ফিরে আসা পর্ব-৩৬

0
543

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma Hurayra Jahan

পর্ব-৩৬

ফাতেমা যখন কুরআন পাঠ করে শেষ করলো মাহিন তখন ঘরে এলো।
ফাতেমা – আস সালামু আলাইকুম।এতোক্ষন কোথায় ছিলেন?
মাহিন কোন কথাই বললো না।
ফাতেমা – আচ্ছা আমার সাথে কথা না বলুন ঠিক আছে কিন্তু সালামের জবাব টা তো দিন মশাই।
মহিন রাগি গলায় বললো “দিয়েছি জবাব মনে মনে”
ফাতেমা – আচ্ছা ঠিক আছে।
আপনাকে একটা খুশির সংবাদ দেওয়ার আছে।
মাহিন আনন্দিত হয়ে বললো।কী কী খুশির সংবাদ??তুমি কি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছো।সরে যাবে কি তুমি আমার জীবন থেকে??
ফাতেমা- কী?????এটা আপনি কি বললেন??আ..আ..আমি আপনাকে যদি ডিভোর্স দিই তাহলে এটা আপনার জন্য খুশির সংবাদ???আমি আপনার জীবনের জন্য এতোটাই মূল্যহীন??
মাহিন- আমার জীবনে শুধু একজনেরই মূল্য আছে।আর তাকেই আমি আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি।আর সেটা নিশ্চই তুমি নও ।
ফাতেমা- কে সে? ???
মাহিন- সময় হলে ঠিকি জানতে পারবে।
আর হে কী যেন বলছিলে??কিসের খুশির সংবাদ??তা শুনি তোমার সেই খুশির সংবাদটা কি???
ফাতেমা – আপনি এমন ভাবে কেন আমার সাথে কথা বলেন।আপনার মনে কি আমার জন্য এক বিন্দু পরিমানও ভালোবাসা বা মায়া নেই???
মাহিন- ডায়লগবাজি রেখে কি বলবে বলছিলে বলো।
ফাতেমা – আপনার চাচাতো ভাই ইমনের বিয়ে ঠিক হয়েছে।
মাহিন- কী???হাহাহাহহাহাহা
ফাতেমা – কি হলো আপনি হাসছেন কেন???এটা কি কোন হাসির কথা বলেছি আমি???
মাহিন- হাসবো না তো কি করবো???ঐ জোকারটাকে কে পছন্দ করলো???হাহাহা
ফাতেমা – জোকার বলছেন কেন???
মাহিন- ও তো একটা জোকার।হাহাহা।না হলে এই যুগে এসে কেউ এতো কম বয়সে দাড়ি রাখে??আবার বুড়া চাচাদের মতো পাঞ্জাবি পাজামা পড়ে।তাও আবার টাকনুর উপরে।হাহাহা।পুরোপুরি একটা জোকারের মতো লাগে ওকে।বয়সে আমার থেকে ছোট কিন্তু ওকেই আমার থেকে বড় মনে হয়।হাহাহা
এসব কথা বলে মাহিন হেসে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।
ফাতেমা – বাহ্ বাহ্।তাহলে এই ধারনা আপনার।মেয়েরা যারা পর্দা করে তারা চাচির মতো আর ছেলেরা যারা সুন্নত লেবাসী তারা চাচার মতো??বাহ্ বাহ্।তারিফ করতে হয় আপনার ধারনার।
মাহিন- এই মেয়ে তুমি কি আমাকে নিয়ে মজা করছো??
ফাতেমা – আমি মজা কেন করবো?।আমি তো আপনার তারিফ করছি দেখতে পাচ্ছেন না?
মাহিন- আমার সাথে মশকড়া করবে না বলে দিলাম।
ফাতেমা – আপনার ধারনা ভুল মশাই।যে মেয়ে পর্দা করে যে চাচি না আর যে ছেলে সুন্নত অনুযায়ি জীবন যাপন করে সে আপনার বা আপনার মতো মন মানসিকতার মতো মানুষদের চাচা না।মেয়েরা পর্দা করে কারন এটা ফরজ বিধান।আর ছেলেরা দাড়ি রাখে পাঞ্জাবি, পাজামা টাকনুর উপরে পড়ে কারন এটা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর সুন্নত।ফরজ আর সুন্নত মানে বুঝেন তো?
মাহিন- এগুলো কি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে নাকি??
ফাতেমা – না না আমি আপনাকে শেখাবো কেন।আপনি তো নিজেই সব কিছু জানেন।আর এটাও জেনে রাখুন যে উম্মত তার নবীর আদর্শ অনুযায়ি চলে না, হাশরের দিন সেই উম্মত নবীর শাফায়া পাবে না।মানে নবী করিম সা: তার জন্য সুপারিশ করবে না।
তাহলে যারা বুদ্ধিমান তারা কি চাইবে???এই দুনিয়ার যশ ক্ষ্যাতি নাকি হাশরের দিন নবী করিম সা: এর সুপারিশ???
নিশ্চই যারা বুদ্ধিমান তারা অবশ্যই নবীর সুপারিশ চাইবে।
তাহলে যে যুবক তার যৌবন কালে আল্লাহর ইবাদত করে নবীর সুন্নত অনুযায়ি চলে সে হয়তো আপনার নজর থেকে চাচা হতে পারে কিন্তু হাশরের দিন সেই হবে আসল নায়ক।
যারা এটার মর্ম বুঝে তারা এমন পর্দশীল নারী আর সুন্নত লেবাসী পুরুষদের দুনিয়াতেও সম্মান দেয়।
কি মশাই মাথায় ঢুকলো কিছু????
নাকি আরো কিছু বলতে হবে।
মাহিন- ওরে আমার জ্ঞানের ভান্ডার এতো জ্ঞান কিভাবে দেন আপনি???তা আপনার সেই হাশরের দিনের নায়কটাকে কে পছন্দ করলো??
ফাতেমা – ঐ যে বললাম না, যে এটার মর্ম বুঝে সে পছন্দ করেছে।যে মেয়ে পছন্দ করেছে সেও নিজেকে হাশরের দিনের নায়কা হিসেবে প্রস্তুত করছে।আর সেই মেয়েটি হলো আমারি কলিজা বান্ধবি হেন্সি।বুঝলেন মশাই???
মাহিন – ও আচ্ছা সেও আপনার পথেরই পথযাত্রী।আপনার সই।
হাহাহা
ফাতেমা – হুম।তাতে কোন সমস্যা আপনার??
মাহিন- আমার আবার কিসের সমস্যা।
ফাতেমা – আচ্ছা একটা কথা বলবো??আপনি কি সত্যিই ইসলাম পছন্দ করেন না??নাকি আমার সাথে জেদ ধরে এরকম করেন।আপনার পরিবারের বাকি সদস্য রা তো এমন না ।তাহলে আপনি এমন কেন??কেন নামায কালাম পড়েন না??আপনি কি ভুলে গেছেন আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছে???কেন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ এই বিশ্ব জগৎ??আপনি জানেন না??আর এই সব প্রশ্নের জবাব কিন্তু একটাই।আর সেটা হলো আল্লাহর ইবাদত করা।আল্লাহর ইবাদত করা একমাত্র তাঁর দাসত্ব শিকার করাই হলো আমাদের কাজ।যা না করলে পরকালে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।আপনার কি একবারো মৃত্যুর কথা চিন্তা হয় না।
মাহিন- না হয় না।আমার শুধু এখন একটাই চিন্তা তুমি কিভাবে আমার জীবন থেকে সরে যাবে।
ফাতেমা – আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দান করুন।এই জীবনের আমলের শূন্য ঝুড়ি নিয়ে আপনি কিভাবে আল্লাহর সামনে দাড়াবেন?কি জবাব দিবেন আল্লাহকে??আল্লাহ যখন আপনাকে বলবে “““আমি তোমাকে এতো সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও কেন আমার ইবাদত করো নি”””” তখন কি জবাব দিবেন??আপনি কি জবাবটা প্রস্তুত করেছেন?যখন মৃত্যুর পর আপনাকে অন্ধকার কবরে রাখা হবে তখন মুনকার, নাকির এই দুই ফেরেশা এসে যখন প্রশ্ন করবে “তোমার রব কে??তোমার দ্বীন কি??তোমার রাসূল কে??এই তিনটি প্রশ্নের জবাব কি তৈরী রেখছেন??
মাহিন- এগুলো তো সহজ প্রশ্ন।এগুলো কে না পারবে???
ফাতেমা – ঠিক বলেছেন এগুলো খুবি সহজ প্রশ্ন।ইমানদারদের জন্য এই প্রশ্ন গুলো সহজ মনে হবে।কিন্তু মশাই…
মাহিন- কিন্তু কি?
ফাতেমা – কিন্তু যারা ইমানদার না, যাদের আমলের ঝুড়ি ফাকা সেই সময় তাদের মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হবে না।আমতা আমতা করতে থাকবে।আর প্রশ্নের জবাব ঠিক মতো দিতে না পারলে শুরু হবে কবরের আযাব।যা অত্যন্ত ভয়াবহ।এখনো সময় আছে ফিরে আসুন দ্বীনের পথে।
মাহিন- এই মেয়ে এই তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো??ডিভোর্সের কথা বলেছি বলে কি তুমি আমাকে এসব কথা বলে ভুলাতে চাচ্ছো??কিন্তু না সেটা কখনো হবে না।আমি তো তোমাকে ডিভোর্স দিয়েই ছাড়বো।আর সেটা কেউ আটকাতে পারবে না।
এই বলে মাহিন জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ফাতেমা – হে আল্লাহ উনাকে তুমি বুঝার তৌফিক দান করো।আর উনি ঐ সময় কি জানি একটা কথা বললো ??উনি কাকে জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে??সেই মানুষটা কি মা? ?নাকি বাবা??নাকি আবার অন্য কেউ??হে আল্লাহ কিছুই তো বুঝতে পারছি না।উনি কোন হারাম সম্পর্কে জড়িত নয় তো??হে আল্লাহ তুমি আমাকে সাহায্য করো মাবুদ সাহায্য করো।
পরের দিন আরমান সাহেব ফাতেমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে কলেজে ভর্তি করে আসলেন।
এভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছে।কিন্তু মাহিন সেই একি রয়ে গেলো ।ফাতেমার সাথে একবারের জন্যও ভালো ব্যবহার করে না।তবুও ফাতেমা সব সহ্য করে যাচ্ছে একমাত্র আল্লাহর দিকে চেয়ে।
এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেলো।আজ শুক্রবার।আজ ইমন আর ফাতেমার প্রিয় বান্ধবী হেন্সির বিয়ে।বিয়েটা যেহেতু সুন্নত মোতাবেক হবে তাই রতন সাহেব ছোট খাটো আয়োজন করেছেন।রতন সাহেব উনার নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছিলেন।তাই শুধু উনারাই এসেছেন।
বিয়ের দিন যেখানে অন্য মেয়েরা শাড়ি ,দামি গয়না পড়ে সাজে সেখানে হেন্সি তার বিয়েতে পড়েছে সম্পুর্ন সুন্নতি সাজ।হেন্সি আজ বোরকা,, খিমার ,হাতমুজা পা মুজা পড়েছে।এতেই হেন্সি মহা মহা মহা খুশি।কারন এটাই তো সে চাইতো আল্লাহর কাছে।আল্লাহ একে একে তার সব আশা পূরন করে দিচ্ছেন।
একজন. পর্দাশীল আর পরহেজগার মেয়ের এই ইচ্ছাটাই থাকে যে, সে তার বিয়েতে বোরকা পড়ে বিয়ে করবে।
ওদিকে ইমন পড়েছে সুন্নতি পোষাক।ইমনকেও লাগছে রাজপুত্রের মতো।
শুক্রবারে জুমার নামাযের পর হেন্সি আর ইমনের বিয়েটা হয় মসজিদে খুরমা ,খেজুর বিতরন করে।ইমন হেন্সির সব দেনমোহরও দিয়ে দেয়।কারন দেনমোহর ছাড়া কোন স্ত্রী তার স্বামীর জন্য বৈধ নয়।তাই আগেই ইমন দেনমোহর দিয়ে দিলো।
আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো ভালো ভাবেই।
এবার হিরন সাহেব হেন্সিকে দেখতে চাইলেন।রতন সাহেব হিরন সাহেবকে হেন্সিকে দেখাতে নিয়ে আসলেন।
হিরন সাহেব হেন্সির মতো বৌমা পেয়ে খুব খুশি।উনারও হেন্সিকে খুব পছন্দ হলো।
এবার বিদায়ের পালা এসে গেছে।হেন্সিকেও তার বাবা মা কে ছেড়ে এখন চলে যেতে হবে অন্যের বাড়িতে।
রাবেয়া বেগম আর রতন সাহেবর একমাত্র মেয়ে হেন্সি।তাই মেয়েকে বিদায় দিতে উনাদের খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের কলিজার টুকরাকে বিদায় দিতে । তবুও দিতে তো হবে।
রতন সাহেব- বাবা ইমন ,আমার মেয়েটা সদ্য হেদায়েত প্রাপ্ত।ওকে তুমি দ্বীনের পথে চলতে সাহয্য করো বাবা।ও যদি কোন ভুল করে তাহলে তুমি ওকে ভুলটা শুধরে দিয়ো বাবা।তুমি ওকে একটু আগলে রেখো।আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো।
ইমন – আপনি চিন্তা করবেন না বাবা।আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।আপনি শুধু দোয়া করবেন।
রতন সাহেব- অবশ্যই দোয়া করি বাবা।আর মা হেন্সি তুই সবার খেয়াল রাখিস।তোর বড়রা যা বলবে তাই করবি।যদি কোন অন্যায় করিস আর বড়রা তোকে শাসন করে তাহলে ভাববি তোর ভালোর জন্যই করছে।
কেদে কেদে রতন সাহেব কথা গুলো বললো।
হেন্সিও কাদছে।
হেন্সি- বাবা মা তোমরা তোমাদের খেয়াল রেখো।বাবা তুমি বেশি চিন্তা করবে না কিন্তু বলে রাখলাম।বেশি চিন্তা করলেই তোমার রোগটা বেড়ে যাবে।
হিরন সাহেব- তাহলে বেয়াই সাহেব এবার আমাদেরকে বিদায় দিন।না হলে দেড়ি হয়ে যাবে।
রতন সাহেব- জ্বী।
হিরন সাহেব- তাহলে আমরা আসি।আস সালামু আলাইকুম।
রতন সাহেব সালামের জবাব দিয়ে মেয়েকে বিদায় দিলেন।
ইমন আর হেন্সি এক গাড়িতে পাশাপাশি বসলো।
গাড়ি চলতে শুরু করেছে।
হেন্সি ছোটদের মতো কাদছে।
ইমন- এই যে নতুন বউ এভাবে ছোটদের মতো কাদছো কেন??
হেন্সি কান্না করে চোখ লাল করে ফেলেছে।
হেন্সি- কাদবো না তো কি করবো??আমি যে বাবা মা কে ছেড়ে চলে এসেছি।অ্যা অ্যা অ্যা।
চোখের পানি আর নাকের পানি এক করে ফেলেছে হেন্সি।
ইমন- আমার বউটা যদি এভাবে কাদে আমার কি ভালো লাগবে বলো তো??
হেন্সি- আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা মার জন্য।অ্যা অ্যা অ্যা
ইমন- ইশ রে নাকের পানি আর চোখের পানি তো মনে হচ্ছে এক হয়ে গেছে।নাও আমার রুমালটা নাও চোখ আর নাক পরিষ্কার করো।
এই বলে পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে দিলো।
হেন্সি- এটা দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে তো রুমালটা নষ্ট হয়ে যাবে।
ইমন – তাতে কি হয়েছে।এই রুমালটা তো আমার বউটার থেকে বেশি প্রয়োজনীয় না।আর এখন থেকে তোমার সবকিছুর উপর যেমন আমার অধিকার ঠিক তেমনি আমার জিনিসের উপরেও তোমার সমান অধিকার।তাই যা আমার তা তোমার।তাই মনে করো যে,এই রুমালটা তোমার।
হেন্সি ইমনের কথায় অবাক হয়ে গেলো।
হেন্সি মনে মনে বললো“লোকটা এতো ভালো কি করে??নাকি এমনিতেই এসব বলছে।একটু পরিক্ষা করে দেখি তো।
হেন্সি- আচ্ছা একটা কথা বলবো??
ইমন – একটা কেন হাজারটা বলো।
হেন্সি- আমার না খুব শখ ছিলো ।আমার যখন বিয়ে হবে আর যখন আমি কাদবো তখন আমি আমার হুজুর বরের পাঞ্জাবি দিয়ে নাক মুছবো।হিহিহি
ইমন হেন্সির দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি মুচকি হাসি দিলো।
ইমন – ও আচ্ছা ঠিক আছে।নাও আমার পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে নাক মুছো।
এই বলে ইমন পাঞ্জাবির হাতা হেন্সির দিকে বাড়িয়ে দিলো।
হেন্সি- হিহিহিহি।না না একি করছেন??আমি তো এমনিতেই বললাম।এটা আমার শখ ছিলো।তাই বলে আমি আপনার পাঞ্জাবি নষ্ট করে দিবো??
ইমন- আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো তোমার সব শখ আল্লাদ পুরন করার জন্য।
হেন্সি মনে মনে বলছে“ সত্যি মানুষটা অন্য রকম। অনেক ভালো মনের একটা মানুষ।আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।আজ ফাতেমার উছিলায় এমন কাউকে আমি জীবন সাথি হিসেবে পেলাম।আল্লাহ তুমিও ফাতেমাকে সব সময় সুখি রেখো।মাহিন ভাই যেন ওকে অনেক ভালোবাসে।
ইমন- কি ভাবছো??
হেন্সি- না তেমন কিছু না।
ইমন- এবার মন ভালো লাগছে??
হেন্সি- হুম আগের থেকে ভালো লাগছে।
কিছুক্ষন পর ইমনরা ঢাকায় পৌছে গেল।
ওদিকে জান্নাত বেগম সবকিছু রেডি করে ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
মাগরিবের আযান পড়ে গেলো বাসায় পৌছাতে পৌছাতে।
তাই ইমন আর হিরন সাহেব হেন্সিকে বাসায় রেখে গিয়ে নামাযের জন্য মসজিদে চলে গেলো।
জান্নাত বেগম হেন্সিকে ইমনের রুমে নিয়ে গেলো।ইমনের বড় বোন হিয়াও শ্বশুড় বাড়ি থেকে এসেছে ইমনের বিয়ের কারনে।
জান্নাত- মা হেন্সি আজ থেকে এটা তোমার ঘর।তুমি আজ থেকে এখানেই থাকবে।আর এখন তো মাগরিবের আযান পড়ে গেছে তাই বোরকাটা পাল্টে ভালো জামাকাপড় পড়ে ওযু করে নামাযটা পড়ে নাও।এখানে জায়নামায আছে আর তোমার প্রয়োজনিয় সব জিনিস পত্র রাখা আছে এই ব্যাগে।তোমার যা যা দরকার তুমি নিয়ে নাও।আমি নামাযটা পড়ে আসি।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।হিয়া হয়তো নামায পড়ছে।ও নামায শেষ করে তোমার কাছে আসবে।
হেন্সি- ঠিক আছে মা।আমি চেঞ্জ করে নামায পড়ে নিচ্ছি ।আপনিও নামায পড়ে আসুন।
জান্নাত বেগম নামায পড়তে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
হেন্সি ২ মিনিট ইমনের ঘরটাই চোখ বুলিয়ে নিলো।এতো সুন্দর গোছানো ঘর।দেখে মনেই হয় না এটা কোন ছেলের ঘর।কত সুন্দর গোছানো। বিছানার পাশে ছোট একটি টেবিল ।টেবিলের উপর ফুলদানি।ফুলদানি কত সুন্দর সুন্দর ফুল রাখা।এক কোনায় একটা বুক শেল্ফ।সেখানে রাখা আছে অনেক ইসলামিক বই।একটা দেয়ালে নানা রকম ফুল আর্ট করা।যেটাকে ওয়াল আর্ট বলা হয়।বিছার একটু সামনে ড্রেসিং টেবিল ।পাশে একটা আলমারি।একটু সামনে একটা স্টাডি টেবিল।এককথায় অনেক সুন্দর একটা ঘর।হেন্সির খুব পছন্দ হয়েছে।
হেন্সি ঘরটা দেখা শেষ করে ওযু করে নামায আদার করে নিলো।
নামায পড়ে ঘরে বিছানায় বসে আছে হেন্সি।কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে হেন্সির।কারন আজ থেকে সে কারো বউ।কারো বৌমা।
কারোর ভাবি।কেমন যেন এক অজানা কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলো হেন্সি।
হঠাৎ হিয়ার সালামে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলো হেন্সি।
হিয়া- আস সালামু আলাইকুম।ভিতরে আসবো?
হেন্সি- ওয়া আলাইকুমুস সালাম আপু।আরে ভিতরে এসো।
হেন্সি বিছানা থেকে নেমে আসলো।
হিয়া- বোন আমার তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো এখানে??
হেন্সি- না না আপু কোন অসুবিধা হচ্ছে না।তোমার নামায শেষ?
হিয়া – হুম।তুমি পড়েছো??
হেন্সি- জ্বী আপু।আপু একটা কথা বলি??
হিয়া- হুম বলো।
হেন্সি- উনি কি ছোট বেলা থেকেই এমন?
হিয়া – কে ইমন?
হেন্সি- হুম।
হিয়া – হুম আমার ভাইটা ছোট বেলা থেকেই অনেক পরহেজগার ।তুমি জানো ও আজ পর্যন্ত ইচ্ছা করে কোন পর নারীর দিকে চেয়ে দেখেনি।আমার ভাইটা খুব ভালো।তুমি খুব ভাগ্যবতি আমার ভাইটার মতো একটা স্বামী পেয়েছো।
হেন্সি – মুচকি হাসলো।আচ্ছা আপু উনার কি কি পছন্দ অপছন্দ আমাকে একটু বলবে??
হিয়া – হুম অবশ্যই।
হিয়া হেন্সিকে সব বললো যে ,ইমনের কি কি পছন্দ আর কি আপছন্দ।
হেন্সি- জাযাকিল্লাহু খইরান আপু।
হিয়া- ওয়া ইয়্যাকি বোন ।
হিয়া আর হেন্সি আরো কিছুক্ষন কথা বললো।
হিয়া – আচ্ছা আমি এখন যাই বোন।ইমন মনে হয় একেবারে এশার নামায পড়ে বাসায় আসবে।আজ তো শুক্রবার তাই মাগরিবের নামাযের পর মনে হয় ও এতিমখানায় গেছে।প্রতি শুক্রবারে যায় ও এতিম খানায়।এতিম বাচ্চাদের জন্য ও খাবার নিয়ে যায়।তুমি কিছু মনে করো না।তাই হয়তো দেরি হচ্ছে আসতে।
হেন্সি- না না আপু কিছু মনে করি নি।উনি তো নেক কাজ করতে গেছেন।এতে তো আমি আরো অনেক বেশি খুশি।
হিয়া- তাহলে আমি আমার রুমে যাচ্ছি।তোমার কিছু দরকার হলে আমাকে ডাক দিয়ো।
হেন্সি- ঠিক আছে আপু।
হিয়া নিজের ঘরে চলে গেল।
হেন্সি বুক শেল্ফ থেকে একটা হাদিসি বই নামিয়ে পড়তে লাগলো।আরো অনেক সুন্দর সুন্দর বই আছে ওখানে।
বই পড়তে পড়তে এশার আযান হয়ে গেলো।
হেন্সি ওযু করে নামায আদায় করে নিলো।
রাত প্রায় ১০ বেজে গেছে।এই সময় ইমন বাসায় এলো।হেন্সি বিছানার এক কোনায় বসে ঘুমিয়ে ছিলো।হঠাৎ দরজার আওয়াজন শুনে ঘুম ভেঙে গেল।
ইমন খাবারের প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকে সালাম দিলো।
ইমন – আস সালামু আলাইকুম।
হেন্সি- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
ইমন – So. Sorry.তোমাকে একা রেখে আমি চলে গিয়েছিলাম।কিন্তু একটা দরকারি কাজ ছিলো।দয়া করে মাফ করে দাও।
হেন্সি- আরে আরে মাফ চাইছেন কেন??আপনি তো কোন অন্যায় করেন নি।আমি জানি আপনি কোথায় গেছিলেন।আপনি এতিম খানার বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে গেছিলেন।
ইমন খাবারের প্লেটটা টেবিলে রাখলো।
ইমন- তুমি জানলে কি করে?
হেন্সি- হিয়া আপু বলেছে।আরো অনেক কিছুই বলেছে।
ইমন – তুমি রাগ করো নি তো?
হেন্সি- এতে রাগ করার কি আছে??আপনি তো নেক কাজ করতে গেছিলেন।আর এতেই আমি খুশি।
ইমন- জাযাকিল্লাহু খইরান বউ।
হেন্সি- ওয়া ইয়্যাকি জামাই।হিহিহি
ইমন- আচ্ছা আগে তুমি বিছানায় বসো ।আমি তোমার মাথায় হাত রেখে একটা দোয়া পড়বো।তারপর দুজনে মিলে একসাথে দু রাকাত নফল নামায পড়বো।
হেন্সি- ঠিক আছে।
হেন্সি বিছানায় বসলো।পাশে ইমনও বসলো।
ইমন হেন্সির মাথায় হাত রেখে দোয়াটা পড়ছে“আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খইরাহা ওয়া খইরা মা জাবালতাহা আলাইহি,ওয়া আঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি””
এবার চলো ওযু করে দুজনে দুরাকাত নফল নামায পড়ে নিই।
হেন্সি- ঠিক আছে।
ইমন আর হেন্সি দুজনেই ওযু করে পাশাপাশি জায়নামাযে দাড়িয়ে নামায আদায় করে নিলো।
নামায শেষ ইমন বললো“তোমার তো সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি আমিও কিছু খাইনি ।চলো খাবার খেয়ে নিই।তারপর দুজনে গল্প করবো।
হেন্সি- ঠিক আছে ।কিন্তু প্লেট তো একটা।দুজনে কি করে খাবো।
ইমন- আরে পাগলি স্বামী স্ত্রী এক প্লেটে খাবার খেলে ভালোবাসা বাড়ে।আর এটা সুন্নত।
হেন্সি- আমি জানতাম না তো তাই।আমি না অনেক কিছুই জানি না।আপনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন??
ইমন- হুম অবশই আস্তে আস্তে সব শিখিয়ে দিবো।
এবার খাবার খাওয়া যাক।বড্ড খিদে পেয়েছে।
দুজনে এক সাথে খাবার খেয়ে নিলো।
ইমন চলো বেলকনিতে যাই।
ইমন আর হেন্সি বেলকনিতে গিয়ে একসাথে বসলো।
ইমন- আচ্ছা তোমার হেন্সি নামটা না কেমন জানি লাগে।আমার এই নামটা বেশি ভালো লাগে না।তোমার পুরো নাম কি বলো তো।
হেন্সি- নুসরাত জাহান হেন্সি।
ইমন- মাশাআল্লাহ।তাহলে আমি তোমাকে নুসরাত এর শর্টফর্ম করে নুসু বলে ডাকবো??
হেন্সি- বাহ্ নুসু নামটা তো অনেক কিউট।ঠিক আছে।আপনি এই নামেই ডাকবেন।
ইমন- জানো নুসু মহানবী সা: মা আয়েশাকে আদর করে ভালোবেসে হুমায়রা বলে ডাকতেন।
হেন্সি- সত্যি??
ইমন- হুম।
হেন্সি- আচ্ছা আমি না কুরআন শরীর সহিহ শুদ্ধ ভাবে বেশি পারি না।আমাকে আপনি শিখিয়ে দিবেন??
ইমন- অবশ্যই নুসু।আমি শিখিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।
আর শিখাবো এক শর্তে।তুমি যদি আমাকে আপনি ডাকা বন্ধ করো।
হেন্সি- তুমি ডাকতে মুর লইজ্জা করে!!!ং!হিহিহিহি
ইমন- আহারে লজ্জা বতী লতা।হাহাহাহাহা
এভাবে আলাপ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো ওরা।কারন সকালে নামাযের জন্য উঠতে হবে।
সকালে ফজরের আজানের মধুর ধ্বনিতে ঘুম ভাঙলো ইমনের।ইমন হেন্সিকেও নামাযের জন্য ডেকে তুললো।
ইমন- আস সালামুআলাইকুম নুসু।উঠো।নামাযের সময় হয়ে গেছে।
হেন্সি- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
হেন্সি উঠে পড়লো।হেন্সি আর ইমন ওযু করে নিলো।
ইমন- তুমি নামায পড়ে নাও।আমি মসজিদে যাচ্ছি নামায পড়ার জন্য।
হেন্সি- ঠিক আছে।
ইমন হেন্সির কপালে একটা চুমু দিয়ে মসজিদে চলে গেলো।
হেন্সি আজ খুব খুশি।এমন একটা দিনের স্বপ্নই তো দেখতো হেন্সি।
ফাতেমারও ঠিক একি স্বপ্ন ছিলো।কিন্তু এখনো ফাতেমার সেই স্বপ্ন পুরন হয় নি।শুধু আশাতেই আছে এখনো ফাতেমা।কবে তার এই স্বপ্ন. পুরন হবে।
ওদিকে ফাতেমা আজো একা একাই নামায পড়লো।আজো মাহিনকে নামাযের জন্য জাগাতে পারলো না।
হেন্সির বিয়ের দুই দিন. কেটে গেলো ।ইমন হেন্সির খুব খেয়াল রাখে।একসাথে বসে দুজনে কুরআন পড়ে।হেন্সির পড়া ভুল হলে ইমন সেটা ঠিক করে পড়ায়।দুজনে একসাথে তাহাজ্জতের নামায পড়ে।দুজনেই খুব খুশি।
আজ হেন্সি আর ইমনের বিয়ের ৩য় দিন।
হেন্সি- মা কালকে তো বাবার বাড়ি যাবো।অনেকদিন হলো।ফাতেমাকে দেখি না।আপনি যদি ফাতেমাকে আর বাকি সবাইকে আমাদের এখানে দাওয়াত দেন তাহলে এই উছিলায় আমার ফাতেমার সাথে দেখা হয়ে যাবে।
জান্নাত বেগম- তুমি ঠিক বলেছো মা।আমি আজি সবাইকে আসতে বলবো।
দাড়াও এক্ষুনি ফোন করছি।
এই বলে জান্নাত বেগম মেহেঘ বেগমকে ফোন দিয়ে দাওয়াত দিলেন ।মেহেঘ বেগম দাওয়াত কবুল করলেন আর আসার কথা দিলেন।
সন্ধ্যায় মেহেঘ বেগম ,মহিমা ,আর ফাতেমা জান্নাত বেগমের বাড়িতে এলেন।
চলবে ইনশাআল্লাহ………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here