প্রেমাসক্তি’ পর্ব-১

0
12465

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part-1

বিশাল এক পাব রেস্টুরেন্ট এ বসে বিয়ার খাচ্ছে নীলিমা।
রোজকার অভ্যাস তার , এটাই তার জীবন।
কালো জিন্স প্যান্ট এর সাথে ব্লু কালার জিন্স এর শার্ট , হাতা টা ভাজ করে মুরানো।
পায়ে কালো সু হাতে স্টিল এর ব্রেইসলেইট।
একের পর এক গ্লাস করে বিয়ার খেয়েই যাচ্ছে নীলিমা।

রাত 10 টা বেজে গেছে।
পাবের বিশাল ঘড়িটা জানান দিচ্ছে যে এখন এই পাব বন্ধ করে দেওয়া হবে।

নীলিমা মুখের কোনে তাচ্ছিল্যর হাসি রেখে আর ও এক গ্লাস বিয়ার নিয়ে একদমে খেয়ে নিলো।
আজব হলে ও সত্য যে এতো বিয়ার খাওয়ার পর ও এই মেয়েটার নেশা ধরে না।
নীলিমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলল কাউন্টারে।
কাউন্টারে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বলল
– হোয়ার ইজ ইওর ম্যানেজার ?

কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা হালকা ঢোক গিলে বলল
– ম্যাম স্যার একটু বাইরে গেছেন।
একটু পর ই এসে পরবেন।
আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি স্যার কে ইনফর্ম করছি,, প্লিজ ম্যাম সিট ।

নীলিমা কোনো কথা ছাড়াই টেবিলে রাখা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ডেস্কের উপর জোড়ে বাড়ি দিয়ে দিলো।
বিয়ারের বোতল সম্পূর্ণ ভেঙে কতো গুলো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো, সাথে তরল পদার্থ মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল।

বোতল ভাঙার শব্দে কাউন্টারে থাকা লোকটা চমকে তাকালেন।
যেহেতু গান বাজছিলো না , আর সবাই নীরবতার সঙ্গে যে যার কাজ করছিলো তাই বোতল ভাঙার শব্দ টা দ্বিগুণ গতি তে ছড়ালো।
ম্যানেজার পাবের মেইন ডোরের বাইরেই ছিলেন , এতো জোড়ে শব্দ শুনে হনহনিয়ে পাবে প্রবেশ করলেন।
আশে পাশের সবাই নীলিমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু এতে যেন নীলিমার কোনো কিছু যায় আসেই না।
কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা নীলিমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে , তার মাথায় আসে না , একজন মানুষ রোজ এতো বিয়ার খায় তা ও তার নেশা হয় না।
বিগত চার বছর ধরেই নীলিমা বিয়ার খেয়েই যাচ্ছে, ডেস্টপারেট হয়ে গেলে নাকি ড্রাগ ও নিতে যায়। কিন্তু কি ভেবে যেন আবার নেয় নাহহ।
ম্যানেজার কোনো মতে কপালে থাকা সূক্ষ্ম ঘাম টুকু মুছে নিয়ে নীলিমার সামনে এসে দাড়ায়।
দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলেন
– আম সরি ম্যাম।

নীলিমা কিছু না বলে টেবিলের উপর রাখা বিয়ারের বোতল থেকে আর ও এক গ্লাস বিয়ার ঢালতে ঢালতে বলল
– বিল কতো হয়েছে?

ম্যানেজার হাতে একটা নোট নিয়ে বললেন
– চেক করে বলছি ম্যাম। একটু সময় দিন প্লিজ,,,

ম্যানেজার কে কোনো রকম উত্তর না দিয়ে নীলিমা আপন মনে বিয়ার খেতে লাগল।
সে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করে না।
নিজের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে না নীলিমা। মনে হয় শুধুমাত্র কষ্ট ই তার অস্তিত্ব,, জীবনে সুখ , শান্তি , সমৃদ্ধি বলতে কিছুই নেই।
যা আছে তা সব ই দুঃখ,,, এই সব ভাবতে ভাবতে ই নীলিমা ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যর হাসি ফুটিয়ে নিলো।
এক দম এ গ্লাসের সবটুকু বিয়ার ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো।

এখনো সবাই তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে নীলিমার দিকে।
সবাই বোধহয় জোক্স ই দেখতে,,,
অবশ্য তাকে কে কি ভাবে এতে নীলিমার বিন্দু মাত্র কোনো ইন্টারেস্ট ই নেই।

ম্যানেজার নোট চেক করে বললেন
– ইটস 13200 ম্যাম।

নীলিমা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলল
– আপনাদের আজাদ চৌধুরী স্যার এর থেকে নিয়ে নেবেন।

এই বলেই বোতল থেকে আরেক টুকু বিয়ার গ্লাসে নিয়ে এক ঢোকে খেয়ে গটগট করে পাব থেকে বের হয়ে গেল।

ম্যানেজার এক দৃষ্টি তে নীলিমার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলেন।
নীলিমার এভাবে যাওয়াতে ম্যানেজার বিন্দু মাত্র অবাক হলো না।
কারন বিগত চারটি বছর ধরেই এমন হচ্ছে, নীলিমা রোজ বিল কতো জিজ্ঞাসা করে কিন্তু নিজ হাতে কখনোই বিল পে করে নি।

নীলিমা চলে গেলে ম্যানেজার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন।
অদ্ভুত এ দুনিয়া , কতো রঙের মানুষ দেখলেন ওনি কিন্তু নীলিমার মতো এমন রহস্যময়ী কাউকে দেখেন নি ওনি।
__________________

নীলিমা পাব থেকে বেরিয়ে আসলেই ড্রাইভার এসে বলল
– ম্যাম আমি ড্রাইভ করে নিয়ে যাই ?

নীলিমা ড্রাইভার কে একবার চোখের পলকে দেখে গাড়ি তে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে করতে চলে গেল।
কখনোই সিট বেল্ট লাগায় না নীলিমা।

ড্রাইভার নীলিমার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে চেয়ে থাকলো।
যতক্ষণ পর্যন্ত নীলিমার গাড়ি দেখা গেল ড্রাইভার চেয়ে ই থাকলো।
নীলিমার গাড়ি চক্ষু দৃষ্টির আড়াল হতেই ড্রাইভার পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে চলে গেল।

নীলিমার বাবা ড্রাইভার কে রোজ পাঠান।
তিনি জানেন তার মেয়ে কখনোই ড্রাইভার কে ড্রাইভ করতে দিবে না।
কিন্তু যদি কখনো ড্রাইভার কে প্রয়োজন পরে তাই বিগত চারটি বছর ধরেই ড্রাইভার আসে কিন্তু নীলিমা একাই ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরে।

নীলিমা গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে আসতেই দাড়োয়ান গেট খুলে দিলো।
নীলিমা বাসার ভেতরে গিয়ে পার্কিং এ পার্ক না করে বাসার ভেতরে রাস্তাটিতেই রেখে দিলো।
বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতে হয় না নীলিমার, তার আগেই নীলিমার মা দরজা খুলে দেন।
আজ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি নীলিমাকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখেই নীলিমার মা মিসেস চৌধুরী বাড়ির মেইন ডোর খুলে দাড়িয়ে আছেন।
মা কে দেখে নীলিমার ভেতর থেকে সামান্য দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।
কিন্তু কিছু বলার ইচ্ছে বা পরিস্থিতি কিছুই নেই।
নীলিমা হাতে থাকা কোর্ট টা দরজার কাছে ফেলে রেখে গটগট করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলে।

নীলিমার মা মেয়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন।
মেয়ে চলে গেলে মেইন ডোর বন্ধ করে আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদলেন।
এটা ওনার রোজকার কাজ, চারটে বছর ধরে সব কিছুই একই ভাবে হয়ে চলছে।
মনে হয় হাইলাইট করে সমস্তটা ফিরে দেখানো হচ্ছে।
চারটে বছর ধরে একই ঘটনা ঘটে চলছে।

‘ রিভেঞ্জ অফ নেচার ‘

চলবে

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন।
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র :ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

⛔ আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ। আশা রাখছি এই গল্প থেকে 2000 ফলোয়ার পাবো।
সবার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো। আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here