#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৪৭
Written by: Bornali Suhana
💛
💛
রুমু, ইভান সহ সজিবের কাজিনরাও হো হো করে হেসে দেয়। বর্ণালী রাগছে না কিন্তু এই হাসিগুলো তার খারাপ লাগছেনা৷ সবার মাঝে ইভানের হাসিটাও যে আছে৷ যা দেখে তার ঘোর লেগে যাচ্ছে।
-“আপু বস না দাঁড়িয়ে আছিস কেন এভাবে?”
জেনি বর্ণালীর হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। সম্পর্কে বর্ণালীর ফুফাতো বোন হয়। এই প্রথম ওদের বাড়িতে পা রেখেছে। শুধু ও নয় বাকিরাও। ইভানের দিকে প্রখর দৃষ্টি বর্ষণ করছে জেনি। ওই চোখ দুটো তাকে যেনো টানছে।
-“আপু উনার নাম কি?”
-“উনার কার?”
-“ভাবীর ভাইয়ের নাম কি?”
জেনির প্রশ্ন শুনতেই বর্ণালীর কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ পড়ে।
-“কেন?”
-“না এমনি জানতে চাচ্ছিলাম।”
-“ইভান।”
-“কিসে পড়ে সে?”
এবার বর্ণালীর কপালের ভাঁজের সূক্ষ্মতা আরো গভীর হলো। ইভান সম্পর্কে জানার এতো কেন আগ্রহ তার! একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জেনির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
জেনি আর কোন প্রশ্ন না করে গল্পে মনযোগ দেয়। ইভান বর্ণালীর দিকে বারবার আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। রুমু বর্ণালীর পাশে এসে জায়গা করে বসে। সবার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“ইভানের সাথে একটু কথা বল যা।”
-“আমি কেন কথা বলবো?”
-“তুই ভালো করেই জানিস যে, সে শুধু তোর জন্যই আসছে।”
-“না আসাই ভালো ছিলো তার।”
-“আচ্ছা তার অপরাধটা কোন জায়গায়?”
-“তুই কী বুঝিস না অপরাধ তার না অপরাধ আমার।”
-“নিজেকে দোষ দিয়ে মজা পাস না?”
কথাটা শেষ করতেই রুমুর ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠে।
-“একটু কথা বলিয়ে দাও না প্লিজ।”
রুমু ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর শুধু ঠোঁট নেড়ে প্লিজ বলছে। কিন্তু ওদের আলাদা কথা বলার সুযোগ কীভাবে করিয়ে দেবে! ভাবনায় পড়ে গেলো। এতো মানুষের মাঝে কীভাবে কি করবে!
কিন্তু না করলেও তো হচ্ছেনা।
-“ওয়াশরুমে যাবে বলো।”
ইভানকে রুমু এই মেসেজটা পাঠিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। ইভান একটু নড়েচড়ে বসে সজিবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ওয়াশরুমটা একটু দেখিয়ে দিবেন প্লিজ?”
-“চলো দেখিয়ে দিচ্ছি।”
সজিব উত্তর দেয়ার আগেই রুমু কথাটা বলে দেয়। রুমু বর্ণালীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ইভান তাদের পিছু পিছু আসছে।
-“রুমু কি করছিস ছাড়।”
-“চুপচাপ আমার সাথে চল।”
-“মানে কী? তুই আমাকে কেন এভাবে নিয়ে এলি?”
-“প্রয়োজন আছে তাই নিয়ে এসেছি।”
-“এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“তোর রুমে।”
-“আমার রুমে কেন?”
-“গেলেই বুঝতে পারবি। চল না রে বাবা এতো কথা কেন বলিস!”
ইচ্ছে করেই বর্ণালীর ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছে ইভানকে। যাতে দুজনকে কথা বলিয়ে দিতে পারে। রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিলো রুমু। তিনজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। তাদের দুজনকে নিয়ে ব্যালকনিতে যায়। শান্তভাবে কথা বলার জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো জায়গা।
-“তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি।”
-“আসছি মানে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“ওইতো আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল করতে হবে আমি রুমেই আছি।”
রুমু মিথ্যে ফোনকলের বাহানা করে রুমে চলে আসে দুজনকে একা রেখে।
বর্ণালীর এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা কেমন অস্বস্তিকর লাগছে। ইভানও কিছু বলছে না। দুজনেই চুপ হয়ে আছে। অনেকক্ষণ এভাবেই চুপ থাকার পর ইভান কন্ঠস্বরকে নিচু করে বলে,
-“আমি তো কোন অপরাধ করিনি। তাহলে কিসের শাস্তিটা আমাকে দেয়া হচ্ছে একটু বলবে?”
ইভানের এমন কথায় বর্ণালীর গাল বেয়ে আলতো করে দু’ফোটা অশ্রু ঝরে পরে। আসলেই তো সে কিসের শাস্তি দিচ্ছে তার বসন্ত পথিককে! আদৌ কি সে তাকে শাস্তি দিচ্ছে নাকি নিজে পাচ্ছে?
কোন উত্তর পেলো না।
-“কথা বলবে না? আমি তোমার দেয়া এই শাস্তিটা মেনে নিতে পারছিনা বাসন্তী।”
বাসন্তী ডাকটা শুনেই বুকের ভেতরে কম্পন ধরায় ওর। কতদিন পর ইভানের মুখে বাসন্তী ডাক শুনতে পাচ্ছে। আরেকটাবার ডাকছে না কেন ইভান। মুখ ফুটে বলতেও পারছে না যে, বসন্ত পথিক আরেকটাবার কি আমাকে বাসন্তী বলে ডাকবে? বর্ণালীর চোখ আকাশের দিকে৷ সে অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো যেনো তারারাজির মেলায় হারাচ্ছে। বারবার চোখের পাতা এক করে চোখের জলের সাথে লুকোচুরি খেলা খেলছে। এ খেলায় জয়ী হবে কিনা সে জানেনা।
ইভান বর্ণালীর দিকে এগিয়ে আসে। যত কাছে আসছে বর্ণালীর হৃদস্পন্দন ততো বেড়ে যাচ্ছে। দু’হাত দিয়ে ব্যালকনির রেলিংটাকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ইভান তার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ায়। মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পেছনে গুজে দেয়। ও কেঁপে উঠে ইভান থেকে কিছুটা সরে যেতে চাইলেই দু’হাতের বেড়ায় আটকা পড়ে যায়। কোনদিকে যেতে পারছেনা।
-“পালিয়ে যেতে চাও?”
-“পালাতে কেন চাইবো?”
-“তাহলে এমন কেন করছো?”
-“কেমন করছি?”
-“প্রশ্নের উত্তর হয় বর্ণালী প্রশ্নের জবাবে কেউ প্রশ্ন করেনা।”
-“যেতে দাও। ঘরে অনেক মেহমান দেরি হলে সন্দেহ করবে সবাই।”
-“তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।”
-“তোমার না থাকতে পারে আমার আছে।”
-“পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো।”
-“ইচ্ছে করছে না।”
-“আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না?”
বর্ণালীর ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে এক পাশে নিয়ে রাখে ইভান। ইভানের হাত ওর ঘাড়ের ওপর স্পর্শ করতেই ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরে। নিঃশ্বাস গ্রহণ করে ত্যাগ করতে যেনো ভুলেই গেছে ও। ইভান ধীরে ধীরে আঙুলের সাহায্যে বর্ণালীর ঘাড়ের উপর কিছু একটা লিখছে। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মনোযোগ দিয়ে তা বুঝতে চেষ্টা করছে সে। সম্পূর্ণ লেখার পর বুঝতে পারলো কথাটা “I Love You”. বর্ণালী তখনও চুপ করে আছে। মৃদু বাতাসের সাথে মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। দুজনের উষ্ণ শরীরকে ভেতর শীতল করে দিচ্ছে এই আবহাওয়া।
কিছুক্ষণ পর ঘাড়ের উপর কারো শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শে শিহরিত হয়ে উঠে বর্ণালী। রেলিঙের উপর হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়। না চাইতেও ইভানের দিকে নিজেকে ফিরায়। ইভানের দু’হাত এখনো বর্ণালীর দু’দিকে রেলিঙে ধরে বেঁধে রেখেছে। সে না পারছে এদিক যেতে আর না পারছে ওইদিকে যেতে।
চোখের পাতা আলগা করে তাকাতেই দেখে ইভান ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওই চোখে আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে সে আর নিজেকে ওর থেকে দূরে সরাতে পারবে না। তাই চট করে চোখ নামিয়ে নেয়। রেলিঙের উপর থেকে ইভানের হাত সরানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
-” আমার একটা হাত সরানোরও শক্তি নেই তোমার? ছিঃ ছিঃ খাও না তুমি? একটু খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করো। নাকি কলিকাতা হারবাল লাগবে?”
বর্ণালীর চোখ সাত আসমান উপরে উঠে যায়। এই ছেলে এসব কি বলে!
-“কিসব বলছো? লজ্জা তো একটুও নেই। এখন দেখছি কথা কীভাবে বলতে হয় সেই বোধশক্তিটাও রাখছো না।”
-“তোমার কাছে আমি সবসময় নির্লজ্জ হতে রাজি।”
-“সরাও হাত আমায় যেতে দাও।”
-“আচ্ছা আমাকে নিউ লুকে কেমন লাগছে বললে না?”
-“একদম ফেরিওয়ালা চাচা।”
-“মানে?”
-“মানে আমাদের বাসায় যে ফেরিওয়ালা চাচা আসে ঠিক তার মতোই লাগছে।”
-“এবার সরো।”
-“আচ্ছা! তবে রে।”
-“কি তবে রে?”
-“দেখাচ্ছি মজা।”
-“কি দেখাবে? মানে কি?”
-“দেখবে?”
-“হ্যাঁ দেখাও।”
ইভান বর্ণালীর গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে দাড়ি দিয়ে ঘষতে লাগে। দাড়ির খোঁচা খেয়ে বর্ণালী নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে না পেরে পিঠ নিয়ে ঠেকায় রেলিঙের মাঝে। এই প্রথম কোন ছেলের দাড়ির খোঁচা খেয়েছে। চোখ বন্ধ করে খালি গলায় ঢোক গিলে ইভানের ঘাড়ের পাশে শার্ট খামচে ধরে। নখের আঁচড় বসিয়ে দিচ্ছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার। এ কেমন যন্ত্রণা! দাড়ির খোঁচাতে ব্যাথা পাচ্ছে বর্ণালী কিন্তু এই ব্যাথা তার কাছে ভালো লাগছে কেন! নাহ নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা সে। গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ধাক্কা খেয়ে খানিকটা পেছনে চলে যায় সে। দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে বর্ণালী।
-“কেমন লাগলো?”
এক চোখ মেরে ইভান প্রশ্ন করে তাকে। ইভানের এমন প্রশ্নে বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ধুকপুক ধুকপুক করছে বুক। এ কেমন অনুভূতি ছিলো! বলে বুঝানো সম্ভব না তার পক্ষে।
দৌড়ে চলে যেতে চাইলেই ইভান তার একটা হাত চেপে ধরে।
-“বাসন্তী,”
আবারো সেই ভালোবাসার নামে ডাকছে ইভান তাকে। এতো সুখ লাগে কেন ওর এই ডাকে। বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েকগুণ। ইভান আবারো বলতে শুরু করে।
-“আমাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আগের মতো মেনে নিচ্ছো মনে রেখো এমন আরো হাজারো মধুর জ্বালা সহ্য করতে হবে। নতুন নতুন রুপে জ্বালাবে তোমাকে তোমার এই বসন্ত পথিক।”
বর্ণালী কোন কিছু না বলেই ওর হাত থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এতোক্ষণ সে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটি পড়ছিলো। সজিবের রুম থেকেই এনেছে বইটা সে। ইভানও ব্যালকনি থেকে রুমে আসে।
-“কিছু ঠিক হলো?”
ইভান দু’দিকে মাথা নেড়ে না করে।
-“ঠিক হয়ে যাবে টেনশন করো না। অনেক ভালোবাসে পাগলীটা তোমায়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে চায় না।”
-“জানি আমি আমার বাসন্তী তার বসন্ত পথিককে অনেক ভালোবাসে।”
-“আচ্ছা চলো বাইরে চলো।”
-“হুম চলো।”
ইভান আর রুমু বাইরে আসতেই দেখে বর্ণালী তার কাজিনদের সাথে বসে গল্প করছে আর পিয়াজু খাচ্ছে। ইভান ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পিয়াজু কেউ এভাবে খায় তার জানা ছিলো না। মুখের ভেতর একটা অংশ নিয়ে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে দাঁত দিয়ে কামড়ে নেয়। ওর দিকে তাকাতে লেগে ইভান কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো। কারো সরি শব্দে তার দেখায় ব্যাঘাত ঘটায়।
💛
#_____চলবে………..
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/129999135337112/