ফাগুন প্রেম পর্ব: ০৩

0
995

#_____ফাগুন_প্রেম_____
লেখনীতে: Bornali Suhana
পর্ব: ০৩
ঈশা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে ছোট ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। যেখানে ও এখনো প্রেমই করলো না আর সেখানে কিনা তারই ছোট ভাই বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে আসার কথা বলছে।
`
আজ খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে ইভান বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। কলেজ তো বড় কাজ নয় আজকে আবারো বর্ণালীর সাথে দেখা হবে এটাই বড় কাজ। জানিনা অন্য কারো বেলায় এমন হয় কিনা কিন্তু আমার বেলায় এমন হচ্ছে যে প্রথম দেখায় কোন মেয়ের জন্য এতোটা পাগল হয়ে গেছি। এক দেখায় কোন মেয়ের ভাবনায় এতোটা মাতোয়ারা হয়ে আছি। হয়তো এটাকেই লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে। হুম এরকম কিছু একটাই Jubaida Sobti আপুর স্টোরিতে পড়েছিলাম। আজ নিজেকে সেই রাহুল মনে হচ্ছে। কিন্তু যার জন্য আমি এতো ভেবে মরছি কি জানি সে আমায় নিয়ে এরকম কিছু ভাবছে কিনা!
এদিকে ঈশা কত করে বললো,
-“তুই যখন যাচ্ছিস আমায় নিয়ে যা।”
ইভানের একটাই কথা,
-“আমার কাজ আছে পারবো না। তোকে রাজাসাহেব গাড়িতে করে দিয়ে আসবে।”
ঈশা ঠিকিই বুঝতে পারছে তার ভাইয়ের কি কাজ। কিন্তু কিছুই বলছেনা। ওর সামনে দিয়েই ইভান বেড়িয়ে গেলো। এখন আর কি করা রাজাসাহেব মানে দীপুই ওকে নিয়ে দিয়ে আসবে।
`
বর্ণালী ব্যাগ গুছাচ্ছে আর শারমিন বেগম নাস্তা হাতে মেয়ের পিছু পিছু ছুটছেন।
-“মা দেরি হয়ে যাচ্ছে। খেয়েছি তো আর কত খাবো?”
-“সারাদিন কত পরিশ্রম করিস কিছু তো খেয়ে যা। এমনিতেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিস।”
-“কি যে বলো না মা। আমি ভালোই আছি দেখো না ফিট এন্ড ফাইন।”
সজিব অনেক্ষণ ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের নাটক দেখছে। অনার্স কম্পলিট করেছে লাস্ট ইয়ার। এখন মাস্টার্স করছে। প্রতিদিনই একটা না একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে। একটা জবের অনেক প্রয়োজন। টিউশনির টাকায় আর চলেনা। ছোট বোনটা এই বয়সে অনেক খাটছে পরিবারের জন্য। বাবা তো থেকেও নেই। সারাদিন বাসায় ঘুমান, মাঝে-মধ্যে বাজারে যান। আর টাকা পেলেই নিয়ে জুয়ায় উড়িয়ে আসেন। ব্যাবসা তো নেই বললেই চলে সব জুয়ায় উড়িয়ে বসে আছেন। সজিব এতোক্ষণে কথা বললো,
-“মা আমিও তো বাইরে যাবো আমাকে তো নাস্তা দাও।”
-“হ্যাঁ রে বাবা টেবিলে আছে খেয়ে নে।”
-“হুম সব আদর তোমার মেয়ের জন্যই। আমি তো আর কেউ না।”
সজিব টেবিলে বসতে বসতে কথাটা বললো। বর্ণালী ব্যাগ হাতে বের হয়ে ভাইকে বললো,
-“কি যে বলো ভাইয়া মা তোমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।”
-“হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
-“মা বাবা উঠেন নি?”
-“বাবার এখনো সকাল হয় নি বর্ণালী। তুই যা বাবার খুঁজ নিয়ে লাভ নেই।”
ছেলের কথায় শারমিন বেগম কোন কষ্ট পেলেন না। এমন অনেক কথা প্রায় প্রতিদিনই অনেকের মুখেই শুনতে হয় উনাকে। বর্ণালী আর কথা না বাড়িয়ে বাইরে চলে আসে। গেটের বাইরে পা রাখতেই ও অবাক! ইভান! এই ছেলে এখানে কেন? বর্ণালী নিজের পা খুব দ্রুত চালাচ্ছে। ইভান বাইক স্টার্ট দিয়ে বর্ণালীর পাশে পাশেই যাচ্ছে।
-“গুড মর্নিং।”
বর্ণালী শুনতে পেয়েও চুল ঠিক করছে আর দ্রুত চলছে। ভাগ্য ভালো রিকশাও পেয়ে যায়। রিকশায় উঠে বসে ড্রাইভারকে দ্রুত চালাতে বলে। ইভান বর্ণালীর কাজ দেখে কিছুটা কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তবুও আবার রিকশার পাশে গিয়ে বলে,
-“এই যে একটা গুড মর্নিং ও কি বলা যায় না?”
-“হুম গুড মর্নিং।”
-“বাহ থ্যাংকস।”
ইভান আর কথা বলার কোন সুযোগ পায় নি। জ্যামের জন্য দুজনে আলাদা হয়ে যায়।
কলেজে এসেই বর্ণালী একজন মধ্যবয়সী মহিলার সাথে একগাল হেসে কথা বলতে বলতে গেটের ভেতর ঢুকে গেলো।
ইভান বাইক পার্ক করে কলেজে ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বর্ণালীকে না দেখে ক্লাসে যাবে ভেবে নিলো। ক্লাসে যেতেই মাঝখানের একটা বেঞ্চে বসে। পাশের ছেলেদের সাথে খুব জমিয়ে কথা শুরু করে।
-“হাই আমি ইভান। এখানে নতুন। তোমরা?”
-“আমি রাফাত।”
-“আই এম হিমেল।”
-“এন্ড মি আসাদ।”
একে একে সবাই হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো। এক দিনেই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওদের সাথে। স্কুল জীবনের প্রথম ক্লাসে সবার সাথেই হয়তো এমন হয়। যার পাশে বসেছো সেই তোমার প্রথম ফ্রেন্ড আর ইভানের সাথেও তেমন হয়েছে। ইভান কখন থেকেই ওদের সাথে তুমি তুমি করে কথা বলছে দেখে রাহাত বলে উঠে,
-“আমরা যেহেতু একই গ্রুপের সো তুমি না বলে তুই করেই বল ভাই। ভালো শোনায়।”
-“হাহাহা ওকে ইয়ার।”
কথা বলছিলো এমন সময় একটা মেয়ে এসে ওদের মাথার চুল ধরে টানতে শুরু করে। আর পৃথিবীর যা সব গালাগাল করেই যাচ্ছে।
-“কুত্তা, হনুমানের দল আমাকে কাল একা রেখে পার্টি করতে লজ্জা লাগলো না তোদের?”
-“আরে ছাড় শয়তানের সর্দারনী। তোকে যখন কল দিলাম রিসিভ করলি না কেন?”
-“ছাগল কোথাকার কই কল দিলি?”
ওর পাশে থাকা আরেকটা মেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণে কথা বললো সে।
-“আসলে মালিহা ও আমাকে কল দিয়েছিলো আর আমি তোকে বলতে ভুলে গেছি। সরি রে।”
-“মিথির বাচ্চা এখন না সত্যি ইচ্ছে করছে তোর চুল ছিড়ি। কিন্তু কি করবো বল তুই তো আমার জান পাখি। যাহ এবারো ছেড়ে দিলাম।”
দুজনেই হেসে একে অপরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।
-“এই চিকনাটা কে রে?”
-“ওহ হ্যাঁ পরিচিত হয়ে নে ও হলো ইভান। কলেজে নতুন এসেছে। এন্ড ইভান ও মালিহা আর ও মিথি। আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।”
-“হাই।”
-“হ্যালো।”
`
ঈশা ভার্সিটিতে এসে নিজেকে খুব একা পাচ্ছে। কাউকে চেনে না জানেনা। কেমন একটা ভয় ভয় কাজ করছে। ডিপার্টমেন্ট কোন দিকে তাও বুঝতে পারছেনা। হুট করে একজনকে জিজ্ঞেস করে বসে। মেয়েটা কেমনভাবে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি ম্যাথম্যাটিকস ডিপার্ট্মেন্টের?”
-“হুম আসলে নতুন এখানে। কাউকে চিনিও না।”
-“তাহলে তুমি ঠিক জায়গায় এসেছো বেবি আমিও ম্যাথম্যাটিকস ডিপার্ট্মেন্টের।”
-“ওহ ওয়াও।”
মেয়েটা এক হাত বাড়িয়ে বলে,
-“বাই দা ওয়ে অ্যাম রোহানি ফেরদৌসী।
-“উম হাই আই এম ঈশা আহমেদ।”
-“ওখেই এখন কিন্তু তুমি বলতে পারবো না। তুই করেই বলবো চলবে?”
-“আরে দৌড়াবে।”
দুজনে হেসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। যেনো কতবছরের চেনা। চট করে রোহানি একটা সেল্ফি তুলে নেয়। তারপর দুজনে ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।
`
আমরা ৬জন ক্যান্টিনে বসে আছি।
সবার সাথেই ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে। তবে এখানে সব চেয়ে ভালো লেগেছে রাহাতকে।
-“এই রাহাত শুননা।”
-“হ্যাঁ বল।”
-“কাল একটা মেয়েকে দেখে ভালোবেসে ফেলেছি দোস্ত।”
সবাই আমার কথা শুনে যেনো বিষম খেলো।
-“কি একদিন আসতে না আসতেই ভালোবাসা?” (মালিহা)
-“ভালোবাসা পকেটে নিয়ে ঘুরিস নাকি দোস্ত?” (হিমেল)
-“এতো নয় কোন ভালোবাসা
হতে পারে নেশা,
কেটে গেলে এ নেশার ঘোর
ভেঙে যাবে সকল আশা।” (আসাদ)
সবাই আসাদের দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আসাদ একটু ভয় পেয়ে বলে,
-“না মানে আমি তো এমনি বলছিলাম আর কি।”
-“থামেন কবি সাহেব।” (মালিহা)
-“কেন ও তো সুন্দর কথাই বলেছে।”(মিথি)
-“এই যে আসছেন আরেকজন কবির কবিতা।” (রাহাত)
সবাই হোহো করে হেসে দেয়। মিথি কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। এদের মাঝে কিছু একটা আছে। ইভান কোক খাচ্ছে আর ভাবছে এতোক্ষণে একবারও দেখলো না কেন তার বাসন্তীকে? কলেজেই তো এলো তাহলে গেলো কোথায়? নাকি ও অন্য কোন গ্রুপের?
-“কিরে মেয়েটা কে? নাম কি? কোন গ্রুপের?”(রাহাত)
-“হ্যাঁ হ্যাঁ সব বল তাহলে আমরা লাগিয়ে দিবো।”(হিমেল)
-“বাসন্তী।”
-“হুম! এই নামে তো মনে হয় এই জন্মে কেউ জন্মগ্রহণ করে নি।” (মালিহা)
-“আরে বাসন্তী তো মনে হয় ও ভালোবেসে নাম দিয়েছে।” (আসাদ)
আবারো সবাই হোহো করে হাসতে নিলে থেমে যায়। পাশ দিয়ে ম্যাডাম যাচ্ছিলেন দেখে সবাই সালাম দেয়। ইভানের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সে তার বাসন্তীকে দেখতে ব্যাস্ত। রাহাতের ধাক্কায় ঘোর কাটে। খেয়াল করলো ছোট বড় স্কুল লেভেল থেকে কলেজ লেভেলের সব স্টুডেন্ট তার বাসন্তীকে সালাম দিচ্ছে। আর ও ঠোঁট বাকা করে হালকা হেসে সালামের জবাব বলে হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে যাচ্ছে। ইভানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তার বাসন্তী এমন কে যে সবাই সালাম দিচ্ছে!
-“কি রে বল না কোন গ্রুপের? আর রিয়েল নাম কি?” (মালিহা)
-“বর্ণালী।”
-“মানে? কোন বর্ণালী?”(রাহাত)
সবাই চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইভান তার বাসন্তীর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে হেসেই ওদের বললো,
-“ওই যে আমাদের ঠিক সামনের টেবিলে বসে আছে।”
ইভানের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকাতেই সবার চোখ কপালে উঠে যায়। মালিহা হুট করেই পানির গ্লাস এনে ইভানের মুখে মারে।
-“আরে আরে কি করলি এইটা?”
-“ঠিকি করেছে। দিনের বেলা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলি তাই জাগিয়ে তুলছে তোকে।”(হিমেল)
-“হুম আর স্বপ্ন দেখতে হবে না ভাই।” (রাহাত)
-“তোর মাথা ঠিক করে নে। উনি স্কুল লেভেলের ইংলিশের ম্যাডাম।”(আসাদ)
-“তাছাড়া ম্যাম অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ভুলে যা আমাদের বড় আপুর বয়সি উনি।”(মিথি)
-“হ্যাঁ রে অন্ততপক্ষে ম্যাডাম তোর থেকে ৩বছরের বড় হবে।”(মলিহা)
ইভান যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ওর মাথা ঘুরছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। সামনের সবগুলো যেনো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।
কি শুনছে ও?
কোন কিছু ভুল শুনছে না তো?
বোতল থেকে পানি নিয়ে মাথায় আর মুখে দিতে লাগলো।
বর্ণালী দূর থেকে বসে আড় চোখে সব দেখছে। আর মিটিমিটি হাসছে। বুঝতেই পারছে ইভান ওর পরিচয় জেনে গেছে৷ কাল তো খুব লাফাচ্ছিলো আজকের পর আর এমন কিছু করবে না৷ এতটুকুন একটা পিচ্চি ছেলে আর আমার কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে আসে! ওর পাশেই ফাহমিদা ম্যাডাম বসে আছেন। দুজনের হাতেই কফি। টিফিন পিরিয়ডে কফি না খেলেই নয়। ঘুম চলে আসে ক্লাস করাতে করাতে। তারউপর বাচ্চাদের সাথে চিল্লিয়ে গলা ব্যাথা করে।
ইভানের অবস্থা দেখে ওর বন্ধুরা সবাই উঠে ইভানকে ধরে।
-“কিরে ঠিক আছিস?”(রাহাত)
-“খারাপ লাগছে?(হিমেল)
-“ডাক্তার ডাকবো নাকি হসপিটাল যেতে হবে?”(মিথি)
-“মিথি চুপ যা মেরি মা।”(মালিহা)
-“আমি কি সত্যি শুনেছি?”
-“কঠিন হলেও এটাই সত্যি। উনি স্কুল লেভেলের একজন ম্যাডাম।” (আসাদ)
ইভান এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। এতোক্ষণ বর্ণালীর মজা লাগলেও এখন কেন জানি ওর চোখের জল দেখে খারাপ লাগছে। নাহ আর বসে থাকা যাবেনা।
-“ম্যাডাম চলেন টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে এসেছে।”
-“হ্যাঁ চলো।”
বিল পে করে দুজনে উঠে ইভানকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইভান তখনো সেই শূণ্য টেবিলের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওরা যেতেই সে উঠে দাঁড়ায়। আজ আর তার ক্লাস করা হবেনা।
-“আ….আমি চলিরে। কা….কাল দেখা হবে।”
সবাই ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।
-“চল আমি তোকে পৌঁছে দেই।” (রাহাত)
-“হ্যাঁ রে তুই এই অবস্থায় ড্রাইভ করতে পারবি না। আমরা কেউ একজন তোকে পৌঁছে দেই।”(হিমেল)
-“হু তোরা টেনশন নিস না। আই এম ওকে। আমি যেতে পারবো।”
ইভান আর কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়। এমন কেন হলো? ওর সাথে তো এমন না হলেও পারতো। যাকে দেখে প্রথম মনের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি হলো তাকেই সে পাবেনা! একমনে কথাগুলো ভেবে হেঁটে যাচ্ছে তখনি বর্ণালীকে দেখলো বাচ্চাদের সাথে হেসে হেসে ক্লাসে যাচ্ছে। ওর এই হাসিটাই তার বুকটা ছিড়েখুঁড়ে দেয়ার জন্য যতেষ্ট। বর্ণালীর চোখ তার দিকে পড়তেই দেখে ইভান চোখ ছোট ছোট করে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। চোখে জল টইটুম্বুর করছে। ওই চোখ যেনো অনেক না বলা কথাই বলে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্য বুকের ভেতরটা যেনো মুচড় দিয়ে উঠে। কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে টান অনুভব করে। স্টুডেন্টরা ওকে ক্লাসে নেয়ার জন্য টানছে। ও মৃদু হেসে পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে ক্লাসে চলে যায়।
`
ইভান ধপ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ওর ভীষণ কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিভাবে কাঁদবে! ও যে ছেলে ওর যে কাঁদতে মানা। ছেলেরা তো কাঁদেনা। কিন্তু ও যে পারছেনা। সাইড টেবিলে রাখা ঘড়িটা ঠাস করে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। পরক্ষণেই হৃদয় কাঁপানো চিৎকারে পুরো রুমটাই যেনো কেঁদে উঠে।
-“আহহহহহহহহহহ কেন? আল্লাহ কেন? যদি তাকে আমার কপালে লিখো নি তাহলে কেন দেখা হলো? তাকে যদি নাই বা পাবো তাহলে কেন আমার মন ওর প্রতি দূর্বল করে দিলে? কেন কেন কেন?”
ইভানের কান্না ঈশার কান এড়াতে পারলো না। ওর ভাবনায় একটাই কথা ছোট ভাইটা এক দিনে কিভাবে এমন হয়ে গেলো? কি এমন হলো যার জন্য তার এতো কষ্ট হচ্ছে? নাহ এসবের উত্তর যদিও ওর জানা নেই কিন্তু জানতে দোষ কোথায়?
ঈশা অনেক্ষণ দরজা ধাক্কালো কিন্তু ইভানের একটাই কথা,
-“আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দে প্লিজ।”
সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে। ইভান কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বলতেই পারেনা। উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে। ক্ষুধার জ্বালায় পেটে চু চু করছে। সেই দুপুরে একটা কোক খেয়েছিলো সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন দানা পেটে যায় নি। না খেয়েও থাকতে পারছে না। নিচে টেবিলে বসে মাকে খাবার দিতে বলে।
-“কিরে তোকে কতবার ডাকলাম এভাবে ঘুমাচ্ছিলি কেন? শরীর খারাপ হলো নাকি?”
-“আরে না মা। আমি ঠিক আছি খাবার দাও প্লিজ খুব ক্ষুধা পেয়েছে।”
ততক্ষণে ঈশা এসে চেয়ার টেনে বসে। ভাইয়ের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে মনের খবর। কিন্তু কি হয়েছে সেটা জানতে হবেই।
-“কিরে আজকে কলেজ কেমন গেলো?”
-“হুম ভালোই। তোমার ভার্সিটি কেমন গেলো?”
হুম আমার ভাইটা খুব সিরিয়াস তাই তো তুই থেকে তুমিতে উঠে গেছে। সাধারণত সিরিয়াস নাহলে সে কখনোই তুমি বলেনা।
-“হুম আমার তো দারুণ লেগেছে। প্রথম দিনেই মনের মতো ফ্রেন্ড পেয়ে গেছি। তোর বন্ধু হলো?”
-“হ্যাঁ হয়েছে।”
চুপচাপ খেয়ে ইভান উঠে রুমে যায়। ঈশাও তার পিছু পিছু রুমে গিয়ে নক করে।
-“কিরে আসবো?”
-“হ্যাঁ বুমনি এসো।”
বিছানায় শুয়ে গিটারে টুংটাং বাজাচ্ছিলো আমায় দেখে উঠে বসে। আমি গিয়ে ওর পাশেই বসলাম। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ।
-“কি কিছু বলবে?”
-“কি হয়েছে তোর?”
-“কই কিছু নাতো।”
-“তোর বুমনির কাছ থেকে লোকাবি? পারবি লুকাতে?”
ইভান আর থাকতে পারেনা। ফুঁপিয়ে কেঁদে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। ঈশা চুপ করে ভাইয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-“বলবি তো কি হয়েছে?”
-“বু….বুমনি বর্ণালী….”
-” তো মেয়েটার নাম বর্ণালী?”
-“হ্যাঁ। তা কি হয়েছে? রিজেক্ট করে দিয়েছে?”
-“উহু।”
-“তাহলে?”
-“ও আমাদের কলেজের স্কুল লেভেলের ম্যাডাম।”
ঈশা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যায়। তারপর ভাইয়ের মুখটা তুলে ধরে চোখ মুছে ধরে।
-“এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেনো? চুপ কর আগে।”
ইভান মাথা নিচু করে চুপ হয়ে বসে আছে কিন্তু এখনো হিচকি তুলছে।
-“কোন ইয়ারে পড়ে?”
-“অনার্স তৃতীয় বর্ষে।”
-“আচ্ছা। তাহলে প্রবলেম কোথায়?”
-“মানে?”
-“হ্যাঁ আমি তো প্রবলেম দেখছিনা।”
-“ও আমার থেকে তিন বছরের বড় হবে।”
-“পাগল নাকি? তুই এস.এস.সি একবার ফেল করেছিস। আর দেখতে গেলে পড়ায় গাধা ছিলি তাই হয়তো তোকে মা দেড়িতে এডমিশন করিয়েছিলো। সে হিসাবে তোর বড় হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া দু’এক বছর বড় হলেও তো প্রব্লেম নেই।”
-“কিন্তু ও কি মানবে?”
-“সেটা তুই জানিস কিভাবে মানাবি।”
বলেই ঈশা উঠে চলে যেতে লাগে দরজায় গিয়ে আবার বলে,
-“রাসূল (সঃ) ও যখন বিয়ে করেন উনার বয়স পঁচিশ ছিলো কিন্তু উনার বিবির বয়স চল্লিশ। কোন হাদিসে নেই যে বড় কে বিয়ে করা যায় না।”
বলেই ঈশা বেড়িয়ে চলে যায়। ইভান এখনো চুপ করে বসে আছে। আসলেই তো আমি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছি। কথায় আছে না ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হয়। আমি না হয় তাই করলাম। আমি তোমায় ভালোবাসি বর্ণালী তুমিই আমার ফাগুন প্রেম। আর আমি তোমাকে আমার করে ছাড়বোই।

#_______চলবে………..
[ভালোবাসা সবার ভাগ্যে থাকেনা। যারা পেয়েছেন তারা ভালোবাসাকে ভালোবেসে আগলে রাখেন। আর তাদের নিয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালো থাকেন।

Part 2
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=119048769765482&id=103632171307142

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here