বক্ররেখা(৯ম পর্ব) ###লাকি রশীদ

0
166

###বক্ররেখা(৯ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

সেদিন রাত্রি প্রায় সাড়ে সাতটায় এসেছিল।আজ সারাদিন না কি অফিসের জন্য পছন্দসই জায়গা দেখতে ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই শেষ। আগামীকালের জন্য কোনো কাজ বাকি না রেখে আজকেই সব শেষ করে এসেছে। ঠিক করেছে আগামীকাল লালাখাল, জৈন্তাপুর যাবো আর পরশু সাদা পাথরের দেশ ভোলাগঞ্জ যাওয়া
হবে ইনশাআল্লাহ। এর পরের দিন ভোরবেলায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবো।

রাত্রি ছোটবেলা থেকেই অনেক পরিশ্রমী কিন্তু আজ মনে হয় বেশি টায়ার্ড ও। আসা অব্দি এখনো সোফায় বসে আছে। আমি বলি,হাতমুখ ধুয়ে চা টা কিছু খা।খেয়ে চোখদুটো বুজে শরীরটা সম্পুর্ন ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে পড়। দেখবি খুব ভালো লাগবে। সে এবার বলছে কিন্তু আমি তোমাদের দুজনকে নিয়ে বাইরে বের হতে চাচ্ছিলাম। এতো খারাপ লাগছে, আসার পর থেকে তোমরা দুজন হোটেলে বন্দী হয়ে আছো। না মা চা খেয়ে সবাই আমরা বেরিয়ে যাবো।

এবার আমি বকুলের দিকে তাকাই,সত্য কথা না বললে এই মেয়ে কষ্ট করে বাইরে নিয়ে যাবেই। তাই দুদিনের আমাদের ঘুরাঘুরির সব খবর ওকে দিলাম। মেয়ে এবার রেগে গেছে,আশ্চর্য মা কোন
সাহসে তোমরা অজানা অচেনা শহরে এভাবে একা একা ঘুরতে বের হলে? যদি এখন তোমাদের উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যেত? বকুল এবার বলছে,
আমার কিছু হয়নি। তবে আপা ২৭/২৮ বছরের রেডিমেড একটা ছেলে পেয়েছে। আমি বলি, কি সব আজেবাজে কথা বলছিস? সে হেসে বললো,
আগের দিন আন্টি বলে ডেকে পরদিন আবার তোমাকে আম্মা বলে ডাকছে। মেয়ে এবার হুকুম জারি করছে, শোনো মা‌ এই ছেলেটা ফোন করলে আর কখনো ফোন ধরো না। মনে মনে সে কোন মতলব ভাজছে কে জানে?

তোয়ালে নিয়ে রাত্রি ওয়াশরুমে ঢুকতেই নুরু মিয়া কে ফোন দেই। কালকে গাড়িতে যেতে হবে বলে বলি,স্যরি তুমি একটু কষ্ট করে কালকে সন্ধ্যায় আসতে পারবে? বললাম ফোন দিয়ে এসো কিন্তু। বকুল এবার বলছে, ওকে আবার আসতে বললে কেন? তোমার মেয়ে শুনলে খুব রেগে যাবে তো। আমার সাফ জবাব আশ্চর্য, ওর বৌয়ের জন্য কেনা শীতের চাদর টা দিতে হবে না? শুধু শুধু রাগ করলেই হলো? রাতের খাবার রুমে আনিয়ে সবাই খেয়ে নিলাম।

পরদিন বের হতে হতে সকাল দশটা বেজে গেছে।
প্রথমেই লালাখাল গেলাম। বোট ভাড়া করে গেলাম লালাখাল জিরো পয়েন্ট এর কাছাকাছি। পাশেই বিএসএফ ক্যাম্প। মাঝি বলছে এতো সুন্দর সবুজ পানি খুব কম দেখা যায়। রাত্রি হেসে বললো,মা খালাকে নিয়ে আসছি কাকা তাই ভাগ্য ভালো বলতে হবে। সেজন্যই পানি সবুজ স্বচ্ছ দেখা যাচ্ছে। মাঝি এবার পানের পিক গিলে বলে,
ইতা এক্কেবারে হাছা কথা কইছইন (এটা একদম সত্যি কথা বলেছেন)। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো। শীতের সময় তো, ভালো লাগছে।

বকুল এবার বলছে জাফলং যাওয়ার আগে লাঞ্চ করতে হবে। রাত্রি বলল,এইতো সামনে সারীঘাটে
খেয়ে নেবো। বলতে বলতেই নাঈমের ফোন, মা কি করছো? বললাম লালাখাল ঘুরে জাফলং যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি বাবা। বকুলের খিদে লেগে গেছে,তাই সারীঘাটে দুপুরের খাবার খাবো। হেসে বললো আমার পেটে যাওয়ার জন্য ২ লোকমা ভাত বেশি খেও। আমার মনে হচ্ছে, কতোদিন ধরে তোমাকে দেখছি না। তাড়াতাড়ি চলে এসো মা প্লিজ। এবার গম্ভীর গলায় বলি,তা বললে কি চলে বাপ। মাকে সবসময় এখন হয়তো এতোটা কাছে পাবে না। ঠান্ডা স্বরে বলছে, কেন তুমি এই বেড়ানো শেষে আবারো কোথাও যাচ্ছ না কি? হেসে বলি, দুনিয়া থেকে যাবার সময়ই চলে এলো
বাবা। এবার বলছে, তোমার মাথায় সবসময় এটা ঘুরে নাকি মা? বেড়াতে গিয়েছো কোথায় আনন্দে থাকবে………. তা না এসব কথা বলছো। খেয়াল রাখবে ঠান্ডা যেন না লাগে। রাখছি, দোয়া করো।

সারীঘাটের হোটেলে কি আছে জিজ্ঞেস করতেই বলছে,দেশী হাঁস মুরগি আছে। আমি বলি, হাঁস খাওয়া বেশি হয়ে যাচ্ছে। মাছ আছে নাকি? বলল
না এখন নাই। তবে অন্যদিন ছোট মাছ থাকে।হাস বা মুরগি নিলে জনপ্রতি ১৮০/ টাকা করে পড়বে। এগুলো দেশী বলছে। ভর্তা নিলে আলাদা দাম দিতে হবে। আমরা তিনজন ই হাঁস দিতে বললাম।
ড্রাইভার জুয়েল মিয়াকে বললাম, তুমি হাঁস মুরগী
দুটোই নাও। কোনো সমস্যা নেই। সে এবার হাসতে হাসতে বলছে,বেশি হয়ে যাবে। এতো খাওয়া যাবে
না।

ও হাত ধুতে যেতেই রাত্রি বললো,আচ্ছা মা রাগ না করলে একটা কথা বলি? আমি হু বলতেই
বললো,এই যে তুমি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করছো,
মা আছে না কি? তারপর বলছো একদম বাধ্য না হলে পুরুষ ছাড়া জার্নি করি না। তারপর ধরো ওকে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি বেশি আদর করছো। ও তো ঢাকা গিয়ে এগুলো অফিসের অন্যদেরকে বলবে,ম্যাডামের মা এসব বলেছেন। বাকিরা তখন এ নিয়ে হাসাহাসি করবে। ওদের সাথে আমরা একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলি মা।

আমি হেসে বললাম, কেন ওদের সাথে এসব কথা বললে লজ্জার কি আছে? আমাকে নিয়ে চললে এরকম লজ্জায় তোমাকে পড়তে হবে।এবার আমি একটা কথা বলি? আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বছরের পর বছর সহকারী কে এমন কি ইহুদিদেরকেও অন্য চোখে দেখেন নি বা কিছু বলেননি। সেজন্যই উনাকে সবাই নিজের প্রাণের থেকেও ভালবাসতো। এমনি এমনি কি আর তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলা হয়? এই তুলনায় আমরা তো কিছুই না।

আমি জানি শ্রেণীবৈষম্য আমাদের মজ্জ্বাগত, অনেক সময় আমারও এসব ভুল হয়। কিন্তু, তারপর ভাবি একফোঁটা নাপাক পানি থেকে যার জন্ম আর কবরের বাঁশ পচেঁ যাওয়ার আগে যার শরীর পচেঁ যাবে………সে কেন বৈষম্য দেখাবে? দেখানো উচিতও নয়। আর আমি আমার সারা জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি ,যদি তুমি তাদের হৃদয় খুলে আদর করতে পারো তবে অনেক ক্ষেত্রে এরা পরিবারের সদস্যদের চেয়েও আপন হয়ে যায়। সুতরাং, ঠিক পথেই আছি মনে হয়। মেয়ে এবার জড়িয়ে ধরে বলছে, আমি কিন্তু আগেই বলেছি রাগ করতে পারবে না মা। সমস্যা হলো তোমার মতো তো আর হতে পারলাম না। দুর্ভাগ্য হয়তো একেই বলে।

শীতের হাঁস, সত্যি অনেক মজা। হাঁস খেতে খেতে বকুল মুখে তৃপ্তির উহ আহ শব্দ ছুড়ে দিয়ে বলল,
এই লোকাল হোটেলে এতো মজার রান্না হয় কেউ বিশ্বাস করবে বলো? আমি হেসে বলি, সত্যি এই বারের বেড়ানোতে হাঁস খাওয়া আমাদের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত ছিল। বেশি খাওয়া হয়ে গেছে বলে বকুল ও রাত্রি কিছূক্ষণ এমাথা ওমাথা হাঁটাহাঁটি করলো। শুরু হলো জাফলং এর দিকে যাত্রা। পথে জুয়েল মিয়া রাত্রিকে বললো,ম্যাডাম
এটা শ্রীপুর চা বাগান। আপনারা কি নেমে দেখতে চান? রাত্রি সম্মতি দিতেই সে গাড়ি থামালো। নেমে দেখি সত্যিই এতো সুন্দর সবুজ যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। রাত্রি বলছে,মা দেখো দেখো ভারতের পাহাড়,যা ভিউ !!! খালা বোনঝির ফটো তোলার বিরাম নেই। চলছে তো চলছেই।

এবার উঠে জাফলং এর দিকে যাওয়ার সময় জুয়েল মিয়া বলছে, এই রাস্তা খুব ভাঙ্গা ছিল। এখন ভীষণ ভালো হয়েছে বলে কষ্ট কম লাগছে। ওখানে পৌঁছে দেখি অসম্ভব ভিড়, অনেক গুলো গাড়ি এখানে সেখানে রাখা। মানুষ আর মানুষ, বাচ্চারা অকাণরণেই চিৎকার করছে,হাসছে ও দৌড়ুচ্ছে। আমি হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পানিতে পা ভেজালাম। শীতল,স্বচ্ছ পানি………..শরীর জমে যাবে তেমন। দূরে মেঘালয় পাহাড় দেখা যাচ্ছে। এবার বোট ভাড়া করে সংগ্ৰামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে গেলাম। যাবার পথে রাত্রি বাতাবি লেবু ও বরই আচার(শুকনো বরই গুড় দিয়ে মাখা) ৩ জনের জন্য কিনলো। ১০ টাকা করে রেখেছে। আমাদের হাতে দিয়ে বললো, আমি আসলে ভাবিইনি মা যে
রাজি হবে এখানে আসতে। কি রকম স্বপ্ন স্বপ্ন যেন লাগছে। বকুল বলছে আমার অন্য কথা মনে হচ্ছে, আপাকে দুলাভাই থাকতে যেরকম লাগতো
ঠিক সেরকম ই লাগছে। এই দুই বছর কি এক ভীতু ভীতু ভাব নিয়ে থাকতো সেটা কেটে গেছে।

বোট থেকে নেমে ৫/৭ মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণা। যতো কাছে যাচ্ছি বাতাসে মিশে থাকা ভিজে ভিজে আদুরে হাওয়া যেন গায়ে শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। খুব ভালো লাগছে।

এবার রাত্রির কিছুটা মন খারাপ কারণ ঝর্ণায় পানি নেই। স্থানীয় একজন কে ঝর্ণায় এতো কম পানি কেন জিজ্ঞেস করতেই বললো পানি বেশি অইতো কিলা(পানি কিভাবে বেশি হবে)? আইজ চাইর দিন ধরি মেঘ অইছে না (আজ চার দিন ধরে বৃষ্টি হয়নি)। কিছু ইয়াং ছেলে গোসল করবে বলে কাপড়চোপড় নিয়ে এসেছে। কিন্তু কম পানি থাকার কারণে করতে পারছে না। বৃষ্টি হলে না কি ঝর্ণা ভরভরন্ত থাকে। ঝর্ণার চারদিকে থাকা পাথর গুলোতে S+N এর মতো নানান প্লাসে ভর্তি লেখা।
এতো সুন্দর জায়গাটাকে এসব লিখে আবর্জনা
যেন বানিয়ে ফেলেছে। শীতের দিন,খুব তাড়াতাড়ি
দিনের আলোয় টান পড়ে। রাত্রিকে বলি ফেরা
যাক। মায়াময় একরাশ সুমধুর স্মৃতি নিয়ে আমরা
ফিরতি পথে হাঁটা ধরলাম। গন্তব্য সিলেট শহরে।

হোটেলে পৌঁছেই দেখি নুরু মিয়া হাতে একটা পোঁটলা নিয়ে রিসিপসনে বসে আছেন। মনে পড়লো ওকে তো আমি নিজেই সন্ধ্যার পর আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তখন তো বুঝিনি যে,
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে গড়িয়ে যাবে। নুরু মিয়া বিগলিত হেসে দাঁড়িয়ে বললো, আমার কফাল ভালা যে আফনারারে পাই লাইছি (আমার ভাগ্য ভালো যে আপনাদের পেয়ে গেছি)।আম্মা আমি আফনার লাগি জকিগঞ্জি গুয়া লইয়া আইছি
(আম্মা আমি আপনার জন্য জকিগঞ্জের সুপারি
নিয়ে এসেছি)। খুব মজা ইনোর(এখানের) গুয়া।
আর বাছিয়া বাছিয়া এক বিড়া পান লইয়া আইছি
(আর বেছে বেছে এক বিড়ে পান নিয়ে এসেছি)।

রাত্রি এবার বিরক্তির স্বরে বললো,আমরা পরশু রাতে গিয়ে ঢাকা পৌঁছাবো। এতো দিন আপনার পান কি ভালো থাকবে না কি? সব পচেঁ যাবে না?
শুধু শুধু কেন যে এসব করেন। ওর কথায় কঠিন শব্দের বাছাই এবং ভীষণ বিরক্তির ছোঁয়া নুরু মিয়াকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। অবুঝ কাউকে
বুঝাচ্ছে এমন ভাবে হেসে বললো,আফনে ম্যাডাম
বুঝছইন না। আমি ৩/৪ বার ভালা করি পানরে ধইয়া আমার বউরে কইছি ভালা কাপড় দিয়া মুছিয়া দিতো। খুব ভালা মতো মুছিয়া ১টা হুকনা
ব্যগও ভরিয়া দিছে। ৪/৫ দিন যেছা লাখান ভালা
থাকবো (আপনি ম্যাডাম বুঝেন নি। আমি ৩/৪ বার ভালো মতো পান ধুয়ে বৌকে বলেছি ভালো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে। ও খুব ভালো মতো মুছে ১টা শুকনো ব্যগে ভরে দিয়েছে। কমপক্ষে ৪/৫ দিন ভালো থাকবে)।

রাত্রি প্রায়ই গর্ব করে বলে,জানো তো মা এখন
অফিসে আমার আন্ডারে ৭/৮ টা ছেলে মেয়ে থাকে। মানে ওদের শিখিয়ে পড়িয়ে তৈরি করে দেই আমি। কিন্তু এই মুহূর্তে তুখোড় রাত্রিও নুরু মিয়ার যুক্তিতে হেরে যাচ্ছে। আমি এবার বলি, কেন তুমি এতো কষ্ট করে, এতো টাকা খরচ করে এসব এনেছো বলোতো? সে এবার কাতর স্বরে বললো,কেনে? আফনে ইতা খাইতা না নি(কেন?
আপনি এগুলো খাবেন না)? আমি হেসে বলি,
আমাকে আমার এক ছেলে ভালবেসে রোজগার এর তোয়াক্কা না করে খুঁজে পেতে ভালো মানের পান সুপারি নিয়ে এসেছে। আর আমি সেটা খাবো না? কি যে বলো তুমি?

এবার সে ভীষণ খুশি হয়ে বললো (আমার বৌ এ রান্ধোইন ভালা। খুব ইচ্ছা আছিল আফনারারে
চাইরটা ভাত খাওয়াইমু। অইলে বস্তিত থাকি তো,
আফনারা যাইতা নায় এরলাগি কইছি না (আমার
বৌ খুব ভালো রাঁধে। ইচ্ছে ছিল আপনাদের চারটা ভাত খাওয়াবো। কিন্তু বস্তিতে থাকি বলে
বলিনি, আপনারা হয়তো যাবেন না)। আমি হেসে বলি,পরের বার যাবো ইনশাল্লাহ। রাত্রির দিকে
তাকিয়ে বলি, চাদরের প্যাকেটটা নিয়ে আয় তো মা। অনেক ক্ষণ ধরে রাত্রির চোখে মুখে বিরক্তি ঝরে পড়ছে। কিন্তু আমি সেটা দেখেও দেখছি না।
এতো কিছু দেখলে নাজমা বেগম তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে না। অন্যের গতিতে চলতে হবে।

রাত্রির সামনে টাকা দিলে নুরু মিয়ার অস্বস্তি হতে পারে ভেবে রাত্রিকে নিয়ে লিফট চলতে শুরু করলে আমি ৩০০০/ টাকা ওর হাতে নিয়ে বলি, নূরু মিয়া আমার একটা দাদুভাই আছে না? এটা দিয়ে ওকে কিছু কিনে দিও। এবার সে হা হা করে দাঁড়িয়ে গেছে, আম্মা আমি টেকার লাগি ইতা করছি না। মায়া লাগছে করি করছি। আফনে হিদিন কইলা না নি পান খাওয়াত আফনে সৌখিন মানুষ,ঔ আমি ভাবছি আফনারে ভালা জিনিস আনিয়া দিমু( আমি টাকার যেসব করিনি। আপনি সেদিন বলেছিলেন পান খাওয়ার ব্যপারে আপনি ভীষণ সৌখিন, তাই ভালো জিনিস এনে দেবো ভেবেছি)।

আমি এবার বলি, শোনো নুরু মিয়া ভালবাসা কিন্তু টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তাহলে পৃথিবীর সব বিত্তবানদের লোকেরা ভীষণ ভালবাসতো। আমাকে ভুল বোঝো না, দাদী কি তার নাতিকে উপহার দিতে পারে না? সে কিছু বলার আগেই
রাত্রি চাদর নিয়ে চলে এসেছে। বলি, এটা আমি বৌমার জন্য কিনেছি। আগামী বার আসলে ওর
সাথে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। সে এবার বলছে,
আমি মাঝে মাঝে ফন করলে আফনে মাথবা নি?
(আমি ফোন করলে আপনি কথা বলবেন না কি?)
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, এটা একটা কথা হলো? অবশ্যই করবে আর আল্লাহ না করুন তুমি
বিপদ আপদে আমাকে মনে রাখবে। ঠিক আছে? সে মাথা নেড়ে বকুলকে সালাম খালাম্মা বলে চলে গেল।

রেষ্ট নিয়ে নামাজ, খাওয়া শেষ করে খবর দেখছি,
বকুল সুপারির ব্যগ খুলে বললো,আরে সত্যিই তো !!! দেখো আপা খুব সুন্দর ও পরিস্কার সুপারি
এনেছে। দাঁড়াও আমি তোমাকে একটা কেটে দেই। আমি খেয়ে দেখি আসলেই ভীষণ মজা। এতো বছরের খাওয়ার জিহ্বা, কোনটা খেতে ভালো সেটা কি বুঝবো না? বললাম, ওর আনা এক টুকরো পান দে তো। এবার আধশোয়া রাত্রি চেঁচিয়ে উঠলো,আশ্চর্য মা তোমার কাছে কি আর পান নাই নাকি? কিছু মিশিয়ে এনেছে কিনা কে জানে? বকুল এবার বলছে, তোকে দেখে গেছে।
ও ভালো মতো বুঝেছে এই দারোগা মহিলার মা কে কিছু করে জেলে যাবো না কি? নারে আসলেই
ছেলেটি ভীষণ ভালো। আপাকে খুব শ্রদ্ধা করে।

রাত্রি এবার বললো, সে তোমরাই ভালো জানো।শুনো কালকের দিনটা শুধু আমরা সিলেটে আছি। কালকে ভোলাগঞ্জ ও রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট দেখবো। পরশু সকালে ইনশাআল্লাহ বাই বাই করবো সিলেট কে। এখন দুজনে ভালো করে ভেবে বলো, কোনো কিছু নেয়ার ইচ্ছা আছে না কি? মানুষ আছে, কিনে দিতে পারবে। বকুল মাথা নেড়ে না বলছে, আমি বলি বড় সুন্দর ১টা শীতল পাটি ও নামাজের একটা পাটি কিনতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পয়সা নিতে হবে। তাহলেই উনাকে দিয়ে আনানো যাবে। রাত্রি বললো, ঠিক আছে আমি বলে রাখছি। আর কোনো কিছু? সমস্বরে না বলতেই বলল, আমি চাই আমার মা খালা অনেক
খুশি হয়ে বাড়ি ফিরুক। এবার দুজন দয়া করে ঘুমিয়ে পড়ো,সকালে তোমাদেরকে বেড়াতে নিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ। বকুল হাসতে হাসতে বলছে, শোনে তো মনে হচ্ছে তোর ছেলেকে বলছিস।

(সমাপ্ত)
###১০ম পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here