ফিরে আসা পর্ব-৫২

0
837

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা– Umma Hurayra Jahan

পর্ব– ৫২

মাহিন– আরে আরে কি হলো তোমার।
এই বলে মাহিন ফাতেমার পিছনে পিছনে ওয়াশরুমে গেলো।

ফাতেমাকে পিছন থেকে মাহিন ধরেছে যাতে বমি করতে সুবিধা হয়।
বেচারি ফাতেমা বমি করতে করতে বেহাল দশা।

মাহিন– তোমাকে না কত বার বলেছি এতো টেনশন করো না।জানোই তো টেনশন করলে তোমার এ অবস্থা হয়।
এক পর্যায়ে ফাতেমা এদিক ফিরে কিছু বুঝতে না পেরে মাহিনের শরীরেই দিলো বমি করে।

মাহিন ফাতেমার এমন অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেছে।
তাই সে তার মাকে চিৎকার করে ডাক দিলো।

মাহিন– মা…. ও মা…… দেখে যাও তো তোমার বৌমা কেমন জানি করছে ।আমার তো ভয় করছে।
মাহিনের চিৎকার শুনে মেহেঘ বেগম আর নুরি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো।

বমি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ফাতেমা অজ্ঞান হয়ে মাহিনের কোলে ঢলে পড়লো।

মাহিন — আরে আরে কি হলো??ফাতেমা …ফাতেমা…

মাহিন ফাতেমাকে কোলে করে ওয়াশরুম থেকে বিছানায় এনে শুয়ালো আস্তে আস্তে।

মেহেঘ– কি হয়েছে ফাতেমার??

নুরি– ভাইজান ভাবি কি অইলো???

মাহিন– আমি জানি না।বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
মা. .মা গো আমার তো ভয় করছে।

মেহেঘ– আরে ভয় পাস না ।আল্লাহকে ডাক।ফাতেমার কিছু হবে না।

মাহিন ফাতেমার এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেছে।

মাহিন– মা তুমি ফাতেমার মুখে পানি ছিটিয়ে দাও।আমি আমার গেঞ্জিটা চেঞ্জ করে আসছি।

এই বলে মাহিন ওয়াশ রুমে গেলো জামা চেঞ্জ করতে।

মেহেঘ বেগম ফাতেমার মুখে পানি ছিটা দিলো।
ফাতেমা আস্তে আস্তে চোখ খুললো।
মাহিন ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে ফাতেমা চোখ খুলেছে।

মাহিন ফাতেমার কাছে গিয়ে বসলো।
মাহিন– আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।আলহামদুলিল্লাহ ।ফাতেমা চোখ খুলেছে।

মেহেঘ– আলহামদুলিল্লাহ।
এই নুরি মহিমাকে জলদি ডেকে নিয়ে আয়।মহিমা তো ডাক্তারি পড়ছে।ও এসে ফাতেমাকে চেক করলে বলতে পারবে ফাতেমার কি হয়েছে।
নুরি– আইচ্ছা খালাম্মা যাইতাছি এহনি।
এই বলে নুরি মহিমার রুমে গেলো।

নুরি রুমে গিয়ে দেখে মহিমা ফোনে আলাপ করছে।

নুরি– ও আফা তাড়াতাড়ি আসেন।ভাবির জানি কি হইলো।

মহিমা– আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি নিলা।এখন ফোন রাখছি।
মহিমা ফোন রেখে দিয়ে নুরিকে বললো –কি হয়েছে ভাবির চল তো দেখি।

মহিমা তাড়াতাড়ি ফাতেমার রুমে এলো।

মেহেঘ বেগম মহিমাকে দেখে বললো -তুই এতোক্ষন কোথায় ছিলি??এতো কান্ড ঘটে গেলো এলি না কেন??

মহিমা — মা আমি নিলার সাথে মেডিকেল কিছু অ্যাসাইনম্যান্ট নিয়ে কথা বলছিলাম
।সরি!!তাই কিছু বুঝতে পারি নি।

মেহেঘ– আচ্ছা ঠিক আছে সরি বলতে হবে না।ফাতেমাকে দেখ তো ওর কি হয়েছে।??
মেয়েটা বমি করতে করতে দূর্বল হয়ে গেছে।

মহিমা — এই ভাইয়া তুই সর ভাবির কাছ থেকে।আমাকে দেখতে দে কি হয়েছে?

মাহিন উঠে মহিমাকে বসতে দিলো।
মাহিন– ভালো করে দেখ কি হলো?

মহিমা– ভাবি তোমার চোখ গুলো দেখি তো।
একটু হা করো তো??

মহিমা ফাতেমাকে আরো কয়েকটা প্রশ্ন করলো তার শরীরের ব্যাপারে।

এর মধ্যেই মাহিনের ফোনটা টুং শব্দে বেজে উঠলো।
মনে হয় কোন ম্যাসেজ এসেছে।
মাহিন ফোনটা হাতে নিয়ে চেক করলো।
ফোনের দিকে তাকিয়ে তো মাহিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।মাহিন সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো জোরে।চোখে মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠলো।

মেহেঘ– কিরে মাহিন কি হয়েছে??তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন??

মাহিন– মা. ..ও আমার মা গো…
ফাতেমার চান্স হয়ে গেছে।
ঢাকা মেডিকেলে আমার ফাতেমার চান্স হয়ে গেছে।
আলহামদুলিল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ।

মেহেঘ– আলহামদুলিল্লাহ।এতো অনেক সুখবর।

ফাতেমা তার রেজাল্টোর কথা শুনে মনে একটু শান্তি পেলো।আর মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলে একটু মুচকি হাসি দিলো।দূর্বল শরীর নিয়ে বেশি উঠতেও পারছে না।

মাহিন ফাতেমার দিকে তাকিয়ে বললো “আমি বলেছিলাম না তোমার ঢাকা মেডিকেলে চান্স হবে।কিন্তু তুমি শুধু শুধু টেনশন করেছিলে।আমি তো জানি আমার বউটা ব্রিলিয়েন্ট ছাত্রী।

ইশ……আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।

মহিমা — -আরে বেটা থাম থাম।
এখনি যদি এতো খুশি হোস তাহলে আমি যেটা বলবো সেটা শুনে তো খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাবি।

মেহেঘ বেগম মহিমার কথার মানে বুঝে গেছে।
ঊনি বুঝতে পেরেছেন ফাতেমা কেন বমি করেছে।তাই তিনি মহিমার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলেন।

মাহিন– কি বলছিস এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে যেটা শুনলে আমি খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাবো।

মহিমা ফাতেমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু বেকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো “আছে আাছে,এর থেকে কোটি গুণ সুখবর আছে।
কিন্তু খরবটা বলার আগে বল তুই আমাকে কি দিবি??

মাহিন– আরে তুই আগে খবরটা তো বল তারপর দিবো।

মহিমা– না হবে না।আগে বল কি দিবি??

মাহিন– আচ্ছা তোকে একটা হুজুর জামাই দেবো।এবার তো বল কি সংবাদ যেটা ফাতেমার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার থেকে বেশি খুশির।।

মহিমা –সব সময় মজা করিস ।যা ভাল্লাগে না।আচ্ছা এখন ফ্রিতে বলে দিচ্ছি কিন্তু পরে কিন্তু আমাকে কিছু দিতে হবে।

মাহিন– আচ্ছা ঠিক আছে।এবার তো বল।

মহিমা — আমাদের বাড়িতে মেহমান আসতে চলেছে।কিন্তু সেই মেহমানের আসতে একটু লেইট তবে।একটু সময় লাগবে।

একথা শুনে ফাতেমা বুঝতে পেরেছে মহিমা কি বলতে চাইছে।
ফাতেমা সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।আর কিছুটা লজ্জাও পেলো।

মাহিন– ধুর এটা কি ফাতেমার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার থেকে বেশি সুখবর নাকি???
মেহমান আসবে ভালো কথা।আল্লাহ তার বান্দার উপর খুশি হলে তার বাড়িতে মেহমান পাঠায়।মেহমান আসলে তার আদর যত্ন আপ্যায়ন করে দিস।
ধুর আমি ভাবলাম কি না কি? ?

মাহিনের এমন বোকা বোকা কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।

মহিমা — আসলে তুই দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছিস রে ভাইয়া।

মাহিন– ওমা এতে বোকার কি হলো??

মহিমা — আরে বুদ্ধু ভাই আমার এ মেহমান সে মেহমান না।
মহিমা মাহিনের কাছে গিয়ে হাত ধরে বললো
““O my fool brother congratulations you are going to be a father””হাহাহা

মাহিন হা করে মহিমার দিকে তাকিয়ে আছে।এই খবর শুনে মাহিন যেন আনন্দের ৪৪০ ভোল্ট ঝাটকা খেলো।
স্টাচু অব লিবার্টির মতো দাড়িয়ে আছে মাহিন।

মহিমা — কিরে ভাইয়া তুই তো আনন্দে ঝাটকা খেয়ে অজ্ঞান হওয়ার বদলে স্টাচু হয়ে গেছিস।হিহিহি
এবার বল এটা কি ভাবির মেডিকেলে চান্স পাওয়ার থেকে কোটি গুণ সুখবর না???আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে!!!!্আমি ফুপি হবো।আলহামদুলিল্লাহ।ইয়ে..ইপ্পি…..

মেহেঘ বেগম তো খুশিতে কেদেই দিলেন।
মেহেঘ– ফাতেমা রে তুই যে আজ আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির সংবাদটা দিলি।
আমি যে কি খুশি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
আমার তো খুশিতে চোখে পানি চলে এলো।

ফাতেমা — তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো মা।

মেহেঘ– আমি আল্লাহর দরবারে দুইহাত তুলে দোয়া করি।আল্লাহ যেন তোকে আর তোর সন্তানকে নেক হায়াত দান করে আর সহি সালামতে রাখে।
কতো দিন পর এবাড়িতে ছোট বাচ্চা আসবে।সারাবাড়ি হেটে বেড়াবে।আমার সাথে খেলা করবে।ইশ…ভেবেই প্রাণটা ভরে যাচ্ছে।

নুরি– হ খালাম্মা ঠিক কইতাছেন।আমারো অনেক খুশি লাগতাছে।

মেহেঘ– আমি যাই ।সবাইকে সুখবরটা দিতে হবে।

নুরি– আমিও যাই।গিয়া ভালামন্দ রান্না করি।কি যে আনন্দ লাগতাছে।

এই বলে নুরি আর মেহেঘ বেগম এ ঘর থেকে চলে গেলো।

মহিমা ফাতেমার কাছে গিয়ে বসলো।
–ভাবি এখন কিন্তু তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে।নিজের খেয়াল রাখতে হবে।তোমাকে এখন তোমার মধ্যে থাকা আরেক অস্তিত্বর কথাও ভাবতে হবে এখন থেকে।
আমি এখন যাচ্ছি।আমার অ্যাসাইনমেন্টের কিছু কাজ আছে।

ফাতেমা — ঠিক আছে।

মহিমা — আমি এখন গেলাম রে ভাইয়া।আমার পাওনাটা কিন্তু তোর কাছে রয়ে গেলো।হিহিহি

এই বলে মহিমাও চলে গেলো।
মাহিন স্টাচু থেকে স্বাভাবিক হলো।

মাহিন ফাতেমার কাছে গিয়ে ফাতেমার দুহাত ধরে বসলো।
ফাতেমার হাতে মাহিনের চোখের পানি পরছে টপটপ করে।

ফাতেমা — কি হলো তোমার??ও রাগি মশাই কাদছো কেন??তুমি কি খুশি হও নি??

মাহিন– আরে আমার পাগলি এটা খুশির আর আনন্দের কান্না।আমার নিজেকে এখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হচ্ছে।
কেমন যেনো এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।আচ্ছা বাবা হওয়ার অনুভুতিটা কি এটাই??
পৃথীবির সব পুরুষ যখন জানতে পারে সে বাবা হবে তখন কি সবার এতো অনুভুতি হয়?????

ফাতেমা — হয়তো এমনটাই হয়।
কারন এ যে এক পবিত্র অনুভুতি।যা আল্লাহ পাক হতে আসে।
আমারো জানো কেমন এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভুতি হচ্ছে।আমার ভিতরে থাকা অস্তিত্বটাকে আমি অনুভব করতে পাচ্ছি।

মাহিন– আল্লাহর কাছে কোটি শুকরিয়া।এতো বড় খুশির খবর জানানোর জন্য।

ফাতেমা — আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহর কাছে কোটি শুকরিয়া।

মাহিন– এখন থেকে তোমার কোন অযত্ন হতে আমি দেবো না।তোমার সব কাজ আমি করে দেবো।তোমার যা প্রয়োজন হবে তুমি আমাকে বলবে আমি সব করে দেবো।সবসময় খেয়াল রাখবো যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়।

ফাতেমা –জানো আল্লাহর কাছে আমি কোটি শুকরিয়া জানাই।কারন আল্লাহ তোমার মতো একজনকে আমার জীবনে দিয়েছেন।গত ২ বছরে তুমি আমার সব খেয়াল রেখেছো।সব পরিস্থিতিতে আমার পাশে থেকেছো।আমার পড়া শুনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে সাহায্য করেছো।আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে কষ্ট পেতে দাও নি।জানো তোমার মতো একজন মানুষেই সব মেয়েরা আল্লাহর কাছে চায়।সত্যিই তুমি একজন আদর্শ স্বামী।

মাহিন– আমিও শুকরিয়া জানাই কারন আল্লাহ তোমার মতো একটা জান্নাতের টুকরা আমাকে দিয়েছেন।
আমি জানি শুধু টাকা পয়সা দিয়েই সুখ আসে না।একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে একটু ভালো ব্যবহার একটু আদার যত্ন,একটু এটেনশন পেতে চায়,একটু মিষ্টি ব্যবহার আশা করে স্বামীর কাছে।এগুলোর মাধ্যমেই তারা খুশি হয়।এর জন্য টাকা লাগে না।আর একজন পুরুষ এগুলো দিয়েই স্ত্রীর মন খুশি করতে পারে।একজন উত্তম পুরুষ হতে পারে।
কারন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন““সেই পুরুষ উত্তম ,যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম””

তাই আমিও একজন উত্তম মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি।

ফাতেমা — ও আমার রাগি মশাই তুমি এমনিতেই আমার কাছে উত্তম একজন মানুষ।হিহিহি

মাহিন– হয়েছে হয়েছে আমার হুর পরী এতো গুণগান করতে হবে না।
এই বলে মাহিন ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।

ওদিকে মেহেঘ বেগম ফোন করে সুখবরটা আরমান সাহেবকে জানালেন।
আরমান সাহেব তো আনন্দে আত্মহারা।
তিনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন এটা মেহেঘ বেগমকে জানালেন।

মেহেঘ বেগম আরমান সাহেবের সাথে কথা বলা শেষ করে ফাতেমার বাবার বাড়িতে ফোন দিলো।
মেহেঘ বেগম খাদিজা বেগমকে ফোন করে খুশির খবরটা দিলেন।
খাদিজা বেগম মেহেঘ বেগমের সাথে কথা বলা শেষ করে ফাতেমাকে ফোন দিলো

ফাতেমা সালাম দিয়ে ফোন ধরলো।
খাদিজা বেগম সালামের জবাব দিলেন।

খাদিজা– মা রে একসাথে আজ এতো আনন্দের খবর শুনছি ।আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।আল্লাহ এতো ভালো সংবাদ শুনালেন।

ফাতেমা — তুমি দোয়া করো মা।

ফোনের ওপারে রফিক সাহেব খাদিজা বেগমকে বলছেন–সব কথা কি তুমি একাই বলবে নাকি??আমাদেরকেও সুযোগ দাও।
খাদিজা– এই নে ফাতেমা তোর বাবা তোর সাথে কথা বলবে।

রফিক–মা রে খবরটা শুনে তো আমার আর তর সইছে না রে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি তোকে প্রাণ ভরে দেখে আসি।কিন্তু একটা গুরুত্বপুর্ন কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারবো না।

ফাতেমা –তোমার কাজ শেষ হলে সবাইকে নিয়ে আসতে হবে কিন্তু এ আমি বলে দিলাম।না হলে রাগ করবো কিন্তু।
আচ্ছা বাবা আবিদার রেজাল্টের কি খবর??

রফিক– ও হো রে একদম বলতে ভুলে গেছি।বৌমার তো ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স হয়েছে ।

ফাতেমা — আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা ওকে একটু ফোনটা দাও তো।

ফাতেমা একে একে আবিদা আর হাসানের সাথে কথা বলে রেখে দিলো।

আজ সবাই মহা খুশি।

ফাতেমা হেন্সির খবর জানার জন্য হেন্সিকে ফোন দিলো ওর. খবর জানার জন্য।

দুজনে সালাম বিনিময় করে কথা বলা শুরু করলো।

ফাতেমা — কিরে হেন্সি কেমন আছিস??আর তোর রেজাল্টের খবর কি??

হেন্সি– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আর আমার কোন মেডিকেলে চান্স হয় নি রে।
কিন্তু তারপরেও আলহামদুলিল্লাহ।কারন আল্লাহ যা করেন ভালো জন্য করেন।আবিদা ফোন করেছিলো ওর নাকি ময়মনসিংহ মেডিকেলে চান্স হয়েছে।কিন্তু তোর টা তো জানি না ।তোর কোথায় হলো???

ফাতেমা — না..মানে..আমার ঢাকা মেডিকেলে হয়েছে।

হেন্সি– আলহামদুলিল্লাহ।জানতাম আমি, আমার মিষ্টি বান্ধবিটার এখানেই চান্স হবে।

ফাতেমা — তোর কি মন খারাপ।??

হেন্সি– আরে ধুর পাগলি মন খারাপ হবে কেন??বললাম না আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন।

ফাতেমা — তোকে আরেকটা খবর দেওয়ার জন্য ফোন করেছিলাম।

হেন্সি– কি খবর তাড়াতাড়ি বল।

ফাতেমা — না মানে… তুই খালামনি হতে চলেছিস।
ফাতেমা একটু লজ্জা পেয়ে বললো কথাটা।

হেন্সি— কি!!!!সত্যি বলছিস????

ফাতেমা– হুম সত্যি বলছি।

হেন্সি– আলহামদুলিল্লাহ।এর থেকে তো আমার কাছে খুশির সংবাদ আর কিছু হতেই পারে না।
দোয়া করি আল্লাহ তোদেরকে নেক হায়াত দান করুন।

ফাতেমা — তোর বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিস।

হেন্সি– হুম অবশ্যই।

ফাতেমা আর হেন্সি আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলো।

কিছুক্ষন পর আরমান সাহেব অফিস থেকে চলে এলেন।
উনি এসে তো আনন্দে বাড়ি মাথায় তুলে নিলেন।
তিনি ফাতেমাকে আর সবাইকে একসাথে ডাকলেন।
সবাইকে একসাথে বসিয়ে আরমান সাহেব তার মনের সব ইচ্ছা বললেন।
-তিনি নাতি ,নতনি নিয়ে খেলবেন,খাওয়াবেন ,ঘুম পাড়াবেন আরো,কত কি!!!
তিনি ফাতেমাকে প্রাণ ভরে দোয়া করলেন।

আর এ বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
সবাই কত্ত খুশি।
কিন্তু আজ থেকে ২-৩ বছর আগে পরিবারটা এমন ছিলো না।প্রতিদিন অশান্তি লেগেই থাকতো।
কিন্তু হেদায়েতের ছায়া তলে আসার পর আর ইসলামের পথে আসার পর এই পরিবারে শুধু শান্তিই বিরাজ করছে।
কারন ইসলাম মানেই তো শান্তি।যা আল্লাহ হতে প্রদত্ত।
ইসলামি জীবন যাপন খুব সহজ,সরল।কিন্তু এতেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি।

এভাবেই দিন কাটছে।ফাতেমার প্রতি মাহিনের ভালোবাসা দিন দিন যেন আরো বেরেই চলেছে।
এমনিতেই মাহিন ফাতেমাকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ।এখন তো আরো বেশি পাগলের মতো ভালোবাসে ফাতেমাকে।

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা এমনি হওয়া উচিত।

কয়েকদিন পর মাহিন নিজে সাথে গিয়ে ফাতেমাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে এসেছে।
মেডিকেল কলেজ থেকে মাহিনদের বাসা বেশি দূরে না।তাই ফাতেমা বাসা থেকেই যাতায়াত করতে পারবে।
আর ফাতেমার যাতায়েতের দায়িত্বটাও মাহিন নিয়েছে।প্রতিদিন ফাতেমাকে নিয়ে যাওয়া ,নিয়ে আসা মাহিন নিজেই করে।একটুকুও অযত্ন হতে দেয় না ফাতেমার।

কয়েক দিন পর ফাতেমার বাবার বাড়ির সবাই ফাতেমাকে এসে দেখে গেছে।

আর ফাতেমা গর্ভাবস্থায় যা যা আমল করার দরকার তাই তাই করছে।কারন গর্ভাবস্থায় যত বেশি আমল করা হবে গর্ভের সন্তান তত বেশি নেককার হবে।
মাহিন নানা ধরেনের ইসলামিক বই. কিনে এনেছে এ বিষয়ের।
বই গুলো মাহিন নিজে পড়ে আর ফাতেমাকে বলে দেয় এ অবস্থায় কি কি করতে হবে।
ফাতেমা বইগুলো পড়তে পারে না।কারন এমনিতেই গর্ভবতি তার উপর মেডিকেলের পড়া পড়তে হয়।আর প্রতিদিন তো কুরআন পাঠ আছেই।
তাই মাহিন ফাতেমার যাতে ব্রেনে বেশি প্রেশার না পরে তাই নিজেই সব বই পড়ে আর কি কি করতে হবে তা ফাতেমাকে জানায়।

একদিন দুপুর বেলা যোহরের নামাযের পর মাহিন আর ফাতেমা বসে গল্প করছে।

মাহিন–আচ্ছা আমার না মেয়ে বাচ্চার খুব শখ ।আমার একটা পিচ্চি ফাতেমা হবে।ঠিক তোমার মতো সুন্দরি।

ফাতেমা– ছেলে হোক বা মেয়ে হোক আল্লাহ খুশি হয়ে যা দিবেন তাতেই খুশি আছি ।বুঝেছো রাগি মশাই???

মাহিন– সেটা তো বুঝেছি।কিন্তু ছেলে মেয়ে যাই হোক সে যেন সুস্থ হয়।আর সে যেন নেককার হয়।আল্লাহর কাছে সে দোয়াই করি।
আচ্ছা এখন তো তোমার ৪মাস।এখন বলো তো তোমার কোন আমলটা করতে হবে??

ফাতেমা –জ্বি মশাই জানি।
এখন আমার সুরা লোকমান পড়তে হবে।
কারন গর্ভাবস্থায় ১ম মাসে সূরা আল ইমরান পড়লে সন্তান দামি হবে।
২য় মাসে সূরা ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।

৩য় মাসে সূরা মারয়াম পড়লে সন্তান সবর কারী হবে।

৪র্থ মাসে সূরা লোকমান পড়লে সন্তান হেকমত ওয়ালা হবে।

৫ম মাসে সূরা মুহাম্মদ পড়লে চরিত্রবান হবে।

৬ষ্ঠ মাসে সূরা ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে।

৭ম ,৮ম,৯ম,১০ম মাসে সূরা ইউসুফ ,মুহাম্মাদ,এবং ইব্রাহিম এর প্রথম থেকে ১০ আয়াত পড়তে হয়।

আর ব্যাথা উঠলে সূরা ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফু দিয়ে পানিটা পান করতে হবে।

মাহিন- — আলহামদুলিল্লাহ।একদম ঠিকঠাক আমলগুলো বলেছো।
তাছাড়া গর্ভাবস্থায় হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা।তারপর হারাম খাবার থেকে দূরে থাকা তারপর টিভি ,সিরিয়াল ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।বেশি বেশি কুরআন পাঠ করতে হবে।

ফাতেমা –জ্বি জনাব জানি।যদিও কুরআন হাদিসে গর্ভাবস্থার বিশেষ কোন আমল বর্নিত হয় নি।তবে এ অবস্থায় যথা সম্ভব কুরআন পাঠ ,যিকির,তাসবিহ,তাহলীল,
পাঠ করতে হবে।
বেশি বেশি নেক কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।গুনাহ থেকে বেচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

মাহিন– আর হে..এই দোয়াটা বেশি বেশি পড়বে.

.““রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা জুররিয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাতান,ইন্নাকা সামিউ’দ দুআ’ই{সূরা -আল ইমরান-৩৮}

এটার অর্থ “হে আমার প্রভু!আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করুন।নিশ্চই আপনি দোয়া কবুলকারী।

ফাতেমা — বাহ্ ।আমি না তোমাকে মাঝে মাঝে দেখে অবাক হই।তুমি নিজেকে কতটা পরিবর্তন করেছো সেটি তুমি নিজেও ভাবতে পারবে না।কত কিছু শিখেছো তুমি।আলহামদুলিল্লাহ।

মাহিন-আল্লাহ যখন কাউকে হেদায়েত দান করে তখন সেই ব্যাক্তি নিজেকে পরিবর্তন করতে বাধ্য।আর আমার হেদায়েতের পিছনে অনেক বড় উছিলা তো তুমি ।বুঝেছো হুর পরী??

ফাতেমা –জ্বি জনাব ।বুঝেছি।

মাহিন– জানো হুর পরী আমার না জময বাচ্চা খুব ভালো লাগে।ইশ……আমাদের যদি জময বাচ্চা হতো???

ফাতেমা — আমারো তো ভালো লাগে।বাচ্চা কি রকম হবে „ছেলে নাকি মেয়ে হবে সব আল্লাহর ইচ্ছা।বাবা মা হিসেবে আমরা শুধু দোয়া করতে পারি।
তাই তাহাজ্জতের সময় দোয়া করবো ।আল্লাহ যাতে এ ইচ্ছাটা পূরন করে দেন।

মাহিন–হুম।আচ্ছা ছেলে হলে কি নাম রাখবো আর মেয়ে হলে কি নাম রাখবো??

পরের পর্বে শেষ হবে,, ইনশাআল্লাহ ………

শেষ পর্ব, বড়ো, হওয়ার কারনে অনেক এ পড়তে পারেনি।
তাই এই পর্ব দুই ভাগ করে দিয়েছি,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here