#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================
❝ ফিরে_আসা ❞
———————-
লেখিকা- Umma Hurayra Jahan
পর্ব-৫১
তুমি এটা কোথায় পেলে ??হুম???
কমরে হাত দিয়ে একটা ভাব নিয়ে ফাতেমা মাহিনকে কথাটা বললো।
ফাতেমা– এই যে মশাই কি হলো বলছো না কেন??
মাহিন–আগে আংটি টা তো পড়ো ।তারপর বলছি।
দাও তোমার হাতটা দাও।
এই বলে মাহিন ফাতেমার হাত ধরে আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।
ফাতেমা — এবার বলো আমার কবিতা তুমি কোথায় পেলে??
মাহিন — না মানে……তোমার ডায়েরি টা আমি…
ফাতেমা –ও হো তাইতো বলি আমার মশাই আমার পছন্দের ফুলের কথা জানলো কি করে??আমার পছন্দের খাবারের কথা জানলো কি করে???
মাহিন– হুম আমার হুর পরী ।তোমার ডায়েরি থেকেই সব জেনেছি।
জানো তোমার ডায়েরি পড়েই নিজেকে তোমার মনের মতো গড়ে তুলেছি।তুমি জীবন সঙ্গী হিসেবে যেমন চেয়েছিলে নিজেকে ঠিক তেমন ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।
ফাতেমা —- শুধু আমার জন্যই নিজেকে পরিবর্তন করেছো??আল্লাহর জন্য না???
মাহিন– আল্লাহর জন্য তো অবশ্যই।কারন তিনি আমাদের সৃষ্টি কর্তা ।তাঁর ইবাদতের জন্য তিনি আমাদের পৃথীবিতে পাঠিয়েছেন।তাঁর জন্য তো অবশ্যই নিজেকে পরিবর্তন করতেই হবে।তাঁর আদেশ পালন করাই আমাদের কর্তব্য।তা না হলে তো আমরা আখিরাতে জান্নাত লাভ করতে পারবো না।
কিন্তু তোমার ডায়েরিটা আল্লাহর রাস্তায় আমাকে আনতে অনেকটাই সাহায্য করেছে।
বুঝেছেন হুর পরী???
ফাতেমা — জ্বী মশাই বুঝেছি।
আচ্ছা একটা কথা বলবো??
মাহিন– একটা কেন হাজারটা বলো।কিন্তু চলো তুমি দোলনায় বসো আমি দোলনা দোলাই।
ফাতেমা — তোমাকে দোলাতে হবে না মশাই।চলো দুজনে একসাথে বসি।
দুজনে একসাথে দোলনায় বসলো।
ফাতেমা মাহিনের বুকে মাথা রেখে বসলো।
মাহিন– এবার বলো কি বলবে???
ফাতেমা –আচ্ছা ঐ মিমির কি হলো??ও তোমার পিছু ছাড়লো কি করে???
মাহিন মিমির কথা শুনে একটু রেগে গেলো।
মাহিন– ঐ নোংরা মেয়েটার নাম আর কোনদিন মুখে আনবে না।ওর জন্য আমাদের সংসারটা ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছিলো।ওর নাম আমি কোন দিন শুনতে চাই না।
ফাতেমা — প্লিজ রাগ করো না ।একটু শান্ত হও।প্লিজ বলো না কি করে পিছু ছাড়লো তোমার???
মাহিন ফাতেমাকে সব ঘটনা খুলে বললো।
ফাতেমা — হে আল্লাহ !!!মিমির জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত দান করুন।
মাহিন– এটা ছাড়া ওর জন্য আর কিছুই করার নেই।
বাদ দাও ওর কথা।ওর কথা মনে করে আমাদের সুন্দর দিনটা নষ্ট করতে চাই. না।
ফাতেমা –ঠিক আছে মশাই।হাহাহা
অনেক্ষন ছাদে সময় কাটিয়ে ঘরে এসে দুজনে ঘুমিয় পড়লো।
তাহাজ্জতের সময় হয়ে গেছে।ফাতেমা ঘুম থেকে উঠে পড়লো।ফাতেমার সাথে সাথে মাহিনও উঠে পড়লো।
ফাতেমা মাহিনকে সালাম দিয়ে বললো–কি ব্যাপার তুমি ঘুম থেকে উঠেছো কেন??
মাহিন– কেন আবার আমি তাহাজ্জত পড়বো তোমার সাথে।তাই উঠেছি।
ফাতেমা — কি? তুমি তাহাজ্জত পড়বে??
মাহিন– জ্বি মহারাণী।আমি গত কয়েক মাস ধরে রোজ তাহাজ্জতের নামায পড়ি।
ফাতেমা মাহিনের কথা শুনে আবাক হয়ে গেলো।
–সত্যি বলছো তুমি??
মাহিন– জ্বী হুরপরী সত্যি বলছি।কারন তাহাজ্জতের নামাযে যে কি শান্তি সেটা আমি যেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকে রোজ পড়ি।
ফাতেমা –আলহামদুলিল্লাহ।
ফাতেমা আল্লাহর কাছে কিভাবে যে শুকরিয়া আদায় করবে তা সে বুঝতে পারছে না।
মাহিন– এবার তাড়াতাড়ি ওযু করে এসো ।দুজনে একসাথে নামায পড়বো।
ফাতেমা আর মাহিন ওযু করে এসে একসাথে নামাযে দাড়ালো।
আজও নামাযে ফাতেমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কিন্তু সে পানি দুঃখের না ।বহু প্রতিক্ষার পর পাওয়া এক বর্ননাহীন সুখের ।যা ফাতেমা মনে মনে আল্লাহর কাছে চাইতো।
ফাতেমা মোনাজাতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।
–হে আল্লাহ নিশ্চই তুমি তোমার বান্দাদের দোয়া ব্যার্থ হতে দাও না।তুমি তোমার বান্দার দোয়া কবুল করো।হে আল্লাহ তোমার কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া।
ফাতেমা একটা কথা মনে পড়ে গেলো সূরা বাকারার. ১৮৬ নং আয়াতে আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন ““আর আমার বান্দা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে ;আমি তো তার কাছেই আছি।আমি দোয়া কবুল করি, যখন সে আমার কাছে দোয়া করে
।আল্লাহ পাক দোয়া কবুল করতে ভালোবাসেন ।তাঁর কাছে দোয়া করলে তিনি খুশি হন ।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন““তোমরা ভয় আর আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকো;নিশ্চই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।{সূরা আরাফ:৫৬}
আশা রেখেছিলো বলে আজ ফাতেমার দোয়া কবুল হয়েছে।
মাহিন নামায শেষ করে দেখে ফাতেমা মোনাজাতে চোখের পানি ঝড়াচ্ছে।
মাহিন এতোক্ষন ফাতেমার দিকে চেয়েই রয়েছে।
ফাতেমা মোনাজাত শেষ করে দেখে মাহিন তার দিকে চেয়ে আছে।
ফাতেমা ছলছল চোখ নিয়েই মাহিনের দিকে চেয়ে একটা হাসি দিলো।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন??
মাহিন– তোমাকে দেখছিলাম।
আচ্ছা তুমি কাদছো কেন??আমার কোন কথায় কি কষ্ট পেয়েছো।??
ফাতেমা –আরে বোকা এটা সুখের কান্না।এতোদিনে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।
মাহির– জানো আমি এক বইয়ে পড়েছিলাম যে সংসারে স্বামী স্ত্রী একসাথে তাহাজ্জত পড়তে সে সংসারে কোন দিন অশান্তি হবে না ।তাই আমরা প্রতিদিন একসাথে তাহাজ্জত পড়বো।
ফাতেমা –হুম তুমি ঠিকি বলেছো।স্বামী স্ত্রী একসাথে তাহাজ্জত পড়লে ঘরে শান্তি বিরাজ করে।
মাহিন ফাতেমার গাল ধরে বললো ও আমার হুর পরী এখন থেকে দুজনে একসাথে সংরারে শান্তির জন্য আর দুজনে যাতে একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি সেজন্য যা যা আমল করার দরকার তাই করবো।
.ফাতেমা — ঠিক আছে মশাই।হিহিহি
এর মধ্যেই আযানের সুমধুর মিষ্টি ধ্বনি এদে কানে বাজলো।
দুজনে মিলে আজানের জবাব দিলো আর আযানের দোয়াটা পড়ে নিলো।
মাহিন– আযান পড়ে গেছে ।আমি মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে আসি।তোমার বাবা আর হাসান ভাইয়াও তো এখন মসজিদে যাবে মনে হয়।আমি উনাদের সাথেই যাই।তুমি নামায পড়ে নাও।
এই বলে মাহিন রুম থেকে চলে গেলো।
ফাতেমার একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।
কারন মাহিন যেহেতু এতকিছু করছে ফাতেমার জন্য তবুও আরেকটা গুরুত্বপুর্ন কাজ ভুলে গেছে।
ফাতেমা একটু দুঃখি হয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর মাহিন আবার ফাতেমার রুমে ফিরে এলো।
ফাতেমা –একি ফিরে এলে কেন???
মাহিন– সরি হুর পরী।একটা important কাজ ভুলে গেছিলাম।।
এই বলে মাহিন ফাতেমার কাছে গিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো।
এটাই সেই important কাজ বুঝলে হুর পরী??এই বলে মাহিন ফাতেমাকে চোখ টিপ মারলো।
ফাতেমা লজ্জা পেয়ে গেলো।
ফাতেমা মনে মনে এটার কথাই বলছিলো।
মাহিন আবার মসজিদে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফাতোমা – -আয় ..হায়…আমার রাগি মশাইটা আস্ত একটা বুদ্ধুরাম।হিহিহি
ফাতেমা নিজেও নামায পড়ে নিলো।নামায শেষে কুরআনও পড়ে নিলো।
মাহিন,হাসান আর রফিক সাহেবের আসতে একটু দেরি হচ্ছে।মনে হয় হাটতে গেছে কোথাও
নামায পড়ে রান্না ঘরে মাকে রান্নার কাছে সাহায্য করতে গেলো।
সেখানে রিনা ,আর, আবিদাও ছিলো।
সবাই বেশ আনন্দ করেই নাস্তা তৈরী করলো।
এভাবেই দেখতে দেখতে দুদিন পার হয়ে গেলো।এবার ফাতেমাকে ফিরতে হবে তার আপন গৃহে।ফাতেমাকে তার শ্বশুড় বাড়ি যেতে হবে।
মাহিন — বাবা ,মা, ভাইয়া আমরা তাহলে আসি।আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
রফিক– বাবা মাহিন এখন তো সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে।দেখো বাবা আমার মেয়েটাকে আর কষ্ট দিয়ো না।বিগত কয়েক মাসে অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার মেয়েটা।তুমি ওকে আর কষ্ট দিয়ো না।
মাহিন— আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি বাবা।দেহে যতদিন প্রাণ আছে আর আল্লাহ যদি তৌফিত দেন তাহলে ফাতেমাকে যথাসম্ভব সুখে রাখার চেষ্টা করবো
ইনশাআল্লাহ।
ফাতেমা –আসি আমরা।আমাদের জন্য দোয়া করো তোমরা।
ওদিকে ফাতেমা চলে যাচ্ছে বলে আবিদা অনেক কান্না করছে নিজের রুমে বসে।
রিনা– ফাতেমা বুবু তুমি চইলা যাইতাছো বইলা ভাবি তো কানতাছে।
ফাতেমা মাহিনকে একটু দাড়াতে বললো।
–তুমি একটু দাড়াও আমি পাগলিটাকে একটু শান্ত করে আসি।খালি ছোটদের মতো কান্না করে।
এই বলে ফাতেমা আবিদার রুমে গেলো।
ফাতেমা রুমে যেতেই ফাতেমাকে দেখে আবিদা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
ফাতেমা –আরে পাগলি তুই যদি এভাবে কান্না করিস তাহলে কি আমি খুশি মনে যেতে পারবো বল তো???
আবিদা কান্না করতে করতে বললো –তোকে খুব মিস করবো রে ।খুব খারাপ লাগছে তো জন্য।
ফাতেমারও খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু সে যদি কান্না করে আবিদা আরো ভেঙে পড়বে। তাই কান্নাটা চেপে রেখেছে ফাতেমা।
ফাতেমাে–ধুর পাগলি।আমি একে বারের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি??আমি তো কদিন পর পর বেড়াতে আসতো।আর প্রতিদিন তো ফোন দিবো।তাই এখন কান্না থামা।না হলে তো আমি যেতে পারবো না।
আবিদা কান্না থামিয়ে ফাতেমাকে হাসি মুখে কথা বললো।
ফাতেমা– সত্যিই রে তোর মতো ভাবি আর বান্ধবি পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।আল্লাহ তোকে সারা জীবন হাসি খুশি রাখুক।
আচ্ছা এখন আমি যাই।না হলে পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
আবিদা– হুম ঠিক আছে।ভালো থাকিস ।দোয়া করি।
ফাতেমা সালাম দিয়ে আবিদার কাছ থেকে বিদায় নিলো।
ফাতেমা আর মাহির ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলো।সকাল সকাল রওনা দিয়েছে।না হলে দেরি হয়ে যাবে।
মাহিন আগে থেকে তাদের ঢাকায় যাওয়ার কথা মেহেঘ বেগম আর বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলো।
তাই ও বাড়িতে ফাতেমা এতো দিন পর ফিরছে বলে তোড়জোড় চলছে নানা আয়োজনের।
নুরি ফাতেমা যা যা খেতে পছন্দ করে তা রান্না করে রেখেছে।ঘর বাড়ি সব পরিস্কার করে গোছানো হয়েছে।
নানা আয়োজন করা হয়েছে সে বাড়িতে।
মাহিনদের বাড়ি পৌছাতে পায় দুপুর হয়ে গেলো।
ফাতেমা এতো দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরেছে তাই এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করছে তার মাঝে।
কলিং বেল বাজাতেই সবাই বুঝতে পেরে গেছে মাহিন আর ফাতেমা এসে গেছে।আজ ফাতেমা আসবে বলে আরমান সাহেবও অফিসে যান নি।
সবাই একসাথে হলো।মানে আরমান সাহেব ,মেহেঘ বেগম,মহিমা আর নুরি একসাথে দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে সালাম দিয়ে ফাতেমা আর মাহিনের উপর গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দিয়ে বললো ““Welcome home ””
ফাতেমা আর মাহিন সালামের জবাব দিলো।
ফাতেমা তো অবাক এমন ভাবে তাকে স্বাগত করেছে দেখে।
মেহেঘ বেগম হাত ধরে ফাতেমাকে ঘরে নিয়ে এলো।
সবার চোখে মুখে আনন্দের ছোয়া।সবাই আজ অনেক খুশি।
মেহেঘ– আমার ফাতেমা মা টা এসে গেছে।কত দিন ধরে তোকে দেখি নি।তুই এখানে বস ।আগে তোকে প্রাণ ভরে দেখে নিই।
আরমান– এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে যেন তুমিও শুধু দেখো নি আর আমরা মনে হয় ওকে প্রতিদিন দেখেছি???তুমি সরো।আমি আগে আমার ফাতেমা সাকে দেখবো।
মহিমা — ইশ…তোমরা সরো তো ।আমি আগে ভাবির সাথে কথা বলবো।কত দিন পর দেখলাম।
ফাতেমাকে নিয়ে সবাই কাড়াকাড়ি শুধু করে দিয়েছে।
ফাতেমা সবার এমন কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে।
মাহিন– আরে বেচারি এতে দূর থেকে এসেছে।ওকে আগে একটু শান্তিতে বসতে দাও।
মহিমা– এই তুই যা তো এখান থেকে।তোকে কে মাতাব্বরি করতে বলেছে।
এই বলে মহিমা মাহিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
মাহিন– যা..বা বা ..ভাবিকে পেয়ে এখন ভাইকে ভুলে গেলি??
নুরি ফাতেমার জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে এলো।
নুরি–ভাবি আগে শরবত খাইয়া লন ।তারপর সবকিছু।
ফাতেমা –আচ্ছা বাবা ,,মা তোমরা ছোটদের মতো কি শুরু করলে বলো তো??হিহিহি।আমার তো হাসি পাচ্ছে।
মেহেঘ– না মানে এতোদিন পর তোকে দেখলাম তো তাই নিজেদেরকে আর সামলে রাখতে পারছি না।
ফাতেমা –সেটা তো বুঝলাম।কিন্তু আমাকেও তো একটু সুযোগ দিবে তোমরা কেমন আছো সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য।
আরমান–আমরা ভালো আছি রে মা।তোকে দেখে মনটা আরো ভালো হয়ে গেছে।
মাহিন দুরে দাড়িয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে সব দেখছে।আর মনে মনে ভাবছে““এমন হাসি খুশি পরিবারটাই তো আমি দেখতে চেয়েছিলাম।আজ আবার আমার পরিবারে শান্তি আর সুখ ফিরে এলো।
যোহরের আজান দিয়ে দিলো।
মহিমা– ভাবি তুমি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে নাও।তারপর কথা হবে।
ফাতেমা–ঠিক আছে।তোমরা সবাইও নামাযের জন্য তৈরী হও।আর নামাযটা পড়ে নাও।
ফাতেমা নিজের রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।
রুমটা যেন নতুন রূপে সেজে ওঠেছে।মাহিন তার আজেবাজে জিনিস গুলো ফেলে দিয়ে তার বুক সেল্ফ ইসলামিক বই দিয়ে সাজিয়েছে।
দেয়ালে আয়াতুল কুরসির একটি ওয়ালমেট টাঙানো।আরেক দেয়া কালেমা তাইয়্যিবার ওয়ালমেট টাঙানো।আরো অনেক সুন্দর করে সাজানো রূমটা।একদম ফাতেমার মনের মতো।
এবার এই রুমটা দেখে মনে হচ্ছে কোন মুসলিম ব্যাক্তির রুম।
ফাতেমার খুব পছন্দ হলো।
—-বাহ্ রাগি মশাই রুমটা এতো সুন্দ করে কে গোছালো???
মাহিন– কে আবার গোছাবে আমি গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।কেন পছন্দ হয়েছে???
ফাতেমা –খুব পছন্দ হয়েছে।
মাহিন– তাহলে তো আমি স্বার্থক।কারন আমার হুরপরীর রুমটা পছন্দ হয়েছে।
ফাতেমা –ঠিক আছে স্বার্থক সাহেব।এবার আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।তারপর তুমি ফ্রেশ হয়ে মসজিদে যাও।
এই বলে ফাতেমা ফ্রেশ হয়ে নিলো।
মাহিনও ফ্রেশ হয়ে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ফাতেমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল মুছছে গামছা দিয়ে।
ভেজা চুল যেন ফাতেমার সৌন্দর্যকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলো।
মাহিন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাতেমার দিকে।
ফাতেমা–এই যে মশাই এভাবে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছো কেন???
মাহিন–আমার হুরের মতো বউটিকে দেখছি।
ফাতেমা –তাহলে মসজিদে কে যাবে শুনি????
মাহিন– আজ মসজিদে যাবো না।ঘরে তোমার সাথেই নামায পড়বো।
ফাতেমা –একদম না।যাও তাড়াতাড়ি মসজিদে যাও।কারন মসজিদে নামায পড়লে মানে জামাতের সাথে নামায পড়লে ২৭ গুণ সওয়াব বেশি পাবে।বুঝেছো???
মাহিন– বুঝেছি।কিন্তু আমার এক্কান শর্ত আচে বুজ্জুইন নি।
ফাতেমা — তা আফনের কি শর্ত কইনচেন দেহি।হিহিহি
মাহিন– শুনেছি মেয়েরা চুলে শেম্পু করলে অনেক সুন্দর ঘ্রান করে।তো আমি কি আমার মিষ্টি বউটার লম্বা চুলের ঘ্রান নিতে পারি।
ফাতেমা — আচ্ছা তাহলে আমি মাকে ডাক দিই।আর দিয়ে বলি “মা তোমার ছেলে মসজিদে যাওয়ার জন্য আমাকে এই শর্ত দিয়েছে।দাড়াও মাকে ডাকছি।মা….মা…..
মাহিন ফাতেমার মুখ চেপে ধরলো।
-আরে আরে পাগলি বউ আমার ।এসব কথা কি কেউ মাকে বলে।থাক লাগবেনা আমার তোমার চুলের ঘ্রাণ নেওয়া।আমি গেলাম।
কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে বাবা।
এই বলে মাহিন ফাতেমার কপালে টুক করে একটা চুমু দিয়ে ছুটে চলে গেলো।
যাওয়ার সময় বলে গেলো“এটা শোধ কিন্তু আমি নেবো ।মনে থাকে যেন।””
ফাতেমা –হাহাহাহা।আচ্ছা মনে থাকবে।আর তখন আমি আবার মাকে ডাক দেবো।হাহাহা
পাগলা জামাই আমার।
ফাতেমা নামায পড়ে নিলো।নামায শেষে মাহিন আর আরমার সাহেব মসজিদ থেকে ফিরে এলো।
খাবার খাওয়ার যখন সময় হলে তখন ফাতেমা আরেকটা বিষয় দেখে খুব অবাক হলো।
নুরি সব খাবারের প্লেট আর বাকি সব জিনিস ডাইনিং টেবিলে না রেখে ফ্লোরে রাখছে।
ফাতেমা –নুরি তুমি এগুলো ফ্লোরে রাখছো কেন??
নুরি– ভাবি কয়েক মাস ধইরা তো বাড়ির সবাই নিচে বইসা সুন্নতি তরিকায় খাবার খায়।
ফাতেমা — সত্যি বলছো নুরি??
নুরি — হ ভাবি সত্যিই কইতাছি।
ফাতেমার মুখ দিয়ে তখন সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ কথাটি বের হলো
একটু পরে সবাই একসাথে সুন্নতি তরিকায় খেতে বসলো।
সত্যিই এই পরিবারটা নিজেদেরকে পরিবর্তন করেছে।আরো করার চেষ্টা করছে।
পরিবারের এমন উন্নতি দেখে ফাতেমা খুব খুশি।
খাওয়া শেষে সবাই আল্লাহর কাছে শুকিয়া আদায় করলো।
খাওয়া শেষে মাহিন আর ফাতেমা নিজেদের রুমে গেলো।
মাহিন–আমার কিন্তু তোমার উপর অভিমান করেছি হুর পরী।
ফাতেমা– হায় হায় !!!তা শুনি কি দোষ আমার??
মাহিন– ঐ সময় মাকে ডাক দিলে কেন??এমন সময় কেউ মাকে ডাকে???
ফাতেমা –ওলে বাবা লে! !তা এতো অভিমান কোথায় থাকে তোমার???
মাহিন কথা না বলে মুখ ভেংচি দিলো ফাতেমাকে।
ফাতেমে–তা রাগ ভাংতে কি করতে হবে??
মাহিন– দাড়াও ভেবে দেখি তোমাকে কি শাস্তি দেওয়া যায় এটার জন্য??এই বলে মাহিন গালে আঙুল নাড়াতে নাড়াতে ভাবতে লাগলো।
ফাতেমা– আমি কি সাহায্য করবো ভাবতে??
মাহিন– হুম সাহায্য করো।
ফাতেমা– তাহলে তোমার দাড়ি ধরে টান দেই তাহলে বুদ্ধি বের হবে।হিহিহিহি
এই বলে ফাতেমা মাহিনের কাছে গেলো।
হঠাৎ মাহিনের হাতটা ফাতেমার পেটের মধ্যে লেগে গেলো।
ফাতেমার আবার কাতুকুতু আছে অনেক।
তাই হাতটা পেটে লাগতেই ফাতেমা হেসে দিলো।
মাহিন–আপনার শাস্তি আমি পেয়ে গেছি ম্যাডাম।আপনার কাতুকুতু আছে।তাই না??দাড়াও এবার দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে মাহিন ফাতেমাকে ধরে কাতুকুতু দিতে লাগলো।
ফাতেমা হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।
মাহিনও ফাতেমার হাসি দেখে হাসতে হাসতে কাত হয়ে গেছে।
এমন সময় মাহিনের ফোনটা বেজে উঠলো।
মাহিন হাসি থামিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রানা ফোন করেছে।
মাহিন সালাম দিয়ে ফোনটা ধরলো।
রানা সালামের জবাব দিয়ে বললো-মাহিন আজকে তো এক বিশাল কান্ড ঘটে গেছে।
মাহিন– কি হয়েছে ??কি কান্ড??
রানা– তুই কিছু জানিস না??
মাহিন–আরে সোজাসোজি বল না কি হয়েছে??আমি তো কিছুই জানি না।
রানা–আরে ঐ যে মিমি আছে না? ?ওকে কারা যেন মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে দিয়ে গেছে।আর কি করে মরেছে সেটা তো তোকে মুখে বলতে হবে না।নিশ্চই বুঝতে পেরেছিস আমি কি বুঝাতে চাইছি।
মাহিন– হুম বুঝতে পেরেছি।কখন হলো এই ঘটনা??
রানা– আজ সকালে।আজ সারা দিন তো টিভিতে আর ফেসবুকের নিউজ ফিডে ওর খবর দেখাচ্ছে।
পুলিশ তদন্ত করছে।শেষ বারের মতো মিমিকে নাকি কোন এক নাইট ক্লাবে কয়েকজন দেখেছিলো।এর পর থেকে মিমিকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।আজ সকালে এক বস্তির ড্রেনের মধ্যে ওর লাশ পাওয়া গেছে।
পুরো শরীর নখের দাগে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে।দেখেই ভয় লেগেছে আমার।
মাহিন–ও ওর কর্মের ফল পেয়েছে।
রানা–আমি ভেবেছিলাম তুই খবরটা জানিস কিনা তাই ফোন করেছি।আচ্ছা রাখছি।পরে কথা হবে।
মাহিন সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
ফাতেমা — কি বললে তুমি ফোনে??কে তার কর্মের ফল পেয়েছে??কি হয়েছে??
মাহিন—- এক ড্রেনের মধ্যে আজ সকালে মিমির লাশ পাওয়া গেছে।
ফাতেমা — ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।হে আল্লাহ!!!
কিরে করে হলো এসব?
মাহিন– কতগুলো মানুষ রূপি জানোয়ার এটা করেছে।ওরে ছিড়ে খেয়ে মেরে ড্রেনে ফেলে রেখে দিয়ে গেছে।
ফাতেমা একথা শুনে কেঁদে দিলো।
মাহিন– তুমি কাঁদছো কেন??
ফাতেমা– কত ভয়ানক মৃত্যুই না ওর হয়েছে।বেচিরি বাঁচার
জন্য মনে হয় অনেক চেষ্টা করেছে।কিন্তু ওরা ওকে বাচতে দেয় নি।আল্লাহ মিমিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
মাহিন–যে মেয়ে তোমার এতো ব: ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো তুমি তার জন্য কাদছো?
ওর জন্য দোয়া করছো??
ফাতেমা–এটা তুমি কি বললে?
একজন মুমিনের ধর্মই এটা আরেকজনের জন্য দোয়া করা।ও আমার যত বড়ই ক্ষতি করুক না কেন আমি তো তাকে বদ দোয়া দিতে পারি না।।আমি তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যাতে তাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন।
মাহিন– সত্যি তুমি অন্যরকম।হয়েছে মিমির জন্য আর কাদতে হবে না।ও দুনিয়াতে যেমন কর্ম করেছে আখিরাতে তার ফল আল্লাহ নিজে হোক সেটা ভালো বা মন্দ।
তুমি কেদো না।
এই বলে মাহিন ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
এভাবেই সুখে ,আনন্দে হেসে খেলে পার হয়ে গেলো দুইটা বছর।
মহিমা এখন ডাক্তারি পড়ছে।আলহামদুলিল্লাহ পরিপুর্ন পর্দা সহকারেই চলে এখন মহিমা।
এদিকে আজ অ্যাডমিশন টেস্টের রেজাল্ট বের হবে ৩ বান্ধবি ফাতেমা ,আবিদা আর হেন্সির।তারা তিন বান্ধবিই মেডিকেলে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়েছে।
আজ তাদের রেজাল্ট বের হবে।
সবাই খুব টেনশনে আছে।
একবার হেন্সি ফোন দেয় ফাতেমাকে আরেকবার ফাতেমা ফোন দেয় আবিদাকে।আর আবিদা ফোন দেয় হেন্সিকে।
তিনজনের মধ্যে খুব টেনশন কাজ করছে।
সবাই আল্লাহকে ডাকছে মনে মনে।
এদিকে ফাতেমা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে আর আল্লাহকে ডাকছে।
মাহিন– আরে আমার হুর পরী টেনশন করো না তো।দেখবে ঢাকা মেডিকেলেই তোমার চান্স হবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
ফাতেমা — ভরসা তো আছেই।তবুও টেনশন হচ্ছে।কারন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়াশুনার ধারে কাছেও ছিলাম না প্রায় ৫ মাস। যার কারনে সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশুনা নিয়ে প্রচুর খাটতে হয়েছে।আর অ্যাডমিশন টেস্টেও প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে।
কি জানি কি হয়???
মাহিন– যা হবে ভালোই হবে।
ফাতেমা টেনশনে তো আমার মাথা ঘুরছে বমি বমি লাগছে।
ফাতেমা মুখে ধরে বমি করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ফাতেমার এটা অভ্যাস বেশি টেনশন করলে মাথা ঘুরে বমি হয়।
মাহিন — আরে আরে কি হলো তোমার???
চলবে ইনশাআল্লাহ……