#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- Umma Hurayra Jahan
পর্ব-৩৩
মহিমা- মা………..
মেহেঘ বেগম আর ফাতেমা মহিমার চিৎকার শুনে মহিমার ঘরে দৌড়ে এলো।
মেহেঘ- কি হয়েছে মহিমা??এতো জোরে চিৎকার করে কেন ডাকলি???
ফাতেমা- কি হয়েছে মহিমা ??তুমি এতো জোরে কেন ডাকলে??কি হয়েছে????
মহিমা – মা. ..মা.. ভা..ভাই..ভাইয়াকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।
ফাতেমা – ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।কি বলছো এসব??উনাকে পুলিশে কেন ধরেছে???হে আল্লাহ??কি হলো? ?
মেহেঘ- কি……কি… বলছিস এসব??মাহিনকে পুলিশে কেন ধরেছে??কি করেছে কি আমার মাহিন???
মহিমা – আমি কিছু জানি না মা।ভাইয়ার এক বন্ধু আমাকে মাত্র ফোন দিয়ে বললো।
এই বলে মহিমা কান্না করছে।
ফাতেমা – কান্না করো না মহিমা বোন আমার।এটা কান্না করার সময় না ।বিপদের সময় বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকতে হয়। আল্লাহকে ডাকো বোন আল্লাহকে ডাকো।উনি সব ঠিক করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
হে আল্লাহ কেন এমন হলো।উনি কি এমন অপরাধ করেছেন যে উনাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল??
মেহেঘ- মহিমা তাড়াতাড়ি তোর বাবাকে ফোন দে।জলদি কর।
মহিমা – দাড়াও মা দিচ্ছি।
মহিমা আরমান সাহেবকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা বললো।
ফাতেমা – বাবা কি বলেছে মহিমা।
মহিমা- বাবা এক্ষুনি পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছে ভাবি???এবার কি হবে??আমার তো খুব ভয় করছে ভাবি।ওরা যদি ভাইয়াকে হাজতে ভরে দেয় তাহলে কি হবে??
মেহেঘ- হে আল্লাহ আমাদের সব মান সম্মান গেল।আমাদের বংশের কেউ কোন দিন পুলিশ স্টেশনের ভিতরে পর্যন্ত যায় নি।আর এই ছেলেকে কিনা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।হে আল্লাহ সব মান সম্মান গেল আমাদের।
এই কথাগুলো বলে মেহেঘ বেগম কাদতে লাগলো।
ফাতেমা – মা তুমি একটু ধৈর্য্য ধরো।দয়া করে তুমি নিরাশ হয়ো না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো ।উনি সব ঠিক করে দিবেন।বিপদের সময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হয়।মা প্লিজ তুমি আর কান্না করো না।এর থেকে চলো আমারা সবাই যোহরের নামায আদায় করে দুই রাকাত করে উনার জন্য নফল নামায পড়ি।দেখবে ঠিক আল্লাহ একটা না একটা উপায় বের করে দিবেন।
মহিমা – ভাবি ঠিকি বলেছে মা।চলো আমরা নামায পড়ে ভাইয়ার জন্য দোয়া করি।
এই বলে ফাতেমা ,মহিমা ,আর মেহেঘ বেগম নামায পড়তে গেলেন।সবাই যোহরের নামায পড়ে মাহিনের মুক্তির জন্য দুই রাকাত করে নফল নামায আদায় করলো।
ফাতেমা নামাযের মোনাজাতে মাহিনের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছে।
ফাতেমা – হে আল্লাহ ,হে রহমানুর রহিম,হে গাফুরুর রহিম ,তুমি আমার স্বামীকে রক্ষা করো।তুমি তাকে ক্ষমা করো।সে অবুঝ তুমি তাকে মাফ করো মাবুদ মাফ করো।
ফাতেমা মাহিনের মুক্তির জন্য মহান আল্লার দরবারে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
নামায শেষ করে মহিমা,ফাতেমা ,আর মেহেঘ বেগম আর ড্রয়িং রুমে একসাথে বসলো।
সবার মধ্যে একটা টেনশান কাজ করছে।কেউ এখনো জানেই না মাহিনকে কেন পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।
কিছুক্ষন পর আরমান সাহেব মেহেঘ বেগমের ফোনে ফোন দিল।
আরমান- হ্যালো মেহেঘ।
মেহেঘ- হ্যা বলো কেন ওরা আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে???
আরমান- পুলিশ বলছে তোমার ছেলে নাকি ড্রাগ অ্যাডিক্টেড।ওরা নাকি মাহিনকে নেশার জিনিস সহ ধরেছে।
মেহেঘ- কি????????????কি. …কি. ..কি বলছো এসব??মাহিন ,,,তাও আবার ড্রাগস সহ??impossible…এটা কোন ভাবেই হতে পারে না। যে ছেলে তোমার ভয়ে কোন দিন সিগারেট পর্যন্ত খায় নি সে ছেলে ড্রাগ অ্যাডিক্টড কিভাবে হবে????উনারা কোথাও একটা ভুল করছেন।তুমি যে ভাবেই. হোক তুমি আমার মাহিনকে এনে দাও ।আমি কিছু জানি না ।আমি আমার ছেলেকে শুধু বাসায় দেখতে চাই।
আরমান- আমিও তো উনাদেরকে সেটাই বুঝানোর চেষ্টা করছি।মাহিন তো কোন দিন সিগারেট পর্যন্ত খায় নি।তাহলে ড্রাগস তো অসম্ভব ব্যাপার।দাড়াও আমি আমার বন্ধু হিরা কে ফোন দিচ্ছি ।ও তো ডিআইজি।আমি ওকে জানাচ্ছি ।দেখি কি করা যায়।
মেহেঘ- তুমি যাকে ফোন দেবার দাও কিন্তু আমি আমার ছেলেকে বাসায় দেখতে চাই।
আরমান- তুমি শান্ত হও আর আল্লাহকে ডাকো।আমি ফোন রাখছি এখন।
মেহেঘ- ঠিক আছে।
মহিমা – কি হয়েছে মা??পুলিশ কেন ভাইয়াকে ধরে নিয়ে গেলো???
মেহেঘ- তোর ভাইয়া নাকি ড্রাগ অ্যাডিক্টেট ।ওকে নাকি ড্রাগস সহ ধরেছে।
মহিমা – কিন্তু এটা তো অসম্ভব ব্যাপার।ভাইয়া তো সিগারেট বিড়ি কিছু খায় না তাহলে ড্রাগ অ্যাডিক্টেট হলো কিভাবে??
ফাতেমা – মহিমা সত্যি কি তোমার ভাইয়া সিগারেট বা নেশা জাতীয় কিছু সেবন করে না????
মহিমা – না ভাবি।ভাইয়া এমনিতে বদরাগী হতে পারে।কিন্তু ও খারাপ ছেলে না।ও বাবাকে খুব ভয় পায়।তাই ড্রাগস তো দূরে থাক কোনদিন বিড়ি সিগারেট পর্যন্ত হাত লাগায় নি।
ফাতেমা – তুমি সিউর তো????
মহিমা – ১০০% সিউর ভাবি।ভাইয়া ঐ রকম ছেলেই না।
ফাতেমা – কিন্তু পুলিশ তাহলে উনাকে ড্রাগ অ্যাডিক্টেট কেন বললো?আর ড্রাগস সহ কিভাবে ধরলো। ব্যাপারটা রহস্য জনক।আমাকে সবটা ব্যাপার ভালো করে জানতে হবে।শুরু থেকে সব ঘটনা জানতে হবে।
মহিমা – তুমি জেনে কি করবে??
ফাতেমা – সবটা ঘটনা জানতে পারলে অনেক কিছুই করতে পারবো।উনি যদি সত্যি সত্যি নিরপরাধ হয়ে থাকেন তাহলে উনাকে মুক্ত করে আনতে পারবো।ইনশাআল্লাহ।
মহিমা – তুমি কিভাবে কি করবে??
ফাতেমা – আগে সব ঘটনা জেনে নিই ।তারপর দেখি কি করা যায়।
মেহেঘ- তুই কি করবি রে মা??
ফাতেমা – আমাকে একটু সাহায্য করবে মা??
মেহেঘ- কি বল?
ফাতেমা – মা আমি উনার সাথে একটু দেখা করতে চাই।সব ঘটনা উনার মুখ থেকে শুনতে চাই।কিভাবে কি হয়েছে।তাহল ব্যাপারটা আমি হয়তো সমাধান করতে পারবো।
মেহেঘ- তোকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি বল??
ফাতেমা – মা আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে উনার সাথে কথা বলতে চাই।আমাকে একটু পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দাও।প্লিজ মা প্লিজ।
মেহেঘ- তুই একা কিভাবে যাবি??
ফাতেমা – তুমি বললে আমি মহিমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো।তুমি আগে বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নাও।তুমি বাবাকে বলো যে আমি আর মহিমা পুলিশ স্টেশনে যাবো।প্লিজ মা এটুকু উপকার করো।
মেহেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বলছি তোর বাবাকে।
মেহেঘ বেগম আরমান সাহেবকে ফোন দিলো।
মেহেঘ- হ্যালো শুনছো ফাতেমা নাকি মাহিনের সাথে দেখা করতে পুলিশ স্টেশনে যেতে চায়।
আরমান- ও এখানে এসে কি করবে?
মেহেঘ- মাহিনের সাথে কথা বলে সব ঘটনা যদি সে জানতে পারে তাহলে নাকি এর কোন সমাধান বের করতে পারবে।তাই তোমার অনুমতি চাইছে।
আরমান- ফাতেমা যখন বলছে সমাধান বের করতে পারবে তাহলে নিশ্চই কিছু না কিছু সমাধান বের করতে পারবে ।আচ্ছা ওকে আসতে বলো।ওর উপর আমার আস্থা আছে।তুমি ওকে পাঠিয়ে দাও।
মেহেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে।রাখছি
ফাতেমা তোর শ্বশুড় তোকে অনুমতি দিয়েছে।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ।
মাহিমা বোন তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হও।আমাদেরকে তাড়াতাড়ি সেখানে যেতে হবে।আমিও রেডি হয়ে আসছি।
মহিমা – ঠিক আছে ভাবি।
কিছুক্ষন পর ফাতেমা আর মহিমা রেডি হয়ে এলো।
মেহেঘ- আমি ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি ।ড্রাইভার তোদেরকে পুলিশ স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
ফাতেমা – তুমি বেশি বেশি দোয়া করতে থাকো মা।আমি যেন উনাকে নিরপরাধ প্রমান করতে পারি।কারন আল্লাহ নিরপরাধ কাউকে অন্যায় ভাবে শাস্তি পেতে দেন না।
মেহেঘ- আমি দোয়া করি রে মা।যা সাবধানে যা তোরা।
ফাতেমা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিলো।
ফাতেমা আর মহিমা গাড়িতে উঠলো।কিছুক্ষন পর তারা পুলিশ স্টেশনে পৌছে গেল।
ফাতেমা পুলিশ স্টেশনে পৌছে আরমান সাহেবকে দেখতে পেয়ে সালাম দিলো।আরমান সাহেব সালামের জবাব দিলেন।
ফাতেমা – বাবা উনি কোথায়??উনার সাথে একটু কথা বলার ব্যবস্থা করে দাও বাবা।
আরমান- তুই আয় আমার সাথে।আমি তোর সাথে আমার বন্ধু হিরার সাথে দেখা করিয়ে দেই।ও এ থানার ডিআইজি।ও তোকে মাহিনের সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা করে দিবে।চল।মহিমা তুইও চল।
আরমান সাহেব ফাতেমা আর মহিমাকে নিয়ে উনার বন্ধুর কেবিনে নিয়ে গেলেন।
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম আংকেল।
ফাতেমা হিরা সাহেবকে দেখে সালাম দিলো।
হিরা সাহেব আপদমস্তক ঢাকা ফাতেমাকে দেখে কিছুটা অবাক হলেন।
হিরা সাহেব- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
আরমান উনি কে??মহিমাকে তো চিনতে পেরেছি ।কিন্তু উনাকে তো চিনতে পারছি না।
আরমান – আরে ও আমার আরেকটা মেয়ে ।ও মাহিনের বউ ফাতেমা।
হিরা সাহেব- ও আচ্ছা আচ্ছা মাশাআল্লাহ।কেমন আছো মা??
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আংকেল।আপনি কেমন আছেন?
হিরা সাহেব- আমিও ভালো আছি।
ফাতেমা – আংকেল যদি একটু উনার সাথে দেখা করিয়ে দিতেন তাহলে ভালো হতো।
হিরা সাহেব- আচ্ছা ঠিক আছে
।এই সেন্ট্রি তুমি ওকে মাহিনের কাছে নিয়ে যাও।
সেন্ট্রি- ঠিক আছে স্যার।
চাচি আপনি আসুন আমার সাথে।
হিরা সাহেব- আরে গাধা ও তোমার চাচি না।ও তোমার মেয়ের বয়সি।ও মাহিনের বউ।
সেন্ট্রি- সরি স্যার।
ফাতেমাকে সেন্ট্রি মাহিনের কাছে নিয়ে গেল।
ফাতেমা সেন্ট্রিকে বললো “আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন খুব উপকার হতো।
সেন্ট্রি- ঠিক আছে।
এই বলে সেন্ট্রি বাইরে গেল মাহিনকে যে রুমে রাখা হয়েছে সেখান থেকে।
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম।
মাহিনকে দেখে সালাম দিলো।
মাহিন ফাতেমাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো।কিছুটা লজ্জাও লাগছে মাহিনের কারন. মাহিন এখন জেলে।
মাহিন- কি করতে এসেছো এখানে ??হুম???কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছো??দেখতো এসেছো যে আমি তোমাকে সকালে চড় মেরেছি বলে আল্লাহ আমাকে আজ শাস্তি দিয়েছেন???হুম ???মজা দেখতে এসেছো??
ফাতেমা – আমি এ জন্য আসি নি।আমি তো …
ফাতেমার কথা শেষ না হতেই মাহিন বললো “আমি তো কি হে আমি তো কি???মজা দেখতে এসেছো।দেখতে এসেছো যে তোমাকে চড় মেরেছি বলে আমি কিভাবে শাস্তি পাচ্ছি???
ফাতেমা – দেখুন আপনি একটু শান্ত হোন।আমি সকালের কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি।আমি তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি।
মাহিন- কি কথা???আমি তোমার সাথে কোন কথা বলতে পারবো না।
ফাতেমা – প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন ।আমি আপনাকে এখান থেকে নিরপরাধ প্রমান করতে এসেছি।আমি জানি আপনি ড্রাগ এ্যাডিক্টেড না।আপনার কোন বাজে নেশা নেই।তাই বলছি যদি এই খান থেকে বের হতে চান তাহলে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।যা যা বলবো সব ঠিক ঠাক উত্তর দিবেন।
মাহিন ফাতেমার কথায় রাজি হলো।
ফাতেমা -আচ্ছা বলুন তো আপনি কি আজ সত্যি সত্যি ড্রাসগ সেবন করেছেন??
মাহিন- না ।আমি আজ কেন কোন দিন এগুলো ছুয়ে পর্যন্ত দেখিনি।
ফাতেমা – তাহলে পুলিশ কেন বলছে যে আপনাকে উনারা ড্রাগস সহ ধরেছেন??আপনি কি করছিলেন আর কোথায় ছিলেন??
মাহিন- আজ যখন বাসা থেকে সকালে বেরিয়া এসেছিলাম তখন বাসার সামনে দাড়িয়ে সিহাব মানে আমার বন্ধুকে ফোন দিয়েছিলাম।ও আমাকে একটা নিরব জায়গায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো।আমি কোন দিন ঐ জায়গায় যাই নি।ওখানে গিয়ে দেখি সিহাব সহ আর ৪-৫ জন ছিলো ।যাদেরকে আমি চিনতাম না।ওরা কি সব যেন খাচ্ছিলো।আমি ঐ সব খেয়াল করি নি।যেহেতু সকালে ঘুমাই নি তাই আমি ঐ ঘরটার এককোনে একটা বিছানার মতো ছিলো ওখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।হঠাৎ কতজনের আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙলো।উঠে দেখি আমার বন্ধু সিহাব আর বাকিরা কেউ নেই।কয়েকজন পুলিশ আমার কলার ধরে উঠালো।উঠয়ে গালিগালাজ করতে লাগলো।আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন।তখন ঐ ঘরের মধ্যে কতগুলো ড্রাগসের প্যাকেট পড়ে ছিলো।যারা খাচ্ছিলো তারা হয়তো পুলিশ আসার খবর পেয়ে আমাকে না জাগিয়ে পালিয়ে গেছ।মাঝখানে বিনা অপরাধে ফেসে গেলাম আমি।তারপর পুলিশ আমাকে থানায় ধরে নিয়ে এলো।তারপর কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না।আমি এখানে এসে এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে বাসায় জানাতে বলি।তারপর থেকেই আমি এখানে বন্দি ।
ফাতেমা – হুম বুঝতে পারলাম।আপনার কোন দোষ নেই ।কিন্তু আপনি যে দোষি নন সেটা তো প্রমান করতে হবে মশাই।
মাহিন- কিন্তু কিভাবে করবো।আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।
ফাতেমা – আপনি চিন্তা করবেন না।আমি দেখছি কি করা যায়।আপনি আল্লাহকে ডাকতে থাকুন।আমি এখন আসছি।আমার যা জানার ছিলো তা হয়ে গেছে।আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে এখান থেকে তাড়াতাড়ি বের করে নিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
আমি আসছি।আস সালামু আলাইকুম।
মাহিন মনে মনে সালামেন জবাব দিলো।আর ফাতেমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আর সকালের ঘটনা ভেবে মনে মনে কিছুটা অনুতপ্ত হলো।
ফাতেমা হিরা সাহেবের কাছে গেল।ঐ খানে মহিমা আর আরমান সাহেবও ছিলো।
ফাতেমা মাহিন তাকে যা যা বললো সব হিরা সাহেবকে বললো।
ফাতেমা – আংকেল আমার স্বামী সম্পুর্ন নিরপরাধ।আপনাকে তো আমি মাত্র সব বললাম।পুলিশ শুধু মাত্র ভূল বুঝে উনাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
It‘s just a missunderstanding.
উনি সম্পুর্ন নিরপরাধ।
হিরা সাহেব- আমি জানি মা ।মাহিন ঐ রকম ছেলেই না।কিন্তু কি করবো বলো?আমি যে আইনের হাতে বাধা।আইন তো প্রমান চায়।আমি মুখে বললেই তো আর আইন সেটা মেনে নিবে না।তাই প্রমান জোগাড় করতে হবে আজকের ভিতরেই।না হলে মাহিনের নামে মামলা হয়ে যেতে পারে।
ফাতেমা – আংকেল আপনি আমাকে কিছুক্ষন সময় দিন।দেখি কিভাবে প্রমান করা যায়।
হিরা সাহেব- ঠিক আছে।কিন্তু যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
ফাতেমা কেবিন থেকে বাইরে এলো আরমান সাহেব আর মহিমার সাথে।
আরমান- এবার কি হবে রে মা?
যদি মামলা হয়ে যায় ।তাহলে তো মান সম্মান থাকবে না।
মহিমা- বাবা ঠিকি বলেছে ভাবি।
ফাতেমা – দাড়াও দেখি বুদ্ধি বের করে কি করা যায়।
বাবা তুমি যোহরের নামায পড়েছো???
আরমান- না রে মা।
চিন্তার কারনে আর সময় পাই নি।
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে।এখনো নামাযের ওয়াক্ত আছে।যাও ঐ যে সামনে মসজিদ আছে ওখানে গিয়ে নামায পড়ে আসো।আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।আল্লাহ হয়তো একটা না একটা উপায় ঠিকি বের করে দিবেন।
আরমান- ঠিক আছে।তোরা ভিতরে মহিলাদের বসার জায়গা আছে ওখানে গিয়ে বস। আমি নামায পড়ে আসি।
ফাতেমা – ঠিক আছে।
ফাতেমা আর মহিমা ভিতরে গিয়ে বসলো।
ফাতেমা মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
ফাতেমা – হে মাবুদ একটা উপায় বলে দাও মাবুদ একটা উপায় বলে দাও।
কিছুক্ষন পর ফাতেমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
ফাতেমা – আলহামদুলিল্লাহ একটা উপায় পেয়েছি।
মহিমা – কি উপায় ভাবি।
ফাতেমা- ব্লাড চেষ্ট।
মহিমা – ব্লাড চেষ্ট??????
ফাতেমা – হুম ব্লাড টেস্ট।
ফাতেমা যেহেতু বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী তাই তার মাথায় ব্লাড টেষ্টের চিন্তাটা এলো।
মাহিমা – ব্লাড টেষ্ট করে কি হবে???
ফাতেমা – আরে বোকা ব্লাড টেস্ট করলেই তো বুঝা যাবে যে শরীরে ড্রাগস আছে কিনা।উনি তো নিরপরাধ।কোন দিন ড্রাগস নেন নি ।তাই ব্লাড টেস্ট করলে উনার রক্তে ড্রাগসের নমুনা নেগেটিভ আসবে ।আর এতেই প্রমান হবে যে উনি ড্রাগ এ্যাডিক্টেড না।
মহিমা – You are genious. Just genious.এতো বুদ্ধি কোথা থেকে আসে তোমার???আমি তো মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই তোমার বুদ্ধি দেখে।এতো কম বয়সে এতো জিনিয়াস তুমি।Unbeliveable..
ফাতেমা – হয়েছে এতো প্রশংসা করতে হবে না।মহা নবী সা: কোন ব্যক্তির সামনে তার প্রশংসা করতে নিষেধ করেছেন।এতে ঐ ব্যক্তির অহংকার বেড়ে যেতে পারে।তাই কারো সামনে তার নিজের প্রশংসা না করাই উত্তম।
আর মন থেকে আল্লাহকে ডাকলে উনি সব সমস্যা সমাধান করে দেন।তাই বিপদের সময় ধৈর্য ধরে আল্লাহে ডাকতে হবে।
মহিমা – ঠিক আছে জিনিয়াস ভাবি।আর করবো না তোমার প্রশংসা ।
এই মুহুর্তে আরমান সাহেব নামায শেষ করে এলেন।
মহিমা – বাবা ভালো খবর আছে।
আরমান- কি??
মহিমা – ভাবি উপায় বের করে ফেলেছে।
আরমান- সত্যি??
ফাতেমা – চলো বাবা।আমরা হিরা আংকেলের কাছে যাই।উনাকে গিয়ে উপায়টি বলি।
আরমান- ঠিক আছে।
ফাতেমা গিয়ে হিরা সাহেবকে মাহিনের ব্লাড টেস্টের কথা বললো।
হিরা সাহেব- বাহ্ দারুন আইডিয়া তো।এটা তো আমার মাথায় আসে নি।আরমান সহেব তুই ভাগ্য করে এমন একটা বৌমা পেয়েছিস রে।
আচ্ছা আরমান তোরা এখন বাসায় যেতে পারিস।আমি মাহিনের ব্লাড টেস্ট করিয়ে ওটা নেগেটিভ আসলে ওকে বাসায় পাঠিয়ে দিবো।তোরা চিন্তা করিস না।আর ভাবিকেও চিন্তা করতে না করিস।
অারমান- আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধু।আমরা চলে যাচ্ছি।তোকে আজ অনেক ডিস্টার্ব করলাম।
হিরাসাহেব- আরে না না।বন্ধু বন্ধুকে বিপদে সাহায্য করবে না তো কে করবে???
আরমান সাহেব ,মহিমা ,ফাতেমা হিরা সাহেবের সাথে সালাম বিনিময় করে বাসায় চলে আসলেন।
বাসায় এতে মহিমা মেহেঘ বেগমকে সব ঘটনা খুলে বললো।
মেহেঘ বেগম প্রাণ ভরে ফাতেমাকে দোয়া করলো।
ফাতেমা নিজের ঘরে গিয়ে আরো দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।………
সন্ধ্যাবেলা মাহিনের রিপোর্ট আসলো হিরা সাহেবের হাতে
হিরা সাহেব আরমান সাহেবকে ফোন দিলো……
হিরা সাহেব- হ্যালো আরমান???
চলবে ইনশাআল্লাহ….