প্রেমাসক্তি’ পর্ব – ২০

0
4830

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part – 20

রবিন হসপিটাল থেকে নিজের কোয়ার্টারে ফিরেছে মাত্র।
ফোনের চার্জ টা অব্দি নেই কাল সারা রাত ডিউটি করে সকাল আট টার সময় ছাড়া পেয়েছে সে।
শরীর বেশ মেজ মেজ করছে , আপাতত লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়া দরকার তাই ওয়াসরুমে চলে গেল।
ওয়াসরুমে যেতে না যেতে বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।
রবিন ভ্রু কুঁচকে বের হয়ে আসলো , এই অসময়ে কে আসতে পারে ?
রবিন গলায় ট্রাওয়াল পেঁচিয়ে মেইন ডোর খুলল।
সঙ্গে সঙ্গে দুটো মানবী হাউউউ করে উঠলো।
আচমকা এমনাটা হওয়ায় রবিন খানিক টা ছিটকে পরলো।
রবিনের কান্ড দেখে চার জন গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো।
রবিন মহুয়া আর সিনথির দিকে রাগি লুকে তাকাতেই দুটো তে হাসি থামিয়ে একযোগে মুখ গোমড়া করে বলল
– রবিন ভাইয়া সব এই ইথি আপুর কারসাজি।
আমরা কি এমন করতে পারি বলো ?

রবিন ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে।
রবিনের ইচ্ছে হচ্ছে চার জন কেই ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিতে।
রবিন মহুয়া আর সিনথি র কান ধরে বলল
– কিহহহ সব ইথির প্ল্যান ছিলো ?
আমায় বোকা পেয়েছিস ?
সব তোরা চার জন মিলেই করেছিস।
আমি খুব ভালো করেই জানি।

তন্ময় বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে ছিলো।
রবিনের কথায় কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে তাকালো, সে তো এই সবের মধ্যে ছিলোই নাহহ।
রবিন কে ঠেলে তন্ময় বাসায় ঢুকে বলল
– আমি এই সব লো কোয়ালিটির আইডিয়াতে পার্টিসিপেট করি নাহহ।

রবিন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে কিছু বলতে গেলেই তন্ময় সোফার কুশন রবিনের দিকে ছুঁড়ে বলল
– আমি যদি প্ল্যান এ থাকতাম তাহলে বাদুরে রঙ এনে তোর মাথায় ফেলতাম বেয়াদব।

রবিন কুশন ক্যাঁচ ধরে নিলে ও দমার পাত্র নয় সে।
উল্টো আরো দুটো কুশন নিয়ে এক নাগারে তন্ময়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো।
তন্ময় দু হাতে আটকিয়ে বলল
– আরে ভাই থাম , পাগল টাগল হলি নাকি।
ডাক্তার হয়ে ও এমন পাগলামি করলে আমাদের মতো রোগীদের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে যাবে।

রবিন আর তন্ময়ের কান্ড দেখে ইথিনা , মহুয়া আর সিনথি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

সিনথি খানিকটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলল
– এই তোমরা থামবে প্লিজজজ।

সিনথির চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে গেল যেন মাথার উপর বাজ পরেছে।
সিথনি চারদিকে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো সবাই হা হয়ে গেছে।
সিনথি কে কি জোকার এর মতো লাগছে নাকি?
সিনথি কাঁদো কাঁদো হয়ে চুল মুখ সব কিছু ঠিক করতে লাগলো।
সিনথির এমন কান্ডে সবাই যে যেখানে ছিলো সেখানে ই হাসতে হাসতে বসে পরলো।

সিনথি রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
– রবু ভাইয়া আমার খিদে পেয়েছে নাস্তা করে আসে নি।
এখন তাড়াতাড়ি খাবার দাও তো।

রবিন মাথা চুলকিয়ে বলল
– সিনথু এই বাসাতে খাবার পাবি না। হালকা ড্রাই ফুড আছে।
আর হাইজিনিং রেসটুরেন্ট কয়েক কিলোমিটার দূরে।

সিনথি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
– হোয়াট

তন্ময় ভাবলেশহীন ভাবে বলল
– ডোন্ট ওরি নিচে সুপার শপ আছে , সেখান থেকে কিছু একটা নিয়ে আয়।
আমি রান্না করে দিবো

তন্ময়ের কথায় সবার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
ইথিনা তন্ময়ের কাছে এসে আগা গোড়া পরখ করে বলল
– দ্যা গ্রেট তন্ময় আবরার রান্না করবে?
হাউ ?

তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– ইটস নরমাল ইথিনা।

মহুয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
– অবশ্যই পারবে , দেখতে হবে না জিজু টা কার।

সবাই জোড় গলাতে হাসতে লাগলো ,তন্ময় কিছু বলল না ।

তন্ময় মৃদু স্বরে বলল
– রবিন জিনিস গুলো অর্ডার করে দে ।

রবিন মাথা ঝাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে কি কি লাগবে অর্ডার করে দিলো।

তন্ময় ব্যলকনিতে গিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিলো।
আপন মনে ভাবতে লাগলো তন্ময় আবরার হয়ে ও সে আরিফুল আরিয়ান।
শুধু মাত্র একটি মানুষের কাছে আরিফুল আরিয়ান।
আর আরিফুল আরিয়ান সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম ।
কিন্তু তন্ময় আবরার , সে তো পারছে না সামাল দিতে।
কারন তন্ময় আবরার কে ঘিরে রয়েছে অনেক গুলো জীবন।
আর আরিফুল আরিয়ান কে ঘিরে শুধু একটি পৃথিবী রয়েছে।
সে পারছে না কোনো পৃথিবী কে ছাড়তে।
কি করে কি করবে তা বুঝতে পারছে না সে।

বুকের ভেতর কেমন কষ্ট হচ্ছে , কাল রাতে নীলিমার ফ্ল্যাট এর কাছে দাড়িয়ে ছিলো প্রায় রাত দুটো অব্দি কিন্তু নীলিমা ব্যালকনিতে আসে নিহহহ।
তন্ময়ের মাথা খারাপ হয়ে যায় , মেয়ে টাকে এক নজর না দেখলে সে পাগল হয়ে যাবে।
তাই ছুটে গিয়ে একটা শপ থেকে কিছু চকলেট আর ফুল নিয়ে আসে।
রাত তিনটের দিকে তন্ময় নীলিমার ফ্ল্যাট এ কলিং বেল বাজায়।
নীলিমা বোধহয় ডয়িং রুমে ই ছিলো তাই সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেয়।
তন্ময় দু বার কলিং বেল চেপেই আড়ালে সড়ে গিয়েছিলো।
তন্ময় আড়াল থেকে নীলিমা কে দেখতে লাগল।
নীলিমার হাতে বেশ ধারালো নাইফ , দেখে মনে হচ্ছে সেফটির জন্য এনেছে ।
এতো রাতে কেউ তো কোনো ভালো চিন্তা নিয়ে আসবে নাহহ।
পড়নে ধিলা ধালা হাফ হাতার শার্ট আর প্লাজু।
চুল গুলো এলো মেলো, ঠোঁটের কোনে খানিকটা রক্ত , বোধহয় ছিলে গেছে।
চোখ দুটো লাল , পানি তে টুইটুম্বর , দেখে মনে হচ্ছে কান্না করেছে।
নীলিমার এমন অবয়ব দেখে তন্ময়ের মনে হলো বুকে যেন কেউ তীর ছুড়ে দিয়েছে।
তন্ময়ের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি কখন গড়িয়ে পড়েছে তাহ বুঝতে ও পারে নি সে।

নীলিমা দরজার কাছে চকলেট আর ফুল দেখে অবাক হলো।
নীলিমা তাচ্ছিল্য হেসে ফুল গুলো কে পা দিয়ে পিসতে গিয়ে ও পারলো না।
কেন যেন খুব বেশি ই আকর্ষণ করছে তাকে।
নীলিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুল গুলো হাতে তুলে নিলো।
ফুল গুলো হাতে নিতেই তার হাত কাঁপতে শুরু করলো।
চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগলো , নীলিমা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে দ্রুত ফ্ল্যাট এ চলে যায়।

তন্ময়ের বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা করে উঠলো।
নিশ্চয়ই সারা রাত মেয়ে টা এভাবেই কাঁদবে, তন্ময় চোখের কোন থেকে পানি মুছে নিয়ে নিজের বাসায় চলে আসলো,, সারা রাতে চোখের পলক এক করতে পারে নিহহহ সে।

রবিনের ডাকে ঘুরে তাকালো তন্ময়।
রবিন দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– এতো ভাবিস নাহহহ, যাহহ সব কিছু এসে গেছে, কি করবি তা কর।

তন্ময় কোনো প্রতিক্রিয়া না করে ডয়িং রুমে চলে আসলো।
রবিন লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল।

তন্ময় ডয়িং রুমে আসতেই সবাই ওকে ঘিরে ধরলো।
তন্ময় জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাতেই ইথিনা বলল
– তন্ময় এই আটা, চিকেন কিমা , আর ডিম দিয়ে কি বানাবা তুমি?
আর ইউ সিউর তুমি কিছু বানাতে পারবে ?

তন্ময় সব কিছু দেখতে দেখতে বলল
– ইটস ভেরি সিম্পল ইথিনা , এখানে চিকেন কিমা করা আছে সাথে মসলা ও আছে।
সো চিকেন কিমা দিয়ে ভালো করে চিকেন ভাঁজি করে নিবো, সাথে রুটি।
আর ডিম তো বয়েল করে নিলেই হবে ।

আর ফ্রিজ এ ফ্রুডস আছে , তাছাড়া জুস বানানোর প্রয়োজন নেই।
ওরা দু বোতল জুস ও পাঠিয়ে দিয়েছে।
একদম ই সিম্পল এটা ,

ইথিনা বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলে ও তার মাথায় কিছুই ঢুকলো নাহহ।
কারন সে একজন ডক্টর হলে ও রান্না নামক শিল্পকলা কখনো ই শিখে নিহহ।
শুধু গরম পানি করে ব্ল্যাক কফি বানানো ছাড়া।

মহুয়া মাথা চুলকিয়ে বলল
– I understand

সিনথি মুখ কুঁচকে বলল
– হোয়াট, তুই আর রান্না কি করে ?

– দেখ আপু তুমি পারো না দেখে কি আমি ও পারবো নাহহ।
হ্যাঁ কখনো রান্না করি নি তবে , আমি সোসাল মিডিয়া তে রেসিপি দেখি তাই বুঝতে পারি।

ইথিনা হাসতে হাসতে বলল
– এই গুলো হলো ট্যালেন্ট যা সবার থাকে না , শুধু মহু মনির ই থাকে।

মহু একটু ভাব নিয়ে তাকাতেই ইথিনা আর সিনথি এক যোগে বলল
– because মহু মনি হলেন world এর বেস্ট actress.

এই টুকু বলেই দুজন মুখ চেপে হাসতে লাগলো।

ইথিনা আর সিনথি কে এভাবে হাসতে দেখে মহুয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
– আপুহহ প্লিজ।

মহুয়ার ফেস দেখে দুজন চুপ হয়ে গেল।

তন্ময় কিচেনে গিয়ে সব ঠিক ঠাক করতে লাগলো।
ইথিনা কিচেনে গিয়ে বলল
– তন্ময় আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি ?

তন্ময় চিকেন কিমা মাখতে মাখতে বলল
– তুমি পারবে না ইথিনা , আর আমার সমস্যা ও হবে নাহ।
আমি একাই পারবো ,

কিন্তু ইথিনা মানতে নারাজ সে হেল্প করবেই করবেই।
তন্ময় আর কিছু বলল নাহহ , মহুয়া আর সিনথি বলল
– আমরা rooftop এ গেলাম।

তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– যাও তবে সাবধান এই ছাঁদে রেলিং নেই।
তোমরা দুজন তো বাচ্চা দের মতো লাফালাফি করো।

ইথিনা হাসতে হাসতে বলল
– আরে তাতেই বা কি ,অতো ও ছোট নয় ওরা।
প্রতিউত্তরে তন্ময় কিছু বলল না দেখে ইথিনা খানিক টা কষ্ট পেল।
তন্ময় বরাবর ই মেয়েদের সাথে ঘেঁষাঘেষি, বেশি কথা বলা এই সব করে নাহহ।
তবে আজকাল ইথিনা কে ইগনোর ই বেশি করে যার কারন ইথিনা না জানলে ও বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয় তার।

ইথিনা মলিন হেসে ভাবতে লাগলো, ইউ এস এ তে ব্যাক করেই সে বলবে বিয়ের কথা।
এখন আর চার মাস দেরি করা যাবে নাহহহ।

তন্ময় খুব সুন্দর করে ডিম বয়েল করে খোসা ছাড়িয়ে রাখলো।
চিকেন আর মসলা মিসিয়ে ওবেন এ বেক করতে দিলো।
ভাজি করতে চেয়েছিল কিন্তু এতে অনেকটা সময় লাগবে আর এখন যতো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা যায় এতেই মঙ্গল।
বাসায় রুটি মেকার ও নেই তাই রুটি বেলতেই হবে।
রবিন সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরেছে , ট্রাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল
– আরে দোস্ত কি সুন্দর একটা ঘ্রান আসছে।

তন্ময় মৃদু হেসে বলল
– ইটস মাই প্লেজার।

রবিন সোফা তে বসে টিভি অন করবে ঠিক তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।
রবিন মেইন ডোরের দিকে যেতে নিলেই কিচেন থেকে তন্ময় আর ইথিনা চেঁচামেচি করতে লাগলো।
কারন ইথিনা নাকি রুটির ডো মাখবে , ইথিনা বেশ জোড়াজোড়ি করতে লাগলো।
ইথিনা দেখেছে বিভিন্ন সিরিয়ালে নায়ক আর নাইকা আটা নিয়ে হাতাহাতি করতে যায় আর আটা গিয়ে তাদের উপরে পরে।
তারপর একে অপরের আটা পরিষ্কার ও করে দেয়।
হাউ রোমান্টিক,,

রবিন পেছন ঘুরে কিচেন এ তাকিয়ে আবার ডোরের দিকে গেল।
দরজার অপর পাশের ব্যক্তি কলিং বেল বাজিয়েই চলছে যেন কেউ পানির জন্য ছটফট করছে।
রবিন বিরক্তি নিয়ে ডোরের দিকে এগিয়ে আসলো।
রবিন ডোর খুলতেই নীলিমা কে দেখতে পেল।
নীলিমা কে দেখে এক মুহূর্ত থমকে গেল।
নীলিমার শরীর দিয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে।যেন অলিম্পিক এ দৌড় প্রতিযোগিতা করে এসেছে।
চুল গুলো উসকো খুসকো, চোখ ভর্তি পানি চিক চিক করছে।
মুখে অসাধারণ খুশি দেখা যাচ্ছে , সাথে ভয় ওহহ রয়েছে খানিকটা।
কেমন যেন এলোমেলো মুখ , এই মুখ দেখে কোনো কিছুই বোঝা যাচ্ছে নাহহ।
রবিন ব্যস্ত হয়ে বলল
– নীহু কি হয়েছে তোর , এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে ?

নীলিমার গলায় কথা আটকে যাচ্ছে যেন কেউ গলা চিপে ধরেছে।

রবিন নীলিমার হাত ধরে বলল
– এই নীহু কি হয়েছে তোর ?

নীলিমা ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে ভেতরে আসলো ,, রবিনের হাত দুটো ঝাঁকিয়ে বলল
– সুপারম্যান, আমি আমি আজ

রবিন নীলিমার মাথায় হাত রেখে বলল
– শান্ত হো নীহু

নীলিমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে।
নীলিমা ঢোক গিলে বলল
– ভাইয়া আজ আমি এই শহরেই আরিয়ান কে দেখেছি।
আমার আরিয়ান , ভাইয়া ওহহহহহ

এই টুকু বলেই নীলিমা সামনে তাকাতেই নীলিমার চোখ থমকে গেল কারন নীলিমা দেখলো আরিয়ান একটা মেয়েকে দু হাতে ধরে রেখেছে।

নীলিমা আর রবিন যখন কথা বলছিলো তখন কিচেনে ইথিনা আটা নিয়ে লাফালাফি করছিলো , আরিয়ান বাঁধা দিলে ও শুনে নাহহ।
এক পর্যায়ে আটা নিয়ে অন্য দিকে চলে যেতে নিলেই ইথিনা স্লিপ কেটে পরে যেতে নেয়।
কারন মেঝে তে কিছু টা আটা পরে গিয়েছিলো যার কারনে পিছিল হয়ে গিয়েছিলো।
আরিয়ান দু হাতে ইথিনা কে ধরে ফেলে আর তখনি নীলিমার চোখ যায় কিচেনে।
কিচেন ডয়িং রুমের বরাবর আর খোলা হওয়াতে নীলিমা সেই দৃশ্য সরাসরি দেখে।

নীলিমার অবস্থা দেখে রবিন এতো টাই বিচলিত হয়ে গিয়েছিলো যে বাসায় যে তন্ময় আছে তাহহ খেয়াল ই করে নিহহ।

রবিন কপালে হাত দিয়ে দু হাতে চুল খামচে ধরলো।
এ কেমন পরিস্থিতি ক্রিরেট হলো।
এখন কি হবে ?

নীলিমা ধীর গতিতে কিচেনে আগাতে লাগলো।
চোখ গুলোতে পানি স্পষ্ট, শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে।

তন্ময় ইথিনা কে ছেড়ে বলল
– এখন পরে গেলে কি হতো বলো তো ইথিনা ?
হাত পা ভেঙ্গে বসে থাকতে , তুমি এতো জেদ করছো কেন।

ইথিনা কিছু বলছে নাহহ , ইথিনার বেশ লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে , সে যেমন টা চেয়েছিলো তার থেকে ও বেশি কিছু পেয়েছে।
একেই বলে মেঘ না চাইতেই জল।
তন্ময় বিরক্তি নিয়ে হাত মুছে সামনের দিকে তাকাতেই তন্ময়ের চোখ জোড়া থমকে গেল ।
নীলিমা এখানে, এটা কি করে সম্ভব ?
তন্ময়ের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, এ কেমন পরিস্থিতি হলো , তারউপর একটু আগে ইথিনার সাথে ,,, তন্ময় আর ভাবতে পারছে না।
বুক টা কেমন ধিম ধিম করছে, যেন এখন ই তার হার্ট বিট থেমে যাবে।

রবিন ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।
তন্ময়ের মুখের অবস্থা ও একদম করুন।

ইথিনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তন্ময় কে এভাবে তাকাতে দেখে ইথিনা ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকালো।
সামনে তাকিয়ে নীলিমা কে দেখে তার শ্বাস আটকে গেল।
তার মনে বাসা বেঁধে গেল তন্ময় কে হাড়ানোর ভয়।
ইথিনার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।
ইথিনা চোখের পানি মুছে নিয়ে ভাবলো নাহহ তন্ময়ের তো কোনো স্মৃতি মনে নেই , তাহলে সে কেন ভয় পাচ্ছে ?
নীলিমা ধীর গতিতে আগাতে আগাতে একদম কাছে চলে এসেছে , তন্ময়ের দৃষ্টি স্থির।
নীলিমা আর তন্ময়ের দূরত্ব এক হাত, ইথিনা তন্ময়ের পাশে দাড়িয়ে আছে।
নীলিমার দৃষ্টি শুধু তন্ময় কে দেখছে , দু চোখ ভরে দেখছে।
যেন এ দেখাই শেষ দেখা , কিংবা এখানে দৃষ্টি বদলের প্রতিযোগিতা চলছে।
নীলিমার মাথা কাজ করছে নাহহহ সে শুধু তার আরিয়ান কে দেখতে ব্যস্ত।
নীলিমার ঠোঁট দুটো কাঁপছে, ঠোঁটের কোনে লেগে আছে ক্ষীন হাসি।
চোখের পানি গুলো বলে দিচ্ছে তার মনের মধ্যে কি চলছে।
আরিয়ান কে দেখছে সে , আরিয়ান তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
তার আরিয়ান বেঁচে আছে ?

নীলিমা তন্ময়ের কাছে গিয়ে অস্ফুটন স্বরে বলল
– আরিয়ান ,

তন্ময়ের বুক টা কেঁপে উঠলো, মেয়েটার ডাক যেন হুংকার দিয়ে কানে বেজে উঠছে ।

ইথিনা তন্ময়ের হাত আঁকড়ে ধরলো যেন ছেড়ে দিলেই হাড়িয়ে যাবে।
তন্ময় কোনো কথা বলছে নাহহহ , নীলিমা কাঁপা কাঁপা হাতে আরিয়ান কে স্পর্শ করলো।
এই তো সেই মানুষ টা যাকে একটু ছোঁয়ার জন্য নীলিমা পাগল হয়ে গেছে।
যার মুখ দেখার জন্য নীলিমা পথ চেয়ে আছে।
যদি ও সে জানতো সেই পথ ছিলো অসম্ভব ।
নীলিমা আরিয়ান এর হাত কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্পর্শ করে ছেড়ে দিলো।
নীলিমার বুক টা ফেটে যাচ্ছে , কেন জানি প্রিয় মানুষটাকে দেখে ও যন্ত্রণা বেড়ে গেছে।
নীলিমা আবার আরিয়ানের হাত স্পর্শ করলো।
নাহহহ এটা সত্যি এটাই তো আরিয়ান।
নীলিমা আরিয়ান কে মাথা থেকে পা অব্দি দেখে নিয়ে বলল
– আরিয়ান কথা বলছো না কেন ?

এই টুকু বলেই নীলিমার চোখ গেল আরিয়ানের বা হাতের দিকে।
একটা মেয়ে আরিয়ানের হাত আঁকড়ে আছে।
নীলিমা ভ্রু কুঁচকে মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখলো ইথিনা নীলিমার হাত ধরে আছে।
নীলিমার মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে নাহহ।
শরীরের নিউরন গুলো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
অনুভূতি গুলো কেমন পানসে হয়ে যাচ্ছে।

নীলিমা আরিয়ানের হাত ধরে বলল
– কি হলো আরিয়ান ?

তন্ময়ের মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে সে এখন কি করবে ?
কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দিবে?
নীলিমা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন আরিয়ান নীলিমা কে জড়িয়ে বলবে নীলি এই তো আমি ।
কিন্তু কি আশ্চর্য আরিয়ান কোনো উত্তর দিচ্ছে নাহহহ।
নীলিমা আরিয়ানের দু বাহু ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে বলল
– কথা বলছো না কেন ?
এই আরিয়ান কথা বলছো না কেন ?
আমি আমি তোমার নীলি,

তন্ময় ঠোঁট কামড়ে দাড়িয়ে আছে।

নীলিমা কোনো উত্তর না পেয়ে তন্ময় কে ছেড়ে খানিকটা পিছিয়ে গেল।
সে ভাবতে পারছে না কিছু ,

নীলিমার রাগ হচ্ছে খুব, সাথে চাঁপা অভিমান ও , কেন এমন করছে আরিয়ান।
নীলিমা আরিয়ানের শার্ট এর কলার ধরে বলল
– কথা বলছো না কেন তুমি?

ইথিনা নীলিমার হাত ছাড়িয়ে বলল
– নীলিমা ওহহহ তন্ময়, তুমি ওর সাথে এমন ব্যবহার করছো কেন ?

ইথিনার কথায় নীলিমা থমকে দাঁড়ালো।
তন্ময় কে তন্ময়?

নীলিমা চোখের পানি দু হাতে মুছে নিয়ে বলল
– কে তন্ময় ?

ইথিনা আরিয়ান কে দেখিয়ে বলল
– ওহহহ তন্ময়, আই থিংক তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।

নীলিমা আরিয়ান কে একনজরে তাকিয়ে দেখে বলল
– ভুল, আমার ভুল হবে ?
আমি আমার আরিয়ান কে চিনতে ভুল করবো ?

নীলিমা আরিয়ানের দু বাহু ঝাঁকিয়ে বলল
– কি হয়েছে তোমার কিছু বলছো না কেন?
ওহহহ কি বলছে তুমি তন্ময়?
ওকে বলো তুমি কোনো তন্ময় নও তুমি আমার আরিয়ান।
কি হচ্ছে বলছো না কেন ?

তন্ময় এখনো চুপ করে দাড়িয়ে আছে ।

ইথিনা খানিক টা রেগে বলল
– Nilima I think you
need a cycologist.

নীলিমা কিছু বললো না, ছলছলে নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ইথিনা তন্ময়ের হাত ধরে বলল
– তন্ময় চলো আমরা বাড়ি ফিরে যাবো।

নীলিমা তন্ময়ের হাত ধরে বলল
– ওহহ কোথাও যাবে নাহহ।

ইথিনা নীলিমার থেকে তন্ময়ের হাত ছাড়িয়ে বলল
– ডোন্ট টাচ হিম।

নীলিমা তন্ময়ের দিকে তাকালো কিন্তু তন্ময় কোনো রেসপন্স করলো নাহহ।

নীলিমা পেছন ঘুরে দেখলো রবিন দাড়িয়ে আছে।
রবিনের হাত ধরে বলল
– ভাইয়া ওহহহ তো আমার আরিয়ান ।
কিন্তু ও কথা বলছে না কেন ?
কেন বলছে নাহ ওহ আরিয়ান,,

রবিন নীলিমার মাথায় হাত রেখে বলল
– নীহু শান্ত হ,, তোর শরীর ভালো নেই।

নীলিমা রবিনের হাত ছাড়িয়ে বলল
– তোমার ও মনে হয় আমার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন ?

রবিন কিছু বলল না , তন্ময় সহ ইথিনা অবাক হলো নীলিমা রবিন কে ভাইয়া বলায় আর রবিন নীলিমা কে নীহু বলে ডাকায়।
কিন্তু এই মুহূর্তে দুজনের কেউ ই তা গাঁয়ে মাখলো নাহহ।

নীলিমা তন্ময়ের হাত ধরে চিৎকার করে বলল
– কথা বলো না কেন তুমি ?
কি হয়েছে তোমার?
আমার সাথে রাগ করছো ?
আই প্রমিস আমি কখনো তোমাকে ছাড়বো নাহহ।
প্লিজ কিছু তো বলো ?

নীলিমা কথা গুলো বলতে বলতে তন্ময়ের বুকে মাথা রাখলো।
ইথিনার খুব রাগ হলো সাথে খুব কষ্ট ও হচ্ছে ।

ইথিনা তেড়ে গিয়ে তন্ময়ের বুক থেকে নীলিমার মাথা সরিয়ে বলল
– হোয়াট ননসেন্স।
তুমি ওর গায়ে পরছো কেন?

নীলিমা স্তব্ধ হয়ে গেল।
আরিয়ানের বুকে মাথা রাখার জন্য কোনো অনুমতি লাগবে তা কখনো ভাবতে ও পারে নি নীলিমা।

তন্ময় চোখ খিচে ইথিনার কথা গুলো হজম করে নিলো।

ইথিনা তন্ময়ের হাত ঝাঁকিয়ে বলল
– তন্ময় তুমি ওকে বলো তুমি কোনো আরিয়ান নও।
তুমি তন্ময় আমার তন্ময়,,

তন্ময় কিছু বলছে না দেখে ইথিনা ভাইলেন্ট হয়ে গেলো।
তন্ময়ের হাত ধরে চিৎকার করে বলল
– তুমি বলছো না কেন তন্ময়?
তুমি ওকে বলো তুমি আমার তন্ময়, তুমি কোনো আরিয়ান নও।

তন্ময় কিছু ই বললো নাহহহ , ইথিনা পাগলের মতো করতে লাগলো।
ইথিনা কে এই রকম হতে কেউ ই দেখে নি , রবিন ছুটে এসে ইথিনা কে আটানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সে পারছে নাহহ।

তন্ময় ইথিনা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল
– ক্ল্যাম ডাউন ইথিনা, এমন পাগলামি কেন করো ?

তন্ময়ের একটা কথা যেন ইথিনা কে শান্ত করে দিলো।
ইথিনা তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বললো প্লিজ তন্ময় তুমি বলো ওকে ,তুমি বলো তুমি তন্ময় ।

তন্ময় না চাইতে ও ইথিনার মাথায় হাত রেখে বলল
– শান্ত হও , হ্যাঁ আমি তন্ময়।

নীলিমা এতোক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব দেখছিলো।
আরিয়ান যখন বলল সে তন্ময় তখন নীলিমা মুখ তুলে তাকালো।

নীলিমার চোখ গুলো থমকে গেছে।
ইথিনা তন্ময়ের বুক থেকে মাথা সরিয়ে বলল
– নীলিমা শুনেছো তুমি ওহহ আমার তন্ময় ওও আরিয়ান নয়।
আমার মনে হয় এখন তোমার কোনো প্রশ্ন নেই, থাকার কথা ও নয়।

নীলিমা কিছু না বলে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে গেল।
আরিয়ানের হাত স্পর্শ করতেই ইথিনা হাত ছাড়িয়ে দিলো।
নীলিমা আবার ধরতে গেলে ইথিনা বলল
– ডোন্ট টাচ হিম।
আমি আমার উডবি কে টাচ করার পারমিশন দিই নি তোমায়।

নীলিমা কিছু বলল না ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ানের দৃষ্টি সে বুঝতে পারলো নাহহ।
রবিন নীলিমার মাথায় হাত রাখতেই নীলিমা পেছন ঘুরে তাকালো।
রবিন নীহু বলে ডাকতেই নীলিমা উচ্চ শব্দে হাসতে লাগলো।
নীলিমা হাসতে হাসতে বলল
– বোকা নীলি , আমি তো ভুলেই গেছি চার বছর আগে গুলি লেগে পাহাড় থেকে পরে গিয়ে আমার আরিয়ান মরে গেছে।
মরে গেছে আমার আরিয়ান

এই কথা টা তন্ময়ের বুকে গিয়ে বিধলো।
তার পা গুলো কাঁপছে, নীলিমা হাসতে হাসতে বলল
– নেই আমার আরিয়ান , আর কে ই বা নীলি , চার বছর আগেই তো দুজন মরে গেছে।

রবিন নীলিমা কে ধরতে গেলে নীলিমা হাত উঁচু করে বাধা দিলো।
রবিন ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে।
বোনের কষ্ট তাকে শেষ করে দিচ্ছে।
নীলিমা হাসতে হাসতে মেইন ডোর দিয়ে বেরিয়ে গেল।

ইথিনা তন্ময়ের হাত ধরে বলল
– তন্ময় আমরা আজ ই ইউ এস এ তে চলে যাবো।

তন্ময়ের কোনো ভাবান্তর হলো নাহহ ।
ইথিনা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল , যেন কোন যন্ত্রমানব।

রবিন ছলছলে নয়নে হাঁটতে লাগলো।
ইথিনা গাড়ি তে উঠে তন্ময়ের হাত ধরে টানতে লাগলো।
কিন্তু তন্ময়ের পা যেন কেউ ধরে রেখেছে।
ইথিনা বের হয়ে বলল
– তন্ময় চলো ।

তন্ময় এক পলক ইথিনার দিকে তাকিয়ে ছলছল নয়নে রবিনের দিকে তাকালো।
দুজন কি করবে জানে নাহহহ ।
কেউ ই কিছু বুঝতে পারছে নাহহ।

তন্ময় ইথিনার হাত ছাড়াতেই ইথিনা বলল
– তন্ময়।
তন্ময়ের কান অব্দি সে শব্দ গেলো নাহহ।
তন্ময় রবিনের দিকে এগিয়ে বলল
– কিছু বলছিস না কেন ?
কি করবো আমি ?
আমি পারছি নাহহহহ আর , নীলি কাঁদছিলো , আমি ওকে টাচ অব্দি করি নি।
আমার নীলির কষ্ট হচ্ছিলো , আমি কিছুই বলতে পারি নি।

আমি পারছি না আর , তন্ময় আবরার পারছে না আর।
আই কান্ট রবিন , আই কান্ট

রবিন কিছু বললো নাহহ , তন্ময় রবিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাস্তার ধার দিয়ে দৌড়াতে লাগলো।
রবিন ও তন্ময়ের পিছু পিছু ছুট লাগালো।

ইথিনা মাথা চেপে ধরে বসে পরলো।
চিৎকার করতে লাগলো, তার বুকটা কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নিশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে সে , তন্ময় চলে গেল তাকে ফেলে ভাবতেই ইথিনার বুক টা ফেটে যাচ্ছে ।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেজ এ ফলো দিয়ে রাখুন ।

https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here