#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–58
নিউইয়র্কের আবহাওয়া আজ দারুণ চমৎকার। ঝিলিমিলি রোদ হাসছে। বহু দিন বাদে সূর্য উঠেছে। সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে হাসনাহেনা কাজে লেগে গেলেন। যদিও বা দু’জন মানুষের ঘরের কাজে তেমন চাপ নেই। সে বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখ অভ্যাসগতভাবে দো’তলার দিকে গেল৷ কোন এক সময়ে বাসাটা মানুষ পূর্ণ একটা ঘর ছিল। হয়তো ঘরের ভেতরের মানুষ গুলোর মধ্যে কথা হত না তবুও তাদের অস্তিত্বই যেন আজ বড় মনে করায়। শূন্য এ বাসা তার বুকে বড় পোড়ায়৷ একটা সুন্দর, হাসি-খুশি পরিবারের সাধ তার এই জনমে আর হলো না। ওয়াশিংমেশিন অন করলেন। ওয়াশিং মেশিনে ধোয়ার পরও তার মন ভরলো না। হাত দিয়ে সাবান মাখা করে সে কাপড় ধুলেন। গত সাত দিনের কাপড় জমে আছে৷ রোদ উঠে না জন্য সে ইচ্ছা করে ধুতে দেয়নি। বাঙ্গালী হওয়ার দরুন কাপড় ধুয়ে রোদে না শুকালো তার শান্তি আসে না৷ সে বাসার সামনের বাগানে দড়ি টানিয়েছেন। সেখানে কাপড় শুকান। এটা নিয়ে জহির সাহেব সবসময় চেচামেচি করে এসেছেন৷ এখন আর করেন না। বয়সের ভারে বা কোন এক কারণে আগের দাপট তার মধ্যে আর নেই। বরং আজ-কাল হাসনাহেনাকে নিজের কাছে বসিয়ে টুকটাক গল্প করেন। শৈশবের গল্প করেন৷ নিজের গ্রামের কথা বলেন৷ হাসনাহেনা মন দিয়ে শুনে।
বাগানের দিকে আসলেন তিনি৷ ছয় বছরে বাসার সৌন্দর্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাদের সামনের বাসার দেয়াল ঘেঁষে চেরি ব্লসম ফুলের গাছে হয়েছে। ফুল ফুটলে অপূর্ব লাগে৷ তবে গাছটা এখনো ছোট আছে। তার ডানে পাশে বাসার প্রতিবেশী মিষ্টার থমাস গত হলেন এক বছর আগে। ওনার বাসাটায় নতুন মানুষ উঠেছে৷ একটা দম্পতি উঠেছে৷ ইটালি থেকে এখানে শিফট হয়েছে তারা৷ ভাব জমাতে এক-দুই বার এসেছিল৷ হাসনাহেনার ভালোই লেগেছে কথা বলে। আসলে তার কথা বলার কেউ নেই। বৃদ্ধ বয়সের এই একাকিত্ব তার অসহ্য লাগছে৷ নাতি-নাতনীদের সঙ্গে থাকা এরচেয়ে অনেক ভালো হত৷ ইমানের একমাত্র ছেলের কথা সে কানেই শুনে গেলেন। নাতিকে চোখের দেখাও দেখতে পারছে না। যদিও বা ইমান তাকে মা হিসেবে মানে না৷ তবুও ইমাদের মুখে দাদি ডাকটা শোনার জন্য ছটফট লাগে তার৷
পেছন থেকে জহির সাহেবের ডাকে সে তাকালো। মানুষটা যেন প্রতিদিন বৃদ্ধ হচ্ছে৷ চুল সব পেকে গেছে ওনার। হাতের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে৷
উনি বলে উঠে, ” চা খাবে হেনা? আমি নিজের জন্য বানাচ্ছি।”
–” চিনি দিবেন না৷ ডাক্তার আপনাকে সুগার খেতে বারন করেছে৷”
উনি চা বানাতে না গিয়ে বাগানে এসে দাঁড়ালো। বাগানে ঘাস গুলো লম্বা হয়েছে। ঝেঁটে দিতে হবে৷
সে পিষে মরা ঘাসের মতো নরম কণ্ঠে বলে, ” সাদ আসবে কবে কিছু জানো?”
হাসনাহেনার এ’প্রশ্নে খুব কষ্ট হলো। সাদ তো কতদিন হলো বাসা ছেড়েছে৷ নিজের মতো থাকছে৷ মাসে একবারও এ বাড়িমুখো হয় না। জবে না ঢুকে তার ছেলে কী-সব করে বেড়াচ্ছে। বিয়ের নাম তো মুখেও নেয় না৷ কিছু দিন আগে ফোন দিয়ে বলছিল,” মম আমি ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যাব৷”
সে বলে, ” সাদ মনে হয় আমেরিকায় নেই৷ ওয়ার্ল্ড ট্যুরে যাওয়ার ধান্দায় আছে৷”
জহির সাহেব অবিশ্বাস্য চোখে তাকালেন। হেনা বলে, ” এখন ও ইমানের সঙ্গে বাংলাদেশে গেছে। শেষ কথা হওয়ার সময় ও বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে যাচ্ছিল।”
–” জবে ঢুকল কোন?”
–” না। সামনেই ওর একটা ফটোগ্রাফি এক্সজিবিশন আছে৷”
জহির খান সামান্য কাঁপতে লাগলো। এরপর আফসোস ভরা কণ্ঠে বলে, ” আমার দুই ছেলেই হলো লাফাঙ্গা। বড়টা বারো মাসে তের বার চাকরি ছাড়ে আর ছোটজন বেকার থেকেই নিজেকে বীর ভাবে। ওরা দেশে গেল আর আমাকে কিছু জানালে না?”
–” ভেবেছি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।”
–” দেশের জন্য বড় টান লাগে৷ আরেকবার গ্রামে ফিরে যেতে মন চায়৷ মুন্সি চাচার দোকানটা দেখতে ইচ্ছা করে৷ আমরা আগে মুন্সি চাচার দোকানে রেডিও শুনতাম৷ কাঁঠাল গাছ দেখি না কতদিন হলো। স্কুলের পর আমরা দশ-বারো জন মিলে কাঁঠাল ভেঙে খেতাম৷ কী মিষ্টি সেই কাঁঠাল! দশজন মিলেও খেয়ে শেষ করা যেত না৷”
জহির রায়হান সাহেব রিটায়ার্ড করার পর প্রতিদিন হাঁটতে বের হন। রাস্তার বাচ্চারা সাইকেল চালায় উনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন। ইমানকে যেদিন প্রথম সাইকেল কিনে দিল কি খুশি হয়েছিল ছেলে তার৷ কিন্তু ইমান সাইকেল চালাতে জানত না৷ সে অফিস থেকে এসে ক্লান্ত শরীরেই ইমানকে নিয়ে বের হত। গ্যারেজে সাইকেল চালানো শিখাত ছেলেকে। ছেলের উচ্ছ্বাস ভরা চেহারা দেখলে ক্লান্তি আর থাকত না। সামান্য ভারসাম্যহীন হতে গেলেই ইমান ভয় পেয়ে বাবা বাবা বলে চিল্লাত। আজ ছয়টা বছর হয়ে গেল। ছেলে একবারও তাকে বাবা বলে ডাকে নি৷
বিকেলের দিকে জুই আসল তাদের সঙ্গে দেখা করতে। দীর্ঘ দুই’মাস পর সে এসেছে আংকেল জোয়ের বাসায়৷ এই কয়েকদিন সে কাজে বেশ ব্যস্ত ছিল। ফ্রান্স গিয়েছিল মাঝে৷ আসার সময় হেনা আন্টির প্রিয় পাস্তা আর আংকেলের জন্য মাংসের তরকারি বানিয়ে এনেছে৷ এ’দুটো মানুষ একা থাকে। ভালো-মন্দ খাবার আজ-কাল আর তৈরি করে না। হেনা জুইকে দেখে খুব খুশি হলো। জহির সাহেব গল্প করতে লাগলো। খাওয়া-দাওয়া করার সময় জহির সাহেব বলে উঠে, ” ভাবছি বাংলাদেশ থেকে একবার ঘুরে আসব। অনেক বছর যাই না দেশে।”
বাংলাদেশ শুনে জুই সামান্য মিইয়ে পরে। এরপর কী যেন ভেবে বলে, ” আমিও আপনাদের সঙ্গে যেতে যাই। বাংলাদেশ তো আমারও মাতৃভূমি।”
হাসনাহেনা তার পানে তাকালো। মেয়েটার জন্য মায়া লাগে। যেদিন সে সমস্ত সত্য জেনে ফেলে, ওইদিন হাসনাহেনার বুকে এসে চুপটি করে অনেকক্ষণ কেঁদেছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তারা তিনজন খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ যাবে সাদ থাকতে থাকতেই। হাসনাহেনা দারুণ খুশি। সে সকালে মেলে দেওয়া কাপড় তুলতে ভুলে গিয়েছিল। সেই কাপড় তুলতে বাগানে ফিরে আসে। বাগানে নিরালা চোখের জল মুছে। বাংলাদেশে গেলে নিশ্চয়ই ইমাদের সঙ্গে দেখা করবে সে।
___________________________
ভোর পাঁচটায় অফিসের বাস গাবতলি থেকে রওনা হবে৷ টোটাল বিশ জন মিলে কক্সবাজার যাওয়া হচ্ছে। এতো সকাল হওয়ার জন্য ইমাদকে আর জাগানো হলো না৷ মিরা রেডি হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকল। দুটো রাত, তিনটে দিন বাবুকে ছাড়া থাকতে হবে৷ বাবুর তেমন সমস্যা হবে না। চাচ্চুর সঙ্গে খেলবে৷ মিমোর সঙ্গে ঘুমাবে৷ ইমান বাবুর কপালে চুমু দিল৷ তখন তার মনে হলো, বাবুর গা বোধহয় একটু গরম। পরবর্তীতে আমলে নেয় না ব্যাপারটা। কম্বল গায়ে থাকায় গরম হয়ে আছে হাত এটা ভেবে সে বাড়তি চিন্তা মাথায় আনে না। তারা বের হয়ে যায়৷ গাবতলির নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তারা বাসে উঠে পরে৷ সামান্য লেইট হয়ে গেছে জন্য বাসের সব সিট দখল হয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষের পাশের সীট ফাঁকা কিন্তু ব্যাগ রেখেছে। কেউ আবার পা তুলে দিয়েছে৷ কেবল ডান পাশের রো’তে একসঙ্গে দুটো সিট ফাঁকা আছে৷ ইমান বলে, ” তুমি জানালার সিটে বসবে?”
মিরা বলে উঠে, ” হ্যাঁ।”
–” বস তাহলে।”
পাশাপাশি সিটে বসল তারা৷ যে যার মতো জার্নি ইনজয় করবে বলে পরিকল্পনা করে এসেছে৷ কিন্তু সকাল জন্য সবাই ঘুমু ঘুমু অবস্থায় আছে৷ ইমানের আজ বড় ক্লান্তি লাগছে। একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য মাথাব্যথা করছে৷ দু’চোখে ঘুম এসে হানা দিচ্ছে। কাল আড্ডা মারার পর রাত জেগে অফিশিয়াল কাজ করেছে৷ রাতে কেবল দেড় ঘন্টা ঘুম হয়েছে। বাস চলতে আরম্ভ করার পর পর সে মিরার গায়ে হেলান দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে যায়৷ ঘুমের রেশ ধরেই সে মাথায় হাত দিয়ে নিজের মাথা ব্যথার জন্য চুল বুলাতে লাগে স্বস্তি পাওয়ার উছিলায়। এবং পুরনো অভ্যাস মতে ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে বলে, ” মাথাব্যথা করছে।”
তার কাণ্ড দেখে মিরা হাসলো। সেইম অভ্যাস বাবুরও আছে। ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কথা বলার অভ্যাস বাপ থেকে ব্যাটা পেয়েছে৷ সে আস্তে করে ইমানের মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে এরপর কায়দা করে ধীর গতিতে মাথায় হাত বুলায়, কপালে ম্যাসাজ করে দেয়৷ একটু পর ইমান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়৷
তার ঘুম ভাঙ্গে মিহি কণ্ঠের ডাকে। সে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বাস থেমে আছে। হচকচিয়ে উঠে বলে, ” বাস থেমেছে কেন? পৌঁছে গেছি?”
–” উহু। ফ্রেস হওয়ার জন্য ফুড ভিলেজে এসে থেমেছে। সবাই নেমে গেছি৷ আপনার জন্য আমারও দেরি হলো। বাস থেকে নামুন৷”
ইমান বাস থেকে নামল। মুখে ঘুমের রেশ লেগে আছে৷ আবার ক্ষুধাও লেগেছে৷ ফ্রেস হয়ে সে ন্যান্সি ম্যাডামের সঙ্গে নাস্তা করল৷ মিরাকে চোখে চোখে দেখে রাখছে সে। ও পরোটা-সবজি খেয়ে চায়ের অর্ডার দিল। তার দশ মিনিট পর উঠে দাঁড়ালো এবং অন্য দিকে হাঁটা দেয়৷ তখনই চা টেবিলে সার্ভ করা হয়। ইমান ভাবল, মিরাকে চায়ের কথা জানানো দরকার নাহলে চা ঠাণ্ডা হলে খেয়ে মজা পাবে না৷ সে মিরাকে ফলো করতে করতে আগালো। একটা সময় ভুলে লেডিস্ ওয়াশরুমে মিরার পিছু নিয়ে ঢুকে পড়ে৷ প্রবেশ করতেই তার হুশ হলো আরেকটা মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে৷ ওয়াশরুমের কক্ষের ভেতর থাকা মহিলাগণ তার দিকে অগ্নি চোখে তাকালো। যেন এক্ষুনি তাকে মেরে ফেলবে তারা৷ চেচামেচি করে অবস্থা বেগতিক করে দিল৷ ইমানকে ঘিরে দাঁড়ালো সব মহিলারা৷ একজন বলে উঠে, ” দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে, কিন্তু এমন বেহায়াপনা করলেন কেন?”
আরেকজন বলে, ” মেয়েদের বাথরুমে ঢুকতে শরম লাগে না?”
ইমানের নাস্তানাবুদ অবস্থা। সে মিনমিন করে বলে, ” বউকে দেখতে আসছিলাম ভুলে ঢুকে গেছি।”
এক মহিলা বলে, ” অন্য মানুষের বউকে দেখার জন্য ঢুকছেন?”
তাকে উদ্ধার করার জন্য মিরা ছুটে এসে বলে, ” সর্যি, সর্যি। উনি আসলে আমার সঙ্গে ভুলে এখানে এসে পড়েছে৷”
–” এই লোক আপনার কে হয়?”
মিরা ইমানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমার মিষ্টার লাগে।”
ইমানের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠে।
তিন-চারটে উত্তপ্ত কথা শুনিয়ে ইমানকে ছেড়ে দিল তারা৷ ওয়াশরুমের বাইরে বেরিয়ে মিরা ধমকে বলে, ” আপনি কী মানুষ? মানে মহিলাদের ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন কোন সেন্সে?”
ইমান কাচুমাচু করে বলে, ” তোমাকে ফলো করে আগাচ্ছিলাম। কে জানত তুমি ওয়াশরুমে যাচ্ছো। তোমার দিকে তাকালে আমি অন্যসব কিছু ভুলে যাই৷ বল আমার কী দোষ আছে কোন?”
–” এখন যে গণগালি খেলেন তার বেলায় কী?”
–” তোমার মুখে “মিষ্টার লাগে” শুনার জন্য যদি আরো একশবার গণগালি বা গণধোলাই খাওয়া লাগে, আমি ইমান খান প্রস্তুত আছি।”
–” পাগল আপনি! ”
–” অনলি ফর ইউ।”
মিরা চোখ গরম করে বলে, ” আপনার বয়স ত্রিশ ক্রস হলো কিন্তু ভাব-সাব দেখে মনে হয় টিন এইজ চলছে।”
ইমান হেসে বলে, ” আই এম ওলওয়েজ সুইট এইটন্টিন৷ আমার ছেলে যখন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরবে৷ সেইম জায়গায় আমি বাপ হলেও বউ নিয়ে ঘুরব। ছেলে যে হোটেলে হানিমুনে চেইক ইন করবে, আমিও বউ নিয়ে সেই হোটেল হানিমুনে যাব৷”
______________________
— ইরা, তোমাকে একটা কি*স করি?”
সাদের সরাসরি এহেন প্রশ্নে ইরা হতবাক হয়ে যায়। এরপর রেগেমেগে তেড়ে এসে তার গায়ে এলোপাতাড়ি কিল মেরে উঠে বলে, ” বেয়াদব একটা! কর বড় সাহস তোর।”
ইরা রেগে গেছে। তার নাকের ডগায় রাগ যেন কুণ্ডলী পাকিয়ে তান্ডব করছে। সাদ হোহো করে হাসছে। দুপুর বারোটায় তারা ছাদের গাছগুলোয় পানি দেওয়ার নাম করে উপরে এসে প্রেম করছে৷ সাদ টবে থাকা একটা কাঠগোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে তার চুলের বেণীতে গুঁজে দিয়ে টুপ করে কপালে একটা চু’মু খেয়ে উঠে বললো, ” তুমি খুব দ্রুত মিস থেকে মিসেস হতে যাচ্ছো৷”
ইরা আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। সাদ বলে, ” শ্বাশু মাকে পটানোর মিশন চলছে৷”
ইরা কিছু বলতে পারলো না। তবে কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে সে বলে, ” সাদ, আমার কেন যেন মনে হয় আমার দ্বারা বিয়ে বা ট্রাস্টেট রিলেশন সম্ভব না৷ আমি কেন জানি কাউকে স্পেশালি কোন পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারি না৷ সব পুরুষ এক না। একজন খারাপ জন্য অন্যরা খারাপ না– এসব জানি৷ মানতে চাই৷ কিন্তু কেন যেন তাও বারবার মনে হয় সবাই খারাপ।”
সাদ তার দিকে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটা মনে হয় কাঁদছে৷ ইরা সম্পর্কে সে সব জানে। সে বলে, ” সবাইকে অনিকের মতো মনে হয়? ”
–” হুম”
–” এটা তোমার একটা মানসিক সমস্যা। সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার আছে৷ আসলে ওই হ্যারেজমেন্টের প্রভাব তোমার ভেতর থেকে যায়নি।”
ইরা তার দিকে তাকিয়ে থাকল অবাক হয়ে। সাদ তাকে টেনে এনে নিজের বুকের সঙ্গে মিশালো এরপর বললো, ” আমরা অনেকেই ভাবি শারিরীক ভাবে ক্ষতি নাহলেই আমরা সুস্থ। কিন্তু মাঝে মাঝে মানসিক অসুস্থতা আমাদের ভোগায়। অনিক তোমার ক্ষতি করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু ওই ঘটনার প্রভাব তোমার মনে রয়ে গেছে৷ যন্ত্রণা, কষ্ট-দুঃখ গুলো নিজের মধ্যে চেপে রেখেছো। চেপে রাখতে রাখতে যন্ত্রণা গুলো ফুলে-ফেঁপে উঠে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে যার জন্য তোমার আত্মার দু’টো সত্তা তৈরি হয়েছে। এক সত্তা নরমাল লাইফ চায়৷ যেখানে তোমার স্বামী হবে, সংসার হবে৷ দ্বিতীয় সত্তা প্রতিশোধ নিতে চায়৷ পুরুষ বিদ্বেষী সেই সত্তা৷ অনিকের করতে চাওয়া অন্যায় তুমি অন্য কারো সঙ্গে অন্যায় করে শোধ তুলতে চাও। নেগেটিভিটির শক্তি বেশি এইজন্য দ্বিতীয় সত্তা তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷”
সাদের কথা মন দিয়ে শুনলো সে। ভুল বলেনি ও৷ ইরার চোখ বেয়ে পানি গড়ালো। সে সাদের বুকে মাথা রেখে বলে, ” অনিকের ভাইয়ের বাজে ইঙ্গিতের কথা মনে হলেই, জানো কত রাত যে ঘুম হত না। মা বা আপুর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতেও গা গুলাত। আমি রাতের পর রাত বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছি। ঘটনা ঘটলো মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে কিন্তু ওই দশ মিনিট আমার বাকি দিন গুলোকে কুৎসিত করে দিল।”
সাদ শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” তুমি প্লিজ প্লিজ কান্না করো না৷ আই হেইট ইউর টিয়ার’স মোস্ট।”
চলবে।