#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- Umma Hurayra Jahan
পর্ব- ৪১
ফাতেমাকে এতো রাতে দরজার সামনে দেখে রীতিমত শক খেলেন হাসান আর রফিক সাহেব।
রফিক সাহেব দরজার বাইরে আরো তিনজনকে দেখতে পেলেন।কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন তিনি।বাকি তিনজনের মাঝেও তিনি আরেকজনকে খুজছেন।আর সেই আরেকজনটা হলো মাহিন।রফিক সাহেব মাহিনকে খুজছেন।কিন্তু মাহিন তো আসে নি।
রফিক – ফাতেমা ভিতরে আয় ভিতরে আয়। আচ্ছা আমি কোন স্বপ্ন দেখছি নাতো??এই সময় তুই এখানে ????আর মাহিন কোথায় ?ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না রে মা??আর তোর সাথে এনারা কারা??
ফাতেমা এবং মিনা ,রেশমি ,রজনি ড্রয়িং রুমে গেলো আর সেখানেই সবাই একাসাথে বসলো।
ফাতেমার মুখে কোন কথা নেই।মেয়েটা পাথরের মতো শুধু বসে আছে।আর নিচের দিকে চেয়ে আছে।
কিছুক্ষন পর খাদিজা বেগম “এস সময় কে এলো বলে চোখ কচলাতে কচলাতে ড্রয়িং রুমে এলেন।
ফাতেমাকে দেখে খাদিজা বেগমও হতবাভ হয়ে গেলেন।
খাদিজা- ফা…ফাত…ফাতেমা তুই!!!!!!!!!এতো রাতে!!!!আমি কি কিছু ভুল দেখছি নাতো??
মিনা- না রে বোন আপনি কিছু ভুল দেখছেন না।এটা আপনাদের মেয়ে ফাতেমা।
মা ফাতেমা তোকে তো বাড়িতে পৌছে দিলাম ।এবার আমাদের দায়িত্ব শেষ।এবার আমরা আসি।আর তোর জন্য খুব দু:খ হচ্ছে রে মা।আল্লাহ এতো ভালো একটা মেয়ের কপালে এতো বেত্তমিজ একটা জামাই দিলো।দোয়া করি তোকে যেন আল্লাহ সব সুখ ফিরিয়ে দেন।
এবার আমরা আসি।
ফাতেমা – আপনাদের এই উপকারের কথা আমি কোন দিন ভুলবো না।আমার বাড়ি তো আপনারা চিনে গেলেন।জীবনের যেকোন বিপদে আপদে আমাকে একটু মেয়ে মনে করে জানিয়েন যদি পারি জীবন দিয়ে হলেও আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।আর আমার জন্য দোয়া করবেন।
খাদিজা বেগম,হাসান আর রফিক সাহেব এসবের কিছুই বুঝতে পারছেন না।শুধু নিরব দর্শকেরর ভুমিকা পালন করছেন।
মিনা ,রেশমি ,আর রজনি চলে গেলো।
খাদিজা – কিরে ফাতেমা কি হয়েছে বল না রে মা।আমার তো টেনশানে শরীর কাপছে।কি হয়েছে বল না???
ফাতেমা কান্না করে দিলো মায়ের কথা শুনে ।
ফাতেমা – মা আমার সব শেষ হয়ে গেছে।উনি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
এই কথা শুনার পর ফাতেমার মা বাবা আর ভাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
হাসান- তুই এসব কি বলছিস???তোর মাথা ঠিক আছে তো??মাহিন তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে মানে???
রফিক- কী?????
খাদিজা বেগম মেয়ের এমন কথা শুনে নিজেও কেদে দিলেন।
রফিক- তোর শ্বশুড় ,শ্বাশুড়ি ,আর ননদ ওরা কিছু বলে নি??
ফাতেমা কেদেই চলেছে।
ফাতেমা – ওদের কারোর কোন দোষ নেই এতে।আমার শ্বশুড় আজ সকালে চিটাগং গেছে আর শ্বাশুড়ি দুপুরে বোনের বাড়ি গেছে।আর মহিমাকে উনি ঘরে আটকে রেখেছিলেন আর ওর ফোনটাও কেড়ে রেখে দিয়ে ছিলেন।
তারপর উনি আমাকে হাত ধরে টেনে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।আমি কি করবো কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।খুব ভয় করছিলো আমার।তাই আমার সাথে মাত্র যারা এসেছিলো তাদের সাহায্য নিয়ে আমি এখানে চলে এসেছি।
হাসান- মাহিন এমনটা কি করে করলো?কেনো করলো সব বল আমাদের??
ফাতেমা – থাক ভাইয়া এসব কথা জেনে আর লাভ নেই।আমার কপালে যা আছে তাই হবে।আল্লাহ হয়তো এটাই লিখে রেখেছিলেন কপালে।
রফিক- মাহিনের এতো বড় সাহস!!ও এতো রাতে আমার মাসুম মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।ওকে তো আমি খুন করে ফেলবো।
খাদিজা বেগম কান্না করছেন।
খাদিজা- আজ এই সবকিছু হয়েছে তোমার জন্য।তুমি এই সব কিছুর জন্য দায়ি।বড়লোক বন্ধুর ছেলে দেখে লোভ সামলাতে না পেরে আমার মেয়েটাকে ঐ মাহিনের মতো বদমেজাজি,বেনামাযি একটা বেদ্বীন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছো।তুমি তো সংসারের কর্তা ।তোমার উপর তো আর কেউ কথা বলতে পারে না।তাই তুমি ঐ মাহিনের মতো একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছো।এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী।
ফাতেমা কাদতে কাদতে মাকে চুপ করতে বললো।
ফাতেমা – মা চুপ করো।একটু শান্ত হও।আমার ভাগ্যে আল্লাহ যা লিখে রেখেছিলেন তাই হচ্ছে ।এতে বাবা বা অন্য কারো দোষ নেই।
আজ এই সব পরিস্থিতি দেখে রফিক সাহেবের নিজেকে বড্ড অপরাধি মনে হচ্ছে।আজ যদি একটা দ্বীনদার ,ইমানদার ,পরহেজগার ইমনের মতো একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিতো তাহলে হয়তো ফাতেমাকে রাতের বেলা বাড়ির বাইরে বের হতে হতো না।
রফিক- আমাকে মাফ করে দিস রে মা।আমিই হয়তো সবকিছুর জন্য দায়ি।
হাসান- সবাই শান্ত হও তোমরা।সমস্যা যখন হয়েছে তখন তো এর সমাধান করতেই হবে।এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো সেটা তো ফাতেমার শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে জানাতে হবে।না হলে তো পরে আরো সমস্যা হবে।
খদিজা- অবশ্যই জানাতে হবে।কিন্তু এখন অনেক রাত হয়েছে।কাল সকালে জানাবো বেয়ান আর বেয়াইকে।
ফাতু চল মা তোর ঘরে চল।সারা রাত মনে হয় কিচ্ছু খাস নি।ঘরে গিয়ে বোরকাে পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নে ।আমি তোর জন্য খাবার আনছি।
খাদিজা বেগম নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে ফাতেমাকে কথা গুলো বললো।
ফাতেমা – মা আমার এশার নামায পড়া হয় নি।আগে ফ্রেশ হয়ে নামাযটা পড়ে নিই।
ফাতেমা নিজের ঘরে গিয়ে বোরকা চেঞ্জ করে ওয়াশ রুমের শাওয়ার ছেড়ে এতো রাতে ঠান্ডার মধ্যে শাওয়ারের নিচে বসে রইলো।শাওয়ারের নিচে বসে অনেক্ষন ইচ্ছা মতো কেঁদেছে বেচারি।চোখ লাল হয়ে গেছে।প্রায় ২০মিনিট পানিতে ভিজেছে।এতো ঠান্ডার মধ্যেও যেন কোন অনুভুতি হচ্ছে না তার।অনুভুতিহীন হয়ে গেলো ফাতেমা কিছু সময়ের জন্য।
কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে আগে এশার নামাযটা আদায় করে নিলো।মোনাজাতেও চোখের পানি সামলে রাখতে পারে নি মেয়েটা।বার বার শুধু চোখের সামনে কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভেসে উঠছে।
খাদিজা বেগম ফাতেমার জন্য খাবার নিয়ে এলো।
খাদিজা- ফাতু মা আমার, তোর জন্য খাবার এনেছি।আয় আমার কাছে আয়। আমি তোকে খাইয়ে দেবো।
ফাতেমা – আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মা।আমাকে মাফ করো।আমার গলা দিয়ে এখন আর খাবার নামবে না।আমি খেতে পারবো না।
খাদিজা- মা রে জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি না।হঠাৎ করেই আসে সেই ভয়ানক পরিস্থিতি গুলো।তখন আমাদের জীবনটা অর্থহীন মনে হয়।আমরা ভেঙে পড়ি।কিন্তু ভেঙে পড়লে তো আর চলবে না।জীবনের প্রতিটি বাকে আমাদেরকে শক্ত থাকতে হবে।দৃঢ় মনোবল নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।এভাবে তো সবকিছু শেষ হয়ে যেতে দেওয়ার যাবে না।আর তার জন্য আমাদেরকে সুস্থ থাকতে হবে।আর সুস্থ থাকতে হলে খেতে হবে।তাই আর ভেঙে না পড়ে মনটাকে শক্ত কর ।আর আমি এখন খাইয়ে দিবো চুপচাপ খাবি।কোন বাহানা আমি শুনবো না।
ফাতেমা – কিন্তু মা. ..
খাদিজা- কোন কিন্তু না।মার কথা শুন আর নে হা কর ।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
তুই না আমার সাহসী ,মেয়ে?তাহলে আজ এমন করছিস কেন??নে হা কর ।আর খা
ফাতেমা মায়ের কথা শুনে কিছুটা খাবার খেয়ে নিলো।
ফাতেমার জন্য খাদিজা বেগমেরও বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু তিনি ফাতেমার সামনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন।কারন ফাতেমার সামনে যদি মা হয়ে উনি ভেঙে পড়েন তাহলে ফাতেমা তো এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবে না।ফাতেমাও আরো ভেঙে পড়বে।তাই তিনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন।
খাদিজা – আজ আমি তোর সাথে এই রুমেই থাকবো।তোকে আমি নিজে ঘুম পাড়িয়ে দিবো।সেই ছোট্টবেলার মতো।যখন তুই বলতি
“মা আমাকে ইট্টু ঘুম পালিয়ে দাও না গো” কত সুন্দর করে বলতি।আজ আমার ফাতু কত্ত বড় হয়ে গেছে।
খাদিজা বেগম খাবারের থালা রেখে হাত ধুয়ে বিছানায় এসে বসলেন।ফাতেমা মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
ফাতেমা – মা তুমি ঐ গজলটা একটু গাও না!যেটা ছোট বেলায় আমাকে আর ভাইয়াকে ঘুম পাড়ানোর সময় শুনাতে।
খাদিজা– কোনটা ??
ফাতেমা – ঐ যে ঐ গজলটা “নেই কোন মাবুদ আল্লাহ ছাড়া””
খাদিজা- আচ্ছা ঠিক আছে ।
খাদিজা বেগম ফাতেমার সেই প্রিয় গজলটা গেয়ে শুনাচ্ছে।
ফাতেমার ছোটরবেলার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।হঠাৎ মাহিনের মুখটা ফাতেমার চোখে ভেসে উঠলো।
খুব ভালোবাসে মাহিনকে ফাতেমা।মায়ায় জড়িয়ে গেছে মাহিনের।
কিন্তু বেত্তমিজ মাহিন ফাতেমাকে বুঝলো না।
মাহিনের কথা মনে করে ফাতেমার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
কাদতে কাদতে একসময় ফাতেমা ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ফজরের নামাযের সময় ঘুম ভাঙলো ফাতেমার।ফাতেমা মায়ের কোলেই শোয়ে আছে।খাদিজা বেগম বসেই ঘুমিয়েছেন সারা রাত।
আজ ফাতেমা তাহাজ্জতে উঠতে পারে নি।তাই নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে ফাতেমার।
নিজের দু:খের জন্য রবের ইবাদতে এমন অবহেলা মেনে নিতে পারছে না ফাতেমা।বার বার আল্লাহর কাছে মাফ চাইছে ফাতেমা।
ফাতেমা তার মাকে নামাযের জন্য ডেকে তুললো।
ওদিকে হাসান আর রফিক সাহেবও উঠে পড়েছেন।উনারা নামাযের জন্য মসজিদে চলে গেলো।
ফাতেমা আর খাদিজা বেগমও নামাযে পড়ে নিলেন।
রিনা বাড়িতে নেই।নিজের গ্রামের বাড়ি গেছে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে।
নামায শেষে ফাতেমা কুরআন পাঠ করে নিলো।কারন দুনিয়া উল্টে গেলেও সে তার রবের ইবাদতে গাফিলতি করতে ইচ্ছুক না।যায় হয়ে যাক না কেন ফাতেমা ইবাদতের বেলায় একচুলও পিছ পা হয় না।
একজন প্রকৃত মুসলমানের এমনি বৈশিষ্ট হওয়া উচিত।
নামায শেষে মসজিদ থেকে এসে সবাই একসাথে ড্রয়িং রুমে বসলো।
রফিক সাহেব সব ঘটনা এখন তার বন্ধু অর্থাত মাহিনের বাবা আরমান সাহেবকে জানাবেন।তাই পরিবারের সবাইকে একসাথে নিয়ে বসেছেন।
ফাতেমা – বাবা দেখ তুমি আমার শ্বশুড় মশাইকে ভালো করে বুঝিয়ে বলো।অযথা রাগ করো না কিন্তু।না হলে ঐ বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি হবে।আর এটা আমি চাই না।তাই ভালো করে কথা বলো উনার সাথে।
রফিক – তুই বেশি কথা বলিশ না।আমি যেটা ভালো বুঝবো সেটাই করবো।
রফিক সাহেব আরমান সাহেবকে ফোন দিলো।
রফিক- আস সালামু আলাইকুম আরমান।
আরমান- ওয়া আলাইকুমুস সালাম।আরে বন্ধু তুই এতো দিন পর?কেমন আছিস??
রফিক – আমি ভালো নেই ।কারন আমার মেয়ে ফাতেমা ভালো নেই।
আরমান – কি বলছিস তুই এসব??আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
রফিক- তোকে কত ভরসা করে আমার মেয়েটাকে তোর বাড়িতে তোর ছেলের বউ করে পাঠিয়ে ছিলাম।আর অবশেষে তোর ছেলে মাহিন এই প্রতিদান দিলো??
আরমান- আরে কি হয়েছে সেটা সোজাসোজি বল তো।আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
রফিক- তোর গুনধর ছেলে আমার মেয়েটাকে রাতের অন্ধকারে কাল তোর বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে।রাতের একটার সময় কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে ফাতেমা আমাদের কাছে এসেছে।যদি রাতের বেলা অন্য কোন অঘটন ঘটতো তাহলে কি হতো? ??
রফিক সাহেব কিছুটা রেগে রেগে কথাগুলো বললেন।
আরমান- WHAT?????????????
তুই কি বলছিস এসব? ?মা..মাম.মাহিন ফাতেমাকে রাতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে মানে?????আমি তো চিটাগং এসেছি।আমি তো এসবের কিছু জানিই না।
রফিব– তাহলে কি আমি তোকে মিথ্যা কথা বলছি??
শুনে রাখ আমি আমার মেয়েকে তোর বাড়িতে আর কোনদিন পাঠাবো না এ আমি বলে রাখলাম।
আর হে মনে রাখিস তোর ছেলেকেও আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো না।আমি ফোন রাখলাম।
রফিক সাহেব একটু বেশিই রেগে গেলেন।
আরমান- হ্যা..হ্যালো শুন।তুই ফোনটা রাখিস না।প্লিজ আমাকে ঢাকায় আসতে দে।তারপর ব্যাপারটা আমাকে ভালো করে বুঝতে দে।আমি যে এখন কি করি????হে আল্লাহ..
রফিক সাহেব ফোন রেখে দিলেন।
খাদিজা- এভাবে বলা তোমার ঠিক হয় নি।উনার সাথে তুমি কেন রাগ দেখালে ??দোষ তো মাহিন করেছে।
রফিক- তুমি বেশি কথা বলো না।ফাতেমাকে আমি আর কোনদিন ওদের বাড়ি যেতে দেবো না।আর ঐ মাহিনকে আমি চোখের সামনে পেলে আস্ত রাখবো না।
হাসান- বাবা তুমি একটু শান্ত হও।রেগে তো আর সমস্যা সমাধান করা যায় না।
মাহিন কেন এমন করলো সেটা বুঝে তারপর কি করবো না করবো সেটা দেখা যাবে।
ওদিকে আরমান সাহেব মেহেঘ বেগমকে ফোন দিয়ে সব জানালেন।
মেহেঘ- কি বলছো এসব? ?মহিমা তো আমাকে ফোন দিয়ে কিছু জানায় নি।
আরমান- তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় যাও।আমি এখুনি ঢাকায় আসছি।ফ্লাইটে করে চলে আসবো।বেশি সময় লাগবে না।তুমি বাসায় যাও।গিয়ে দেখো ঘটনা কি??
এই ছেলে তো আমার সব মান সম্মান ডুবিয়ে ছাড়লো।এখন আমি রফিকের সামনে কি মুখ নিয়ে দাড়াবো????এই ছেলকে আমি আস্ত রাখবো না।
মেহেঘ- আচ্ছা ঠিক আছে।আমি এখুনি বাসায় যাচ্ছি।তুমিও সাবধানে চলে এসো।।।।
মেহেঘ বেগম তখনি বোন এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
সকাল ৮ টার সময় মেহেঘ বেগম আর আরমান সাহেব দুজনি বাসায় পৌছালেন।
মাহিন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নুরি দরজা খুলে দিলো।প্রথমে মেহেঘ বেগম আসলেন ।৫ মিনিট পরেই আরমান সাহেবও এসে বাসায় হাজির।
মেহেঘ- বাসায় কি হয়েছে রে নুরি??
নুরি – ও খালাম্মা গো ও খালু গো কাইল রাইতে ভাইজান ভাবিরে মাইরা ইচ্ছা মতো গালিগালাজ কইরা বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিছে।
আরমান- তাহলে মহিমা আমাদেরকে কিছু জানিয় নি কেন??
নুরি- ভাইজান তো আপা মনির ফোন কাইরা নিয়া আপা মনিরে ঘরে বন্দি কইরা রাখছে।আপামনি ভাইজানরে অনেক বুঝানির চেষ্টা করছিলো কিন্তু ভাইজান শুনে নাই।কাইল ভাবিও ভাইজানের পায়ে ধইরা কানছিলো যাতে তারে বাড়ি থাইকা না বাইর করে ।কিন্তু ভাইজান কোন কতাই শুনে নাই।আর আমারে কইছে আমি যাতে আপা মনির ঘরের দরজা না খুইলা দেই।যদি খুলি তাইলে নাকি আমারেও মারবো।তাই ভয়ে আমি দরজা খুলি নাই।
এই বলে নুরি কাদতে লাগলো।
মেহেঘ বেগম মহিমার রুমের দরজা খুলে দিলো।মহিমা বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাদছিলো।
মাকে দেখে আর বাবাকে দেখে মহিমা দৌড়ে তাদের কাছে এলো।
মহিমা কালকে রাতের ঘটনা আর মিমির কথা সব বলে দিলো মা বাবার কাছে।
আরমান সাহেব সব কথা শুনে এতো পরিমান রেগে গেলো তা বলার মতো না।
আরমান- এতো বড় সাহস মাহিনের???একটা বাইরের মেয়ের জন্য ফাতেমার মতো ফুলের মতো একটা মেয়ের উপর এতো অত্যাচার করেছে???ওকে তো আমি আজ শেষ করে ফেলবো।
এই বলে আরমান সাহেব মাহিনের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত মাহিনের গায়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিলো।
মাহিন কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে আরমান সাহেব উনার কমরের বেল্ট খুলে ইচ্ছা মতো মাহিনকে আঘাত করতে লাগলো।
মাহিন কিছুই বুঝতে পারছে না।মাহিন তো তার বাবা আর মাকে দেখে অবাক।
উনাদের তো আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা ছিলো।আজ কি করে এলো???
আরমান – বজ্জাত ছেলে তোর এতো বড় সাহস তুই আমার ফাতেমাকে এক বাইরের মেয়ের জন্য বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিস??তোকে তো মেরেই ফেলবো।
মাহিন- আরে আরে বাবা মারছো কেন?? ও আ আ
আরমান- তোকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো।তোর কত বড় সাহস তুই খালি বাড়ি পেয়ে মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিলি??
মাহিন এক পর্যায়ে আরমান সাহেবের হাত ধরে ফেলেছেন।
মাহিন- খবরদার বাবা মারবে না বলে দিলাম।
মেহেঘ বেগম এসে ঠাস করে এক থাপ্পর মারলো মাহিনকে।
মেহেঘ- তোর এতো সাহস তুই তোর বাবার হাত ধরে ফেললি??
হে মাবুদ ,,,,এই দিন দেখার জন্য আমাকে বাচিয়ে রেখেছিলে???
কি অশান্তি সৃষ্টি হলো আমার সংসারে এ ছেলের জন্য।
মাহিন- তোমরা কেন বুঝছো না আমি ঐ মেয়েকে ভালোবাসি ।ভালোবাসি না ঐ ফাতেমাকে।তোমরা জোর করে আমার গলায় ওকে ঝুলিয়ে দিয়েছো
I hate her
আমি মিমিকে ভালোবাসি।
আরমান সাহেব আরেকটা ঠাস করে চড় মারলো।
আরমান- তুই আমার চোখের সামনে আর আসবি না।যতদিন না ফাতেমাকে ফিরিয়ে আনতে না পারিশ তত দিন আমাকে বাবা বলে ডাকবি না ।তোকে কোন টাকা পয়সাও আমি দিবো না।
আর শুনে রাখ রফিক বলেছে আর কোন দিন ফাতেমাকে এ বাড়িতে পাঠাবে না।এবার তুই ঠিক কর কিভাবে তুই ফাতেমাকে ফিরিয়ে আনবি।আর যদি না আনতে পারিস তোকে আমি এ বাড়ি থেকে বের করে দেবো।তারপর দেখি তোর সেই মিমি তোকে কি করে আশ্রয় দেয়।
আর আমার চোখের সামনে আসিস না তুই ।এ আমি বলে দিলাম।
মেহেঘ- আমাকেউ তুই মা বলে ডাকবি না।
মহিমা – আমার সাথেও তুই কথা বলবি না।কিছু চাইবি না।
মেহেঘ- আর নুরি তুই শুনে রাখ ফাতেমা এ বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তুই মাহিনের কোন কাজ করে দিবি না বলে দিলাম।আর তুই যদি ওর কোন কাজ করিস তাহলে তুইও এ বাড়িতে থাকতে পারবি না।
আরমান – চলো সবাই।
মাহিন- আরে আরে একটু আমার কথাটা শুনো তোমরা ।প্লিজ তোমরা ঐ মেয়ের জন্য আমার সাথে এমন করতে পারো না।
চলবে ইনশাআল্লাহ……….