#_ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৪৬
লেখনীতে : Bornali Suhana
💛
💛
কতদিন সে তার বাসন্তীকে দেখেনা। চোখে চোখ রাখেনা। কথার ঝুড়ি নামায় না তার সামনে। মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে।
আজকে কি সে তার বাসন্তীকে দেখতে পাবে! আজকে কি তার অশান্ত মনটা শান্ত হবে! তাকে দেখে কি ক্লান্ত দু’চোখ নিশ্চলতা পাবে!
.
.
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। লাল সূর্যটা হলুদাভ ধারণ করে পুব আকাশে ঢলে পরেছে। দিন শেষে পাখির বাচ্চারাও ঝাঁক বেঁধে মায়ের কোলে ফিরে যাচ্ছে।
ইভান সেই চিরচেনা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে৷ বাড়িটা যেনো আজ নতুন বউয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে। পুরো বাড়ি জুড়ে নীল রঙের বাতি ঝলমল করছে। সন্ধ্যায় এই নীল আলোটা অন্যরকম এক সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। মানুষের আনাগোনাও অনেক বেশি। কেউ কারো কথা শুনছে কিনা কে জানে! সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত।
ইভান নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। পেছন ফিরে তাকাতেই তার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। গম্ভীর মুখে হাবিব হাসান দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণের ভেতরই তার চেহারার ভাব বদলাতে দেখে সে। হাসি আসছেনা তাও জোর করে হাসার চেষ্টা করছে। হাবিব হাসান মুচকি হেসে বলেন,
-“এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো ইয়াং ম্যান? ভেতরে আসো।”
-“হু!!! হা… জ্বি আংকেল।”
এমন অবস্থায় প্রায় থতমত খেয়ে যায় কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এই মুহুর্তে এখানে কেন এসেছে জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে! গভীর ভাবনায় পড়ে যায়।
হাবিব হাসান ভেতরে যাচ্ছেন ইভান তাঁর পাশেপাশেই হেঁটে যাচ্ছে। বুকটা ধুকপুক করছে তার। মনে হচ্ছে যেনো কোরবানির জন্য গলায় দড়ি বেঁধে কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছে। মেহমান তেমন নেই কিন্তু কমও না। সামনের দরজা খোলাই আছে আজকে।
-“বর্ণালীইইইই দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় তো।”
বাবার ডাক শুনে সে বিছানা ছেড়ে রান্নাঘরে যায়। পরিচিত কারো ছায়া দেখতে পায় কিন্তু মেহমানের ভিড়ে এতোটা ধ্যান দেয় না। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দুই গ্লাসে ঢেলে ট্রেতে করে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে।
-“বাবা পানি।”
-“হ্যাঁ। তাকেও এক গ্লাস দাও।”
ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কতদিন পর সে তার বাসন্তীকে দেখতে পাচ্ছে। চোখজোড়া শান্ত হয়ে এসেছে ওর। পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই নিজের হাতের সাথে তার হাত স্পর্শ হয়। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়৷ চোখ জোড়া ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলে ইভানকে দেখে কাঁপতে শুরু করে সে। ইভান পানির গ্লাস নিয়ে ওর দিকে তাকিয়েই এক ঢোকে খেতে লাগে৷ মুখের দু’পাশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। বর্ণালীর চোখ যেনো ওখানেই থমকে গেছে। পানি খেয়ে গ্লাস ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ মুছে নেয় ইভান।
-“কিছু নাস্তার ব্যাবস্থা কর মা যা।”
-“হু!!!!”
-“বলছি যে কিছু নাস্তার ব্যাবস্থা কর।”
-” হ্যাঁ করছি বাবা।”
ট্রে হাতে নিয়ে দ্রুত রান্নাঘরের দিকে চলে যায় সে। সজিব ততক্ষণে ড্রয়িংরুমে এসে ইভানের সাথে বুক মিলিয়ে পাশেই বসে৷ হাবিব হাসান তাদের বসতে বলে নিজের রুমে এগিয়ে যান। সজিব তার সাথে গল্প জুড়ে বসে। বর্ণালী রান্নাঘরে এসে কোনরকম ট্রেটা রাখে। থরথর কাঁপছে সে৷ এমন মনে হচ্ছে যেনো তার কোন চুরি ধরা পড়ে গেছে।
-“কিরে কি হলো?”
মায়ের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় সে। একদিকে এতোদিন পর ভালোবাসার মানুষকে দেখার আনন্দ অন্যদিকে তার সাথে করা অপরাধবোধ। আনন্দের চাইতে অপরাধবোধটাই বেশি ওর মাঝে।
রুমু ও বর্ণালীর ৫জন কাজিনও এসে তাদের সাথে গল্পে যোগ দেয়। মেয়ের বাড়ির লোক এসেছে জেনে সবাই এসে গোল হয়ে ঘিরে বসে ইভানকে। এদিকে বর্ণালী নাস্তা তৈরী করে রান্নাঘরে পায়চারি করছে। কীভাবে ওর সামনে যাবে সাহস পাচ্ছেনা। উঁকি দিয়ে ইভানকে দেখার চেষ্টা করছেম কতটা শুকিয়ে গেছে। চেহারাটাও অনেকটা মলিন হয়ে গেছে। কেন জানি মনে হচ্ছে হুট করেই যেনো ইভান বড় হয়ে গেছে। দাড়িতে তাকে মারাত্নক আকর্ষণীয় লাগছে। চোখ ফেরানো দায়। ইভানের চোখ রান্নাঘরে পরতেই বর্ণালীর চোখে চোখাচোখি হয়ে যায়৷ ও দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। কি লজ্জাটাই না পেতে হলো। এভাবে কেন দেখতে গেলো।
-“কিরে যা নাস্তা নিয়ে।”
-“মা তুমি গিয়ে দিয়ে আসো না প্লিজ।”
-“আমার এতো কাজ তোর চোখে লাগেনা? একটা বিয়ের উপলক্ষে তোর ফুফু, চাচারা এসেছেন তাদের যদি ভালো মতো খেয়াল রাখতে না পারি তাহলে হয়তো সম্পর্কটা ঠিক হওয়ার আগেই আবার নষ্ট হয়ে যাবে। তা কি তুই চাস?”
শারমিন বেগমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাস্তার ট্রে হাতে নেয়৷ লম্বা করে একটা নিশ্বাস নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যায়৷
-“নাস্তা বানিয়ে নিজেই খেতে লেগে গিয়েছিলি নাকিরে স্বরবর্ণ?”
ভাইয়ের দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে ট্রেটা ঠাস করে টেবিলে রাখে।
-“তুমি নিজেই বানাতে গেলে না কেন তাহলে?”
-“আরে চেতে যাচ্ছিস কেন? আমি তো এমনি এমনিই বললাম জানতাম নাকি আসলেই তুই খেতে লেগে গিয়েছিলি।”
কথাটা বলেই সজিব হো হো করে হেসে দেয়। কিন্তু আর কেউ হাসছেনা দেখে সে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
-“হাসতে তো ট্যাক্স লাগেনা। তোমরাও হাসো।”
রুমু, ইভান সহ সজিবের কাজিনরাও হো হো করে হেসে দেয়। বর্ণালী রাগছে না কিন্তু এই হাসিগুলো তার খারাপ লাগছেনা৷ সবার মাঝে ইভানের হাসিটাও যে আছে৷ যা দেখে তার ঘোর লেগে যাচ্ছে। এতোদিন পর দেখছে সেই হৃদ কাঁপানো হাসি। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ইভান আঁড়চোখে বর্ণালীর দিকেই তাকাচ্ছে।
💛
#______চলবে………….
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/129846662019026/