ফিরে আসা পর্ব-৪০

0
522

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা- Umma_Hurrayra_Jahan

পর্ব-৪০

মিমির বান্ধবি হাসির মাধম্যে মাহিন মিমির সাথে যোগাযোগ করলো।
মিমি ইচ্ছা করেই মাহিনের সাথে যোগাযোগ করে নি।কারন মিমি জানে মাহিন এতোদিন মিমির সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে পাগলের মতো হয়ে যাবে।আর এটাই মিমি চাইছিলো।যাতে মাহিন মিমির জন্য পাগলের মতো হয়ে ফাতেমার উপর অত্যাচার করে।তাহলেই তো ফাতেমার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়া হবে মিমির।
অবশেষে মাহিন মিমির বান্ধবি হাসিকে ফোন দিয়ে মিমিকে মাহিনের সাথে একটি বারের জন্য কথা বলতে অনুরোধ করলো।
মিমি তার প্রতিশোধ সম্পুর্ন করার জন্য মাহিনকে ফোন দেয়।মাহিন মিমির ফোন পেয়ে যেন আবার নতুন জীবন ফিরে পেলো।
মাহিন- হ্যালো মিমি।এতো দিন তুমি আমার সাথে কোন যোগাযোগ করো নি কেন??জানো তোমার সাথে কথা না বলতে পেরে আমি প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম।
ফোনের ওপাশে মিমি কোন জবাব দিচ্ছে না।
মাহিন- কি হলো মিমি তুমি কোন কথা বলছো না কেন??প্লিজ কথা বলো।
মিমি কিছুক্ষন পর ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো।
মিমি- আমি তোমার সাথে আর কোন দিন কথা বলবো না।তোমার জন্য আমাকে এতো অপমান সহ্য করতে হলো।
মাহিন- কি বলছো এসব??কে তোমাকে অপমান করলো???
মিমি- আমি শেষ বারের মতো তোমার সাথে দেখা করতে চাই।আর কোন দিন দেখা করবো না।
মাহিন- আরে কি হয়েছি কি বলবে তো আমাকে।
মিমি- ফোনে বলবো না ।আজ বিকেলে তুমি আমার সাথে দেখা করো।তারপর সব বলবো।
মাহিন- আচ্ছা ঠিক আছে ।তাহলে আগে যেখানে দেখা করতাম আজ বিকালে সেখানেই দেখা করবো।
মিমি কান্না করছে
মিমি- আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে মিমি ফোন রেখে দিলো।
ওদিকে মাহিন অস্থির হয়ে গেছে মিমিকে কে অপমান করেছে তা জানার জন্য।
মাহিন এখন বাসাতেই আছে।বিকালে যাবে মিমির সাথে দেখা করতে।
মেহেঘ বেগম আজ বোনের বাড়ি যাবে।অনেকদিন হয়ে গেলো তিনি বোনের সাথে দেখা করেন না।তাই আজ উনি ভেবেছেন যে ,উনি আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বোনের বাড়ি যাবেন।হয়তো সেখানে দুদিন থাকতেও পারেন।আরমান সাহেব ব্যবসার কাজে চিটাগং গেছেন আজ সকালে।
মেহেঘ বেগম সবাইকে মানে মাহিমা ,ফাতেমা ,আর মাহিনকে ডেকে বলে দিলেন যে উনি আজ উনার বোনের বাড়ি যাবেন।
মেহেঘ- তোরা সবাই যেহেতু এখানে আছিস তাই একটা কথা বলতে চাইছি।আজ দুপুরে আমি আমার ছোট বোনের বাড়িতে যাবো।হয়তো সেখানে দুদিন থাকতে পারি।তাই তোরা নিজেদের খেয়াল রাখিস।ভালো মতো থাকিস।আমি দুদিন পরেেই চলে আসবো।আর তোদের বাবা তো আজ চিটাগং গেছে।ওরও আসতে দুদিন দেরি হবে।
ফাতেমা – তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো মা।কোন সমস্যা হবে না আমাদের।
মেহেঘ- আমি কিন্তু তোর উপর সব দায়িত্ব দিয়ে যাবো।তুই সব সামলে রাখিস কিন্তু।
ফাতেমা – তুমি কোন চিন্তা করো না মা।আমি সব সামলে রাখবো।
মাহিন ওদিকে অস্থির হয়ে যাচ্ছে মিমির সাথে দেখা করার জন্য।
মেহেঘ- কিরে মাহিন তোর মধ্যে এমন অস্থির ভাব দেখা যাচ্ছে কেন?কোন সমস্যা হয়েছে কি??
মাহিন- না মা কোন সমস্যা নেই।তুমি যেতে পারো।
মেহেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে।মহিমা তুই ভালো ভাবে থাকিস।আমি দুপুরেই চলে যাবো।
মহিমা- ঠিক আছে মা
।সবাই কথা বার্তা শেষ করে নিজের ঘরে গেলো।
ফাতেমা নিজের ঘরে অগোছালো জিনিস গুলো ঠিক করছিলো।
এদিকে মাহিন ঘরের মধ্যে আর বেলকনির মধ্যে পায়চারি করছিলো।তার মধ্যে একটা অস্থিরতার ভাব ফুটে উঠেছিলো।
ফাতেমা সেটা লক্ষ্য করলো।কিন্তু কিছু বললো না।ফাতেমা জানে কিছু বলতে গেলেই অশান্তি সৃষ্টি হবে।
কিন্তু বেচারি ফাতেমা এটা জানে না যে আজকে তার জীবনে কত বড় অশান্তির ঝড় আসতে চলেছে।
দুপুর হয়ে গেলো।সবাই নামায পড়ে নিলো একমাত্র মাহিন বাদে।মেহেঘ বেগম খাবার খেয়ে তৈরি হলেন বোনের বাড়ি যাওয়ার জন্য।কিন্তু তিনি এটা আন্দাজও করতে পারেনি তার সাজানো সংসারটাই আজ কি ঝড় আসতে চলেছে।
মেহেঘ বেগম সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।দুপুরে খাওয়ার পর ফাতেমা আর মহিমা এবং নুরি নানা হাদিস কালাম নিয়ে আলোচনা করছিলো।ফাতেমা মহিমা আর নুরিকে পর্দার গুরুত্ব ,নামাযের গুরুত্ব,ইসলামের আরো নানা দিক বুঝিয়ে বলছিলো।
এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।ফাতেমা নিজের ঘরে গিয় নামাযের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।আর এদিকে মাহিন মিমির কাছে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।ফাতেমা দেখলো যে মাহিন তাড়াহুড়া করে রেডি হচ্ছে।
ফাতেমা – আপনি এই সময় কোথায় যাচ্ছেন?
মাহিন কোন জবাব না দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো।
ফাতেমা নামায পড়ে নিলো।
এদিকে মাহিন মিমির জন্য সেই জায়গায় গিয়ে অপেক্ষা করছিলো।
একটু পড়ে মিমি এলো মাহিনের কাছে।
মাহিন- এই তো মিমি তুমি এসে গেছো।জানো তোমার জন্য সারাদিন কতো ছটফট করেছি আমি।আমি জানতে চাই কে তোমাকে অপমান করেছে ??কার এতো বড় সাহস???
মিমি আবার মাহিনকে দেখে আবার ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো।
মিমি– জানতে চাও ,জানতে চাও তুমি কে আমাকে অপমান করেছে?
মাহিন-হুম সেটা জানতেই তো এসেছি।
মিমি- তাহলে শুনো ।তোমার গাইয়্যা ,বেহায়া ,ক্ষেত ,ফকিন্নি,আনস্মার্ট,ঐ চাচি মার্কা বউ ফাতেমা আমাকে রেস্টুরেন্টে ডেকে সবার সামনে যা না তাই বলে অপমান করেছে।
মাহিন- কী???????????
মিমি – হুম এটাই সত্যি।তুমি জানো ও আমাকে আমার লাইফ স্টাইল নিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলেছে।বলেছে আমি নাকি জাহান্নামি।আমার পোষাক আষাক ভালো না।আমি নাকি ইসলাম জানি না।সবার সাথে আরো কত কি যে বলেছে।আমি নাকি তোমাদের সংসার নষ্ট করে দিচ্ছি।আমি নাকি তোমাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি।
আরো কত কি যে বলেছে আমি তা মুখে আনতে পারবো না।
এই বলে মিমি কান্না করে দিলো।
মাহিন তো এসব কথা শুনে রাগে অগ্নিবর্ন হয়ে গেলো।মাথায় আগুন ধরে গেলো মাহিনের।হিংস্রতার চরম সীমায় পৌছে গেলো মাহিন।
মাহিন রাগে কট মট করছে।দাঁতে দাঁত চেপে মিমিকে বললো.
মাহিন- ঐ মেয়ের এতো বড় সাহস????তোমাকে এতো বড় বড় কথা বলেছে।আজি হবে আমার বাড়িতে ঐ মেয়ের শেষ দিন
মিমি তো ফাতেমার প্রতি মাহিনের এমন রাগ দেখে মহা খুশি।কারন মিমি জানে মাহিন ফাতেমাকে এবার চরম শাস্তি দিবে।
মিমি কাদতে কাদতে মাহিনকে জড়িয়ে ধরলো।মাহিন মিমিকে শান্ত করে মিমির সাথে কিছুক্ষন সময় কাটালো।যাতে মিমির মন ভালো হয়ে যায়।
প্রায় সন্ধার সময় মাহিন মিমির কাছ থেকে বিদায় নিলো।
মাহিন রাগে কট মট করে অগ্নিবর্ন হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।অনেক জোরে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো।তাই তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছে গেলো।
মাহিন বাসায় গিয়ে জোরে জোরে কলিংবেল বাজাতে লাগলো।নুরি তাড়াতাড়ি মাগরিবের নামায শেষ করে দরজা খুলে দিলো ।দরজা খুলতে দেরি হওয়াই মাহিন আরো রেগে গেলো।
নুরি- ভাইজান নামায পড়তেছিলাম তাই দরজা খুলতে দেরি হইয়া গেছে ।মাফ কইরা দিয়েন।
মাহিন কোন কথা না বলে রেগে ফায়ার হয়ে নিজের ঘরে গেলো।
ফাতেমা সবে মাত্র নামায পড়ে উঠে জায়নামায গুছিয়ে পিছনে ফিড়তেই মাহিন শরীরের জোরে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় মারলো।
ফাতেমা চড়ের ধাক্কা সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো।
ফাতেমা কিছু বুঝে উঠার আগেই মাহিন ফাতেমাকে নিচে থেকে তুলে আরেক গালে আরো জোরে জোরে দুইটা চড় মারলো।
ফাতেমার দুই গাল কমলার মতো লাল হয়ে গেলো।
মাহিন জোরে জোরে চিৎকার করে ফাতেমাকে গালিগালাজ করতে লাগলো ।তুই তুকারি পর্যন্ত করতে লাগলো।
মাহিন- তর সাহস হয় কি করে?? তুই মিমিকে কি বলেছিস????
তোকে আমি আমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছিলাম বলে আর তোকে মিমির কথা বলেছি বলে সেটা তোর সহ্য হয় নি না??????
এতো সাহস তোর ??এতো সাহস??তুই আমার মিমিকে রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে যা নয় তা বলে অপমান করেছিস।তোকে এতো সাহস কে দিলো????কে দিলো তোকে এতো অধিকার????
মাহিন চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলো।
বাসায় বাবা মা কেউ নেই তাই মাহিন এতো সাহস পেলো ফাতেমাকে গালিগালাজ করার আর মারার।
ফাতেমা এমন জোরে চড় খেয়ে মাথা ঘুরছে।কানে কিছু ভালো করে শুনতে পাচ্ছে না।দুনিয়া সহ যেন ফাতেমার মাথা ঘুরছে।
ওদিকে মাহিনের চিৎকার শুনে মহিমা নিজের রুম থেকে দৌড়ে এলো।
মহিমা এসে দেখে ফাতেমা নিচে বসে আছে দুই হাত মাথার মধ্যে ধরে।
মহিমা – এই ভাইয়া তুই এটা কি করলি???তুই ভাবির গায়ে হাত তুললি??
মাহিন- তুই আমাদের মাঝখানে আসবি না।এই আমি বলে রাখলাম।
মহিমা – কিন্তু তুই ভাবির উপর এভাবে চেচাচ্ছিস কেন??ওকে মারলি কেন???
মাহিন- তুই জানিস ওর কত বড় সাহস ও মিমিকে রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে গিয়ে যা নয় তা বলে অপমান করেছে।
মহিমা- আরে ভাবি না ঐ মিমিই ভাবিকে উল্টা অপমান করেছে।কারন আমিও সেখানে ছিলাম।
মহিমা – ও তাহলে এই মিচকা শয়তানের সাথে তুইও ছিলি?
মহিমা- তুই যদি আর একবারো ভাবির গায়ে হাত তুলিস বা বকিস তাহলে আমি কিন্তু মা বাবাকে ফোন দিতে বাধ্য হবো।
মাহিন- ও তাহলে তুইও এই মেয়ের দলে?
দাড়া আগে তোর ব্যবস্থা করে নিই ।তারপর এই ফাতেমার ব্যবস্থা করছি।
এই বলে মাহিন মহিমার হাত থেকে ওর ফোনটা কেড়ে নিয়ে পাশের রুমে মহিমাকে লক করে রাখলো জোর করে।
মাহিন- এবার দেখি এই মেয়েকে কে এই বাড়িতে রাখে।
ফাতেমা বেচারির এখনো মাথা ঘুড়ানো ভালো করে কমে নি।কমবেই বা কি করে।চড় গুলো তো আর যে সে চড় ছিলো না।মাহিন তার শরীরের সব শক্তি দিয়ে চড় মেরেছে।
ফাতেমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছিলো।
মাহিন একটা ব্যাগ নিয়ে চোখের সামনে ফাতেমা যে কাপড় চোপড় পেলো সেগুলো ব্যাগে ভরে দিলো।আর ফাতেমার পর্দা করার জিনিস গুলো বের করে ফাতেমার মুখের উপর ছুড়ে মারলো।
মাহিন- এই নে তোর প্রিয় জিনিস।এগুলো পড় আর আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।তোর মুখ আমি আর. দেখতে চাই না।
ওদিকে মহিমা দরজা ধাক্কা দিচ্ছে বার বার।
মহিমা – প্লিজ ভাইয়া দরজাটা খুল।দেখ তুই ভাবির সাথে এমন করিস না।দেখ ওকে বাড়ি থেকে বের করিস না।বেচারি এখন কোথায় যাবে???
মাহিন- জাহান্নামের চৌরাস্তা যাক।তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
এদিকে ফাতেমা নিজের হুশে ফিরে এলো।ফাতেমা মাহিনের পায় ধরে হাউমাউ করে কাদছে।
ফাতেমা – দেখুন আমি আপনার পায়ে পড়ি একটু শান্ত হোন আপনি।আপনার হয়তো কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে।আমার কথা একটু শুনুন।আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না।আপনি শান্ত হলে আমি সব বুঝিয়ে বলবো আমি।
মাহিন- আমি তোর কোন কথা শুনতে চাইনা।
ফাতেমা – আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না।আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো।কিন্তু আমাকে আমার এই সংসার থেকে বের করবেন না।প্লিজরবের করবেন না।আল্লাহর রস্তে আমাকে বের করে দিয়েন না।
হে আল্লাহ তুমি কিছু করো আল্লাহ তুমি কিছু করো।
হায়রে পাশান মাহিন ফাতেমার এই বুকফাটা কান্নাতেও তার মন গলে না।
মাহিন- আমি যা বলবো তাই শুনবি তো??
ফাতেমা – হুম শুনবো।বলুন ।আমি সব করতে রাজি আছি।
মাহিন- আমি তোকে আমার বউ হিসেবে তখনি মেনে নেবো যখন তুই পর্দা করা ছেড়ে দিবি।তোকে মিমির মতো মর্ডান হতে হবে।তোকে ওর মতো ড্রেস পড়তে হবে।তোকে আমার সাথে পার্টিতে যেতে হবে।যদি তুই এই শর্তে রাজি থাকিস তাহলে আমি তোকে আমার স্ত্রী হিসেবে মনে নিবো।তোকে বাড়ি থেকে বের করবো না।
ফাতেমা – হে আল্লাহ……..
ফাতেমা জোরে আল্লাহকে কান্না করে ডাক দিলো।
এর থেকে যদি আপনি আমার জীবনটা চাইতেন তাহলে আমি আপনাকে নির্ধিদায় আমার জীবনটা দিয়ে দিতাম। আমি আমার জীবন দিতে রাজি আছি কিন্তু আমি আমার আল্লাহর বিধান কিছুতেই অমান্য করতে পারবো না।এর জন্য আমার যত কষ্ট সহ্য করতে হোক না কেন??প্লিজ আমি আপনার অন্য সব কথা মানবো কিন্তু আমাকে বেপর্দায় চলার এই কঠিন শর্ত দিবেন না আমি আপনার পায়ে পড়ি।
মাহিন- তাহলে তুই আমার কথা মানবি না???
ফাতেমা – আমি আমার নিজের সুখের জন্য আমার আল্লাহর সাথে বেইমানি করতে পারবো না।আমি আমার আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করতে পারবো না।
কান্না করতে করতে কথা গুলো ফাতেমা বললো।
মাহিন- তাহলে আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা এই মুহুর্তে।
নুরি – ভাইজান আপনার পায়ে পরি ভাবিরে এই রাইতের বেলা বাইর কইরা দিয়েনা না।
মাহিন- পা ছাড় নুরি।যদি বেশি বাধা দিস তাহলে তোরও খবর আছে বলে দিলাম।
নুরি কাজের মেয়ে তার কোন অধিকার নেই মুনিবের মুখের উপর কথা বলার।তাই বেচারি কিছু করতে পারছে না।শুধু দুচোখের অশ্রু ঝরাচ্ছে।
মাহিন ফাতেমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আর তার ব্যাগটা নিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দিলো।আর পকেট থেকে টাকার বান্ডেল বের করে মুখের উপর ছুড়ে মারলো।আ র বোরকাএবং বাকি জিনিসগুলো ছুড়ে মাড়লো।
মাহিন- তোকে সব দিয়ে দিলাম এবার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যা
।ওদিকে মহিমা বন্দি ঘরে কেদেই চলেছে।তার ফোনটাও মাহিন কেড়ে নিয়েছে।তাই সে কাউকে ব্যপারটা জানাতেও পারছে না।
ফাতেমা কান্নাই করছে।এতটুকু বয়সে তাকে কত কিছুই না সহ্য করতে হচ্ছে।আর কত ???আর কত ধৈর্য্যর পরিক্ষা দিবে এই মেয়েটা।
মাহিন মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো ফাতেমার।
ফাতেমা কাদতে কাদতে বোরকা আর বাকি সব পড়ে নিলো।এই নিষ্ঠুর শহরে কোথাও যাবার জায়গা নেই ফাতেমার।হেন্সির বাড়িতেই যেতে পারবে না।কারন লোকে মন্দ বলবে।
ফাতেমা – হে আল্লাহ আমি এখন কি করবো??আমি যে এ শহরের কিছুই চিনি না।
ফাতেমা হাতে ব্যাগটা নিয়ে চলতে চলতে বার বার পিছে ফিরে বাড়িটাকে দেখছিলো আর চোখের পানি মুছছিলো।ফাতেমা এবার একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে মাহিনের এমন আচরনে।তাই সে আর বাড়িতে থাকার কথা চিন্তাই করে নি।তাই আল্লাহর নাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ।ফাতেমা জানে মেয়েদের একা একা মাহরাম ছাড়া এতো দুরে সফর করা ঠিক না।কিন্তু আজ সে পরিস্থিতির স্বিকার।একাই যেতে হবে তাকে।
ফাতেমা মানুষকে জিঙ্গেস করতে করতে বাস স্টেন্ড পর্যন্ত পৌছে গেলো।
এবার একা একা বাস স্টেন্ডের এক বেঞ্চে বসে কাদছে।
হঠাৎ কয়েকজন হিজরা এসে ফাতেমাকে কাদতে দেখলো।
হিজরাদের মধ্যে একজনের নাম মিনা ,আরেকজন রজনী,আরেকজন রেশমি।
মিনা- কিরে বেটি এখানে একা একা বসে কাদছিস কেন???তোর কি হয়েছে রে???তোর কিসের দু:খ??আচ্ছা আগে তোর নাম কি বল?
ফাতেমা কাদতে কাদতে মিনাকে সালাম দিয়ে নিজের নাম বললো।
মিনা- তা মা ফাতেমা তুই কাদছিস কেন রে??
ফাতেমা – আমাকে আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।এখন আমি বাপের বাড়ি যাবো।কিন্তু খুব ভয় করছে।কোন দিন এতো দুরে একা একা যাইনি।
রজনী- হায়রে পুড়া কপাল।আমরা শুধু ভাবি দুনিয়াতে আমাদের হিজরাদের থেকে বেশি দু:খি কেউ নাই।কিন্তু তুই তো দেখি আমাদের থেকে বেশি দু:খি।
মিনা- তুই চিন্তা করিস না মা।আমরা তোকে তোর বাপের বাড়ি পৌছে দিবো।তুই আমাদের ভরসা করতে পারিস রে মা।আমরা হিজরা হতে পারি কিন্তু কোন হৃদয়হীন মানুষ না।
রেশমি- হে রে বেটি তোকে আমরা সহি সালামত ভাবে তোর বাড়িতে পৌছে দিবো।তুই চল আমাদের সাথে।
ফাতেমা একটু ভয় পাচ্ছে।
মিনা- জানি তুই আমাদেরকে বিশ্বাস করতে পারছিস না।কিন্তু মা রে একবার বিশ্বাস করে দেখ ।তুই ঠকবি না।
মিনা ,রেশমি ,আর রজনীর কথা শুনে ফাতেমা একটু ভরসা পেলো।
ফাতেমা আল্লাহর নাম নিয়ে এদের সাথেই ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
সারাটা রাস্তা বাসের মধ্যে কেদেছে ফাতেমা।
বাসের মধ্যে তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় এশার নামায কাজা হয়ে গেলো ফাতেমার।
রাতের প্রায় একটা বাজে ।চারিদিক নিরব।কোথাও কোন শব্দ নেই।
হঠাৎ রফিক সাহেবের বাসার কলিংবেলটা বেজে উঠলো।
সবাই গভির ঘুমে আচ্ছন্ন।কলিংবেলের. আওয়াজ শুনে খাদিজা বেগম চমকে উঠলেন।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১টা বাজে।খাদিজা বেগম রফিক সাহেবকে ডেকে তুললেন দরজা খুলার জন্য।
রফিক সাহেবও কিছুটা আতংকিত হয়ে গেলেন।এতো রাতে কে এলো??তাই তিনি হাসানের রুমে গিয়ে হাসানকেউ ডাক দিলেন।তারপর দুই বাবা ছেলে মিলে দরজা খুলতে গেলেন।কলিংবেল শুনে এতো রাতে যতটা না আতংকিত হয়েছিলেন তার থেকে হাজার গুন আতংকিত হলো দরজা খুলে ফাতেমাকে দেখে।রীতিমত শক খেলেন হাসান আর রফিক সাহেব।
চলবে ইনশাআল্লাহ…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here