বক্ররেখা(৮ম পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
185

###বক্ররেখা(৮ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

ফোরষ্ট্রোকের ড্রাইভার সাহেব তার নাম বললেন, নুরু মিয়া। এখানকার স্থানীয় মানুষ সে। হাতের ৯ আঙ্গুল এর নখ ঠিক আছে শুধু বাম হাতের কনিষ্ঠ নখটা অতিরিক্ত লম্বা। তাতে আবার নেইলপলিশ(লাল রঙের) দেয়া আছে। আমাদের কে রিসিপসনের ছেলেটা খুব সাহায্য করেছে, ঘন্টা হিসেবে গেলে কত নিবে,বিকেল পর্যন্ত রাখলে কত নিবে একদম ফাইনাল করে দিয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আন্টি আপনার ও ড্রাইভার এর ফোন নম্বর আমার কাছে আছে। মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে সবকিছু ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করবো। আপনি টেনশন করবেন না। আমি হেসে বলি,বেশ উপকার করলে বাবা। দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে সবসময় হেফাজত করুন।

নুরু মিয়া আমাদের প্রথমেই নিয়ে গেলেন শহীদ মিনারে। শীতের মিষ্টি মিষ্টি রোদে ওখানে কিছুক্ষণ
বসে এবার গেলাম শাহী ঈদগাহ। এখানে টিলা কেটে দৃষ্টিনন্দন ঈদগাহ বানানো হয়েছে। অনেক লোক একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। ওখানে বসে বসে বাদাম খেলাম। গাইড হিসেবে নুরু মিয়া খারাপ না, কারণ জানা অজানা কথা গুলো এমন ভাবে বলছেন যেন ঐতিহাসিক দের ডায়েরী পড়ে এইমাত্র উঠে এসেছেন। কিন্তু,
সব যে নিরেট সত্য নয় সেটা বুঝতে অক্ষম এই ২ বুড়ি………….. এটাই হয়তো সে ধরে নিয়েছে।

ওখান থেকে নিয়ে গেছে টিলাগড় ইকো পার্কে। এটাকে মিনি চিড়িয়াখানাও বলা যেতে পারে। জেব্রা দেখে একটু পরের খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে হরিণকে যখন বকুল পাতা খাওয়াচ্ছিল, ঠিক তখনই আমার পুরো হৃদয়টা যেন কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে
হয়ে পড়ছিল। রায়ান থাকলে এখন ভীষণ খুশি হতো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত। যত যা ই বলি না কেন মায়া কাটানো এতো সহজ নয়। যদি
সহজ হতো তবে বাঁধন কাটার কষ্ট এতো অসহ্য হতো না। দোলনায় বাচ্চা একটা ছেলে বসে দোল খাচ্ছিল। বকুল ভুজুং ভাজুং দিয়ে ওকে তুলে কতক্ষন দোল খেলো,সেল্ফি তুললো। কেন জানি মনে হচ্ছে, ওর স্বামীকে দেখানোর জন্য এসব করছে।

নুরু মিয়া এবার বললেন,আন্টি খাদিম নগর টাউন থাকি একটু দূর। হিনো(সেখানে)পাম বাগান আছে। আপনারা দেখতা চাইন নি (চান না
কি)? এর কান্দাত(পাশে) চা বাগান আছে। ওটাও (সেটাও) দেখতা পারবা। আমি কিছু বলে উঠার আগেই বকুল বলে আমার খুব ইচ্ছে পাম গাছ দেখার। আগে কখনো দেখিনি তো। আমাদের তো
হাতে অফুরন্ত সময়, একটু দূর গেলেই বা ক্ষতি কি?

বলা হয় ভ্রমণে প্রত্যাশিত বলে কিছু নেই। প্রত্যাশা ছাড়াও অনেক কিছু ভালো/মন্দ লেগে যেতে পারে। আমি মালয়েশিয়ার অনেক বড় বড় পাম বাগান দেখেছি বলে ভেবেছি এটি আর কত বড় হবে? এটা সেই তুলনায় অনেক ছোট কিন্তু বকুলের ইচ্ছেয় আসা এই জায়গা নীরব নিস্তব্ধ থাকার কারণে ই হয়তো এতো ভালো লাগছে।
বকুল গাছের ছায়ায় কতক্ষন বসে নানান ভঙ্গিতে ছবি তুললো। নুরু মিয়া আমাদেরকে নিয়ে খাদিম চা বাগানও দেখালেন। কিন্তু রোদের কারণে ছবি ভালো নাও আসতে পারে বলে বকুলের সে কি আফসোস !!! আমি মনে মনে হাসছি, পৃথিবীতে কতো ধরণের আফসোস যে মানুষের থাকে !!!

খিদে লেগে গেছে দুজনের। পাম বাগানে ঢুকতেই রাত্রি ফোন দিয়েছিলো। শব্দহীন থাকার কারণে আমরা যে বাইরে বুঝতে পারে নি। বকুলকে নিয়ে
ফেরার জন্য রেডি হয়ে নুরু মিয়াকে বললাম,ভাত
খাবো। ভালো একটা হোটেলে নিয়ে যাও তো। সে মূল শহরে ভালো একটি হোটেলে নিয়ে আসতেই বলি,আসো আমাদের সাথে খাবে।আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন নুরু মিয়া এবার বলছে,
জ্বিনা,জ্বিনা আমি খাইতাম নায়। বাসাত গিয়া খাইমু। আমি বলি,আরে আসো তো। তুমি বেশি কথা বলো। এবার হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা
দারোয়ান ওকে ধমক দিয়ে বলল,আরে বেটা যা।
আদর করিয়া তোরে কইরা, তুই লম্বা ওস ক্যানে?

ও এতো লজ্জা পাচ্ছে আমাদের টেবিলে বসেনি।
পাশের টেবিলে বসেছে। বকুল গিয়ে জিজ্ঞেস করে বলেছে, তোমার যা প্রিয় খাবার সেটাই তুমি অর্ডার দাও। ও বলছে, আমার পছন্দর জিনিস অইলো খসির গোস(খাসির গোশত)। বকুল বলল
তাহলে তুমি এটাই অর্ডার দাও। আর কিছু দিতে চাইলেও দিতে পারো। বললো,কালা ভুনা দিমু নে।

ভর্তা জিনিসটাই আমার ভীষণ প্রিয়। আমার মা বিয়ের আগে বলতেন এই মেয়ে শশুরের খরচ কম করাবে। শুধু ভর্তা, ভাজি খায়। এখন প্রায় ৬ রকমের ভর্তা, কোয়েল ও ঘুঘু পাখি, বোয়াল মাছ, শুঁটকি ভুনা,সাতকরা দিয়ে গরুর গোশত,ডাল এই পদগুলো বকুল অর্ডার করে বলছে আজকে আমি খাওয়াবো আপা। আমি হেসে বলি, বেড়াতে গিয়ে বড় বোনের সামর্থ্য থাকলে ছোট বোনের টাকা খরচ করতে নেই। এবার সে অবাক হয়ে বলছে, এটা আবার কোন ধরনের নিয়ম? জীবনে
কখনো শুনিনি তো। আমি বলি, এই তো শুনলি।

নুরু মিয়ার খাবার এসে গেছে। হঠাৎ খুশি খুশি ভাব নিয়ে সে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
ইকানো(এখানে) নিয়ম ভালা আছে। তরকারি অর্ডার দিলে ভাত আর ডাইল ফ্রি। বুঝছইন নি? আমাদের টাও দিয়ে গেল। খাওয়া ভালো, কিন্তু সমস্যা হলো প্রচন্ড ভিড় বলার মতো না। মজার সব আইটেম পেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেছি। হোটেলে গিয়ে আমার ব্লাড সুগার না বাড়ার জন্য ঔষধ খেতে হবে। আমি বাটা খুলে পান মুখে দিলাম। তাকিয়ে দেখি নুরু মিয়া কোনো দিকে না তাকিয়ে আবেশে চোখ বুজে একমনে খাচ্ছে আর বকুল নিঃশব্দে তাকে না বলে ফোন দিয়ে ভিডিও করছে। নুরু মিয়ার চোখে মুখে খুশি ও তৃপ্তি যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। আসলেই পৃথিবীতে চোখের আশ মিটিয়ে দেখার মতো কতো দৃশ্য যে আছে !!!

আর দেরি করলে রাত্রি এসে আমাদের না পেয়ে হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলবে। আমাদের কালকে বেরোনোর প্ল্যানটাও চৌপাট হয়ে যাবে। নুরু মিয়া
বাইরে থেকে পান কিনছিল, বললো আফনারে একটা খিল্লি(খিলি) কিনিয়া দেই? আমি বলি,পান
খাওয়ার ব্যাপারে আমি ভীষণ সৌখিন বলতে পারো। ভালো পান ও সুপারি না হলে খেয়ে মজা পাই না। কিন্তু তুমি বলেছো, আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। সে সামনে এগোতে এগোতে বলছে,
আফনে আমারে ওত্তো দামী তরকারি দিয়া ভাত খাওয়াইলা, ইতার শুকরিয়া কিলা(কিভাবে) যে আদায় করতাম। আমি হেসে বলি, আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় চলে এসো। তাহলে শুকরিয়া আদায় হয়ে যাবে। পান খাওয়া লাল টকটকে দাঁত নিয়ে সে এবার রাজ্যজয়ের হাসি দিল।

ঘন্টা হিসেব করে ভাড়া দিয়ে কালকে আসার কথা বলে হোটেলের রিসিপসন থেকে চাবি নিয়ে আমরা দুজন সোজা রুমে চলে গেলাম। কাপড় পাল্টে বিছানায় গা লাগাতেই টায়ার্ড হওয়ার জন্য ই বোধ হয় দুচোখে কখন ঘুম এসে অন্যজগতে নিয়ে গেছে বলতে পারি না। কিছুক্ষণ পর শুনি
বকুল থাকছে,আপা উঠে পড়ো। চা এসেছে তো।
উঠে দেখি রাত্রি গোসল করে চা সামনে নিয়ে বসে আছে। ও এসে হোটেলে চা এর অর্ডার দিয়েছে।

ওদের সামনে দুই বক্সে দুই ধরনের পিঠা রাখা।একটাকে স্থানীয় ভাষায় নুনগড়া বলে। চালের গুঁড়া,আদা, রসুন, হলুদ সহযোগে কাই করে রুটি বানিয়ে সেগুলো হার্ট শেপে কেটে ভাজা হয়েছে। খুবই মজাদার একটি খাবার। অন্যটাকে সেমাই পিঠা বলে। চিকন করে হাত দিয়ে বানিয়ে অনেক দুধ,চিনি ও নারকেল দিয়ে খুবই মজাদার পিঠা। যে ভদ্রলোক ওকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন উনি নাকি আমি এসেছি শুনে সকালে উনার স্ত্রীকে বলেছিলেন এগুলো বানানোর জন্য। এখন এসে পৌঁছে দিয়ে গেছেন। আমি ভাবছি চিনি না জানি না ………… তারপরও পৃথিবীতে চলার পথে কতো মানুষের ভালবাসায় যে আমরা অসংখ্য বার সিক্ত হই।

রাত্রি গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলছে,স্যরি মা।
তোমাদের নিয়ে এসে সারাদিন বন্দী করে হোটেলে রেখেছি। চা খেয়ে সবাই ঝটপট বেরিয়ে যাবো।
আমরা সারাদিন যে বাইরে ছিলাম সেটা ওকে আর বলিনি। বললে নিশ্চিত কাল যেতে দিবে না।
গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করি,তা কোথায় যাচ্ছি আমরা? বললো কীন ব্রীজ দেখবো, পাশেই আলি আমজাদের সেই বিখ্যাত ঘড়ি দেখবো। এরপর সুরমা নদীতে ভাসমান রিভার ক্রুজ রেষ্টুরেন্টে গিয়ে দেখি কি খাওয়া যায়। গাড়িতে করে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি,প্রায় ১৫ মিনিটের মতো লেগেছে। বিরক্তিকর জ্যাম নেই বলেই হয়তো বা পৌঁছা গেছে। সুরমা নদীর পাড়ে রেলিং দিয়ে কিছু চেয়ার রাখা আছে। কতোক্ষণ সেখানে বসলাম। পাশেই বিখ্যাত ঘড়ি দেখে রিভার ক্রুজে উঠলাম।
অসংখ্য লাইট দিয়ে এর ভেতর বাহির সাজানো হয়েছে। রাত তো সেজন্যই দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। রাত্রি ও বকুলের ফটো সেশন আর শেষ হয় না। ওখানে হালকা কিছু খেয়ে গাড়িতে উঠতে
ই মেয়ে বলছে,মা খালা দুজনেই শোনো। মণিপুরী বেশ কিছু দোকান আছে। তোমরা কি যেতে চাও নাকি? বললাম, অবশ্যই যেতে চাই।

একই জায়গায় সারি সারি অনেক দোকান আছে। বিভিন্ন কোয়ালিটির বিভিন্ন রঙের মণিপুরী সুন্দর সুন্দর শাড়ি আছে। আমি আমার জন্য, বকুল,২মেয়ে,২ বৌ আর আজকের পিঠে করে দেয়া সেই ভদ্রমহিলার জন্য ৭টা শাড়ি কিনলাম। একই দোকান থেকে শীতের ভালো চাদর ট ৪টা।
বাসার ২ বুয়া ও ২ ড্রাইভারের বৌয়ের জন্য এসব এগুলো কিনেছি। রাত্রি অস্থির হয়ে গেছে এসবের টাকা দিবে বলে। বললাম, আমি টাকা এনেছি।লাগলে তো বলবোই তোকে।

বাচ্চারা কাপড়ের চেয়ে খেলনা খুব বেশি পছন্দ করে। একটু দূরের মার্কেট থেকে আমার ৫ জন নাতিনাতনিদের জন্য সেটাই কিনলাম। বকুল এর নাতিপুতি এখনো হয়নি। বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। রাতে নাঈম ভিডিও কল
দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললো। জিজ্ঞেস করলাম,
তোমার জন্য কি আনবো বাবা? হেসে বললো,
কমলা এনো মা। খুব খেয়াল করে থাকবে। ঠান্ডা যেন না লাগে। ফোন রাখতেই রাত্রি এবার বললো, ভাইয়ার মনটা আসলেই ভালো। মাঝের এই ধাক্কা টার খুব প্রয়োজন ছিল ওর।

পরদিন সকালে রাত্রি চলে যাবার কিছুক্ষণ পর নুরু মিয়া নীচে এসে ফোন দিতেই ২ বোন বেরিয়ে
পড়লাম। আসার সময় রিসিপসনের ছেলেটা কে বলি,আজ কোথায় যাওয়া যায় বলো তো বাবা?
সে বললো,লাক্কাতুরা চা বাগান দেখতে পাবেন আন্টি। ওদিকেই পর্যটনের মোটেল আছে। ঘুরে ফিরে দেখতে পারেন। মালনীছড়া চা বাগান আছে খুব সম্ভবত এশিয়ান সাব কন্টিনেন্ট এ পুরনো চা বাগান গুলোর মধ্যে এটি একটি। নুরু মিয়া বলল
তে(তাহলে) আমরা পয়লা যাইগি লাক্কাতুরা। হন
(সেখান) থাকি যাইমুনে মালনীছড়া। তৌ পর্যটনো
লইয়া যাইমু। আমি বলি, ঠিক আছে যাও। সে খুশি খুশি গলায় বলল,আফনে কুনু চিন্তা করইন
না যানি(যেন)আম্মা। নুরু মিয়া থাকলে মনো করবা আর কোনো ফেরেশানি নাই। বকুল এবার একদম আমার কানের কাছে মুখ এনে বলছে, তুমি আবার ওর আম্মা হলে কবে? কালকেও তো দেখলাম ও আন্টি ডাকছে। আমি হেসে হাত নেড়ে বলি,ডাকুক ওর যা খুশি। আমাদের তো অসুবিধে নেই কোনো। মনে মনে ভাবি, ভালবাসার নীরব কিন্তু প্রচন্ড একটা শক্তি আছে। একমাত্র পাষান ছাড়া বাকি সবাইকে মাখনের মতো গলিয়ে দেয়।

প্রবেশ ফি না থাকলেও ঢুকার মুখে ওরা বললো, একজন গাইড নিয়ে যান। উনি আপনাদের সব কিছু দেখাবে। উনাকে ২০০/ টাকা দিয়ে দিবেন।
লাক্কাতুরা চা বাগানে ঢুকেই বকুলকে বলি,বল্ তো
এই মেঠো পথ পরিচিত লাগছে না কি? ১ সেকেন্ড দেরি না করে সে বললো, আমাদের বাড়ির পথ মনে হচ্ছে। বেশি চওড়াও না আবার একেবারে সংকীর্ণও না…..এরকম আমাদের বাড়ির সামনের
রাস্তা ছিল। রোদের তেজ বাড়েনি বলে এবং দুই জনের ই হাঁটার অভ্যাস আছে বলে অনেক খানি পথ ভেতরে ঢুকেও কষ্ট হচ্ছে না। এবার দেখি অনেক রাবারের গাছ। গাছগুলো কি এক অদ্ভুত সিষ্টেমে কেটে রেখেছে। পাশে একটা ছোট বাটি ঝুলিয়ে রেখেছে। ওখানে গিয়ে সব জমা হচ্ছে।

আমাদের সাথে যে গাইড গিয়েছিলেন ভদ্রলোক একটু বয়স্ক মানুষ ছিলেন। তিনি ফিরতি পথে বলছেন, আফনারারে(আপনাদের) দেখিয়া বড় খুশ অইসলাম(খুশি হয়েছিলাম) যে এরা বেশি আটতা(হাঁটতে) পারতা নায়(পারবে না)। ও মাই গো, এখন দেখি আমার থাকি বহুত ভালা আটইন
(আমার থেকে অনেক ভালো হাঁটেন)। খুব আস্তে আস্তে না বললে বুঝা কষ্টকর ই বটে। সাধে কি আর এই ভাষাকে দুর্বৌধ্য বলা হয়? উনাকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে আমরা নুরু মিয়ার ফোরষ্ট্রোকে উঠে পড়ি।

এবার গন্তব্য মালনীছড়া চা বাগান। খুব একটা দূরে নই আমরা। ভালো লাগলো অনেকক্ষণ হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখলাম। আমাদের সাথে বরিশালের এক ফ্যামিলিও আছেন। এবার বকুলের ঘ্যানঘ্যান শুরু হয়েছে, কি ব্যপার চায়ের জায়গা অথচ চা নেই এখানে। আমাদের সাথে থাকা ভদ্রমহিলা এক কর্মীকে ডেকে চা কোথায় পাওয়া যাবে জিজ্ঞেস করতেই ডানদিকের পথ দেখিয়ে বলল,
ওদিকে দোকান আছে। কিছুদূর এগুতেই দেখি ৪/৫ জন লোক চা খাচ্ছে। আমাদেরও পরিস্কার কাঁচের মগে চা দিল। বকুল দুধ চা খায়, এবার বলছে খালি চা খাবো না কি? দোকানদার টেবিলে বিভিন্ন বৈয়ামে রাখা বিস্কুট, ছোট কেক,বন এসব দেখিয়ে বলছে কোনটি খাবেন। আমি নীচু স্বরে বলি,এসব খেলে পেটে ব্যথা করবে। ও দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে সব দেখে বিস্কুট এক টুকরো নিল আসল কথা হলো ও খিদে সহ্য করতে পারে না।

ওখান থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেল এ গেলাম।
সত্যি কথা বলতে ওখানে দেখার মতো কিছু মনে হয়নি আমার। উঁচু জায়গা,২টা দোলনা রাখা আর কিছু গাছপালা। বকুল বলছে আমরা তো এখানে ই দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে পারি। নুরু মিয়া হেসে এবার বিজ্ঞের মতো বলছে,আফনে কিতা যে মাথোইন রে গো খালাম্মা( আপনি কি যে বলেন খালাম্মা)? ইনো আফনারে গলা কাটা দাম
লইবো। চলোউক্কা কালকুর লাখান ভালা একটা রেস্টুরেন্টে লইয়া যাই আফনারে (চলেন কালকের মতো ভালো একটি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যাই আপনাকে)।

বকুলকে আবার কেউ খালাম্মা ডাকলে ওর মাথা গরম হয়ে যায়। কিন্তু নুরু মিয়া যখন বলছেন অগত্যা কি আর করা !!! তার তত্ত্বাবধানে আমরা ঐ রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খাবার অর্ডার দিলাম। আমার কাছে লেগেছে কালকের মতোই খাবারের স্বাদ। নুরু মিয়া পাশের টেবিলে বসে তার প্রিয় খসির গোস আর কইতর(কবুতর) দিয়ে খাচ্ছেন। খাওয়া শেষ হতে হতে বিকাল ৪টা বেজে গেছে। আমি ভাবছি বিল দিয়েই নেমে যাব।
রাত্রি না আবার হোটেলে আজ আগে আগে চলে আসে। আসার পথে সত্যিই দেখি এতো হিমেল বাতাস বইছে যেন আমার বুড়ো হাড়গোড় সুদ্ধু কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

(চলবে)
###৯ম পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here