ফেইরিটেল পর্ব-৫০

0
1624

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–50 [ হাফ সেঞ্চুরি🥳]

ঘরের ভেতরে হিটার চলার কারণে রুমজুড়ে উত্তাপে উষ্ণ হয়ে আছে৷ ঘরের এক কোনে মৃদ্যু আলোর হলদে ল্যাম্প জ্বলছে৷ জানালার বিশাল বড় কাচের জানালার বাইরে দিয়ে চাঁদের দেখা মিলছে। সফেদ-সাদা বরফ উঁকি দিচ্ছে৷ হিমবর্ষী নিশীথিনী, নিস্তব্ধ, আকাশের বুক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা-সাদা পেঁজাতুলোর মতোন তুষার পড়ছে৷ রাত তখন নয়টা বাজে চব্বিশ মিনিট। দূরের অন্ধকার থেকে গাছের গায়ে লেগে থাকা স্নো আলোয় যেন জ্যোতি ছড়াচ্ছে৷ মিরা ছটফট করছে। ভেতরে ভেতরে উৎকণ্ঠা কাজ করছে তার। বাসার পরিবেশ অত্যাধিক শীতল। গুমোট। মিরা লজ্জা বা সংকোচে কারো সঙ্গে কোন কথা বলেনি৷ হাসনাহেনা আন্টি শুধু একবার জানতে চেয়েছিল, ইমানের সঙ্গে সত্যি তোমার বিয়ে হয়েছে? সে উত্তরে হ্যাঁ বলে৷ এরপর উনি আর কোন প্রশ্ন করেননি৷ নিজের রুমে চলে গেলেন৷ সেই যে ইমান বেরিয়েছে সকালে। এখনো ফেরেনি। বারো ঘন্টার উপর হলো সে বাইরে। ফোন সুইচ অফ। ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তারা ডানা মেলে উড়ছে৷ ইমানের রুমে, তারই বেডে বসে আছে সে। তার মনে হচ্ছে সে মরুভূমির তৃষার্ত পথিক৷ এতো অস্থিরতা আর টেনশনে নিশ্চয়ই তার মাথা ফেটে যাবে৷ মনের মধ্যে যেন ক্যাকটাসে কাঁটা ফুটছে। একটাবার ফোন ধরলেই মিরা শান্তি পায়! ক্ষণেই দরজায় টোকা পড়ল। সে ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজা খুলে দিল। হাসনাহেনা খাবারের প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। মিরাকে দেখে বললো, ” সকাল থেকে তো কিছু খাওনি। দুপুরেও লাঞ্চ করোনি। ডিনার করে নিও।”

সত্যি বলতে গেলে সারাদিনে মিরা কিছু খায়নি। খাওয়ার তাগিদও লাগেনি একবারও। পুরোদিন জুড়ে খামোখা টেনশন করে গেল। আন্টির হাত থেকে প্লেট নিয়ে বলে, ” আপনি খেয়েছেন?”

–” হ্যাঁ। আচ্ছা শুন ডিনার শেষ করে নিচে এসো।তোমার শ্বশুড় তোমার সাথে কথা বলবেন৷”

–” জি।”

উনি ফিরে যেতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলে, ” ইমানকে নিয়ে চিন্তা করো না৷ ও এমনই। কোন ফ্যামিলি প্রবলেম হলেই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে৷ সাত-আট দিন পর ফিরে আসবে৷ খুব বাজে একটা স্বভাব৷ আমাদের উচিৎ প্রতিটা সমস্যা ফেইস করা৷ কিন্তু ও পালিয়ে বাঁচতে চায়৷ ক’টা দিন যাক। সব ঠিক হয়ে যাবে৷”

–” এর আগেও ইমান ওর বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেছে?”

–” ঝগড়া করে টানা দেড় বছর বোর্ডিং স্কুলেও থেকেছে ও।”

হাসনাহেনা চলে গেলে সে খেতে বসে। খাবার গুলো গলা দিয়ে নামতে চাইছে না। তবুও জোরপূর্বক সে পানি দিয়ে গিলে চোখে-মুখে পানি দিয়ে নিচে নেমে আসে। যাওয়ার আগে মাথায় ওড়না ঠিকঠাক মতো দিল৷ হলরুমে জহির খানের দেখা মিলল। ঘরে আর কেউ নেই। উনি সোফায় পা তুলে বসে আছেন। সামনে ধোয়া উঠা কফির মগ৷ মিরাকে ইশারায় বসতে বললেন। মিরা মনের মধ্যে গাঁট রেখে সোফায় বসে৷ মাথা নিচু করে সালাম দিল৷ উনি সালামের জবাব নিয়ে বলে, ” তুমি আজিজের মেয়ে তাই না?”

— “জি।”

–” বড় মেয়ে?”

–” হ্যাঁ।”

–” আজিজের সাথে আমার অনেকদিন ধরে যোগাযোগ নেই। সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে৷ ও এমনভাবে ঠকালো আমাকে যে সম্পর্ক রাখাও সম্ভব না আর। ঘরের শক্রু বিভীষণ এই প্রবাদের বাস্তব উদাহরণ তোমার বাবা৷”

মিরা চুপ রইল। সে জানে তার বাবাকে জহির খান এবং ইমান দুইজনই ঘৃণা করে৷ বাবার কৃতকর্মের জন্য সেও বাবার উপর খুব খুব রেগে আছে৷ তবুও বাইরের কেউ বাবাকে নিয়ে কিছু বললে সহ্য হয় না। বাবা তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে দু’বোনের মধ্যে। ছোটবেলায় প্রতিদিন অফিস যাওয়ার পথে স্কুলে ড্রপ করে দিত। স্কুলে নামিয়ে দেওয়ার আগে একটা জুস কিনে দিবেই বাবা। ইশ! কি চমৎকার দিন ছিল তখন! বাবাকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। এজন্য হয়তোবা আজও ঘৃণা করতে পারে না। আচ্ছা কোন সন্তান কী পারে তার বাবাকে ঘৃণা করতে? পারে না। কেউ-ই না!

জহির সাহেব কফিতে চুমুক দিয়ে বলে, ” তোমার বাবা সম্পর্কে সব জানো তুমি? ওর অ/বৈ/ধ সম্পর্ক ও সন্তান সম্পর্কে কিছু জেনেছো? অবশ্য পিতার মন্দ কর্ম সন্তানের না জানাই উচিত।”

মিরার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ল৷ উনি সান্ত্বনাস্বরুপ বললেন, “তুমি কেন কাঁদছো? খারাপ কাজ তো তুমি করোনি৷ তোমার বাবার কর্মের দায় তোমার না।”

মিরা চোখ মুছল না। এই অশ্রুসিক্ত নয়ন আর অশ্রুমালাই বাবার প্রতি তার ভালোবাসার করুণ বহিঃপ্রকাশ।

— ” তাহলে ধরে নিব তোমরা সব জানো?”

–” আমি জানি৷ কিন্তু আমার ছোট বোন জানে না।”

–” তোমার ছোট বোনও আছে?”

–” হ্যাঁ।”

–” আচ্ছা। তোমাকে সব সত্য কে বলেছেন? তোমার দাদী নাকী চাচা?”

–” মা বলেছে।”

–” তুমি কী জানো তোমার মায়ের সাথে বিয়ের আগে আজিজের অন্য কারো সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল? তাদের সম্পর্কের গভীরতা এতো প্রবল ছিল যে তাদের দুজনের সন্তান আসার কথা ছিল?”

মিরা হুহু করে কেঁদে উঠে বলে, ” জানি৷”

জহির খান নিজের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক রেখে বলে, ” জানলেও সব সত্য জানো না। ইনফ্যাক্ট আমি বাদে কেউই জানে না।”,

মিরা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। জহির সাহেব বলে উঠে, ” রোজিনা বিশাল বড় বাটপার ছিল। আশা করি রোজিনা কে এটা তোমার জানা আছে। ও টাকা ছাড়া কিছুই বুঝত না। আজিজের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকে ফাসালো। এরপর আমাকে থ্রেট দিতে লাগল ওদের বাচ্চার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। আমি জেল থেকে বের হই প্রায় ছয় মাস পর৷ ওর গর্ভপাত করার জন্য হাসপাতালে যাই। কিন্তু ডাক্তার বলে এই শেষ মুহূর্তে সম্ভব না। এছাড়া রোজিনা এবোর্শনের ধকল নিতে পারবে না। ডাক্তার সাফ মানা করে দিল। অগত্যা আজিজ আর রোজিনার সন্তান জন্ম নেয়৷ ও আমাকে এতো বাজে ভাবে ফাসিয়েছে যে সত্য হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও প্রমানের অভাবে নিজেকে আমি নির্দোষ প্রমান করতে পারিনি। ততোদিনে আমার প্রথম স্ত্রীও সু/সা/ই/ট করেছে৷ সব মিলিয়ে আমি খুব অসহায় বোধ করি। এদিকে রোজিনা বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাইছিল না। ওর অবশ্য দোষ নাই। ওর নিজেরই তিনবেলা আহার জুটেনা। বাচ্চাকে কী খাওয়াবে৷ ফুটফুটে মেয়েটার প্রতি আমার মায়া হলো। এতিমখানায় যোগাযোগ করলাম। আজিজের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। ওকে ওর মেয়ের কথা জানাই৷ কিন্তু ও ফিরেও তাকায়নি।মেয়েকে দেখতেও আসেনি একবারও৷ বরং আমাকেই শাসিয়ে গেল ওর বিরুদ্ধে কিছু করলে আবারো কোন ঝামেলায় ঝুলিয়ে দিবে৷ আমি আর ওকে ঘাটাইনি। ওই মানসিকতায়ও ছিলাম না। পনের দিনের মধ্যে এক ফরেনার যোগাযোগ করল। লোক আমেরিকান। শিক্ষিত মানুষ। এক বছর আগে বউ মারা গেছে৷ একাকিত্ব বোধ করে জন্য বাচ্চা দত্তক নিতে চায়৷ আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। এমন সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করি না ভুলেও৷ রোজিনা সম্পর্কিত সব ধরনের ঝামেলা এড়ানোর জন্য গুজব ছড়ালাম ওর গর্ভপাত হয়েছে। এরপর বাচ্চাকে দত্তক দিলাম৷ ভদ্রলোক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে আমাকে আমেরিকা আসার জন্য সহযোগিতা করলেন৷ আমি ইমানকে নিয়ে আমেরিকা চলে আসি৷”

পুরা ঘটনা উনি এক নিশ্বাসে বলে থেমে যান। সামনে কথা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনে মনে৷

মিরা এতোটাই হতভম্ব হয়েছে যে কাদতেও ভুলে গেল। আংকেল কী তাকে মিথ্যা বা ভুল কোন তথ্য দিচ্ছেন?

জহির খান বলে, ” তুমি জানতে চাও না তোমার নিজের রক্তের বোন কে? কেমন আছে ও? মা আলাদা হলেও তোমাদের দু’জনের মধ্যেই তোমার বাবার রক্ত বইছে।”

মিরার ভেতরটা যেন বিবশ হলো। কোন অনুভূতি টের পাচ্ছে না সে। কানের কাছে কেমন আওয়াজে শুনতে পাচ্ছে। ভোতা এক নিদারুণ কষ্টের বন্যা বইছে সারা শরীর জুড়ে। যা শুনেছে সব যেন মিথ্যা হয়। সে বহু কষ্টে প্রশ্ন করে, ” আমা…আমার ব… বোনকে আপনি চেনেন? ও বেঁচে আছে?”

উনি বলে, ” বেঁচে তো আছেই। বরং খুব ভালো আছে।”

মিরা প্রশ্ন করে, ” আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।”

জহির সাহেব পুনরায় ধোয়া উঠা কফিতে চুমুক দিয়ে বলে, ” মনে হয় ওর সাথে দেখা হয়েছে তোমার। ”

কথাটা শোনামাত্র তার দুনিয়া ওলট-পালট হতে লাগে। আবারো চোখ বেয়ে পানি পড়ল।

–” কে?”

–” জুই। জুই লওরেন্স৷ পিটার লওরেন্সের দত্তক নেওয়া মেয়ে।”

মিরার কর্ণকুহরে জুই লওরেন্স নামটা ঢোকা মাত্র সে পিলে চমকে উঠে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। শুধু হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে রইল।

জহির খান কথা চালিয়ে যেতে লাগলেন, ” তুমি তো তোমার বাবার স্বভাব পেয়েছ দেখছি। তোমার বাবা নিজের বোনের ঘর-সংসার, সুখ পোড়ালো। তুমিও তোমার বোনের খুশি পুড়িয়ে দিলে৷ ইমানের জন্য আমি বহুদিন ধরে জুইকে নির্ধারণ করে রেখেছি৷ আমি আর পিটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই ক্রিসমাসের হলিডেতে ওদের এনগেজমেন্ট করিয়ে দিব৷ বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে কোনদিন চোখে না দেখা মেয়েটার প্রতি মায়া কাজ করে আমার৷ আমার জানামতে, ইমান আর জুই টেক্সাসে ডেটও করেছে। আমি ওদের নিষেধ করিনি কোনদিন। ভেবেছিলাম আমার ছেলে তো ওকেই বউ বানিয়ে আনবে৷ কিন্তু দেখ, তুমি নিজের বোনের থেকে তার হবু স্বামী কেড়ে নিলে৷”

মিরা আচমকা দৌঁড়ে হনহন করে ওয়াশরুম ঢুকে এবং হড়বড় করে বমি করে বেসিন ভাসিয়ে দেয়৷

___________________________

তখন পড়ন্ত বিকেল। পশ্চিম আকাশের বৃত্তাকার কমলাটে সূর্যটা প্রায় ডুবে গেছে৷ হিমশীতল হাওয়া বইছিল বাতাবরণে। আজও আবহাওয়ার মন খারাপ। রোদের দেখা মেলেনি আজকেও। তবে তুষারপাতের প্রকট আজ তুলনামূলক কম। ইমান হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে৷ তার পায়ে ব্যান্ডেজ করা৷ কপালেও ব্যান্ডেজ। সেদিন এক্সিডেন্ট করতে গিয়ে শেষ রক্ষা হয়েছিল তার। গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তার সাইডে চলে আসে ফলে ট্রাকের ধাক্কা থেকে রক্ষা হলেও বিশাল বড় একটা গাছের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষ হয় তার। ভাগ্য সহায় ছিল বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সে। বিগত পনের দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার ফোন ভেঙে চুরমার। সে চাইলে যে কারো সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করতে পারে কিন্তু মন চাইছে না। আপাতত অশান্ত এ মনকে সুস্থির করার জন্য একা থাকা দরকার। ক্লিনিক থেকে রিলিজ দিলেই সে বাড়ি ফিরে যাবে এবং সেদিনই মিরাকে নিয়ে অন্য বাসায় শিফট হবে। বাসা রেন্ট নিবে সে। ও বাড়িতে আর থাকবে না৷

একজন নার্স এসে তার পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বলে, ” স্যার আপনি চাইলে এখন বাসায় যেতে পারেন।”

–” সত্যি?”

–” আসলে আপনার রেস্ট প্রয়োজন কিন্তু ক্লিনিকে প্রচুর করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে। সো আমরা চাইছি বাকিরা যেন এফেক্টেড না হয়।”

করোনা মহামারী নিয়ে ইমানের চিন্তা হচ্ছে। এ যেন রুপকথার কালো মনের ডাইনীর অভিশাপ! ওই যে স্লিপিং বিউটির রাজ্যের সবাই একাধারে ঘুমিয়ে গেল অভিশাপের কবলে পড়ে। তেমনি করে বুঝি পৃথিবীবাসীও কারো অভিশাপের তোড়ে গণহারে করোনা এফেক্টেড হচ্ছে।

সে সময় নষ্ট না করে বাসার যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো। প্রায় এক ঘন্টা পর যখন বাসার বেল বাজালো তখনই বাহির থেকেই তার কেমন খটকা লাগে। বাসার ভেতর না প্রবেশ করেই সে বুঝে গেল কিছু একটা মিসিং৷

মেইন গেইট খুলতেই হাসনাহেনার দেখা মিলল। ওনার চেহারা দেখে ইমানের মন কেমন করে উঠে। ভারী বিষন্ন দেখাচ্ছে তার চেহারা৷ সে না পেরে প্রশ্ন করেই বসে, ” কিছু হয়েছে?”

ইমানকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেই সে বলে, ” তুমি ঠিক কিসের তৈরি ইমান? পাথরের নাকী লোহার? পনেরটা দিন ধরে তোমার খোঁজ নাই৷ বাসায় কেউ মরে গেলেও তো তোমাকে জানানোর কোন পন্থা রেখে যাও না৷ কোথায় ছিলে তুমি? কেন এভাবে হুট করে গায়েব হয়ে গেলে? তুমি জানো তোমার এই আচানক লাপাত্তা হওয়ার স্বভাবের জন্য কতকিছু ঘটে গেল?”

— ” আসলে আমার সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সাতটা দিন আমি হাসপাতাল বেডে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলাম। ইঞ্জুরড ছিলাম। আজই রিলিজ পেয়েছি। আমার অবর্তমানে কী হয়েছে?”

হাসনাহেনা বলে উঠে, ” তোমার স্ত্রী চলে গেছে৷ ওর পক্ষে এই সম্পর্ক কন্টিনিউ করা পসিবেল না৷”

ইমানের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে৷ সে চিৎকার দিয়ে বলে, ” হুয়াট!”

–” মিরা আরো চারদিন আগেই সকালের ফ্লাইটে চলে গেল। যাওয়ার আগে আমার হাত ধরে বলল, তুমি যেন ওকে জোর না কর কোন কিছুতে।”

ইমান অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইল৷ নিস্তেজ পায়ে হলরুমে চেক দিল। আজ সেখানে মিরা বসে নেই। সে দোতলায় উঠে গেল। অন্ধকার রুমটায় বাতি জ্বালাতেই বুক হুহু করে উঠে তার। রুমের কোথাও মিরার অস্তিত্ব নেই। তবে বেডের উপর নোটপ্যাড পড়ে আছে। কেউ রেখে গেছে বোধহয়। সে নোটপ্যাড তুলে নিল। এরপর পৃষ্ঠা উল্টাতেই গুটি গুটি অক্ষরে লেখা চোখে পড়ল।

” আমি চলে যাচ্ছি ইমান। আমার পক্ষে সম্ভব না এ’সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা৷ মনকে বুঝিয়েছি লাভ হচ্ছে না। এ-সম্পর্কটা আমার কাছে চাপ লাগছে৷ গলার কাঁটার মতো লাগছে৷ আমি মনে হয় পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, কখনো কেউ যদি প্রশ্ন করে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সকাল কোনটা? আমি উত্তর দিব সেইদিনের তুষারপাতের সকালটা! ভালো থাকবেন। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। আর একটা কথা, আপনি যদি কোন ধরনের জোরাজোরি করেন তাহলে আমি ভুল কোন স্টেপ নিতে বাধ্য৷”

ইমান বার’কয়েক সেই চিঠি পড়ল। কেমন শূন্য শূন্য অনুভূতি হচ্ছিল তার। তৃষ্ণায় গলা চৌচির। কান্নারা দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েও থমকে গেল। থমকে গেল তার জীবন। থেমে গেল তার জীবনের ঘড়ির ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাটা।

চলবে৷

[ আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদ সবার জীবনে রহমত, আনন্দ এবং শান্তি বয়ে আনুক। এই দোয়া থাকল৷ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here