#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- umma Hurayra Jahan
পর্ব-১২
আধা ঘন্টা পড়
রফিক- কিরে আরমান ,আর কতদূর?
আরমান- আসছি,জানিস তো রাস্তায় কত জেম। আসছি আর ১০ মিনিট লাগবে ।
রফিক- আচ্ছা সাবধানে আয় ।রাখছি ।।
এই খাদিজা শুনছো ওরা আর১০ মিনিটের মধ্যেই এসে পরবে। সব রেডি তো??
খাদিজা- হুম সব রেডি ।
এদিকে খাদিজা বেগম রিনাকে সাথে নিয়ে সব রেডি করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন। সব একদম ঠিকঠাক
রফিক – ফাতেমা কোথায়?
হাসান – বাবা ও তো ওর রুমে আছে ।
রফিক- আচ্ছা ঠিক আছে । আচ্ছা শোন তোকে যে বলেছিলাম কোল্ডড্রিংস আনতে এনেছিস??
হাসান- না বাবা। পুচকি বলেছে ও নাকি শরবতের ব্যবস্থা করেছে । তাই আনি নাই।
রফিক – আচ্ছা ঠিক আছে । দেখিস ওদের যাতে অসুবিধা না হয় ।
হাসান – হুম ঠিক আছে।
খাদিজা- এই রিনা শোন উনারা আসলে প্রথমে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিবি তারপর উনাদের জন্য আনিয়ে রাখা নতুন তোয়ালে গুলো দিবি । উনারা ফ্রেশ হলে তারপর শরবত দিবি । বুঝেছিস??
রিনা – খালাম্মা আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না, ফাতেমা বুবু আমারে সব বুঝাইয়া দিছে।
খাদিজা – আচ্ছা ঠিক আছে ।
।।।।।।
মেহেঘ – এই শোন ,আমরা কিন্তু এই বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করবো না । just হালকা নাস্তা দিলে সেটাই খাবো । আর বেশি কিছু কিন্তু খাবো না । আর সব তাড়াতাড়ি করবে কিন্তু । যদি দেড়ি করি বাসায় যেতে বেশি রাত হয়ে যাবে ।
আরমান- আচ্ছা তুমি এতো কথা বলো কেন বলো তো । আগে যাই তারপর না হয় দেখা যাবে ।
এর মধ্যেই গাড়ি ফাতেমাদের বাড়ির গেইটের সামনে দাড়ালো। সবাই গাড়ি থেকে নামলো ।
মাহিন একটু মুড অফ করে আছে ।
মহিমা- ইশ এতক্ষন বসে থাকতে থাকতে কমড় ব্যাথা হয়ে গেল।
এই ইমন ভাইয়ার জন্যই এতো দেরি হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মসজিদে চলে গেছিলো নামায পড়তে । একটু কাযা পড়ে নিলে কি হতো???
ইমন – নিচের দিকে তাকিয়ে । বোন তুই নামাযের মর্ম বুঝিস না তাই এটা বললি । যেদিন বুঝতে পারবি সেদিন নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।
বড়ভাই – হয়েছে হয়েছে ,এখানেই কি সব কথা বলবি না ভিতরে যাবো??
আরমান- হুম ভাইজান এসো।
টিং……টিং………টিং কলিংবেলেন শব্দ হতেই
খাদিজা – মনে হয় উনার এসে গেছে । এই শুনছো তুমি দরজা খুলে উনাদের ভিতরে নিয়ে এসো।।
রফিক – আচ্ছা ঠিক আছে ।এই হাসান আমার সাথে আয়।
হাসান- জ্বি বাবা আসছি ।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ফাতেমার বুকটা কেন জানি কেপে উঠলো । ফাতেমার কেন জানি চোখে পানি চলে এলো ।
হয়তো এদের সাথেই আর কদিন পর নিজের প্রিয়জনদের ছেড়ে নিজের এই শান্তির নীড় ছেড়ে,শৈশবের সব স্মৃতী ছেড়ে চলে যেতে হবে । এটাই তো নিয়ম । প্রত্যেকটা মেয়েকে একদিন না একদিন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়।
যা আল্লাহর বিধান । যা ফরজ। আর যেটা অস্বিকার করার কোন উপায় নেই।
এইসব ভাবতে ভাবতে ফাতেমা কাদতে লাগলো ।
রফিক – দরজা খুলে । আয় আয় দোস্ত,ভাবি কেমন আছেন ?
মেহেঘ – জ্বি ভালো ।
আপনি??
রফিক – আমিও ভালো ।
মামনি কেমন আছো?
মহিমা – জ্বি uncle ভালো ।
রফিক – তা আমাদের জামাই কই???
মাহিন সবার পিছনে দাড়িয়ে ফোট টিপছিলো??
জামাই কথাটা শুনে মাহিন মনেমনে রেগে গেল ।
হু…. জামাই ….। দাড়াও জামাই হওয়াচ্ছি
আরমান—- এই তো মাহিন।মাহিন এদিকে আয়।
আরমান সাহেব মাহিনকে ফোন চালাতে দেখে মনেমনে রেগে গেলন । { এই ছেলে তো আমার নাক কাটাবে ।। একে নিয়ে আর পারিনা}
মাহিন এদিকে আয়।
মাহিন – জ্বি বাবা আসছি ।
রফিক সাহেব ইমনকে দেখে মুখটা কেমন জানি করলেন।
রফিক- এ কে রে আরমান ???
আরমান – ও আমার ভাতিজা ।
এই যে ভাইজান ,আমার ভাইজানের ছোট ছেলে ।
রফিক – আরে ভাইজান কেমন আছেন??কত দিন পর আপনার সাথে দেখা??
বড়ভাই- হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
হাসান – [ রফিক সাহেবের কানে কানে] বাবা তুমি কি উনাদের এভাবে দরজায় দাড় করিয়েই সব কথা বলবে নাকি??
রফিক- আরে আরে সবাই ভিতরে আসুন।
রফিক সাহেব সবাইকে ড্রয়িং রুমে এনে বসালেন ।
সবাই চারদিকে তাকিয়ে রুমটা দেখছে । দেখবেই না বা কেন??কে সাজিয়েছে দেখতে হবে না?
আরমান – এই বাড়ির সবকিছু ফাতেমা সুন্দর করে সাজিয়েছে। ও অনেক গুণী একটা মেয়ে।
আরমান সাহেব তার পরিবারকে এগুলো বলছে।
মেহেঘ – তুমি জানো কি করে?
আরমান – আরে আগেরবার এসেছিলাম তখন রফিক বলেছিলো। তাই না রে রফিক???
রফিক – হাহাহা হুম তাই ।
রিনা- আসসালামুআলাককুম । আপনারা যারা যারা হাত মুখ ধইবেন আমার লগে আহেন।
তারপর একে একে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলো।
রিনা সবাইকে ফাতেমার বানানো ঠান্ডা শরবত দিলো ।
এতো লম্বা সফরের পর এতো সুন্দর আর মজার শরবত খেয়ে রিনাকে বাহবা দিলো।
মহিমা- বাহ্ তুমি তো খুব ভালো শরবত বানিয়েছো ।
মেহেঘ – হুম সত্যি অনেক ভালো হয়েছে ।
রিনা- আরে না না আপনারা ভুল করতাছেন ।শরবত তো আমি বানাই নাই ,।শরবত তো ফাতেমা বুবু বানাইছে।
আরমান- দেখেছো বলেছিলাম না ফাতেমা অনেক গুনী মেয়ে ।
মেহেঘ তাচ্ছ্যিল্লের সাথে হেসে মাথা নাড়লো।
মহিমা মাহিনের সাথে বসে ছিলো । তাই মহিমা মাহিনের কানে কানে বলছে
মহিমা- দেখেছিস ভাই আমাদের ভাবি কি ভালো শরবত বানায় । বিয়ের পর খালি ভাবির হাতের শরবতি খাস । হিহিহিহি
মাহিন- তুই চুপ করবি নাকি ,এখানেই মার টা খাবি??
আরমান- আচ্ছা রফিক আমাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে । ফাতেমা মাকে তাড়াতাড়ি ডাক।
রফিক সাহেবের হঠাৎ করে ফাতেমাকে দেওয়া কথাটা মনে পরে গেল। তিনি তো ফাতেমাকে কথা দিয়েছিলো যে তিনি ফাতেমাকে পুরুষদের সামনে আনবেন না ।
রফিক – দোস্ত একটা কথা বলার ছিলো??
আরমান- হুম বল
রফিক- তুই তো দেখলি ফাতেমা পর্দা করে ।তাই ও বলেছিলো যে ও নাকি ছেলে ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সামনে যাবে না।
আরমান- হাহাহা আরে এ নিয়ে তুই চিন্তা করিস না । ইমন আমাকে সব বুঝিয়ে বলেছে । ফাতেমাকে শুধু মাহিন আর ওর মা ও বোন দেখবে আমরা দেখবো না।
রফিক – তুই আমাকে বাচালি রে ভাই ।
আরমান – আরে বাচানোর কি আছে । ফাতেমার পর্দা যাতে নষ্ট না হয় সেটা আমার দায়িত্ব।
রফিক- ঠিক আছে । আমি ফাতেমাকে দেখানোর ব্যাবস্থা করছি।
এর মধ্যেই আসরের আজান পরে গেল
রফিক – ফাতেমাকে তাড়াতাড়ি বলো রেডি হতে।
খাদিজা- হুম বলছি। আগে দাড়াও আমি উনাদের সাথে দেখা করে আসি। না হলে কি ভাববে বলো তো।
এই বলে খাদিজা বেগম সবার সাথে দেখা করে আসলেন।
তিনি তারপর ফাতেমার ঘরে গেলেন গিয়ে দেখেন ,ফাতেমা নামাযের জন্য ওযু করে তৈরি হচ্ছে ।
খাদিজা- কিরে মা, ছেলে ছেলের মা আর বোন তো তোকে দেখার জন্য তারা দিচ্ছে ।
ফাতেমা- মা তুমি ওনাদের একটু অপেক্ষা করতে বলো আমি নামায পড়েই ওনাদের সামনে যাবো।
খাদিজা- কিন্তু ওনারা যদি কিছু মনে করেন ??
ফাতেমা- মা তুমি একটু বুঝিয়ে বলো । আমি যদি এখন নামায না পড়ি তাহলে পরে নামায কাযা হয়ে যাবে। আর তুমি তো জানোই আমি কোন মূল্যে আমি নামায কাজা করতে পারবো না। কারন সবার আগে নামায পরে সব কিছু ।
আর তুমিও উনাদেরকে আসরের নামাযের দাওয়াহ দিয়ে এসো ।তারপর নিজেও নামাযটা পড়ে নাও ।
খাদিজা- আচ্ছা ঠিক আছে ।
মাফ করবেন ফাতেমা নামাযে বসেছে । নামায শেষ করেই ও রেডি হয়ে যাবে । আর আপনারাও নামায টা পড়ে নিন । আমাদের এখানে নামাযের ব্যাবস্থা আছে।
মেহেঘ – একটু বিরক্ত হলেন নামাযের কথা শুনে।
না…মানে..আমরা নামায পড়বো না। আপনি ওকে তাড়াতাড়ি করতে বলুন । দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো।
খাদিজা- আচ্ছা ঠিক আছে।
ইমন হাসানকে বলছে
ইমন – আচ্ছা ভাইয়া আমাকে একটু মসজিদে নিয়ে যাবেন ,নামায টা পড়বো তো তাই।
হাসান- হুম চলো আমিও যাবো মসজিদে।
এই বলে ইমন, ওর বাবা আর হাসান মসজিদে চলে গেল।
রান্নাঘরে
রিনা- আইচ্ছা খালাম্মা একটি কতা কইবার চাইতাছি কিন্তু ডরে কইতে পারতাছি না।
খাদিজা- কি বল
রিনা- আইচ্ছা খালাম্মা বুবুর হবু জামাই এমন একটা ছিড়া পেন্ট কেন পিনছে???শুনছি ওনারা নাকি অনেক বড় লোক । তাইলে ওনি এমন একটা ছিড়া পেন্ট কেন পিনলো????
খাদিজা- হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে ।
কি বললি ছিড়া পেন্ট??হাহাহাহ্
রিনা – হ ভুল কি কইলাম??
খাদিজা – আরে পাগলি এটি ছিড়া না এটা স্টাইল।
রিনা- ও আল্লাহ গো ছিড়া পেন্ট আবার ইস্টাইল অইলো কবে থাইক্কা????বুজি না বাপু
এদিকে ফাতেমা নামায শেষ করে মায়ের কথায় হালকা একটু সাজলো।
ফাতেমা তার ঠোট হালকা একটু গোলাপি লিপস্টিক দিয়েছে আর চোখে একটু কাজল দিয়েছে । আর সুন্দর একটি লাল গাউন ফুল হাতা আর একটা মেচিং লাল হিজাব পড়েছে । ও আল্লাহ গো, ফাতেমা তো এমনিতেই সুন্দর এখন যেন আসমানের হুরদের মতো লাগছে।
রেডি হয়ে ফাতেমা তার মা কে ডাক দিলো।
খাদিজা- মাশাল্লাহ রে মা, /।খুব মিস্টি লাগছে আজ তোকে। কিন্তু এই গরমে ফুল হাতা কেন পড়েছিস আর হিজাব কেন পড়েছিস??
ফাতেমা- মা বিয়ের জন্য পাত্রের সামনে যাওয়া জায়েজ থাকলেও তার সামনে সতর ঢেকে যেতে হয় ।এটাই নিয়ম।
খাদিজা- হুম ঠিকাছে।তুই এখানে দাড়া আমি ওদের কে তোর রুমে নিয়ে বসাচ্ছি ।তারপর রিনাকে দিয়ে তোকে পাঠাবো।
ফাতেমা – ঠিক আছে মা।
খাদিজা – ভাবি আপনি মহিমা আ র মাহিন কে নিয়ে আমার সাথে আসুন।
মেহেঘ- জ্বি আসছি । এই তোরা আমার সাথে আয়।
মাহিন আর মহিমা ফোন টিপতে টিপতে গেল ফাতেমার ঘরে গেল
খাদিজা- আপনারা বসুন আমি ফাতেমাকে পাঠাচ্ছি।
মেহেঘ – [ঘরে বসে মনে মনে বলতে লাগলো ] বাহ্ ঘরটা তো খুব সুন্দর গোছানো । দেখলেই মনে হয় কোন মুসলমানের ঘর ।
এর মধ্যেই রিনা ফাতেমাকে নিয়ে এলো।
ফাতেমা – আসসালামুআলাইকুম
মেহেঘ- সালামের জবাব নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে
মাহিমা ফাতেমার কন্ঠ শুনে ফাতেমার দিকে তাকাতেই ……………
চলবে ইনশাল্লাহ……