ফেইরিটেল পর্ব-৩১

0
1400

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–31

সাদ মুখ কাচুমাচু করে বলে, “হেই প্রিটি লেডি, আমার ভার্সিটি কেমন লাগলো?”

মিরা তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তোমাদের ইউভার্সিটি অনেক সুন্দর। আমার মতো ফাকিবাজও এতো সুন্দর ক্যাম্পাস দেখে এখন এখানে পড়তে মন চাচ্ছে।”

সাদ সামান্য হেসে মাথা চুলকে বলে, ” সামনে আরেকটা ভবন আছে। অনেক সুন্দর। চল ঘুরে আসি৷”

মিরার অবশ্য ভার্সিটির সৌন্দর্য রেখে চলে যেতে মন চাচ্ছে না। এতো সুন্দর পরিবেশে আরো কিছুক্ষণ থাকতে ইচ্ছা করছিল তার৷ কিন্তু সাদ অন্যকোথাও ঘুরিয়ে আনতে চাইছে। তাকে মানাও করা যায় না৷ সে বলে, “কোথায় যাব এখন?”

–” সামনেই। আসো।”

মিরা তার সাথে হাঁটা ধরে৷ এতোবড় ভার্সিটির এরিয়া কিন্তু লোকশূণ্য। বেশ কিছুক্ষণ পরপর এক-দুইজনকে দেখা যাচ্ছে৷ সত্য বলতে পুরান ঢাকায় একসঙ্গে এত্তো এত্তো মানুষ দেখে সে অভ্যস্ত। এখন এমন ফাকা স্থান দেখলে তার মনে শনি ডাকে৷ মনে হয় প্রবেশ নিষিদ্ধ জায়গায় ঠিকানা হারিয়ে ঢুকে পড়েছে সে।

ভার্সিটির বিশাল গেইট দিয়ে বের হয়ে তারা রাস্তার ধারে আসলো। বিশাল বড় রাস্তা৷ প্রশস্ত, পিচঢালা। সাই সাই করে এক-দুইটা গাড়ি চলে যাচ্ছে। চোখ যতোদূর যায় ঠিক ততোদূরই এই পিচঢালা রাস্তা দেখতে পাচ্ছে সে। না জানি এ রাস্তার শেষ কোথায়? সাদ ফুটপাতে এসে দাড়ালো৷ ফুটপাতে মানুষ দেখা গেল। তিনজন সাদা ধবধবে ফর্সা মেয়ে টপ-জিন্স পরে দ্রুত গতিতে হেটে যাচ্ছে। তাদের দুইজনকে দেখে হাসি দিল। মিরাও ওদের দেখে হাসল৷ ওদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ের সঙ্গে হাল্কা ঘিয়ে রঙের এবং লেজ থেকে বক্ষ অব্দি কমলা রঙের চার্লি কুকুর। কুকুর দেখে মিরা সামান্য ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। এতে কুকুরের মনিব যেন বিরক্ত ও অফেন্ডেড হলো। সে তার কুকুর নিয়ে এগিয়ে গেল। সাদ সব দেখে বলে উঠে, “তুমি ডগ দেখে ভয় কেন পাচ্ছো? ওরা তো পেট ডগ। কিছু করবে না। এখানে ডগিকে ভয় পেলে মানুষ ভালো চোখে দেখে না৷”

মিরা সামান্য মাথা নাড়ালো। তার মারাত্মক কুকুর ভীতি আছে৷ এখন সেটা রাস্তারই হোক বা কিউট পাপ্পিই হোক না কেন! তার কাছে সব কুকুরই সমান। সব ক’টাকেই সে সমান তালে ভয় পায়৷ সাদ নিউইয়র্ক নিয়ে আরো অনেক কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে। তার পিছনে মিরা আসছে। সে আশপাশ অবাক নয়নে দেখছে৷ মাথা বরাবর সূর্য কিন্তু সূর্যের আলোয় তেমন তেজ নেই। বরং মিষ্টি একটা রোদে গা ওম পাচ্ছে৷ চারপাশে অদ্ভুত রকমের নীরবতা। বাংলাদেশে এমন নীরব রাস্তা পাওয়া যেন স্বপ্ব। হর্ণে বিরক্তিকর ধ্বনি নেই। সিএনজি, বাসের কালো ধোয়া নেই। কোথাও একটা খাবারের প্যাকেট পরে নাই৷ হাওয়া-বাতাস দূষণমুক্ত ও বিশুদ্ধ। গাছে গাছে পাখি, প্রজাপতি, মৌমাছি উড়ছে৷ যে যার মতো৷ কারো দিকে কেউ তাকায়। আর চোখাচোখি হয়ে গেলেও একগাল হেসে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে৷

সাদ অবশেষে বিশাল সুউচ্চ একটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো৷ গেইটের সামনেই ফ্লোয়ারা। ফ্লোয়ারায় একবার পানি উপরে উঠছে তো পরমুহূর্তেই পানি নেমে যাচ্ছে৷ দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সাদকে দেখে সে হাত নাড়লো। বিল্ডিংয়ের পরিবেশ দেখে মিরার মনে হচ্ছে এটা কোন অফিস। সাদ তাকে অফিস ঘুরাতে কেন নিয়ে আসলো? বিল্ডিংটা নিঃসন্দেহে সুন্দর কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ বিল্ডিংই এমন স্ট্রাগচারে বানানো। সম্পূর্ণটা কাঁচের ঘেরাও করা৷

সাদ বলে উঠে, ” কাম উইথ মি।”

দারোয়ান এগিয়ে আসলো। কিন্তু দরজা খুলে দিতে হলো না। অটোম্যাটিক্যালি দরজা খুলে গেল। তারা ভিতরে প্রবেশ করে। সাদ ব্যস্ত হয়ে কাউকে কল দিচ্ছে। মিরা অবশ্য সেদিকে খেয়াল রাখল না। সে আনমনে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে দেখে নিল। সাদ ফোনে কথা বলা শেষ করে তার সামনে এসে বলে, ” আমরা এগারো তলায় যাব এখন।”

মিরা এবারে প্রশ্ন করে বসে, ” এখানে কী তোমার কোন কাজ আছে সাদ?”

সাদ বিনীত হেসে লিফট কল করলন।সঙ্গে সঙ্গে লিফট ওপেন হলো। তারা লিফটের ভেতরে প্রবেশ করল। লিফট ঘড়ি ধরে চার সেকেন্ডর মধ্যে এগারো তলায় পৌঁছে দিল। তারা যখন এগারোতলার ফ্লোরে প্রবেশ করে হীম শীতল এসির বাতাসে গা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ফ্লোরের বাম পাশ থেকে একটানা দশ ডেস্ক। সেখানে সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনে কাজ করছে। তার পাশে সারি সারি ছয়টা কফি মেশিন রাখা। আরো একটুদূরে বিশাল অডিটোরিয়াম রুমের মতো একটা হলরুম।অস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ভেতরে অনেকেই আছে। নিশ্চয়ই ওখানে কোন জরুরি কাজ চলছে৷

সাদ আবারো কাকে যেন কল দিল। মিনিট একের মধ্যে ঐ বিশাল অডিটোরিয়ামের মতো রুমটার দরজা ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল। মিরার কেমন যেন ভয় লাগলো। যেমনটা কলেজে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দুষ্টুমি করার সময় হতো!

সে মাথা নিচু করে ফেলে৷ কেউ একজন বেরিয়ে আসে। যার পরনে দামী ঘড়ি আর দামী সু। নিচু হয়ে থাকায় সে চেহারা দেখতে পারলো না৷ আচমকা তার কণ্ঠস্বরে সে চমকে উঠে৷

সে বলে উঠে, ” সাদ কোন প্রবলেম? ”

মিরা তড়িৎগতিতে মাথা তুলে তাকায়। এ কাকে দেখলো সে! এটা তো ইমান। তার মাথায় একবারও ইমানের চিন্তা আসেনি৷ এই প্রথমবার কর্মরত অবস্থায় ইমানকে দেখল সে। চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে আছড়ানো। পরনে পরিষ্কার ইস্ত্রী করা নেভী ব্লু রঙের শার্ট৷ চেহারায় একটা জ্ঞানী ভাব ফুটে আছে৷ মিরা আরেকটা ব্যাপার দেখল সে ভেতর থেকে আসতেই বাম পাশের ডেস্ক থেকে একটা লোক দাঁড়িয়ে তাকে রেসপেক্ট দেখালো। ইমান হাত নেড়ে হাসি দিয়ে তাকে বসতে বলে৷

তাদের দু’জনের দৃষ্টিবিলাস ঘটে ক্ষণের মধ্যে। এক পলের অন্তর মিরা চোখ নামিয়ে নেয়। বিষ্ময়ের তোড়ে তার বাকের রা হারিয়ে গেছে। সাদ ভাইয়ের কাছে গিয়ে কানে কানে কিসব বলল। ইমান এমনভাবে মাথা নাড়লো যেন সে সব বুঝে গেছে৷ কথা শেষ করেই সাদ যেন দৌড় দিল হোসাইন বোল্টের গতিতে৷ মিরা অবাক হয়ে তার দিকে একবার তাকালো। আরেকবার তাকালো ইমানের দিকে। ইমান টাই লুজ করে বলে, ” আসো আমার সঙ্গে। ওর ক্লাস আছে। ওকে যেতে হবে৷”

বাক্যটা শুনতেই মিরার সাদের উপর রাগ হলো। সাদ তাকে বললেই পারত তার ক্লাস আছে। সেও আরো কিছুক্ষণ ভার্সিটি এরিয়াতে থাকত৷ ঘুরত সেখানে। কেন সাদ তাকে এই খানে নিয়ে আসলো? এই বাড়তি উপকারটা তো মিরা তাকে করতে বলেনি। তবে সে নিশ্চুপ থেকে সরাসরি ইমানের দিকে তাকালো। ইমান হাতের ইশারায় তাকে ভেতরে যেতে বলে।

মিরা গুটিগুটি পায়ে তার সঙ্গে ভেতরে ঢুকে। ভেতরে ঢুকতেই সবাই একবার করে তাদের দিকে তাকালো। এখানে সম্ভবত দশ জনের মতো আছে৷ পরিবেশ দেখে মনে হলো খুব গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছিল। ইমান তাকে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে তাকে বসতে আহ্বান জানালো। মিরা আস্তে করে সেখানে বসল৷

এরপর ইমান সামনে গিয়ে দাড়ালো। প্রজেক্টের অন করা ছিল। সে বলে উঠে, “ডিস্টার্বের জন্য সর‍্যি। আমি কাজে ফিরে যেতে পারি৷”

অতঃপর সে ইংলিশে ননস্টপ ভাষণ দিতে লাগলো। মিরার একবার মনে হচ্ছে সে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছে, আরেকবার মনে হলো সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে৷ বেশ বোর হতে থাকে সে। এতো এতো অচেনা মানুষের ভীড়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল তার। অবশেষে মিটিং শেষ হলো৷ একে একে সবাই উঠে যেতে লাগলো। ইমান তখনো ল্যাবটপের স্ক্রিনে মুখ ডুবে কাজে ব্যস্ত৷ রুমটা ফাঁকা হতেই মিরাও উঠে দাঁড়ালো।

এবং সঙ্গে সঙ্গে ইমান প্রশ্ন করে, ” কী হলো?”

মিরা দাঁতে দাত চেপে বলে, “পায়ে ঝিনঝি লেগেছে।তাই ঝিনঝি লাগা সারানোর জন্য দাঁড়ালাম।”

ইমান অবশ্য পায়ে ঝিনঝি লাগার বিষয়টা বুঝল না। কিন্তু কোন প্রশ্নও করল না বরঙ বলে উঠে, “কফি খাবে? ”

ঝাঁঝালো কন্ঠে উত্তর ধেয়ে আসে না বোধক।
ইমান ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে, “আমার কেবিনে আসো।”

তারা যখন রুম থেকে বের হলো। তখন অনেকের দৃষ্টিই তাদের দিকে ছিল। এতে ভারী অস্বস্তি হয় মিরার৷ ইমান তাকে একটা গোছানো রুমে এনে গেইট লাগিয়ে দিল। এই কেবিনটা ইমানের একার। নিজস্ব। সে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে, আরাম এক গ্লাস পানি খেল। এরপর মিরার পানে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তোমার শরীর কেমন এখন? সকালে মেডিসিন নিয়েছিলে?”

ইমান কথা বলছে খুবই স্বাভাবিক গতিতে। যেন তাদের মাঝে কোনদিন কোন ফাটল তৈরি হয়নি৷ সে তার বিপরীত দাঁড়িয়ে আছে। সে বসল না৷ ইমান টেলিফোনে কাকে যেন খাবার আনতে বলল। দু’মিনিটের ব্যবধানে দু’মগ কফি, এবং আমেরিকার জাতীয় খাদ্য বার্গার সঙ্গে এক স্লাইস ব্রাউনিও রয়েছে। বার্গারটা বেশ ড্রাই। ভেতরে মেবি বীফের পেটি এবং সস দেওয়া আছে৷ আজকে এসব ফাস্টফুড দেখে তার বমি পাচ্ছে না।

ইমান কফির মগ হাতে তুলে নিয়ে বলে, ” বিকেলে কোথাও যাওয়ার প্লান আছে?”

মিরা নাবোধক মত প্রকাশ করে৷ ইমান বলে উঠে, আমাদের বাসা থেকে দশ মিনিট দূরত্বে একটা লেক আছে। লেকের পাশে পার্কও আছে। চাইলে সেখানে যেতে পারো৷

–” ইচ্ছা নাই।”

–” বার্গারটা খাও। এটা ম্যাকডোনাল্ডের। খুব ফেমাস এখানকার বার্গার-ফ্রাইস।”

মিরা অবশ্য আগেই ম্যাকডোনাল্ডের লোগো দেখে চিনে ফেলেছিল৷ খেতে ইচ্ছে করছে না। ইরার খুব শখ ছিল এই দোকানের খাবার খাওয়ার। প্রতিটা সেলেব্রিটি একবার করে হলেও ম্যাকডোনাল্ডে এসে চেইক ইন দিয়েছে৷ ওর জন্য খারাপ লাগছে৷ ইমান আবারও তাকে খাওয়ার জন্য সাধলো৷ কিন্তু এতো সুস্বাদু খাবার তার গলা দিয়ে নামবে না৷ ওমন সময় দরজায় নক হলো। সে “কাম ইন” বলতেই ছয়-সাত জনের একটা দল এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ওরা সবাই ভীনদেশী। পোশাক-আশাকে ভিন্ন সংস্কৃতি প্রকাশ পাচ্ছে। কেউ বাংলাদেশী নয়।তবে ওদের মধ্যে একজনের চেহারাহ বাঙ্গালীয়ানা ভাব পাচ্ছে৷ কিন্তু আচরণ, চাল-চলনে মনে হলো না সে বাঙ্গালী। ওদের মধ্যে একজন কৃষাজ্ঞও আছে।

ইমান দাঁড়িয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা শুরু করল। মিরার চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে কেমন যেন লাগছিল। তাই সে কফির মগ হাতে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালো৷ কফি হাতে নিতেই উত্তাপে তার হাত থেকে ঝনঝন শব্দ করে কফির মগ পড়ে যায়৷ সবাই আরেকদফা তার দিকে তাকালো। ওইসময় মিরার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে আনস্মার্ট মেয়ে বলে মনে হচ্ছিল। লজ্জা ও অপমানে মুখ লাল হয়ে আসল৷

ক্ষণেই ইমান তার দিকে এগিয়ে এসে তার বাহু ধরে টেনে সরিয়ে দাড় করিয়ে ব্যতিব্যস্ততা দেখিয়ে বলে, ” আর ইউ ওকে? কফি গায়ে পড়েনি তো?”

মিরা শুধু “উহু” বলল। তার কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে৷

–” পায়ে লেগেছে?”

— “না।”

ইমান তবুও চিন্তিত ভঙ্গিতে তার দিকে তাকালো। তার আংগুলে কাঁচের টুকরো লেগে রক্ত বের হওয়াটা ইমানের চোখ এড়ালো না। ততোক্ষণে বাকিরা প্রস্থান করেছে। তাদের মধ্যে নাক গলালো না৷ আমেরিকানরা এদিক দিয়ে খুব সভ্য। বলার আগেই স্পেস দিবে আপনাকে৷

মিরাকে চেয়ারে বসালো সে। এরপর ড্রয়ারে হাতড়িয়ে কিছু খুজলো৷ কিন্তু পেল না৷ অগত্যা টিস্যু পেপার দিয়ে তার আংগুলে টিস্যু চেপে ধরে বলে, ” ভাগ্য ভালো ছোট কাঁচের টুকরো লেগেছে। বড় টুকরো গায়ে গেঁথে গেলে এতোক্ষণ রক্তক্ষণের মাত্রা বেড়ে যেত।”

মিরা তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, ” আমার জন্য এতো চিন্তিত হতে হবে নাহ।”

–” চিন্তিত হচ্ছি না।”

কথা শোনামাত্র মিরার মন বিষিয়ে গেল। সে মলিন চেহারা করে তাকালো। ইমান তখন উঠে দাঁড়ালো।

তখনই বিনা অনুমতিতে রুমে প্রবেশ করে সেই বাঙ্গালীর মতো দেখতে মেয়েটি। মেয়েটার নাম সে জানে না৷

মেয়েটা রুমে প্রবেশ করে হাসিমুখে বলে, “মিষ্টার খান, দশ মিনিট পর কনফারেন্স শুরু হবে। সবাই আপনার অপেক্ষায় আছে৷ ”

ইমান বলে, ” আমি জানি, জুই। তবুও জানিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”

তাদের দু’জনের কথোপকথনের মাধ্যমে মিরা জানতে পারল মেয়েটার নাম জুই৷ ও বড্ড হাসিখুশি। সেই থেকে হেসে হেসেই কথা বলছে। তাকে দেখে দু’বার হাসিও দিয়েছে ন

আচমকা জুইয়ের প্রশ্নে তারা দুইজনই পিলে চমকে উঠে একে অপরের দিকে তাকালো।

জুই প্রশ্ন করে, “মিষ্টার খান, মিরা তোমার কে হয়?”

ইমান নীরব থাকল৷ মৌনতা ভেঙে মিরাই আগে উত্তর দিল, “কাজিন হই।”

ইমানের অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল। সে মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিল জুইকে সত্যটা বলে দেওয়ার। কথা গুছিয়ে নিতে টাইম নিচ্ছিল এর আগেই মিরা উদ্ভট একটা উত্তর দিয়ে দিল৷ মেয়েটাকে আচ্ছা মতো বকে দিতে মন চাইছে৷

জুই বলে উঠে, “আমাদের তো কনফারেন্স আছে। তুমি চাইলে অফিস ঘুরে বেড়াতে পারো। নিচে খুব সুন্দর একটা বাগান আছে। লাইব্রেরি আছে৷ কফি হাউজ আছে। যেখানে ইচ্ছা ঘুরো। চাইলে মিষ্টার খানের কেবিনে বসে মুভি দেখতে পারো৷ ফিল ফ্রি।

মিরা স্নান হেসে ইমানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি বরঙ নিচে যাই।”

ইমান কিছু বলল না। সে পাশ কাটিয়ে কেবিনের বাইরে চলে যায়৷ একটু পর জুই আর মিরা বেরিয়ে এলো। মিরা লিফটের দিকে এগিয়ে গেল এবং তারা ফ্লোরের শেষ প্রান্তে হাঁটা দেয়৷

কনফারেন্স রুমে ঢোকামাত্র হুট করে কারেন্ট গেল এবং সেকেন্ডের মধ্যে কারেন্ট আসল৷ কনফারেন্স রুমে সব ক্লাইট বসে আছে। লিফটম্যানিকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে ইমান চিৎকার দিয়ে বলে, “কী হয়েছে?”

লিফটম্যান বলে উঠে, ” জেনারেটরে ইরর দেখা দিয়েছে। লিফট অপারেটর কাজ করছে৷ লিফট মাঝপথে আটকে গেছে স্যার। দুইজন আটকা পড়েছে৷ ইটস এন ইমার্জেন্সি।”

ইমানের বুক ধুক করে উঠে। মিরাও তো লিফটস ঢুকেছে। সে কী আটকা পড়েছে? আল্লাহ! নাহ! এমন যেন নাহয়! মিরার যেন কিছু না হয়।

চলবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here