ফিরে আসা পর্ব-১১

0
555

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা : Umma Hurayra Jahan

পর্ব: ১১

মাহিন- কেন কি হয়েছে ??তুই বোকার মতো হাসছিস কেন?আমার কিন্তু এবার রাগ হচ্ছে।

মহিমা- হাসবো না তো কি করবো ।
তুই কি মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস না কি পার্টিতে বন্ধুদের সাথে আনন্দ করতে যাচ্ছিস হুম??
যে ছিড়া ছোড়া পেন্ট পড়েছিস আর এই কালারের শার্ট কেউ পড়ে?

মাহিন- এই তুই গাইয়্যাদের মতো এসব কি বলছিস ?স্টাইল ভুলে গেলি নাকি ঐ পরহেজগার মেয়ের মতো???

[একটু স্টাইল মেরে]মাহিন- এটা ছিড়া না এটা হলো ট্রেন্ড । and I am looking so cool

মহিমা: – I know this bro এটা ট্রেন্ড । হাহাহা । কিন্তু ভাব একবার তোকে যদি বাবা এভাবে দেখে কি কান্ড টাই না হবে।

মাহিন :- যে যাই বলুক আমি এটাই পড়বো।
মহিমা – তোর যা ইচ্ছা কর । মা তোকে ডাকছে তাড়াতাড়ি নিচে আয়।

মাহিন – তুই যা আমি আসছি

মহিমা আবার হাসতে হাসতে নিচে চলে গেল

আরমান:- কি গো তোমরা সব রেডি তো??

মেহেঘ : হুম রেডি

আরমান: – মাহিন কই??

মহিমা :- বাবা ভাইয়া আসছে ।

ওদিকে আরমান সাহেবের ভাই তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য

বড়ভাই: কিরে আরমান তাড়াতাড়ি কর, নয়তো পৌছতে দেড়ি হয়ে যাবে । পথটা তো অনেক দূর তাই না কি??

এর মধ্যে মাহিন নিচে নামলো । সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ।
আরমান সাহেব তো রাগে কটমট করছে ।

আরমান: মাহিন….। এসব কি পড়েছিস তুই ??

মাহিন – কেন বাবা রোজ যা পড়ি তাই পড়েছি ।

আরমান :- আমার সাথে কি মশকরা করছিস নাকি?
কত দিন বলেছি এসব ছিড়া জামাকাপড় পড়বি না ।
আচ্ছা অন্য দিনের কথা বাদ দিলাম ,আজকে এই দিনে তুই এগুলো কেন পড়েছিস ??

মাহিন- না. ..মানে এগুলো খুব comfortable লাগে আমার কাছে তাই আরকি….

নুরি- ভাইজানের এসব ছিড়া কাপড় পড়তে আরাম লাগে কারন এগুলার মধ্যে দিয়া শইল্লের ভিত্তে বাতাস ঢুহে ,তাই না ভাইজান???হিহিহি

মাহিন – চুপ থাক বেয়াদপ ।

আরমান : ওকে চুপ করাচ্ছিস কেন ?যা এখনি এগুলো পাল্টে ভালো কোট প্যান্ট পরে আয়। যা বলছি।।[ধমক দিয়ে বললেন]

মেহেঘ – আহা্ বাদ দাও তো । আমার ছেলেকে এভাবেই বেশি সুন্দর লাগে । আর এমনিতেই দেড়ি হয়ে যাচ্ছে । এগুলো পাল্টালে আরো দেরি হয়ে যাবে । তার চেয়ে ভালো আমরা বেড়িয়ে পরি ।

১০টায় তারা রওনা হলো । তারা নিজেদের গাড়ি করেই বের হলো ।

রফিক : খাদিজা তাড়াতাড়ি করো ওরা রওনা দিয়ে দিয়েছে । আয়োজনে যেন কিছু কমতি না থাকে ।

খাদিজা :- এই নিয়ে কথাটা তুমি ৪ বার বলেছো । আর কতো বলবে ।
আমি বলেছি তো আমি সব সামলে নেবো ।

রফিক : হুম তাই যেন হয়। ওদের সামনে যেন আবার নাক কাটা না যায়

খাদিজা – আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে ।

এদিকে সব রান্না আজ ফাতেমাই করছে । তার মা আর রিনা তাকে সাহায্য করছে ।

রিনা- ও ফাতেমা বুবু কি সুন্দর গন্ধ যে বাইর হয়তাছে তোমারে কি কমু । মাশাল্লাহ । ওরা খাইয়া তো আইজ পাগল হইয়া জাইবো ।

ফাতেমা – জাযাকিল্লাহু খয়রান রিনা বিবি।

রিনা – ওয়া ইয়্যাকি বুবু

খাদিজা – মাত্র তো একটি শেষ হলো রে ফাতেমা । তুই গোশত,মাছ,আর ফালুদা টা করে দিয়ে গোসল করে নামায পড়ে ফেল গিয়ে । তারপর ওরা আসলে তো রেডি হতে হবে?রেডি হতে তো অনেক সময় লাগবে তাই না ?

ফাতেমা-বেশি সময় লাগবে না মা । আমি তো ৩-৪ মিনিটেই রেডি হয়ে যাবো ।
আর তোমাকে কষ্ট করে বাকি রান্নাগুলো করতে হবে না, আমি করে নিবো সব। আর ওরা আসতে তো অনেক সময় লাগবে । তাই চিন্তা করো না ।

খাদিজা – কি বলছিস রেডি হতে ৩-৪ মিনিট লাগবে মানে ?তুই কি সাজবি না? ?একটু মেকাপ টেকাপ করবি না? মেকাপ করতে কম করে হলেও তো ২০ মিনিট লাগবে ।
ফাতেমা – না মা আমি তো এতো সাজবো না ।

খাদিজা- কেন রে সাজবি নি কেন?

ফাতেমা – কে বলেছে সাজবো না হবে ২০ মিনিট ধরে মেকাপ মেরে আমি আমার আসল চেহারার বিকৃতি করতে চাই না ।

খাদিজা- কেন রে মা, সাজলে তো আর গুনাহ হবে না ।

ফাতেমা – আমি যদি এতো সাজি তাহলে আমার আসল চেহারার বিকৃতি হবে আর ওনাদেরকে ধোকা দেওয়া হবে । আমি যেরকম আল্লাহ আমাকে যেভাবে বানিয়েছে আমি সেইভাবেই নরমাল ভাবেই ওনাদের সামনে যাবো ।

খাদিজা – এতো কিছু বুঝি না রে মা । তুই যা ভালো মনে করিস তাই করিস আমার কোন আপত্তি নেই ।

ফাতেমা – আচ্ছা মা ওনারা কে কে আসছে??

খাদিজা:- আরমান ভাই ,ওনার ছেলে ,মেয়ে আর উনার বউ । আর হে, উনার বড় ভাই আর ভাইয়ের ছেলেও আসছে । কেন কি হয়েছে ?

ফাতেমা – হে আল্লাহ একটা কথা তো বাবাকে বলতে ভুলেই গেছি।

খাদিজা – কি কথা?

ফাতেমা – মা ওনারা যদি আমাকে ওনাদের সবার সামনে যেতে বলে„
তাহলে আমার কি হবে?????

খাদিজা :- বুঝতে পেরেছি ।

ফাতেমা – মা আর তুমি বাবাকে তো চিনোই বাবাও যদি যেতে বলে? ?আমাকে বাবার সাথে কথা বলতে হবে ।
মা তুমি একটু এদিকটা সামলাও আমি একটু বাবার সাথে কথা বলে আসি

খাদিজা- আচ্ছা যা

ফাতেমা- বাবা ও বাবা ।
[একটু ভয়ে ভয়ে ফাতেমা তার বাবার কাছে গেল]

রফিক- কি হয়েছে রে মা? ?

ফাতেমা – একটা কথা বলার ছিলো ?তুমি কি কথাটা রাখবে ?

রফিক :- এভাবে বলছিস কেন রে মা, বল কি বলবি? আজ তুই যা চাইবি আমি তোকে তাই দেবো।

ফাতেমা – না মানে …বাবা মা বলেছে ছেলে পক্ষ থেকে ছেলের চাচা আর চাচাতো ভাই আসছে ।

রফিক – হুম আসছে তো । এখন কি বলবি বল ?

ফাতেমা – না মানে বাবা ওনারা যদি ওনাদের সামনে আমাকে যেতে বলে আমি কিন্তু যেতে পারবো না । আর আমি আরমান চাচার সামনেও আজ যেতে পারবো না ।

রফিক- আজকের দিনেও তুই এমন করবি? আর মানুষজন কি পাত্রি না দেখে বিয়ে করাবে নাকি ???আর আজ আরমানের সামনে না যাওয়ার কি আছে, ও তো তোর শ্বশুড় হবে । তুই তো বলিস শ্বশুরের সামনে পর্দা করতে হয় না ।

ফাতেমা – আমি শুধু আরমান চাচা ,ওনার ভাই আর ভাতিজার সামনে যাবো না কিন্তু ছেলে অর্থাৎ যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সামনে যেতে পারবো । আর ছেলের মা বোন তো আসবেই সাথে । আর, আরমান চাচা তো এখনো আমার শশুড় হন নি । তিনি বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার জন্য গায়রে মাহারাম

রফিক- আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওদেরকে বুঝিয়ে বলবো । তুই সময় মতো রেডি থাকিস।

ফাতেমা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না । করবেই বা কি করে তার বাবা তো আর কোন দিন পর্দার বেপারে সহযোগিতা করে নি । কথাটি শুনে ফাতেমার চোখে পানি চলে আসলো । কেন জানি বাবার প্রতি শ্রদ্ধাটা তার আরো বেশি বেড়ে গেলো।

রফিক সাহেব হয়তো এই ভেবেই. মেয়ের কথায় রাজি হয়েছে যে,কদিন পর তো মেয়েটা চলেই যাবে । তার এই ছোট্ট আবদারটা না হয় মেনেয় নেয়া যাক ।

ফাতেমা- সত্যি বলছো বাবা ?

রফিক- হুম সত্যি এবার যা তোর কাজ গুলো সেরে নে।

ফাতেমা- জাযাকাল্লাহু খয়রান বাবা। {এই বলে চোখ মুছতে মুছতে ফাতেমা রান্না ঘরে গেল}

থাদিজা – কিরে ,তোর বাবা কি বললো? ?

ফাতেমা- বাবা বলেছে ওনাদেরকে বুঝিয়ে বলবে ।

খাদিজা- আলহামদুলিল্লাহ। এবার খুশি তো ?যা এবার তাড়াতাড়ি কর কিছুক্ষন পর যোহরের সময় হয়ে যাবে ।

ফাতেমা – হাতের কাজ প্রায় সবটুকু শেষ করে গোসল করে নামায পড়তে গেল আর সাথে মা আর রিনাকেও নামায পড়তে বললো ।

ফাতেমা – নামায শেষে আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করলো আর বাবার হেদায়াতের জন্য দোয়া করলো ।

হে আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে হেদায়েত দান করো । তুমি আমার পরিবারের সকলকে হেদায়েত দান করো কারন তুমিই তো হেদায়েতের মালিক । হে রহমানুর রাহিম তুমি সকলকে দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দান করো । আল্লাহুম্মা আমিন

এদিকে আরমান সাহেবদের গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছে ।
ইমন- চাচ্চু একটা কথা বলার ছিলো ।

আরমান – হে রে বাবা বল কি বলবি

ইমন – চাচ্চু আমি শুনেছি মেয়েটি নাকি ধার্মিক আবার পর্দাও করে ।

আরমান- হে রে বাবা ঠিক শুনেছিস ।খুব ভালো মেয়ে ।

ইমন – তাই আমাদের হবু ভাবি কিন্তু আমাদের সামনে আসবে না ।
তাই তুমি কিন্তু বেশি জোরাজুরি করো না আমাদের সামনে আসার জন্য ।
আরমান- কেন রে বাবা ,আজকেও আমাদের সামনে আসবে না কেন । ?
আজকে তো ওকে পাত্রি হিসেবে দেখতে যাচ্ছি তাহলে আজকে কেন আসতে পারবে না? ?

ফাতেমা যে কথাগুলো বলে তার বাবাকে বুঝিয়েছে ইমনও ঠিক সেই কথাগুলোই আরমান সাহেব কে বুঝিয়ে বললো

আরমান- বুঝতে পেরেছি রে বাবা। ওর যাতে পর্দা করতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো । আমার বাড়িতে গেলেও ওর পর্দা করতে কোন সমস্যা হবে না ।

এদিকে মাহিন কথা গুলো শুনছে আর মনে মনে বলছে আগে বিয়ে টা হোক তারপর না ঐ মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসবে।

মেহেঘ- আর কত দুর ,আমার কিন্তু মাথা করছে ।

আরমান- আর বেশি সময় লাগবে আর আধা ঘন্টা মতো লাগবে।

আধা ঘন্টা পর…………..

চলবে ইনশাল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here