ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৫৬

0
541

#_ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৫৬
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
দরজায় খট করে শব্দ হতেই ঈশা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সামনে কয়েকটা হাসি হাসি মুখ দেখতে পাচ্ছে, যাদের হাসি দেখে ওর ঠোঁটের কোণেও হাসির রেখা ফুটে ওঠে। জেনি, নিধি আর বর্ণালী দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। ঈশাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে অনেক ক্লান্ত। ওরা রুমে ঢুকতে গেলে বর্ণালী বললো,
-তোরা যা আমি আসছি।
-মানে কী? ভাবীর সাথে একটু গল্পও করবো না?
-কাল করিস, এখন রুমে যা।
-আরে বর্ণ আসতে দে না।
ঈশার কথা শুনে বর্ণালী পেছন ফিরে তাকিয়ে ওদের রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
-আরে এমন কেন করলি? ওদের খারাপ লাগবে না? একটু গল্প করলে কি হতো?
-লাগবে না খারাপ, এখন তুই যা ফ্রেশ হতে আর আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিস।
-একটু বস না গল্প করি।
-গল্প করতে বসলে তোর মাথা ব্যাথা হবে, এমনিতেও হয়তো হচ্ছে কিন্তু বলছিস না। যা ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আয়।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
-কাল সকালে রেডি থেকো ভাবী।
-কেন?
-রাতে যা যা হবে সব কিন্তু বলতে হবে।
ঈশা মৃদু হেসে আর কথা বাড়ায় না, বর্ণালীও রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই সজিবের আগমন হয় রুমে। ঈশাকে একদম সদ্য ফুটে ওঠা কোন গোলাপ লাগছে। চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে এদিকেই আসছে। সজিবকে চোখের সামনে দেখে ওখানেই থমকে যায়। সজিব তাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে। ঈশা নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তোয়ালেটা সোফার উপর রেখে দায়। সজিব নিজের সংকোচ ঝেড়ে বললো,
-ইভান আর আন্টি এসেছেন।
মুহুর্তেই ঈশার ঠোঁটের মাঝে হাসি দেখা দেয়।
-কখন আসলেন? কোথায় এখন?
-ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-হ্যাঁ।
ইভান এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে বারবার। তার চোখ দু’টো বর্ণালীকেই খুঁজছে। সবাই গল্পের আসর জমিয়ে দিয়েছে তখনই বর্ণালী ফোন কানে দিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। ওর চোখে-মুখে চিন্তার স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে। ইভান ও তার মাকে চোখের সামনে দেখে বর্ণালী ওড়না টেনে মাথায় দেয়। সাহারা ইসলামকে সালাম জানায়। ইভানের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
রাত্রে তাদের খাবার ব্যবস্থা করতে হবে। ঈশা বাইরে এসে মা, ভাইকে দেখে চোখের জল ছেড়ে দেয়। সাহারা বেগমের চোখেও পানি। ইভানকে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেকক্ষণ। মায়ের পা ধরে সালাম করে তার পাশেই বসে।
-বাবা এলো না কেন মা?
-আসবে একটু পর। একটা কাজে আটকে গেছে সে।
-আচ্ছা।
কিছুক্ষণ পর সজিবও এসে গল্পে যোগ দেয় তাদের সাথে। কিন্তু ঈশা এখনও ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলছে না। ইভান বর্ণালীর সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। কতক্ষণ ধরে রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকেছে আর এলোই না সামনে।
.
.
সবাই খাবার টেবিলে বসেছে। ঈশার বাবাও এসে গেছেন। বর্ণালী খাবার দিচ্ছে সবার প্লেটে। ইভানের প্লেটে ইচ্ছে করে বেশি দিয়ে দেয়। ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় কিন্তু ও তার দিকে তাকাচ্ছেই না, উল্টো মিটিমিটি হাসছে। ইভান ভালো করেই বুঝতে পারছে তাকে জব্দ করার জন্য এসব করছে। সেও সুযোগের অপেক্ষায় আছে। একবার একা পেলেই বুঝাবে মজা।
ঈশা খাবার টেবিলে বসেছে ঠিকই কিন্তু খেতে পারছে না। সজিব ওর পাশেই বসেছে সে নিজেও খেতে পারছেনা। বর্ণালী তাদের খেতে দিয়ে ফোন নিয়ে আবারো রুমে চলে যায়। সেই কখন থেকে রুমুকে কল দেয়ার চেষ্টা করছে। ঈশাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় থেকেই রুমুর আর দেখা পায়নি সে। বাড়িতে আসার পর ওর কাপড়ের ব্যাগটাও আর খুঁজে পায়নি। সব কিছু নিয়েই গেছে। কিন্তু বলে তো যেতে পারতো। রুমুর উপর রেগে আছে অনেক। কিছুক্ষণ আগেও কল ঢুকলো কিন্তু এখন ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। টেনশন হতে শুরু করেছে। এতো টেনশন না করে ওর ভাবীকে ফোন দিলেই খবর পাওয়া যাবে। কথাটা মাথায় আসতেই বিছানা থেকে ফোন নিয়ে রুমুর ভাবীর নাম্বার খুঁজতে লাগে৷ দরজায় কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পেছন ঘুরে তাকাতেই ইভানকে দেখে ভয়ে ওর আত্মা কেঁপে উঠে। দ্রুত ইভানের কাছে গিয়ে বললো,
-তুমি এখানে কেন এসেছো? কেউ দেখকে সর্বনাশ হয়ে যাবে ইভান। প্লিজ যাও এখন পরে কল দিবো।
ইভান কোন কথা না বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়। ও আরও বেশি ভয় পেতে লাগে। ওকে খুঁজে কেউ এখানে আসলে তো সব শেষ। এই ছেলেটা কেন এতো পাগলামো করে। ইভান পায়ের উপর পা তুলে ওর বিছানায় শুয়ে পড়ে।
বর্ণালী ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি যাবে?
ইভান ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাত ধরে একটানে বুকের উপর নিয়ে নেয়। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেছে। সব চুল তার মুখের উপর এসে পড়েছে। ইভান হাত দিয়ে চুল ওর কানের পেছনে গুজে দেয়। মুখটা তার কাছে নিয়ে চিবুকে আলতো করে চুমু খায়। বর্ণালীর দু’চোখ বন্ধ করে আছে। ওর ঠোঁট প্রচন্ডভাবে কাঁপছে। ইভান মিটিমিটি হেসে ওর কানে চুমু খেয়ে বললো,
-ভালোবাসি আবেদনময়ী।
বর্ণালী চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে দেখে ইভান ওর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-আবেদনময়ী?
– হ্যাঁ আবেদনময়ী।
-কীভাবে?
-আমার চোখে তাকিয়ে নিজেকে দেখার চেষ্টা করো তাহলেই বুঝবে কেন বলছি।
বর্ণালী ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখার চেষ্টায় লেগে পড়ে। কিন্তু নিজেকে খোঁজার চেষ্টায় কখন সে তার চোখের মাঝেই হারিয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। ইভানের আরো কাছে গিয়ে ওর চোখের উপর গভীর চুমু এঁকে দেয়।
-তো….তোমার ওই চোখ দুটো আমায় খুব টানে ইভান।
বর্ণালীর কন্ঠ এই মুহুর্তে স্পষ্ট নয়। কেমন ধীর নেশাভরা কন্ঠে কথা বলছে। কথাগুলো নিশ্বাসের সাথে বারবার এসে বাজছে। নিশ্বাস এতো জোরে জোরে নিচ্ছে কেন ও! বর্ণালী ইভানের দিকে একেকরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তার মুখের এখানে ওখানে হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। দাড়িতে বারবার হাত বুলাচ্ছে।
-তোমার দাড়ির উপর আমি ক্রাশ খেয়েছি। এই দাড়ির দিকে আমি প্রায়শই তাকিয়ে থাকি হয়তো তুমি তা খেয়াল করোনি কখনো।
কথাটা বলেই ওর দাড়িতে নিজের গাল ঘষতে লাগলো। ইভান চোখ বন্ধ করে ওর পাগলকরা স্পর্শ অনুভব করছে। তার চিবুকে আলতো কামড় বসিয়ে দিতেই সে বর্ণালীর পেটের পাশে চাপ দিয়ে ধরে। বর্ণালী নাক লাগিয়ে চুপচাপ এভাবেই ইভানের উপর আধশোয়া হয়ে আছে। ওর উষ্ণ নিশ্বাস এসে তার সম্পূর্ণ গলায় ছড়িয়ে পড়ছে। ইভান খালি গলায় ঢোক গিলে নিজের বুকের সাথে তার বাসন্তীকে জড়িয়ে ধরে। বাসন্তী যে আজ নিজের মাঝে নেই সে তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। বর্ণালী মুখ তুলে ইভানের মুখের দিকে তাকায়। খুব ভালো করে তাকে দেখছে। ইভান ওর এমন তাকানো দেখে জিজ্ঞেস করলো,
-বাসন্তী, কী হয়েছে তোমার? কী দেখছো এভাবে?
বর্ণালীর কানে এসব কোন কথাই যাচ্ছেনা তার ঠোঁটের নড়াচড়া খেয়াল করছে। কথা বলার সময় তার কণ্ঠনালী কি সুন্দর ওঠানামা করছে। নিজের ঠোঁট দিয়ে ও ইভানের কণ্ঠনালীতে চেপে ধরে গভীরভাবে চুমু খেতে লাগে। চোখ বন্ধ করে নেয় ইভান। বর্ণালীর এমন স্পর্শ ওকে পাগল করে দিচ্ছে। এখনই থামাতে হবে নাহলে আজ বর্ণালী ওকে কোন কিছুতেই বাঁধা দেবে না। হয়তো ভুল কিছু ঘটে যেতে পারে। যার জন্য পরে অনুশোচনায় ভুগতে হবে দুজনকেই। ইভান ওর গালের উপর হাত রেখে মুখটা তুলে ধরেতে চায়। কিন্তু বর্ণালী ওর মুখ শক্ত করে তার গলায় চেপে ধরে আছে। ইভান ধীরে ধীরে ওকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। এখন আরো শক্ত করে ইভানের গলা জড়িয়ে ধরে আছে ও। কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। বর্ণালীকে ছাড়াতেও পারছে না। কোন উপায় না পেয়ে ইভান বর্ণালীর গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়৷ একের পর এক চুমু খেয়ে যাচ্ছে। দু’হাতে ইভানের চুল খামচে ধরে বর্ণালী। পা দিয়ে বিছানায় শক্ত করে চেপে ধরে আছে। নিজেকে ইভানের মাঝে বিলিয়ে দিতে চাইছে ও। ইভানের ঠোঁটজোড়া বর্ণালীর বুকের উপর নিয়ে গভীর চুমু খাচ্ছে। ও তার মাথার পেছনে আরো শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। ইভানের ঠোঁটের চলন ওর বুকের উপর গভীর হচ্ছে। বর্ণালীর শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। নিজেকে শূন্যে অনুভব করছে যেখানে ইভান ওকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সেও ভাসতে চায়। হুট করেই ইভান ওর উপর থেকে উঠে বসে। বর্ণালী চোখ খুলে বাস্তবে ফিরে আসে। এতক্ষন সে কোন সুখের স্বপ্নের সাগরে ভাসছিলো। ও উঠে বসে নিজের শরীরের দিকে তাকাতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে। কাপড়ের কোন ঠিক নেই। জামা অনেকটা বুকের দিকে নীচে নেমে এসেছে। পেটের উপর জামা নেই উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। চট করে জামা ঠিক করে ওড়না বুকে জড়িয়ে দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে৷ ইভানও লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছে না। বর্ণালীকে শান্ত করতে সে এমন কাজ করেছে। এমনটা না করলে বর্ণালী কখনোই নিস্তেজ হতো না। যেভাবে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো, ভাবতেই পারছেনা এতো শক্তি ওর মাঝে ওই মুহুর্তে কোত্থেকে আসলো! ইভান শার্টের উপরের বোতাম লাগাতে লাগাতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্ণালী বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে দাড়িয়েছে। লজ্জায় কথা বলতে পারছে না। ইভান আয়নায় স্পষ্ট ওর লজ্জায় গোলাপি থেকে লাল হয়ে ওঠা গাল দেখতে পাচ্ছে। বর্ণালীর পাশে গিয়ে ওর হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে আসে। ওর কাঁধের উপর থুতনি রেখে বললো,
-আমার লজ্জাবতী’র গাল দুটো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
বর্ণালী আয়নার দিকে তাকাতেই পারছেনা। ইভান ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তার সামনে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে। পেটের উপর থেকে ড্রেস সরিয়ে ‘ইবর্ণ’ লেখাটার মাঝে আলতো করে চুমু খায়। বর্ণালীর সম্পূর্ণ শরীর শিউরে ওঠে। কম্পন বয়ে যায় শরীরে। অবস্থান ঠিক রাখতে না পেরে টেবিলের সাথে গিয়ে লাগে। ইভান উঠে দাঁড়িয়ে ওর কপালে চুমু এঁকে আবারো আয়নার দিকে ফিরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-ও বউ, বউ গো।
ইভানের এমন ডাকে বর্ণালীর শরীরে কেমন একটা শিহরণ জাগায়। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ইভান ওর দিকে তাকিয়ে উন্মুক্ত পেটের সেই লেখার উপর আঙুল দিয়ে স্পর্শ করছে। গভীর নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আবারো। হাত উলটে ইভানের গালে রেখে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-তুমি আমার পেটে এটা কখন লিখলে?
-মনে নেই? ওই যে ছাঁদে যখন তোমার শাড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে তোমার পেটে আঁকিবুঁকি করছিলাম তখনই মেহেদী দিয়ে এটা লিখেছি।
-মানে? না দেখে কীভাবে করলে তুমি এটা?
-তোমার হাজবেন্ডের আরো কত ট্যালেন্ট আছে ধীরে ধীরে টের পাবে।
-বিয়ে না করেই হাজবেন্ড?
-আরে আজকে সকালেই না বিয়ে করলাম?
-ওহ হাহাহা হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
-বিয়ে করে ভুলে যাও না? কখন না আমাকেই ভুলে যাও।
কিছুটা অভিমানী স্বরে কথাটা বললো ইভান। বর্ণালী তার হাত থেকে জামা নামিয়ে পেছন ফিরে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
-কোন মেয়ে কী তার জান থাকতে কখনোই তার স্বামীকে ভুলে? কখনোই সম্ভব না এটা।
ইভান ওর কোমড়ে হাত রেখে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে।
-ভালোবাসি বাসন্তী বউ।
বর্ণালী অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-বাসন্তী বউ?
– হ্যাঁ আমার বাসন্তী বউ।
-হয়েছে যাও এবার। দেখেছো কত দেরি করে ফেলেছো?
-আজকে বিয়ে করেছি আর বউয়ের সাথে বাসর করবো না? বাসর না হয় নাই-বা করলাম একটু আদর তো পেতেই পারি। তা নিতে যদি দেরি হয় নো সমস্যা।
-যাহ দুষ্টু কোথাকার, অনেক আদর পাওয়া হয়েছে এবার যাও।
ইভান আবারো ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে পাগলামো শুরু করে দেয়। বর্ণালী হেসে তার বুকের উপর হাত রেখে আলতো করে ধাক্কা দিতে দিতে দরজার বাইরে বের করে বললো,
-যাও এটুকুই যথেষ্ট। বাকিটা অফিশিয়ালি বিয়ের পর পাবে।
কথাটা বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়৷ দৌড়ে এসে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ চেপে লজ্জামাখা হাসি লুকোনোর চেষ্টা করছে।
ইভান বের হতেই নিধি ও জেনির সামনে পড়ে। একখানা হাসি ঝুলিয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসে।
সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়। পরিবারের সবাইকে বিদায় দেবার সময় যেমন ঈশা অনেক কান্না করছিলো তেমনই ওর মা, বাবা আর ইভানও কান্না করছিল। বর্ণালী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তাদের যাবার পথে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। ওর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। ওপেন করতেই দেখে ইভানের মেসেজ।
“আমার বুমনিটাকে দেখে রেখো প্লিজ।”
বর্ণালী অনেকক্ষণ মেসেজের দিকে তাকিয়ে থেকে রিপ্লে করে।
“সে আমার ভাবী কম, বান্ধবী আর বোন বেশি। আমি ঠিক আমার মতোই খেয়াল রাখবো ওর। একদম ভেবো না।”
ইভান চোখের জল মুছে ড্রাইভ করতে লাগে। তার বিশ্বাস সে ভুল কাউকে ভালোবাসেনি।
.
.
সজিব রুমে এসে দেখে ঈশা বিছানার এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে। লাইট বন্ধ করে সে অন্য পাশে শুয়ে পড়ে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সজিব নীরবতা ভেঙে বললো,
-ঈশু ঘুমিয়ে গেছো?
ঈশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই ওর চোখে কিন্তু এই মুহুর্তে সজিবের সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা ওর তাই চুপ করে আছে। সজিব আবারো ওকে আওয়াজ দেয়,
-ঈশু, ঈশু, ঈশা ঘুমালে?
কোন আওয়াজ পাচ্ছেনা সজিব। ঈশার কাছে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে। পেটের উপর হাত রেখে আলতো করে চাপ দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ঈশার ঘন হয়ে আসা নিশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। ঘাড়ের উপর থেকে চুল সরিয়ে চুমু দিতেই ঈশা নড়ে উঠে বললো,
-প্লিজ সজিব আমি আজকে তৈরী নই এসবের জন্য।
সজিব ওখানেই থেমে যায়। নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ঈশা থেকে সরে এসে বললো,
-ঠিকাছে আমার কোন সমস্যা নেই। তোমার যখন ইচ্ছে তখনই হবে। আমি অপেক্ষা করবো।
ঈশার চোখের জল কান বেয়ে বালিশের উপর এসে পড়ে। নিঃশব্দে কাঁদছে সে, কেন কাঁদছে? চাইলেই তো সে তার সজিবের ভালোবাসা পেতে পারে। সে তো জানে তার সজিব তাকে কতটা ভালোবাসে। একটা ভুল না-হয় করেই ফেলেছে তাই বলে কী এতো বড় শাস্তি দেয়া উচিৎ? নাহ তার বুঝা উচিৎ সে ভুল করেছে। কোন মেয়ে এতোটাই সস্তা নয় এটা তার বুঝতে হবে। আর সে নিজেই তাকে তা বুঝাবে।
ঘুম ভাঙতেই ঈশা নিজেকে বিছানার মাঝ বরাবর পায়। সজিবের অনেকটা কাছে চলে এসেছে। ওর কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। সজিবকে নড়তে দেখে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে কালো একটা ড্রেস পরে বাইরে আসতেই দেখে রান্নাঘরে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। সেদিকেই এগিয়ে যায় ও। সবাই উঠে গেছে। ড্রয়িংরুমের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ৮টা বেজে গেছে। অনেক দেরি হয়ে গেছে ওর। মা বলেছিলো ঠিক ৬টায় উঠতে। কেমন যেন লজ্জা লাগছে ওর৷ এতো দেরি কীভাবে হয়ে গেলো ওর! রান্নাঘরে যেতেই কয়েক জোড়া চোখ ওর পানেই তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে নিজেকে চিরিয়াখানার কোন প্রানী মনে হচ্ছে ওর। শারমিন বেগম এসে ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। বর্ণালী ঈশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে সালাম করতে। ঈশা বুঝে গিয়ে সাথে সাথে নীচে বসে শারমিন বেগমের পায়ে হাত রেখে সালাম করে। ওর দু’বাহু ধরে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ছেলের বউকে তিনি নিজের মেয়ে করে রাখবেন। এমন একটা লক্ষি মেয়েই তো নিজের ছেলের বউ করে চেয়েছিলেন। সজিব টিভি অন করে বসেছে। ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে এক সপ্তাহের জন্য। এই একটা সপ্তাহ ওর কীভাবে যাবে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। আঁড়চোখে বারবার ঈশাকে দেখছে। ঈশা গল্প করছে বর্ণালী ও শারমিন বেগমের সাথে। বর্ণালী মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
-মা আজকে আমি একবার রুমুর বাসায় যাবো।
-আচ্ছা, কখন যাবি?
-এইতো একটু পর।
-তাড়াতাড়ি চলে আসিস। পারলে মেয়েটাকে নিয়ে আসিস।
-আচ্ছা মা।
আজকে ঈশার বৌভাত হতো কিন্তু ঈশার বাবা সজিবদের খরচ কমাতে শেয়ারে টাকা দিয়ে একসাথে বিয়ে ও বৌভাতের অনুষ্ঠান করে নেন। তাই আজকে কোন মেহমান নেই বাড়িতে। শুধু বর্ণালীর চাচী আর ওর কাজিনরা থেকে গেছে। কাল ঈশার যাত্রাতে ওর সাথে যাবে সবাই তাই থেকেছে। ঈশার হাতে নাস্তা দিয়ে ড্রয়িংরুমে পাঠিয়ে দেন শারমিন বেগম। এতোক্ষণ পর সজিব ওকে ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে। সজিবের হাতে যখন চায়ের কাপ ধরিয়ে দিলো সজিবের দৃষ্টি ওর উপরই ছিলো কিন্তু ঈশা একবারের জন্যও তার দিকে তাকায় নি। ট্রে হাতে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সজিব ওর যাবার পানে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ তারপর আলতো করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
💛
💛
#____চলবে……..,.

Previous
https://www.facebook.com/103632171307142/posts/131432615193764/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here