ফিরে আসা পর্ব-২০

0
590

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra jahan

পর্ব- ২০

ফাতেমা নিচে যেতেই আরেক কেলেংকারি শুরু।এমনিতেই ফাতেমার মনটা খারাপ।কারন মাহিনের ব্যবহার হাতে বার বার আঘাত দেয়।যতই সে হাসি খুশি থাকুক না কেন।

ফাতেমাকে দেখে মেহেঘ বেগম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।

মেহেঘ- ফাতেমা !এসব কি পড়েছো তুমি????

ফাতেমা- কেন কি হয়েছে মা?আমি সবসময় যা পড়ি তাই পড়েছি।

মেহেঘ বেগম রেগে গিয়ে বললেন
সবসময় আর এখন কি এক???আজ তোমাদের বৌভাত কত টাকা খরচ হচ্ছে এই অনুষ্ঠানের জন্য তোমার কোন খেয়াল আছে????
তুমি নতুন বৌ।তুমি আজ এসব কি পড়েছো বুড়ো মহিলাদের মতো???আমার বান্ধবীরা দেখলে তো আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না।
যাও বিয়ের দিন যে জামাকাপড় গয়না দিয়েছি সেগুলো পড়ে এসো।যাও,যাও বলছি।

ফাতেমা – এটা আপনি কি বলছেন মা??আপনি তো জানেন যে আমি পর্দা করি।এখন যদি আমি সেজেগুজে বেগানা লোকদের সামনে যাই তাহলে তো আমার পর্দার খেলাফ হবে।আমায় মাফ করবেন মা ।আমি এটা করতে পারবো না।আমি পর্দা করি আমার আল্লাহর স্তুষ্টির জন্য।এখানে কে কি বলবে সে জন্য তো আমি আমার মহান সত্তার অসন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই না।আমাকে মাফ করবেন মা।আময় মাফ করেন।

মেহেঘ- খুব আজব মেয়ে তো তুমি।বড়দের মুখে মুখে তর্ক করো???নিজেকে তো খুব ধার্মিক মনে করো।তাহলে বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না???

ফাতেমা – না. ..না…মা আপনি ভুল ভাবছেন।আমি আপনার সাথে তর্ক করি নি মা। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি তো শুধু আপনাকে বুঝাচ্ছিলাম পর্দার কথা।

মেহেঘ- হে আল্লাহ।আমাকে কি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে??আমি কি তোমার থেকে কম জানি নাকি???দুদিনের মেয়ে তুমি কি জানো এই দুনিয়া সম্পর্কে।??আমাকে বোঝাতে এসো না।
মনের পর্দাই হলো আসল পর্দা।
নিজে ঠিক থাকলে কোন পুরুষ তোমার দিকে তাকাবে না। তুমি যদি কাউকে পাত্তা দাও তাহলে তো সে তোমার সাথে ইটুস ফিটুস করবেই। তাই মনের পর্দা হলো বড় পর্দা।

ফাতেমা – আমি আপনার থেকে অনেক ছোট মা।আমি আপনার থেকে কখনই বেশি জানতে পারি না।কিন্তু মা ছোটদের কাছ থেকে বড় রা কিছু জানলে তাহলে সে ছোট হয়ে যায় না।
আর আপনি মনের পর্দার কথা বলছেন।মা আজ কাল এ ধারনার কারনেই হাজারো যুবক যুবতি জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা ভাবছে ,তাদের মন তো ফ্রেশ তাদের মনে তো কোন কুচিন্তা নেই তাহলে পর্দা করে কি হবে।শুধু বুড়িদের মতো লাগে। কিন্তু মা ,অবশ্যই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভালোটা বুঝেন এবং তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারি।যদি মনের পর্দাই বড় পর্দা হতো তাহলে আল্লাহ পর্দার বিধান দিতেন না।তাহলে তো আমাদের নবী রাসুলের মা বোনেরা মেয়েরা পর্দাতে থাকতেন না।

তারা পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর থেকেই কঠোর ভাবে পর্দা করতেন। যদি এসব ভিত্তিহীন হতো তাহলে আজ আমার মতো লাখ লাখ মুসলিম নারী পর্দা করতো না। মা পর্দা করা একজন মুসলিম নারীর জন্য কতোটা গুরুত্বপুর্ন আর মূল্যবান সেটার উদাহারন পাই আমরা জান্নাতে নারীদের সরদারনি ফাতেমার মৃত্যুতে। তিনি এতো সুক্ষভাবে পর্দা করতেন যে তার মৃত্যুর পরেও যাতে তার পর্দা লঙ্ঘন না হয় সেজন্য তিঁনি যেদিন মৃত্যু বরন করেছিলেন সেদিন আরো ৪ জন নারী মারা গেছিলেন ।আর তাদের কবর রাতে এমন ভাবে দেওয়া হয়েছিলো যে কোনটা ফাতেমার কবর সেটা যেন কেউ বুঝতে না পারে।কেউ যাতে তার কবর দেখে শারীরিক গঠন বুঝতে না পারে।
যদি পর্দার গুরুত্ব না থাকতো তাহলে আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করতেন না ফাতেমার জন্য।
এবার একবার ভেবে দেখুন মা „আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি।???যেখানে আমরা মনের পর্দাকে বড় করে দেখছি। যা একদম ভিত্তিহীন। কিন্তু অবশ্যই মন থেকে পর্দা করতে হবে।নিজের মনকে কুদৃষ্টি হতে রক্ষা করতে হবে।মা পর্দার মূল কথা হলো নিজের শরীরকে নিজের সুন্দর্যকে ডেকে রাখা বেগানা পুরুষদের সামনে। কিন্তু মা যারা পর্দা করে না তারা নিজেরা তো গুনাহগাড় হচ্ছেই সাথে তার বাবা ভাই স্বামীকেও গুনাহগাড় বানাচ্ছে।যার. ফল হলো জাহান্নাম।পর্দা নিয়ে আরো অনেক কথা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না।

ফাতেমা কাদতে কাদতে বললো

মা যদি কিছু ভুল বলে থাকি আমাকে মাফ করবেন। আমার কোন উদ্দেশ্য ছিলো না আপনাকে কষ্ট দেওয়া বা ছোট করার।আমি শুরু অামার রবের অাদেশ পালন করছি। আমাকে মাফ করবেন।

ফাতেমার কথা শুনে মেহেঘ বেগম হা করে শুধু তাকিয়ে আছেন ফাতেমার দিকে।ফাতেমার এমন চমৎকার যুক্তি সংঘত কথা শুনে মেহেঘ বেগম ফাতেমাকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।

ফাতেমা আর মেহেঘ বেগমের কথা আরালে দাড়িয়ে আরমান সাহেব শুনছিলেন।

আরমান – কিরে মা তুই মাফ চাইছিস কেন????তুই তো ঠিক কথাগুলোই বলেছিস।তুই কোন ভুল করিস নি।আমি তোর কথায় খুব খুশি হয়েছি।আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে রে।যে তোর মতো একটা মেয়ে আপি ছেলের বউ হিসেবে পেয়েছি। মনে হয় আমার ছেলেটা জীবনে কোন মহৎ কাজ করেছে যে তোর মতো একটা সোনার টুকরা বউ পেয়েছে।
আর তোকে বেপর্দা হয়ে যেতে হবে না।তুই যেভাবে খুশি সেভাবেই যাবি।দেখি তোকে কে কি বলে?

আরমান সাহেব মেহেঘ বেগমের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন ।

মেহেঘ- এই শোন আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।

আরমান- তাহলে তুমি আমার মা টাকে কাদালে কেন??
ফাতেমা মা তুই চিন্তা করিস না তোর পরিপূর্ন পর্দার দায়িত্ব আমার ।আমি তোর পর্দার. খেলাফ হতে দিবো না।
এবার একটু হাস!!!হাস না মা।

ফাতেমা আরমান সাহেবের কথা শুনে মুচকি হাসলো।
ফাতেমা – জাযাকাল্লাহু খয়রান বাবা। তুমি অনেক ভালো।

মেহেঘ- হুম হুম শুধু শ্বশুড় মশাই ভালো ।আর আমি তো খারাপ।তাই না??

ফাতেমা – কে বলেছে খারাপ।আপনিও অনেক ভালো মা। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি ।আমি তো শুধু আপনাকে ব্যাপারটি খুলে বলছিলাম।

মেহেঘ- হুম হুম বুঝেছি কতোটা ভালো ভাবো আমাকে।তাইতো শ্বশুড়কে তুমি আর আমাকে আপনি করে বলছো।

মেহেঘ বেগম ফাতেমার কথাগুলো শুনে ফাতেমার প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেলো।মেহেঘ বেগমের ওর কথা শুনে মন গলে গেল।তিনি সত্যিই ফাতেমার প্রতিটা কথা উপলব্ধি করতে পারলো।

ফাতেমা – ও বুঝতে পেরেছি আমার মা টা রাগ করেছে আমি তাকে আপনি করে ডাকছি বলে।ঠিক আছে আর ভুল হবে না।এখন থেকে আমার এ মা টাকেও তুমি করে ডাকবো।ঠিক আছে??

মেহেঘ- হুম ঠিক আছে।হিহিহি

ফাতেমা – আর রাগ নেই তো আমার উপর? ????

মেহেঘ- কি বলছিস রে মা।তোর উপর কেউ রাগ করে থাকতে পারে।যার মন পাশান সেও তো তোর কথা শুনে তোর মায়ায় পড়ে যাবে। আমার আর রাগ নেই রে মা।তুই তো আমার মাহিন আর মহিমার মতই।

ফাতেমা – তাহলে কি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি???

মেহেঘ- আয় মা আমার বুকে আয়।
এই বলে মেহেঘ বেগম ফাতেমাকে জড়িয়ে ধরলো।

মহিমা- দাও দাও সব আদর ছেলের বউকেই দাও ।এখন তো আমি বাদ।যাও তোমাদের সাথে আড়ি।

ফাতেমা- আহা রে আমার বুবু মশাইটা রাগ করেছে গো। আমি কিন্তু তোমার আদরে ভাগ বসাবো না।তোমার টা তোমার আর আমারটা আমার ।এবার ঠিক আছে তো??

মহিমা – হুম এবার ঠিকাছে।হিহিহি

আরমান- এবার তো সবাই চলো।যাদের অনুষ্ঠান তারাই যদি না থাকে তাহলে কি হয়।
আচ্ছা মাহিন কোথায়।??

নুরি- ঐ তো ভাইজান আইতাছে।

মাহিন সিড়ি দিয়ে নামছিলো।সেই মুহুর্তে ফাতেমা মাহিনের দিকে চাইলো। মাহিনকে এতো সুন্দর লাগছে যে ফাতেমা মাহিনের দিকে এক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।
মাহিন দেখতে অনেক সুন্দর সিনামার নায়কদের থেকে কোন দিক দিয়ে কম নয় ।যদি সিনেমাতে অডিশন দিতো তাহলে অনায়েশে সুযোগ পেয়ে যেতো।

ফাতেমা মাহিনের দিকে তাকিয়েই আছে। ফ্যানের বাতাসে মাহিনের চুলগুলো উড়ছে। ফাতেমা তো তার রাগি মশাইয়ের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই আছে।

মাহিন- কি হলো বাবা চলো ।দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।

আরমান- হুম চলো।

সবাই কমিউনিটি সেন্টারের দিকে রওনা দিলো।

মাহিন আর ফাতেমা বসেছে এক গাড়িতে ।আর বাকিরা বসেছে অন্য গাড়িতে।
মাহিন নিজেই গাড়িটা ড্রাইভ করছে।

ফাতেমা – আচ্ছা একটা কথা বলবো?????
…………………

চলবে ইনশাল্লাহ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here