#ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৫৩
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
জল গাল বেয়ে আসতেই দুইজোড়া ঠোঁট তাদের পিষে ফেলছে। মিষ্টি স্বাদের সাথে নোনাপানির স্বাদ মিশে এক অন্যরকম স্বাদ গ্রহণ করছে ইভান। বর্ণালী ঠোঁটের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে ওর বুকের মাঝে রাখা হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিতে লাগলো। মুখ দিয়ে গুঙিয়ে আওয়াজ বের হয়ে আসছে। ইভানের ঠোঁট আরো গভীর হতে লাগে। ওর গলার মাঝে হাত রেখে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে কানের পাশে ঘুরাতে লাগে। বর্ণালী নিজের ঠোঁট তার ঠোঁটের ভেতর থেকে বের করে পেছনে সরে যেতেই ইভান আবার ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার নেশায় তার দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ও ঠোঁটের উপর হাত রেখে মাথা দু’দিকে ঘুরিয়ে না করে৷ ইভান মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে দেয়। এতো কিউট করে না করে কেউ! ওর দু’হাত ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বলে,
-“সরি।”
বর্ণালী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। গালের উপর হাত রেখে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে ওর নোজ পিনের উপর স্পর্শ করে বললো,
-“এটাতে তোমাকে অনেক আগেই দেখতে চেয়েছিলাম। ভাবতে পারিনি আজ দেখতে পাবো। আজ আমি অনেক খুশি বাসন্তী।”
-“আমি যাই ইভান। সবাই হয়তো খুঁজতেছে আমায়।”
ইভান নিজের নাক ওর নাকের সাথে ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। তার দুষ্টু হাত বর্ণালীর কোমড়ে নিয়ে রাখে। আঙুলগুলো দিয়ে নানারকম স্পর্শে কম্পিত করছে ওর শরীর। চোখ বন্ধ করে আছে দুজনেই।
-“ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি তোমায়।”
হঠাৎ ইভানের কথায় বর্ণালী চোখ বড় বড় করে থাকায়। কিন্তু ওর বলতে দেরি হয় কামড় বসাতে দেরি হয় না। নাকের উপর কামড় বসিয়ে দেয়। বর্ণালী ব্যাথা পেয়ে তার বুকের উপর আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,
-“আহ! ছাড়ো ইভান।”
-“ছাড়বো না এই জীবন থাকতে।”
-“তুমি শুধু এসবের জন্যই আমার কাছে আসো না? এসবের জন্যই ভালোবাসো?”
-“আচ্ছা! এসব কোনসব?”
বর্ণালী আমতা আমতা করে বলে,
-“ও….ওই তো এতক্ষণ যা করলে।”
-“কি করলাম?”
-“একদম অবুঝ সাজবে না ইভান।”
-“হাহা ওকে সরি। আচ্ছা আমি নাহয় এসবের জন্য তোমার কাছে আসি আর তোমায় ভালোবাসি কিন্তু তুমি কেন বাঁধা দাও না?”
বর্ণালী চুপ হয়ে গেছে। এখন ওর নিজেকে সমান অপরাধী মনে হচ্ছে। আসলেই তো সেও তো বাঁধা দেয় না। এক তরফা তো কখনোই কোন কিছু সম্ভব না। সেটা যাই হোক না কেন। ওর সম্মতি আছে দেখেই ইভান এগুতে পারে, না-হয় সে এমন সাহস করতোই না। সে নিজেও ইভানের এমন স্পর্শ অনুভব করতে চায়। হারাতে চায় ইভানের প্রতিটি মাদকতাময় স্পর্শে। ইভানের মাঝে এমন কি আছে, যা ওকে এভাবে টানে? সে নিজেও জানেনা।
বর্ণালী ওর পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেই ইভান বলে,
-“একবার নিজেকে আয়নায় দেখো।”
উল্টো ঘুরে আয়নায় নিজেকে দেখে বর্ণালী লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। ওর শাড়ির কোন ঠিক নেই। চুল এলোমেলো হয়ে আছে। গালে,গলায়, হাতে আরো অনেক জায়গায় হলুদ লেগে আছে। ইভানের দিকে সে তাকাতেও পারছে না। ওর এমন অবস্থা দেখে তার নিজেরও হাসতে হাসতে ভেতর ফেটে যাচ্ছে। টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে হলুদ মুছতে লাগে। কিন্তু হলুদের রঙ উঠছে না। তাই আর উঠানোর চেষ্টা না করে চট করে শাড়ি, চুল ঠিক করে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইভান পেছনে ডাকলেও আর দাঁড়ায় না। বর্ণালীর মুখ থেকে হাসি সরছেনা। ইভান আজ ওকে এ কেমন সুখের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলো! ভাবতেই শরীর শিহরিত হচ্ছে। ছাঁদে এসে দেখে এখনও সজিব আর ঈশার হলুদের অনুষ্ঠান চলছে। ইভানও ওর পিছু পিছু চলে আসে। বর্ণালী রুমুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কোথায় ছিলি তুই? অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
-“আচ্ছা! কার মুখে কি শুনছি আমি? আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলি না রোমান্সে ব্যাস্ত ছিলি?”
রুমুর মুখে এমন কথা শুনে বর্ণালী ওর মুখ চেপে ধরে বলে,
-“ধীরে রুমু কীসব বলছিস?”
-“জান তোমাকে খুঁজতে আমি নীচে গিয়েছিলাম। আচ্ছা রোমান্স করবি ভালো কথা দরজাটা বন্ধ করে রোমান্স করলে কী হতো? আমার মতো বান্ধবী থাকায় আজ দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো। অন্য কেউ দেখলে তো এতোক্ষণে কি রেজাল্ট আসতো বুঝতেই পারছেন।”
এই প্রথম বর্ণালী রুমুর সামনে লজ্জা পাচ্ছে। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে ও।
-“আচ্ছা আর লজ্জা পেতে হবে না। আহারে লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছিস। ইভান তোকে এভাবে দেখলে তো তোর ঠোঁট বাদ দিয়ে গাল দুটো খেয়ে ফেলবে।”
-“রুমুউ!”
-“হাহা বাই দা ওয়ে, তোমার রোমান্সের সাক্ষী কিন্তু আরো তিনজন আছে।”
-“মা….মানে?”
-“আজ্ঞে হ্যাঁ।”
ভয়ে বর্ণালীর চোখে জল জমে গেছে। রুমু ওকে শান্ত করতে বললো,
-“আরে আরে রিলাক্স যারা দেখেছে তারা তোর শুভাকাঙ্ক্ষী। তাদের দিয়ে তোর কোন ক্ষতি হবে না।”
-“কিন্তু কারা ছিলো?”
আসলে আমি নীচে যাচ্ছিলাম দেখে তোর কাজিন আইনান আমার সাথে যায়। ছেলেটা না আমার পিছু নিয়েছে রে। ওই দেখ এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।”
বর্ণালী চেয়ে দেখে আসলেই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আবার রুমুর কথায় মনযোগ দেয় সে।”
-“আমরা সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখি অলরেডি দুইজন ঈশার রুমের দরজায় চোখ বিছিয়ে আছে। সে দুজন আর কেউ না, নিধি আর জেনি। আমরাও উৎসুকভাবে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে যা দেখলাম লজ্জায় তো আমি শেষ। আইনান সাথে না থাকলেও না হয় কোন সমস্যা ছিলো না। কিন্তু একটা ছেলের সাথে এসব রোমান্টিক সিন দেখাটা কেমন লাগে না? আমি ওদের কান ধরে সরিয়ে আলতো করে দরজা বন্ধ করে দেই।”
-“তারপর?”
-“তারপর আর কি চারজন মিলে প্রমিজ করি যে যা দেখেছি তা আমাদের বাইরে আর কারো কানে যাবেনা।”
-“আইনান ভাইয়া কিছু বলেনি?”
-“নাহ সে শুধু মিটিমিটি হাসছিলো।”
-“আসলে আইনান ভাইয়া অনেক শান্ত প্রকৃতির মানুষ, চুপচাপ স্বভাবের। কিন্তু আমি বড় ভাই, ছোট বোনদের সামনে মুখ দেখাবো কীভাবে!”
-“ওরা ছোট বোন? জানিস সব ওদের প্ল্যান ছিলো।”
-“মানে ওইযে ইভানের পাঞ্জাবী পছন্দ করে দেয়া আর তোকে কেক খাইয়ে দেয়া।”
-“পাজি মেয়েগুলো কোথায়?”
-“পাজিগুলো দেখ আবার কি প্ল্যান করতে ব্যাস্ত। যাই হোক সব কথার এক কথা হলো তোদের মাঝে সব ঠিক হয়েছে সেটাই আলহামদুলিল্লাহ। এবার মিষ্টিমুখ করো। অপ্স সরি তুমি যে মিষ্টি খেয়ে এসেছো তার কাছে তো এখন পৃথিবীর সব মিষ্টিই হার মানবে।”
-“রুমুউ প্লিজ, এভাবে বলিস না।”
-“আহা আহা লজ্জাবতী আমার।”
দুজনেই হেসে দেয়। ইভান দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের এমন হাসি দেখছে। বর্ণালীর ভয় জাগছে ইভানের দিকে এগিয়ে ও কোন ভুল করে নিতো! ইভানের দিকে চোখ পড়তেই যেনো সব ভয় হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ইভানের ঠোঁটে হাসি লেগে আছে। ওই হাসির জন্য সে সব করতে পারবে। ইভান নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছন দিকে ঘুরে তাকায়। পেছনে তাকাতেই দেখে জয় দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথেই ওর হাসি মুখটা গম্ভীরমুখে পরিণত হয়।
-“কেমন আছো ইভান?”
-“হ্যাঁ এইতো ভালো। আপনি?”
-“এইতো আমিও ভালো।”
-“ওকে এঞ্জয় দিস পার্টি।”
কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই জয় বলে,
-“এঞ্জয় তো আপনি করছেন তাও আমার জিনিসের সাথে।”
ইভান থমকে গিয়ে ওর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলে,
-“একদম জিনিস বলবি না, না-হয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
আইনান পাশেই ছিলো ওদের এভাবে দেখে তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে এসে জয়কে ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়৷ জয় হাসতে হাসতে বলে,
-“দূরে থাকো, আমার জিনিস থেকে।”
ইভান আবার ওকে মারার জন্য এগুতে নিলে আইনান ওকে বাঁধা দেয়। বর্ণালী আর রুমু দূর থেকে সব কিছুই দেখছে। জয় ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে চলে যায় বর্ণালীর বাবার কাছে।
রুমু বর্ণালীকে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। রুমু ইভানকে জিজ্ঞেস করে,
-“জয়ের সাথে কি হয়েছে?”
-“কিছুনা, তোমাদের যেনো আমি ওর সাথে আর না দেখি।”
কথাটা বলেই ইভান হনহন করে স্টেজের দিকে চলে যায়। মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। সাহারা ইসলাম ছেলের চুলগুলো ঠিক করে বলেন,
-“পাঞ্জাবীর দাগ হয়তো ধুয়ে দিলেই মুছে যাবে কিন্তু গায়ে লাগানো দাগ এতো সহজে মুছে না।”
ও নিজের দিকে তাকাতেই দেখে বুকের পাশে পাঞ্জাবির উপর হলুদ লেগে আছে৷ কারো খামচে ধরার মতো দাগটা বসে গেছে। হুট করে খেয়াল হলো এটা তো বর্ণালীর হাতের ছাপ। মা কি কিছু বুঝলো এটা ভেবে চিন্তার রেখা মাথার ভাঁজে স্পষ্ট ফোটে ওঠে আবার ভালোবাসার মানুষের হাতের ছাপ দেখে ঠোঁটের কোণে হাসিও ফোটে ওঠে। এই পাঞ্জাবীটা সে যত্ন করে রাখবে। কিন্তু এখন মাকে সামলাতে হবে তার। গলা ঝেড়ে বলে,
-“আরে না মা গায়ে লাগে নি। ওই এটুকু হলুদ কীভাবে যে লেগে গেছে খেয়াল করিনি।”
-“এরপর থেকে খেয়াল রেখো। দাগ যেনো গায়ে না লাগে। যাও তোমার বুমনিকে হলুদ লাগিয়ে দাও।”
ইভান মায়ের কথাটা ঠিকভাবে বুঝতে পারলো না। কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে নিলেই সাহারা বেগম বলেন,
-“যাও যাও অনেকক্ষণ ধরে তোমার বুমনি তোমায় খুঁজছিলো, হলুদ লাগিয়ে আসো।”
ইভান আর কথা না বাড়িয়ে ঈশা আর সজিবকে হলুদ লাগিয়ে দেয়।
.
.
ঈশার মেহেদী লাগানো শেষ। বর্ণালী মেহেদী দিতে জানেনা। রুমু আবার অনেক সুন্দর মেহেদী দিতে পারে। বর্ণালীকে বসিয়ে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে। ইভান বর্ণালীর পেছনে এসে বসে রুমুর সাথে গল্প করতে লেগে যায়। জেনি নিধিকে পরিয়ে দিচ্ছে। ইভান আয়েশ করে ওর সাথে লেগে বসে বললো,
-“রুমু ওকে শেষ করে আমাকেও পরিয়ে দিবে।”
-“ছেলেরা মেহেদী পরে না।”
-“কিন্তু আমি তো মেয়েদের মতো মেহেদী পরবো না। শুধু একজনের নাম লেখাবো।”
রুমু বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে চোখ মারে। বর্ণালী উল্টো ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ইভান এদিক ওদিক তাকিয়ে বর্ণালীর শাড়ির ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। আবারো সেই আঁকিবুঁকির খেলা শুরু করে দিয়েছে সে। সবার সামনে এমন কিছু ঘটবে কল্পনাও করতে পারেনি। ওর চোখ যেনো বেরিয়ে আসবে এমন ভাব। নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মুচড়ো মুচড়ি শুরু করে দেয়। ইভানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। কিন্তু সে ওর দিকেই তাকাচ্ছেনা। হাতে মেহেদী পরছে তাই নড়তেও পারছেনা। একটু নড়লেই রুমু ধমক দেয়। এদিকে ইভান তার দুষ্টুমি বন্ধ করছেনা। হঠাৎ করেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। হৈ-হুল্লোড় লেগে যায় সবার মাঝে। অনেকেই মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে। ইভান যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেলো। বর্ণালীর কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়। ওর সম্পূর্ণ শরীর শিউরে ওঠে। চোখ বন্ধ করে ইভানের পেটের পাশে পাঞ্জাবী খামচে ধরে। ভালোবাসার পরশে তাকে এক অন্য ভুবনে নিয়ে যাচ্ছে। ইভানের প্রতিটা ছোঁয়া ওর ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে সম্পূর্ণ গলায়। চিবুকের ডানপাশে আলতো করে কামড়ে ধরে। বর্ণালী চোখ বন্ধ করে ওর গালের উপর পাশে কামড়ে ধরে। কম্পিত হচ্ছে দু’জনার শরীর বেড়ে গেছে হৃদস্পন্দন। এদিকে জেনারেটর চালু করার জন্য কল করা হয়েছে কিন্তু এতোক্ষণ ধরে হচ্ছেনা। আলো জ্বলে উঠতেই ইভান ওর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। বর্ণালী দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে বসে। রুমু, জেনি আর নিধি হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। কেননা বর্ণালীর হাতের মেহেদীর ছাপ ইভানের পাঞ্জাবীতে লেগে আছে।
-“তোদের শুধু একটু সুযোগ চাই না? সুযোগ পেলেই দু’জনে লেগে যাস! কত কষ্ট করে মেহেদী পরিয়ে দিলাম আর তুই তা ইভানকে লাগিয়ে দিলি?”
ইভান লজ্জায় উঠে চলে যায়। ওর পাঞ্জাবীর ১২টা বেজে গেছে। চেঞ্জ করতে হবে৷ আর এখানে থাকাও যাবেনা, নাহলে ওরা তাকে লজ্জা দিতে ছাড়বেনা। বর্ণালী বেচারি চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে আছে। রুমু হুট করে ওর মুখে হাত দিয়ে ডান দিকে ফেরায়। চিবুকের পাশে লাল হয়ে আছে দেখে বলে,
-“লাভ বাইট না?”
বর্ণালী লজ্জায় কথা বলতে পারছেনা। এভাবে ইভান ওকে লজ্জায় ফেলে চলে গেলো। একবার তাকে হাতের কাছে পেয়ে নিলেই ওর খবর খারাপ করবে। তিনজনে ওর এমন অবস্থা দেখে একসাথে হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
-“আমি হাত ধুয়ে আসি।”
কথাটা বলেই বর্ণালী উঠে যায়। রুমুও ওর পেছন পেছন যায়। আজকে ওকে জ্বালানোর একটা সুযোগও ছাড়বেনা সে। এদিকে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে এসেছে, সজিবরা এখন চলে যাবে বাসায়। অথচ ঈশা তার সাথে একটা কথাও বলেনি। যখনই কথা বলতে চেয়েছে ঈশা অন্য কারো সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে। এখনও ঈশার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু ওকে নীচে নিয়ে গেলো সবাই। রুমু নীচে নামতেই ঈশার সামনে পড়লো। দুজনেই দুজনকে দেখে হাসি বিনিময় করে। রুমু যেতে চাইলেই ঈশা বললো,
-“রুমু শুন, তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।”
-“হ্যাঁ বল।”
ঈশা আশেপাশের সবাইকে যেতে বললে সবাই ওদের একা রেখে চলে যায়।
-“কি হলো? সবাইকে যেতে বললি যে? কিছু কি হয়েছে?”
-“সরি রুমু।”
-“মানে কি? সরি কেন?”
-“সজিবের সেই কাজের জন্য।”
-“ওহ!!!! আমাদের এসব বিষয়ে কথা না বলাই উচিৎ ঈশা। আমি চাই তোদের বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে হয়ে যাক।”
ঈশা হুট করে রুমুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
-“সরি রুমু, সরি।”
-“হুস! চুপ কর ঈশা কেউ দেখলে ভাববে তোর এই বিয়েতে মত নেই। তখন কিন্তু প্রব্লেম হয়ে যাবে হাহা।”
ঈশাকে ছাড়িয়ে ওর চোখের জল মুছে দেয়।
-“আমি কি কোন ভুল করছি রুমু?”
-“উহু আমার বান্ধবী কেন ভুল করবে? আর আমরা সাথে থাকতে কোন ভুল হতেই পারেনা। তো এইসব বিষয় নিয়ে একটুও ভাববি না। ওই সবজিওয়ালা তোকে কষ্ট দিলে শুধু একবার বলিস ওর হাড় ভেঙে দিবো।”
ঈশা রুমুর কথা শুনে হেসে দেয়। বর্ণালী এসব দেখে নিজের চোখের জল মুছে এগিয়ে আসে ওদের কাছে। তিনজনেই একসাথে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। রুমুর ফোনে রিং হতেই স্ক্রিনে তাকিয়ে নাম্বার দেখতেই ওর ঠোঁটের কোণের হাসিটা যেনো কোথাও হারিয়ে যায়। ওদেরকে কথা বলতে রেখে ফোন নিয়ে আড়ালে গিয়ে রিসিভ করে।
💛
💛
#____চলবে……..
Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/131020271901665/