বক্ররেখা(৭ম পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
180

###বক্ররেখা(৭ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

অফিস থেকে একটা নোয়াহ গাড়ি দেয়ায় আমরা ৩ জন ই ভিতরে বসেছি। সামনের সিট খালি ছিল।
আমার পাগলি মেয়ে বসেছে মাঝে আর মা খালা
কে যখন খুশি জড়িয়ে ধরছে। সে যে এই মুহূর্তে ভীষণ আনন্দিত……… তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। বললো,আপা আজ খুব খেপবে। গতরাতে সে আমার সাথে বাজি ধরেছে,বলে দেখতে পারিস কিন্তু আমি নিশ্চিত মা যাবে না। আজকে আমি আর বলিনি আর জানি তো তুমি অফিস টাইমে কোনো দিন ই আমাদের ফোন দাও না। সুতরাং,
তার জানার কোনো উপায় নেই। দাঁড়াও লাঞ্চের সময় ভিডিও কল দেবো। আমি হেসে বলি, কি রে এতো দুষ্টুমিও মনে আসে তোর।

বকুল এবার তাকে জিজ্ঞেস করছে,৫ দিন থাকবি না এটা শুনে তোর ছেলের কি মন খারাপ নাকি রে? ও মাথা নেড়ে বললো,মন খারাপ হতে যাবে কেন? বাবা, চাচা,দাদা, দাদী সবাই তো সাথেই আছে। ওর মন খারাপ না তবে ওর বাবার মন ভীষণ খারাপ মনে হয়। এই মেয়েটার মুখ ভীষণ আলগা বলে ছোট বেলায় অনেক বকা খেয়েছে। সামনে বসা ড্রাইভার শুনতে পাবে বলে ধমক দেই, কি হচ্ছে টা কি? তোর কি কোনোদিনও আর বয়স বাড়বে না নাকি?

একজনকে থামাতেই এবার ফাজিল বকুল সেই কাজে মন দিলেন। আরে তোর জামাই তো ইয়ং,
আমার বুড়ো জামাই যা ঢং করলো। রেগে বলছে,
তুমি এতো সর্ট নোটিশে সিলেট যাবে কেন? আমি
আপাকে ফোন করে জানিয়ে দেবো এখন না যেতে। আমি আঁতকে উঠে বলি,আজব !!! ওর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তুই এলি যে !!! তুই ছাড়া নিশ্চয়ই তার অসুবিধা হবে বলেই একথা বলছে। বকুল বলে আরে ছাড়ো তো। সারা জীবন ধরেই তো দেখছি, আমাকে ছাড়া তার চলে না। ছেলে, মেয়ে, ছেলের বৌ,২ জন সহকারী সবাই জানপ্রান দিয়ে দেখাশোনা করবে। আর সে তো অথর্ব কেউ নয় যে স্ত্রী ছাড়া অচল হয়ে পড়ে রইবে।

প্রতিদিন বিকেলে আড্ডায় বের হয়ে রাত ৯টায়
বাসায় আসে। তখন তো তার আমার কথা মনেও
থাকে না। এতো বছর ধরে দেখছি, ভালবেসে মন থেকে কোথাও নিয়েও যেতে চায় না। আমি অবশ্য এসবে মন খারাপ না করে ৩/৪ মাস গেলেই চিল চিৎকার শুরু করি। তখন ছেলে মেয়ে বলে, মাকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাও না কেন বাবা। সেই ক্ষণে ভদ্রলোকের মনে হয়, বউ এর মেজাজ ঠান্ডা করতে হলে এবার কিছু টাকা খসাতেই হবে। আমার কলেজে পড়ুয়া মেয়ে বলে, মা সত্যি কথা বলো তো? এভাবে যেচে,রাগ করে প্রতিবার যেতে হয় বলে তোমার মন খারাপ হয় না? আমি তখন হেসে বলি,একে তো নিজে থেকে কোথাও নিয়ে যাবার নাম করে না। এবার সেটা মনে পুষে রেখে অভিমান করে, আমিও যদি পাথরের মতো বসে থাকি………. তাহলে তো আমার জীবনে ভালো ও
মজার কোনো স্মৃতিই থাকবে না। তাই সেকেন্ডের
মধ্যেই মন থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দিতে চেষ্টা করি। এজন্যই মানে জোরে আদায় করি বলেই এখনও হয়তো আপার মতো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এই রকম আমার এখনো মনে হয় না। আমার সোজা হিসাব নিজে থেকে না বুঝলে অপর পক্ষকে ধাক্কা মেরে বুঝাতে হবে।

কথা শেষ হতেই বকা দেওয়ার বদলে আমার বোনটার হাত জোরে চেপে ধরি। বকুলের কথা শুনে বাচাল রাত্রিও চুপ হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর রাত্রি মৃদু স্বরে বললো, কিন্তু খালুর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। তাহলে এমন করে কেন? বকুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছে টাকা থাকলে কি হবে? মন তো থাকা চাই। এই ব্যপারটাতে আপা অনেক সুখী। দুলাভাই দেশে বিদেশে যে জায়গায়
ই যান না কেন আপাকে সাথে নিয়ে গেছেন। তিনি কি সুন্দর করে হেঁসে বলতেন, শুধু আমি দেখলে অর্ধেক দেখবো। আর নাজমা সহ দেখলে পুরোটা
দেখবো। অর্ধেক দেখতে কি কেউ চায়? তাই না আপা? আমার চোখ তখন জলে ভরে গেছে। মনে হলো সত্যিই কি ভালবাসতো মানুষ টা আমাকে।

আজ রোদের বেশ তেজ আছে। ঘন্টা দুয়েক পেরোতেই রাত্রির খিদে লেগে গেছে। সকালে শুধু চা খেয়ে নাকি বেরিয়েছে। আমি বকা দেই টেবিল ভর্তি খাবার ছিল, তোকে বললাম খাওয়ার জন্য।
এরকম করেই পিত্তি পড়ে যায়। বকুল বলছে আমি ভুনা খিচুড়ি ও ডিম ভাজি এনেছি তো। রাত্রি এবার ড্রাইভারকে হুকুম দিলো সামনে গিয়ে ছায়া দেখে গাড়ি দাঁড় করান প্লিজ। যেখানে গাড়ি থেমেছে সেখানে নেমেই বকুল চেঁচাচ্ছে, না না না। এখানে বসে খাওয়া যাবে না। কারণ এটা বটগাছ,
দুপুর হয়ে গেছে প্রায়। কতো জ্বীন ভুত থাকতে পারে। এটা শুনে গাড়িতে উঠে রাত্রি আবার হা হা করে তার বিখ্যাত হাসি দিচ্ছে। একটু সামনে গিয়ে একটা শিরীষ গাছের নিচে বসা হলো।

বকুলের কাজ সবকিছু ভীষণ গোছানো। ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্নাস নিয়ে এসেছে। আমি ড্রাইভার কে ডেকে বলি,নাম কি বাবা? বললো জুয়েল মিয়া। এবার বলি, জুয়েল তোমাকে আমি তুমি করেই বলছি। হাত ধুয়ে নাও, তারপর নাস্তা করো।
সে এবার বলছে জ্বিনা আমি নাস্তা করে এসেছি। বকুল বললো,যা করেছো সেটা এতোক্ষণে হজম হয়ে গেছে। তাছাড়া আমি সিওর এতো মজার শাহী ভুনা খিচুড়ি খাওনি। আমি আর কথা না বাড়িয়ে এক প্লেটে খিচুড়ি,ডিমভাজা আর একটু ধনেপাতার চাটনি দিলাম। বকুল কে বকছি এতো
তাড়াহুড়োর মধ্যে আবার চাটনি করার মানে কি? বকুল বললো, হঠাৎ মনে পড়লো আমার বোনঝি
এই চাটনি খুব ভালবাসে। আর কি না করে থাকা যায়? রাত্রিকে বকছে ও,এই তুই আরো নিচ্ছিস না কেন? এ কদিন ডায়েট ফায়েট ভুলে যা তো।

আমি আর এসব খাইনি, কিছুক্ষণ আগে রুটি খেয়ে এসেছি। বকুল দেখি এবার প্লেটে ওর জন্য খিচুড়ি নিচ্ছে। আমি হাঁটব বলে আস্তে আস্তে দাঁড়াই। মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো মা তুমি সাবধানে হাঁটবে,অমসৃণ পথ। শুনে মনে মনে বলি, সবকিছু এতো এতো মসৃণ কোথায় পাবি মা। আর ঠিক তক্ষুনি ব্যাগের ভেতর ফোনে কেউ যেন আমায় ডাকলো। তাড়াতাড়ি হাতে নিয়ে দেখি মেহের এর কল, রায়ান মনে হয় এসে পড়েছে। হ্যালো হ্যালো বলতেই অভিযোগের পাহাড় ছুটেছে রায়ানের, কেন তুমি আমাকে না নিয়েই চলে গেলে। তুমি তো জানো আমি এখন গুডবয় হয়ে গেছি। আমি মোটেই দুষ্টুমি করিনা।

কি বলবো ভাবতে ভাবতে বলি, ছোটফুপু আগেই
বলেছে পরের বার তোমায় নিয়ে যাবে। আমি বলি কি,এই সুযোগে রুমে একা থাকা প্র্যাকটিস করে নাও। আর ভয় পেলে মায়ের কাছে চলে যেও।কি বুঝলো আল্লাহ্ ই জানে, গম্ভীর গলায় বললো, না আমি তোমার বালিশে মাথা দিয়ে আমাদের রুমে ঘুমাবো। ওকে সহজ করার জন্য বলি, তোমার জন্য কি আনবো দাদুভাই? রেগে কিচ্ছু আনতে হবে না বলে ফোন কেটে দিয়েছে। আমিও আর কল দেইনি,রাগ ঠান্ডা হতে কিছু সময় দেয়া খুবই প্রয়োজন। এই মুহূর্তে তার রাগ চরমে উঠবে।

হুহ্ !!! বন্ধন হয়তো একেই বলে। আমি যত চাচ্ছি
বন্ধনের রজ্জুটা ঢিলেঢালা হোক,তত যেন বেশি করে চেপে ধরেছে। সজলের বাচ্চাগুলোকে আমি আগে স্কুলে নিয়ে যেতাম, খেয়াল রাখতাম এখন এরা নিজেরা দিয়ে আসে। বাচ্চাগুলো ডাকলেও আসে না। কি রকম একটা ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নাঈম বলছিল খুব শীঘ্রই না কি নতুন ক্লিনিক শুরু হয়ে যাবে। আমি তখন হেসে বলেছি বেল পাকলে কাকের কি? মানুষের নামের আগে ডাঃ লেখা থাকলেই কি সত্যিকারের মানুষ হয় সে? হয়না যে তার প্রমাণ ই তো আমার ডাক্তার ছেলে আর তার বৌ। পাওনা টাকা খুঁজাতে মাকে যারা এতো শত্রু মনে করতে পারে………. তাদের ভেতরে কি মনুষ্যত্ব বলে কিছু আছে নাকি?

দিনরাত এদের শুধু চাই আর চাই। কই আমার বোনপোও তো ডাক্তার, ও তো এরকম নয়। সে ইএনটি স্পেশালিষ্ট, একবার তাকে দেখিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে,বাইরে দেখি লিখে রেখেছে আপনার ভিজিটের টাকা দিতে সমস্যা হলে চিন্তার কিছু নেই। সরাসরি ভেতরে ডাক্তারের সাথে আলাপ করুন। ওর মা রাজশাহীতে থাকে। আমার আপন চাচাতো বোন হয়। সেদিন এসেই
ওকে ফোন দিয়ে সবকিছু বলে বললাম,যার মন
এতো ভালো, এতো সাহায্যকারী যে………….তার মা হিসেবে তোর ভীষণ গর্ববোধ করা উচিত। মনে রাখিস তোর জীবন ধন্য। আমি খুব দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের বংশে এরকম মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন আরো ডাক্তার দেন। এ কথা শুনে ও হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে।

আমি মৃদু পায়ে হেঁটে হেঁটে ধানী জমির আইল ধরে হাঁটছিলাম। হঠাৎ মা ডাক শুনে ফিরে দেখি রাত্রি ডাকছে। ইশারায় আসছি বলে হাঁটতেই দেখি একটা ৫/৬বছরের ছোট মেয়ে ১১/১২ বছর
এর একটি ছেলের পেছনে পেছনে হাঁটছে ও ঘ্যানঘ্যান করছে,দাদা চখলেট কিইন্যা দ্যাও না। সাথে সাথে অনেক যুগ আগের এমন দৃশ্য মনে পড়ে গেল। ভাইজান সকালে পাশের গ্ৰামের মাদ্রাসায় যাচ্ছে,আমি আর বকুল পেছনে পেছনে হাঁটছি আর বলছি ভাইজান আসার সময় বাজার থেকে আমাদের জন্য গরম জিলাপি নিয়ে এসো।মন ভালো থাকলে ভাইজান হেসে বলতো,আচ্ছা নিয়ে আসবো। খারাপ থাকলে খ্যাক করে উঠতো
সারাক্ষণ তোরা এতো খাইখাই করিস কেন রে?
যা ভাগ এখান থেকে। সেই কবে সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে।

আমি ছেলে মেয়ে দুটোকে বলি,চলো আমার সাথে দোকানে। দোকান মানে ঝুপড়ি ঘরে খুব নিম্নমানের চকলেট,চিপস আর জুস। কতো অস্বাস্থ্যকর সেটা মনে হতেই বললাম,এসব খেলে তোমাদের পেট ব্যথা করবে না? এবার ছেলেটির
চটজলদি জবাব, না আমরা তো পরতিদিন(প্রতি
দিন) ই খাই। বললাম, তোমাদের যা যা খুশি নিয়ে নাও। ওরা নিজেদের জন্য নিতেই হঠাৎ ছেলেটা
বলল, আমার আর একটা বইন আছে। তারে দিবাইন? বললাম হ্যা নিয়ে নাও। টাকা দিয়ে চলে আসছি,নাকে সর্দি লাগা মেয়েটি বলল,আরেক
বার আইলে আমাগোর বাড়িত্ যাইও। ওই বাঁশ ঝাড়ের পেছনের বাড়ি। আমি হেসে বলি, অবশ্যই যাবো। ওরা দেখি জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।

দোকান গাড়ির খুব কাছে বলে সবাই দেখতে পেয়েছে। তারপরও রাত্রি বলছে, এই ধু ধু মাঠের মধ্যেও মানুষ জোটালে কিভাবে মা? চলো চলো, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি চলা শুরু করলে বকুলকে বলি,মনে আছে রে ভাইজানের পেছনে পেছনে সকালে আমরা দৌড়ে দৌড়ে বলতাম, আসার সময় জিলাপি আনতে ঠিক সে রকম মেয়েটা ভাইকে চকলেট কিনে দিতে বলছে।
অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। মুহুর্তেই বকুলের চোখ দুটো ছলছল করছে। ওকে ভাইজান অনেক বেশি ভালবাসতো।

রাত্রি বলছে মা তো কিছু খেলে না। হবিগঞ্জে গিয়ে আমরা লাঞ্চ করে ফেলবো। আমি বলি না,আরে খাওয়া দাওয়া করতে করতেই পথে রাত হয়ে যাবে। হবিগঞ্জ এ চা নাস্তা করবো। সিলেটে পৌঁছে ভাত খাওয়া যাবে। ওরা সম্মতি দিল। জুয়েল মিয়া কে জিজ্ঞেস করি, তোমার মা আছে? এবার রাত্রি আস্তে করে বারণ করছে,আহ্ মা !!! এসব জিজ্ঞেস করছো কেন? আমি বলি, আমি তো আর তোমার অফিসের কেউ নই। ওর সাথে কথা বললে সমস্যা কি?

জুয়েল মিয়ার চটপট জবাব,জ্বি আছে। বললাম শুনো জুয়েল মিয়া বাধ্য না হলে সারাজীবন রাতে পুরুষ ছাড়া জার্নি করিনি। আজ তো মনে হয় রাত হয়ে যাবে। তুমি হবিগঞ্জে নেমে মোটামুটি ভালো একটা হোটেলে নামাবে। ওদের কে তাড়া দিবে,চা পরোটা জলদি দেয়ার জন্য। আর এখন থেকে ঢাকায় পৌঁছা পর্যন্ত সব জায়গায় তুমি যা ইচ্ছে যা খুশি তা খাবে। এসব বিল আমি দিবো। কোনো জায়গায় যেন তোমাকে ডেকে নামাতে না হয়। শুধু একটা ই অনুরোধ তোমার মা বোন কে সাথে নিয়ে গেলে যেভাবে খেয়াল রাখতে সেই রকম খেয়াল করবে। এই কদিন পরিবারের একজন হয়ে থাকবে।মনে করো তুমি আমার একটা ছেলে।
রাত্রি মৃদু স্বরে বললো,সব জার্নিতে পুরুষ থাকতে
ই হবে……. এমন কোনো কথা আছে নাকি মা? ২৪ ঘন্টা গাড়ি সাথে থাকবে, এতো ভাবছ কেন বলো?

রাত্রির এসব ভালো লাগছে না বুঝতে পারি। কিন্তু মা কে নিয়ে এলে এসব অত্যাচার একটু সহ্য করতেই হবে। এবার রাত্রির দিকে তাকিয়ে বলি,
এখন আসি মূল কথায়। তুমি অফিস থেকে থাকা
খাওয়ার টাকা পাবে তাইনা? কিন্তু আমি ও বকুল আমার টাকায় রুম নিবো ও খাওয়ার খরচ দিবো।
মোটকথা অফিসের কোনো টাকা যেন আমাদের খরচে না লাগে। রাত্রি বললো,মা সততার সংস্কার
তুমি আমাদের অস্থিমজ্জায় ঢুকিয়ে দিয়েছো। কি করে ভাবলে তোমার মেয়ে এসব অফিসের খরচে ঢুকাবে?

দুজনের কথাবার্তায় কিছুটা উত্তেজনার আঁচ পেয়ে বকুল এবার বললো, এতো দুশ্চিন্তা তুমি মাথায় নিয়ে ঘুরো কেন আপা? মেয়ে কি তোমার বোকা নাকি যে,সে মাকে চিনে না? দয়া করে সময়টাকে উপভোগ করো। ঠিক সেই সময় লুনার ফোন, মা এতো করে বলার পরও আমার এখানে আসো না। কিন্তু ছোট মেয়ে বলতেই সিলেট চলে যাচ্ছো। আমি হেসে বলি, সিলেট থেকে ফিরে তোর ওখানে আসছি। মা মেয়ে কদিন একসাথে থাকব। রনিকে বলিস্,ও খুশি হবে। যাক্ এবার অভিযোগ এর ডালি শেষ হলো। মা যে কতদিন এ পৃথিবীতে আছি সেটাই তো জানি না। তাই,এটাই ভালো ব্যবস্থা অভিমান বিলীন করে দেয়ার।

হবিগঞ্জে আমি লাল চা ও ২টা পরোটা খেলাম।
ওরা দুধ চা, পরোটা,সিঙ্গাড়া খেয়েছে। দেরি না হওয়ার জন্য এতো চেষ্টা করেও রাত ১০ টার আগে সিলেট শহরে পৌঁছানো সম্ভব হলো না। ভালো হোটেলে রুম বুক করা ছিল,রাত্রি তখন ওই রুমটা পাল্টিয়ে ৩ বেডের একটা রুম নিল। আমার দিকে তাকিয়ে বললো,মা তোমাদের ভাড়া আমি দিবো, অফিস নয়। ওটা এডজাষ্ট করে তোমাকে আমি দেখালেই তো হলো। অফিস জুয়েল মিয়ার জন্য না কি ব্যবস্থা করে রেখেছে কোথায় থাকবে। সকালে আসবে বলে সে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

এদিকে বকুলের স্বামী ফোন করে যাচ্ছে,ও দেখি ধরে না। আমি এবার বকি, এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? ফোন ধরছিস না কেন? ওর বেডে শুয়ে পা লম্বা করে বলছে, কি জানি কেন যেন ধরতে ভালো লাগছে না। ঠিক আছে ঠিক আছে, চোখ এতো বড় করে তাকানোর দরকার নেই, ধরছি আমি। ও হ্যালো বলতেই আমি ওয়াশ রুমে কাপড় নিয়ে ঢুকি। রাত্রি পেছনে ঢুকে দেখিয়ে দিল গরম জল এর ট্যাপ কোনটা। সিলেটে বেশ ঠান্ডা আছে। ভয়ে গোসল করিনি, হাতমুখ ধুয়ে চলে এসেছি। সবাই ক্লান্ত ছিলাম, খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।

হোটেলে ব্রেকফাস্ট হচ্ছে কমপ্লিমেন্টারি। অনেক গুলো আইটেম আছে। আমি ও আমার বোন আমরা জন্মগত ভাবেই বেশ ভোজন রসিক। কিন্তু,ক্ষেত্রবিশেষে জিহ্বা কন্ট্রোল করতে জানি বলেই হয়তো সমস্যা হয় না। কিন্তু ইদানিং আমার ডায়বেটিস ধরা পড়ে যন্ত্রণায় ফেলে দিয়েছে। রাত্রি ভীষণ ব্যস্ত। কোথায় কোথায় যাবে লিষ্ট দেখছে। অফিস ঠিক করে দিয়েছে এখানকার এক ভদ্রলোক ওকে নিয়ে বিভিন্ন অফিসে যাবেন।

ছোট বেলা থেকেই মেয়েটা সকালে খেতে পারে না। জোর করে চা এর সাথে একপিস ব্রেড খাইয়ে দিলাম। ল্যাপটপে আঙ্গুলগুলোর সতেজ বিচরণ চলছেই। এবার বলছে,গাড়ি তো নিয়ে যাচ্ছি। তোমরা দুজন কিন্তু বের হয়ো না মা। সন্ধ্যার পর ইনশাআল্লাহ একসাথে সবাই বেরোবো। বললাম, ঠিক আছে। নাস্তা শেষে এখান থেকে সোজা রুমে চলে যাবো। ও চলে যেতেই বকুল কে বললাম,২
বুড়ি এই শহরে বেরোলে কি এমন ক্ষতি হবে? চল্
নাস্তা করে দুজনে শহরটা একটু ঘুরে আসি।

রুমে গিয়ে পার্স নিয়ে রিসিপসনে বললাম, শহরের ভেতর কাছাকাছি কি দেখা যায় বলুন তো? বলল ১০ মিনিট লাগবে শহীদ মিনার দেখতে পারেন।একটা ওয়াক ওয়ে আছে, ঈদগাহ আছে,আলী আমজাদের ঘড়ি আছে,কীন ব্রীজ আছে…………
সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ হবে যদি আমি উবার কল করে একটা ফোরষ্ট্রোক আনিয়ে দেই। তাহলে
নিশ্চিন্ত মনে সারাক্ষণ ঘুরতে পারবেন। দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।

((চলবে)
###৮ম পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here