ফাগুন প্রেম পর্বঃ ০৮

0
612

#__ফাগুন_প্রেম__
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ০৮

গেটের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে যায়।
বর্ণালী বুমনির সাথে কিন্তু কিভাবে?
হ্যাঁ ওইতো রুমুকেও সাথে দেখছে। আরেকটা অপরিচিত মুখ দেখতে পাচ্ছে ঈশার পাশে। হয়তো ফ্রেন্ড হবে। চারজন মিলে হেসে হেসে কথা বলে এদিকেই এগিয়ে আসছে।
ইভান কোন কিছুর হিসেব মেলাতে পারছেনা। ইভানকে দেখেই বর্ণালীর হাসি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। এই ছেলে আমার পিছু নিতে নিতে এখানেও চলে এসেছে? এখন কি করবো?
আমার মান সম্মান সব তো শেষ করে দেবে আজ।
ঈশাদের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে?
বর্ণালীর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সব ভয় এসে ওর মাঝে জমা হয়েছে। ইভান বাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে দুষ্টুমি ভরা হাসি। ভাবতেও পারেনি এভাবে ওর সাথে দেখা হবে। কিন্তু হয়ে গেলো আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া জানাচ্ছে ইভান। কতবার কল দিলো অথচ একটাবার রিসিভ করলো না।
বাসন্তীর সাথে দেখা নাহলে যে আজকের দিনটাই পুরো বৃথা যেতো। পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী যত কাছে আসছে ততই ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। রুমু দূর থেকে ইভানকে দেখেই চিনে নেয়।
-“হেই ইভু।”
এটাই বাকি ছিলো। এই মেয়েটা কি একটুখানি চুপ থাকতে পারেনা? হে আল্লাহ এখন কি হবে!
-“হাই রুমু। কেমন আছো? অনেকদিন পর দেখা।”
-“হ্যাঁ ইয়ার তোমার ফোন নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছি নয়তো আমি কল দিতাম। তা কেমন আছো?”
-“এইতো ভালোই।”
ঈশা ইভানকে চুপ থাকার জন্য ইশারা করলো। ইভান অবাক হলেও চুপ রইলো। কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে ওই জনে। তাই ওর সাথে কথা বললো না। ঈশা মাথা নেড়ে বর্ণালীকে দেখিয়ে ব্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। ইভান লজ্জামাখা হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। এখন আর বুঝতে বাকি নেই এই সেই বর্ণালী। এবার ও খুশিমনে বর্ণালীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
-“তা তুমি এখানে?”
-“এলাম বাসন্তীকে দেখতে।”
-“তোমাদের কি কিছু এগিয়েছে?”
বর্ণালী চোখ বড় বড় করে রুমুর দিকে তাকালো।
-“রু….রুমু কি বলছিস কি এসব?”
ইভান আমাকে থামিয়ে রুমুকে বলে,
-“তোমার বান্ধবী তো পাত্তাই দিচ্ছেনা।”
-“আচ্ছা তাই নাকি? তার মানে তোমাদের যোগাযোগ হয়?”
-“আরে প্রতিদিন দেখা হয়।”
কথাটা বলেই বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে ইভান চোখ মারে। সাথে সাথে বর্ণালী চোখ নামিয়ে নেয়। ইভান আরেকটু এগিয়ে আসে বর্ণালীর দিকে। বর্ণালী ভয়ে ঈশার হাত ধরে ফেলে।
-“আমার সাথে দেখা করে আসো নি কেন?”
-“আ……আমি কেন তোত….তোমার সাথে দেখা করবো?”
-“জানোনা তোমাকে না দেখলে আমার দিন ভালো যায় না।”
——-(নিশ্চুপ——-
রুমু একটু কেশে বললো,
-“উহহু উহহু আপনাদের কি আমরা একা ছেড়ে দেবো নাকি?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ সমস্যা নেই। আমরা আপনাদের ডিস্টার্ব করবো না।” (ঈশা)
ইভান ঈশার কথা শুনে হেসে দিলো। তার বোনটাও শেষ পর্যন্ত তার জন্য নাটক করছে? আজব!
রোহানী এতোক্ষণ নীরব শ্রুতা হয়ে ছিলো। কিন্তু এবার কথা বলে ফেললো।
-“আরে চল চল ওদের একটু একা কথা বলতে দে। আচ্ছা আমি বলছি কি আপনারা যদি বাইরে কোথাও যেতেন তাহলেই ভালো হতো। নারে বর্ণালী? আসলে ও লজ্জা পেয়ে বলছে না। আপনি ওকে নিয়ে যান।”
বর্ণালী এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। সবাই কেন ওকে নিয়ে এভাবে উঠে পরে লেগেছে। ও তো কারো সাথে কিছু করেনি। আজব মেয়েগুলা।
-“দে….দেখো তুমি এ……এখান থেকে চলে যাও।”
-“হুম চলে যাবো। তার আগে এক কাপ কফি হয়ে যাক?”
-“কিভাবে ভাবলে আ….আমি তোমার সাথে ক….কফিতে যাবো?”
-“আমি তোমাকে বলিনি। রুমু চলো তো ওদের সবাইকে নিয়ে চলো। আমরা কফি খাই। এখানে খুব ভালো একটা কফি হাউজ আছে।”
বর্ণালী অবাক হয়ে সবার দিকে একবার একবার তাকায়। এখনো ঈশার এক হাত ধরে আছে সে খেয়ালই নেই ওর। ঈশা ওর এই ভয় পাওয়া লুকটা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। ভয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেনা। মেয়েটা এতো কিউট কেন! ভয় পেলেও কিউট লাগে। রুমু বর্ণালীর অবস্থা বুঝতে পেরে বললো,
-“না ইভু অন্যদিন যাবো নে। আজ থাক প্লিজ।”
-“কিন্তু আমি তো…..”
-“আমি তোমাকে সময় করে কল দিয়ে বলবো নে। আজকে না সরি। আসলে সময় নেই।”
-“ইট’স ওকেই রুমু। কিন্তু তোমার বান্ধবীকে বলো না প্লিজ আমার প্রপোজালটা এক্সেপ্ট করে নিতে।”
-“হু করবে সময় দাও ইয়ার।”
-“রুমু চল প্লিজ। ঈশা, রোহানী চল। আমার দেরি হচ্ছে।”
কথাটা বলেই বর্ণালী সামনে হাঁটা ধরে। তার পিছে পিছে বাকি সবাইও যায়। বর্ণালী কিছুদূর যেতেই মনে হয় ওর জিনিসটা ফেরত দিতে হবে তো। পিছনে তাকিয়ে দেখে ইভান মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
-“এক মিনিট ওর সাথে আমার একটা কথা ছিলো।”
-“এই না বললি কথা বলবি না এখন আবার কথা বলবি?”(রুমু)
-“আরে যা বর্ণালী তুই কথা বলে আয়। প্রয়োজনে রেস্টুরেন্টে যা লাঞ্চ কর কোন সমস্যা নেই।” (ঈশা)
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চল আমরা যাই। এখানে আমরা কাবাবে হাড্ডি হতে চাই না।” (রোহানী)
-“তোরা চুপ করবি প্লিজ? আমরা একটা সিরিয়াস কথা আছে।”
-“তা কি সেই সিরিয়াস কথা?”(রুমু)
-“ইয়ে মানে…”
-“কি মানে?”(ঈশা)
-“আসলে ওকে একটা জিনিস দেয়ার ছিলো।”
-“বাহ! বাহ! এতোক্ষণ তো ভালোই অভিনয় করলি আর এখন জিনিস দেয়া নেয়া হচ্ছে? কিভাবে পারলি আমাদের থেকে কথা লুকাতে?”(রোহানী)
-“আরে আমরা হলাম দু’দিনের না না সরি কয়েক ঘন্টার ফ্রেন্ড আমাদের কি আর সব কিছু বলবে?”(ঈশা)
-“আরেহ তোরা যা ভাবছিস তা নয়।”
-“তোমরা না হয় কয়েক ঘন্টার ফ্রেন্ড আমি তো ছোট বেলার বান্ধবী ছিলাম বর্ণ। আমাকেও বললি না? কিভাবে পারলি তুই?”
-“কি সব উলটা পালটা বলে যাচ্চিস তোরা?”
-“বাহ! এখন আমরা উলটা পালটা বলছি না? তোর সাথে আমার আর কোন নেই। চললাম আমি।”(রুমু)
রুমু রাগ দেখিয়ে দ্রুত পায়ে চলছে। এদিকে বর্ণালী আর ইভানের দিকে না গিয়ে ভাবলো বান্ধবীর রাগ ভাঙানো এখন প্রয়োজন বেশি। রাস্তায় এতো গাড়ির যাতায়াতের মধ্যে রুমু হুরহুর করে পাড় হয়ে যায়। আর ও রাস্তা পাড় হতেই পারছেনা। বর্ণালী কখনোই একা রাস্তা পাড় হতে পারেনা। সবসময় ওকে রুমু হাত ধরে রাস্ত পাড় করে দেয়। কিন্তু এখন কিভাবে পাড় হবে ভাবতে না ভাবতেই ঈশা এসে হাত ধরে রাস্তার ওপারে নিয়ে যায়। রাস্তা পাড় হতেই রোহানী তাদের থেকে বিদায় নেয়। বর্ণালী আর ঈশা রুমুর পিছুপিছু প্রায় দৌড়াচ্ছে। রুমু সিএনজি তে উঠতেই বর্ণালী আর রুমুও একরকম দৌড়ের উপর উঠে যায়। এদিকে ইভানও বাইক নিয়ে তাদের সাথে সাথেই আসছে।
-“দেখ রুমু তুই যা ভাবছিস তা একদম নয়। ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সেদিন রাতে ও দেখা করতে এসে আমাকে গিফট দিয়ে যায়। আর আমি……”
-“বাহ! এর মাঝে দেখাও করে ফেলেছিস? তাও রাত্রে? গিফটও দিয়েছে? এর পরেও বলছিস তেমন কিছুনা?”
বলেই মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয় রুমু। ঈশা মিটিমিটি হাসছে আর বর্ণালীর টেনশনে ভরা মুখ দেখছে। ভালোই লাগছে ওর কাছে। একটা মেয়ে তার বন্ধুত্তের সম্পর্ককে যদি এতো গুরুত্ব দেয় না জানি অন্য সম্পর্কগুলোকে কত বেশি গুরুত্ব দিবে। ভাবতেই ভালো লাগছে ঈশার যে ও এমন একজন ভাবী পাবে। যদি ছোট ভাইয়ের বউ তাও তো ভাবী। খুব খুশি লাগছে আজ ওর।
-“রুমু প্লিজ না বনু একটু বুঝ। ট্রাস্ট মি ইয়ার আমি তোকে বলার সুযোগটাই পেলাম কই বল?”
-“হ্যাঁ আমি তো ভিনদেশের প্রানী যে আমাকে পাওয়া যায় না।”
-“ঈশা একটু বুঝা না ওকে।”
-“ভাই আমি কি বুঝাবো? আমিও রুমুর সাথে একমত।” (ঈশা)
এবার যেনো বর্ণালীর নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে। চোখের কোনে জল টইটুম্বুর করছে। একটাই তো বেস্ট ফ্রেন্ড ওর। যদি এভাবে হারিয়ে ফেলে তাহলে সে কিভাবে থাকবে? না না কখনোই হারাতে পারবে না ওকে।
-“সরি রুমু দেখ আর কখনোই তোর থেকে কিচ্ছু লোকাবো না। প্রমিজ করছি দেখ।”
রুমু এতোক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ছিলো বর্ণালীর কথায় ভাবলো মেয়েটাকে আর বেশি রাগ দেখালে কেঁদেই দিবে। তাই আর রাগ না দেখিয়ে ওর দিকে ফিরে তাকালো।
-“সরি রুমু।”
বর্ণালী অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে।
-“হুম ইট’স ওকে।”
এবার বর্ণালী রুমুকে জড়িয়ে ধরে।
-“লাভ ইউ রে। আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
রুমু না পেরে হেসেই দেয়।
-“হুম জানি। হয়েছে ছাড় আর কাঁদতে হবে না। এক্সট্রা ভালোবাসা কম দেখা আমাকে। সব জমিয়ে রাখ ইভানের জন্য।”
-“রুমু প্লিজ তুইও না!”
-“আচ্ছা বর্ণালী তুই কি ওকে ভালোবাসিস?”(ঈশা)
-“আরে ধুর কিসব বলছিস? ও পিচ্চি একটা ছেলে। আমার ছোট ভাইয়ের বয়সি হবে। আর আমি কিনা ওকে ওই চোখে দেখবো! অসম্ভব।”
-“আচ্ছা ছোট বড় সাইডে রাখ। তুই শুধু ইভানকে দেখ৷ একটা হিরো টাইপের ছেলে যে কিনা তোকে প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে যায়। তোর সম্পর্কে কিছু না জেনেই প্রপোজ করে বসে। তোকে ভালোবাসে অনেক বেশি। এবার বল তুই কি ওকে ভালোবাসিস?” (রুমু)
-“হুম…..”
বর্ণালীর কোন এক ঘোরের মাঝে হুম কথাটা বেরিয়ে আসে।
-“এই তো লাইনে এসেছো বাছাধন। এতোক্ষণ তো খুব ছোট ছোট বলে না করছিলি। আর এখন আসলো মনের কথা মুখে?” (ঈশা)
বর্ণালী৷ এবার থ হয়ে গেলো। ওর মনের অজান্তেই মুখ থেকে হুম বেরিয়ে গিয়েছিলো।
-“কখনোই না। ওইটা তো এমনিতেই হুম বেরিয়ে এসেছে মুখ থেকে।”
-“আচ্ছা আচ্ছা বাদ দে। দেখিস তুই একসময় ঠিকিই ওর প্রেমে পড়ে যাবি।” (ঈশা)
-“কখনোই না।”
-“আচ্ছা সে দেখা যাবে। এখন বল রাত্রে দেখা করতে এসে কি কি হয়েছে হুম হুম?”(রুমু)
একটু আহ্লাদী কন্ঠে হেসে হেসে চোখ মেরে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। ঈশাও সাথে সাথে তাল মেলায়।
-“হ্যাঁ রে বলনা প্লিজ তুই কি দিলি আর তোকে কি দিলো?
বর্ণালী খালি গলায় ঢোক গিললো। কি বলবে এবার ও? ওইসব কিভাবে খুলে বলবে? কিন্তু না বললেও তো হবেনা। একটু আগেই যে ও প্রমিজ করেছে। কিছু বলার আগেই সিএনজি থেমে যায়।
দুজনেই অবাক হলো এটা শুনে যে ঈশার বাসাও বর্ণালীর বাসার ওদিকে। রুমুর বাসা এখানেই কিন্তু ও আজ বাসায় যাচ্ছেনা। পাশেই একটা পার্ক আছে ঈশা আর বর্ণালীকে টেনে পার্কের দিকে একসাথে হাঁটা ধরলো।
ঘাসের উপর বসেই রুমু বর্ণালীর হাত চেপে ধরে বললো,
-“হুম এবার বল কি হয়েছিলো সেদিন রাতে?”
-“আসলে….”
-“হুম আসলে কি?”(ঈশা)
বর্ণালী সবকিছু খোলে বললো ওদের। দুজনেই হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এতো কিছু হয়ে গেছে?
-“আচ্ছা বর্ণালী বলতো ইভান যখন তোর কোমড় জড়িয়ে ধরেছিলো তখন তোর কেমন লেগেছিলো?” (রুমু)
রুমুর এমন প্রশ্নে ঈশা তো লজ্জা পেলোই সাথে জানার জন্যও এক্সাইটেড হয়ে বর্ণালীর জবাবের আশায় বসলো। কিন্তু বর্ণালী বেচারি তো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। ঠোঁট, গাল, নাক ও চোখ লাল হয়ে গেছে। নার্ভাস আর ভয়ে এমন হচ্ছে।
ঈশার মোবাইলে টুং করে শব্দ করে উঠে। মোবাইল নিয়ে দেখে ইভান মেসেজ করেছে।
-“ওই কোথায় তোরা?”
ঈশা লুকিয়ে ওর মেসেজের রিপ্লে দিয়ে দেয়।
-“পার্কে আছি।”
ইভান মেসেজ দেখলো বাট রিপ্লে দিলো না। বুঝতেই পারছে এখানে তো একটাই পার্ক। সেখানেই যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেয়।
`
-“কিরে বলনা? কেমন অনুভূতি হয়েছিলো?”(ঈশা)
-“আ….আসলে আমার না হার্টবিট অনেক দ্রুত বিট করছিলো। মনে হচ্ছিলো এখনি হার্ট অ্যাটাক করবো।”
বর্ণালী অনেক অসহায়ভাবে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। ঈশা আর রুমু ফিক করে হেসে দিলো। ওদের হাসির মাত্রা যেনো বেড়েই যাচ্ছে। বর্ণালী বুঝতে পারছেনা ও এমন কি বললো যে ওর উপর ওরা এভাবে হাসছে?
-“তোরা এভাবে হাসছিস কেন?”
-“তুই প্রেমে পড়েছিস রে পাগলী এটাও বুঝলি না?” (রুমু)
-“হুম ম্যাডাম যতই না না বলেন না কেন আপনি ওই কিউট ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছেন।”(ঈশা)
-“আর কিছু বুঝতে পারছি কিনা জানিনা বাট এটা ঠিকই বুঝলাম যে তোরা পাগল হয়েছিস।”
বলেই বর্ণালী যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
-“আরে আরে কই যাস?”(রুমু)
-“দেখ আমার বাসায় যেতে হবে। আমার ক্ষুধা পেয়েছে অনেক।”
-“আচ্ছা এখন বাহানা দিয়ে পালাচ্ছিস কেন?”(ঈশা)
-“দেখ আমি বাহানা দিচ্ছিনা। আর পালাবো কেন?”
-“তাহলে বস না। আচ্ছা বল না ইভান যখন তোর কোমড় জড়িয়ে চুলের গন্ধ নিচ্ছিলো তোর অনুভূতিটা কেমন ছিলো? চোখ বন্ধ করে ছিলি না খোলা ছিলো?”(রুমু)
-“প্লিজ না রুমু চুপ কর। আমার এসব শুনতে ভালো লাগছেনা।”
-“আচ্ছ বাচ্চু? করতে ঠিকই ভালো লাগে আর আমরা বললে ভালো লাগেনা?”(রুমু)
-“এই বলনা লিপ কিস টিস কিছু হয়েছে?”(ঈশা)
এমন কথা শুনে বর্ণালীর চোখ চড়কগাছ হয়ে গেছে। এই মেয়েগুলো এসব কি বলছে?”
-“ছিইইইইইই…..তোরা আসলেই পাগল হয়ে গেছিস। আমি গেলাম থাক তোরা।”
ঈশা বর্ণালীর হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
-“আচ্ছা লিপকিস না হোক ফরহেড কিস তো করতেই পারে নাকি?”
বর্ণালী এবারো অসহায়ভাবে ওর দিকে তাকালো৷ রুমু আমতা আমতা করে বললো,
-“আ…আচ্ছা ওসব বাদ। গালে তো কিস করতেই পারে? করেছে?”
-“না আমার মা কোন কিছুতেই কিস করেনি। এবার তো চল।”
-“সত্যি কোন কিছুতেই কিস করেনি?”
এবার বর্ণালী কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। ইভান তো আসলেই কিস করেছিলো তাহলে ও কেন মিথ্যা কথা বলছে ওদের? না না এসব বলা যাবেনা এমনিতেই যা পঁচানি দিয়েছে এসব বললে না জানি আরো কত পঁচায়।
-“উহু কোন কিছুতেই না।”
-“আসলেই কি কোন কিছুতে কিস করিনি?”
পেছন থেকে একটা ছেলে কন্ঠের আওয়াজে বর্ণের আত্মা কেঁপে উঠে। হু যা ভাবছিলো তাই। ইভান এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস দেয়া। এই ছেলেটা আসলেই অনেক কিউট। ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছে ও। বর্ণালী ভয়ে খালি গলায় ঢোক গিলে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
-“তু…..তুত…..তুমি?”
-“হ্যাঁ আমি। কেন আমি আসতে পারিনা?”
বর্ণালী চুপ মেরে আছে। ভয়ে বারবার নিজের হাত নিজেই কচলে যাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। হার্টবিটটা আবারো বেড়ে গেছে। ইভান নীরবতা ভেঙে বললো,
-“তা কি যেন বলছিলে? হ্যাঁ আমি তোমার কোথাও কিস করিনি। সত্যি করিনি? নাকি ভুলে গেছো যে সেদি…”
বর্ণালী ইভানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে চট করে ওর হাত দিয়ে ইভানের ঠোঁটে আলতো করে চেপে ধরে। ইভান বর্ণালীর এমন স্পর্শে যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে ওর মাঝে। শরীরে যেনো কেমন একটা শিহরণ বয়ে যায়। হা হয়ে তাকিয়ে আছে বর্ণালীর চোখের দিকে। চোখের পলক যেনো পড়তেই চাইছেনা। এতো সুন্দর কেন এই মেয়েটা! বর্ণালী ওর দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ যেনো অনেক না বলা কথা বলে দিচ্ছে। ইভান তার ঠোঁট দিয়ে আলতো করে বর্ণালীর হাতের তালু চেপে ধরে। বর্ণালীর পুরো শরীর কেঁপে উঠে। চট করে হাত সরিয়ে নেয়। ঈশা আর রুমু তখন থেকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। রুমু ঈশার কাধের উপর দু’হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-“দেখ না ওদের দুজন কে কত সুন্দর মানিয়েছে।”
-“হ্যাঁ রে একদম পারফেক্ট। আমি তো ভাবতেই পারিনি আমার ভাইয়ের পছন্দ এতো ভালো হবে।”
রুমু ভাবছে ও কি কিছু ভুল শুনলো? ঈশাকে ছেড়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
-“তোর ভাই মানে?”
ঈশা এক ঘোরে কথাটা বলে ফেঁসে গেছে। ভেবেছিলো ওর পরিচয় না দিয়ে ওদের সাথে এভাবে বন্ধুত্ত রাখবে আর সবকিছুর মজা নিবে। এখন যদি বর্ণালী জানে ইভান ওর ভাই তাহলে তো আর কিছুই শেয়ার করবে না। আর হয়তো এটা জানলে ইভানের প্রপোজাল কখনো এক্সেপ্টও করবেনা। একটা ভয়ের মাঝে পড়ে গেলো। কিন্তু এখন ও কি বলবে?
-“ইভান তোর ভাই তুই বললি না কেন?”
-“ক….কই বললাম ও আমার ভাই?”
-“দেখ ঈশা কথা পাল্টানোর চেষ্টা করবি না। মিথ্যেও বলবিনা যা বলবি সত্যি বল।”
-“না মানে হ্যাঁ ও আমার ভাই। কিন্তু প্রমিজ কর তুই এই কথা বর্ণালীকে বলবিনা।”
-“কেন?”
-” প্লিজ ইয়ার ওকে এই কথাটা বলিস না। ও যদি এটা জানে হয়তো ইভানের প্রপোজাল কখনো এক্সেপ্ট করবে না। আর আমার সাথেও মন খুলে কথা বলতে পারবেনা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। আমি ওর ফ্রেন্ড হয়ে থাকতে চাই।”
-“আচ্ছা বাবা পিংকি প্রমিজ আমি বর্ণালীকে কিছুই বলবোনা।”
-“থ্যাংকস এ লট ইয়ার।”
এবার দুজনে বর্ণালী আর ইভানের দিকে এগিয়ে আসে। রুমু ইভানকে বলে,
-“ইভান কি যেনো বলছিলে?”
-“বলছিলাম যে আমি তো কিস….”
-“হাতের উপর করেছে।”
সবাই চোখ বড় বড় করে বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ণালী ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলেই দেয়। না জানি এই ছেলে উলটা পালটা কিছু বলে দেয় তার চাইতে নিজেই সত্যি বলে দেয়াটা ভালো। আর ইভান বললে হয়তো রুমু আর ঈশা রাগ করতে পারে। ভাবতে পারে ও তাদের কাছ থেকে কথাটা লুকিয়েছে। তাই তো হুট করেই বলে দেয়।
-“আচ্ছা তলে তলে এতো কিছু? তা কয়টা কিস করেছে রে বর্ণ?” (রুমু)
বর্ণালী রুমুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে ব্রু কুচকে অসহায়ভাবে তাকালো। ওর এই তাকানোটা বলে দিচ্ছে যে কেন রুমু এসব জিজ্ঞেস করে ওকে এখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ফেলছে।
এভাবে কেউ কিস এর কথা জিজ্ঞেস করে নাকি যে কয়টা কিস দিয়েছে?
কোথায় কিস দিয়েছে?
না জানি কখন এটা জিজ্ঞেস করে বসে যে কিভাবে কিস করেছে?
💛
#_____চলবে…….
.
গত পর্ব – https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=120042109666148&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here