#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- umma Hurayra Jahan
পর্ব-১৪
রফিক – তাহলে আগামী সপ্তাহের শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য করা হলো। আলহামদুলিল্লাহ
হাসান- চাচা আমার একটা কথা ছিলো।
আরমান- হে বাবা বলো
হাসান-না মানে …আমাদের পুচকি তো মাত্র ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে ।ও আরো লেখাপড়া করতে চায়।
দয়া করে ওর পড়ালেখা বন্ধ করবেন না ।
আরমান- আরে বাবা এটা কি বলছো,এর পড়া লেখা বন্ধ করবো কেন?ও তো এখন থেকে আমারও মেয়ে । ফাতেমা যতদূর ইচ্ছা ততদুর পড়বে।
হাসান- ধন্যবাদ চাচা
আরমান- আরে ধন্যবাদের কি আছে ।
সবার এসব কথা বার্তা শুনে মাহিনের মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
খাদিজা- অনেক তো কথা হলো । এবার তো খেতে হবে । আপনারা সবাই আসুন খেতে আসুন।
মেহেঘ- আরে না না ভাবি আমরা খাবো না । আমাদের এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
রফিক- এটা আপনি কি বলছেন ভাবি। প্রথমবার এলেন তাও আবার এখন থেকে তো আমরা বন্ধু থেকে আত্মীয় হয়ে গেলাম । আর আজ আপনারা না খেয়ে চলে যাবেন। ????এটা কি করে হয়।
মহিমা- [মায়ের কানে কানে বলছে] চলো না মা খেয়ে যাই । আমার খুব ক্ষিদে পয়েছে।
আরমান- আরে রফিক চিন্তা করিস না আমরা খেয়েই যাবো ।
খাদিজা- আপনারা সবাই আসুন খেতে আসুন।
এই বলে সবাই ডাইনিং রুমে খেতে গেল।
রিনা- আইজকা সব রান্না কিন্তু ফাতেমা বুবু রান্না করছে।
সবাই রান্না খেয়ে তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কিন্তু মাহিন কিছুই খাচ্ছে না ।কারন ফাতেমা সব রান্না করেছে আজ।
রফিক- আরে মাহিন বাবা কিছু খাচ্ছো না কেন??
মাহিন- না মানে uncle আমার ক্ষিদে নেই ।
এর মধ্যে মিমি ফোন দিল।
মাহিন-Excuse me আমি একটু ফোনটা ধরে আসি।
মিমি- কি হলো মাহিন আজ সারা দিন একটাও ফোন দিলে না। কি হলো তোমার??
মাহিন- সব শেষ হয়ে গেছে মিমি।
মিমি- সব শেষ হয়ে গেছে মানে????কি বলছো এসব??
মাহিন- আমি ময়মনসিংহ আছি।কালকে আমি তোমাকে সব বলবো। কাল বিকেলে তোমার সাথে দেখা করবো।এখন রাখছি।
মিমি- আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন শেষ করে মাহিন ভিতরে গেল। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই সব ঠিক করে ঢাকার জন্য রওনা দিল।
পরদিন সকালে
রিয়া – আসসালামুআলাইকুম ফাতেমা।কেমন আছো?
ফাতেমা- ওয়ালাইকুআসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কিন্তু তোমাকে তো চিনতে পারছি না ।
ফাতেমা রিয়াকে চিনতে পারলো না কারন সে সময় রিয়া ছিলো অন্য এক রুপে। রিয়ার পরনে ছিলো বোরকা ৫পার্টের হিজাব ,হাত মোজা ,পা মোজা,নিকাব।
রিয়া – আরে ফাতেমা আমাকে চিনতে পারছো না? আমি রিয়া ।
ফাতেমার মুখ. দিয়ে সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি বেরিয়ে আসলো। ফাতেমা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
ফাতেমা- এতো অল্প সময়ে তোমার এতো পরিবর্তন রিয়া?আমি তো আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।আলহামদুলিল্লাহ।
রিয়া- হ্যা ফাতেমা এটা আমিই। এতো দিন অন্ধকারে ছিলাম।আমি অবুঝ ছিলাম। দুরে ছিলাম আমার রবের রহমতের আরশের ছায়াতল থেকে।আমি দুরে ছিলাম হেদায়াতের পথ থেকে। তুমি আমার জীবনে আলো হয়ে এসেছো। তুমি আমাকে হেদায়াতের পথ দেখিয়েছ। তুমি আমাকে অন্ধকার থেকে তুলে এনেছো তোমার অমেও বানী দিয়ে। তুমি আমাকে একত্র রবের রাস্তার সন্ধান দিয়েছো।
এগুলো বলে রিয়া কান্না করছে । কান্নায় ওর নিকাব ভিজে গেছে।
[ফাতেমাও রিয়ার কথা গুলো শুনে কেদে ফেললো। ফাতেমা এ কোন রিয়াকে দেখছে।??ফাতেমা রিয়ার কথাগুলো শুনে মুগ্ধ হয়ে শুধু শুনছে।
ফাতেমা- কিন্তু রিয়া এতো তাড়াতাড়ি তুমি কিভাবে নিজেকে পরিবর্তন করলে?
রিয়া – আমি আর নিজের পাপের জগৎে রাখতে চাইনা । আমি চাই না আর পাপের বোঝা বাড়াতে । এতো দিন তো ছিলামি পাপের রাস্তায়।
ফাতেমা- মাশাল্লাহ । আমি খুব খুশি হয়েছি তোমার পরিবর্তন দেখে। নামাযটা ঠিকমতো পড়ছো তো??কারন শুধু পর্দা করলেই হবে না সাথে নামাযটাও ঠিকমতো পড়তে হবে। কারন নামায আর পর্দা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ন। তাই দুটোকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
রিয়া – হুম আলহামদুলিল্লাহ নামাযটাও ঠিক মতোই পড়ছি
ফাতেমা- আলহামদুলিল্লাহ। আর রিয়া শুনো আগামী। শুক্রবার আমার বিয়ে তাই তোমার আর তোমার বাবা মায়ে বিয়েতে দাওয়াত।
তুমি আর হেন্সি ছাড়া তো এই কলেজে আমার আর কোন বান্ধবি নেই তাই তোমরা আসলে খুবি খুশি হবো । আর হে বিয়েতে আসলে তুমি মুসলমানের সুন্নতি তরিকায় বিয়ে সম্পর্কে জানতে পারবে ।কিভাবে নবীজির সুন্নত অনুযায়ি বিয়ে হয় সেটা জানতে পারবে।
রিয়া – আলহামদুলিল্লাহ। আমি অবশ্যই যাবো ।
আর আমার মাকে তোমার কথা বলাতে মা তোমাকে দেখতেও চেয়েছিলো।
জানো ফাতেমা ,আমার বাবা মা আমার পরিবর্তন দেখে খুব খুশি হয়েছে।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।
রিয়া- আচ্ছা আমাদের দুলাভাই কি তোমার মতো পরহেজগার??
ফাতেমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে …
ফাতেমা- না রিয়া । আল্লাহ এমন কাউকে আমার নসিবে দেন নি। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তিনি একদম আমার উল্টো।
রিয়া- চিন্তা করো না ফাতেমা। আল্লাহ হয়তো উনাকেই তোমার জন্য ঠিক মনে করেছেন তাই উনার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন।
ফাতেমা- হুম সেই আশাতেই তো আমি সব মেনে নিয়েছি।
হেন্সি- কিরে তোরা এখানে আর আমি তোদেরকে সারা কলেজে খুজছি।
ফাতেমা – আরে আমি তো একটু পর তোর কাছেই যেতাম । এই দেখ এটা রিয়া ।
হেন্সি- হুম ওর সাথে তো আমার আগেই দেখা হয়েছে। ও ওর এই পরিবর্তনের কথা সব আমাকে বলেছে।
ফাতেমা- শুন শুক্রবারে বিয়ে ঠিক আমার । তোকে তো আর আলাদা করে দাওয়াত দেওয়ার কিছু নেই । তুই তো আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তোর বাবা মাকে আবার বলতে ভুলিশ না যেন।
হেন্সি- আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই আসবো।
রিয়া- চলো এবার ক্লাসে যাই।
বিকেলে।।।।।।
মিমি- মাহিন তুমি ফোনে এসব কি বলছিলে???সব শেষ মানে??
মাহিন- হুম রিয়া। সব শেষ বাবা আমার বিয়ে ফাতেমা নামক এক গাইয়্যা ভুতের সাথে ঠিক করেছে। তাও আবার আমার মত ছাড়া।
মিমি- What……..?????
কি বলছো এসব??না এটা হতে পারে না,কিছুতেই না…। আমার কি হবে ।
এসব বলে মিমি পাগলের মতো করতে শুরু করলো।
মাহিন- তুমি একটু শান্ত হও। এজন্যই আমি তোমাকে এসব কথা ফোনে বলিনি।
মিমি- শান্ত হবো মানে………। তাহলে তুমি আমাকে আমাদের বিয়ের সপ্ন দেখিয়েছিলে???কেন কেন কেন???আমাকে জবাব দাও।
এই বলে মিমি মাহিন কে চড় থাপ্পর মারতে লাগলো।
মাহিন – শান্ত হও মিমি। তুমি যদি পাগলামি করো আমার কি হবে । আমি কি করবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
মিমি- তুমি আমাকে আগে কেন বলনি এসব। এটা তো আর একদিনে হয়ে যায় নি ।
মাহিন- আমি ভেবেছিলাম বিয়েটা হবে না । মা আমাকে কথা দিয়েছিলো যে কিছুতেই বিয়েটা হতে দিবে না। কিন্তু ঐ মেয়ে যে মাকে কি যাদু করলো কে জানে। মাও বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।
এখন আমি কি করবো।
মিমি- তুমি কেন বিয়েতে রাজি হলে??আমি তোমাকে কিছুতেই বিয়ে করতে দেবো না । তুমি যদি বিয়েটা করো তাহলে আমি কিন্তু মরে যাবো।
মাহিন- এরকম কথা বলো না মিমি ।তোমাকে ছাড়া তো আমিও মরে যাবো।আমি নিরুপায় ছিলাম। আমি যদি বিয়েটা না করি তাহলে বাবা আমাকে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে। তখন আমি কোথায় যাবে।
সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার কথা শুনে মিমি একটু কেমন জানি করলো। কারন মিমি তো সত্যিকারে মাহিনকে ভালোবাসে না ।ভালোবাসে মাহিনের সম্পত্তিকে„মাহিনের টাকা পয়সাকে।
মিমি – শুনো একটা বুদ্ধি পেয়েছি। যেটাতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না। তুমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করো।
মাহিন- কি বলছো এসব?আমি ঐ মেয়েকে কোন দিন স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পাবরো না।
মিমি- আরে বোকা আগে কথাটা তো শুনবে।তুমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করবে কিন্তু বিয়ের পর ঐ মেয়কে খারাপ অপবাদ দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তাহলে আমাদেরি লাভ হবে। তারপর তুমি আমাকে বিয়ে করবে।
মাহিন- কিন্তু তাতে যদি কোন সমস্যা হয়???
মিমি- আরে কোন সমস্যা হবে না। তুমি ভালো ছেলের মতো রাজি হয়ে যাও । বিয়েতে কোন বাধা দিয়ো না।
মাহিন- তুমিই মনে হয় দুনিয়ার প্রথম girlfriend যে তার boyfriendকে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার জন্য এভাবে বুঝাচ্ছে।
মিমি মনে মনে বলছে. .[মাহিন বাবু তুমি তোমাকে চিনো না।আমি তো তোমাকে না ভালোবাসি তোমার টাকাকে আর টাকা সম্পত্তি ছাড়া তুমি আমার কাছে মূল্যহীন]
মিমি- হাহাহাহা। আরে বেবি আমি তোমাকে হারাতে চাই না। তাই যাতে আমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ ভালো হয় তাই আরকি।
মাহিন – I love you baby.
মিমি- I love you more।
মাহিন- আচ্ছা এখন আমাকে বাড়ি যেতে হবে। আমি এখন উঠছি।হয়তো কয়েকদিন দেখা হবে না। তুমি কিন্তু মন খারাপ করো না baby.
মিমি- ঠিক আছে baby.
মাহিন- Bye
মিমি- ok bye.
এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার বিয়ের আগের দিনের রাতে
আরমান- মাহিন….।
মাহিনের ঘরে এসে ডাক দিতেই………….
চলবে ইনশাল্লাহ।