ফিরে আসা পর্ব-৬ ৭

0
667

#ইসলামিক_গল্প #ISLAMIC_STORY
===========================

❝ ফিরে_আসা ❞
———————-

লেখিকা: Umma Hurayra jahan

পর্ব: ০৬/০৭

আরমান : তুমি তো জানোই আমি কাল আমার ছোট বেলার বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম ।

মেহেঘ: হু তে?

আরমান: আমি ওকে একটা কথা দিয়ে ফেলেছি

সবাই একসাথে বলে ওঠলো

কি কথা? ???

আরমান: আমি মাহিনের বিয়ের কথা দিয়ে এসেছি

মেহেঘ : What??????

মাহিন আর মহিমা তারা দুই ভাই বোন একে অপরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে

পরিবেশ একেবারে শান্ত হয়ে গেলো ঘরের

মহিমা : জোরে হেসে দিলো

What! !!!! হেসে হেসে মহিমা বললো

কি বলছো বাবা ????
ভাইয়া করবে বিয়ে ???? তাও আবার যাকে সে চিনে না
হাহাহাহা
Come on বাবা তুমিও না

আরমান: এতে না করার কি হলো

মেহেঘ : তা কার সাথে ঠিক করেছো ???? হাহাহাহা

আরমান : এতে হাসির কি হলো? ??
আমি রহমানের মেয়ে ফাতেমার সাথে মাহিনের বিয়ে ঠিক করেছি

মেহেঘ: জানা নেই কওয়া নেই হুট করে এইসব কি করলে
মেয়ে কিরকম কিছুই তো জানি না

সবার এইসব কথা মাহিন শুধু হা করে শুনছে আর মনে মনে রাগে ফুলছে
কারন বাবাকে সে খুব ভয় পায়
তাই বাবার মুখের উপর সে কথা বলতে পারে না

মাহিন মাত্র কয়েক মাস হলো একটি অতি আধুনিক মেয়ের সাথে রিলেশানে জড়িয়েছে

তাই মনে মনে ভাবছে তার বাবা তাকে না জানিয়ে এটা ঠিক করেনি

মরে গেলেও সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে না

মাহিন : বাবা তুমি এটা হয়তো ঠিক করলে না । তুমি আমার মতামতটা অন্তত নিতে পারতে

আমি মর্ডান যুগের ছেলে আজকাল এভাবে কেউ কাউকে না জেনে শুনে বিয়ে করে নাকি ???

আরমান : এটাই তো তোমাদের মর্ডান যুগের সমস্যা । বাবা মায়ের সিদ্ধান্তের মূল্য না দিয়ে নিজে নিজেরাই বিয়ে ঠিক করে ফেলো
তারপর শুরু হয় যতসব ঝামেলা
দ্বীনের শিক্ষার অভাব থাকলে যা হয় আরকি

আর হে তোমাদেরকে বলে দিচ্ছি ফাতেমা একজন পরহেজগার মেয়ে । এই যুগে এরকম মেয়ে পাওয়া মুশকিল

মেহেঘ : What? ??? পরহেজগার !!! You mean ধার্মিক???

আরমান : হুম .ফাতেমা অত্যন্ত ধার্মিক । তুমি জানো ও যখন আমার সামনে এসেছে ও কিভাবে এসেছে ????

মহিমা : কিভাবে বাবা ???

মেহেঘ: কিভাবে ???

আরমান : ও সম্পুর্ন পর্দা করে এসেছে । আমি তো অবাক ।
রহমানের মতো এরক একজন মানুষের মতো ঘরে এমন পরহেজগার মেয়ে ।
আর আমাদের মতো family. কে ঠিক করার জন্য এরকম একটা মেয়েই দরকার

এদিকে মাহিন ফাতেমার ধার্মিক হওয়ার কথা শুনে তো আরো রাগে ফুলছে । তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো । মনে মনে বলছে আমার বউ এই মাহিনের বউ হবে ধার্মিক সেকেলে ?????এটা হতে পারে না । আমার মতো মর্ডান ছেলের বউ হবে আমার মতো মর্ডান ,যে আমার সাথে পার্টিতে যাবে মর্ডান ড্রেস পড়ে আমার সাথে fb তে pic আপলোড দিবে । আমার সাথে আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে । এরকম মেয়ে আমি চাই
আর এই ফাতেমা না কে আমার বাবার সামনেও আসছে পর্দা না কি করে তাহলে সে আমার সখ গুলো পুরন করবে কি করে
Impossible এই গেয়ো ভূতকে আমি বিয়ে করতে পারবো না ।…

মেহঘ : কি বলতে চাও তুমি আরমান ??? আমাদের মতো family কে ঠিক করা মানে ???
আমরা কি ঠিক নই????

আরমান: না ঠিক নই আমরা । আমরা তো দ্বীনকে ভুলে দুনিয়ার পেছনে ছুটছি । আমরা একবার কি ভাবি আমাদের মৃত্যুর কথা, একবার কি ভাবি আখিরাতের কথা, একবার কি ভাবি আল্লাহকে কি জবাব দিবো?????

মেহেঘ : আমি এতো কথা জানতে বা ভাবতে চাই না ।
আমি এ রকম মেয়ে পছন্দ করি না, এ রকম মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করতে চাই না
আমার ছেলের বউ হবে আমার মতো মর্ডান ।
এসব পর্দা ফর্দা করা মেয়ে আমি চাই না

আরমান : আমি এতো কিছু শুনতে চাই না । আমি কথা দিয়ে দিয়েছি ব্যাছ । আমরা আগামি সপ্তাহেই ফাতেমাকে দেখতে যাবো ।তৈরি থেকো সবাই

এ কথা বলে আরমান সাহেব অফিসে চলে গেলন

মাহিন: মা বাবা কিন্তু কাজটা ঠিক করছে না
তুমি তো জানোই আমার কেমন মেয়ে পছন্দ

মেহেঘ : তুই চিন্তা করিস না বাবা । আমি এটা কিছুতেই হতে দিবো না
তুই তো তোর বাবাকে চিনিস । তিনি এরকমি
আমরা গিয়ে মেয়ে দেখে আসবো কিন্তু পরে বলবো মেয়ে পছন্দ হয় নি ।
তুই চিন্তা করিস না

মাহিমা : বাহ্ ভাইয়া ….
তোর বউ হবে পরহেজগার ,ধার্মিক????
হিহিহিহিহিহিহি

মাহিন : মারবো টেনে এক চড় । চুপ কর বদমাইশ

এই বলে মাহিন মহিমাকে তাড়া করে
মহিমা : ও মা ও মা বাচাও বাচাও ভাইয়া আমাকে মারছে ।হিহিহিহিহি এই বলে মহিমা তার মায়ের পিছনে গিয়ে লুকায়

মাহিন : দাড়া তবে রে. …..

মেহেঘ : আচ্ছা তোরা ছোটদের মতো এসব কি শুরু করলি বল তো

মাহিন : মা ওকে বলে দাও এইসব যাতে আর না বলে

মহিমা : বলবো আরো বলো । এই বলে মুখ ভ্যাংচি দিলো
টজ
।।।।।।।।
ফাতেমার কলেজে

হেন্সি: কিরে ফাতেমা তোর কি হয়েছে??? তুই মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন । বেশি কথাও বলছিস না আজকে? ??? কি হয়েছে বল না

ফাতেমা : তুই জানিস …………

চলবে ইনশাল্লাহ

ফিরে আসা

লেখিকা : Umma Hurayra Jahan

পর্ব: ৭

ফাতেমা: জানিস বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে ?

হেন্সি: আলহামদুলিল্লাহ । ঢিংকাচিকা ঢিংকাচিকা কি মজা দোস্ত তোর বিয়ে খাবো । ইস কত দিন কোন বিয়ে খাই না । খুব মজা হবে কিন্তু

ফাতেমা : আরে তোর নাচ বন্ধ কর

হেন্সি : কেন রে । এটা তো খুশির সংবাদ আর তুই মন খারাপ করে বসে আছিস ।
আমার বিয়ের কথা বললে তো আমি নাচ শুরু করতাম „আর তুই কিনা .দেৎ ভাল্লাগেনা

ফাতেমা : আরে বিয়ে ঠিক করেছে সে জন্য আমার মন খারাপ না । কারন বিয়ে তো প্রত্যের অন নারীর উপর আল্লাহ প্রদত্ত ফরজ বিধান । এটা তো করতেই হবে
আমার মন খারাপ অন্য কিছু নিয়ে

হেন্সি : তাহলে কি জন্য মন খারাপ বলবি তো
মনে হয় কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছি
মনে হয় ছেলেকে তোর পছন্দ হয় নি, তাই না???

ফাতেমা : ব্যাপার টা কিছুটা এমনি রে
হেন্সি : কেন রে ছেলে কি তোর মতো না???

ফাতেমা : হেন্সি তুই তো আমার সেই ছোট্ট বেলাকার বন্ধু । তুই তো আমার পছন্দ অপছন্দ সবি জানিস ।
মা বলেছে ছেলে নাকি ধার্মিক না । এমন কি সে নাকি নামাজও পড়ে না

হেন্সি : বুঝতে পেরেছি

ফাতেমা : আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই এমন একজন কে আল্লাহর কাছে চেয়েছি যে হবে ইমানদার,সুন্নতধারী ,নবিজীর সুন্নত মতো চলবে, যার কাছে পরকালের জীবনের থেকে অন্য কিছু মূল্যবান হবে না, যাকে নিয়ে আমি জান্নাতের পথে হাটতে পারবো ,এতো টাকা পয়সা না থাকলেও যার কাছে পাবো মনের সুখ ,যার সাথে সারা জীবনের আল্লাহর পথে হেসে খেলে জিবনটা কাটিয়ে দিতে পারবো ।
কিন্তু সেটা মনে হয় আর হলো না

হেন্সি: কেন হবে না? ? তুই তোর বাবাকে বলবি এরকম ছেলে তোর পছন্দ না যাকে তোর জন্য ঠিক করছে

ফাতেমা : কোন লাভ নেই রে বাবাকে অনেক বুঝানোর চেস্টা করেছে মা আর ভাইয়া ,কিন্তু বাবা এক কথার মানুষ ,তিনি ছেলের বাবা মানে বাবার ছোট বেলার বন্ধ আরমান চাচাকে কথা দিয়ে দিয়েছে

হেন্সি : তার মানে ঐ ছেলে তোর বাবার বন্ধুর ছেলে । তাহলে তো পুরো পরিবারও এরকমি হবে

ফাতেমা : জানি না রে, কিন্তু আরমান চাচা অনেক ভালো মনের. একজন মানুষ

হেন্সি: তুই চিন্তা করিস না যা হবে ভালোই হবে । তুই তো বলিস প্রত্যেক খারাপ কিছুর পিছনেও ভালো কিছু থাকে ,হয়তো আল্লাহ ঐ ছেলেকেই তোর জন্য ভালো মনে করেছে তাই বিয়েটা হবে।

আর চিন্তা করিস না বিয়ের পর তুই তোর জামাইকে তোর মতো বানিয়ে নিস

ফাতেমা : [দীর্ঘশ্বাস ফেলে ] এই কথাটা বলাটা যত সহজ করাটা তার থেকেও কঠিন …এটা কোন গল্প না, যা ইচ্ছা হলো আমি তা করে ফেলতে পারবো ।
একটা স্বামী তার স্রীকে তার খুশি মতো গড়ে তুলতে পারে কিন্তু একজন স্রীর পক্ষে তার স্বামীকে তার নিজের মতো গড়ে তুলা কতটা কঠিন তা যে করে সেই জানে
তাইতো আজ আমাদের সমাজের অনেক মেয়ে এই আসাতে একজন ননপ্রেকটিসিং মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে শেষ পর্যন্ত নিজের পর্দাটা ছাড়তেও বাধ্য হয় । আর না হলে যে সংসারের শ্বশুর শ্বাশুরি আর স্বামীর. মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়
আমাদের এক আত্বীয় বোন এই আসাতেই এমন একজন ননপ্রেকটিসিং ছেলেকে বিয়ে করেছিলো ,সে মনে করেছিলো দুলাভাই কে তার মতো করে নিবে ,কিন্তু এখন তার স্বামী অত্যাচারে ঠিক মতো পর্দাটাই করতে পারে না
তাই অনেক ভয় হয় রে দোস্ত

টিংটিংটিংটিং

হেন্সি : ক্লাসের ঘন্টা বেজে গেছে চল ক্লাসে যাই ।

ফাতেমা: হুম চল

দুপুরে কলেজ শেষ করে ফাতেমা বাসা ফিরে

ফাতেমা : আসসালামুআলাইকু মা, এসে পড়েছি

খাদিজা: ওয়ালাইকুমআসসালাম আমার লক্ষী মা, এসে পড়েছিস?

ফাতেমা : মা তোমাকে তো অনেক বার বলেছি লক্ষী এই কথাটা বলতে নেই । এইসব হিন্দুয়ানি শব্দ ব্যবহার করা জায়েজ না । গুনা হয়

খাদিজা: আমি তো তোকে আদর করে ডাকি

ফাতেমা : যা করেই হোক না কেন ,এটি বলা ঠিক না

খাদিজা : আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না, এবার শান্তি । [হাসিমুখে কথাটি বললেন খাদিজা বেগম]

ফাতেমা : এই তো আমার সোনা মা

খাদিজা: আচ্ছা হয়েছে হয়েছে এবার ছাড়, গোসল করে ফ্রেশ হয়ে যোহরের নামায টা পড়ে আয় । তোকে তারপর খাবার দিবো

ফাতেমা : মা তুমি নামায পড়েছো ??? আর ভাইয়া কোথায় ??

খাদিজা : হু রে পড়েছি । আর হাসান তো মসজিদে গিয়েছিলো নামায পড়তে এখনো আসে নি, হয়তো বন্ধুদের সাথে আছে

ফাতেমা : যাক শেষ মেশ ভাইয়ার সুবুদ্ধি হলো

খাদিজা : হুম রে মা কিন্তু তোর বাবা যে কবে এরকম হবে একমাত্র আল্লাহ জানেন

ফাতেমা : তুমি চিন্তা করো না মা বাবা একদিন ঠিক বুঝতে পারবে আর হেদায়াতের ছায়া তলে আসবে
আচ্ছা নামায টা পড়ে আসি, খুব ক্ষুদা লেগেছে

খাদিজা : হুম যা
/////////

রানা : কিরে মাহিন তোর মুড অফ কেন??? আর কখন থেকে ফোন টা বেজে যাচ্ছে তুই তুলছিস না কেন রে? ???কে ফোন দিচ্ছে ?

মাহিন: আমি কোন মুখে মিমির ফোনটা উঠাই বল তো
[মিমি মাহিন এর গার্লফ্রেন্ড]
বাবা আমাকে না জানিয়ে এতো বড় কাজটা করতে পারলো ??? এখন মিমি কে আমি কি জবাব দিবো ,কোন মুখ নিয়ে ওর সামনে দাড়াবো ।
বেচারি কত স্বপ্ন দেখেছে আমাদের দুজনের বিয়ে নিয়ে এখন আমি কি করি বল তো???

রানা : আরে আগে ফোন টা তো ধর, পরে সব দেখা যাবে ,ধর ফোনটা ধর

মাহিন: হ্যালো ..

মিমি: হ্যালো বেবি ,এতোক্ষন ধরে ফোন দিচ্ছি ফোন টা ধরছিলে না কেনো??

মাহিন : না মানে ফোন টা সাইলেন্ট করা ছিলো তো তাই বুঝতে পারি নি

মিমি : ওকে বেবি ,বাদ দাও ।
আজকের দিনটার কথা সনে আছে তো তোমার???

মাহিন: আজকে কি মিমি………

চলবে ইনশাআল্লাহ

বেশি বেশি কমেন্ট করবেন কিন্তু বন্ধুরা। 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here