ফিঙের_ডানা পর্ব-১৪

#ফিঙের_ডানা
পর্ব-১৪

খাটের পাশে চুপচাপ বসে আছে তুসু। মাঝে মাঝে কুই কুই করে ডাকার চেষ্টা করছে। তার আসলে বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে। প্রায় বিকেলেই আমরা হাঁটতে বের হই। এলাকার আশপাশ ঘুরে লিলিদের বাড়ি হয়ে আসি। লিলিদের বাড়ির পাশে একটা ছোট্ট মেয়ে কুকুর আছে, সেটার সাথে ভারি ভাব তুসুর। সেজন্য বাইরে বের হতে এত আগ্রহ। চাইলে একা যেতে পারে, কিন্তু আমাকে রেখে কিছুতেই যাবে না। আমি কখন থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করছি। সে যাচ্ছে না। আমার বের হওয়ার একেবারেই ইচ্ছে নেই। ইচ্ছে না থাকার দুটো কারন। প্রথমটা, মাথা ব্যথা করছে, দ্বিতীয়টা হলো, দুপুরের দিকে সোহানের সাথে তৃণা বের হয়েছে। এখন বের হলে তাদের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে, যেটা চাচ্ছি না।

তৃণা হলো রোকন ভাইয়ের ছোট বোন। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে থার্ড ইয়ারে পড়ে। হোস্টেলে থাকে। চলাফেরা, কথাবার্তার ধরণই আলাদা। আমার সাথে একদিন কথা হয়েছিল। কথায় কথায় বলে বসল, “তুমি এই বাড়িতে প্রায়ই আসো?”

বললাম, “প্রয়োজনে আসি।”

তৃণা একটু হেসে আর কথা বলল না। সে ঠিক অহংকারী নয়, তবে যে ভালো জায়গায় পড়াশোনা করে, দেখতে সুন্দরী, তার নিশ্চয়ই আমার মতো সরকারি কলেজে পড়া নিতান্তই সাধারণ একটা মেয়ের সাথে খুব একটা কথা থাকার কথা নয়। সোহানের সাথে অবশ্য তার অনেক কথা। ইঞ্জিনিয়ার মানুষের সাথে কথা থাকতেই পারে! সোহানও মেয়েটাকে পছন্দ করে। একদিন তাকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তৃণা মেয়েটা কেমন?”

সে বলল, “মেয়েটা মানে? আপু বলো। বড় তোমার চেয়ে।”

“আচ্ছা, তৃণা আপুকে আপনার ভালো লাগে?”

“হুম বেশ মেয়ে! সেন্স অব হিউমার খুব ভালো। কথা বলতে মজা লাগে।”

আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সোহান বলেছিল, “তোমার কী সমস্যা? কিছু বলেছে তোমাকে?”

“না তো!”

“আচ্ছা।”

তৃণা এসেছে এক সপ্তাহ হয়েছে। আরও নাকি কিছুদিন থাকবে। তৃণা আর তার মা ছাড়া তান্নি আপুর শ্বশুরবাড়ির বাকি মানুষেরা চলে গেছে। তান্নি আপুদের আসার কথা আগামীকাল।

তুসুর যন্ত্রণায় উঠে বাইরে গেলাম। আজকাল বৃষ্টি না হলেও আবহাওয়া সুন্দর। আকাশে প্রচুর মেঘ। কখনো কখনো কালো হয়ে ভয় দেখায়, তবে বৃষ্টি পড়ে না৷ রাস্তাঘাট শুকনো। বাতাসে ভেজা গন্ধ। ভালো লাগে হাঁটতে। লিলিদের ওখানে গিয়ে দেখি লিলিরা কোথায় যেন বেড়াতে গেছে। আমরা অন্যদিকে হাঁটা ধরলাম৷ এলোপাথাড়ি চলতে চলতে কখন যেন সিনেমা হলের সামনে চলে এসেছি। দেখলাম সোহান আর তৃণা বের হচ্ছে। তৃণার হাতে আইসক্রিম। খুব হাসছে দু’জন। বেরিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা রিকশায় উঠে বসল। আমার হঠাৎ চোখে পানি চলে এলো। সেই পানিভর্তি চোখ নিয়েই খেয়াল করলাম কাকের বাসাটার সাথে তৃণাকে দারুণ মানায়। তৃণা ওর মতো এত ফরসা না হলেও গায়ের রঙ সোনালী বর্ন। কালো কুচকুচে চুলগুলো ধাপে ধাপে সুন্দর করে কাটা। মাঝে মাঝে চুল কপালের ওপর এসে পড়লে ভারি সুন্দর দেখায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলাম, সোহান যেন সুখী হয়। কেমন করে, কার সাথে তা আর ভাবতে ইচ্ছে হলো না।

***
“এই বালিশদুটো কেমন হয়েছে বল তো? তোর বাবা আনল একটু আগেই।” তান্নি আপু জিজ্ঞেস করল রিশানকে। রিশান একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “জানি না। বিরক্ত করো না। বোনদের দেখতে দাও।”

তারা বাড়িতে এসেছে সকালে। এখন বিকেল। সবাই জড়ো হয়েছে একসাথে রিশানের ঘরে। সবাই বলতে তান্নি আপু, বাচ্চারা, সোহানের মা, তৃণার মা, তৃণা আর আমি। ঘরটা নিচতলায়। বড় ঘর। রিশান একা থাকতে পারে না বলে মামার সাথে ওপরেে থাকে। এখন পা ভাঙা বলে তাকে নিচেই রাখা হয়েছে। ওর পায়ের হাঁটুর ওপর পর্যন্ত এখনো ব্যান্ডেজ। ব্যথা হয়তো আগের মতো না। তবে দুষ্টুমি ঠিক বেড়েছে। হাসপাতালে এতদিন বোনদের দেখতে পারেনি৷ আজ প্রথম দেখে চোখ সরছে না। সে অনেকক্ষণ ধরে গভীর মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে বোনদের কোন অঙ্গটা দেখতে তার মতো হয়েছে। সমস্যা হলো, পাচ্ছে না। তাই যে কোনো কথায় রেগে যাচ্ছে।

বাচ্চাদের আগামীকাল আকীকা করা হবে। বেশ উত্তেজনা বাড়িময়। সোহানের মা প্রথমদিন থেকে বলে যাচ্ছেন আকীকাটা করে ফেললে তার চিন্তা দূর হয়।

সোহানের মা বললেন, “আজকে কাজকর্ম গুছিয়ে রাখা লাগব রে তান্নি।”

তান্নি আপু বলল, “খালি কাজ কাজ করবা না মা। কাউকে দাওয়াত দিব না। গোশত সবার বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসা হবে। দুইটা ছোট বাচ্চা নিয়ে ঝামেলা করা যাবে না। কে করবে এত কাজ?”

“তাই বলে কাউরে বলবি না?”

“না। বাড়ির লোকজন সবাই খাবে। সেই হিসবে রান্না করলেই হবে। আর কিছু না।”

আন্টি বোধহয় একটু মন খারাপ করলেন। তান্নি আপু বলল, “বাচ্চাদের নাম ঠিক করো। নাম রেখেছ নাকি? কালকে কিন্তু লাগবে।”

আন্টি খুশি হয়ে বললেন, “হু।”

“কী নাম?”

“রওশন আরা, ইফফাত আরা।”

“রওশন নাহয় বুঝালম রোকনের নামের অক্ষর দিয়ে। ইফফাতের ‘ই’-টা কোথা থেকে এলো?”

“দুই নাম একসাথে রাখলাম। অত ভাবি নাই। মিলাইয়া কী করবি? নামই তো!”

“আচ্ছা।” বলে তর্ক করল না তান্নি আপু। মনে হলে নামদুটো তার অত পছন্দ হা হলেও একেবারে অপছন্দ হয়নি।

তান্নি আপুর শাশুড়ি কিছু বললেন না। তিনি খানিকটা গা ছাড়া ধরণের মানুষ। এমন উদাস ভাবভঙ্গি যে দেখলে মনে হয় পৃথিবীর কোনোকিছু তার গায়ে লাগছে না৷ শুনেছি তিনি একসময় খুব জাঁদরেল ছিলেন৷ তান্নি আপুর বিয়ের পরপর নাকি শাশুড়ির ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকত। তারপর তার শ্বশুর মারা যাওয়ার পর কেমন হয়ে গেলেন। স্বাভাবিক হতে পারেননি আর।

সোহানের মা বললেন, “এই নামেই ডাকবি নাকি ডাকার আলাদ নাম রাখবি?”

“নাম তো রাখা হয়েছে মা। সোহান রেখেছে। তাপ্তি আর সুক্তি।”

আমি চমকে উঠলাম। সোহান বলেছিল এগুলো রাখবে না। তাহলে রাখল কেন?

আন্টি বললেন, “এইগুলা কেমন নাম?”

তান্নি আপু একটু রেগে বলল, “সুন্দর নাম। তুমি কিছু বইলো না। তোমার নাম নিয়ে কিছু বলছি?”

আন্টি আমাকে বললেন, “যাও তো সোহানরে ডেকে নিয়ে আসো। সবাই গল্প করতেছি, ও ঘরে কী করে?”

আমি উঠে গেলাম৷ ওপরতলাটা ইদানীং কেমন পর পর লাগে। সোহানকেও! সেই যে খাইয়ে দিল, তারপর ঠিক করে কথাও হলো না একদিন। গিয়ে দেখি সে ল্যাপটপে কাজ করছে। বললাম, “নিচে ডাকছে।”

“আসছি।”

“কখন আসছেন? এখনই ডাকে।”

“হুম!”

“আপনি সেদিন বললেন আমাদের ঠিক করা নাম রাখবেন না, তাহলে রাখলেন কেন?”

“তুমি যে ফিচকাঁদুনে! না রাখলে দেখা যেত কেঁদে ভাসাতে।”

“আমি কোনোদিন আপনার সামনে কেঁদেছি? এসব বলেন কেন?”

সোহান ঘুরে তাকিয়ে বলল, “কেঁদেছ তো। কালকে দেখলাম সিনেমা হলের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছ।”

ও আমাকে কখন দেখল? ভীষণ লজ্জায় আমি ঘর থেকেই বের হয়ে গেলাম।

সোহান পিছু ডেকে থামাল। বলল, “বসো। কথা আছে।”

আমি মাথা নিচু করে বসলাম। ইচ্ছে করছে পালিয়ে যেতে, কিন্তু পারছি না।

সোহান আমার মাথায় একটা হাত রেখে বলল, “আমি জানি, বন্ধুদের অন্য কারো সাথে দেখলে খারাপ লাগে। তাই বলে কাঁদবে নাকি? পাগল মেয়ে! ও আমাদের গেস্ট। কিছু বললে না করতে পারি বলো?”

“আপনার তো ওকে পছন্দ। না বলার প্রয়োজন কী, খুশি হয়ে নিয়ে গেছেন।”

সোহান একটু হেসে বলল, “ওকে ভালো বলেছি। পছন্দ করি তা তো বলিনি। অন্যভাবে নিচ্ছ কেন?”

“আচ্ছা। এখন আসুন।”

“তুমি রেগে আছ কেন বুঝলাম না।”

“আমি রেগে নেই।” বলে চলে এলেও আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সোহানকে চিনতে ভুল হচ্ছে কোথাও? সে আমাকে একেক সময় নিজের প্রেমিকা বলে। আজ বলল বন্ধু৷ তৃণার সাথে তাকে যতবার দেখেছি খুব হাসিখুশি দেখেছি। আজকে বলছে পছন্দ করে না। আমার সাথেও প্রথম দিন থেকে অদ্ভূত ব্যবহার করছে। ঠিক করে কিছু বলে না আর ভাবটা এমন যেন আমি তার বহু বছরের প্রিয় মানুষ। হয়তো সে তৃণাকেও বলে, আমি শিফাকে পছন্দ করি না! ভাবতে ভাবতে রাগে মাথা দপদপ করতে শুরু করল আমার।

***
তাপ্তি-সুক্তির আকীকার ঠিক তিনদিন পর একটা নতুন কথা উঠল তাদের বাড়িতে। তৃণার বিয়ের কথা। তৃণার মা প্রথম কথাটা তুললেন। তার ধারণা তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এক মেয়ের বিয়ে বাকি। তার বিয়ে দিলে শান্তিতে মরতে পারবেন। তার দুই ছেলে গ্রামে থাকে। শুধু রোকন ভাই থাকেন ঢাকায়। তাই রোকন ভাইয়ের ওপর দায়িত্ব ছেলে খোঁজার।

বাড়িতে ঘটক এলো। ছেলে দেখা হলো দু’তিনটা। তৃণাকে দেখে মনে হলো সে বিয়ের কথা ওঠাতে বেশ খুশি। একদিন তৃণাকে দেখতে এক ছেলে পরিবারসহ এলো। আমারও ডাক পড়ল সেখানে। আমি নকশি পিঠা ভালো বানাই, সেটাই একটু করে দিতে। গেলাম। ছেলেপক্ষের তৃণাকে পছন্দও হলো। কিন্তু তৃণা বেঁকে বসল। তারা চলে যাওয়ার পরপর তৃণা বলে বসল তার এসব ছেলে পছন্দ না। সে এদের বিয়ে করতে চায় না। তার পছন্দের মানুষ আছে। পছন্দের মানুষটা হলো সোহান ভাই। সে সোহান ভাইকে বিয়ে করতে চায়।

কথাটা শোনার পর আমার চাইতেও বেশি যার ধাক্কা লাগল তিনি হলেন সোহানের মা। আমি আগেই বুঝিলেছিলাম, কিন্তু তিনি হয়তো ভাবতে পারেনি এমন কিছু হতে পারে। কথাটা শোনার একটু পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমি কাছেই ছিলাম। তাকে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দিলাম৷ খানিকক্ষণ পর তিনি বললেন, “তান্নি আর সোহানকে ডেকে নিয়ে আসো তো মা।”

তাদের ডাকার পর আন্টি দরজা বন্ধ করার আদেশ দিলেন। কড়া গলায় তান্নি আপাকে বললেন, “তোর ননদের মতো বেহায়া মেয়েমানুষ আমি জীবনে দেখি নাই। তার সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে দিব না।”

সোহানকে বললেন, “তৃণার সাথে এরপর থেকা আর যেন কথা বলতে না দেখি।”

দেখলাম দুই ছেলেমেয়ের কেউই মায়ের ওপর কথা বলল না। তান্নি আপুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। শ্বশুরবাড়ির লোককে এখন তার সামলাতে হবে। তবে বুঝলাম আপুরও তৃণাকে অত পছন্দ না।

ঝামেলা বাঁধার ছিল, তাই বাঁধল। সোহানের মা রাজি নয় জেনে তৃণা না খেয়ে বসে রইল। না খেয়ে রইলেন সোহানের মা’ও। কী যে আজব পরিস্থিতি! তান্নি আপু মাঝখানে পড়ে চ্যাপ্টা হওয়ার দশা। এমনিতেই শরীর ভালো না তার।

রোকন ভাইয়া এর মধ্যে কেমন করে যেন এক পাত্র জোগাড় করে ফেললেন তৃণার জন্য। পাত্রটি একদিন বাড়িতে এলো। ভীষণ স্মার্ট দেখতে, হা করে তাকিয়ে থাকার মতো। লম্বায় ছ’ফিটের বেশি, গায়ের রঙ টকটকে, চোখের মণি সামান্য বাদামি বর্নের। কথা বলে মেপে মেপে। তাকে দেখে তৃণার মন গলল। দু’দিন ভেবে বলল, সে বিয়েতে রাজি।

ঠিক হলো এখন আকদ পড়িয়ে রাখা হবে। তৃণার পড়াশোনা শেষ হলে পরে অনুষ্ঠান হবে বড় করে। ছেলেপক্ষেরও তাড়াহুড়ো নেই। আকদের দিনতারিখ ঠিক করা হলো।

যেদিন আকদ হবে, সেদিন শুক্রবার। সকালে একটু দেরি করে উঠেছি। আজ ঝকঝকে আকাশ। গতরাতে সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল। রোদের আলোয় চকচকে পাতাগুলো কী সুন্দর লাগছে! জানালার বাইরে খচমচ শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি একটা কাঠবিড়ালি এসেছে। বাড়ির পেছনে পেয়ারা গাছ আছে। সেখান থেকে কাচা পেয়ারা নিয়ে কুটকুট করে কামড়ে খাচ্ছে। জানালা খুলতেই বড় বড় চোখ মেলে তাকাল। বোধহয় বুঝল ভয়ের কিছু নেই। তাই লম্বা রোমশ লেজটা দুলিয়ে গাছের ডালে লাফিয়ে উঠে বসে আরাম করে পেয়াটা খেতে শুরু করল। তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি, মায়ের ডাকে পেছন ফিরলাম৷ মা বলল, “একটা কথা আছে তোর সাথে।”

“কী কথা?”

“তান্নির মা এসেছিল সকালবেলা।”

“এখানে?”

“হ্যাঁ।”

“কেন?”

মা যা বলল তাতে আমার মাথায় তিনটা বাজ পড়ল। এ কী কথা! ব্যাপারটা হজম করতে চেয়েও হলো না। বার বার গলায় আটকে যেতে থাকল।

সোহনের মায়ের ধারণা তৃণা বিয়েতে রাজি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে বিয়ে করবে না। তার মন পড়ে আছে সোহানের কাছে। সে বিয়ের সময়ই ঝামেলা বাঁধাবে। উল্টোপাল্টা কথা বলে বিয়ে ভেঙে দেবে। তারপর এমন কিছু করবে যাতে সেই আসরে সোহান তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তিনি এটা হতে দেবেন না। সোহানকে ওই মেয়ের হাতে তুলে দেয়া মানে ছেলের ভবিষ্যত, সাথে সাথে তার কপাল দুটোই পুড়বে। তিনি সকাল সকাল আমার সাথে সোহানের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। আমাকে নাকি তার ভারি পছন্দ!

আমি খুশি হতে পারলাম না। নিজের দোটানায় নিজেরই অবাক লাগল। সোহানকে আমি কত পছন্দ করি আমি নিজেও জানি না। তবে গত কয়েকদিনের ঘটনাগুলো আমার মনে দাগ কেটে গেছে। সোহানের মাকেও সুবিধাবাদী মনে হচ্ছে। আমার সাথে বিয়ে করাতে চাইছে আমাকে পছন্দ করে নয়, বরং সংসারে তার প্রতিপত্তি বজায় রাখতে। আচ্ছা সোহান কী চায়? সোহানকে কি তার মা বলেছে কথাটা?

আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী চাও তুমি?”

মা উদাস চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন, “আমি তোকে ঠিকমতো মানুষ করতে চাই। সেদিন তো বললাম এখনই বিয়ে দেব না। কিন্তু হাতের ওপর এত ভালো সম্বন্ধ এসেছে, ছেলেটা ভালো, তোকে পছন্দ করে। তোর সম্পর্কে সব কথা জেনে তোকে নিতে চাচ্ছে। এত ভালো সম্বন্ধ আর কোথায় পাব বল? তবে তুই রাজি না হলে বলে দে, আমি জোর করব না।

আমি হ্যাঁ, না কিছু বললাম না। কিছু বলার অবস্থাতেই আমি নেই। সোহানের সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু দেখা হলো না। দুপুরে সোহানের মা আবার এলেন। আমার হাত ধরে এমন করে বললেন যে আর কিছু বলার ক্ষমতা রইল না আমার।

তৃণার আকদ হওয়ার কথা সন্ধ্যার পর। বিকেলে আমার আর সোহানের বিয়ে হয়ে গেল।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here