ফিরে আসা পর্ব-৫০

0
659

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা–Umma Hurayra Jahan

পর্ব-৫০

দুজন দুজনকে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো।

মাহিন কেদে কেদেই বললো -আমি তোমার কাছে ফিরে আসতে বড্ড দেরি করে ফেলেছি তাই না??

ফাতেমাও কাদছে
–একদম না ।আমি তো ভাবতেই পারি আল্লাহ এতো তাড়াতাড়ি আমার দোয়া কবুল করবেন।মাত্র তো কয়েকটা মাস অপেক্ষা করেছি।

মাহিন– এতো গুলো মাস তাও তুমি বলছো কম সময়??

ফাতেমা– হুম।কারন আল্লাহ তার বান্দার ধৈর্যর পরীক্ষা করে মাসের পর মাস ,বছরের পর বছর ।মানুষ ধৈর্য ধরতে ধরতে বছরের পর বছর পার করে দেয়।তারপর আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।কারন আল্লাহ তার বান্দার ইমান পরীক্ষা করেন।আর সেখানে আমি তো মাত্র কয়েকটা মাস শুধু অপেক্ষা করেছি।
এর জন্য আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করলেও শেষ হবে না।

মাহিন–সত্যিই তুমি আমার অতুলনীয় হুর পরী।
হয়েছে এবার আর কাদতে হবে না।আমি তো এসে গেছি।

এই বলে মাহিন ফাতেমার চোখের পানি নিজ হাতে মুছে দিলো।

ফাতেমা — আল্লাহর উপর আমার পুর্ন আস্তা ছিলো।আমি জানতাম একদিন ঠিকি আপনি হেদায়েত পাবেন।আমি আশা ছাড়ি নি।আজ আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।

মাহিন– সেটা তো বুঝলাম কিন্তু না খেয়ে শরীরের এ কি অবস্থা করেছো তুমি??নিজের প্রতি মনে হয় একটুকুও যত্ন নাও নি এতো দিন।

ফাতেমা মাথা নিচু করে দিলো।

ফাতেমা — তো কি করবো? ?আপনার জন্য মনে হয় আমার চিন্তা হয় না!!

মাহিন- আচ্ছা হুর পরী, তখন থেকে আপনি আপনি করছো ব্যাপার কী??এতো দিন পর তোমার আপনি ডাক শুনার জন্য এসেছি??এবার কিন্তু রাগ করবো!!

ফাতেমা কিছুটা লজ্জা পেলো।
ফাতেমা — আপনারে তুমি ডাকতে মুর লইজ্জা লাগে বুঝলেন রাগি মশাই!!!হিহিহি

মাহিন– তোমার মুখের হাসিটার জন্যই আমি অপেক্ষা করেছিলাম।
কিন্তু আপনি করে ডাকলে আমি মানবো না।

ফাতেমা — আমার যে আপনাকে তুমি করে ডাকলে লজ্জা লাগবে।

মাহিন– না না না না! !!এটা হবে না!!আমি কিন্তু এটার জন্য অনশন করবো।।

ফাতেমা – আচ্ছা মুশকিল তো !!আচ্ছা ঠিক আছে ।তুমি করেই ডাকবো।

মাহিন– তাহলো ডাকো তো এবার।

ফাতেমা চোখ বন্ধ করে বললো–তু..তু..তুু

মাহিন- কি তু তু করছো।বলো না তুমি।

ফাতেমা চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে দিলো –তুমি

মাহিন– এভাবে চোখ বন্ধ করে বললে হবে না।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।

ফাতেমা — ইশশ…আপনি আস্ত একটা পাগল ।হিহিহি

মাহিন– ও আমার হুর পরী আমি তোমার প্রেমেই তো পাগল।এতো বলো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে“তুমি”

ফাতেমা – -আচ্ছা আমি চেষ্টা করে দেখছি ।দেখি বলতে পারি কিনা??

ফাতেমা নড়ে চড়ে বসলো।এবার আস্তে করে মুখটা উঠিয়ে মাহিনের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মায়া ভরা মুচকি হাসি দিয়ে বললো “তুমি”

মাহিন- আয়ে….হায়ে…এই সুন্দর পবিত্র ডাকটা তোমার মুখে শুনবো বলেই তো এতোদিন অপেক্ষা করেছিলাম আমার হুর পরী বউ।

ফাতেমা – ধেত..লজ্জা দিয়ো না তো।।।

মাহিন- এই তো আবার “তুমি ” বলেছো।আলহামদুলিল্লাহ।

ফাতেমা –হয়েছে মশাই এতো ঢং করতে হবে না।

মাহিন– আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিলাম তাই না??জানি সেই কষ্টের দাম আমি সারা জীবনেও দিতে পারবো না।কিন্তু তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি ,যতদিন পৃথীবিতে বেচে আছি তোমাকে আর কোনদিন কষ্ট দেবো না।বুকের ভিতর আগলে রাখবো।

ফাতেমা — -এটা তুমি কি বলছো??আমি আগের দিনের কথাগুলো আমার স্মৃতি থেকে মুছে ফেলেছি।আর কোনদিন সেই কথা আমি মনে করতে চাই না।
আর তুমি হেদায়েতের পথে ফিরে এসেছো এর জন্য আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া ।আলহামদুলিল্লাহ।

মাহিন- এই রে কথা বলতে বলতে তো ভুলেই গেছিলাম একটা জিনিসের কথা।

ফাতেমা — কি??

মাহিন– তুমি বসো আমি ১মিনিটের মধ্যে আসছি।

এই বলে মাহিন গাড়িতে রাখা পদ্ম ফুল গুলো আনতে গেলো।
ফাতেমা ঘরে বসে রয়েছে।
মাহিন কিছুক্ষন পর ফুল গুলো হাতের পিছনে করে নিয়ে এলো ঘরে।

ফাতেমা – তোমার হাতে এগুলা কি??লুকিয়ে রেখেছো কেন???

মাহিন –আগে চোখ বন্ধ করো।তারপর দেখাচ্ছি।

ফাতেমা — চোখ বন্ধ করবো কেন??

মাহিন– আরে করোই না।করো তো!

ফাতেমা চোখ বন্ধ করলো।

মাহিন ফাতেমার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো–Oh my hur pori this is for you from your রাগি মশাই।।

ফাতেমা চোখ খুলে তার প্রিয় পদ্মফুল দেখতে পেলো।

ফাতেমা–আ….পদ্ম ফুল!!!!!এটা তো আমার প্রিয় ফুল।
তুমি জানলে কি করে???আমি তো কোনদিন তোমাকে বলি নি।

মাহিন–আমি আরো অনেক কিছুই জানি আমার হুর পরী যা তুমি আমাকে বলো নি।
Sorry ফুল গুলো একটু মুছড়ে গেছে।অনেক্ষন হয়ে গেছে তো তাই।

ফাতেমা – তাতে কি হয়েছে।এতে তো তোমার ভালোবাসা আছে।এটাই আমার জন্য অনেক কিছু বুঝেছো রাগি মশাই।??হিহিহি

মাহিন- হুম মহারানী বুঝেছি।হিহিহি

আজ মাহিন আর ফাতেমা দুজনেই খুব খুশি।এতোদিন কষ্টের পর আল্লাহ তাদের জীবনে খুশি দিয়েছেন।

ফাতেমা — আচ্ছা বাবা, মা ,মহিমা,নুরি ,ওরা সবাই কেমন আছে???

মাহিন– আলহামদুলিল্লাহ।সবাই ভালো আছে।

ফাতেমা – অনেকদিন ধরে ওদেরকে দেখি না।খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

মাহিন– এই জন্যই তো তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।ওরাও তোমাকে খুব মিস করছে।মা বাবা তো সারাদিন তোমার কথা বলে।

ফাতেমা – আমারো খুব মন খারাপ করে বাবা মায়ের জন্য।

মাহিন- বাসায় চলো তারপর তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

ফাতেমা -কি সারপ্রাইজ??

মাহিন–এখন তো বলা যাবে না।সারপ্রাইজ কি আগে থেকে বলা যায়??

ফাতেমা – ঠিক আছে।বাসায় গিয়েই দেখবো কি সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য।
কিন্তু একটা কথা বলতে পারি আজ যে সারপ্রাইজ আমি পেয়েছি সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা সারপ্রাইজ।

মাহিন- -তা কেমন লাগলো আমার আজকের সারপ্রাইজ???

ফাতেমা – অতুলনিয়।

মাহিন- আচ্ছা আমাদেরকে তো বাসায় ফিরতে হবে।তাই তাড়াতাড়ি তোমার বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বিদায় নিতে হবে।
চলো উনাদেরকে বলে আসি।

ফাতেমা – আজি চলে যাবো???
ফাতেমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো।

মাহিন- হুম।অনেকদিন তো হয়ে গেলো এখানে আছো।এবার তো তোমার নিজের বাড়িতে ফিরতে হবে।

চলো বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে আসি।

এই বলে মাহিন আর ফাতেমা ড্রয়িং রুমে উনাদের কাছে গেলো।

রফিক – কি বাবা মাহিন ফাতেমার রাগ কমেছে???

মাহিন- আমার বউয়ের কি আর রাগ আছে???ওর তো কোন রাগই নেই।তাহলে রাগ করবে কি করে আমার উপর।

হাসান– তা তুমি ঠিক বলেছো।আমাদের. পুচকির রাগ সাগ একটু কম। ও কারোর উপর রাগ করতেই পারে না।

মাহিন– ঠিক বলেছেন ভাইয়া।
আচ্ছা যেটা বলার জন্য এলাম।বাবা,মা, আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আজি ফাতেমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।আর ফিরতে তো অনেক দেরি হবে তাই তাড়াতাড়ি রওনা দিলে ভালো হয়।

খাদিজা—এটা কি বলছো বাবা।এতো দিন পর এসেছো আবার এতো জার্নি করে এসেছো আজ কি করে চলে যাবে??

মাহিন– না মানে…

রফিক- –কোন না মানে নেই।আজ তোমাদের যাওয়া হবে না।যদি যেতে হয় দুদিন পরে যাবে।

মাহিন—কিন্তু আমি তো থাকার জন্য কোন জামা কাপড় আনি নি।

হাসান– তাতে কি হয়েছে।আমার গুলো তুমি পড়বে।তাতে যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।কারন তোমার জামাকাপড় আর তোমার জামাকাপড়ের সাইজ একি।

মাহিন– না না ভাইয়া আপত্তি থাকবে কেন??

রফিন- তাহলে তো হয়েই গেলো ।দুদিন থেকে তারপর যাবে।

মাহিন– ঠিক আছে।যেহেতু আজ যাওয়াই হবে না তাই ভাবছি ফাতেমাকে নিয়ে ঘুরে আসি।আমরা কি যেতে পারি।??

রফিক- হুম অবশ্যই।যেখানে খুশি সেখান থেকে ঘুরে এসো।

মাহিন আর ফাতেমা ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে মহা খুশি।

ফাতেমা আর মাহিন রুমে গিয়ে তৈরী হয়ে নিলো।
ফাতেমা –আচ্ছা রেডি তো হলাম কিন্তু কোথায় যাবো আমরা??

মাহিন– তোমার সেই প্রিয় জায়গাটায়।নদীর পাড়ে।

ফাতেমা – সত্যি??কিন্তু ঐ জায়গাটা তো তোমার কাছে বোরিং লেগেছিলো।তাহলে আজ আবার ঐ জায়গায় কেন যেতে চাচ্ছো??

মাহিন– হুম বোরিং লাগতো।কিন্তু আমার না ।আগের মাহিনের বোরিং লাগতো।কিন্তু আমি তো আর আগের মাহিন নেই।তাই ফাতেমার যা প্রিয় এখন মাহিনেরও সেটাই প্রিয়।
বুঝেছো হুর পরী??

ফাতেমা — বুঝেছি রাগি মশাই।আচ্ছা আমাকে হুর পরী ডাকো কেন??

মাহিন– হুরের মতো সুন্দরি বউকে তো হুর পরীই ডাকবো।কেন নামটা কি পছন্দ হয় নি???

ফাতেমা — কি বলছো গো??পছন্দ হবে না কেন অনেক পছন্দ হয়েছে।হিহিহি

মাহিন– তাহলে তাড়াতাড়ি চলো।নয়তো আসরের নামাযের দেরি হয়ে যাবে।নামাযের আগে তো ফিরে আসতে হবে।

ফাতেমা – হুম।চলো।

মাহিন ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি আর বাইরে বের হওয়ার দোয়া পড়ে নিলো।আর বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে বের হলো।
ফাতেমা সেটা লক্ষ্য করলো।এটা দেখে ফাতেমা খুশি হলো।কারন সত্যিই মাহিন নিজেকে পরিবর্তন করেছে।আজ ফাতেমা মহা খুশি।

মাহিন ঘর থেকে বেরিয়ে গাড়ি না নিয়ে রিকশা ডাকতে গেলো।

ফাতেমা — একি, গাড়ি করে যাবে না??

মাহিন– না কেন??রিকশা দিয়ে যাবো।

ফাতেমা –তোমার না রিকশায় উঠলে ভালো লাগে না।তাই বললাম।

মাহিন–ও আমার হুর পরী তোমাকে তো বলেছিই আমি আর আগের মাহিন নেই।এখন তোমার যা পছন্দ আমারো তাই পছন্দ।

ফাতেমা মাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
মনে মনে ফাতেমা ভাবছে-একি সেই মাহিন ,যে কিনা কয়েক মাস আগেও আমাকে সহ্যই করতে পারতো না।আর আজ কিনা আমার যা পছন্দ তারও তাই পছন্দ।

মাহিন– তুমিও তো বলেছিলে তোমার খুব ইচ্ছা ছিলো “তুমি আমি রিকশায় বসে ঘুরবো।তুমি কালো বোরকা পড়বে আর আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়বো।দুজনকে একসাথে দেখে কতো ভালো লাগবে।
দেখো আজ আমি আর তুমি দুজনই সুন্নতি পোষাকে আছি।আজ তোমার এই ইচ্ছাটাও পূরন হলো।তাই না হুর পরী??

মাহিনের কথা শুনে ফাতেমার আনন্দে চোখে পানি এসে গেলো।এটাই তো চেয়েছিলো ফাতেমা।

মাহিন– আস্তে আস্তে তোমার সব ইচ্ছা পূরন হবে ইনশাআল্লাহ।

ফাতেমা –ঠিক আছে মশাই।এবার তাড়াতাড়ি চলো।নয়তো দেরি হয়ে যাবে।

মাহিন একটা রিকশা ডাকলো।ওমা একি অবাক কান্ড ।মাহিন আর ফাতেমা প্রথম সেদিন যে রিকশা করে নদীর পাড় গিয়েছিলো আজো সেই রিকশাওয়ালা মামাটা এলো।
মাহিন আর ফাতেমা ওনাকে দেখে চিনে ফেললো।
রিকশাওয়ালা মামাটাও ওদেরকে দেখে চিনে ফেললো।

মাহিন আর ফাতেমা রিকশায় উঠলো।
রিকশায় ওঠে তারা ওনার সাথে কথা বললো।
রিকশা চলছে।

মাহিন– মামা আমাদেরকে চিনতে পেরেছেন??

রিকশাওয়ালা- – – – -হ বাজান চিনতে পারছি।তোমাগরে কি কইরা ভুলি??বাজান তুমি ঐ দিন ১ হাজার টেকা দিছিলা ।ঐ দিন আমি খুব অসুস্থ ছিলাম।আর সারাদিন রিকশা চালাইতে পারি নাই।তারপর তাড়াতাড়ি বাড়ি চইলা গেছিলাম।রাইতের বেলা আমার খুব শরীল খারাপ হইছিলো।তারপর ডাক্তারের কাছে গেছিলাম।ডাক্তার মেলা টেকার ওষুদ কিনতে দিছিলো।বাজান ঐদিন তুমি যদি টেকাটা না দিতা তাইলে আমি বিনা চিকিৎসায় মারা যাইতাম।কারন ঐদিন তোমার দেওয়া টেকাটা ছাড়া আর কিছু ছিলো না।তোমাগো আল্লাহ সুখে রাখুক।

মাহিন– দোয়া করেন মামা।

রিকশাওয়ালা– তোমার ঐ সময় দাড়ি ছিলো না।এহন দাড়ি রাখছো।খুব ভালা লাগতাছে তোমারে।খুব খুশি হইলাম বাজান।আর সুন্নতি কাপড়ও পড়ছো।খুব ভালা লাগতাছে।

ফাতেমা ওদের দুজনের কথা শুনছে।

মাহিন ফাতেমার হাত ধরে বসেছে আছ।
ফাতেমা আজ নিজেকে বড্ড সুখি মনে করছে।
মনে হচ্ছে যেন তার স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

কিছুক্ষন পর তারা পৌছে গেলো।
রিকশা থেকে নেমে মাহিন ভাড়া দিতে যাবে এ সময় রিকশার মামা বলে আরে আরে বাজান কি করতাছো আজ তোমাগো ভাড়া দিতে হইবো না।

ফাতেমা – কিন্তু মামা ভাড়া না দিলে কি করে হবে।

রিকশাওয়ালা– আরে হইবো মা হইবো।ঐদিন তুমি আমারে বলছিলা যাতে আমি তোমারে নিজের মেয়ের মতো মনে কইরা টাকাটা নেই।আজ মনে করো আমি আমার মেয়েরে একটু খানি রিকশা দিয়া ঘুরাইলাম।
তাই মেয়ের কাছ থাইকা কি আমি টাকা নিতে পারি???
শুধু এই মামাটারে মনে রাইখো তাইলেই হইবো।

ফাতেমা – ঠিক আছে মামা।আপনার কথাই রাখলাম।মামা আপনি যেখান থেকে আমাদেরকে নিয়ে এসেছেন এখানেই আমার বাসা।যদি কোন দিন এই মেয়েটাকে প্রয়োজন মনে করেন তাহলে লজ্জা না পেয়ে সব বলবেন।আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

রিকশাওয়ালা–অবশ্যই।তাইলে আজকে আমো যাই।

রিকশাওয়ালা মামা বিদায় নিলো।

মাহিন ফাতেমার হাত ধরে হাটতে লাগলো।
আজ মাহিনকে ফাতেমার হাত ধরাে কথা বলতেও হয় নি।মাহিন নিজে থেকেই হাত ধরেছে।

দুজনে হাত ধরে অনেক্ষন হাটল ।লাস্টে মাহিন বিরিয়ানির দোকান দেখতে পেলো।

–হুর পরী চলো তোমাকে তোমার প্রিয় জিনিস খাওয়াবো আজ।

ফাতেমা–কি খাওয়াবে??

মাহিন- চলোই না।তারপর দেখতে পাবে।

মাহিন ফাতেমাকে বিরিয়ানির দোকানের সামনে নিয়ে গেলো।

ফাতেমা– বিরিয়ানি!!!!!!
তুমি কি করে জানলে এটা আমার প্রিয় খারার??

মাহিন– আমি সব জানি।চলো আগে বিরিয়ানি খাই।আমার খিদে পেয়েছে।এতো দিন পর শ্বশুড় বাড়ি এলাম কেউ কিছু খেতেও দিলো না।
হিহিহিহি

ফাতেমা — ও তাই??আমি তো ভেবেছি আমার সাথে কথা বলেই তোমার পেট ভরে গেছে।আচ্ছা বাড়ি চলো দেখবো তুমি কতো খেতে পারো।
হিহিহিহি

ফাতেমা আর মাহিন দোকানে বসে বিরিয়ানি খেলো।
ফাতেমা যখন নিকাপের নিচ দিয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছিলো আশে পাশের বেপর্দা মহিলা আর মেয়েরা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলো।

আর পর্দা করে নিকাবের নিচ দিয়ে খাবার খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা।এই আনন্দটা একমাত্র পর্দাশীল নারীরাই পেয়ে থাকে।

ফাতেমাও ওদেরকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলো।

ফাতেমা আর মাহিন খাবার খেয়ে আরেকটু হাটাহাটি করে বাসায় চলে এলো।
বাসায় আসতেই আসরের আযান পড়ে গেলো।
মাহিন ,রফিক সাহেব,আর হাসান নামায পড়তে মসজিদে চলে গেলো।
এদিকে ফাতেমা ,আবিদা,নুরি আর খাদিজা বেগমও নামায পড়ে নিলো।
নামায পড়ে সবাই আজ রান্না ঘরে একসাথে নাস্তা তৈরী করছে।আজ সবার চোখে মুখে আনন্দের হাসি।এতো দিন ফাতেমার কষ্টের জন্য কেউ কোন আনন্দ করতে পারে নি।আজ ফাতেমা খুশি তাই সবাই খুশি।

ওদিকে তারা তিনজন নামায পড়ে মসজিদ থেকে চলে এলো।

যেহেতু আবিদা পর্দা করে তাই সে মাহিনের সামনে যায় নি।
নুরি সব নাস্তা ড্রয়িং রুমে দিয়ে এলো।
আবিদা ছাড়া সবাই ড্রয়িং রুমে বসে নাস্তা করছে।

ফাতেমার এটা ভালো লাগে নি।কারন সবাই একসাথে আনন্দ করে নাস্তা করবে আর তার বান্ধবি একা একা ঘরে বসে থাকবে।
তাই ফাতেমা নাস্তা নিয়ে আবিদার রুমে গেলো।

ফাতেমা সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো।
আবিদা সালামের জবাব দিলো।

আবিদা– কিরে ফাতেমা ওখান থেকে চলে এলি কেন???সবাই তো ওখানে আছে।

ফাতেমা — সবাই ওখানে বসে আনন্দ করবো আর তুই এখানে একলা একলা বসে থাকবি??আমার বান্ধবিটা একা বসে থাকবে আর আমি একা একা মজা করবো???

আবিদা– সত্যি তুই অনেক ভালো রে।তোর মতো বান্ধবি সেই সাথে ননদ পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।তুই চলে গেলে তোকে খুব মিস করবো রে।কিন্তু আমি চাই তুই মাহিনের সাথে সুখে থাক।
বুঝলি ননদিনি।
এই বলে আবিদা ফাতেমার গাল টেনে দিলো।
দুই বান্ধবি অনেক্ষন কথা বললো।

এশার নামায পড়ে খাবার খেয়ে মাহিন আর ফাতেমা নিজেদের রুমে এলো।

মাহিন –আচ্ছা চলো না তোমাদের ছাদ থেকে ঘুরে আসি।

ফাতেমা– ছাদে যাবে??তাহলে চলো।

মাহিন– তাহলে তাড়াতাড়ি বোরকাটা পড়ে নাও।

ফাতেমা অবাক হয়ে চেয়ে আছে মাহিনের দিকে।কয়েকমাস আগেও যে ছেলে পর্দা করা নিয়ে উপহাস করতো।পর্দা করা নিয়ে তাকে কটু কথা বলতো সে ছেলে আজ নিজেই ছাদে যাওয়ার জন্য পর্দা করে যেতে বলছে।
ফাতেমার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেলো যেদিন প্রথম সে মাহিনকে নিয়ে ছাদে আসার সময় বোরকা পড়ছিলো তখন মাহিন তাকে অনেক কটু কথা বলেছিলো।
আজ সে নিজেই বোরকা পড়ার কথা বলছে।

মাহিন– কি হলো কি ভাবছো??

ফাতেমা – কিছুনা।
সে বোরকা পড়ে নিলো।

মাহিন আর ফাতেমা ছাদে গেলো।
আকাশে চাঁদ উঠেছে।পুর্নিমার চাঁদ।
চারদিক আলো ঝলমল করছে।
মাহিন ফাতেমার সামনে হাটু গেড়ে বসে একটি আংটি বের করে বললো
আধো আলো চাঁদ ,ধরো দুটি হাত

কাছে এসেছি

তুমি আমাকে ,আমি তোমাকে

ভালোবেসেছি

চলো না যাই হারিয়ে

ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে

ও আমার হুর পরী এটা তোমার জন্য।

ফাতেমা–বাহ্ ভালো কবিতা লিখেছো তো।
এ দাড়াও দাড়াও ।এটা তো আমার লেখা কবিতা।

তুমি কোথায় পেলে???হুমম??…
ফাতেমা কমরে হাত দিয়ে একটা ভাব নিয়ে বললো।

চলবে ইনশাআল্লাহ……

কমেন্ট প্লিজ বন্দুরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here