flora ‘ তে বাংলাদেশের সবথেকে বড় ডিজাইনারদের আবাস।

‘ হিউজ এমাউন্ট মানে ? কে মোটা অঙ্কের ক্যাশ তুলেছে ? ক্যাশ নিশ্চই কোম্পানি শেয়ার হোল্ডারদের বাইরে কেউ তুলতে পারবে না ? ‘ মিসেস কায়নাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

‘ হুম হিউজ এমাউন্ট…. এরাউন্ড ওয়ান মিলিয়ন। কোম্পানির ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার মিস হোল্ডার সাইয়ারা কায়নাত সানাহ্ তুলেছেন। ‘ এক প্রকার ভয়ে ভয়েই কথাগুলো বললেন মিস্টার বড়ুয়া।

উনি এখন ভালো করেই বুঝতে পারছেন যে এরপর এই মা মেয়ের মধ্যে কত বড় ধরণের যুদ্ধ লাগতে চলেছে। যদিও সানাহ্ আর মিসেস কায়নাতকে উনি মাত্র একবারই সম্মুখে দাঙ্গা বাঁধাতে দেখেছেন কিন্তু এই দুই মা মেয়ের সাপে নেউলে সম্পর্কের ব্যাপারে কোম্পানির অনেকেই বেশ খানিকটা জানেন। এর পিছনেও কারণ আছে।

একবার সানাহ্, মিস্টার কবির আর মিসেস কায়নাত একটা বড় ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। সানাহ্ তখন সবে উনিশে পা দিয়েছে মনে হয়। সেখানে মিস্টার বড়ুয়াও ‘ Flora ‘ র পার্সোনাল লয়ার হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানেই মা মেয়ের মত বিরোধ হওয়ায় দুজনে রীতিমত ঝগড়া করে মিটিং ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারপর থেকেই সকলে মা মেয়ের সম্পর্কের ব্যাপারে অল্প বিস্তর অনেক কিছুই জানে।

মিসেস আশার মেজাজ গরম হয়ে গেলেও নিজেকে ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলেন। উনি অবশ্যই চাননা বাইরের মানুষের সামনে উনার আর উনার মেয়ের মধ্যে ঝামেলা করে মেয়ের সম্মান নষ্ট করতে। এর আগে একবার এই ভুল করেছেন তাই দ্বিতীয়বার আর এই ভুল করবেন না। উনি শান্ত গলায় বললেন ‘ তাহলে মিস্টার বড়ুয়া আপনি এখন আসতে পারেন। আমি কবিরের সঙ্গে কথা বলে পেপার্স এ সাইন নিয়ে আপনার কাছে পেপারগুলো পাঠিয়ে দিবো। নমস্কার… ‘

মিসেস কায়নাতের বলার পর মিস্টার বড়ুয়ার কাছে বলার মত আর কিছুই থাকে না। উনি মেকি হেসে নমস্কার জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার বড়ুয়া বেরিয়ে যেতেই এবার মিসেস কায়নাত উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পায়ে শান্ত মেজাজে এগিয়ে গেলেন সানার দিকে।
নিঃসন্দেহে বসার ঘর থেকে খাবার ঘরের দূরত্ব বেশি নয়। এই তিরিশ সেকেন্ডের দুরত্ব। দূরত্ব কম বলেই সানাহ্ এতক্ষণ মিস্টার বড়ুয়া আর মিসেস কায়নাতের প্রত্যেকটা কনভারসেশন শুনতে পেয়েছে। কিন্তু আজ সানার মোটেই নিজের কোনো কাজের এক্সপ্লেনেশন দেওয়ার ইচ্ছা নেই তাই ও উঠে দাঁড়ালো। মিসেস কায়নাতকে আসতে দেখেও না দেখার ভান করে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।

‘ আই ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ সানাহ্…… কাম হেয়ার ‘ মিসেস কায়নাত খাবার টেবিলের এক কোনায় চেয়ারে বসে শক্ত গলায় বললেন।

মিসেস কায়নাতের কথা শুনে সানার চলন্ত পা জোড়া থেমে গেলো। মিসেস কায়নাতের দিকে চোখ না ফিরিয়েই আগ্রাসী গলায় বললো ‘ বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ মা.. আই অ্যাম গোইং টু মাই রুম সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মী। ‘

‘ বাট আই হ্যাভ টু ডিস্টার্ব ইউ ডিয়ার…… ইউ হ্যাভ টু লিসেন মি অ্যান্ড এনসার মি। আমি কি জানতে পারি কেন তুমি কোম্পানির একাউন্ট থেকে এরাউন্ড ওয়ান মিলিয়নের মতো ক্যাশ উইথড্র করেছো ? ‘ মিসেস কায়নাতের গলায় তীব্র ঝাঁঝ শোনা গেলো।

সানাহ্ও ওর মায়ের গলার তেজ বাড়তে দেখে থেমে রইলো না। পূর্বের থেকেও বেশি তেজী গলায় বললই ‘ অবভিয়াসলি ইউ হ্যাভ দা রাইট টু নো বাট আই অ্যাম নট ফোর্সড টু ইনফরম ইউ। ‘

‘ অফকোর্স ইউ আর…… এন্ড ইউ আর মাই ডটার সো ইউ আর ফোর্সড টু ইনফরম মি। ‘ মিসেস কায়নাত এবার তেতে উঠে বললেন।

‘ নো আই অ্যাম নট……আই অ্যাম নট ইউর ডটার অ্যান্ড ইউ আর নট মাই মাদার। আসলে লোকে ঠিকই বলে মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি। তুমি আমার সো কল্ড মাসী ছাড়া কিছুই না। ইউ আর অনলি মাই আন্টি অ্যান্ড ইউ আর নট মাই মাদার। মাই মাদার ইজ মিসেস আয়াত আমরিন। আর ‘ Flora ‘ তে আমার বাবারও শেয়ার আছে তাই আমি ক্যাশ উইথড্র করলে আমি তোমাকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। রীমেম্বার দেট ইউ আর অনলী মাই আন্টি, নট মাই মাদার।

আজ নেহাৎ আমার মামণি আর বাবাই একটা কার অ্যাকসিডেন্টে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে নাহলে আই ডোন্ট নিড ইউ। ইনফ্যাক্ট আমার এখনও তোমাকে দরকার নেই। আই এম এনাফ ফর মাইসেলফ। ইউ আর নাথিং টু মি। সো ডোন্ট ট্রাই টু বি স্মার্ট উইথ মি অ্যান্ড ডোন্ট ট্রাই টু অ্যাক্ট লাইক এ মাদার। ইউ আর অলওয়েজ মাই আন্টি ফর মি…. ‘ বলেই রাগে গজগজ করতে করতে সানাহ্ ধুপধাপ পায়ে কাঠের সিড়ি বেয়ে উঠে গেলো।

সানাহ্ যখন রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এতগুলো কথা শুনাচ্ছিল তখনও মিসেস কায়নাত ভাবতে পারেননি সানার কাছে সে আজও মা হতে উঠতে পারেনি। আজও সে সানার সো কল্ড মাসীই রয়ে গেলো। যদি শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় তাহলে নিজে জন্ম না দেওয়া সানাহ্কে যখন নিজ হাতে বড় করলেন তখন উনি কি ? উনি কি শুধুই ওর আন্টি ? কেন আজও উনি সানার কাছে তার মাসীই রয়ে গেলেন ? উত্তর জানা নেই মিসেস কায়নাতের..…

সানাহ্ উঠে যেতেই মিসেস কায়নাত দিশা হারিয়ে দাড়ানো থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন। সানার কথা শুনে উনার মাথা ঘুরাচ্ছে। এসব কি বলে গেলো মেয়েটা ? মেয়েটার কাছে কি তবে সে ব্যর্থ মা ? আর কি করলে সে তার মেয়ের কাছে একজন ভালো মা হতে পারবে সেটা মিসেস কায়নাতের জানা নেই। তবে এবার আর মেয়ের মন পাওয়ার জন্য কিছু করার শক্তিও নেই মিসেস কায়নাতের। তবে কি উনার মন অবহেলা পেয়ে পেয়ে মরে গেছে ?

মিসেস কায়নাত যখন চেয়ারে বসেই আপনমনে নিজের ব্যর্থতার গণনা করছিলেন তখনই ধুপধাপ আওয়াজ করে সিড়ি দিয়ে নেমে এলো সানাহ্। দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছে কারণ ইতিমধ্যেই তার বেশভূষা বদলে গেছে। পরনে একটা কফি কালারের কুর্তি উইথ কফি অ্যান্ড ব্ল্যাক কম্বিনেশন কোটি আর ব্ল্যাকিশ ব্লু রংয়ের জেগিনস। পায়ে নেভি ব্লু স্নিকার্স আর গলায় অফ হোয়াইট স্কার্ফ। সব মিলিয়ে যেন সানাহ্কে কোনো অপ্সরীর থেকে কম মনে হচ্ছে না। মন মেজাজ খারাপ হওয়ায় সানাহ্ একবারের জন্যও মিসেস কায়নাতকে কোথায় যাচ্ছে সেটা বলে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করলো না।।সোজা হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো।

রিকশায় করে বসুন্ধরা সিটি মলের সামনে এসে দাঁড়ালো সানাহ্। রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে রিকশাওয়ালাকে মুক্ত করলো। রিকশাওয়ালা ধুলা উড়িয়ে চলে যেতেই মুক্ত বাতাসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মলে ঢুকলো সানাহ্। এলিভেটর দিয়ে আট তলায় উঠলো। আট তলায় পৌঁছেই আইস স্কেটিং সেক্টর খুজে বের করলো। তারপর নির্ধারিত জায়গায় নিজের ব্যাগ রেখে এক ঘণ্টার জন্য পে করে আইস স্কেটিং করতে নিজেকে প্রস্তুত করলো।

এটাই হয়ে এসেছে সবসময়। সানার যখনই তীব্র রাগ উঠে কিংবা নিজেকে অসহায় মনে হয় তখনই সে প্রচন্ড মরিচ দিয়ে ঝাল ফুচকা খায় কিংবা বসুন্ধরায় স্কেটিং করতে চলে এসেছে। স্কেটিং শিখেছে সেই ছোটবেলায় তার মামনির তত্ত্বাবধানে। তখন এসব ভালো লাগতো না কিন্তু ওর মামণি জোর করেই এসব করাত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে এই স্কেটিংই তার নিজেকে ঠিক রাখার রসদ।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here