প্রেমাসক্তি’ পর্ব – ২৬

0
4706

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part – 26

নীলু মা কাদিস নাহ আর , তুই কাঁদলে ফুপির কষ্ট হয় তো।
মিসেস মাহমুদের কথা তে নীলিমা ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– ফুপি কেন চলে গিয়েছিলে আমায় ছেড়ে?
আমি কি বলেছিলাম যেতে , আমার কথা টা একবার ভাবলে নাহহ ?

আলতাফ মাহমুদ চোখের চশমা টা খুলে বললেন
– নীলু তুই তো জানিস ই সব টা।
কিছু করার ছিলো না আমাদের।

নীলিমা মিসেস মাহমুদ কে জড়িয়ে বলল
– আর ছেড়ে যাবা নাহহ।

মিসেস মাহমুদ নীলিমার চোখ নিজের আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিলেন।

তন্ময় এসে নীলিমা কে বলল
– নীলি , রুমে চলো সাওয়ার নিবে।

নীলিমা মাথা ঝাকিয়ে তন্ময়ের সাথে চলে আসলো।
নীলিমা এখনো কাঁদছে , তন্ময় নীলিমা কে বেডে বসিয়ে দিলো।
তারপর নীলিমার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলল
– এতো কাঁদে কেউ ?
দেখেছো নিজের অবস্থা ?

নীলিমা মুখ ঘুরিয়ে কাঁদতে লাগলো।
তন্ময় মেঝে থেকে উঠে নীলিমার পাশে বসে পরলো।
নীলিমা তন্ময়ের দিকে তাকাতেই তন্ময় টপ করে নীলিমার চোখে চুমু খেয়ে নিলো।
নীলিমা ভ্যবলার মতো তাকিয়ে রইলো।
তন্ময় হো হো করে হেসে উঠলো।
নীলিমা তন্ময়ের বুকে কিল ঘুসি মেরে হেসে উঠলো।
তন্ময় চোখ মারতেই নীলিমা তন্ময়ের বুকে মাথা রাখলো।

ইথিনা করিডোর দিয়েই যাচ্ছিলো।
হাসির শব্দ শুনে তন্ময়ের রুমের দিকে তাকাতেই দেখলো তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বসে আছে নীলিমা।
ইথিনার চোখ থেকে অনড়গল অশ্রু গড়িয়ে পরলো।
বেশ কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে ইথিনা মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে আসলো।
খুব কষ্ট হচ্ছে তার , বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
এভাবে এতো সহজে কি কাউকে ভোলা যায় ?
বোধহয় যায় নাহহহ

*

নীলিমার বাবা আজাদ চৌধুরী চারিদিকে নীলিমা কে খুঁজতে ব্যস্ত কোথা ও নীলিমা কে পাওয়া যাচ্ছে নাহহ।
কেউ হারিয়ে গেলে তাকে খোঁজা যায় , কিন্তু কেউ যখন নিজে থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় তখন তাকে কি পাওয়া যায়?

তন্ময় কিংবা নীলিমা কেউ ই রিক্স নিবে নাহহ।
ওরা ধর্ম মতে বিয়ে করে ইউ এস এ তে চলে যাবে।
তারপর সবাই কে ওদের সম্পর্কে জানানো হবে।
মানুষ পরিবর্তন হলে ও তাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা ঠিক নাহহ।
নীলিমা ও তার বাবা কে বিশ্বাস করবে না।
বাবা যদি মেয়ের সুখ নিয়ে চিন্তা না করে তাহলে সে কেন তাদের কাছে ফিরে যাবে?

টাকা পয়সা ই যদি সব হয়ে থাকে , তাহলে থাকুক তারা টাকা পয়সা নিয়ে।
চার টে বছর যন্ত্রণা সহ্য করেছে ওও আর নাহহ।
আজাদ চৌধুরীর একটা ভুলের জন্য কতো গুলো মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
এবার ওনাকে বুঝতেই হবে , কোন টা ঠিক আর কোন টা বেঠিক।

নীলিমা নিজের রুমে পায়চারি করছে।
একটু আগে ইথিনার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো সে , তখন ইথিনার কান্নার শব্দ নীলিমার বুকের ভেতর যন্ত্রণা সৃষ্টি করে দেয়।
নীলিমা কখনোই চায় নি, তার জন্য কেউ কষ্ট পাক।
কিন্তু আজ কি করবে সে ?
কয়েক টা সান্ত্বনার বুলি ছাড়া কিছুই দিতে পারবে নাহহ ওওহ।

নীলিমা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে নিলো।
তন্ময় ঘরে নেই , বিডি তে বিজনেস এর কিছু কাজের জন্য কোথাও একটা গিয়েছে।

নীলিমা ধীর পায়ে ইথিনার রুমের দিকে গেল।
ইথিনার রুমে গিয়ে দরজায় হালকা করে নক করলো।

ইথিনা চোখ মুখ মুছে ধরা গলাতে বলল
– কে ?
– আপু আমি।
– ওহহ আসো , আসো।

নীলিমা ভেতরে গিয়ে ইথিনার কাছে দাঁড়ালো।
ইথিনা লম্বা করে হাসি দিয়ে বলল
– দাঁড়িয়ে আছো কেন ? বসো ,
নীলিমা হালকা হেসে বসলো ।
ইথিনা যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল
– হঠাৎ এলে যে , কিছু লাগবে ?

নীলিমা মলিন হেসে মাথা ঝাকালো অথার্ৎ কিছু লাগবে নাহহ।
ইথিনা ছোট করে ওহহহ বলে বলল
– আচ্ছা তো , কি নিবে ?
সফট ড্রিক্ অর আইসক্রিম?

নীলিমা সামান্য ভ্রু কুঁচকালো।
ইথিনা হাসি মাখা মুখ নিয়ে কাবাডের একটা পার্ট খুলে আইসক্রিম নিয়ে এসে বলল
– আমার রুমে কাবাডের সাথে লাগানো ছোট্ট একটা ফ্রিজ আছে।
আমি প্রচন্ড লিকুয়েট আর ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাই।
তাই এই আয়োজন , যদি ও এগুলো স্বাস্থ্যকর নয়।

নীলিমা হেসে দিলো , ডক্টররা ও যে আইসক্রিমের উপর এতো দূর্বল তা নীলিমার জানা ছিলো নাহহ।

নীলিমা এক চামচ আইক্রিম মুখে দিয়ে বলল
– আপু তুমি জানো, তুমি কতোটা ভালো ?

ইথিনা সামান্য অবাক হয়ে তাকালো।
নীলিমা আইসক্রিম টা টেবিলে রেখে ধরা গলাতে বলল
– আমার কাছে শুধু মাত্র কিছু সান্ত্বনার বানী ই রয়েছে।

ইথিনা উপরের দিকে চোখ তুলে চোখের পানি আটকালো।

নীলিমা ইথিনার হাতে হাত রেখে বলল
– নিজের ভালোবাসা কে উৎসর্গ করা কতো টা কষ্টের তা এক মাত্র তুমি ই বুঝতে পারবে আপু।
আমরা কেউ ই তোমার মনের সঠিক অবস্থা অনুভব করতে পারছি নাহহ।

– নীলিমা এমন ভাবে বলছো কেন ?
তুমি ই বা কি করতে পারো ?
প্রথম দিকে আমি ও চাই নি তুমি তন্ময় কে ফিরে পাও।
কিন্তু এভাবে হয়তো আমার সাথে তন্ময়ের একটা সংসার হতো কিন্তু ভালোবাসা হতো নাহ ।
তাতে আমরা কেউ ই ভালো থাকবো নাহহ।

নীলিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
– তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না আপু।

ইথিনা চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো নাহহ।
চোখ থেকে বিশ্রামহীন ভাবে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
ইথিনা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
নীলিমা নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে।
ইথিনা অশ্রু মিশ্রিত কন্ঠে বলল
– খুব , খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে আমি আমার ফুসফুস ই হারিয়ে ফেলেছি।
খুব ভালোবাসি ওকে, কিন্তু আমি তন্ময় কে আর চাইতে পারি নাহ।
বিবেক বাঁধা দেয়, বিবেক বলে দুটো হৃদয় কে আলাদা করে সুখ অনুভব করতে পারবি নাহহ তুই।
কিন্তু এখনো কষ্ট হচ্ছে আমার ।

নীলিমা ইথিনা কে জড়িয়ে ধরলো , দুজন ই কাঁদছে।
নীলিমা নাক টেনে বলল
– আম সরি আপু।
তোমার থেকে তোমার ভালোবাসা কে আলাদা করে দিলাম আমি।

ইথিনা কান্না থামিয়ে বলল
– দূর বোকা মেয়ে ,
তুমি কেন কাঁদছো।
তোমার কিংবা আমাদের কারো ই দোষ নেই।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য ই করেন।
আমি কিংবা তুমি ইনফেক্ট আমরা কেউ ই আর কষ্ট পাবো না।
ডান ?

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– ডান।

দুজনের আর ও কিছুক্ষণ গল্প করলো। একে অপরের সাথে মোহনীয় একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল।
বিকেল হয়ে যাওয়াতে নীলিমা কিচেন এ চলে গেল।
সবার জন্য নিজ হাতে পকোড়া বানাবে সে ।

*

রাত প্রায় এগারো টা , তন্ময় বাসায় ফিরেনি।
নীলিমার বেশ চিন্তা হচ্ছে , রবিন একের পর এক ফোন লাগাচ্ছে।
কিন্তু ফোন নাকি সুইচ অফ , নীলিমার বুক ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে।
মাথায় অবাধ্য সব পোকারা কিল কিল করছে , মনে হচ্ছে তন্ময়ের জীবন আশংকাতে রয়েছে।

রাতে কারো ই খাওয়া হয় নিহহ। তন্ময় না আসা অব্দি কারো গলা দিয়েই খাবার নামবে নাহহ।
সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে আছে।
সবার মুখে অজস্র চিন্তার ছাঁপ।
রাত বারো টা পেরিয়ে একটা ছুঁইছুঁই।
বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো।
নীলিমা ছুটে গিয়ে দরজা খুলল, সবাই মেইন ডোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।
তন্ময় ই এসেছে , নীলিমার চোখ দুটো চিক চিক করে উঠলো।
তন্ময় ইশারায় বোঝালো সে ঠিক আছে।
মিসেস আবরার ছেলে কে জড়িয়ে ধরলেন।
তন্ময় মৃদু স্বরে বলল
– কি হয়েছে আম্মু ?
কাঁদছো কেন ?

– কোথায় ছিলিস তুই ?
রাত একটা বাজে অথচ তোর ফোন লাগছে নাহহহ।
আমাদের চিন্তা হয় , জানিস না তুই ?

তন্ময় হেসে বলল
– চিন্তা কেন করো ? শুধু শুধু প্রেসার বাড়ানোর ধান্দা।
বিজনেস এর কাজেই লেট হয়ে গেল।
মিটিং এ ছিলাম, আসার সময় গাড়ি টা খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাই দেরি হয়ে গেল।
আর ফোন টা হারিয়ে গেছে, তাই সুইচ অফ।

মিসেস আবরার ছেলের কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
ইথিনা কিচেন থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে তন্ময় কে দিলো।
তন্ময় মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানালো।

রবিন তন্ময় কে সূক্ষ্ম দৃষ্টি তে পরখ করে নিলো।
তন্ময় চোখ দিয়ে ইশারা করতেই রবিন মাথা চুলকোতে শুরু করলো।

তন্ময় মৃদু হেসে রুমে চলে আসলো।
নীলিমা তন্ময়ের টাই খুলে দিতে দিতে বলল
– একটা ফোন তো করতে পারতে ?

– বললাম ই তো, ফোন টা যে হারিয়ে গেছে নীলি।

– অন্য কারো ফোন থেকে ও কল দিতেই পারতে।

– ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
কিন্তু ভাগ্য, ফোন টা কোথাও পরে গেছে আর খেয়াল ও করি নি।

নীলিমা কিছু বলল না, মন খারাপ করে বেডের এক সাইটে গুটি শুটি মেরে বসে রইলো।

তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফিরে আসলো।
নীলিমা এখনো একি ভঙ্গিতে বসে আছে।

তন্ময় ভ্রু কুঁচকে বলল
– কি হয়েছে তোমার ?
– কিছু না।
– আচ্ছা একটু এদিকে আসো তো।
– কেন ?
– আসতে বলেছি আসো , এতো প্রশ্ন করো কেন ?

নীলিমা বিনাবাক্যে বেড থেকে নেমে আসলো।
তন্ময় টুপ করে নীলিমার গালে চুমু খেয়ে নিলো।
নীলিমা হা হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে তন্ময় চোখ মেরে দিলো।
তারপর নীলিমার ওড়নার একপাশ নিয়ে বাচ্চা দের মতো করে চুল মুছতে লাগলো।
নীলিমা না চাইতে ও হেসে উঠলো।
তন্ময় ভ্রু কুচকাতেই নীলিমা ওড়না টান মেরে তন্ময়ের চুল মুছতে লাগলো।
তন্ময় হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
চুল মোছা শেষ হলে নীলিমা মুচকি হেসে বলল
– তুমি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছো, আরিয়ান আর তন্ময়ের মধ্যে অনেক ফারাক।
আরিয়ান নিজের সমস্ত কাজ করতে পারতো।
আর তন্ময় অষ্টরম্বা,

তন্ময় নীলিমা কে হেচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
পেছন ঘুরিয়ে নীলিমার দু হাত জড়িয়ে গলায় নাক ঘষে বলল
– মোটে ও নাহহ , তন্ময় আর আরিয়ান একি সত্তা।
তবে পার্থক্য হলো তন্ময়ের মিষ্টি একটা বউ আছে , আর আরিয়ানের নেই।
আর তার জন্য তন্ময় কিছুই পারে নাহহ।

নীলিমা তন্ময়ের হাত ছাড়িয়ে বলল
– তার মানে তুমি ইচ্ছে করে ঐ ভাবে চুল মুছছিলে ?

তন্ময় দাঁত কেলিয়ে হাসতেই নীলিমা তন্ময় কে কিল ঘুসি মারতে লাগলো।
তন্ময় পুরো রুমে দৌড়াতে লাগল , আর নীলিমা পেছন পেছন।
এক পর্যায়ে তন্ময় নীলিমা কে নিয়ে বেডের উপর পরে যায়।
নীলিমার ঘন চোখের পাপড়ি গুলো কেমন নড়ছে।
তন্ময়ের ইচ্ছে হলো নীলিমাল চোখে তার ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিতে।
কিন্তু দিলো নাহহ , নীলিমার কপালে আঁচড়ে পরা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন।

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অহংকারে মুছে যাবে সকল দীনতা।

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
স্পর্শসুখে লিখা হবে অজস্র কবিতা।

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়।

শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
তারপর হব ইতিহাস

[ সিরিজ”
__নির্মলেন্দু গুণ ]

নীলিমা তন্ময়ের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলল
– কবিতার মাঝে তোমার যে চাওয়া আছে সে চাওয়া আমার ও যে চাই।

তন্ময় মৃদু হেসে নীলিমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
নীলিমা তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বলল
– আরিয়ান এতো কেন ভালোবাসি তোমায়?
একটু ছোঁয়াতে কেন হারিয়ে যাই বারং বার ?

তন্ময় নীলিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু একটা বলে দিলো।
নীলিমা তন্ময় বুক থেকে উঠে বলল
– ছিহহহ , তুমি অসভ্য হয়ে গেছো।

তন্ময় নীলিমার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে বলল
– বউ এর কাছে অসভ্য , লম্পট, দুশ্চরিত্র সব হতে রাজি।
কিন্তু কোনো মূল্যেই তাকে ছাড়তে রাজি নই।

নীলিমা কিছু বলবে তার আগেই একজন কাজের লোক এসে ডিনারের জন্য দরজায় কড়া লাগালো।

তন্ময় বিরক্তিকর শব্দে বলল
– আসছি।

নীলিমা মুখ চেপে হাসতেই তন্ময় রাগি চোখে বলল
– রোম্যান্স করার সময় ই সবাই চলে আছে।

এক দিকে শশুর মশাই চার বছরের জন্য বউয়ের থেকে দূরে করে দিলো।
আর অন্য দিকে এরা , পাগল হয়ে যাবো আমি।
আবার বউ কে বিয়ের চার বছর পর এখনো পূর্ন ভালোবাসা ও যাবে না।
কি আজব এ দুনিয়া।

নীলিমা হো হো করে হেসে উঠলো।

*
সকালের মিষ্টি রোদ্দুর চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল রবিনের।
রবিন প্রতি দিন ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।
এতে নাকি অনেক উপকার আছে।
আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না।
আড়মোড়া ভেঙে রবিন বাইরে এক্সারসাইজের জন্য চলে আসলো।
কয়েক টা ব্যায়াম করে বের হলো জগিং এর জন্য।
সাড়ে ছয়টা বাজতেই লোকজনের সমাগম বেরে গেল।
হালকা শীতের মাঝে ও কিছু মানুষ কে ফুরফুরে দেখাচ্ছে।
রবিন একটা লোকাল দোকান থেকে এক বোতল পানি কিনে নিলো।
আজ একটু বেশি ই তৃষ্ণা পেয়েছে তার।
বোতলের ছিপি খুলে মুখে দেওয়ার জন্য হাতে নিতেই কেউ একজন খপ করে বোতল নিয়ে নিলো।
রবিন বিরক্ত হয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো সাদা জ্যাকেট পরা আঠারো উনিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে ঢক ঢক করে পানি গিলে যাচ্ছে ।
রবিন তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
মেয়েটা পানি শেষ করে রবিনের হাতে বোতল টা ধরিয়ে দিয়ে বলল
– থ্যাংক ইউ ডাক্তার বাবু।

রবিন রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকিয়ে রইলো।

মেয়েটা ঐ বলতেই রবিন থতমত খেয়ে বলল
– হুমমমম।
– চিনতে পারছেন ডাক্তার বাবু ?
– জি নাহহ

এই টুকু বলেই রবিন ব্যস্ত পায়ে হাঁটা ধরলো।
মেয়েটা দৌড়ে এসে পথ আটকালো।
রবিন শুকনো ঢোক গিলে বলল
– পথ ছাড়ুন।
– কেন ডাক্তার বাবু? জি এফ এর কাছে যেতে হবে বুঝি ?
– দেখুন আপনি কিন্তু

রবিন কে আর কিছু বলতে না দিয়েই মেয়েটা রবিনের হাত ধরে পাশের একটা ফাস্ট ফুড কর্নার এ নিয়ে গেল।
রবিন অবাক হয়ে সব দেখতে লাগলো।
ওয়েটার এসে বলল
– ম্যাডাম কি লাগবে ?

মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বলল
– একটা ব্লাক কফি , একটা চিকেন স্যান্ডুইচ, একটা মিনি মিট বল , দু গ্লাস ফ্রুট জুস , আর হ্যাঁ একটা ছোট পাস্তা দিয়ে যাবেন।

ওয়েটার চলে যেতেই রবিন বলল
– আপনি কেন আমার পেছনে পরে আছেন।
আজব মেয়ে , এই মেয়ে আপনার বয়স কতো ষোলো , বর জোর সতেরো ?
আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করছেন কেন ?

মেয়েটা মুখ চেপে হেসে বলল
– প্রথমত আমার একটা নাম আছে , রায়না।
আর দ্বিতীয় আপনি আমাকে না কি চিনেন না , তাহলে আপনি এখন আমাকে চিনলেন কি করে ?
তৃতীয়ত আমার বয়স ষোলে ও না ,সতেরো না , উনিশ।
আর চতুর্থত

রবিন রায়নার সামনে হাত জোড় করে বলল
– এবার থামেন , কি যেন নাম , রায়না না আয়না।
যাই হোক আমার পেছনে এভাবে কেন লেগে আছেন ?

রায়না স্যান্ডুইচ এ কামড় দিয়ে বলল
– আমি কেন লেগে থাকবো ?
আপনি ই তো লেগে আছেন।
পুরো দু বছর ধরে

রবিন খানিকটা রেগে গিয়ে টেবিলে জোড়ে হাত রাখলো।
জোড়ে শব্দ স হওয়াতে কিছু মানুষ সূক্ষ্ম চোখে রবিনের দিকে তাকালো।
রবিন অপ্রস্তুত হেসে রায়না কে ফিসফিস করে বলল
– দেখুন , আমি আর নিতে পারছি নাহহ।
আই হোপ নেক্সট আর জ্বালাবেন নাহহহ।
আমি যাচ্ছি ,,,

রবিন উঠে যেতেই রায়না রবিনের হাত ধরে বসিয়ে দিলো।
রবিন রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো। রায়না মৃদু স্বরে বলল
– সেই সাড়ে সাত বছর আগে আপনার সাথে প্রথম দেখা আর আজ সাড়ে সাত বছর পর আপনাকে দেখলাম।
আর আপনি এভাবে চলে যাচ্ছেন।

রবিন মুখ বাঁকিয়ে বলল
– সাড়ে সাত বছর মানে ?

রায়না ক্ষীন গলাতে বলল
– ফলের জুস আর বাল্ক কফি টা খেয়ে নিন।

রবিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
– আপনার টাকার খাবার আপনি খান আমি কেন খাবো ?

রায়না পাস্তার চামচ মুখে পুরো বলল
– এতো ভাব নেওয়ার দরকার নেই।
কারন বিল টা আপনি ই দেবেন।

রবিন অবাক হয়ে বলল
– মানে?
আমি কেন দিবো ?

– ওমা আপনি ই তো বললেন রায়না , তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা আর তোমাকে আমি ট্রিট দিবো না।
নো এটা হতেই পারে নাহহহ।

রবিন মাথায় হাত গুঁজে বলল
– ডেঞ্জারাস।

রায়না হাসতে হাসতে খাবার খেতে লাগলো।
আর রবিন মাথায় হাত খুঁজে রায়নার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে রইলো।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here