ফেরা পর্ব-২৩

0
653

#ফেরা

২৩.

” তোমার ধারণা ভুল। এখন থেকে সবকিছু ঠিক হবে। ” দৃঢ়তার সঙ্গে সঞ্চয় বলল। এখন তো সে কোনো ভুল করেনি৷ তাহলে ঝামেলা হবে কেন? অন্ধকারে বেশ ভালোই কাটছে তাদের৷ একটু আগেই বিদ্যুৎ চলে গেছে৷ লোডশেডিং একসময় আনন্দই নিয়ে আসতো। সবাই মিলে হারিকেন জ্বালিয়ে ছাদে গল্প করতে বসত। এখন বাসায় জেনেরেটর আছে। বড়রাও এখন আগের মতো নেই আর ছোটরাও বড় হয়ে গেছে।
” আমার সবকিছুই ভুল, সঞ্চয়। ”
” তুমি আরো বেশি অদ্ভুত আর চুপচাপ হয়ে গেছ। আন্টিই বা কোথায়? ” সঞ্চয়ের প্রশ্নের উত্তরে স্বাভাবিক স্বরেই বলল, ” আম্মু মারা গেছেন। ” সঞ্চয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ” কবে? ”
” আমার এইচএসসি পরীক্ষার পরে। ”
” কী হয়েছিল? ”
” ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন। ”
” আর আঙ্কেল এখন কোথায় থাকেন? উনাকে তো বিয়েতে দেখিনি। ” শাজু এবার অবাক হলো। এই ছেলে কি কিছু না জেনেই বিয়ে করতে এসেছিল?
” আপনি কি কিছুই জানেন না? বিয়ের আগে কি কেউই আমার বিষয়ে আপনাকে জানায়নি কিছু? ”
” আসলে বিয়ের দিনই আমাকে জানানো হয়েছিল যে, আজকে আমার বিয়ে। ছবি দিয়েছিল কিন্তু আমি ছবি দেখিনি। বিয়েটা একপ্রকার জোর করে হয়েছিল। আমি জানতাম না, তুমিই তাহিরা। আমি তোমাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি৷ তাই বাধ্য হয়ে মা বাবার সিদ্ধান্তে হ্যাঁ বলেছিলাম। এমন না যে…” সঞ্চয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাচ্ছিল কিন্তু কীভাবে যেন ভুলে গেছে সে। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু মনে আসছে না তার।
” রিদ্দি আপুর কী হবে এখন?” শাজুর প্রশ্নে চমকে গেল খানিকটা। সে ভাবেনি শাজু এখনো মনে রেখেছে। পরে মনে পড়লো, রিদ্দিকে ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় নেই শাজুর।
” কেন? ”
” সে তো আপনার সাথে ছিলো না? ”
” আমার সাথে কোনোদিনও সে ছিলো না৷ আমার একটা ভুল ছিল ওই মেয়ে। ”
” হুম, আমাদের বিষয়ে জানাজানি হলে তখন কী হবে জানেন?”
” কী হবে? বিয়ে তো হয়েই গেছে? ”
” বিয়ে হলেই কি সব ঠিক হয়ে যায়?”
” কেন? এভাবে কেন বলছ?”
” আপনার ডাকনাম এখানে ভুলেও বলবেন না। ” সঞ্চয় কিছু সময় ভেবে জিজ্ঞেস করলো, ” বললে কী হবে?”
” বড় চাচা আপনাকে সামনে পেলে কী করবে তার ধারণা আপনি ভাবতেও পারবেন না৷ ” শাজুর কথায় সঞ্চয় হাসতে হাসতে বলল, ” কই আমি তো তার সামনেই ছিলাম। উল্টো আমাকে আদর করে খাইয়েছে। ”
” আপনিই সেই প্রেমিক সঞ্চয়, এটা তো জানে না। ”
” হ্যাঁ, কিন্তু তোমার এই বিষয়টা এতো ছড়াল কীভাবে? ”

*****

কলেজ গেইট দিয়ে বের হওয়ার পরে ঝালমুড়ি মামাকে খুঁজতে শুরু করলো শাজু। অনেকদিন যাবত ঝালমুড়ি খাওয়া হয় না তার৷ আজকে একেবারে মন ছুটে গেছে। সকালেই সঞ্চয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে। পরীক্ষা নিয়ে বেশ চিন্তিত মনে হয়েছে তাকে৷ এই পরীক্ষা শেষ হলেই তাকে শ্বশুড়বাড়িতে চলে যেতে হবে। এর আগে ঝামেলা না হলেই হয়। ঝালমুড়ি ওয়ালাকে না পেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। কয়েক মিনিট হাঁটার পরে তার মনে হলো কেউ একজন তাকে অনুসরণ করছে। না-ও তো হতে পারে৷ একই পথে কতজনরই তো গন্তব্য হতে পারে। কিন্তু তার এই চিন্তাকে ভুল প্রমাণিত করে পেছন থেকে ছেলেটা তাকে ডেকে বসলো। পুরনো এই নামের ডাক তাকে অস্বস্তিতেই ফেলে বেশি৷ উত্তর দিবে কি দিবে না। এটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না৷ পেছন থেকে আবারও ডাক পড়েছে। কণ্ঠ চেনাও মনে হচ্ছে না। কে হতে পারে? পুরনো কেউ?
নীরব প্রায় দৌঁড়ে শাজুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো ।
” আপনি কে?” শাজু ভয়ে ভয়ে প্রশ্নটা করলো । এই ছেলেকে পূর্বে সে দেখেছে কিনা ঠিক মনে করতে পারলো না৷
” আমি নীরব। ” হাঁপাতে হাঁপাতে ছেলেটা বলল।
” এই নামে আমি কাউকে চিনি না৷ ” শাজুর কথায় নীরব হেসে বলল, ” সঞ্চয়ের বন্ধু। মনে পড়েছে?” শাজুর চোখ মুখ কুঁচকে গেল চিন্তায়৷ এই ছেলে এখানে কী করছে? এই ছেলের সাথে সঞ্চয়ের তো এখন কোনো বন্ধুত্ব থাকার কথা না৷
” আপনি এখানে কী করছেন?”
” তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি। ”
নিশ্চয়ই নতুন কোনো ঝামেলা করতে এসেছে এখানে৷ এমনিতেই সে বেশ চিন্তার মধ্যে আছে৷ তার উপর নতুন ঝামেলা শুরু হলে কীভাবে কী সামাল দিবে সে?
” আমার সময় নেই আপনার সাথে কথা বলার মতো। ”
” মাত্র পাঁচ মিনিটের মতো লাগবে। ” আশেপাশে কেউ আড়চোখে দেখছে কিনা সেটা দেখে নিল শাজু। কলেজের সামনে সবাই সবার মতো করে ব্যস্ত। কারো দিকে তাকিয়ে থাকার সময় নেই।
” দ্রুত বলুন, আমার সময় কম। ”
” আমি তোমার সেল নাম্বারটা পেতে পারি? ”
” না ”
” প্লিজ শাজু শুধু সেল নাম্বারটাই তো চেয়েছি। ”
” দেখুন আমি এখন বিবাহিত। আমার হাজবেন্ড জানতে পারলে সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে আমাকে। ”
নীরবের মনে হলো তার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। এতদিন পরে খুঁজে পেয়েছে কিন্তু লাভ হলো কী?
” তুমি মজা করছ না তো? ”
” না, সেটা কেন করতে যাবো? ”

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here