ফাগুন প্রেম পর্বঃ ৬০

0
525

#_ফাগুন_প্রেম
পর্ব: ৬০
লেখনীতে: Bornali Suhana
💛
💛
আচ্ছা আমি কি সজিবের সাথে কোন অন্যায় করছি? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে। কিন্তু কোন জবাব পায়না। রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে সজিব ফোনের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। হালকা হেসে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রান্নাঘরে যেতেই মা সাহারা ইসলামকে দেখে। মায়ের মেজাজ কোন কারণে খারাপ তা বুঝতে বাকি রইলো না ঈশার। কারণটা জানতে পারবে না তাও ভালো করে জানে সে তাই এখন চুপচাপ মায়ের রাগ কমাতে হবে। মায়ের মাইন্ড অন্যদিকে নিতে হবে। তারপর মেজাজ ঠান্ডা হলে নিজে থেকেই বলবে কারণটা কি ছিলো। ঈশা মায়ের পাশে রাখা ছুরি নিয়ে পেয়াজ কাটতে লেগে যায়। সাহারা ইসলাম মেয়ের এমন কান্ড দেখে বললেন,
-আরে আরে এসব কী করছিস?
-কেন? পেয়াজ কাটি।
-তোর কাটতে হবে না বল কি খাবি আমিই করে দিচ্ছি। নাহলে রানু করে দিবে।
তখনই রানু বসা থেকে উঠে বললো,
-হো বুমনি কন কি করুম?
কথাটা বলেই জিভে কামড় দিয়ে আবার বললো,
-সারি সারি, বলো বুমনি কি করবো?
সাহারা ইসলাম আর ঈশা একে অপরের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয়। রানুর কথাগুলো শুনতে তাদের মজা লাগে। ও পুরাই একটা বিনোদনের প্যাকেট। ঈশা রানুর গাল টেনে বললো,
-কী খবর রাণীসাহেবা? আসার পর আমাকে জিজ্ঞেসও করলে না যে কেমন আছি?
-আমি জানি বুমনি তুমি ভালো আছো, তাই তো জিজ্ঞেস করি নাই।
-বাব্বাহ! কথা তো ভালোই শিখে গেছো।
-হিহি হুঁ, তোমার থেকেই তো শিখলাম।
-হ্যাঁ তা দেখতে পাচ্ছি।
সাহারা ইসলাম এবার কিছুটা শান্ত মেজাজে আছেন। মেয়েটা না থাকায় বাড়িটা একদম ফাঁকা ছিলো। ওর এই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো অনেক বেশি মিস করছিলেন। মেয়ের জামাইকে ঘর জামাই করে নিয়ে আসলে ভালোই হতো। কথাটা ভাবতেই ঈশার দিকে একবার তাকালেন তারপর বললেন,
-ঈশু,
-হ্যাঁ মা, বলো।
-তুই কী খুশি আছিস? ওখানের সবার ব্যবহার কেমন রে?
-মা আমি আমার দ্বিতীয় পরিবার পেয়েছি এর থেকে বলার কিছুই নাই। আমি অনেক অনেক খুশি মা, অনেক বেশি।
সাহারা ইসলাম মেয়ের চিবুকে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেন।
-জামাই কী খাবে?
-যা ইচ্ছে দাও, তাই খাবে।
-মানে কী?
ঈশা চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নেয়। কিসব বলছিলো ও!
-না মানে সে মোটামুটি সবই খায়। তোমার জামাই তুমি তোমার পছন্দ মতো করেই রান্না করো মা।
-আচ্ছা যা, জামাইর জন্য নাস্তা নিয়ে যা তুই।
-রাণীসাহেবা যাও তো।
ঈশা নিজে না গিয়ে রানুর হাতে ট্রে ধরিয়ে দেয়। সাহারা ইসলাম রানুকে থামিয়ে বললেন,
-এসব কি করছিস? আমি তোকে যেতে বলেছি।
ঈশা ভয় পেয়ে যায়। মা কিছু বুঝলে আবার সমস্যা হয়ে যাবে তাই আর কথা না বাড়িয়ে কিছুক্ষণ ট্রের দিকে তাকিয়ে হাতে নিয়ে চলে যায় উপরে। সজিব এখনও ফোন টেপাটেপি করছে। ঈশা ট্রে টি-টেবিলের উপর রেখে হুট করে ওর ফোন কেড়ে নিয়ে সজিবের পাশে সোফায় বসে। সজিব মিষ্টি হেসে ট্রে থেকে চা নেয়। চোখের সামনেই ঈশা ও সজিবের বিয়ের দিনের ছবি। সজিব এতোক্ষণ তাহলে এসব করছিলো! ফেইসবুকের ডিপিতে দুজনের ছবি আপলোড দিয়েছে। কংগ্রাচুলেশনস জানিয়ে অনেক কমেন্ট আসছে। একে একে সব কমেন্টস পড়ছে। সজিব ততক্ষণে চা খেয়ে ঈশার পাশ ঘেঁষে বসে। ঈশার কাঁধ থেকে চুল সরিয়ে পেছনে নেয়। ও আবার চুল সামনে আনে।
আবার পেছনে নেয় আবার সামনে আনে। পুনরায় যখন চুল সরাতে চায় তখন চোখ রাঙিয়ে ওর পাশ থেকে উঠে চলে যায়।
.
.
রাতের খাবারের পর বর্ণালী, নিধি আর জেনিকে এক রুমে থাকতে দেয়। বর্ণালী খাটের একপাশে শুয়েছে। মধ্যিখানে জেনি আর ওপর পাশে নিধি। রুমুর ফোনে কয়েকটা কল দেয়। কিন্তু কল ঢুকার সাথে সাথে কেটে যায়৷ ওর নাম্বার রিজেক্ট কলে ফেলে রেখেছে। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। তখনই ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠে। ওপেন করেই দেখে রুমুর মেসেজ।
“কান্না করিস না, আমি খুব ভালো আছি। সময় হলে আমি কথা বলবো তোর সাথে। ততদিন আমার জানের খেয়াল রাখবি নাহলে একদম মেরে ফেলবো।”
মেসেজটা পড়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়ে। সাথে সাথে ও মেসেজের রিপ্লে করে।
“আমার সাথে কথা বল প্লিজ, আমি তো কোন অপরাধ করিনি। আমাকে এভাবে কষ্ট দিস না। কোথায় আছিস প্লিজ এড্রেস দে।”
মোবাইলের বাতি নিভে আসে কিন্তু মেসেজের রিপ্লে আসেনা। অনেকক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে তবুও আর আলো জ্বলে না। ফোনটা হাতে রেখেই আলতো করে বালিশের উপর মাথাটা এলিয়ে দেয়। ইভানের মেসেজের অপেক্ষা এখন।
সজিব খাওয়া শেষ করে রুমে ঢুকে দেখে ঈশা মাত্র গোসল দিয়ে বের হয়েছে।
-তুমি এই অসময়ে গোসল দিলে যে?
-গরমে ঘেমে শরীরটা কেমন কেচকেচ করছিলো তাই।
-ঠান্ডা লাগতে পারে একবার ভাবতে পারতে।
ঈশা চুল মুছতে মুছতে বললো,
-আমার এতো সহজে ঠান্ডা লাগেনা।
-আচ্ছা না লাগলেই হলো।
কথাটা বলেই সজিব বিছানায় কাঁথা টেনে শুয়ে পড়ে। ঈশাও গিয়ে পাশে শুয়ে পড়ে। সজিবের মুখ ওর পানেই করে রেখেছে। চোখজোড়া বন্ধ করে আছে, কেমন মায়া মায়া ভাব তার এই মুখে। ঈশা আলতো করে সজিবের গালে হাত রাখে। সজিব চোখ খুলে তাকাতেই ঈশা ওর কাছে গিয়ে কপালে কপাল ঠেকায়। তার হাত কাঁথার নীচেই ঈশার কোমড়ের উপর রেখে কাছে টেনে নেয়৷ সজিবের কপালে নাক ঘেঁষে চুমু এঁকে বললো,
-সরি।
-কেন?
-কষ্ট দিয়েছি বলে।
-এটা আমার পাওনা ছিলো।
ঈশা আর কোন কথা না বাড়িয়ে সজিবের বুকের মাঝে মাথা লুকায়। আর দূরে রাখতে পারবে না তার ভালোবাসাকে। মুক্ত পাখি হয়ে সজিবের কাছে আজ ধরা দিবে সে। ভুল তো সবাই করে আর ভুলের ক্ষমা করতে হয়। ভালোবাসার মানুষের ভুল কখনো ধরে রাখতে নেই ছেড়ে দিতে হয়। ভুল করেই শিখে আর একসময় সে ভুল শুধরে নেয়।
সজিব ঈশার চুলের গন্ধে নিজেকে হারাচ্ছে। গলায় মুখ ডুবিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে গভীর আবেশে। ভালোবাসার এমন স্পর্শে রক্ত যেনো শরীরে দ্রুত সঞ্চারিত হচ্ছে। দমকা হাওয়া যেভাবে শরীরে কম্পন তুলে সেভাবেই কম্পিত হচ্ছে শরীর। শিহরিত হচ্ছে দুজনার মন। হাতের ভাঁজে হাত আর ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁটের আনাগোনা বাড়ছে। নিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদস্পন্দনের ধুকপুকানি। ঝিঝি পোকার আওয়াজের সাথে বাড়ছে রাতের গভীরতা। ভালোবাসায় দুজন তলিয়ে যাচ্ছে গভীর থেকেও গভীরে।
.
.
বর্ণালী ঘুম থেকে উঠে দেখে ফোন নীচে পড়ে অফ হয়ে আছে। অন না করেই ফোন চার্জে দিয়ে ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রুম থেকে বের হয়ে দেখে সম্পূর্ণ বাড়ি এখনও অনেক শান্ত। ড্রয়িংরুমে টাঙানো বড় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র ৬টা বাজে। এতো ভোরে ঘুম কীভাবে ভাঙলো ও নিজেই অবাক! উপরের দিকে সিঁড়ি গেছে সেদিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি একেবারে ছাঁদে আসে। ছাঁদের পরিবেশ অনেকটা শান্ত। পাখির কিচিরমিচির শব্দ এখানে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। একটা পেয়ারা গাছে পাকা পেয়ারা ঝুলছে। দেখে আর লোভ সামলাতে পারেনা। গাছ থেকে একটা পেয়ারা নিয়ে কাপড়ে মুছে কামড় বসিয়ে দেয় পেয়ারার গায়। পেছনে ফিরতেই চোখজোড়া ডিমের আকার ধারণ করে। ওর সামনে ইভান গুটিসুটি মেরে দোলনায় শুয়ে আছে। বর্ণালী দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। ভয় পেয়ে গেছে ইভানকে এখানে দেখে। দোলনার পাশেই ফ্লোরে বসে ভাবতে লাগে,
ও এখানে কেন?
ভয়ে ভয়ে ইভানের শরীরে আলতো করে হাত দেয়। ইভান চোখ খুলে না। গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে সে। বর্ণালী ওকে ধাক্কা দিয়ে আওয়াজ দেয়,
-ইভান, এই ইভান।
কয়েকবার আওয়াজ দেয়ার পর ইভান আধবোজা চোখে ওর দিকে তাকায়। ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বললো,
-এতোক্ষণে সময় হলো তোমার আসার?
-মানে? এসব কী বলছো ইভান?
ইভান আবারও চোখ বন্ধ করে নেয়। ঘুমে ওর চোখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে আসছে। বর্ণালী আবারো ওকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো,
-ইভান কি হলো? এখানে কেন তুমি?
ইভান চোখ কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-রাতে আসো নি কেন?
-মানে?
-সারারাত জেগে অপেক্ষা করছিলাম এখানে তুমি আসবে কিন্তু এলে না।
-আমাকে বললে না আমি আসবো। একবার বললে না কেন?
-আমি তোমায় মেসেজ দিয়েছি তুমি কি দেখোনি?
বর্ণালীর এখন খেয়াল হয় ও তো রাত্রে ইভানের সাথে চ্যাট করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। কথাটা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওর। চোখে জল টলমল করছে। ইভান সারারাত জেগে ওর অপেক্ষা করছিলো আর সে কিনা ঘুমাচ্ছিলো।
💛
💛
#_____চলবে…….

Previous
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=132469785090047&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here